instruction
stringclasses 5
values | input
stringlengths 53
24.4k
| output
stringlengths 18
162
|
---|---|---|
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | 'সুরিয়াভানশি' মেগাহিট ছবি হবে বলে আশা করেছিলেন পরিচালক, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আটকে গেল ছবিটি। কিন্তু করোনাভাইরাস সব উলট-পালট করে দিল। ভারতে এই মহামারি ঠেকাতে ২১ দিনের লকডাউন জারি করা হলো। 'সুরিয়াভানশি’র মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেয়া হলো। একইভাবে স্থগিত হয়ে গেল পরিচালক কবীর খানের মুভি ‘এইটি-থ্রি’র মুক্তিও। ১৯৮৩ সালে ভারত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই ছবির কাহিনী সেই ঘটনা নিয়ে। এতে অভিনয় করেছেন রণবীর সিং এবং দীপিকা পাডুকোন। ১০ এপ্রিল এটির প্রিমিয়ার হওয়ার কথা ছিল। দীপিকা পাডুকোনে: “ভাগ্য ভালো যে আমরা মুম্বাই ছেড়ে যাইনি, কোথাও আটকা পড়িনি।" ইউটিউব চ্যানেল ‘ফিল্ম কম্পানিয়ন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কবীর খান বলেন, এরকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজটি ছিল বেশ কঠিন। “এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে দেখানোর জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমাদের এই ছবির চেয়েও বড়। আজ গোটা পৃথিবী যেন এক জায়গায় থমকে আছে। ছবি দেখা এখন মোটেই গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার নয়।” শুধু যে নতুন ছবির মুক্তি থেমে আছে তা নয়। অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত তার নতুন ছবি ‘থালাইভি’র শ্যুটিং করছিলেন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাডুতে। তারপর জারি হলো লকডাউন। করোনাভাইরাসের কারণে কঙ্গনা রানাউতকে তার ছবির শ্যুটিং বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলিউডের এক নিউজসাইট ‘পিংকভিলা’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার সেখানে থাকার কথা ছিল ৪৫ দিন। কিন্তু তারপর একটা দৃশ্যের শ্যুটিং এর জন্য আমাদের লোকজনের ভিড় দরকার ছিল, কিন্তু আমাদের সেটির অনুমতি দেয়া হয়নি। এরপর শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গেল, আমি মুম্বাইতে ফিরে আসলাম।” অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোনে অবশ্য বলছেন, তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবতী’ মনে করেন, কারণ ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে তার শ্রীলংকায় যাওয়ার কথা ছিল একটি ছবির শ্যুটিং করতে। সাংবাদিক রাজীব মাসান্দকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভাগ্য ভালো যে আমরা মুম্বাই ছেড়ে যাইনি। আমরা কোথাও গিয়ে আটকা পড়িনি। আমি এমন অনেককে জানি, যাদের একটা ফিল্ম শেষ করার জন্য আর মাত্র কয়েকদিনের শুটিং বাকী ছিল।” বলিউডের তারকাদের হাতে যেন হঠাৎ করে অঢেল সময়। কিছু করার নেই। এই অবসরে তাই অনেকে সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে তাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা টুকিটাকি শেয়ার করছেন। যেমন দীপিকা পাডুকোনে আর ক্যাটরিনা কাইফ তাদের ঘরের নানা কাজ-কর্ম করছেন- রান্না-বান্না, বাসন-কোসন ধোয়া এবং ঘর সাজানো। আর আলিয়া ভাট আর হৃত্বিক রোশন নাকি নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করছেন। তবে করোনাভাইরাসের মতো একটি গুরুতর সংকটের ব্যাপারে ‘সংবেদশনশীলতা’ না দেখানোর কারণে অনেকে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন। পরিচালক ফারাহ খান ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তার কয়েকজন বিখ্যাত বন্ধুকে এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে, তারা তাদের শরীরচর্চার ভিডিও দেয়া বন্ধ না করলে তিনি তাদের ‘আনফলো’ করতে বাধ্য হবেন। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারি আপনারা বেশ সুবিধাভোগী শ্রেণীর মানুষ। এই বিশ্ব মহামারির সময় আপনাদের আর কোন চিন্তা নেই, কেবল ‘ফিগার’ ঠিক রাখাটা নিয়েই আপনারা চিন্তিত। কিন্তু এই সংকটে আমাদের আরও অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয়।” কিছু তারকা অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করছেন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সে ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে। কার্তিক আরিয়ান তার ফিল্ম ‘পেয়ার কা পাঞ্চনামা’র একটি দৃশ্যের অনুকরণে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এই সংকটের সময় কেন সবার ঘরে থাকাটা এত জরুরি, সেই বার্তা তিনি তুলে ধরেছেন এই দৃশ্যটির সংলাপ বদলে দিয়ে। ইনস্টাগ্রামে এটি এক কোটি বারের বেশি দেখেছে মানুষ। করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র জগতের আরও অনেকে তাদের মতো করে সাহায্যের চেষ্টা করছেন এই দুর্যোগে। অক্ষয় কুমার এবং আনুশকা শর্মা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতীয় তহবিলে দান করেছেন। লকডাউনের কারণে যে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের সাহায্য করা হয় এই তহবিল থেকে। প্রযোজকদের একটি সংস্থাও একটি তহবিল গঠন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পে যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে তাদের সাহায্য করার জন্য। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ আরও অনেক বাড়ানো হতে পারে এমন জল্পনার মধ্যে প্রযোজকরা আশংকা করছেন বলিউডের কাজের ধরণে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। চলচ্চিত্র পরিচালক করন জোহর তার পরবর্তী ছবি ‘তখত’ এর শুটিং এপ্রিলে শুরু করবেন বলে কথা ছিল। এটি একটি ঐতিহাসিক ছবি। তার টিম এরই মধ্যে ইউরোপে এটির শ্যুটিং এর জন্য সেট তৈরি শুরু করেছিল। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে করন জোহর বলেছেন, এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন। “ফ্লোরেন্সের একটা প্রাসাদে আমরা শ্যুটিং শুরু করেছিলাম, আমরা স্পেনের আলহামরাতেও শ্যুটিং করছিলাম। গত কয়েক বছর ধরে আমরা এই জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে বাছাই করেছি। এই মূহুর্তে এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করছি না। এরপর কী ঘটবে, সেটা নিয়েই চিন্তা।” করন জোহর ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযোজকদের একজন। তার দুটি ছবি মুক্তির জন্য তৈরি আছে। আর নির্মাণাধীন আছে আরও সাতটি ছবি। তিনি বলেন, “এটি তো গেল কেবল ধর্ম প্রোডাকশান্সের কথা। প্রতিটি কোম্পানি, প্রতিটি স্টুডিওর পরিস্থিতি এখন এরকম। আমরা এখনো জানিনা, কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কত মানুষ সিনেমা দেখতে যাবে।” 83 নামে চলচ্চিত্রচির জুটি রনবীর সিং ও দিপীকা পাড়ুকোন বাস্তব জীবনেও যুগল। 'এইটি-থ্রি' নামে চলচ্চিত্রচির জুটি রনবীর সিং ও দিপীকা পাড়ুকোন বাস্তব জীবনেও যুগল। যেসব ছবির মুক্তি স্থগিত হয়ে গেছে, সেগুলো পরে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয়া হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে। তবে ‘এইটি-থ্রি’র পরিচালক কবীর খান আশাবাদী। তিনি আশা করছেন চার মাসের মধ্যেই হয়তো বলিউড আবার গতি পাবে। করোনাভাইরাস সংকটে গরীব মানুষ যে দুর্ভোগের মুখে পড়েছে, তার তুলনায় যে বলিউডের পরিচালক এবং তারকাদের সমস্যা কিছুই নয়, সেটা তারা উপলব্ধি করেন। অভিনেতা ভিকি কৌশাল প্রতিদিনের খবরে যা দেখছেন তাকে ‘মর্মান্তিক’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি আশা করছেন, এই সংকটে তার অনুরাগীরা ‘যতটা সতর্ক এবং দায়িত্বশীল হওয়া দরকার’ তা হবেন এবং চেষ্টা করবেন জীবনের ছোটখাট বিষয় থেকেই আনন্দ খুঁজে পেতে। অনেকটা একইভাবে দীপিকা পাডুকোনে বলেন, “আমাদের এখন সেসব বিষয়েই মনোযোগ দিতে হবে যা আমাদের কিছুটা হলেও আনন্দ দেবে, আশা দেবে। | করোনাভাইরাস: বলিউড যেভাবে থমকে গেছে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জীবন ক্যাম্পের ভেতরে দিনের বেলায় এক রকম চিত্র থাকলেও রাতের বেলায় চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। রাতের আঁধার নামার সাথে সাথেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র পদচারণা শুরু হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদ্যুত সরবরাহ নেই। অন্যদিকে পর্যাপ্ত রাস্তাও নেই। ক্যাম্পের ভেতরে বড় কয়েকটি সড়ক তৈরি করা হয়েছে যেগুলো 'আর্মি রোড' হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব রাস্তার মাধ্যমে সব জায়গায় পৌছনো যায়না। এমন অনেক জায়গা আছে যেকানে পৌঁছাতে পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তায় অনেকক্ষণ হাঁটতে হয়। ফলে যে কোন অপরাধ করে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব। রাতের বেলায় এসব জায়গায় যেতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপদ বোধ করেন না। রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব: ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিভক্তি বেড়েছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, ক্যাম্পের ভেতরে একটি অংশ আছে যাদের 'কাফের' বা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সন্দেহ করে অপরপক্ষ। এসব ব্যক্তি এখনো ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের গোয়েন্দাদের তথ্য দেয় বলে তাদের প্রতিপক্ষের অভিযোগ। ক্যাম্পের ভেতরেই একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে যারা তাদের দৃষ্টিতে 'কাফের' চিহ্নিত করার কাজ করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মুহাম্মদ ইউনুস দোভাষীর সাহায্যে আমাকে বলেন, "যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই মোনাফেক। কোন ভালো মানুষকে হত্যা করা হয়নি।" তিনি বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে অনেকে আছে যারা মিয়ানমার বাহিনীর কাছে 'তথ্য পাচার' করে। পুলিশ বলছে, ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে গত দুই বছরে অন্তত ৪৫টি খুন হয়েছে, যার বেশকিছু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সূত্রগুলো বলছে, ক্যাম্পের ভেতরে তৎপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা না শুনলে পরিণতি হয় ভয়াবহ। হত্যাকাণ্ডের আরেকটি কারণ আছে। স্থানীয় প্রশাসনের এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে কথা বলে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেল। রোহিঙ্গাদের মধ্যে গত দুই বছরে ক্যাম্পের ভেতরে যারা কিছুটা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন তাদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা কারা হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যেই অনেকে চায়না যে অন্য কেউ প্রভাবশালী হয়ে উঠুক। সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বোঝা গেল, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্যাম্পের ভেতরে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, " ক্যাম্পের ভেতরে একটা কথা প্রচলিত আছে, ক্যাম্প দিনের বেলায় বাংলাদেশের আর রাতের বেলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর। এটা এখন ওপেন সিক্রেট।" কর্মকর্তারা বলছেন, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী চায়না যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চায়। এর মাধ্যমে সেই সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে বলে মনে করেন সে কর্মকর্তা। সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেবার পর সে গোষ্ঠী অনেক রোহিঙ্গাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে যাতে তারা ফিরে যেতে রাজী না নয়। স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। সংকটের দুই বছর পূর্তিতে রোহিঙ্গারা কুতুপালং শিবিরে বড় সমাবেশের আয়োজন করে। প্রশাসনের দুশ্চিন্তা কক্সবাজারে অবস্থানকালে আমি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। এদের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত কর্মকর্তা, পুলিশ এবং বিজিবি সূত্রগুলোর সাথে কথা বলেছি। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট যখন শুরু হয়, তখন অনেকেই আশংকা প্রকাশ করেন যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে জঙ্গি তৎপরতা তৈরি হতে পারে। এর একটি বড় যুক্তি ছিল, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো হয়তো তাদের সদস্য সংগ্রহের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে টার্গেট করতে পারে। তাছাড়া নির্যাতিত রোহিঙ্গারা হয়তো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে মিয়ানমার বাহিনীর উপর। সেজন্য তারা বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে পারে - এমন আশংকাও ছিল অনেকের মনে। এই আশংকা এখনো রয়েছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে শুরু থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশে সরকার। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, "পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী কয়েক বছর পর রোহিঙ্গারাই ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে।" সে কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইয়াবা চোরাচালানের সাথে জড়িত। এখান থেকে টাকা আয় করে নিজেদের সংগঠন চালানোর জন্য খরচ করে তারা। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার বলেন, রোহিঙ্গাদের 'নিজস্ব দ্বন্দ্বের' কারণে খুনোখুনিগুলো হচ্ছে এবং তার প্রভাব কক্সবাজারের আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরও পরছে। "সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে টেনশন তত বৃদ্ধি পাচ্ছে,'' মি. আফসার বিবিসিকে বলেন। এনজিও কর্মীদের উদ্বেগ কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সাথে বিবিসি বাংলার কথা হয়েছে। তাদের আশংকা হচ্ছে, শরণার্থী ক্যাম্পের পরিস্থিতি যেভাবে দিনকে দিন জটিল হয়ে উঠছে তাদের ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপদে কাজ করা মুশকিল হয়ে উঠতে পারে। এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে এনজিও কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। সেটি না থাকলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে বলে তাদের আশংকা। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের জন্য যদি আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যায় তাহলে সেটির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রোহিঙ্গাদের উপর। এখনো পর্যন্ত তারা এনজিও কর্মীদের সুদৃষ্টিতে দেখে। এর কারণ হচ্ছে, এনজিওদের কাছ থেকে তারা নানা সাহায্য পাচ্ছে। যদি সাহায্যের মাত্রা কমে আসে তাহলে অচিরেই এনজিও কর্মীরা রোহিঙ্গাদের চক্ষুশূলে পরিণত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বেসরকারি সংস্থাগুলো এরই মধ্যে 'অপরাধী' হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের বেশি ত্রাণ সাহায্য দিচ্ছে বলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবার আগ্রহ পাচ্ছেনা। এমন অবস্থায় বেসরকারি সংস্থাগুলো রয়েছে উভয় সংকটে। দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল থাকলেও রাতে অরক্ষিত থাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। কী করবে প্রশাসন? নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলার দিকে তাদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে তাদের। নিরাপত্তা ইস্যুতে গত ছয়মাস যাবত রোহিঙ্গাদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে। কোন রকম অপরাধের সাথে জড়িত থাকার নূন্যতম প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যদি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি তাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নে এক কর্মকর্তা বলেন, এর কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে, শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তা বাহিনী কোন অভিযান পরিচালনা করলে সেটির আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাছাড়া যে কোন ধরণের অভিযান পরিচালনা হলে সাধারণ রোহিঙ্গারাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া বিষয়টিকে মিয়ানমার সরকার এমনভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করতে পারে যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীরা আছে। ফলে বিষয়টি তাদের পক্ষে যেতে পারে। তবে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, শরণার্থী ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এখন ভিন্ন কৌশলে হাঁটছে। একজন কর্মকর্তা জানালেন, তারা বেছে-বেছে পদক্ষেপ নেবেন। অর্থাৎ যাদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ সংগঠনের নূন্যতম প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার ঘটনাগুলো সে বিষয়টি প্রমাণ করে বলে মন্তব্য করেন এক কর্মকর্তা। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বলছেন, পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সেজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, বিদ্যুত সরবরাহ এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেবার সুপারিশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ রোহিঙ্গাদের শুধু নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি নয়, রোহিঙ্গাদের হামলায় কয়েকজন বাংলাদেশীও নিহত হয়েছে। সর্বশেষ একজন যুবলীগ নেতার হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাংলাদেশীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর থকে রোহিঙ্গাদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের অভিযোগে মামলাও হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে হত্যা, মাদক, নারী পাচারসহ নানা ধরণের অপরাধ। কুতুপালং-এর লম্বাশিয়ার বাসিন্দা তানজিনা আক্তারের আশংকা করেন, রোহিঙ্গাদের কারণে ভবিষ্যতে হয়তো তাদের এ এলাকা ছাড়তে হবে। "ওরা আমাদেরকেই এ এলাকা ছাড়া করবে। কয়দিন পর আমাদেরকে মারবে," ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন তানজিনা আক্তার। সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা হলো উখিয়া এবং টেকনাফে এখন রোহিঙ্গারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাদেশীরা সেখানে এখন সংখ্যালঘু। সে কারণেই শরণার্থী ক্যাম্পের পরিস্থিতি কতদিন নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে সে উদ্বেগ রয়েই যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। | রোহিঙ্গা সংকট: রাতের আঁধারে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণ করে কারা? |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | একটি ভাল বন্ধু হতে পারে আপনার আনন্দের ভান্ডার বিষয়টা এতোটা সহজ না বলেই হয়তো বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের একাকীত্বের সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশটির ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তীব্র একাকীত্ব সমস্যায় ভুগছে। আপনিও যদি এমন একাকীত্বে ভোগেন তাহলে নীচের ১০টি টিপসের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন কিভাবে আপনিও সহজে বন্ধু বানাতে পারেন। কোন বন্ধু না থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ১. ক্লাব বা সংগঠনে যোগ দিন: কোন একটি দল, সংগঠন, বা পছন্দের কোন বিষয়ের ওপর ক্লাস-ভিত্তিক কোর্সে যোগদানের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন আপনার প্রিয় বন্ধুকে। একসঙ্গে থাকার কারণে আপনার সহকর্মী বা সহপাঠীরা জানতে পারবেন আপনার কিসের প্রতি উৎসাহ রয়েছে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন গাঁজা ব্যবহার স্বাস্থ্যকে কতটা প্রভাবিত করে? সৌদি আরবের সাথে কী 'চাল' চালছে তুরস্ক? মুক্তির পর দ্রুত দেশে ফিরতে চান সালাহ উদ্দিন আহমেদ আপনার এমন কয়েকটি বিষয় যখন আরেকজনের আগ্রহের সঙ্গে মিলে যাবে তখনই বন্ধুত্বের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যদি কোন মিল নাও থাকে, তাহলে নতুন কিছু চেষ্টা করতেও তো দোষ নেই। তা সে তাইকন্দো হোক বা পেইন্টিং। এর মাধ্যমে আপনি যেমন আপনার নিজের দক্ষতার দিকগুলো যাচাই করতে পারবেন। তেমনি জানতে পারবেন কে হতে পারেন আপনার কাছের একজন বন্ধু। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা অন্যকে শেখানোর পাশাপাশি নতুন বন্ধু তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। ২. স্বেচ্ছাসেবক: স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা মানে, মানুষের প্রতি আপনার মমত্ববোধ আছে। এখন এই সেবা আপনার স্থানীয় কমিউনিটির প্রতি হোক বা আরও বড় পরিসরে সেটা বিষয় না। বিষয় হল, এই কাজের মাধ্যমে আপনার নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। এবং এই মানুষগুলো তারাই হবে যাদের মন উদার। এবং একজন বন্ধুর ভেতরে এই গুনটাই সবচেয়ে বেশি থাকা চাই। বন্ধুত্ব যেকোন স্থানে, যেকোন সময়ে, যে কারও সঙ্গেই হতে পারে, তাই কোন সুযোগ হাতছাড়া হতে দেবেন না। ৩. যোগাযোগ তৈরি করুন: কোন বিয়ের পার্টিতে বা জিমে অথবা খেলতে গিয়ে যদি নতুন কারও সঙ্গে আপনার পরিচয় হয় যার সঙ্গে কিনা আপনি মিল পাচ্ছেন তাহলে তার ফোন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানাটি চেয়ে নিন। কারণ তার সঙ্গে আপনার আবার দেখা হবে কিনা সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। এজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগের একটা মাধ্যম বের করা জরুরি। আপনি তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরের দিন একটি লাইন লিখে জানান যে তার সঙ্গে সময় কাটানোটা আপনি কতো উপভোগ করেছেন। এরপর তাকে কোথাও খেতে যাওয়ার জন্য অথবা কোথাও ঘুরতে বা হাটতে যাওয়ার জন্য ডাকতে পারেন। নিজ থেকে এই একটা পদক্ষেপের কারণেই হয়তো আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে। কে ভেবেছিল যে পাহাড়ে চড়া আপনি এতোটা উপভোগ করবেন? ৪. হ্যাঁ বলতে শিখুন: যদি নতুন পরিচিত কেউ আপনাকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান বা আপনাকে থিয়েটার টিকিট অফার করে তাহলে হ্যাঁ বলুন। এতে আপনি সাময়িক স্নায়ুচাপের মুখে পড়তে পারেন। মনে হতে পারে যে আপনি আপনার গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন, সাহস না রাখলে, কিছুই অর্জন করা যায়না। যদি আপনি সত্যিকার অর্থে সেই সাহস যোগাতে না পারেন, অথবা সে আপনাকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে সেটা আপনার ঠিক পছন্দ না, তাহলে আপনি তাকে ভদ্রভাবে না বলুন।- তবে সেই না বলার মধ্যে এটাও পরিষ্কারভাবে বলুন যে ভবিষ্যতে সে যদি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে আপনি সেটা সাদরে গ্রহণ করবেন। প্রাণীদেরও হতে পারে প্রিয় কোন বন্ধু। ৫. প্রত্যাখ্যানের ভয় কাটিয়ে উঠুন: সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিটি প্রচেষ্টা যে কাজে লাগবে, এমন কোন কথা নেই। - কিন্তু আপনি যদি প্রতিনিয়ত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না। সাহসী হন এবং নিজের প্রতি আস্থার জায়গাটা একটু মজবুত করুন। আপনি যদি নতুন কারও সঙ্গে পরিচয়ের পর তার সঙ্গে আবারও দেখা করার প্রস্তাব দেন এবং তাদের উত্তর যদি "না" সূচক হয়, তাহলে ভেঙ্গে পড়বেন না। কেননা এটাই পৃথিবীর শেষ নয়। সম্ভবত সেই ব্যক্তি আপনার জন্য ছিল না। আপনার বন্ধু হওয়ার জন্য হয়তো আরও ভাল কোন মানুষ অপেক্ষা করছে। মাঝে মাঝে না খুঁজেও আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্রিয় বন্ধুকে। আরও পড়তে পারেন: পত্রমিতালী করে জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছিলেন যারা মানসিক রোগীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন যেভাবে শত্রু থেকে বন্ধু হলেন দুই লেবানিজ যোদ্ধা ৬. সহকর্মীদের বন্ধু বানান: বর্তমান ব্যস্ত সমাজে পরিবারের চাইতে আমাদের বেশি সময় কাটানো হয় কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে। তাই এই সহকর্মীদের বন্ধু বানানোর চেষ্টা করা যৌক্তিক। এটা ঠিক যে অফিসের অনেক কথায় আপনি হয়তো কষ্ট পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত কোন সহকর্মীর কাছে নিজেকে একটু প্রকাশ করতে পারেন। হয়তো সেও আপনাকে এর প্রতিদানে হয়তো ভাল কিছু দেবে। কাজের পর কোথাও খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা-গুলোয় যোগ দিন। - এমনকি আপনি ক্লান্ত হলেও হ্যাঁ বলুন। অথবা লাঞ্চ বিরতিতে আপনি কলিগদের কাউকে নিয়ে স্থানীয় স্যান্ডউইচ দোকানে যেতে পারেন। অফিস ডেস্কের থেকে দূরে কোথাও গেলে সহকর্মীর সঙ্গে কাজের বাইরে আরও নানা বিষয়ে কথা বলা সহজ হবে। এতে সহকর্মীদের, প্রকৃত বন্ধুতায় বদলে ফেলাও হয়ে যাবে অনেক সহজ। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে একজন ভাল বক্তা হওয়ার পাশাপাশি ভাল শ্রোতা হওয়াটাও জরুরি। ৭. কৌতূহলী হন: আপনি যদি লাজুক স্বভাবের হন বা কিছু বলতে গিয়ে আটকে যান, তাহলে সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠার সহজ উপায় হল অপর পাশের মানুষের বিষয়ে জানতে চাওয়া। কেননা অধিকাংশ মানুষই নিজের বিষয়ে কথা বলাটা উপভোগ করে। আপনি যদি ভাল শ্রোতা হন এবং ভবিষ্যতে তার সেই বিষয়গুলো টেনে আনেন। তাহলে বুঝে নিন যে আপনি খুব দ্রুত বন্ধু পেতে যাচ্ছেন। ভাল বন্ধুরা আপনার ভাল বা খারাপ দুই সময়েই আপনার পাশে থাকবে। ৮. প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসুন: জন্ম তারিখ মনে রাখা বা তার প্রয়োজনীয় কোন কিছু কিনে দেয়ার মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো মনে রাখা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। একইসঙ্গে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া যায় খারাপ সময়গুলোতে। যদি আপনার পছন্দের মানুষটি কঠিন সময় মধ্যে দিয়ে যান তাহলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসুন। সে অসুস্থ থাকলে তার প্রিয় কোন খাবার নিজ হাতে তৈরি করে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অথবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন - এই ছোট্ট বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি বোঝাতে পারবেন, আপনি বন্ধু হিসেবে কতোটা দারুণ। আপনি হয়তো অজান্তেই ভুল কোন সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন। ৯. খোলা মনের মানুষ হন: একজন নতুন বন্ধুর প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যে সতেরো বছরের হতে পারে আবার সত্তরও হতে পারে, তার বেড়াল পছন্দ হতে পারে আবার শুধু কুকুর পছন্দ হতে পারে। তার পছন্দের গান হতে পারে মেটাল বা ক্লাসিক্যাল। মনে রাখবেন যে, ভিন্ন ব্যক্তিত্ব আমাদের আকর্ষণ করে বেশি। তাই প্রথম দেখাতেই কাউকে বিচার করা ঠিক হবেনা - প্রত্যেকেই একটা সুযোগ দিন। সেইসব মানুষদের কথা ভাবুন যাদের আপনি প্রথম দেখায় ভীষণ বিরক্তিকর ভেবেছিলেন, অথচ যারা এখন কিনা আপনার ভীষণ প্রিয়। বন্ধুত্বে আস্থার ভিত্তি গড়ে উঠতে সময়ের প্রয়োজন। ১০. পর্যাপ্ত সময় দিন: রাতারাতি কারো বন্ধু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে। বন্ধুত্বকে লালন করতে হয়। এজন্য নতুন কারও সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, সেটাকে বাড়িয় তুলতে এর পেছনে আপনার সময় আর যত্ন বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা বিশ্বাস ও ভরসার ভিত্তি সময়ের সাথে সাথে মজবুত হয়ে ওঠে। নতুন বন্ধু তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আপনি তাকে যা দিতে পারবেন, সেটার প্রতি বিশ্বাস রাখা। ইতিবাচক ভাবে ভাবার চেষ্টা করুন। নিজের প্রতিও যত্ন নিন। | বন্ধু বানানোর ১০টি সহজ উপায় জেনে নিন |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | মেসোপটেমিয়ান সমতল ভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠী কুর্দিরা সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন এই অভিযানের ফলে স্থানীয় কুর্দি নাগরিকরা জাতিগত সহিংসতার শিকার হতে পারেন এবং এর ফলে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীরও পুনরুত্থান ঘটতে পারে। কিন্তু এই কুর্দিরা আসলে কারা? তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান কেন সীমান্তে 'সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পথ বন্ধ' করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন? কুর্দিরা কোথা থেকে এলো? মেসোপটেমিয়ান সমতল ভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠী এই কুর্দিরা। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, উত্তর-পূর্ব সিরিয়া, উত্তর ইরাক, উত্তর-পশ্চিম ইরান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আর্মেনিয়া অঞ্চলে তারা ছড়িয়ে রয়েছে। আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটি কুর্দি এসব পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে। মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম নৃতাত্বিক গোষ্ঠী তারা। কিন্তু এই কুর্দিরা কখনো স্থায়ী একটি রাষ্ট্র পায়নি। আরো পড়ুন: সিরিয়ায় ঢুকে পড়েছে তুর্কি সৈন্য, বিমান হামলা কুর্দিদের ত্যাগ করলেন ট্রাম্প, এরদোয়ানের টেলিফোন কুর্দিদের উপর যেভাবে নিষ্ঠুরতা চালাতেন সাদ্দাম হোসেন কুর্দিরা কখনো স্থায়ী একটি রাষ্ট্র পায়নি বর্তমানে তাদের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সম্প্রদায় রয়েছে। জাতিগত, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তারা একরকম হলেও তাদের ভাষার কোনো স্বতন্ত্র বাচনভঙ্গী নেই। কুর্দিদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম এবং উপগোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকলেও তাদের সিংহভাগ সুন্নি মুসলিম। কুর্দিদের কোনো রাষ্ট্র নেই কেন? বিংশ শতকের শুরুর দিকে কুর্দিদের অনেকে নিজেদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা করে - যেটি কুর্দিস্তান হিসেবে পরিচিত হবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর যুদ্ধ জয়ী পশ্চিমা জোট ১৯২০ সালের সেভর্ চুক্তি অনুযায়ী কুর্দিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা নেয়। তবে তিন বছর পরই ঐ সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায় যখন লুসান চুক্তি অনুসারে আধুনিক তুরস্কের সীমানা নির্ধারিত হয় এবং কুর্দিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয় না। কুর্দিরা তখন নিজ নিজ দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করতে বাধ্য হয়। পরের ৮০ বছরে নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য কুর্দিদের নেয়া প্রত্যেকটি প্রচেষ্টাকেই নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়। পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওচালানকে ১৯৯৯ সাল থেকে কারাবন্দী করে রেখেছে তুরস্ক তুরস্ক কেন কুর্দিদের হুমকি মনে করে? তুরস্ক এবং সেদেশের কুর্দিদের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাসটা অনেক পুরনো। তুরস্কের জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ ভাগ জাতিগতভাবে কুর্দি। কয়েক প্রজন্ম ধরে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ কুর্দিদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করেছে। ১৯২০ এবং ১৯৩০'এর দশকে কুর্দিদের বিক্ষোভের উত্থানের সময় অনেক কুর্দি পুনর্বাসিত হয়, কুর্দি নাম এবং পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, কুর্দি ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, এমনকি কুর্দিদের যে একটি আলাদা জাতিগত পরিচয় আছে সেটিও অস্বীকার করা হয়। কুর্দিদের সেসময় বলা হতো 'পাহাড়ি তুর্কি।' ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওচালান পিকেকে গঠন করেন, যাদের প্রধান দাবি ছিল তুরস্কের মধ্যে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন। ছয় বছর পর সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে ঐ সংগঠনটি। সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং লক্ষ লক্ষ কুর্দি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পিকেকে ১৯৮৪ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করার পর থেকে ৪০ হাজারের বেশি কুর্দি নিহত হয়েছে ১৯৯০'এর দশকে পিকেকে স্বাধীনতার দাবি বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালায়। তবে সেসময়ও সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রাখে তারা। ২০১৩ সালে গোপন আলোচনার পর যুদ্ধবিরতির সমঝোতায় আসে তারা। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতি অকার্যকর হয়ে পড়ে যখন সিরিয়ার সীমান্তের কাছে কুর্দি অধ্যূষিত শহর সুরুকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৩ জন তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট নিহত হয়। ইসলামিক স্টেটকে ঐ বোমা হামলার জন্য দায়ী মনে করা হয়। সেসময় পিকেকে তুরস্কের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তার অভিযোগ আনে এবং তুরস্কের সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এর ধারাবাহিকতায় তুরস্কের সরকার পিকেকে এবং আইএস'এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে, যেটিকে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমন্বিত যুদ্ধ' বলে দাবি করা হয়। সেসময় থেকে হাজার হাজার মানুষ - যাদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন - দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে হওয়া সংঘাতে নিহত হয়েছেন। অগাস্ট ২০১৬ থেকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেনা উপস্থিতি অব্যাহত রেখেছে তুরস্ক। সেসময় সীমান্তের ওপারে সেনাসদস্য ও ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে ঐ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শহর জারাব্লুস দখল করে তুর্কি বাহিনী। এর ফলে কুর্দি বিদ্রোহী বাহিনী ওয়াইপিজি'র নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স ঐ অঞ্চলের দখল নিতে ব্যর্থ হয় এবং আফ্রিন শহরের কুর্দি ঘাঁটির সাথে যুক্ত হয়। ২০১৮ সালে তুরস্কের বাহিনী এবং তাদের সাথে একজোট থাকা সিরিয়ান বিদ্রোহীরা আফ্রিন থেকে ওয়াইপিজি'র যোদ্ধাদের উৎখাত করে। সেসময় অনেক বেসামরিক নাগরিক মারা যায় এবং হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়। তুরস্কের সরকারের ভাষ্যমতে, ওয়াইপিজি এবং পিওয়াইডি সাবেক পিকেকে'র সাথে সম্পৃক্ত সংস্থা এবং তারা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তুরস্ক সরকার দাবি করে ঐ সংগঠনগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করছে এবং তাদের নির্মূল করা আবশ্যক। তুরস্কের সেনা এবং পিকেকে'র মধ্যে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের শহর সিজর (মার্চ ২০১৬) সিরিয়ার কুর্দিরা কী চায়? সিরিয়ার জনসংখ্যার ৭ থেকে ১০ ভাগ কুর্দি। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার আগে তাদের অধিকাংশের বাস ছিল দামেস্ক এবং আলোপ্পোতে। এছাড়াও উত্তর-পূর্বের শহর কামিশলি, কোবানে এবং আফ্রিন শহরেও তাদের কিছু অংশ বসবাস করতো। সিরিয়ার কুর্দিরাও দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারিত এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৬০'এর দশক থেকে প্রায় ৩ লাখ কুর্দিকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি এবং তাদের জমি অধিগ্রহণ করে ঐসব কুর্দি অঞ্চলকে 'আরব অধ্যূষিত' অঞ্চলে পরিণত করার জন্য আরবদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে হওয়া অভ্যুত্থান যখন গৃহযুদ্ধে পরিণত হয় তখন প্রধান কুর্দি দলগুলো কোনো পক্ষ নেয়নি। ২০১২'র মাঝামাঝি সময়ে দেশের অন্যান্য জায়গায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সেসব কুর্দি অধ্যূষিত অঞ্চল থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়, যার ফলে কুর্দি দলগুলো সেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৪'র জানুয়ারিতে প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি (ওয়াইপিডি) সহ অন্যান্য কুর্দি দলগুলো আফ্রিন, কোবানে এবং জাযিরা'র তিনটি বিভক্ত প্রদেশে 'স্বায়ত্বশাসিত প্রশাসন' প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেয়। মার্চ ২০১৬'তে তারা আইএস'এর দখলে থাকা কয়েকটি আরব এবং তুর্কি এলাকা নিয়ে 'যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা' প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ঐ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সিরিয়ার সরকার, সিরিয়ার বিরোধী দল, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র। আইএস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিল ওয়াইপিজি পিওয়াইডি'র দাবি, তারা স্বাধীনতা চায় না, কিন্তু সিরিয়ায় চলমান সংঘাত নিরসনের উদ্দেশ্যে নেয়া যে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতায় কুর্দিদের অধিকার এবং স্বায়ত্বশাসনের বিষয়টি যেন গুরুত্ব পায় তা নিশ্চিত করতে চায়। প্রেসিডেন্ট আসাদ আলোচনা বা যুদ্ধ, যে কোনোভাবে সিরিয়ার 'প্রতি ইঞ্চি' জায়গা পুনর্দখলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কুর্দিদের স্বায়ত্বশাসনের দাবিও নাকচ করে দিয়েছে তার সরকার। ইরাকের কুর্দিরা কি স্বাধীনতা পাবে? ইরাকের জনসংখ্যার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ ভাগ কুর্দি। ঐতিহাসিকভাবে, আশেপাশের যে কোনো রাষ্ট্রে বসবাসরত কুর্দিদের চেয়ে বেশি নাগরিক অধিকার এবং সুবিধা ভোগ করেছে তারা। কিন্তু তারা অন্যদের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর অত্যাচারেরও শিকার হয়েছে। ১৯৪৬ সালে ইরাকে স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করার জন্য মুস্তাফা বাজরানি কুর্দিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (কেডিপি) গঠন করেন। তবে তারা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে ১৯৬১ সাল থেকে। ৭০'এর দশকের শেষদিকে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে আরবদের পুনর্বাসন শুরু করে সরকার। বিশেষ করে তেল সমৃদ্ধ কিরকুক অঞ্চলের কুর্দিদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় পুনর্বাসন শুরু করা হয়। ৮০'র দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় এই নীতি আরো বিস্তার লাভ করে, সেসময় কুর্দিরা ইরানকে সমর্থন করে। ১৯৮৮ সালে কুর্দিদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাবশত অভিযান শুরু করেন সাদ্দাম হুসেইন, যার অংশ হিসেবে হালাবজা অঞ্চলে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়। ১৯৭০ সালে ইরাকের সরকার ও কেডিপি'র মধ্যে শান্তিচুক্তি হলেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ে চার বছরের মধ্যেই ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে যখন ইরাকের পরাজয় হয়, কুর্দি বিদ্রোহীরা তখন বাগদাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে। ঐ বিদ্রোহ দমনে ইরাকের কর্তৃপক্ষের নেয়া সহিংস পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট উত্তরে 'নো ফ্লাই জোন' ঘোষণা করে যার ফলে কুর্দিরা সেসব অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। দুই পক্ষের ক্ষমতা ভাগাভাগি সংক্রান্ত একটি চুক্তি করা হলেও ১৯৯৪ সালে ইরাকের কুর্দি দলগুলো চার বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়। ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যেই আক্রমণে সাদ্দাম হুসেইন ক্ষমতাচ্যুত হন, ঐ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করে কুর্দিরা। তার দু'বছর পর উত্তর ইরাকের তিনটি প্রদেশে কুর্দিস্তান রিজিওনাল গভর্নমেন্ট (কেআরজি) প্রতিষ্ঠা করে সেসব এলাকার জোট সরকারের অংশ হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৭'তে কুর্দিস্তান অঞ্চলে এবং ২০১৪ সালে কুর্দি মিলিশিয়াদের দখল করা বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর মানুষ একটি গণভোটে অংশ নেয়। সেসময় ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার এই গণভোটকে অবৈধ দাবি করে এর বিরোধিতা করে। গণভোটে অংশ নেয়া ৩৩ লাখ মানুষের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। বাগদাদ কর্তৃপক্ষ ঐ গণভোটের ফল নাকচ করার প্রস্তাব করে। পরের মাসে ইরাকের সরকার সমর্থক বাহিনী কুর্দিদের দখলে থাকা বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর দখল নেয়। কিরকুক অঞ্চল এবং সেখানকার তেল থেকে পাওয়া আয় শেষ হয়ে যাওয়ায় কুর্দিদের নিজেদের রাষ্ট্র গঠনের আশা বড় ধাক্কা খায়। ১৯৯১ সালের বিদ্রোহ দমনের পর ইরান ও তুরস্কে ১৫ লক্ষের মত কুর্দি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় আইএস'এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে কুর্দিরা কেন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল? ২০১৩'র মাঝামাঝি সময়ে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের তিনটি কুর্দি ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। ঐ অঞ্চলে তাদের চালানো একের পর এক হামলা ২০১৪'র মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনীগুলো প্রতিরোধ করতে থাকে। জুন ২০১৪'তে উত্তর ইরাকে আইএস'এর আগ্রাসনের ফলে ইরাকের কুর্দিরাও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ইরাকের স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের সরকার এমন অঞ্চলে তাদের পেশমার্গা বাহিনী পাঠায় যেখানে ইরাকের সৈন্যদের অবস্থান ছিল না। ২০১৪ সালে আইএস আচমকা আগ্রাসন শুরু করলে বেশ কয়েকটি অঞ্চল থেকে পেশমার্গা বাহিনী সরে আসে। ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের বসবাস ছিল, এমন বেশ কয়েকটি অঞ্চলের পতন হয় - যার মধ্যে একটি হলো সিঞ্জার, যেখানে হাজার হাজার ইয়াজিদিকে আইএস আটক করে রাখে এবং হত্যা করে। ঐ আগ্রাসন থামাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী উত্তর ইরাকে বিমান হামলা চালায় এবং পেশমার্গাদের সাহায্য করতে সামরিক উপদেষ্টা পাঠায়। ২০১৭ সালে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গণভোট হয় তিন দশক ধরে তুরস্কে কুর্দি স্বায়ত্বশাসনের লক্ষ্যে লড়াই করা ওয়াইপিজি এবং পিকেকে'ও তাদের সহায়তায় যোগ দেয়। সেপ্টেম্বর ২০১৪'তে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কুর্দি শহর কোবানে'তে হামলা চালায় আইএস, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। তবে ঐ সংঘাত তুরস্কের সীমান্তের অনেক কাছে হলেও তুরস্ক আইএস ঘাঁটিতে হামলা করা বা তুরস্কের কুর্দিদের সীমানা পার করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকে। ২০১৫'র জানুয়ারিতে এক যুদ্ধের পর কুর্দি বাহিনী কোবানের নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখল করে। ঐ যুদ্ধে অন্তত ১৬০০ মানুষ মারা যায়। কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ জোট আইএস এর ঘাঁটি রাকা দখল করে ২০১৭ এর অক্টোবরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী, সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস জোট এবং একাধিক আরব মিলিশিয়া বাহিনীকে কুর্দিরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করে সিরিয়া থেকে আইএস'কে সম্পূর্ণ বিতাড়িত করতে। এখন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় একটি ৩২ কিলোমিটার 'নিরাপদ অঞ্চল' প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করতে এবং ২০ লক্ষ সিরিয়ান শরণার্থীকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে তুরস্ক কুর্দিদের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান শুরু করেছে। এসডিএফ বলছে তারা 'যে কোনো মূল্যে' তাদের এলাকা রক্ষা করবে। আইএস'এর বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধে অর্জিত সুফলও ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে দাবি করছে এসডিএফ। রাশিয়ার মদদপুষ্ট সিরিয়ার সরকারও দেশটির প্রত্যেকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুন:প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। | তুরস্কের অভিযানের শিকার কুর্দি জনগোষ্ঠী কারা? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | ইমরান এইচ সরকার ইমরান এইচ সরকার সহ অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই নালিশি মামলা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। মি. রাব্বানী বলেন "মিছিলে তারা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তিমূলক এবং আপত্তিজনক স্লোগান দিয়েছেন"। দেশের নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এ ধরণের স্লোগান দেয়া মানহানিকর বলে তিনি মনে করেন। অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সেই ইমরান এইচ সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন "রাষ্ট্রের ভিতরে যেকোন অন্যায় হলে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করা যাবে না, আর এতে অনুভূতিতে আঘাত লাগবে এটা আমার বোধগম্য না। স্লোগান হল প্রতিবাদের ভাষা"। আরো পড়ুন:জিয়া হত্যা: কেমন ছিলো তখন চট্টগ্রামের পরিস্থিতি? তিনি আরো বলেন "এটা মুখ বন্ধ করার একটা চেষ্টা। কথা বললেই ধমক দেয়া হয়, হুমকি দেয়া হয়। হুমকি দেয়ার একটা রুপ চাপাতি আরেকটা হল মামলা"। সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে গত ২৮শে মে সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল-মিছিল করে গণজাগরণ মঞ্চ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে এবং তাঁর নাম নিয়ে স্লোগান দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান মামলাটি আমলে নিয়ে ইমরান এইচ সরকার সহ অন্যদের তলব করেছেন। তাদের আগামী ১৬ জুলাই আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। | ‘হুমকি দেয়ার একটা রূপ চাপাতি, অন্যটা মামলা’ |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | খবরের কাগজে আটের পাতায় পৌঁছে একটা খবরে চোখ যেতেই কাগজটা তাঁর হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল। তারিখটা ছিল ২০শে এপ্রিল, ১৯১৮। সংবাদটা ছিল স্যার দিনশার কন্যা লেডি রতিকে আগের দিন সন্ধ্যায় বিয়ে করেছেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। লেডি রতির পুরো নাম ছিল রতনবাই পেটিট। ঘটনার শুরুটা হয়েছিল আরও বছর দুয়েক আগে। স্যার দিনশা নিজের বন্ধু আর ব্যারিস্টার মুহম্মদ আলী জিন্নাহকে দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে দিনশার ১৬ বছরের কন্যা লেডি রতিও ছিলেন। সেই সময়ের মুম্বাইয়ে মিস রতির সৌন্দর্য রীতিমতো চর্চার বিষয় ছিল। আর মি: জিন্নাহ তখন ভারতীয় রাজনীতির শিখরের খুব কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন। মি: জিন্নাহর বয়স তখন প্রায় ৪০। কিন্তু দার্জিলিংয়ের বরফে ঢাকা পাহাড় চূড়া আর নৈ:শব্দ এমনই যাদু দেখালো যে লেডি রতি ও মি: জিন্নাহ একে অন্যের প্রেমে পড়ে গেলেন। দার্জিলিং ভ্রমণের সময়েই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্যার দিনশা পেটিটের কাছে তাঁর কন্যার পাণি প্রার্থনা করেন, প্রস্তাব দেন তাঁর মেয়েকে বিয়ে করার। 'মিস্টার এন্ড মিসেস জিন্নাহ - দা ম্যারেজ দ্যাট শুক ইন্ডিয়া' [মি: ও মিসেস জিন্নাহ - যে বিবাহ ভারত কাঁপিয়ে দিয়েছিল] বইটির লেখিকা শীলা রেড্ডির কথায়, "দার্জিলিংয়েই একদিন নৈশাহারের সময়ে মি: জিন্নাহ প্রশ্ন করেছিলেন দুই ধর্মের মধ্যে বিবাহ নিয়ে স্যার দিনশার কী মতামত।" সঙ্গে সঙ্গেই মিস রতি'র বাবা উত্তর দিয়েছিলেন যে দুই ধর্মের মধ্যে বিবাহসূত্রে মেলবন্ধন হলে জাতীয় ঐক্য দৃঢ় করতে সুবিধাই হবে। এর থেকে পছন্দের উত্তর স্বয়ং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহও বোধহয় দিতে পারতেন না। তাই মুহুর্তের মধ্যে মি: জিন্নাহ ফের মুখ খুললেন, স্যার দিনশাকে জানালেন যে তিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে করতে চান। তবে এই প্রস্তাবে সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন স্যার দিনশা। উত্তেজনা এতটাই ছিল যে অতিথিকে সেই মুহুর্তে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি। মি: জিন্নাহ অনেক চেষ্টা করেও স্যার দিনশার মত বদলাতে পারেননি। দুই ধর্মের মধ্যে বিবাহ বন্ধন হলে যে বন্ধুত্ব আর ঐক্য দৃঢ় হবে, স্যার দিনশার ওই তত্ত্ব প্রথম পরীক্ষাতেই ব্যর্থ হয়ে গেল। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে কথা বলেননি স্যার দিনশা। আর মেয়ে লেডি রতির ওপরেও নির্দেশ জারি হলো- যতদিন তিনি দিনশার বাড়িতে আছেন, ততদিন জিন্নাহর সঙ্গে কোনোভাবে দেখা করতে পারবেন না। সেখানেই শেষ নয়। কোর্ট থেকেও আদেশ বের করালেন স্যার দিনশা যেন লেডি রতি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মি: জিন্নাহ যাতে তার মেয়ের সঙ্গে দেখা না করতে পারেন। এত কিছু করেও রতি আর জিন্নাহর লুকিয়ে দেখা করা বা একে অন্যকে চিঠি লেখা থামাতে পারেননি স্যার দিনশা পেটিট। শীলা রেড্ডি তাঁর বইয়ে বলছেন, "একবার রতিকে একটি চিঠি পড়তে দেখে ফেলেন দিনশা। চিৎকার করে ওঠেন তিনি, এটা নিশ্চয়ই জিন্নাহর চিঠি। রতিকে ধরার জন্য খাবার টেবিলের চারদিকে দৌড়াতে থাকেন স্যার দিনশা, যাতে হাতেনাতে ধরে ফেলা যায় জিন্নাহর চিঠিটা। কিন্তু মেয়েকে ধরতে পারেননি তিনি।" স্যার দিনশা অসম্ভব জেদি ছিলেন, কিন্তু অসমবয়সী এই প্রেমিক যুগলের জেদ যে আরও বেশী, সেটা দিনে দিনে বেশ বুঝা যেতে লাগল। তবে দুই পক্ষই কিছুটা মাথা ঠান্ডা রেখে চুপচাপ রতির ১৮ বছর বয়স পার হওয়া অবধি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলো। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর আরেক জীবনীকার অধ্যাপক শারিফ আল মুজাহিদ বলছেন, "১৯১৮ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি লেডি রতি ১৮-তে পা দিলেন। আর সেদিনই একটা ছাতা আর এক জোড়া পোষাক নিয়ে পিতৃগৃহ ত্যাগ করলেন তিনি।" রতিকে জামিয়া মসজিদে নিয়ে গেলেন জিন্নাহ। ইসলাম ধর্মান্তরিত করে পরের দিন, ১৮ই এপ্রিল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ আর লেডি রতির নিকাহ সম্পন্ন হলো। মিস রতি ও মি: জিন্নাহ-কে নিয়ে একটি বইয়ের লেখক খওয়াজা রাজি হায়দার বলছেন, "জিন্নাহ তখন ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যদি তিনি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে করতেন, তাহলে সম্ভবত তাঁকে কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করতে হতো। সেজন্যই তিনি ইসলামী মতে বিয়ে করেছিলেন আর রতিও রাজি হয়েছিলেন এতে।" নিকাহনামায় ১০০১ টাকা মোহরের উল্লেখ ছিল, কিন্তু জিন্নাহ রতিকে উপহার দিলেন এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা। সেসময়ে সেটা বিশাল অঙ্কের টাকা। ২৪ বছরের ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে জিন্নাহর বিবাহ সেই সময়ে ভারতীয় সমাজের এক নম্বর গসিপে পরিণত হয়েছিল। সামাজিক আলোড়নও ফেলেছিল সেই ঘটনা। জওহরলাল নেহরুর বোন, বিজয়লক্ষী পন্ডিত তাঁর আত্মকথা, 'দা স্কোপ অফ হ্যাপিনেস' বইতে লিখছেন, "পার্শি সম্প্রদায়ের বিরাট ধনী ব্যক্তি স্যার দিনশার মেয়ের সাথে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র বিয়ের ঘটনা গোটা দেশেই আন্দোলিত হয়েছিল।" "আমি আর রতি মোটামুটিভাবে একই বয়সী। কিন্তু আমাদের দুজনের বড় হয়ে ওঠা ভিন্ন ঘরানায়। জিন্নাহ তখনকার নামী উকিল আর উঠতি নেতা। এসবকিছুই হয়তো রতির ভাল লেগে গিয়েছিল। সম্ভবত সেই জন্যই পার্শি সম্প্রদায় আর নিজের বাবার প্রবল বিরোধিতা স্বত্ত্বেও জিন্নাহকে তিনি বিয়ে করেছিলেন।" সরোজিনী নাইডুও ড: সৈয়দ মাহমুদকে পাঠানো একটি চিঠিতে জিন্নাহর বিয়ে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লিখেছিলেন, "শেষ পর্যন্ত জিন্নাহ নিজের বাসনার নীল গোলাপটা তাহলে তুলেই নিলো। আমার মনে হয় মেয়েটি যে কত বড় আত্মত্যাগ করেছে, তা বোধহয় সে কল্পনাও করতে পারছে না। কিন্তু জিন্নাহর এটা কৃতিত্ব, সে রতিকে খুবই ভালবাসে। আত্মকেন্দ্রিক আর চাপা স্বভাবের জিন্নাহর এটা একটা মানবিক চেহারা।" খওয়াজা রাজি হায়দার বলছেন জিন্নাহর যারা প্রশংসা করে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সরোজিনী নাইডু। ১৯১৬ সালের কংগ্রেস অধিবেশন চলাকালীন তিনি জিন্নাহকে নিয়ে একটি কবিতাও লিখেছিলেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর আরেক জীবনীকার হেক্টর বোলিথো তাঁর বইতে এক বৃদ্ধা পার্শি মহিলার কথা উল্লেখ করেছেন, যাঁর ধারণা ছিল যে সরোজিনী নাইডুরও জিন্নাহর প্রতি দুর্বলতা ছিল। কিন্তু জিন্নাহ সেটাকে পাত্তাই দেননি। বরং কিছুটা শৈতল্যই দেখিয়েছিলেন সরোজিনীর প্রতি। যদিও সরোজিনী নাইডু তৎকালীন বম্বের নাইটিঙ্গেল বলেই মনে করা হতো, দারুণ সুরেলা গলা ছিল তাঁর। কিন্তু সেই সুরেলা গলা জিন্নাহর মনে কোনো গান ধরাতে পারেনি। তবে শীলা রেড্ডি সরাসরিই বলেছেন যে সরোজিনী জিন্নাহর প্রেমে পড়েননি, কিন্তু উনি জিন্নাহকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। মি: জিন্নাহর আরেক জীবনী লেখক আজিজ বেগ অবশ্য নিজের বইতে লেডি রতি আর সরোজিনী নাইডু - এই দুজনেরই জিন্নাহর প্রতি প্রেম নিয়ে একটা আলাদা পরিচ্ছেদই লিখেছেন। নাম 'টু উইনসাম উইমেন'। আজিজ বেগ একটি ফরাসী প্রবাদ উল্লেখ করে লিখেছেন, "একজন পুরুষের জন্যই দুই নারী একে অন্যকে অপছন্দ করতে শুরু করেন। কিন্তু সরোজিনীর মনে রতির প্রতি কোনোরকম ঈর্ষা দেখা যেত না। বাস্তব এটাই যে জিন্নাহ আর রতির বিয়েতে তিনি সাহায্যও করেছিলেন।" লেডি রতির জীবনী লেখব খওয়াজা রাজি হায়দার ১৯১৮সালের সেই বসন্তে জিন্নাহ আর রতির উচ্ছল, খুশীতে ভরপুর চেহারা দেখেই মনে হতো যে এরা একে অন্যের জন্যই যেন তৈরি হয়েছেন, হিন্দিতে যাকে বলে 'এক দুসরে কে লিয়ে হি বনে'! রতির অপূর্ব সুন্দর শরীরে ঝলমল করতো নীল বা গোলাপি রঙের পোষাক, কখনও তাতে থাকতো সোনালী কারুকাজ। রূপা আর মার্বেল পাথরের তৈরি সিগারেট হোল্ডারে গোঁজা বিদেশী সিগারেটের ধোঁয়া যখন ছাড়তেন রতি, তখন তাঁর ব্যক্তিত্ব আলাদা মাত্রা পেত। তাঁর চলাফেরা, আদবকায়দা তো চোখে পড়ার মতোই ছিল, কিন্তু চারপাশের মানুষের কাছে সবথেকে আকর্ষণীয় হয়ে উঠত তাঁর হাসি। খওয়াজা রাজি হায়দার লিখেছেন, "মেহমুদাবাদের রাজা আমীর আহমদ খাঁয়ের বয়স তখন সাড়ে চার বছরের মতো হবে। যখন জিন্নাহ আর রতি মধুচন্দ্রিমা করতে লখনৌতে খাঁ সাহেবের বাবার প্রাসাদে গিয়েছিলেন। রতির পড়নে ছিল সাদা শাড়ি, তাতে সোনালী আর কালো রঙের পাড়। যেন ঠিক একটা পরীর মতো লাগছিল তাকে। রাজা আমির খাঁ তারপরে রতিকে দেখেন ১৯২৩ সালে, জিন্নাহ আর রতি সেসময়ে দিল্লির মেন্ডেস হোটেলে ছিলেন। খেলনা কেনার জন্য আমির খাঁকে পাঁচশো টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা।" রতি আর জিন্নাহর বন্ধু কাঞ্জি দ্বারকা দাসও তাঁর বইতে লিখেছেন, "তাঁর দিক থেকে চোখ ফেরানো যেত না। যতক্ষণ না তিনি আমার নজর দেওয়াটা ধরে ফেলছেন, ততক্ষণ সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতাম।" খওয়াজা রাজি হায়দার লেডি রতি ও মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যাপারে একটা মজাদার ঘটনা লিখে গেছেন। "একবার বম্বের গর্ভনর উইলিংডন জিন্নাহ দম্পতিকে খেতে ডেকেছেন। রতি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন একটা লো-কাট পোষাক পড়ে। খাবার টেবিলে যখন সবাই বসেছেন, তখন লেডি উইলিংডন নিজের সহচরকে বলেন যে রতি জিন্নাহকে একটা শাল এনে দিতে, সম্ভবত তাঁর শীত করছে।" "এটা শুনেই মি: জিন্নাহ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন যদি আমার স্ত্রীর শীত লাগে তাহলে তিনি নিজেই শাল চেয়ে নেবেন।" স্ত্রীকে নিয়ে ডাইনিং হল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন জিন্নাহ। উইলিংডন গর্ভনর থাকাকালীন আর গর্ভনমেন্ট হাউসে যাননি তিনি। রতির কথাবার্তা বেশ চাঁছাছোলা ছিল, স্পষ্টবাদী ছিলেন তিনি। শীলা রেড্ডি লিখেছেন, "১৯১৮ সালে লর্ড চেমসফোর্ড দুজনকে সিমলার ভাইসরয় লজে খেতে ডেকেছেন। হাতজোড় করে ভারতীয় কায়দায় ভাইসরয়কে অভিবাদন জানিয়েছিলেন রতি। ভোজনের শেষে চেমসফোর্ড রতিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তিনি যদি চান যে স্বামীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরও ফুলে ফেঁপে উঠুক, তাহলে সেরকমই করা উচিত যেমনটা রোমে থাকলে রোমের বাসিন্দারা করে থাকেন।" "রতি সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দিয়েছিলেন, 'এক্সেলেন্সি, আমি তো ঠিক সেটাই করলাম, যেটা আপনি বলছেন! ভারতে আছি, তাই ভারতীয় কায়দায় আপনাকে অভিবাদন জানালাম'!" আরেকটি মজাদার ঘটনা উল্লেখ করেছেন রাজি হায়দার। কোনও এক ভোজসভায় ভাইসরয় লর্ড রিডিংয়ের পাশে বসেছিলেন লেডি রতি। জার্মানির কথা উঠেছিল। লর্ড রিডিং বলছিলেন যে তিনি জার্মানি যেতে চান, কিন্তু যুদ্ধের পরে জার্মানরা ব্রিটেনের লোকদের পছন্দ করবে না, তাই সেখানে যাওয়া যাবে না। রতি মুখের ওপরেই বলে দিয়েছিলেন, "তো আপনি ভারতে কী করতে এসেছেন?" ইঙ্গিতটা স্পষ্ট - ভারতীয়রাওতো আপনাদের পছন্দ করে না, তাহলে এদেশে কেন এসেছেন? মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ব্যস্ততা আর স্ত্রীর সঙ্গে বয়সের ফারাক জিন্নাহ আর রতির মধ্যে ধীরে ধীরে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে দিল। তখন অল্পবয়সী স্ত্রী আর দুধের শিশুকন্যার জন্য দেওয়ার মতো সময় তাঁর হাতে বিশেষ ছিল না। জিন্নাহর একসময়কার সচিব এম সি চাগলা, যিনি পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি স্মৃতিকথায় লিখেছেন, "আমি আর মি. জিন্নাহ যখন কোনো আইনী বিষয়ে আলোচনা করতাম, তখন কয়েক সময়ে রতি একটু বেশিই সাজগোজ করে চলে আসতেন আর জিন্নাহর টেবিলের ওপরে উঠে বসে পা দোলাতেন। মনে হতো যেন কখন জিন্নাহ কথাবার্তা শেষ করে তাঁকে নিয়ে বাইরে বের হবেন।" "মি. জিন্নাহর মুখ দিয়ে অবশ্য একটা শব্দও বের হতো না। কোনোরকম বিরক্তি প্রকাশ না করেই তিনি নিজের মতো কাজ করে যেতেন। যেন লেডি রতি যে সেখানে আছে, সেটা তিনি দেখতেই পাননি"- নিজের আত্মকথা 'রোজেজ ইন ডিসেম্বর'-এ লিখেছেন মি. চাগলা। রাজি হায়দার অবশ্য মনে করেন যে দুজনের মধ্যে একটা হাল্কা দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণটা ছিল রাজনৈতিক। ১৯২৬ সাল নাগাদ ভারতের রাজনীতিতে জিন্নাহর যে অবস্থান ছিল, সেটা ১৯১৬সালে তাঁদের বিয়ের সময়ের থেকে অনেক উঁচুতে। আর এই কতগুলো বছরে মি: জিন্নাহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করেছেন। অন্যদিকে লেডি রতিও মাঝেমাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। একবার অসুস্থতার পরে ফ্রান্স থেকে এম এস রাজপুতানা নামের জাহাজে চেপে দেশে ফেরার সময়ে স্বামীকে একটা চিঠি লিখেছিলেন রতি। "আমার জন্য তুমি যা করেছ, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি তোমাকে যতটা চেয়েছিলাম, আর কোনো পুরুষমানুষকেই কোনো নারী বোধহয় অতটা চায় নি কখনও। তুমি আমাকে ওই ফুলটার মতো করেই মনে রেখ যেটা ছিঁড়ে এনেছিলে। যে ফুলটাকে তুমি পা দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছ, সেটাকে মনে রাখার দরকার নেই," লিখেছিলেন রতি জিন্নাহ। ১৯২৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী, মাত্র ২৯ বছর বয়সে রতি জিন্নাহ মারা যান। শেষ সময়টায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন কাঞ্জি দ্বারকা দাস। জিন্নাহর একসময়কার সচিব এম সি চাগলা শীলা রেড্ডি লিখছেন, "কাঞ্চিই জানিয়েছিলেন যে শেষ দিনগুলোয় রতি খুব মনমরা হয়ে থাকতেন। একবার কাঞ্জি রতিকে বলেছিলেন তাঁর আসতে একটু দেরী হবে। শুকনো মুখে রতি জবাব দিয়েছিলেন, 'ততক্ষণ অবধি যদি বেঁচে থাকি'। পরে কাঞ্জিই এক পাকিস্তানি সাংবাদিককে বলেছিলেন অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন রতি।" মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সেদিন দিল্লিতে ওয়েস্টার্ন কোর্ট ভবনে ছিলেন। তখনই একটা ট্রাঙ্ক কল আসে তাঁর কাছে। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন শ্বশুর দিনশা পেটিট। দশ বছরের মধ্যে সেই প্রথমবার দুজনের কথা হয়। মেয়ে যে খুব অসুস্থ, সেই খবরটা জিন্নাহকে জানিয়েছিলেন মি: দিনশা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ট্রেনে করে মুম্বাইয়ের দিকে রওনা হন। পথেই ভাইসরয় আর অন্যান্য মান্যগণ্যদের টেলিগ্রাম আসতে থাকে, শোকজ্ঞাপন করা টেলিগ্রাম। জিন্নাহ বুঝতে পারেন যে রতি আর এই পৃথিবীতে নেই। স্টেশন থেকে সোজা কবরস্থানে গিয়েছিলেন জিন্নাহ। সেখানে তাঁর জন্যই সকলে অপেক্ষা করছিল। সবচেয়ে কাছের আত্মীয় হিসেবে যখন জিন্নাহকে অনুরোধ করা হয়েছিল কবরে মাটি দিতে, তখন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন জিন্নাহ। সেই প্রথম, আর সেই শেষবার মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে জনসমক্ষে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল। বিবিসি বাংলার আরো খবর: | মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে এক ষোড়শীর অজানা প্রেমকাহিনী |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | ১৯৭৬ সালে প্রিন্স আবদুল্লাহ এবং তার স্ত্রীর সাথে লর্ডনের বারাকুডা রেস্তোরায় ইমোন ও'কফি। ধনী মানুষটি প্রিন্স আবদুল্লাহ বিন নাসের। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ'র নাতি এবং রিয়াদের সাবেক গভর্নরের ছেলে। কল্পনারও অতীত ধন-সম্পদের মালিক। আর গরীব মানুষটির নাম ইমোন ও'কিফি। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের একজন ফুটবলার। ছাপাখানার শ্রমিকের ছেলে। ওল্ডহ্যাম শহরে ছোট একটি বাড়িতে থাকেন। এই দুজন সেদিন কানের একটি ক্যাসিনো থেকে ফিরছেন। প্রিন্স আবদুল্লাহ জুয়ায় হেরেছেন সে রাতে। সব সময়ই হারেন তিনি। অবশ্য তাতে তার কিছু যায় আসে না। এক রাতে কয়েক হাজার ডলার নষ্ট হওয়া নিয়ে কোন সৌদি রাজপুত্রেরই কিছু যায় আসে না। ইমোন জুয়া খেলেন না। কিন্তু তিনি জিতেছিলেন সে রাতে। তার দুবছর বছর আগেও তিনি ইংলিশ তৃতীয় ডিভিশন ফুটবল লীগের ক্লাব প্লিমাথ আরগেইলের রিজার্ভ খেলোয়াড় ছিলেন। বাড়ির বিদ্যুতের বিলের পয়সা জোগাড় করতেই হিমশিম খেতেন। কিন্তু এখন তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এক ধনী পরিবারের সঙ্গী হয়ে বিমানের প্রথম শ্রেণীতে চড়ে ইউরোপ ঘুরছেন। পাঁচ তারকা হোটেলে থাকছেন। ঐ রাতে কানের গ্র্যান্ড হোটেলের লিফটে প্রিন্স আবদুল্লাহ ইমোনের চোখে চোখ রাখলেন। "আমি তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই, " আব্দুল্লাহ বললেন। ইমনের কাঁধে হাত রাখলেন, "আমার মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি।" তিনি এতটাই কাছে ছিলেন যে রাজপুত্রের শ্বাস-প্রশ্বাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন ইমোন- সিগারেট এবং হুইস্কির গন্ধ। ইমোন বললেন, "আপনি কি আমাকে আপনার ভাই হিসাবে ভালোবাসেন?" "না", আবদুল্লাহ বললেন, "ঠিক ভাইয়ের মতো নয়।" তারপর কানের ঐ হোটেলের লিফট থেকে শুরু হলো ইমোনের বিপত্তির ইতিহাস। আরো পড়ুন: কিভাবে 'তেল অস্ত্র' প্রয়োগ করেছিল আরব দেশগুলো যেভাবে জঙ্গিদের হাতে অবরুদ্ধ ছিল কাবা শরিফ না ঘুমিয়ে যেভাবে বিশ্বরেকর্ড করেন মার্কিন স্কুল বালক ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর আসল কারণ কী ছিল? ম্যানচেস্টার বয়েজ ক্লাবে খেলতেন কিশোর ইমোন (সামনে প্রথম বাঁয়ে)। ইমোন, যার বয়স এখন ৬৫, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ব্রিটেনে বড় হয়েছেন। ম্যানচেস্টারের উত্তরে ব্ল্যাকলে এলাকায় ছোট একটি সরকারি বাড়িতে থাকতেন। তিন ভাই এবং দুই বোনের সাথে তাদের নানীও থাকতেন ঐ বাড়িতে। ছোট এক বাড়িতে এত লোক রাতে শুতো কোথায়? ম্যানচেস্টারের একটি হোটেলে বসে হাসিমুখে ইমোন বললেন, "সে কথা ভেবে আমি এখনও অবাক হই।" জাতিতে আইরিশ তার বাবা স্থানীয় সেন্ট ক্লেয়ার ক্যাথলিক ফুটবল টিম নামে একটি ফুটবল দল চালাতেন। ক্লাবের জার্সিগুলো ধুয়ে ইস্ত্রি করতেন তার মা। খেলা শেষে বলগুলো কুড়িয়ে বাড়িতে এনে ধোয়ার দায়িত্ব ছিল ইমোনের । বাড়ির পাশে পার্কে ফুটবল খেলতেন ইমোন। একসময় নজর কেড়েছিলেন তিনি। এমনকি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের ইয়ুথ টিমে ডাক পেয়েছিলেন। এক ম্যাচে তার পা ভেঙ্গে যায়। ফলে ওল্ড ট্রাফোর্ডের মাঠে ফ্লাড লাইটের নীচে ফুটবল খেলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় তার। পা ভালো হলে স্টেলিব্রিজ সেলটিক নামে একটি আধা-পেশাদার ক্লাবে নাম লেখান। তখন ঐ ক্লাবের কোচ ছিলেন জর্জ স্মিথ, যিনি পরে আন্তর্জাতিক স্তরে কোচিং করিয়েছেন। স্টেলিব্রিজ ছেড়ে জর্জ সৌদি আরবের সবচেয়ে ধনী এবং বড় ক্লাব আল হিলালের ম্যানেজারে চাকরি নিলেন। জর্জ চলে যাওয়ার পর স্টেলিব্রিজ ছেড়ে ৩০০ মাইল দূরে প্লিমাথে চলে যান ইমোন। কিন্তু প্লিমাথে যে পয়সা তিনি পেতেন, তা দিয়ে বাড়ি ভাড়ার পয়সাও হতো না। এক বছর না যেতেই বাড়ি ফিরে গেলেন। একদিন আরবি ডাকটিকেট লাগানো একটি চিঠি পেলেন তিনি। চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন সৌদি আরব থেকে জর্জ স্মিথ। এক মাসের ট্রায়ালের জন্য তিনি ইমোনকে সৌদি আরবে আসতে লিখেছেন। ট্রায়ালে ভালো করলে এবং সৌদি আরবের গরম সহ্য করতে পারলে ক্লাবের প্রথম ইউরোপীয় খেলোয়াড় হিসাবে তিনি আল হিলালে যোগ দিতে পারবেন। "নভেম্বর মাস ছিল তখন। ম্যানেচেস্টারে তখন বরফ পড়ছিলে," স্মৃতিচারণ করছিলেন ইমোন, "আমি ভাবলাম প্রস্তাবটি খারাপ নয়।" কিন্তু শুধু যে আবহাওয়ার কারণেই তিনি প্রস্তাবটি লুফে নিয়েছিলেন তা নয়, পয়সা ছিল প্রধান বিবেচনা। ইমোন তখনই বিবাহিত, দুটি সন্তান। ভেবেছিলেন সৌদি আরবে গেলে হয়তো বাড়ির মর্টগেজটা দ্রুত শোধ করতে পারবেন। লন্ডনে গিয়ে কায়রো, জেদ্দা হয়ে রিয়াদের প্লেন ধরলেন ইমোন। জেদ্দায় নেমেই বুঝলেন তিনি ভিন্ন ধরণের একটি দেশে এসেছেন। তার হাতে ছিল ইংলিশ ট্যাবলয়েড সানডে এক্সপ্রেস। একজন সৌদি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার পত্রিকাটি নিয়ে কাঁচি দিয়ে প্রতি পাতায় মেয়েদের ছবির মুখগুলো কেটে ফেললেন। এরপর থেকে ইমোন পদে পদে টের পেয়েছেন যে তিনি ভিন্ন একটি সংস্কৃতির দেশে এসেছেন। বর্তমানে ম্যানচেস্টারে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন ইমোন ও'কফি। রিয়াদে তাকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে রানওয়েতে অপেক্ষা করছিলেন জর্জ। বিশাল এক বুইক গাড়ির বনেটে বসে ছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টারে ফিস অ্যান্ড চিপস খাওয়াটাই যেখানে বড় ব্যাপার ছিল, সেখানে রিয়াদে এসে ইমোন উঠলেন পাঁচ তারকা হোটেলে। খাবার-পানীয় সব ফ্রি। ২২ বছরের ইমোন যেন রাতারাতি ভিন্ন এক জগতে এসে পড়লেন। ১৯৭৩ সালে বিশ্বের জ্বালানি তেলের সঙ্কটের কারণে সৌদি অর্থনীতি তখন ফুলে ফেঁপে উঠছিলো। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে সৌদি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩,০০০ শতাংশ। ফলে ক্ষমতাবান মানুষদের পকেটে এসেছিলো অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা। তেমনই এক ধনী ক্ষমতাবানের সাথে দেখা হলো ইমোনের। রিয়াদের আল হিলালের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে তার সাথে দেখা হলো প্রিন্স আবদুল্লাহ বিন নাসেরের। ইমোন তখনও ট্রায়ালে রয়েছেন। একটি প্রাকটিস ম্যাচ চলাকালে নীল রঙের এক বুইক গাড়িতে চড়ে মাঠে এলেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট প্রিন্স আবদুল্লাহ। "জর্জ আমাকে বললেন ঐ যে গাড়ি, ঐ গাড়িতে আমাদের প্রেসিডেন্ট। তোমাকে ক্লাবে রাখা হবে কি হবে না, সেই সিদ্ধান্ত উনিই দেবেন। ভালো করে খেল।" সে সময় রাইট উইং থেকে বলের পাস এলো। গোলের সামনেই ছিলেন ইমোন। হেড করে বল জালে ঢুকিয়ে দিলেন। "গুলির মতো বলটি কোণা দিয়ে জালে ঢুকেছিল। সত্যিই গুলির মত।" পাঁচ মিনিট পর লেফট উইং থেকে আসা আরেকটি পাস থেকে আবারো গোল করলেন ইমোন। ম্যাচের বিরতিতে কানের কাছে ফিসফিস করে জর্জ বললেন, "টাকা নিয়ে তোমার মনে যা রয়েছে, তার শেষে একটি বাড়তি শূন্য বসিয়ে নিও।" ম্যাচের পরপরই প্রিন্সের সাথে দেখা করতে গেলেন ইমোন। তখনও গায়ে ঘামে ভেজা জার্সি, শর্টস। আবদুল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন হোটেল ঠিক আছে কিনা। তিনি খুশি কিনা। ইমন উত্তর দিলেন সব ঠিক আছে। প্রিন্স তখন জর্জকে জিজ্ঞেস করলেন, ইমানের পারফরমেন্সে তিনি খুশি কিনা। জর্জ বললেন - হ্যাঁ। "তাহলে হোটেলে গিয়ে আপনার চাহিদা কি তা ঠিক করে ফেলেন," বললেন আবদুল্লাহ। ৭০ দশকে সৌদি ক্লাব আল হিলালিতে ইমোন ও'কফি (ডান থেকে দ্বিতীয়)। জর্জের সাথে বসে ইমোন একটি তালিকা বানালেন : টাকা, গাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ইংল্যান্ডে যাওয়ার ফ্লাইটের ভাড়া, বড় হওয়ার পর দুই ছেলের প্রাইভেট স্কুলের খরচ। পরের ট্রেনিংয়ের দিনে প্রিন্স এলে তালিকাটি তার হাতে তুলে দেন জর্জ। প্রিন্স দেখে বললেন, "কোনো সমস্যা নেই।" দেশে ইমোনের তখন আয় ছিল সপ্তাহে ৪০ পাউন্ড, সেই সাথে ফুটবল খেলে পেতেন ১৫ পাউন্ড। আল হিলালে তার সাপ্তাহিক আয় দাঁড়ালো ১৪০ পাউন্ড, যা এখনকার ১,১০০ পাউন্ডের সমান। কোনো কর নেই, বিল নেই, বাসা-ভাড়া নেই। চুক্তি চূড়ান্ত করে ইমোন ফিরে গেলেন ম্যানচেস্টারে। পরিবার নিয়ে ফিরলেন রিয়াদে। প্রথমে উঠলেন একটি হোটেলে। "অনেক বিল হতো, কিন্তু তা নিয়ে কখনই কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।" ইমোনের স্ত্রী রিয়াদে ফার্স্ট ন্যাশনাল সিটি ব্যাংকে চাকরি নিলেন। সপ্তাহে দুদিন প্রশিক্ষণের বাইরে ইমোনের সময় কাটতো বাচ্চাদের নিয়ে আয়েশে। তাদের নিয়ে প্রতিদিনই সুইমিং পুলে কাটাতেন। প্রথম দিন থেকেই আবদুল্লাহ ইমানকে পছন্দ করেছেন। তাকে একটি গাড়ি কিনে দিলেন প্রিন্স। একটি সিলভার রংয়ের পনটিয়াক ভেনচুরা। প্রায়ই ইমোনকে চায়ের দাওয়াত দিতেন। একসাথে বড় স্ক্রিনের টিভিতে ফুটবল দেখতেন। নিজের পরিবার নিয়ে কথা বলতেন প্রিন্স। অসম বন্ধুত্ব। কিন্তু সৌদি রাজ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতাকে ইমোন উপভোগ করতেন। তিনি দেখলেন রাজপরিবারের হয়েও সৌদিরা খুবই সাদাসিধে মানসিকতার মানুষ। ফুটবল মাঠেও সময় ভালোই যাচ্ছিলো। কিংস কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় ক্লাব। মৌসুম শেষে ছুটি কাটাতে ইংল্যান্ডে গেলেন ইমোন। যাওয়ার আগে আবদুল্লাহ ইমোনের বাড়ির ফোন নম্বর চাইলেন। "আমিও ইংল্যান্ডে যাবো, দেখা হবে আমাদের।" তিন সপ্তাহ পর, আবদুল্লাহ ইমোনের মায়ের বাড়িতে ফোন করেন। ফোন তুলেছিলেন তার মা। ইমোন ফোন ব্যাক করলেন। প্রিন্স ছিলেন লন্ডনে হ্যারডসের কাছে কার্লটন টাওয়ার হোটেলে। দুদিন পর তার সাথে দেখা করতে ইমোন লন্ডনে গেলেন। ট্রেন স্টেশনে তার জন্য বিলাসবহুল গাড়ি অপেক্ষা করছিলো। লন্ডনে সৌদি টাকা উড়তে দেখছিলেন ইমোন। প্রিন্স সেসিল গি'র ছয়টি স্যুট কিনলেন। তার একজন সহকারীর জুতোর প্রয়োজন হলে প্রিন্স ইমোনকে ২০০ পাউন্ড দিয়ে দোকানে পাঠালেন। "এ যেন অন্য এক জগত।" আব্দুল্লাহ ইমোনকে বললেন, তার ইউরোপ সফরে সে সঙ্গী হবে কি-না। প্রথমে প্যারিস, তারপর কান, রোম, কায়রো হয়ে রিয়াদে ফেরত। এই সফরে আবদুল্লার স্ত্রী কিছু আসবাব কিনতে চান, আর প্রিন্স চান ইউরোপের কাসিনোতে পয়সা ওড়াতে। ইমোন রাজী হলেন। এক সপ্তাহ পর লিমুজনে চড়ে গেলেন হিথরো বিমানবন্দরে, সৌদি রাজপুত্রের সাথে ইউরোপ সফরের জন্য। ততদিনে ইমোনের সাথে আবদুল্লার অনেকটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। "আমাদের বোঝাপড়া ছিল দারুণ। সবসময় হাসি ঠাট্টা হতো। অনেক মানুষ যে তার পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রিন্স বিরক্ত থাকতেন। প্যারিসের চার্লস দ্য গল বিমানবন্দরে প্রিন্সকে অভ্যর্থনা জানাতে এলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। বিমানবন্দরে যখন সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলছিলেন হাতের একটি ব্যাগ রাখতে দিয়েছিলেন ইমোনকে। এক ঘণ্টা পর হোটেল রুমে ফোন করে ব্যাগটি চাইলেন তিনি। রাজপুত্রের হোটেল রুমে গেলে ব্যাগ খুলে তিনি ইমোনকে দেখালেন ব্যাগের মধ্যে স্তরে স্তরে সাজানো ফরাসী মুদ্রা - ফ্রাঁ। "অথচ বিমানবন্দরে আমি কিন্তু কফি আনতে গিয়ে এই ব্যাগটি চেয়ারে রেখে গিয়েছিলাম। বোঝেন অবস্থা।" সৌদি পেশাদার ফুটবলে প্রথম ইউরোপীয় ছিলেন ইমোন ও'কফি। সে রাতে প্যারিসের সেইন নদীতে নৌবিহার এবং সেই সাথে ডিনার সারলেন তারা। দুদিন পর রওয়ানা হলেন কানে। কানে পৌঁছে তারা দুজন একরাতে গেলেন ক্যাসিনোতে। ফেরার পথে হোটেলের লিফটে রাজপুত্র আবদুল্লার ঐ প্রস্তাব - "ইমোন আমি তোমাকে ভালোবাসি"। ইমোন বললেন, ঐ কথা শোনার পর তার মনে হয়েছিল লিফটটি খুব যেন ছোটো, অপ্রশস্ত। "লিফটের দরজা খুলতে ১৫ সেকেন্ড লেগেছিল। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যেন এক মাস। ভয়ঙ্কর এক শীতলতা এসে ভর করলো।" ইমোন তার মনোভাব বুঝিয়ে দিলেন - তিনি সমকামী নন, তিনি শুধু ফুটবল খেলতে চান। অন্য কিছু নয়। তারপর পুরো পরিবেশটাই যেন বদলে গেল।। সফর সূচিও বদলে গেল। তিনদিনের বদলে রোমে তারা থাকলেন একদিন। তারপর কায়রোতে না থেমে সোজা রিয়াদে। পরিবেশটা যেন বরফের মতো হয়ে গেল। ইমোন বিব্রত হলেও ভীত হননি। আবদুল্লাহ তাকে বলেছিলেন, তাদের সম্পর্ক এখন শুধু ক্লাব প্রেসিডেন্ট এবং একজন খেলোয়াড়ের মতো হবে।। ইমোন তার কথা বিশ্বাস করেছিলেন। "এক মুহূর্তের জন্যও আমার মনে হয়নি আমি কোনো বিপদে পড়ে গেছি। আমি ভাবছিলাম আমার সাথে চুক্তি হয়েছে, সুতরাং সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে।" কিন্তু রিয়াদে ফিরে পরিস্থিতি বদলে গেল। সমকামিতা সৌদি আরবে নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজপরিবারের ক্ষমতা অপরিসীম। ফলে রিয়াদে ফিরে ইমোন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন - যদি প্রিন্স চাপ সৃষ্টি করে। তিনি জর্জকে সব কথা খুলে বললেন। জর্জের কাছ থেকে ভরসা চাইলেন, কিন্তু পেলেন না। "তুমি একটা গাধা। তুমি মনে করছো ওরা থেমে যাবে।" জর্জ স্মিথের বয়স এখন ৮৪। এখনও ফুটবলের দিকে নজর রাখেন। তিনি কি এখনও ইমোনকে মনে রেখেছেন। "অবশ্যই," রচডেল থেকে টেলিফোনে তিনি উত্তর দিলেন। "আমিই তো তাকে ফুটবলার বানিয়েছিলাম।" আবদুল্লাহর সাথে ইমোনের মাখামাখি নিয়ে তিনি কিছুটা অস্বস্তি- আতঙ্কে ছিলেন। "আমার মনে হতো তারা খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। আমার এই মনোভাবের কথা প্রেসিডেন্টও জানতেন।" সৌদি আরবের মরুভূমিতে ইমোন ও'কফি। কানের ঘটনা শোনার পর জর্জ ইমোনকে দ্রুত সৌদি আরব ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। "আমি বুঝতে পারছিলাম সে বিপদে পড়ে গেছে। যে কোনো কিছু ঘটতে পারে।" কেমন সেটা? "ঈশ্বর জানেন। কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু। রাজপরিবারের ইচ্ছা অমান্য করা মহা অপরাধ।" ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গেলেন ইমোন। দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান একজন ব্যক্তির গোপন কথা তিনি জেনে ফেলেছিলেন। জর্জের বাড়ির সোফায় সারারাত তার নির্ঘুম কাটলো। ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু একটি সমস্যা এসে হাজির হলো। সৌদি আরব ছাড়তে হলে তার নিয়োগকর্তার লিখিত অনুমতি লাগে। হঠাৎ ইমোনের মনে হলো সে যেন সোনার খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়েছে। পরদিন ইমোন মিথ্যা বলার সিদ্ধান্ত নিল। প্রিন্স আব্দুল্লাহকে গিয়ে সে বললো তার বাবা অসুস্থ। দ্রুত তাকে ইংল্যান্ড যেতে হবে। আব্দুল্লাহ শুনলেন, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত দিলেন না। বললেন, কাল কথা হবে। পরদিন ফুটবল ক্লাবে আবদুল্লাহর সাথে দেখা করতে গেলেন ইমোন। দরজা বন্ধ করে দিলেন প্রিন্স। কর্মচারীদের বললেন তাদের যেন বিরক্ত না করা হয়। তারপর ইমোনকে জিজ্ঞেস করলেন, "ফ্রান্সে যা হয়েছিল তার জন্যই কি তুমি দেশে যেতে চাইছো? আমি বিশ্বাস করি না তুমি আর ফিরে আসবে।" ইমোন যখন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আব্দুল্লাহ একটি কাগজ এবং কলম নিয়ে আরবিতে কিছু লিখলেন। একটি চুক্তিপত্র। ইমোন দেশে যেতে পারবেন, কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের জন্য। শুধু তাকে এই চুক্তিতে সই করতে হবে। ইমোন আরবি পড়তে পারলেন না। ফলে তিনি সই করলেন না। তবে সাথে সাথে একটি বুদ্ধি তার মাথায় এলো। "আপনি আমাকে সই করতে বলছেন?" ইমোন জিজ্ঞেস করলেন, "আরবিতে লেখা এই চুক্তিপত্রে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন? ঠিক আছে তাতে সমস্যা নেই।" জিমি হিল। তার মধ্যস্ততায় সৌদি এফএ ছাড়পত্র দিয়েছিল ইমোন ও'কফিকে ইমোন পেন হাতে নিলেন এবং সই করতে উদ্যত হলেন। শেষ মুহূর্তে আব্দুল্লাহ পেন ছিনিয়ে নিলেন, কাগজটি ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর বললেন, "আমি তোমার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছি।" ধোঁকা কাজে দিয়েছিল। পরদিন অল্প কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে ইমোন বিমানবন্দরে গেলেন যাতে আব্দুল্লাহ সন্দেহে না করেন যে তিনি একেবারে চলে যাচ্ছেন। তিনি কি তখনও ভয়ে ছিলেন? "অবশ্যই। কারণ হঠাৎ যদি আব্দুল্লাহ বলে বসেন তুমি যেতে পারবে না। বিমান আকাশে ওড়ার পরও আমি ভয় পাচ্ছিলাম।" লন্ডনে বিমান নামার পর হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। তবে ইংল্যান্ডে ক্যারিয়ার শুরুটা কঠিন ছিল। ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে রেজিস্ট্রি করতে সৌদি আরবের ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিলো। কিছু ছাড়পত্রের বদলে রিয়াদ থেকে তিনি একটি ফ্যাক্স পেলেন। ক্ষতিপূরণ দাবির একটি তালিকা : - চুক্তি ভঙ্গের দায়ে ৯,০০০ সৌদি রিয়াল (বর্তমানে ৮,০০০ পাউন্ডের সম-পরিমাণ) - রিয়াদে তার অ্যাপার্টমেন্টের শীতাতপ যন্ত্র মেরামতের খরচ ১৫০০ রিয়াল - আব্দুল্লাহর কাছ থেকে ধার নেওয়া ৩০০ পাউন্ড - এক মাসের বেতন ফেরত ইমোনকে পাঠানো জিমি হিলের টেলিগ্রাম। তালিকার এক এবং চার নম্বরটি মানতে রাজী ছিলেন ইমোন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত হলেন যে বাকি দাবিগুলো ছিল আবদুল্লাহর প্রতিশোধ। বললেন, শীতাতপ যন্ত্র একদম ঠিক ছিল, এবং তিনি কখনই আবদুল্লাহর কাছ থেকে এক পয়সাও ধার করেননি। ইমোন এফএর সাথে কথা বললেন। এরপর ২২শে নভেম্বর, ১৯৭৬ এ তিনি লন্ডন থেকে একটি টেলিগ্রাম পেলেন। "জরুরী দরকার, প্লিজ রিং।" নীচে সৌদি ফুটবলের নতুন প্রধান জিমি হিলের নাম। ১৯৭৬ সালে জিমি হিল ছিলেন ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তি। ১৯৭০ সাল থেকে তিনি বিবিসির প্রধান ফুটবল অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। ইমান তাকে ফোন করলেন। ইমানের বাবা ট্রেড ইউনিয়ন করতেন। তিনি বললেন, কানে কী হয়েছিল তা তিনি ফিফা এবং পুরো বিশ্বকে বলবেন। দুই সপ্তাহ পর, একটি বৈঠকের আয়োজন করা হলো - ইমোন, জর্জের একজন বন্ধু এবং আল হিলাল ক্লাবের একজন প্রতিনিধির মধ্যে। বৈঠকে আল হিলালের প্রতিনিধি কিছুটা ব্যাঙ্গ করে ইমোনকে বললেন, "আপনি সৌদি আরবে থাকলে আপনার কি এমন হতো?" "বিষয়টি যখন আপনার পরিবার নিয়ে, তখন তো ঝুঁকি নেওয়া যায়না," শক্ত জবাব দিলেন ইমোন। অনেক তর্ক হয়েছিল ঐ বৈঠকে। এক সপ্তাহ পর ইমোনকে ছাড়পত্র দিলো সৌদি এফএ। তবে ইংল্যান্ডে ফেরার পর আবারো অর্থকষ্ট শুরু হলো ইমোনের। বেতনের টাকা পড়ে ছিল সৌদি ব্যাংক আ্যাকাউন্টে। তা তুলতে পারেননি। বাড়ি বেচতে হলো তাকে। ম্যানচেস্টার ইভনিং পত্রিকায় কাজ নিলেন। পরে সেমি-প্রফেশনাল ক্লাব মসলিতে খেলা শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে ইমোন ২৫,০০০ পাউন্ডে এভার্টন ক্লাবে যোগ দেন। ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ লীগে খেলার সুযোগ হয় তার। এভার্টনের হয়ে প্রথম ডিভিশনে তিনি ২৫টি ম্যাচ খেলেন। পরে উইগ্যান অ্যাথলেটিক্সে যোগ দেন। এরপর আইরিশ রিপাবলিক জাতীয় দলের হয়েও পাঁচটি ম্যাচ খেলেন ইমোন। ইমোন ও'কফি এখনো এভার্টন ক্লাবে খণ্ডকালীন কাজ করেন। সৌদি আরব থেকে চলে আসার পর ফুটবলার হিসাবে তার এই সাফল্যের জন্য আবদুল্লাহকে মনে মনে ক্ষমা করে দিয়েছেন ইমোন। "কানের লিফটের মধ্যে ঐ ঘটনা যদি না ঘটতো, তাহলে হয়তো আমি সৌদি আরবেই থেকে যেতাম। কখনই আমার এভার্টনের জন্য খেলা হতো না। আয়ারল্যান্ডের জন্য খেলা হতো না।" প্রিন্স আব্দুল্লাহ ১৯৮১ পর্যন্ত আল হিলালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ইমোন চলে আসার পর তিনি আরো অনেক বিদেশী ফুটবলার কিনে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী দলের রিভেলিনো খেলেছেন আল হিলালে। ঐ ক্লাব এখন এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব। ইমোনের এই গল্প নিয়ে সৌদি সরকারের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন বা আল হিলাল ফুটবল ক্লাব কেউই কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে। প্রিন্স আব্দুল্লাহ সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। কারণ তার মত এমন শত শত রাজপুত্র সৌদি আরবে রয়েছেন। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সউদের ৪৫ জন ছেলে ছিল। তাদের একজনের সন্তান ছিলেন আব্দুল্লাহ। আল হিলাল ক্লাবের ওয়েবসাইট থেকে অবশ্য জানা যায় আব্দুল্লাহ বেঁচে নেই। মধ্যপ্রাচ্যের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে তিনি মারা যান। আরবি উইকিপিডিয়ায় তার সম্পর্কে ৪০০ শব্দের একটি বর্ণনা রয়েছে - আবদুল্লাহর তিনজন স্ত্রী এবং সাতটি সন্তান ছিল। ইমোন ও'কিফি আয়ারল্যান্ডের কর্ক সিটি ক্লাবের ম্যানেজারের দায়িত্ব শেষ করে ইংল্যান্ডের চেশায়ার কাউন্সিলে কাজ করেছেন। পরে পর্তুগালে কাটিয়েছেন কিছুদিন। এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন ম্যানচেস্টারে। ২০১৭ সালে তার ক্যানসারের চিকিৎসা হয়। সেরে উঠছেন এখন। সৌদি রাজপুত্রকে নিজে ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা নিয়ে তিনি ৪০ বছর ধরে খুব একটা মুখ খোলেননি। কিন্তু এখন তিনি চান সৌদি ঐ ক্লাবের সেই সময়কার সহকর্মীরা জানুক কেন তিনি হঠাৎ না বলে কয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। | ইতিহাসের সাক্ষী: সমকামী সৌদি রাজপুত্র, ইংলিশ ফুটবলার এবং প্রস্তাব |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | জর্জ ফ্লয়েড যে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে আটক করেছিল তাদের বারবার বলে যে সে নি:শ্বাস নিতে পারছে না মিনিয়াপোলিস অঙ্গরাজ্যের একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড। ২৫শে মে তারিখ সন্ধ্যায় সন্দেহভাজন একটি প্রতারণার ব্যাপারে কল পেয়ে পুলিশ তাকে ধরে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় জর্জ ফ্লয়েড নি:শ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বলছেন, "আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না"। এই ঘটনা যেদিন ঘটে সেইদিনই আর একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেটি ছিল নিউইয়র্কে এক শ্বেতাঙ্গ নারীর পোষা কুকুর নিয়ে তুচ্ছ একটা বিতর্কের জেরে পুলিশ ডাকার এবং এর জন্য পুলিশের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ওপর চড়াও হবার ঘটনার। পুলিশের গুলিতে ২০১৯ সালে মারা গেছে এক হাজারের বেশি মি. ফ্লয়েডের মৃত্যু আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যুর ঘটনার উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সামনে এনেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে একজন পুলিশ অফিসার কীভাবে তার হাঁটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছে ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে ১০১৪ জন এবং বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে যে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা। দেশটিতে পুলিশি নির্মমতার প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছে # BlackLivesMatter (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনওমূল্যবান) নামের আন্দোলন। গায়ক বিয়োন্সে, বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমসের মত তারকারা এই আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। আমেরিকায় পুলিশের নৃশংস আচরণে মৃত্যুর যেসব ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল: ট্রেইভন মার্টিন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ ট্রেইভন মার্টিনের ছবি ট্রেইভন মার্টিন ছিল ১৭ বছর বয়সী একজন কৃষ্ণাঙ্গ স্কুল ছাত্র। ফ্লোরিডার স্যানফোর্ডে জর্জ জিমারম্যান নামে একজনের গুলিতে সে প্রাণ হারায়। মার্টিন একটি ঘেরা এলাকায় তার আত্মীয়দের সঙ্গে যখন দেখা করতে ঢোকে, তখন ওই এলাকার একজন স্বেচ্ছাসেবক চৌকিদার হিসপ্যানিক জর্জ জিমারম্যান তাকে বাধা দেয়। জুরি ২০১৩ সালে মি. জিমারম্যানকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। আমেরিকান আইনে জিমারম্যান বলতে পেরেছিল যে আত্মরক্ষার স্বার্থে সে গুলি চালিয়েছিল এবং সেটাই এই মামলায় তার পক্ষে যায়। কিন্তু তরুণ ট্রেইভনের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা সবসময় বলে এসেছে জিমারম্যান তাকে খুন করেছে। এই হত্যার ঘটনা থেকেই জন্ম নেয় 'কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান' নামের সামাজিক আন্দোলন। এরিক গার্নার, ১৭ই জুলাই ২০১৪ এরিক গার্নার এরিক গার্নার মারা যান নিউইয়র্কে দম বন্ধ হয়ে। খুচরা সিগারেট অবৈধভাবে বিক্রি করছেন এই সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার ফুটেজে দেখা যায় মি. গার্নার বারবার কান্নাজড়ানো গলায় আকুতি করছেন, "আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না" আর একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ, ড্যানিয়েল পান্টালিওকে দেখা যায় তার হাত দিয়ে গার্নারের গলা টিপে ধরে আছেন এমনভাবে যাতে তিনি দম নিতে না পারেন। দুজনেই মাটিতে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে। ওই রাজ্যের গ্র্যান্ড জুরি রায় দেয় পুলিশ অফিসার পান্টালিও-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আনা হবে না। এ ঘটনার পর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। ঘটনার পাঁচ বছর পর নিউ ইয়র্কের পুলিশ বিভাগ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: করোনাভাইরাস সংক্রমণে আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে ট্রাম্পের পোস্ট বিভ্রান্তিমূলক বলে টুইটারের সতর্কবার্তা কীভাবে একশরও বেশি ইহুদির প্রাণ বাঁচান তিন মুসলিম কূটনীতিক মাইকেল ব্রাউন, ৯ই অগাস্ট ২০১৪ মাইকেল ব্রাউন, মিসৌরিতে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউনের এক বাদানুবাদের জেরে ওই পুলিশ অফিসারের গুলিতে নিহত হন ব্রাউন। এই ঘটনার পর 'কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান' আন্দোলন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সামনে আসে। মিসৌরির ফার্গুসন এলাকার ওই ঘটনার পর সহিংস বিক্ষোভ হয়, যে বিক্ষোভে মারা যায় এক ব্যক্তি, আহত হয় অনেক এবং কয়েকশ লোককে ধরপাকড় করা হয়। ওই বছরই নভেম্বর মাসে জুরি পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেবার পর আবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলে এবং উইলসন পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। ওয়াল্টার স্কট, ৪ এপ্রিল ২০১৫ ওয়াল্টার স্কট দক্ষিণ ক্যারোলাইনার নর্থ চালর্সটনের ৫০ বছর বয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তি ওয়াল্টার স্কট যখন পুলিশ অফিসার মাইকেল স্ল্যাগারের কাছ থেকে ছুটে পালাচ্ছিলেন তখন তাকে পিঠে তিনবার গুলি করা হয় এবং মারা যান মি. স্কট। মি. স্কটের গাড়ির ব্রেকের একটা আলো ভেঙে গিয়েছিল এবং পুলিশ তার গাড়ি থামিয়েছিল। মি. স্কট তার সন্তানের খোরপোশের অর্থ দিতে দেরি করায় তখন তার নামে পুলিশের একটা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। মি. স্কট গ্রেপ্তার এড়াতে দৌড় দেন। পুলিশ অফিসার স্ল্যাগারের বিশ বছরের কারাদণ্ড হয় ২০১৭ সালে। নর্থ চালর্সটন কর্তৃপক্ষ ওয়াল্টার স্কটের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৫ লাখ ডলার দেয়। ফ্রেডি গ্রে, ১২ই এপ্রিল ২০১৫ ফ্রেডি গ্রে পুলিশের গুলিতে ওয়াল্টার স্কটের মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আরেকটি বিতর্কিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পঁচিশ বছর বয়সী ফ্রেড গ্রে-র পকেটে একটি ছুরি পাবার পর অস্ত্র বহন করার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় মি. গ্রে আর্তচিৎকার করছেন। কয়েক ঘন্টা পর তাকে মেরুদণ্ডের গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ পর মি. গ্রে মারা যান। ঘটনার পর ব্যাপক সহিংস প্রতিবাদ হয় যাতে অন্তত বিশজন পুলিশ অফিসার আহত হন। কিন্তু মি. গ্রে-কে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে জড়িত ছয়জন পুলিশ অফিসারের মধ্যে যে তিনজনকে আদালতে হাজির হতে হয়েছিল তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয় এবং বাকি তিনজনকে কখনও অভিযুক্তই করা হয়নি। সান্ড্রা ব্ল্যান্ড, ১৩ই জুলাই ২০১৫ সান্ড্রা ব্ল্যান্ড-এর ছবিসহ প্ল্যাকার্ড টেক্সাস রাজ্য পুলিশ বাহিনীর সদস্য ব্রায়ান এনসিনিয়া ট্রাফিক আইন লংঘনের ছোটখাট এক অভিযোগে ২৮ বছর বয়স্ক সান্ড্রা ব্ল্যান্ডের গাড়ি থামায়। পুলিশ যখন তার দিকে আসছিল সান্ড্রা তখন একটা সিগারেট ধরিয়েছিল। সান্ড্রা সিগারেট নিভিয়ে ফেলতে অস্বীকার করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ অফিসারের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। তিনদিন পর কারাগারে আত্মহত্যা করেন সান্ড্রা। সান্ড্রা ব্ল্যান্ড পুলিশের হাতে মারা না গেলেও তার মৃত্যুতে আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ হয়। তার ঘটনায় #সেহারনেম নামে আরেকটি জনপ্রিয় আন্দোলন হয়, যে আন্দোলনের মাধ্যমে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা কীভাবে পুলিশি নির্মমতার শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস নেয়া হয়। আতাতিয়ানা জেফারসন, ১৩ই অক্টোবর ২০১৯ আতাতিয়ানা জেফারসন ডালাসের ফোর্থ ওয়ার্থে ২৮ বছর বয়সী আতাতিয়ানা জেফারসনকে তার নিজের শোবার ঘরে গুলি করেন পুলিশ অফিসার অ্যারন ডিন। মিস জেফারসনের সদর দরোজা খোলা আছে একথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন করে তার এক প্রতিবেশি এবং পুলিশ অফিসার অ্যারন ডিনকে সেখানে পাঠানো হয়। মি. ডিন তার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে তাকে গুলি করে। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এখনও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ব্রেওনা টেলর, ১৩ই মার্চ ২০২০ ব্রেওনা টেলর ব্রেওনা ২৬ বছর বয়সী জরুরি চিকিৎসা বিষয়ক একজন প্রকৌশলী ১৩ই মার্চ লুইভিলের কেন্টাকিতে তার ফ্ল্যাটে ঢুকে পুলিশ অফিসাররা তাকে আটবার গুলি করে। তারা ওই বাসায় অবৈধ মাদক আছে এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়েছিল। অনুসন্ধানের জন্য তাদের কাছে পরোয়ানা ছিল। কিন্তু ব্রেওনার ফ্ল্যাটে কোন মাদক পাওয়া যায়নি। ব্রেওনা টেলরের পরিবারের ধারণা তারা ব্রেওনাকে খুঁজছিল না। কিন্তু তারা খুঁজছিল এমন এক সন্দেহভাজনকে যার সাথে ব্রেওনার কোনই সম্পর্ক ছিল না এবং সেই সন্দেহভাজন তখন পুলিশি হেফাজতেই ছিল। সেই ব্যক্তি কখনই ওই ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দা ছিল না। লুইভিলের পুলিশ জানায় একজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়। ওই গুলিতে একজন পুলিশ আহত হয়েছিল বলে তারা জানায়। | আমেরিকায় পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার খতিয়ান, সর্বশেষ বলি জর্জ ফ্লয়েড |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | ২০১০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম মেয়র নির্বাচনের একটি ভোট কেন্দ্র এ নিয়ে আগামী ৬ই মে সারা দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি, টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র পদ্ধতি বহাল রাখা হবে কি-না, তা নিয়েও এক গণভোট হতে যাচ্ছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, কনজারভেটিভ এবং গ্রিন পার্টির রাজনীতিকরা মেয়র পদ্ধতি বিলোপের পক্ষে একযোগে প্রচার চালাচ্ছেন। তারা গড়ে তুলেছেন 'লিডিং টুগেদার' ক্যাম্পেইন। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী এবং বারার বর্তমান মেয়র জন বিগস নিজেও এই প্রথা বিলোপের পক্ষে, যদিও এর পেছনেও রয়েছে স্থানীয় রাজনীতি। এরা চাইছেন, সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচনের পদ্ধতি বিলোপ করে তার জায়গায় কাউন্সিলে 'লিডার ও ক্যাবিনেট' পদ্ধতি চালু করতে। ব্রিকলেনের ভোটেকন্দ্রে এজেন্টদের ভীড়। ছবিটি ২০১০ সালে তোলা। আরও পড়তে পারেন: তাদের যুক্তি: এর মাধ্যমে ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলারদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে এবং ক্ষমতার সুষম বণ্টন সম্ভব হবে। মূলত একজন নির্বাহী মেয়র থাকলে বারার কাউন্সিলাররা আর পাদপ্রদীপের আলোতে থাকতে পারেন না। সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন একজন মেয়র। অন্যদিকে, এই প্রস্তাবের বিপক্ষে মাঠে নেমেছেন প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান। ব্যারোনেস পলা উদ্দিনের মতো কিছু রাজনীতিক, কমিউনিটি নেতা এবং ব্যবসায়ী তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এক খোলা চিঠিতে মি. রহমান বলেছেন, মেয়র পদ্ধতি বিলোপ হলে টাউন হলে বসে এক দল কাউন্সিলার গোপনে একজনকে 'লিডার' বানাবেন। তখন ক্ষমতা চলে যাবে পর্দার আড়ালে। নির্বাচনী প্রচারণায় কাউন্সিলার হেলাল আব্বাস (ফাইল ফটো) "সাধারণ জনগণ নয়, লিডারকে খুশি রাখতে হয় স্বল্প সংখ্যক কিছু কাউন্সিলার এবং নেতাকে … টাউন হলে বসে ব্যক্তি-বিশেষের রাজনীতি করতে হয়," লিখেছেন তিনি। "ব্যাপারটা মোটেও সে রকম না," বলছেন মেয়র প্রথা বিলোপ সমর্থনকারী সাবেক লেবার কাউন্সিলার হেলাল উদ্দিন আব্বাস। "জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি।" মেয়র প্রথা বিলোপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বিবিসিকে বলেন, সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলাররাই জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি। ভোটারদের ভালমন্দের দায়দায়িত্ব তাদেরই। ভোটাররা যদি চান পরবর্তী নির্বাচনে তাকে বাদ দিতে পারেন। লুৎফুর রহমান, টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ব্রিটেন সংক্রান্ত আরও খবর: "কিন্তু একজন মেয়রকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এককভাবে, যেখানে ভুল করার সুযোগ থাকে। এ কারণেই এটা বেশ অগণতান্ত্রিক। এখানে যথেষ্ট চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নেই," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি। নির্বাহী মেয়র: এক যুগের পরীক্ষা টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদ্ধতির বিলোপ নিয়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান অনেকটা রাষ্ট্রপতি এবং সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার পার্থক্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়। জনগণের সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হয়েছিল ২০১০ সালে। ওই সময় এক গণভোটে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দারা লিডারশীপ পদ্ধতি বাতিল করে একজন মেয়রকে ক্ষমতার কেন্দ্রে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের তৎকালীন লেবার পার্টির মধ্যে দেখা দেয় দলীয় কোন্দল। প্রথমদিকে লুৎফুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হলেও পরে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন করা হয় বারবার। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত লেবার পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটিকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। কমিটি শেষ পর্যন্ত মি. রহমানের নাম বাদ দিয়ে হেলাল উদ্দিন আব্বাসকে মনোনয়ন দেয়। স্থানীয় কমিউনিটি পত্রিকায় রাজনীতির খবর। (ফাইল ফটো) এর প্রতিবাদে লেবার পার্টি থেকে বেরিয়ে লুৎফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েন এবং প্রথম নির্বাহী মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন। কিন্তু মেয়র পদে নির্বাচনের আগে এবং পরে মি. রহমানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তার সাথে ইসলামী কট্টরবাদের যোগাযোগ, 'বাংলাদেশী কায়দায়' ভোটের প্রচারকাজ, ভোট জালিয়াতি এবং ব্যাপক স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। তবে ব্রিটেনের নির্বাচন সংক্রান্ত আদালত এসব অভিযোগ নাকচ করে দেয়। ফৌজদারি অভিযোগগুলোও পরে পুলিশী তদন্তে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়। কিন্তু ততদিনে লুৎফুর রহমানের ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। পরের মেয়াদের জন্য যে মেয়র নির্বাচন হয়, ভোটে অনিয়মের অভিযোগে সেই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল হয়ে যায়। এসব ঘটনা নিয়ে ব্রিটেনের মূল সংবাদমাধ্যমে যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়, তার একটি প্রভাব হচ্ছে: অন্তত স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কেই আস্থা দৃশ্যত অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ১০ বছর পর পর মেয়র পদ্ধতি সম্পর্কে গণভোটের বিধান এখন এই পদ্ধতিকে বদলে দেয়ার নতুন আরেকটি সুযোগ তৈরি করেছে। হ্যাঁ-ভোট, না-ভোট: রাজনীতির খেলা টাওয়ার হ্যামলেটসের ডকল্যান্ডস এলাকা যেমন বিশ্ব বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র, তেমনি ব্রিটেনের সবচেয়ে দরিদ্র কিছু মানুষ এই এলাকায় থাকেন "টাওয়ার হ্যামলেটসের রাজনীতি আগেও বিভাজনের রাজনীতি ছিল, এখনও তা-ই আছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা। অতীতে কাউন্সিলারদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হতে গেলেই তাকে ফেলে দেয়া হতো বাংলাদেশী-'নন বাংলাদেশী' রাজনীতির আবর্তে, তিনি বলছেন, ফলে সেই ঘূর্ণিপাক থেকে তার আর বেরিয়ে আসার সুযোগ থাকতো না। পূর্ব লন্ডনের রাজনীতিকে যারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের অনেকেরই মত যে এবারের গণভোট নিয়েও একই ধরনের রাজনীতি চলছে। মেয়র পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে প্রচারপত্র নাহাস পাশা বলছেন, বাংলা ভাষা শিক্ষার তহবিল বন্ধ করে দেয়া, বিভিন্ন কমিউনিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলে কাটছাঁট করার মতো ইস্যুগুলোকে ঘিরে বর্তমান মেয়র জন বিগসের প্রতি অনেক ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু তাকে সরাতে হলে লেবার পার্টির মধ্য থেকে বিকল্প প্রার্থী খুঁজে বের করতে হবে এবং পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার আগেই মেয়র পদ্ধতি রাখা না রাখার প্রশ্নে গণভোটে টাওয়ার হ্যামলেটস বাসিন্দাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। "মেয়র পদ্ধতি প্রমাণ করেছে যে এর মাধ্যমে কাউন্সিলারদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া যায়। এবং একটা নিরঙ্কুশ একনায়কতন্ত্র চালু হয়," বলছেন হেলাল উদ্দিন আব্বাস। তিনি লুৎফুর রহমানের প্রশাসন পদ্ধতির দক্ষতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলেন। পূর্ব লন্ডনের একটি স্ট্রিট মার্কেট "দায়বদ্ধতা এবং চেক-অ্যান্ড-ব্যালেন্স না থাকলে কোনভাবেই একটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যায় না। সেখানে দুর্নীতির শেকড় গেড়ে বসে।" "আর সে কারণেই আমরা চাই এই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান," বলছেন তিনি। মেয়র, না লিডার ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় দু'টি পদ্ধতি প্রায় একই। দু'টিই কার্যত নির্বাহী প্রশাসন। একটি কাউন্সিলের বাজেট, কর ইত্যাদি নির্ধারিত হয় কাউন্সিলারদের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে। একটি নির্বাহী কমিটি কাউন্সিলের দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা করেন। প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার স্ত্রী পূর্ব লন্ডনের একটি মসজিদ পরিদর্শন করছেন (ফাইল ফটো) বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়রই বারার সর্বেসর্বা। তিনি ও তার উপদেষ্টা ক্যাবিনেট টাওয়ার হ্যামলেটসের সব বিষয়ে নেতৃত্ব দান করেন। তিনি তার কর্মকাণ্ডের জন্য ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। অন্যদিকে, 'লিডার ও ক্যাবিনেট' পদ্ধতিতে ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলাররা তাদের মধ্য থেকে একজনকে 'লিডার' বা নেতা নির্বাচিত করেন। লিডার একটি ক্যাবিনেট তৈরি করেন। এখানে পার্থক্যটা হচ্ছে, মেয়রকে অপসারণ করতে চাইলে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর কাউন্সিলাররা চাইলে অনাস্থা ভোট এনে নেতৃত্বে রদবদল ঘটাতে পারেন। হোয়াইট চ্যাপেল এলাকা ব্রিটেনের কাউন্সিল রাজনীতির ওপর একজন বিশ্লেষক, ভিনসেন্ট ক্যারল ব্যাটালিনো এক নিবন্ধে লিখছেন, প্রশাসনের সংস্কৃতিতে কোন পরিবর্তন না করে শুধু শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ক্যাবিনেট পদ্ধতি হলেই তা বেশি গণতান্ত্রিক হবে সেটা যেমন ঠিক না, তিনি লিখছেন, আবার মেয়র হলেই যে কেউ একনায়কে পরিণত হবে সেটাও ভুল ধারণা। দু'টি পদ্ধতিই কাউন্সিলে দুর্বল বিরোধীদলের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম। লুৎফুর রহমান: শেষ টিকেটের যাত্রী মেয়র প্রশ্নে এই গণভোট সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বাঁচা-মরার লড়াই। অপপ্রচার এবং দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৪ সালে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। এখন এই গণভোটের মধ্য দিয়ে তিনি ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ খুঁজছেন। আর সেজন্যেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি প্ল্যাটফর্ম - ইয়েস ফর মেয়র টিএইচ (টাওয়ার হ্যামলেটস) মি. রহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, পরবর্তী মেয়র নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন কি-না। এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব তিনি দেননি। শুধু এটুকই বলেছেন, পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করবে মেয়র প্রথার অবসানের প্রস্তাব ভোটাররা নাকচ করে দেন কি-না, তার ওপর। টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটাররা যদি বিশ্বাস করেন মেয়র প্রথা তাদের জন্য সুফল বয়ে আনছে এবং এই ব্যবস্থা তারা বহাল রাখতে চান, তাহলে সেটা হবে লুৎফুর রহমানের জন্য সুখবর। তখন পরীক্ষিত সমর্থক গোষ্ঠীর ওপর ভর করে তিনি নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে আবার লড়তে পারবেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কিন্তু যদি মেয়র প্রথা বাতিল হয়ে যায় এবং 'লিডার ও ক্যাবিনেট' প্রথা আবার ফিরে আসে তাহলে মি. রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: | টাওয়ার হ্যামলেটস: লন্ডনের বাঙালী-প্রধান এলাকার মেয়র পদ্ধতিকে 'গুডবাই' জানানোর উদ্যোগ |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | আলবেনিয়ায় মুজাহিদিন-ই-খাল্কের কিছু সদস্য এদের অনেকের অভিযোগ, মুজাহিদিন-ই-খাল্ক গোষ্ঠীর কঠোর অনুশাসন তাদের ব্যক্তিজীবনে সমস্যা তৈরি করছে। এসব অনুশাসনের মধ্যে রয়েছে সেক্স না করা, এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ। এদের মধ্যে কিছু এমইকে সদস্য আলবেনিয়ার রাজধানী টিরানায় বসবাস করছেন। "গত ৩৭ বছর ধরে আমার স্ত্রী আর ছেলের সাথে কোন কথা হয়নি। তারা ধরে নিয়েছিল আমি আর বেঁচে নেই। কিন্তু আমি তাদের বলেছি, 'না, আমি বেঁচে আছি, এখন আলবেনিয়ায় থাকি … একথা শুনে তারা কেঁদেছে।" গোলাম মির্জাইয়ের জন্য এত দীর্ঘদিন পর স্ত্রী-সন্তানের সাথে যোগাযোগ করা খুব সহজ অভিজ্ঞতা ছিল না। তার বয়স এখন ৬০। টিরানার উপকণ্ঠে এমইকে'র সামরিক ক্যাম্প থেকে দু'বছর আগে তিনি পালিয়ে যান। তিনি এখন টিরানায় কোনমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও দু:খ পান যখন অনেকেই অভিযোগ করেন যে তিনি এখন চিরশত্রু ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করছেন। এমইকে'র ইতিহাস ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এবং রক্তাক্ত। এটি মূলত ইসলামপন্থী মার্কসবাদীদের একটি সংগঠন। ১৯৭৯ সালে যে ইসলামী বিপ্লব ইরানের শাহ্-কে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল এমইকে সেই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু এক সময় আয়াতোল্লাহ্ খোমেনির সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করলে এমইকে সদস্যরা গা ঢাকা দেন। গোলাম মির্জাই, বহু বছর যার সাথে পরিবারের যোগাযোগ নেই। প্রতিবেশী দেশ ইরাক তাদের আশ্রয় দেয়। এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় এমইকে সাদ্দাম হোসেনের পক্ষে নিজের মাতৃভূমির বিরুদ্ধে লড়াই করে। গোলাম মির্জাই নিজে অবশ্য একসময় ইরানের সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধের গোড়ার দিকে তিনি ইরাকী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং যুদ্ধবন্দি হিসেবে আট বছর ইরাকে আটক ছিলেন। সে সময় তার মত বন্দিদের ইরানের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছিল, এবং তিনি সেটাই করেন। মি. মির্জাইকে এখন 'সাবেক সাথী' হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সংগঠনটি আলবেনিয়ায় সরে যাওয়ার পর এমইকে ত্যাগ করেছেন যেসব শত শত সদস্য তিনি তাদের একজন। এদের মধ্যে অনেকেই নানা পথে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে গেছেন। কিন্তু বহু সদস্য এখনও টিরানায় বসবাস করছেন, যেখানে তারা রাষ্ট্রহীন, গৃহহীন ও কর্মহীন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ একসময় এমইকে'কে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তাহলে এমইকে'র লড়াকু যোদ্ধারা কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপের এই ছোট্ট দেশে গিয়ে হাজির হলেন? দু'হাজার তিন সালে ইরাকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন অভিযানের সময় এমইকে চরম বিপদে পড়ে যায়। তাদের রক্ষাকর্তা সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর এমইকে নানা দিক থেকে আক্রমণের মুখে পড়ে। বহু সদস্য প্রাণ হারান। তাদের এই সঙ্গিন মুহূর্তে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে সাহায্য আসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। মূলত আমেরিকাই আলবেনিয়ার সরকারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে প্রায় ৩০০০ এমইকে সদস্যকে আলবেনিয়ায় নিয়ে যায়। তেহরানে আটক এমইকে সদস্য। ১৯৮২ সালের ছবি। আরও পড়তে পারেন: 'যুদ্ধ বাধলে নিশ্চিহ্ন হবে ইরান', বলছেন ট্রাম্প সৌদি আরবে হামলার ঝুঁকি ইরান কেন নেবে? বিশ্ব তেল বাজারে 'ইরান হুমকি' নিয়ে সতর্ক করলেন সৌদি যুবরাজ "আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, হামলার হাত থেকে রক্ষা করেছি। এমন একটি দেশে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দিয়েছি যেখানে তারা কোন ধরনরে হেনস্থা, আক্রমণ বা দমনের শিকার হবে না" - বলছেন আলবেনিয়ার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা লুলঝিম বাসা। তারা এখন বিরোধীদলে, কিন্তু মুজাহেদিন-ই-খাল্ক সদস্যদের আলবেনিয়ায় নিয়ে যাওয়ার সময় তারাই দেশের ক্ষমতায় ছিলেন। আলবেনিয়ার রাজনীতি বিভক্ত হলেও একটা বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে। সেটা হলো এমইকে'র উপস্থিতি। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল উভয়েই প্রকাশ্যে তাদের ইরানি অতিথিদের সমর্থন করে। আলবেনিয়ায় যাওয়ার পর এমইকে'র সদস্যদের নতুন জীবন শুরু হয়। গোলাম মির্জাই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে সে দেশের শিশুদের হাতেও মোবাইল ফোন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে টিরানার উপকণ্ঠে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে এমইকে'র সদস্যদের রাখা হয়। ইরাকে তাদের জীবন যেমন কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে ছিল, টিরানাতে সেই নিয়মকানুন শিথিল হয়ে পড়ে। "আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের পেছনে ছিল কিছু পতিত জমি। আমাদের অধিনায়করা বললেন ওখানে আমাদের প্রতিদিন শরীরচর্চা করতে হবে," বলছেন হাসান হেয়রানি। তিনিও এমইকে'র একজন সাবেক সদস্য। পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের জন্য মি. হেয়রানি এবং তার সহকর্মীরা টিরানার ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোর বাইরের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকতেন। "আমরা যখন ইরাকে ছিলাম তখন বাড়িতে ফোন করতে চাইলে বলা হতো আমরা দুর্বল," তিনি বলছেন, "কিন্তু টিরানায় আসার পর ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতাম।" ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মুজাহিদিন-ই-খাল্কের নারী সদস্যরা (১৯৮৪) দু'হাজার সতের সালের শেষ নাগাদ, এমইকে তার সদর দপ্তর পরিবর্তন করে। টিরানা থেকে ৩০ কি.মি. দূরে একটি পাহাড়ের ঢালে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। বিশাল লোহার গেটের ভেতরে রয়েছে মার্বেলের খিলান - যার ওপর বসে আছে সোনালি এক সিংহের মূর্তি। বিনা আমন্ত্রণে সাংবাদিকদের ওখানে ঢোকা নিষেধ। তবে চলতি বছর জুলাই মাসে ঐ ক্যাম্পে ইরানের মুক্তির ওপর এক অনুষ্ঠানে হয় যেখানে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন। বিভিন্ন দেশ থেকে রাজনীতিবিদ, গুরুত্বপূর্ণ আলবেনিয়ান এবং পাশের গ্রাম মানজে থেকে অতিথিরা ঐ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। এমইকে প্রধান মারিয়াম রাজাভির সাথে অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি। সামরিক পোশাক পরা এমইকে'র সদস্যদের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, "এই লোকেরা স্বাধীনতার জন্য নিবেদিতপ্রাণ।" মি. জুলিয়ানির মতো ক্ষমতাশালী রাজনীতিবিদরা ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে চান। এমইকে'র ইশতেহারে স্বাধীন ইরানে মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু হাসান হেয়রানি এসব বিশ্বাস করেন না। এমইকে'র সদস্যদের ব্যক্তি জীবনের ওপর নেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করে গত বছর তিনি ঐ সংগঠন ত্যাগ করেন। তার বয়স যখন ২০ বছর তখন এমইকে'র বহুত্ববাদী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি ঐ গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন। এমইকে'র একটি মিটিং-এ যোগদানের ঘটনাটি তাকে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেছিল। হাসান হেয়রানি। "আমাদের হাতে থাকতো ছোট্ট একটি নোটবুক। সেখানে আমাদের নানা যৌন অভিজ্ঞতার কথা লিখে রাখতে হতো। যেমন, 'আজ সকালে আমি বেশ উত্তেজিত হয়েছিলাম।'" আর নোটবুকের এসব লেখা এমইকে'র সদস্যদের প্রকাশ্যে মিটিঙের মধ্যে দাঁড়িয়ে সবাইকে পড়ে শোনাতে হতো। এমইকে'র সদস্যদের প্রেম কিংবা বিয়ে করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এই বিধিনিষেধ আগে ছিল না। তখন আত্মীয়স্বজন এমইকে'র সদস্যদের সাথে দেখা করতে পারতো। কিন্তু ইরানের হাতে শোচনীয় পরাজয়ের পর এমইকে'র নেতারা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে সদস্যদের পারিবারিক পিছুটানের জন্যই ঐ পরাজয় হয়েছে। এরপর এমইকে'র সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক হাতে বিবাহ বিচ্ছেদ শুরু হয়। শিশুদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দত্তক দেয়া হয়। অবিবাহিত এমইকে'র সদস্যরা ঐ আইন মেনে নেন। হাসান হেয়রানি, ২০০৬ সালে ইরাকে। "যে কোন মানুষের জন্য এটা করা খুব কঠিন কাজ," বলছেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে বিবিসি মুজাহিদিন-ই-খাল্ক'র সাথে যোগাযোগ করলে তারা কোন জবাব দিতে চায় নি। এমইকে'র প্রতি সমর্থন থাকলেও আলবেনিয়াতে অনেকেই এই গোষ্ঠীকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি বলে মনে করেন। মুজাহেদিনদের হত্যা করার চেষ্টা করেছেন, এই অভিযোগে আলবেনিয়া থেকে দু'জন ইরানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে যে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক কিংবা ফ্রান্সে ইরানের চরেরা এমইকে'র নেতাদের খুন করার চেষ্টা করেছে। এমইকে'র ইরান মুক্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন রুডি জুলিয়ানি। বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: নেতাদের পদত্যাগ: কতটা চিন্তায় পড়েছে বিএনপি? বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলায় আজও সাজা হয়নি কারো রাজস্ব বোর্ড কি 'তামাক কোম্পানির পক্ষ নিচ্ছে?' কূটনীতিকরা মনে করছেন, এমইকে'র কিছু সাবেক সদস্য নিশ্চিতভাবেই ইরানের স্বার্থের পক্ষে কাজ করছেন। গোলাম মির্জাই কিংবা হাসান হেয়রানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে খোদ এমইকে থেকেই। তবে দু'জনেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই দু'জনেই এখন ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। হাসান হেয়রানি টিরানাতে একটি ক্যাফে চালু করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গোলাম মির্জাইয়ের পরিস্থিতি বেশ সঙ্গিন। হাতে টাকাপয়সাও নেই। তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। যুদ্ধের সময় আহত হয়েছিলেন। এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। পরিবারের সাথে তার দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল না। ৩৫ বছর পর তিনি প্রথমবারের মতো পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। "বহুদিন ধরে আমার স্ত্রী আর সন্তানের কথা ভেবেছি। এক সময় মনে হতো যুদ্ধের সময় এরা হয়তো সবাই মারা গেছে," বলছেন তিনি, "আমি বাড়ি ফিরতে চাই। আমার স্ত্রীর আর সন্তানের কাছে ফিরে যেতে চাই।" গোলাম মির্জাই সাহায্য চেয়ে টিরানার ইরানি দূতাবাসের সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। এখনও বাড়ি ফেরার স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে রেখেছেন তিনি। কিন্তু নাগরিকত্ব হারিয়ে, পাসপোর্ট হারিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া মি. মির্জাইয়ের সামনে এখন আর কোন পথ খোলা নেই। আলবেনিয়ার টিরানায় এমইকে'র নারী সৈন্য। | ইরান-বিরোধী মুজাহিদিনরা কী করছে ইউরোপে? |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | আমেরিকায় মোবাইল ফোনে পুলিশের আচরণের ভিডিও ছবি তোলার ঘটনা অনেক বেড়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড নি:শ্বাস নিতে পারছেন না, পুলিশ অফিসার তার গলার ওপর চেপে বসেছে, ভিডিওতে এই ছবি তুলেছিলেন পথচারী ১৭ বছরের তরুণী ডারনেলা ফ্রেজিয়ার। যখন তিনি ভিডিও ক্যামেরা চালু করেন তখন ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড দম নিতে না পেরে হাঁপাচ্ছেন, কাতর কণ্ঠে বারবার অনুনয় করছেন, "প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ"। তার ক্যামেরা তখন ছবি তুলছে বিশ সেকেন্ড ধরে। মি. ফ্লয়েড এরপর আর যে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, তা এখন বিশ্বজোড়া এক আন্দোলনের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে। "আই কান্ট ব্রিদ"-"আমি নি:শ্বাস নিতে পারছি না," মি. ফ্লয়েড কোনমতে বলেছিলেন। কথাগুলো কিছুটা অস্পষ্ট ছিল। মি. ফ্লয়েডের দুহাত পিছমোড়া করে বেঁধে তখন তাকে মাটিতে শুইয়ে ফেলেছে তিনজন পুলিশ অফিসার। এদের একজন ৪৪ বছর বয়স্ক ডেরেক শভিন তার হাঁটু দিয়ে মি. ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছেন। মি. ফ্লয়েডের মুখ নিচের দিকে। তিনি কথা বলছেন অতিকষ্টে। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জন্য হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনের বিরুদ্ধে মিস ফ্রেজিয়ার তার নয় বছরের এক কাজিন বোনকে নিয়ে 'কাপ ফুডস্' নামে এক দোকানে যাচ্ছিলেন। দোকানটা মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে - তার বাসার বেশ কাছেই। পথে তিনি দেখতে পান পুলিশ কীভাবে মি. ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছে। তিনি দাঁড়িয়ে যান। তার ফোন বার করেন এবং রেকর্ড বোতামে চাপ দেন। পুরো দশ মিনিট নয় সেকেন্ড তিনি ভিডিওতে ছবি তোলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা ও মি. ফ্লয়েড সেখানে ছিলেন। পুলিশ অফিসাররা পায়ে হেঁটে স্থান ত্যাগ করে আর মি. ফ্লয়েডকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়। বিবিসি নিউজের জশুয়া নেভেট লিখছেন, ওই সময়ে মিস ফ্রেজিয়ার ভাবতেও পারেননি তার ভিডিওর ফলশ্রুতিতে কী ঘটতে চলেছে। মোবাইল ফোনের একটা বোতামে চাপ দিয়ে তিনি কীধরনের প্রতিবাদের ঢেউ সৃষ্টি করতে চলেছেন। শুধু আমেরিকায় নয়, সারা বিশ্বে। "তার মনে হয়েছিল এ ঘটনার প্রমাণ রাখা দরকার," মিস ফ্রেজিয়ারের আইনজীবী সেথ কোবিন বিবিসিকে বলেন, "বলা যায় তার এই ভিডিওর কারণে নতুন রূপে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পুনর্জন্ম হয়েছে।" হাই স্কুল ছাত্রী মিস ফ্রেজিয়ারের সাথে বিবিসি সাক্ষাৎকার নিতে পারেনি। তার আইনজীবী বলেছেন ২৫শে মে 'কাপ ফুডস্' দোকানের বাইরে তিনি যা দেখেছেন তাতে তিনি আতঙ্কিত। "তার জীবনে সে এর চেয়ে ভয়াবহ কোন ঘটনা দেখেনি।" বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি, ব্যাপক সংঘাত আমেরিকায় পুলিশ মানুষ হত্যা করলেও দোষী সাব্যস্ত হয় না কেন? জর্জ ফ্লয়েড হত্যা: মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ ভেঙ্গে দেয়ার চিন্তা আমেরিকায় পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার খতিয়ান কাপ ফুডস্ দোকানের বাইরেটা এখন জর্জ ফ্লয়েডের স্মৃতিস্থান হয়ে উঠেছে। ভিডিও নিয়ে প্রতিক্রিয়া তার আইনজীবী বলছেন, তিনি চিকিৎসকের সাথে দেখা করেছেন এবং "মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠছেন।" তার তোলা ওই ভিডিও যা তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন তার প্রতিক্রিয়াও তার জন্য বড়ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করেছিল। মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কেউ বলেছে তারা স্তম্ভিত, কেউ ক্রুদ্ধ, কেউ তার প্রশংসা করেছে আবার সমালোচনাও করেছে কেউ কেউ। ফেসবুকে ২৭শে মে শেয়ার করা এক পোস্টে একজন বলেছে তিনি "বাহাদুরি পেতে" ওই ভিডিও তুলেছিলেন এবং মি. ফ্লয়েডের মৃত্যু ঠেকাতে তিনি কিছু করেননি। উত্তরে মিস ফ্রেজিয়ার লেখেন, "আমি ওই ভিডিও না তুললে ওই চারজন পুলিশ এখনও তাদের দায়িত্বে বহাল থাকত, অন্যদের জন্য সমস্যা তৈরি করত। এই ভিডিও পৃথিবীর মানুষ দেখেছে, তারা জেনেছে কী ঘটেছিল।" জশুয়া নেভেট বলছেন, মিস ফ্রেজিয়ারের ভিডিও একটা সমস্যাকে সামনে এনেছে যে, যখন পুলিশি অত্যাচার বা নির্মমতার ঘটনার বা কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভিডিও কোন পথচারী তোলে, তখন পরবর্তীতে তাকে নানাধরনের ঝামেলা বা সমালোচনা সামলাতে হয় - যা মোকাবেলা করা অনেকের জন্য খুব সহজ হয় না। যখন আবেগ খুব বেশি থাকে, বিশেষ করে যেখানে পুলিশ জড়িত থাকে, যেখানে বর্ণবাদের বিষয়টা বেরিয়ে আসে, পুলিশের বর্বর আচরণ সামনে আসে, তখন মতামত বিভক্ত হয়ে যায়- বর্ণ এবং রাজনৈতিক লাইনে মতামত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। তখন যে সেই ভিডিও তুলেছে তার কাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন, নানা বিতর্ক উঠতে শুরু করে। অনেকেই এই চাপ সামাল দিতে পারে না। অনেকে এই চাপ মোকাবেলা করতে গিয়ে কঠিন মানসিক বিপর্যয়ে পড়েন বলে লিখছেন বিবিসির সাংবাদিক। আর পরবর্তীতে কীধরনের অসুবিধায় পড়তে হয় এই ভেবেও অনেকে এধরনের ঘটনার ভিডিও তুলতে সংশয়ে থাকেন। বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আমেরিকা পুলিশের নির্মমতার অতীত ভিডিও নিউ ইয়র্কে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ডেনিস ফ্লোরেস। তিনি বলছেন ১৯৯০এর দশকের শেষ দিক থেকে নিউ ইর্য়ক পুলিশ বাহিনীর কার্যকলাপ নিয়ে তথ্যসংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি ৭০ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশের অত্যাচারের যেসব ভিডিও তিনি তুলেছেন এবং প্রকাশ করেছেন, তা আমেরিকায় পুলিশকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়বদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রেখেছে। বলা হয় আমেরিকায় ১৯৯১ সালে তোলা পুলিশের বর্বরতার একটি ভিডিও প্রথম বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়েছিল। ভিডিওটি তুলেছিলেন একজন কলের মিস্ত্রি। ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে গাড়ি ধাওয়া দিয়ে একজন নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি রডনি কিংকে ধরে পুলিশ অফিসারদের তাকে নৃশংস প্রহার দেয়ার ছবি তুলেছিলেন জর্জ হলিডে নামে ওই ব্যক্তি। অফিসাররা জানতে পারেনি তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। মি. হলিডে তার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে সেকালের সোনি হ্যান্ডিক্যাম ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ওই ছবি তুলেছিলেন। টেপটা তিনি তুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলের হাতে। এরপর ওই ভিডিও জাতীয় পর্যায়ে ও বিশ্ব ব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি করে। জর্জ হলিডে পুলিশের হাতে রডনি কিং-এর প্রহারের ছবি তোলেন তার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে। একবছর পর ১৯৯২ সালে এই ক্ষোভ মারাত্মক বর্ণবাদী দাঙ্গায় রূপ নেয়। চারজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে অভিযুক্ত করা হয়, কিন্তু তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়। মি. ফ্লোরেস বিবিসিকে বলেছেন রডনি কিং-কে পুলিশি প্রহারের ওই ছবি ছিল, ভিডিওতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে ছবি তোলার শুরু। বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন আমেরিকায় সাধারণ মানুষের পুলিশের ভিডিও তোলার অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছিল দেশটির সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে। প্রথম দিকে যেখানে সেখানে দ্রুত ছবি তোলার জন্য স্মার্টফোন ছিল না, ভিডিও শেয়ার করার জন্য সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ছিল না, ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিষেবা ছিল না। তবে মি. হলিডে তার ভারী এসএলআর ক্যামেরা দিয়ে রডনি কিং-য়ের ছবি তুলে পুলিশকে দায়বদ্ধতার যে জায়গায় দাঁড় করাতে পেরেছিলেন, তার সূত্র ধরে পুলিশের নির্মমতার ছবি তোলা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন পুলিশের অজান্তে মানুষ তাদের বর্বরতার ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিতে পারছে অনায়াসে। এবং এধরনের ভিডিও তোলার ঘটনাও বেড়েছে কারণ এধরনের ভিডিও সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে এবং অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মি. ফ্লয়েডের মামলায় মি. শভিনকে যখন বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হবে তখন কৌঁসুলিদের কাছে এই ভিডিও থাকবে। মি ফ্রেজিয়ারের আইনজীবী মি. কোবিন বলেছেন তদন্তকারীরা তার মক্কেলের ফোন থেকে এই ভিডিও সাক্ষ্যপ্রমাণের জন্য নামিয়ে নিয়েছেন। সাক্ষ্য দেবার জন্য মিস ফ্রেজিয়ারকে হয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হতে পারে। ইতোমধ্যেই তিনি এফবিআইয়ের নাগরিক অধিকার বিভাগ এবং মিনেসোটার ফৌজদারি ব্যুরোর কর্মকর্তার কাছে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি দিয়েছেন। মি. ফ্লয়েডের হত্যা পৃথিবীর নানা দেশে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মি. কোবিন বলছেন তার বিবৃতি খুবই মর্মস্পর্শী। মিস ফ্রেজিয়ার "খুবই আবেগপ্রবণ ছিলেন, কাঁদছিলেন। মানসিকভাবে তিনি কতটা বিপর্যস্ত সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। তিনি বলেন যখনই তিনি চোখ বোজেন, তিনি ওই দৃশ্যটা দেখতে পান। তিনি জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মুখটা দেখতে পান। চোখ খুললে সে মুখটা মিলিয়ে যায়। চোখ বুজলেই আবার মুখটা ফিরে আসে।" মিস ফ্রেজিয়ার কোন হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়তে চাননি। মি. ফ্লয়েডের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে তিনি কোন বাহবা নিতে বা নাম কিনতে চাননি। আলাবামায় ১৯৫৫ সালে রোজা পার্কস নামে যে আফ্রিকান আমেরিকান নারী একজন শ্বেতাঙ্গকে বাসে তার সিট ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেছিলেন তার সাথে মিস ফ্রেজিয়ারের তুলনা টেনেছেন মি. কোবিন। তিনি বলেছেন রোজা পার্কস কখনও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠতে চাননি। তিনি যা করেছিলেন তা তার সঠিক মনে হয়েছিল তাই করেছিলেন। মিস ফ্রেজিয়ারও তাই- বলেছেন মি. কোবিন, "তিনি ঘটনার সময় সেখানে হাজির ছিলেন, তার যেটা করা উচিত মনে হয়েছিল, তিনি সেটা করেছেন। তিনি হিরো হবার জন্য এটা করেননি।" | জর্জ ফ্লয়েড: যে ভিডিও থেকে প্রতিবাদের আগুন সেই ভিডিও তুলেছিল যে তরুণী |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | সগিরা মোর্শেদ সালাম এবং তিন মেয়ের সঙ্গে তার ছবি। ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে ১৯৮৯ সালের ২৫শে জুলাই বিকেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন রিকশায় করে যাবার পথে সেই মহিলার অলংকার ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় বাধা পেয়ে তাকে গুলি করে দু'জন লোক । কিন্তু আসলে এটা ছিনতাই ছিল না, ছিল এক পরিকল্পিত হত্যাকান্ড - যার পেছনে ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের এক দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সঠিক তথ্য প্রমাণ এবং নানা চাপের মুখে বছরের পর বছর ঝুলে ছিল এই মামলার তদন্ত কাজ। তবে পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অবশেষে প্রায় তিন দশক পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন চার ব্যক্তি। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন, মিসেস শাহীনের ভাই আনাস মাহমুদ রেজওয়ান, মারুফ রেজা। তারা চারজনই এখন কারাগারে। পারিবারিক প্রতিহিংসার শিকার হবার কারণেই মিসেস সালামকে হত্যা করা হয়েছিল - জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আঠাশ বছর ধরে ফাইলবন্দি থাকার পর চলতি বছরের ২৬ জুন মামলার উপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। অধিকতর তদন্তের জন্য ১১ জুলাই আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন - পিবিআইকে দায়িত্ব দেন । ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটির অধিকতর তদন্ত শেষ করতে একইসঙ্গে তদন্ত শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয় আদালত। শুরু থেকে পুরো তদন্ত তদারকির দায়িত্বে ছিলেন পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোঃ. শাহাদাত হোসেন। বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন তদন্তের আদ্যোপান্ত। ঘটনার ত্রিশ বছর পর মূল প্রত্যক্ষদর্শীকে খুঁজে বের করা আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর পিবিআই এর তদন্ত দল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে মামলার ফাইলটি নিয়ে আসেন। পুরো ঘটনা বিশ্লেষণে তদন্ত কর্মকর্তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ছিনতাইয়ের জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে কি কোন খুন হতে পারে? এরপর ঘটনাস্থল একাধিকবার পরিদর্শন করে এবং খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারেন যে এই এলাকায় বহুবার চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কখনও কাউকে হত্যা করা হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেই রিকসা চালক আবদুস সালামতে খুঁজে বের করা। যার বয়স বর্তমানে ৫৫ বছর। মামলার ফাইলে তার ঠিকানা দেয়া ছিল জামালপুর জেলায়। সেটার সূত্র ধরে পুলিশ তার অবস্থান নির্ণয়ের করতে গিয়ে জানতে পারেন যে তিনি বর্তমানে ঢাকায় আছেন। কিন্তু তার কোন ঠিকানা বা ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। এরপর পুলিশ টানা কয়েক মাস ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের আশেপাশের রিকশা গ্যারেজগুলোয় প্রবীণ রিকশা চালকদের কাছ থেকে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে এক প্রবীণ রিকশা চালক আবদুস সালামের খোঁজ দেন। পিবিআই এর লোগো। তবে তিনি তার কোন ঠিকানা দিতে পারেননি। আবদুস সালাম প্রতিদিন একটি দোকানে আসেন, পুলিশকে ওই রিকশাচালক সেই দোকানের ফোন নম্বরটি দেন। পরে ওই নম্বরে তদন্ত কর্মকর্তারা যোগাযোগ করলে দোকান কর্মকর্তা জানান আবদুস সালাম তার পাশেই রয়েছে। পরে ফোনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এই ১৯৮৯ সালের ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন কিনা। আবদুস সালাম বলেন যে তিনি এ বিষয়ে জানেন। পরে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল মিসেস সগিরাকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রিকশাচালক আবদুস সালাম জানান, ঘটনার দিন বিকেলে ভিকারুন্নেসা স্কুলের কাছে মোটর সাইকেলে করে আসা দুই যুবক তাদের রিকশার পথ আটকে দাঁড়ায়। ওই দুই যুবক সে সময় দেখতে কেমন ছিলেন তার শারীরিক গড়নের বর্ণনা দেন আবদুস সালাম। যা পরবর্তীতে পুলিশের কাজে লাগে। প্রথমে তারা মিসেস সালামের হাতব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় এবং তার পরনে থাকা স্বর্ণের বালা ধরে টানাটানি শুরু করে। এসময় মিসেস সগিরা তাদের একজনকে দেখে বলেন, 'আমি আপনাকে চিনি', এবং তার নামটিও বলেন। এই কথা বলার পরই অপর যুবক পিস্তল বের করে মিসেস সগিরাকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোঁড়েন। এ সময় আশেপাশে লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে তারা আরও কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে মৌচাকের দিকে পালিয়ে যায়। রিকশাচালক তাদেরকে তাড়া করলেও রাস্তার কোন মানুষ অভিযুক্ত দুজনকে থামাতে আসেনি বলে জানান মি. শাহাদাত। এদিকে ঘটনাস্থল অতিক্রম করার সময় এক ব্যক্তি মিসেস সগিরাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ পুলিশ। ছিনতাই নয়, পরিকল্পিত খুন "মিসেস সগিরা যেহেতু ছিনতাইকারীকে চিনতে পেরেছেন এবং তার পরপরই তাকে হত্যা করা হয়েছে, এর অর্থ খুনিদের কেউ তার পরিচিত হবেন। এবং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।" বলেন মি. শাহাদাত। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত তিন মাসে বিভিন্ন সাক্ষ্য গ্রহণ করার পর পারিবারিক কলহের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর রিকশাচালক হত্যাকাণ্ডে জড়িত দু'জনের যে শারীরিক বর্ণনা দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে মিসেস শাহীনের ভাই আনাস মাহমুদ রেজওয়ান ও মারুফ রেজার মিল পান। চলতি মাসের ১০ তারিখ মি. রেজওয়ানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১২ নভেম্বর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন। ১৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন মারুফ রেজা। পরদিন খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তারা। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে মি. রেজওয়ানকে বলেন, "বোন শাহিন ও ভগ্নীপতি হাসানের পরিকল্পনায় তিনি ও মারুফ রেজা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন। পারিবারিক কলহের কারণ উদঘাটন হয় যেভাবে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে বলে পিবিআই এর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮৫ সাল থেকে। নিহতের স্বামী এবং বাদী সালাম চৌধুরী তার তিন ভাইয়ের মধ্য সবার কনিষ্ঠ। চাকরি সূত্রে মি. সালাম তার পরিবারকে নিয়ে ইরাকে থাকলেও ১৯৮৪ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণে তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয়। তখন থেকে তিনি ঢাকায় রাজারবাগ পেট্রোল পাম্পের পৈত্রিক বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। দোতালা বাসার নীচতলায় বড় ভাই সামসুল আলম চৌধুরীর থাকতেন। ওপরের তলায় থাকতেন সালাম দম্পতি ও তাদের তিন মেয়ে। মেঝ ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী স্ত্রী-সন্তানসহ লিবিয়ায় থাকলেও ১৯৮৫ সালে তারাও দেশে ফিরে আসেন। আরও পড়তে পারেন: 'সাঁওতাল পল্লীতে আগুনের ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নেই' নুসরাত হত্যা: ১৬ জন আসামীর সবার মৃত্যুদণ্ড কীভাবে নুসরাতকে মারা হয়েছিল - পুলিশের ভাষ্য তারা প্রথম কিছুদিন ওই বাড়ির নীচ তলায় থাকার পর দ্বিতীয় তলায় তার সালাম দম্পতির বাসার একটি রুমে সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। সে সময় থেকেই মিসেস শাহিনের সঙ্গে মিসেস সগিরার বিভিন্ন বিষয়ে কলহ শুরু হয়। এভাবে ছয় মাস থাকার পর ১৯৮৬ সালে বাড়ীর তৃতীয় তলার কাজ সম্পন্ন হলে ডা. হাসান তার পরিবার তৃতীয় তলায় ওঠেন। এই সময়ে তৃতীয় তলা হতে আবর্জনা ফেলাসহ আরও নানা কারণে দুই জা'য়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তেই থাকে। মিসেস শাহিনের দাবি তিনি স্বল্প শিক্ষিতা বলে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হতো। অন্যদিকে বাদী সালাম চৌধুরী বলেন, তার স্ত্রী উচ্চশিক্ষিতা, চাকরিজীবী হওয়ায় সবাই ঈর্ষান্বিত ছিল। মিসেস সালামকে শায়েস্তা করতে হাসান আলী চৌধুরীর ও তার স্ত্রী শাহিন এই হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং ২৫ হাজার টাকায় মারুফ রেজার সঙ্গে চুক্তি করেন বলে জানান পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিসেস সগিরা যখন মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যান তখন সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় সগিরাকে দিনেদুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়। বনজ কুমার মজুমদার, প্রধান, পিবিআই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযুক্তরা পুলিশকে যা বলেছে অভিযুক্ত চারজন পুলিশকে আলাদাভাবে জবানবন্দি দিলেও সবার বক্তব্যে ও ঘটনার ধারা বর্ণনায় মিল পাওয়া যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই দুপুরে ডা. হাসান আলী চৌধুরী তার শ্যালক আনাস মাহমুদ রেজওয়ানকে ফোন করে মৌচাক মার্কেটের সামনে আসতে বলেন এবং জানান সেখানে তিনি যেন মারুফ রেজার সঙ্গে দেখা করেন। মারুফ রেজাকে চেনার জন্য তার শারীরিক বর্ণনাও দেন তিনি। মি. রেজওয়ানকে পাঠানোর কারণ তিনি যেন মিসেস সগিরাকে চিনতে পারেন। মি. হাসানের বাসায় যাতায়াতের কারণে তিনি মিসেস সগিরাকে চিনতেন। পরে নির্ধারিত সময়ে ঘটনাস্থলে মি. রেজওয়ানের সঙ্গে মোটর সাইকেল করে মারুফ রেজা দেখা করতে আসেন। এরপর তারা দুজন সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরের কাছে অপেক্ষা করতে থাকেন। মিসেস সগিরাকে রিকশায় করে আসতে দেখে তারা কিছুদূর ফলো করার পর মিসেস সগিরার রিকশার পথ আটকান এবং হাত ব্যাগ নিয়ে নেন এবং হাতের চুড়ি ধরে টানা হ্যাঁচড়া শুরু করেন। তখন মি. রেজওয়ানকে দেখে মিসেস সগিরা বলে ওঠেন, "এই আমি তো তোমাকে চিনি, তুমি রেজওয়ান, এখানে কেন তুমি?" এর পরপরই মারুফ রেজা পিস্তল বের করে মিসেস সগিরাকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি করেন। একটি তার ডান হাতে লাগে এবং আরেকটি বাম বুকে বিদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যায়। তখন মারুফ রেজা আরও কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে মোটর সাইকেলে করে আনাস মাহমুদকে নিয়ে পালিয়ে যান। হাইকোর্ট। মামলার জট ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন মিসেস সগিরার স্বামী সালাম চৌধুরী। গণমাধ্যমকে দেয়া পিবিআই এর ভাষ্য অনুযায়ী হত্যার এক বছরের মাথায় ১৯৯০ সালে মিসেস সালাম হত্যা মামলায় মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। তবে মামলাটির বিচার কাজ চলাকালে প্রশ্ন ওঠে: হত্যাকাণ্ডের সময় দু'জন ঘটনাস্থলে থাকলেও আসামি একজন কেন? সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালে মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করেন মারুফ রেজা। তার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচার কাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। পরের বছর হাইকোর্ট থেকে বলা হয়, এই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচার কাজ স্থগিত থাকবে। তারপর থেমে যায় সব ধরণের তদন্ত কাজ। বাদী সালাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, তাকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়েছিল। তিনি মামলা না তুললেও যেকোনো সময় হামলা হতে পারে - এমন আতঙ্কে মামলা এগিয়ে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের সাহস করেননি। মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে রাষ্ট্রপক্ষ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। | ত্রিশ বছর আগের সগিরা মোর্শেদ হত্যা রহস্য কীভাবে উদঘাটন করল পিবিআই |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | ২০১৩ সালের ৫ই মে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকার দৃশ্য (ফাইল চিত্র) সেই ৫ই মে সমাবেশকে কেন্দ্র নানা ধরণের গুজব এবং আলোচনার জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে। শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশের পর হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচী এবং তারপরে রাতের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়া হলেও এর একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ৫ই মে হেফাজতে ইসলামীর সেই সমাবেশ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বেশ বিচলিত করে তোলে। হেফাজতে ইসলামের সেই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মামলা দায়ের করা হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে তখন বড় আকারের কোন ধড়-পাকড়ে যায়নি। সংগঠনটির কিছু কেন্দ্রীয় নেতাকে আটক করা হলেও কিছুদিন পরে তাদের জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর হেফাজতে ইসলামের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক ধরণের 'সমঝোতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক' দৃশ্যমান হয়। কিন্তু আট বছরের মাথায় এসে সে সম্পর্ক এখন পুরোপুরি উল্টে গেছে। নরেন্দ্র মোদী বিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর বেশ কঠোর হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হেফাজতে ইসলামীর প্রায় ডজনখানের কেন্দ্রীয় নেতাকে গত কয়েক সপ্তাহে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন সংগঠনটিকে টিকে রাখার চেষ্টায় আছেন। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় এবং অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের ভেতরে নানামুখী সংকটের মুখে হেফাজতে ইসলামী কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী (ফাইল চিত্র) হেফাজতের টিকে থাকার চেষ্টা ২০১৩ সালের ৫ই মে সমাবেশের এক বছরের মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমীর প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক ধরণের সমঝোতা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তখনকার হেফাজতে ইসলাম প্রধান আহমদ শফীর সভাপতিত্বে আয়োজিত এক 'শোকরানা মাহফিলেও' যোগ দেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সরকারের সাথে আহমদ শফীর সে সখ্যতা হেফাজতে ইসলামের ভেতরে অনেকে পছন্দ করতেন না। এসব অপছন্দের বিষয়গুলো তখন অনেকটা 'সুপ্ত অবস্থায়' ছিল বলে উল্লেখ করেন ইসলাম বিষয়ক লেখক শরীফ মোহাম্মদ, যিনি নিজেও এক সময় হেফাজতে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আহমদ শফীর মৃত্যুর পরে হেফাজতে ইসলামীর ঐক্যে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের যে নতুন কমিটির সাথে সরকারের বেশ দূরত্ব ছিল। এরপর ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতির ইঙ্গিত মেলে। এখন হেফাজতে ইসলামের নেতারা পুলিশি ধরপাকড় সামাল দিতেই ব্যস্ত। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ প্রার্থীও হচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাজপথ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক এবং আইনগতভাবে হেফাজতে ইসলামের উপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করেছে। শরীফ মোহাম্মদ মনে করেন, সরকার হেফাজতে ইসলামের উপর যে চাপ তৈরি করেছে সেটি তাদেরকে 'পোষ মানানোর' একটি কৌশল হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ মনে করেন, হেফাজতে ইসলাম সরকারের পছন্দের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করতে পারবে না। "হেফাজতে ইসলামের অস্তিত্ব হয়তো সামনে থাকবে, কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের একটি বি-টিম হয়ে তারা থাকবে," বলেন অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ। তবে পরিস্থিতি হয়তো বদলেও যেতে পারে। এমন ধারণাও রয়েছে অনেকের মনে। ২০১৩ সালের ৫ই মে পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের কথা উল্লেখ করেন শরীফ মোহাম্মদ বলেন, কিছুদিন পরে হয়তো ভিন্ন চিত্রও হতে পারে। "পাঁচই মে ঘটনার পরে সরকারের সঙ্গে ভয়ঙ্কর দূরত্ব ছিল। ওটা যখন উৎরানো সম্ভব হয়েছে, এবারও হয়তো সেটা হতে পারে। সমঝোতার কোন চিত্র হয়তো চলেও আসতে পারে," বলেন মাওলানা শরীফ মোহাম্মদ। বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতৃত্ব কতটা পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শরীফ মোহাম্মদ। হেফাজতে ইসলামের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি টিকিয়ে রাখা। একদিকে সরকারের চাপ এবং অন্যদিকে সংগঠনের ভেতরে দ্বন্দ্ব - এ দুটো পরিস্থিতি বেসামাল করেছে হেফাজতে ইসলামকে। সেজন্য হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে তড়িঘড়ি করে আরেকটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারণ, জুনায়েদ বাবুনগরী অংশের আশংকা ছিল তাদের প্রতিপক্ষ হয়তো সংগঠনটি দখল করে নেবে। কমিটি বিলুপ্ত করার আগে হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন সিনিয়র নেতা কমিটি থেকে পদত্যাগও করেছেন। শরীফ মোহাম্মদ বলেন, তারা হয়তো হেফাজতে ইসলামের ব্যানার টিকিয়ে রেখে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার হতে চায়। এছাড়া সরকারের সাথে উত্তেজনার কারণে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে চায় বর্তমান নেতৃবৃন্দ। এই পরিস্থিতি থেকে হেফাজতে ইসলামীর বর্তমান নেতৃবৃন্দ কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে সেটি নিয়ে সংশয় আছে হেফাজতে ইসলামের ভেতরে। "হেফাজত নামের ব্যানারটা হয়তো গুটানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও হতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক প্লাটফর্ম বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয় না," বলেন শরীফ মোহাম্মদ। ২০১৮ সালে আহমদ শফীর সভাপতিত্বে যে 'শোকরানা মাহফিল' হয়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কওমি জননী উপাধি দেয়া হয়। সরকার-হেফাজত বন্ধুত্ব বিশ্লেষকদের ধারণা , ২০১৩ সালের ৫ই মে পরবর্তী সরকার ও হেফাজতে ইসলামের মধ্যে 'সুসম্পর্ক' গড়ে ওঠার পেছনে কিছু রাজনৈতিক কারণ ছিল। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে উঠে। তখন সরকার চায়নি হেফাজতে ইসলাম নতুন আরেকটি প্রতিপক্ষ হয়ে তাদের সামনে আসুক। সেজন্য শাপলা চত্বরের সমাবেশ থেকে তাদের হটিয়ে দিলেও কয়েকমাস পরে সমঝোতার পথেই হেঁটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটি যাতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর করায়ত্ব না হয় সে চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম নিজেদের অরাজনৈতিক হিসেবে দাবি করলেও ২০১৩ সালে তারা যেসব দাবি উত্থাপন করেছিল তার বেশিরভাগ দাবির রাজনৈতিক চরিত্র ছিল। সেজন্য হেফাজতে ইসলামকে জামায়াতের ইসলামীর বিকল্প একটি ইসলামী দল হিসেবে ক্ষমতাসীনরা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ। উভয় পক্ষের মধ্যে সুসম্পর্কের ধারাবাহিকতায় কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দেয় সরকার এবং একই সাথে কওমি মাদ্রাসাগুলোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'কওমি জননী' উপাধি দেয়া হয়। হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনের অংশ থেকে একটি ভাস্কর্যও সরিয়ে নেয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ডের ফলে হেফাজতে ইসলাম রাজনীতিতে নিজেদের একটি 'শক্তিশালী প্রেশার গ্রুপ' হিসেবে ভাবতে শুরু করে। কওমি মাদ্রাসার সাথে সম্পৃক্তরা মনে করেন, হেফাজতে ইসলাম এখন বেশ চাপে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সংগঠন হিসেবে হেফাজতে ইসলাম টিকে থাকুক কিংবা না থাকুক, কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক যে মতাদর্শ এবং বিভিন্ন ইসলাম সংক্রান্ত যে কোন ইস্যুতে তাদের একত্রিত হবার প্লাটফর্ম বন্ধ হবে না। এমনটাই মনে করেন মাওলানা শরীফ মোহাম্মদ। | হেফাজতে ইসলাম: শাপলা চত্বর সমাবেশের আট বছর পরে টিকে থাকার চেষ্টায় ইসলামপন্থীদের সংগঠনটি |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যদিও বুধবারের এক ফোনালাপের বরাতে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে গভীর সম্পর্ক চায় পাকিস্তান। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের চোখে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রকাশ্য অবস্থান এবং বিচারের বিরোধিতা করায় দুই দেশের সম্পর্ক একবারে তলানিতে রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে, এমনটিই ধারণা পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশের হাই কমিশনার সোহরাব হোসেনের। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকা তিনি বলেন, "বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে পাকিস্তানের বিরোধিতার পর সেই অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়েছে।" দুদেশের মধ্যে যেটুকু সম্পর্ক আছে সেটাকে 'উপরে উপরে' বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গবেষক আফসান চৌধুরী। তার মতে, "বাংলাদেশের সঙ্গে তো পাকিস্তানের কোন সম্পর্কই নেই"। "বিশেষ করে '৭১ এর পরে এই সম্পর্ক গাঢ় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষ করে আমাদের প্রজন্ম যতদিন থাকবে তারা তো '৭১ এর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে।" "বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালও হবে না, খারাপও হবে না। সম্পর্ক ভীষণ খারাপ হওয়া থেকে একটু কম খারাপ হতে পারে, কিন্তু ভাল হবে না।" প্রশ্ন দেখা দেয় যে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে শীতল সম্পর্কের পেছনে কী কী ইস্যু রয়েছে? ১. ভারতের সাথে সম্পর্ক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে এ দুটি দেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সম্পর্ক কেমন সেটিও বেশ প্রভাব বিস্তার করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। একদিকে যেমন ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে পরিচিতি রয়েছে, ঠিক তার বিপরীতে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তান। এই ত্রিমুখী সম্পর্ক বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আফসান চৌধুরী বলেন, "আমাদের যে দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যার সাথে ওঠা বসা বেশি, অর্থাৎ ভারত, তার উপর অনেকটা নির্ভরশীল।" তিনি বলেন, ভারতের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। আবার দুদেশের সাধারণ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বও রয়েছে। তবে এগুলোর পরও ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা এখনো পর্যন্ত হয়নি। "পাকিস্তানের সাথে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্ক। ভারতের সামনে পাকিস্তান কোন শক্তিই না, তবে সমস্যা হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে চীন রয়েছে।" ভারতের সাথে চীনের সম্পর্ক বৈরী হয়ে গেছে। চীন চেষ্টা করছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যে ভারত বিরোধিতা রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। দুদেশের সম্পর্কে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ক্ষত এখনো বড় কাঁটা হয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক একরকম, আবার ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরেক রকম। চীনের বিষয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান এক মেরুতে থাকলেও ভারতের সাথে সে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দুটি দেশ বিপরীত মেরুতে রয়েছে। "এই দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক নয়, বরং দ্বন্দ্ব রয়েছে।" ২. বাণিজ্য বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব রয়েছে চীনের। আর পাকিস্তানের সমর্থনে রয়েছে চীন। দেশটির সাথে বাংলাদেশেরও সুসম্পর্ক চলছে। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর করতে পারে কি? আফসান চৌধুরীর বক্তব্য, "হবে না। কারণ পাকিস্তানকে আসলে আমাদের কোন দরকার নাই।" "পাকিস্তানের সাথে ট্রেড হবে না। আমাদের ট্রেড স্বাভাবিকভাবেই হবে ভারতের সাথে।" তিনি বলেন, "পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য নাই, পড়তে যাই না, অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্যও যাই না। তাহলে সম্পর্ক উন্নয়ন করে লাভ কী?" এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের আমদানি বিষয়ক সম্পর্ক থাকলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এসব দেশের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে ইউরোপের দেশগুলোতে। ৩. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পাকিস্তানের বিরোধিতার প্রতি সমর্থন রয়েছে। মি. চৌধুরীর চোখে, "এখানে পাকিস্তানের দালালি করেছে এর চেয়ে বড় পাপ আর বাংলাদেশে নাই। যে দেশকে আমরা রাজনৈতিকভাবে পাপিষ্ঠ দেশ বলে মনে করছি, অন্য সব রাজনৈতিক দল, বিএনপি-কে বলছি পাকিস্তানপন্থী, জামাতকে বলছি পাকিস্তানপন্থী, যুদ্ধাপরাধীদের বলছি সবই তো পাকিস্তানকেন্দ্রিক। সেখানে পাকিস্তানের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক হবে আমাদের?" তিনি মনে করেন ইমরান খানের সাথে শেখ হাসিনার কথা হলেই সেটি সুসম্পর্ক বয়ে আনবে না। ৪. ক্ষমা প্রার্থনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই চেয়েছে যে পাকিস্তান তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাক। কিন্তু পাকিস্তান সেটা কখনো করেনি। ১৯৭৪ সালে সিমলা চুক্তির পর যে আলোচনা শুরু হয়েছিল তাতে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, আর বাংলাদেশ এবং ভারত পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানো শুরু করে। এই ঘটনার কারণেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এবং দেশটির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। এক ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় সবার সম্মতিতে যে চুক্তি হয়, তাতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। চুক্তির বিবরণ অনুযায়ী, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তারা তাদের (পাকিস্তানকে) ক্ষমা করে দেন এবং অতীতের কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যান। তবে বাংলাদেশ বলে যে, ওই ক্ষমা চাওয়া যথাযথ হয়নি। "ওরা দুঃখ প্রকাশ করেছিল, ক্ষমা চায়নি", বলেন আফসান চৌধুরী। "ভূট্টো দুঃখ প্রকাশ করেছিল। কারণ ওদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ছিল না। এটা ছিল ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া বলেছিল যে তুমি অন্তত কিছু বল, তা না হলে আমরা তোমার সাথে কী করবো।" মি. চৌধুরীর মতে, একাত্তরের এর যুদ্ধটা আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হলেও সেটা ভারত কিংবা পাকিস্তান কারো জন্যই মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। পাকিস্তানের পক্ষে মাফ চাওয়া সম্ভব না। কারণ মাফ চাইতে হলে সেনাবাহিনীর হয়ে মাফ চাইতে হবে। আর পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থায় এখনো অনেক বড় অংশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। "সেই সেনাবাহিনীর হয়ে কেউ ক্ষমা চাইবে, কোন সিভিলিয়ান বা আর্মি, সে তো টিকতে পারবে না। তাই ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না," তিনি বলেন। জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেছিলেন যে, যুদ্ধে এতো বেশি মানুষ মারা গিয়েছে তার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত। কিন্তু মাফ করে দিয়েন-এই কথাটি কাঠামোগতভাবে বলা সম্ভব নয়। ৫. আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি বা উর্দুভাষী জনগণের সংখ্যা ৫ লাখের ওপরে, যাদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখের বসবাস বিভিন্ন এলাকায় শরণার্থী ক্যাম্পে। যেসব পাকিস্তানি নাগরিক বাংলাদেশে আটকে পড়ে তাদেরকে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার বিষয়ে সুযোগ দেয়া হয়েছিল স্বাধীনতার পর পর। কিন্তু সে বিষয়টিও বাস্তবতা পায়নি। বাংলাদেশ থেকে নিজেদের আটকে পড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়নি পাকিস্তান। এ বিষয়ে রুকসানা কিবরিয়া বলেন, "১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাতে পাকিস্তানে একটি বিশাল মুহাজির জনগোষ্ঠী রয়েছে। বিশেষ করে করাচিতে। সেজন্য তারা আরেক দল মুহাজির জনগোষ্ঠী পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে উৎসাহী না।" এর পেছনে একটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষক। পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশি হাই কমিশনার সোহরাব হোসেন বলেন, দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হলে সে দুটি দেশের মধ্যে যেসব ইস্যু থাকে সেগুলোকে সামনে এনে সমাধান করতে হয়। আর এগুলো হতে হলে কূটনৈতিক আলোচনা, পদক্ষেপের দরকার হয়। যুদ্ধের বিষয়ে ক্ষমা চাওয়া, অ্যাসেট রিভিশন বা দুই দেশের সম্পদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার মতো বিষয়গুলো সম্পর্ক উন্নয়নে বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি। তিনি মনে করেন, পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের সাথে যেসব ইস্যু আছে সেগুলো তুলে ধরে পদক্ষেপ নেয় তাহলে সম্পর্ক উন্নয়ন হতে পারে বলে মনে করেন সাবেক এই হাই কমিশনার। "তারা যদি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন না হওয়ার কোন কারণ দেখছি না, বরং উন্নয়ন হওয়ার কথা," তিনি বলেন। | পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর হতে যে পাঁচটি বাধা |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। অনেকের কাছে এখনও বোধগম্য নয় যে ট্রাম্পের কয়েক হাজার সমর্থক কেমন করে দেশটির ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এরকম একটি ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়তে সক্ষম হলো - যখন নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়কে প্রত্যয়ন করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। সহিংসতার যেসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে - সেগুলোতে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উন্মত্ত সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলের ভেতরে ঢুকে সেখানে ঘুরে ঘুরে কতোটা তাণ্ডব চালাতে সক্ষম হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের দেখা গেছে তারা ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চালাচ্ছে, ছবি তুলছে, এমনকি অনেকে তাদের এই তাণ্ডবলীলা সোশাল মিডিয়াতেও সরাসরি সম্প্রচার করেছে। অনেকে ভবনের ভেতর থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে - যেগুলোকে মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টেলিভিশনে এবং অনলাইন মিডিয়াতে এই আক্রমণের খবর সারা বিশ্বে প্রচার হওয়ার সাথে সাথে অনেকেই সেখানে মোতায়েন থাকা ক্যাপিটল পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভবনটির নিরাপত্তার জন্যে সেখানে প্রায় ২০০০ সদস্যের একটি বাহিনী ক্যাপিটল পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। প্রশ্ন উঠেছে: এই বাহিনীর নিরাপত্তা ভেদ করে ট্রাম্পের সমর্থকরা কীভাবে ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলো এবং আক্রমণের সময় তারা সেটা প্রতিহত করার জন্য কতোটা চেষ্টা করেছিল। এই আক্রমণের সময় কয়েকজন আইন প্রণেতাকে দরজার পেছনে লুকাতে এবং মেঝেতে শুয়ে পড়তে দেখা গেছে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে গ্যাসমাস্ক পরিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায় পুরো ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে দাঙ্গাবাজদের সরিয়ে জায়গাটিকে পুনরায় নিরাপদ ঘোষণা করে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছিল। কিন্তু স্পর্শকাতর এরকম একটি ভবনে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের এতো বড় একটি ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত মাত্র গুটিকয়েক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন বিক্ষোভকারী ভেতরে লাফিয়ে পড়ছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ নজিরবিহীন এরকম একটি ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলার কোন প্রস্তুতি তাদের ছিল না। সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রাম্প সমর্থকদের উন্মত্তার মধ্যে পুলিশের সদস্যরা এখানে সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে অস্ত্র এবং রাসায়নিক স্প্রে বহন করতেও দেখা গেছে। অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে এক জায়গায় পুলিশ তাদের তৈরি করা প্রতিবন্ধকতা খুলে দিচ্ছে এবং এর পর ট্রাম্পের সমর্থকরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার গেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এই সহিংসতার সময় দেখা গেছে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করার বদলে পুলিশ তাদেরকে ধরে ও পথ দেখিয়ে ভবনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা যাতে ক্যাপিটল হিলের সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে যেতে পারে সেজন্য সাহায্য করতেও দেখা গেছে। কোন কোন পুলিশ সদস্যকে ভবনের গেটের দরজা টেনে ধরে রাখতে দেখা গেছে যাতে বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের ভেতরে পুলিশের একজন কর্মকর্তা এক ব্যক্তির সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য পোজ দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রাউড বয়েজ নামের একটি চরমপন্থি গ্রুপের সদস্য নিক ওকস তার এরকম একটি সেলফি টুইটারে পোস্ট করেছেন। পরে তিনি সিএনএনকে বলেছেন: "সেখানে হাজার হাজার লোক ছিল। পরিস্থিতির ওপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমাকে কখনও থামানো হয়নি এবং জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।" বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি পুলিশ। পাশেই আব্রাহাম লিংকনের ভাস্কর্য। ভবনের ভেতরে যারা ভাঙচুর চালিয়েছে তাদের একজনের ছবিতে দেখা গেছে তার মুখে আত্মতৃপ্তির হাসি, তার পা স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির টেবিলের ওপর তোলা। পরে ভবনের ভেতর থেকে বের হয়ে এসে তিনি একটি চিঠি দেখিয়েছেন যা স্পিকারের অফিস থেকে চুরি করে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় যে কনফেডারেট পতাকা ব্যবহার করা হয়েছিল দাঙ্গাকারীদেরকেও সেরকম একটি পতাকা বহন করতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক বলে সুপরিচিত এক ব্যক্তিকেও দেখা গেছে মাথায় শিং লাগিয়ে, মুখে রঙ মাখিয়ে সেনেটের একটি চেয়ারের পাশে পোজ দিতে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তার কিছুক্ষণ আগে এই চেয়ারটিতে বসে ছিলেন। আরো পড়তে পারেন: ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেন, 'দুর্দান্ত সমর্থকদের' প্রশংসাও করলেন ট্রাম্প ইতিহাস কীভাবে মনে রাখবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিদায়কে? মার্কিন কংগ্রেস ভবনের ভেতরে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ আমেরিকার কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা কি এই প্রথম? ভাইরাল হওয়া এরকম একটি ছবিতে ডেস্কের ওপর পা তুলে রিচার্ড বারনেটকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা এখন এই সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের আহবান জানিয়েছেন এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের একজন সদস্য ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক ভাল ডেমিংস, যিনি একসময় পুলিশের প্রধান ছিলেন, তিনি বলেছেন, "এটা অবশ্যই বেদনাদায়ক" যে ক্যাপিটল পুলিশ প্রস্তুত ছিল না, তাদের সংখ্যাও ছিল কম এবং এবিষয়ে তাদের পরিষ্কার কোন পরিকল্পনাও ছিল না। এছাড়াও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসবে কীনা, আসলে কখন আসবে - এসব বিষয় নিয়েও সংশয় ও বিভ্রান্তি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছিল ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প গড়িমসি করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এই বাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দিতে পারেন। কিন্তু গত বছর কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের দাবীতে সারা দেশে যখন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল - সেসময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। এর পর কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটও ব্যবহার করা হয়। নিরাপত্তা বিষয়ক বিবিসির সংবাদদাতা গর্ডন কোরেরা বলছেন, সবশেষ ঘটনা থেকে এটা বোঝা যায় যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে নিরাপত্তাজনিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়েও কীভাবে রাজনীতি হয়েছে। পুলিশ অবস্থান নিচ্ছে ক্যাপিটল হিল ভবনের ভেতরে। জনতার বিক্ষোভের সময় কীভাবে তাদেরকে সামাল দিতে হয় এবিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লিফোর্ড স্টট, ব্রিটিশ সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন তিনি, বলেছেন বুধবার ওয়াশিংটনে যা হয়েছে " সে বিষয়ে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে বড় ধরনের ও বিব্রতকর প্রশ্ন উঠবে।" সিয়াটলে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এখন কাজ করছেন প্রফেসর স্টট। তিনি বলছেন, রাজধানীতে পুলিশের কাজের জটিল কাঠামোর কথা বিবেচনা করলেও বলা যায় যে ট্রাম্পের সমর্থকদের এধরনের সহিংসতার ব্যাপারে তাদের কোন প্রস্তুতি ছিল না। "ক্যাপিটলে যে এরকম কিছু ঘটতে পারে সেবিষয়ে তাদের কাছে তথ্য ছিল। এটা আগে থেকে অনুমান করতে না পারার কারণে এবিষয়ে তাদের যে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না সেটা এক ধরনের ব্যর্থতা," বলেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, "এটা শুধু পুলিশের ভূমিকার জটিলতার বিষয় নয়, কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সেবিষয়ে পর্যালোচনারও ঘাটতি রয়েছে। পর্যালোচনা করা হলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেত।" ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় আহত একজন পুলিশ অফিসার শুক্রবার মারা গেছেন। সহিংসতায় আরো চারজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর প্রধানসহ পুলিশের আরো দুজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল পুলিশের প্রধান নিশ্চিত করেছেন যে হামলার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ৫০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা আহত হয়েছে। তিনি বলেছেন, তার বাহিনী ও সহকর্মীরা "সাহসিকতার সঙ্গে" হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে মোকাবেলা করেছে। বাহিনীর প্রধান স্টিভ সান্ড বলেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে এরকম সহিংস হামলার ঘটনা অসম্ভব একটি বিষয় এবং আমার ৩০ বছরের পেশাগত জীবনে ওয়াশিংটন ডিসিতে আমি কখনো এরকম ঘটতে দেখিনি।" এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, পুরো ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে কী ধরনের পরিকল্পনা ছিল তারা এখন সেসবও খতিয়ে দেখছেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। সহিংসতার ব্যাপারে আগে থেকে কী জানা ছিল নির্বাচনের ফল কংগ্রেসে সত্যায়িত করার সময় ট্রাম্পের সমর্থকদের এই সমাবেশ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য ছিল ফলাফলের স্বীকৃতিকে আটকে দেওয়া। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত। নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দিনের পর দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার কয়েকজন রিপাবলিকান মিত্রের দেওয়া বক্তব্যের পর এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রফেসর স্টট বলেছেন, প্রকাশ্যে অপরাধ করার সময় দাঙ্গাবাজদেরকে যে ধরনের আনন্দ করতে দেখা গেছে সেটাও বেশ মজার বিষয়। "তাদের একটা পরিষ্কার উদ্দেশ্য ছিল। বিক্ষোভকারীরা ধরে নিয়েছিল যে তারা যা করছে সেটা বৈধ। তাদের প্রেসিডেন্ট, কমান্ডার ইন-চিফ, এই প্রেসক্রিপশনে অনুমোদন দিয়েছেন যে তোমরা যাও এবং এরকম করো," বলেন তিনি। হামলার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থক চরমপন্থিদের ব্যবহৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নজর রাখা হয়েছিল। দেখা গেছে অতি-দক্ষিণপন্থী গ্রুপগুলো ক্যাপিটল হিলসহ আইন প্রণেতাদের ওপর সহিংসতার উস্কানি দিয়ে হুমকি দিয়েছে। ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু কিছু সমর্থকের পরনে ছিল ""MAGA: CIVIL WAR" এধরনের স্লোগান লেখা পোশাক। সেখানে ৬ই জানুয়ারি ২০২১ এই তারিখও লেখা ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার মূল স্লোগান ছিল এই মাগা যার অর্থ মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বা আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন। বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা গর্ডন কোরেরা বলছেন, কংগ্রেসের সদস্যরা যদি বিক্ষোভকারীদের বাধা দিতো, কিম্বা তাদেরকে যদি জিম্মি করা হতো - তাহলে আরো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারতো। তিনি বলেন, যেসব ছবি দেখা যাচ্ছে তার ফলে ২০শে জানুয়ারি জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের দিনের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স হামলার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় সর্বোচ্চ বিচারের আহবান জানিয়েছেন। বলা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের অনেককে ছবিতে ও ভিডিওতে যে ধরনের নির্লজ্জ আচরণ করতে দেখা গেছে, তাতে তাদের বিচারের জন্য তথ্য-প্রমাণের অভাব হবে না। ফেসবুক এধরনের বহু ভিডিও মুছে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে যাতে এসব দেখে কেউ উৎসাহিত না হয়। তবে অনেকেই লোকজনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখার জন্য। যদিও ক্যাপিটল হিলের ভেতরে যাদের দেখা গেছে তাদের অনেকেই অতি-দক্ষিণপন্থী গ্রুপের পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ক্যাপিটল পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে তারা হামলাকারীদের নানাভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে, যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক একজন আইন কর্মকর্তা চ্যানিং ফিলিপ্স বলেছেন, সরকারি কৌসুলিরা তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও ফেডারেল পর্যায়ে মামলা করতে পারেন। তিনি জানান, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা থেকে শুরু করে হামলার অভিযোগ আনা যেতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের কারো কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর অভিযোগও আনা হতে পারে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে হতে পারে ২০ বছরের কারাদণ্ড। আমেরিকার কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা | ক্যাপিটল হিলে হামলা: নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | ভারতে একটি মদ বিক্রির দোকান "গ্রামাঞ্চলে মদ্যপানের প্রসারের কারণে মেয়েদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কিছু গ্রামে এমন হয়েছে যে কিছু পুরুষ মাতাল হয়ে তাদের নিজেদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেই সহিংস যৌন আচরণ করতে শুরু করেছিল।" বলছিলেন অল ইন্ডিয়া উইমেন্স ডেমোক্র্যাটিক এসোসিয়েশনের সম্পদক পূণ্যবতী শংকরা। তার ৪০ বছর ধরে নারী আন্দোলনে জড়িত তিনি, এবং অন্ধ্রপ্রদেশে দেশী মদ বা বা আরাক-বিরোধী আন্দোলন তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়। ভারতের নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশে মদ নিষিদ্ধ করাকে এক বড় সাফল্য বলে মনে করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা তখনকার ৬ কোটি জনসংখ্যার রাজ্যটিতে বড় রকমের সামাজিক পরিবর্তনও নিয়ে এসেছিল। ভারতে এই আরাক হচ্ছে অত্যন্ত কড়া মদগুলোর অন্যতম। "আরাক একধরণের দেশী মদ। এটাও এ্যালকোহল কিন্তু ওয়াইন বা হুইস্কির মত নয়। এটা তৈরি হয় ভাত থেকে, এবং খুবই নিম্নমানের একটি পানীয়।" এর মানে হচ্ছে আরাকের দাম তুলনামূলকভাবে সস্তা। তা সত্ত্বেও যারা এটা পান করতে অভ্যস্ত - তাদের অনেকে এত বেশি মদ্যপান করত যে তাদের পারিবারিক আয়ের একটা বড় অংশই এই মদের পেছনে চলে যেত। অনেক সময়ই পারিবারিক আয়ের ঘাটতি মেটাতে বাড়ির মেয়েদের কাজ করতে হতো। কিন্তু খরা এবং কৃষির প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে অনেক সময়ই মেয়েদের উপার্জন করা কঠিন হয়ে পড়ত। "বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীরা কোন কাজ বা চাকরির সুযোগ পায় না। একটা কারণ খরা, তা ছাড়া কৃষিতে এখন যেরকম নানা যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে - সেটাও একটা কারণ। কাজেই বাধ্য হয়ে তাদেরকে শুধু পুরুষদের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হতো। ফলে পুরুষরা যখন আরাক পানে আসক্ত হয়ে পড়ছিল এবং তাদের সব টাকা মদের পেছনে খরচ করে ফেলছিল - তখন নারীদের জন্য ছেলেমেয়ে ও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়াটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।" ভারতে মদ বিক্রি থেকে প্রচুর রাজস্ব আয় করে রাজ্য সরকারগুলো "পুরুষরাও দেখা যেতো সব টাকা মদের পেছনে উড়িয়ে দিয়ে তারা ঘরে এসে দাবি করত তাদেরকে মাছ, মুরগি বা খাসির মাংস দিয়ে ভালো করে খাওয়াতে হবে। সেই জন্য নারীদের মধ্যে একটা অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল।" পুরুষদের অতিরিক্ত মদ্যপান প্রায়ই ঘরের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা, মারধর-নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়াত। অনেক সময় এতে মৃত্যুও ঘটে যেত। "একজন নারী আত্মহত্যা করে। আরেকজন লোক মাতাল অবস্থায় কুয়াতে ঝাঁপ দেয় এবং মারা যায়। " অন্ধ্রপ্রদেশে মদ্যপানের কারণে বহু পরিবারে এমন বিপর্যয় নেমে আসায় পূণ্যবতীর সংস্থাটি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে তারা ঠিক করেন যে কিছু একটা করতে হবে। "আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে এবং মেয়েদের মধ্যে প্রচারণা চালাতে হবে। আমাদের কর্মীরা গ্রামীণ এলাকাগুলোতে গিয়ে মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করা, তাদের সঙ্গে কথা বলা, আলোচনা করা - ইত্যাদি কাজে নামলেন"। পূণ্যবতী যখন এসব কাজ করছেন, প্রায় সেই সময়ই ভারত সরকার বয়স্ক মানুষদের মধ্যে - বিশেষত গ্রামীণ নারীদের মধ্যে - সাক্ষরতা বাড়ানোর এক কর্মসূচি শুরু করেছিল। তাদের যেসব বই পড়তে দেয়া হতো তার মধ্যে একটি গল্প বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করল। অন্ধ্রপ্রদেশে একটি দেশী মদ আরাক তৈরির কারখানা "এর মধ্যে একটি গল্প ছিল সীতাম্মা কথা। এর মানে হচ্ছে সীতার গল্প। এক গ্রামের নারী সীতা । তবে সে শিক্ষিত। গ্রামে মদ্যপানজনিত সমস্যাগুলো দেখে সীতা সেই গ্রামের অন্য নারীদের সংগঠিত করে মদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে এবং গ্রামের মদের দোকানটি নিষিদ্ধ করে দেয়।" সমস্যা হলো, এ্যালকোহল বিক্রি থেকে রাজ্য সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে। এর মধ্যে একটা বড় অংকের অর্থ আসে নিলাম প্রক্রিয়া থেকে। রাজ্য সরকার মদ সরবরাহকারীদের লাইসেন্স বিক্রি করে নিলামের মাধ্যমে। এটা ঠেকানোর জন্য গ্রামের মহিলারা একটা পরিকল্পনা করলেন। "যখন সরকার এই নিলামের দিন ঘোষণা করল, সেখানে ব্যারিকেড এবং পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু গ্রামের মহিলারা সেই ব্যারিকেড ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। চেষ্টা করলো নিলাম বন্ধ করে দিতে। এটাই ছিল ওই ইস্যুতে নারীদের প্রথম বিজয়।" এই বিক্ষোভ যখন অব্যাহতভাবে চলতে লাগল তখন নারীরা একটা বড় সাফল্য পেলেন। ১৯৯৩ সালে আরাক নামের কড়া দেশী মদ নিষিদ্ধ করলো সরকার। পরের বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে - মহিলারা আরো একটি সাফল্য পাবার প্রয়াস চালালেন। তারা ওই রাজ্যে মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেন। পূণ্যবতী বলছেন, তাদের এ প্রয়াসে সমর্থন যোগালেন তেলুগুদেশম পার্টির নেতা এনটি রামারাও - সাবেক অভিনেতা এবং আর আগের দুই মেয়াদ ধরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তখন তিনি চাইছেন তৃতীয় মেয়াদের জন্য পুননির্বাচিত হতে। এনটি রামারাও বুঝেছিলেন, ভোটে জিততে হলে এই নারীদের সমর্থন পেতে হবে তাকে। বিষাক্ত মদ পানের জন্য মৃত্যুর ঘটনা ভারতে প্রায়ই ঘটে থাকে "আমি বলবোনা যে তিনি মদ্যপানকে ঘৃণা করতেন। কিন্তু তাকে নির্বাচনে জিততে হলে এই আন্দোলনকে সমর্থন দিতে হবে, সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নারী ও যুবসমাজের মন জয় করতে হবে। তখন সময়টা এমন ছিল যে কেউ যদি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিতে টিকতে চায় তাহলে তাকে মদ নিষিদ্ধ করার অঙ্গীকার করতেই হবে।" তেলুগুদেশম পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সে নির্বাচনে কংগ্রেসকে সহজেই পরাজিত করে। এর পর ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এনটি রামারাও তৃতীয়বারের মত মুখমন্ত্রী হন। হায়দরাবাদে তার অভিষেক অনুষ্ঠানে এনটি রামারাও এক বাক্যে ঘোষণা করলেন, তিনি যে প্রথম সরকারি আদেশটি স্বাক্ষর করবেন সেটি হবে মদ নিষিদ্ধ করা। পরের বছর জানুয়ারি মাস থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে এ্যালকোহল কেনাবেচা নিষিদ্ধ হলো। তবে দুটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিল। "একটা হচ্ছে মেডিক্যাল কারণে। যারা উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভোগেন - তাদের জন্য ডাক্তার পরিমিত মদ্যপান অনুমোদন করেন। তাদের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মদ কিনতে হলে একটি ডাক্তারি সার্টিফিকেট দেখাতে হতো। দু'নম্বর ছিল ধর্মীয় কারণ। কোন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে - যেমন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসবে - মদ্য পানের প্রথা আছে। এ নিষেধাজ্ঞার পর প্রকাশ্যে মদ কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু গোপনে চোরাই বাজারে কিছু মদ বিক্রি চলতে থাকল।লোকে যেন সরকারি নির্দেশ মেনে চলে সে জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পূণ্যবতী গ্রামে ফিরে গেলেন। "গ্রামাঞ্চলে কিছু লোক অবৈধভাবে মদ তৈরি এবং বিক্রি শুরু করেছিল। আমরা শুল্ক বিভাগের লোকজন নিয়ে এসব জায়গায় গিয়েছি। এই বেআইনি ব্যবসায়ীদের সাথে আমরা বৈঠকও করেছি। আমরা সরকারকে বলেছি, এই লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। সরকার তাদের ভালো চাকরি দিতে পারলে তারা এসব তৎপরতা বন্ধ করে দেবে বলেই আমরা মনে করতাম।" পূণ্যবতী বলছেন, এ্যালকোহল নিষিদ্ধ করায় অনেক উপকার পাওয়া গেছে। স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়া কমে গেছে। লোকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে যে বিনিয়োগ করতো তাও বেড়েছে। "স্বাভাবিকভাবেই, মানুষ এতে খুশি হয়েছিল। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা।কারণ পুরুষরা যখন আরাক পান করা বন্ধ করলো, তখন তারা পরিবার ও ছেলেমেয়েদের পেছনে বেশি অর্থ খরচ করতে পারছিল। একারণে শিশুরাও খুশি হয়েছিল। লোকের হাতে টাকাপয়সা থাকলে তারা ভালো কাপড়চোপড় কেনে, বাচ্চার জন্য একটা ভালো স্কুল ব্যাগ কিনে দিতে পারে, বাড়িঘর বানাতে পারে। আর এসব ব্যয়ের কারণে সরকারও বেশি ট্যাক্স পেতে পারে।" তবে অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারের আয় হয়তো কিছুটা বেড়েছিল - কিন্তু মনে করা হয় যে সেসময় এ্যালকোহল নিষিদ্ধ হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে এনটি রামারাওকে সরিয়ে চন্দ্রবাবু নাইডু যখন মুখ্যমন্ত্রী হলেন, তখন তিনি - বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে চাইছিলেন। পূণ্যবতী বলছেন, ঋণের একটা শর্ত ছিল যে প্রদেশ সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। পূণ্যবতীর কথায়, এটি সহ আরো কিছু কারণে চন্দ্রবাবু নাইডু ১৯৯৭ সালে মাত্র দু বছর পর এ্যালকোহলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেন। ভারতের গুজরাটে হাজার হাজার মদের বোতল ধ্বংস করা হচ্ছে বুলডোজার দিয়ে "বিশ্বব্যাংক ছিল একটা কারণ। আরেকটা কারণ ছিল প্রভাবশালী মহল বিশেষ করে হোটেল ইন্ডাস্ট্রির চাপ। এ্যালকোহল ছাড়া তারা দেশ ও বিদেশ থেকে অতিথি আকর্ষণ করতে পারছিল না। তা ছাড়া এই লিকার লবি খুবই শক্তিশালী। তারাও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল। তা ছাড়া নারীদের আন্দোলনের গতিও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল । তারা তো আর প্রতিদিন রাস্তায় নামতে পারে না।" তবে এ্যালকোহলের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নারীরা সহজে হাল ছাড়েন নি। "রাজ্য বিধানসভার সামনে হাজার হাজার নারী সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছিল। কিন্তু চন্দ্রবাবু নাইডু তাতে কর্ণপাত করেননি। রাজ্যের নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ধীরে ধীরে তিনি এ্যালকোহলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেন।" অন্ধ্রপ্রদেশে এখন এ্যালকোহল নিষিদ্ধ করার প্রশ্নটি আবার ইস্যু হয়ে উঠেছে। কারণ সরকার এখন ছোট ছোট মদ বিক্রির দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। পূণ্যবতী বলছেন এ্যালকোহলে বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন চলছে। "আমরা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চাইছি না। কিন্তু আমরা চাই না যে সরকার মদের ব্যবসাকে একটা রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে দেখুক।" | ইতিহাসের সাক্ষী: ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে মদ নিষিদ্ধ করার আন্দোলন করেছিলেন যে নারী |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | শুরুতে উৎসাহ পেলেও প্রত্যাশিত ফল না পেলে কয়েকদিন পর হাল ছেড়ে দেন অনেকে। ডায়েট এবং শরীর চর্চায় নানান ধরনের ভুলের কারণে এ ধরনের সমস্যায় পড়েন। কী করে মানসিক দৃঢ়তা বজায় রেখে ডায়েট এবং শরীর চর্চা করবেন তা জানতে দেখুন এই ভিডিও। | ডায়েট: যেসব ভুলে ওজন কমে না |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | ফেসবুকে চ্যাটিং "যেদিন আমি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলি, সেদিনই তার কাছ থেকে আমি একটি মেসেজ পেলাম। প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি কেনো আমাকে লিখতে যাবেন? আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না, আমি একাই ছিলাম। তারপরেও আমি খুব ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকালাম। এটা ছিলো খুব বোকা বোকা একটি ব্যাপার। নিজের আচরণে আমি হাসলাম এবং মেসেজটি খুলে পড়তে লাগলাম। হঠাৎ তার মেসেজ তিনি লিখেছেন, "হাই, আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।" আমি হাসলাম এবং ওই মেসেজের দিকে কয়েক মিনিট তাকিয়ে রইলাম। আমি তখনও বুঝতে পারছিলাম না এর জবাবে আমি কি লিখবো, নাকি মেসেজটিকে উপেক্ষা করবো। ভাবছিলাম, অপরিচিত একজন ব্যক্তির মেসেজের জবাব দেব কেনো? আমার স্বামী যদি এসব জানতে পারেন তাহলে কি হতে পারে? সে ব্যাপারটা কিভাবে নেবে? স্বামীকে নিয়ে আমার এই ভাবনা আমাকে রাগিয়ে দিলো। কারণ সে এমনই এক ব্যক্তি যে অপরিচিত এক পুরুষের কাছ থেকে আসা সামান্য 'হাই' শব্দটিও তাকে ক্রুদ্ধ করে তুলতে পারে। পরিস্থিতি যদি অন্য রকম হতো আমি হয়তো এ ধরনের একটি মেসেজ উপেক্ষাই করতাম। কিন্তু আমি এতোই রেগে ছিলাম যে তাকে আমি পাল্টা 'হাই' লিখে তার মেসেজের জবাব দিলাম। তারপর শুরু তার নাম ছিলো আকাশ। আমি তাকে একেবারেই চিনতাম না। কিন্তু তার 'ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট' গ্রহণ করে আমি তাকে বন্ধু বানিয়ে ফেললাম। এটা নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা ভাবনাও করিনি। কি কারণে জানি না তার মনে হয়েছিলো যে আমি একজন বিমানবালা। আমি তাকে সত্য কথাটা বলে দিতে পারতাম। কিন্তু বলি নি। কারণ আমি একজন বিমানবালা এটা ভাবতে আমার ভালো লাগছিলো। ছোট বেলা থেকেই আমি শুনে আসছি যে আমি খুব সুন্দরী। আমার গায়ের রঙ দুধের মতো শাদা, পটোলচেরা চোখ আমার, ফিগারও খুব ভালো। আমি নিশ্চিত যে দেখতে আমি আকর্ষণীয় এক নারী। কিন্তু আমাকে বিয়ে দেওয়া জন্যে আমার পিতামাতা খুব তাড়াহুড়ো করতে লাগলেন এবং তারা যাকে প্রথম পছন্দ করলেন তার সাথেই আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার বিবাহিত জীবন কিন্তু আমার আবেগ অনুভূতি বা রোমান্স নিয়ে এই ব্যক্তির কোনো ধরনের আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু বিয়ের আগে আমি স্বপ্ন দেখতাম যে আমার এমন একজনের সাথে বিয়ে হবে যে আমাকে খুব ভালোবাসবে, মাঝে মাঝে আমাকে সারপ্রাইজ দেবে এবং কখনও সখনো আমাকে এক কাপ চা-ও বানিয়ে দেবে। কিন্তু আমার স্বামী আসলে একটি যন্ত্রের মতো। প্রতিদিনের মতোই সে সকালে ঘুম থেকে উঠে, কাজে যায়, দেরি করে বাড়িতে ফিরে আসে, রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় ঘুমাতে চলে যায়। এটা এমন নয় যে তার ব্যস্ততা আমি বুঝতে পারি না। কিন্তু কোন একজন ব্যক্তির তার স্ত্রীকে সুন্দর কিছু একটা বলতে কতোটুকু সময় লাগতে পারে? অথবা কতোটুকু সময় লাগতে পারে তার স্ত্রীকে একটু জড়িয়ে ধরতে কিম্বা স্ত্রীর মুখের দিকে একটা ভালোবাসার চোখে তাকাতে? 'আমরা শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত হই কিন্তু তার মধ্যে কোনো রোমান্স থাকে না' হয় আমার স্বামীর মধ্যে এসব আবেগ অনুভূতি নেই। অথবা তিনি হয়তো এমন এক ধরনের পুরুষ যে তার স্ত্রীকে ভালোবাসার কথা বললে আত্ম-অহমিকায় আঘাত লাগে। আমরা শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত হই কিন্তু তার মধ্যে কোনো রোমান্স থাকে না। সেক্সের আগে যে একে অপরকে আদর করে এর জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করতে হয় সেসবও আমরা করি না। সে কখনও আমার প্রশংসাও করেনি। যতোই ভালো রান্না করি বা বাড়িঘর যতো সুন্দর করেই গুছিয়ে রাখি না কেনে সে কখনো আমাকে এজন্যে ভালো কিছু বলে না। সে ছবি চাইলো আকাশ যখন আমাকে আমার মেসেজ পাঠালো তখন আমি এসব ভাবনায় ডুবে ছিলাম। সে আমার ছবি দেখতে চাইলো। ইন্টারনেট আমি তখনও খুব একটা বুঝে উঠতে পারিনি। এমনকি আমরা ফেসবুক অ্যাকাউন্টও খুলে দিয়েছেন আমার স্বামী। সে-ই আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করতে হয় এবং কিভাবে মেসেজের জবাব দিতে হয়। ফেসবুকে আমার প্রোফাইলে কোনো ছবি ছিলো না। সেখানে একটা ছবি আপলোড করতে ভয় পাচ্ছিলাম আমি। কারণ আমি শুনেছি এখান থেকে ছবি চুরি করে সেসব নাকি পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়। কিন্তু আকাশ খুব জোর করছিলো। এই বিষয়টি আমি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এমনকি তাকে এটাও বলে দিলাম যে আমি আসলে বিমানবালা নই। এতে সে মোটেও নিরুৎসাহিত হলো না। বরং সে আমার ছবি দেখার জন্যে আরো বেশি উন্মুখ হয়ে পড়লো। কিন্তু সমস্যা হলো আমিও যদি ছবি আপলোড করতে চাইতাম, সেটা আমি করতে পারতাম না, কারণ আমার কাছে কোনো সুন্দর ছবি ছিলো না। তিনিও বিবাহিত ছিলেন আকাশ ছিলেন বিবাহিত। তিনি বললেন, তার একটা তিন বছরের ছেলে আছে। তিনি চাকরি করেন, কর্মসূত্রে বিদেশে যান এবং তাকে বিভিন্ন পার্টিতেও অংশ নিতে হয়। তিনি বললেন যে ওসব পার্টিতে নাকি মেয়েরা প্রকাশ্যে মদ ও সিগারেট খায়। এসব কিছুই আমার জন্যে ছিলো নতুন। আমার কাছে এটা ছিলো অপরিচিত ও উত্তেজনাময় এক পৃথিবীকে দেখার জানালা। তার স্ত্রী-ও তার মতোই উচ্চ-বেতনের চাকরি করেন একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে। আকাশ আমাকে বললেন যে তার স্ত্রী সবসময় ব্যস্ত থাকে। তারা একসাথে খুব একটা সময় কাটাতে পারেন না। একবার তিনি আমাকে বললেন, "একবার একটি ঘটনা নিয়ে আমি খুবই ভেঙে পড়েছিলাম, চেয়েছিলাম তার সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে, কিন্তু তিনি মিটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।" তার প্রতিটি কথার সাথেই আমি নিজেকে মেলাতে পারছিলাম। আমার অপেক্ষা তারপর আমরা প্রতিদিনই চ্যাট করতে থাকি। আমরা খুব মজা করতাম। আমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দুপুরের জন্যে অপেক্ষা করতাম যে আকাশ কখন আমাকে মেসেজ পাঠাবে। একদিন আকাশ আমাকে ওয়েবক্যাম চালু করতে বললেন। তখন আমি একটু বিব্রত হয়ে অফলাইনে চলে যাই। সেদিন আমি স্নানও করি নি। মনে হয়েছিলো আকাশ যদি আমাকে ওই অবস্থায় দেখে ফেলে! একটা ছবি দেওয়ার জন্যে তিনি প্রতিদিন জোর করতে লাগলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না এই পরিস্থিতি আমি কীভাবে সামাল দেব। তখন আমি তাকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করলাম। আমরা সাধারণত যে সময়ে চ্যাট করতাম সেই সময়টা আমি অনলাইনে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। এভাবে কয়েকদিন চললো তারপর একদিন আকাশ আমাকে ব্লক করে দিলেন। আমি জানতাম এরকমই কিছু একটা হবে। তারপরেও আমার মন খারাপ হয়েছিলো। শূন্য হয়ে গেলো জীবন আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো না। কিন্তু তারপরেও তার চলে যাওয়ার পর আমার জীবনটা যেনো শূন্য হয়ে গেলো। আমি আমার নিজের উপরে আকাশেরও চাইতে বেশি রাগ করলাম। নিজেকে মনে হলো আমি পরজীবী এক মানুষ। খুব অসহায় লাগলো নিজেকে। কেন আমি একটা কেরিয়ার গড়ে তুললাম না? তৈরি করলাম না নিজের জীবন? আমার যদি একটা চাকরি থাকতো তাহলে তো আমি আমার মতো করে বেঁচে থাকতে পারতাম! এই ঘটনার পর আমি ফেসবুক থেকে বেশ কয়েকদিন দূরে থাকলাম। ফেসবুক, অনলাইনে তথ্য- সবই কাজে লাগবে বিক্রেতাদের? স্টিকার কমেন্ট কি ফেসবুক আইডি বাঁচাতে পারে? 'আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমার মেয়ের জীবনে আমি এরকম হতে দেব না' কিন্তু একটা দৃষ্টির বাইরে গেলেই যে মন থেকে দূরে চলে যাবে সেরকমটা হলো না। আকাশের সাথে আমি ফেসবুকে যেভাবে সময় কাটাতাম সেসব আমাকে তাড়া করতে লাগলো। আমরা যখন চ্যাট করতাম, সময় চলে যেতো দ্রুত। কোনো কারণ ছাড়াই সারাদিন আমার মুখে একটা হাসি লেগে থাকতো। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, অনলাইনে আমাদের এই ভার্চুয়াল সম্পর্কের কারণে আমার স্বামী-ই সবচেয়ে বেশি লাভবান হতো। আমার সুখী জীবন আমার স্বামীর দিক থেকে কোনো ধরনের বাড়তি চেষ্টা ছাড়াও আমি ছিলাম একজন সুখী মানুষ। আমাদের সম্পর্কের সেই শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছিলো আকাশ। আমি তো কিছু ভুল করি নি। আমি আমার স্বামীর সাথে প্রতারণাও করি নি। আমি তো অন্য কারো সাথে বিছানাতেও যাই নি। আমি শুধু ফেসবুকে একটুখানি চ্যাট করেছিলাম। ওই চ্যাটে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হতো যে একজন নারী হিসেবে আমার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। একজন স্ত্রী হওয়ার বাইরেও যে আমার একটা জীবন থাকতে পারে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আমি আকাশের সাথে আবার যোগাযোগ করবো কিনা এমন একটা দ্বিধা ও সংশয়ের মধ্যে পড়ে রইলাম। আরো কিছু পুরুষ তারপর একদিন, আমি ফেসবুকে একটা লোকের প্রোফাইল ছবি দেখলাম। পুরুষটি দেখতে খুব সুন্দর। আমি বুঝতে পারলাম না আমার ভেতরে কি হচ্ছিলো। কিন্তু আমি তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। সে জবাব দিলো, "আপনি বিবাহিত। আপনি কেন আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন?" আমি বললাম, "কেনো, বিবাহিত মহিলাদের কি বন্ধু থাকতে পারে না?" ব্যাস, এতোটুকুই। তারপর আবার শুরু হলো। এবং আমাদের মধ্যে এখনও যোগাযোগ আছে। কিন্তু তিনিই একমাত্র ব্যক্তি নন। পরে আমি আরেকজন পুরুষের প্রোফাইল দেখলাম যেখানে তিনি বেশ কিছু সেলেব্রিটি বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের সাথে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। আমার তখন মনে হলো এধরনের একজন মানুষের জীবন সম্পর্কে জানতে পারলে সেটাও খুব মজার হবে। আমি তাকেও একটা রিকোয়েস্ট পাঠালাম। তিনিও সেটা একসেপ্ট করলেন। নতুন জীবন জীবনটা বেশ উত্তেজনাকরই মনে হচ্ছিলো। তারপর কোন এক সময় আমি গর্ভধারণ করি। আমার মেয়ে আমার জীবনটাকে পুরো বদলে দিয়েছে। তখন আর আমার কিছুর জন্যেই সময় ছিলো না। তার বয়স এখন তিন বছর। কিন্তু এখন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করাও খুব কঠিন। একটা সময় আসে যখন আমি কারো একজনের সাথে কথা বলতে চাই। কিন্তু আমি যখনই মোবাইল ফোনটা হাতে নেই সে তখন দৌড়ে আসে এবং তাকে ফোনটা দেওয়ার জন্যে সে কান্নাকাটি করতে থাকে। ফোনে সে কার্টুন দেখতে পছন্দ করে। কখনও কখনও খুব হতাশ লাগে। আমি ভাবি, আমি যে ধরনের নারী ছিলাম সেরকম কি আবার হতে পারবো? অথবা কোনো একজনের স্ত্রী কিম্বা মা হওয়াই কি আমার জীবনের একমাত্র গন্তব্য ছিলো। সেকারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমার মেয়ের জীবনে আমি এরকম হতে দেব না। সে যাতে নিজের উপর নির্ভরশীল একজন নারী হয়ে উঠতে পারে, যাতে সে তার জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, সেজন্যে আমি তাকে সাহায্য করতে চাই।" আরও পড়ুন: ‘যখন বুঝতে পারলাম আমার বিয়ে হয়েছে এক নপুংসকের সঙ্গে’ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালেন হিজড়া নারী বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত পরিবর্তন নিয়ে দলটির ব্যাখ্যা বাংলাদেশের সিলেটের গ্রীন গ্যালারির স্টেডিয়াম আসলে কেমন? | "অপরিচিত পুরুষের সাথে যখন ফেসবুকে আমার পরিচয় হলো" |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে বড় নিদর্শন পিরামিডগুলো, যার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যকলায়, যার উদাহরণ প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন ভবনের নকশায় প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে বড় নিদর্শন পিরামিডগুলো, যার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যকলায়, যার উদাহরণ প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন ভবনের নকশায়। বিশ্ব জুড়ে অনেক ভবনে পিরামিডের আদল দেখা যাবে। যেমন মেমফিসের পিরামিড অ্যারেনা, লাস ভেগাসের লুক্সর ক্যাসিনো এন্ড হোটেল, জাপানের নিমা স্যান্ড মিউজিয়াম, এসব ভবন পিরামিডের আদলে নকশা করা হয়েছে। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামের প্রবেশদ্বারও পিরামিডের মতো নির্মাণ করা হয়েছে। ২. রোমান সাম্রাজ্যের পথ রোমানরা পাথরের ভিত্তি স্থাপন করে এবং পথের ওপরও পাথর বসিয়ে দেয়, যাতে ভারী ঘোড়ার গাড়ী এবং সৈন্যবহরের চাপেও রাস্তা ঠিকঠাক থাকে সব পথই রোমে গিয়ে ঠেকেছে! এই প্রবচনটি হয়তো পুরোপুরি সত্যি নয়, কিন্তু প্রাচীন যুগের রোমানরা অবশ্যই তাদের সম্পর্কে দুইটি বিষয় ভালোভাবে জানতো। রোমানদের আগে শহর ও নগরগুলোয় যাতায়াতের সহজ কোন পথ ছিল না। কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থা আর বাণিজ্য পথের গুরুত্ব তারা বুঝতে পেরেছিল। এ কারণে সবচেয়ে ভালো পথ নির্মাণ করতে বড় আকারে জরিপ করা হয়, যাতে পথে কোন প্রতিবন্ধকতার তৈরি না হয় এবং পথটি সোজাসাপ্টা হয়। তারা পাথরের ভিত্তি স্থাপন করে এবং পথের ওপরও পাথর বসিয়ে দেয়, যাতে ভারী ঘোড়ার গাড়ী এবং সৈন্য বহরের চাপেও রাস্তা ঠিকঠাক থাকে। খৃষ্টপূর্ব ৪০০ বছর আগের এই প্রযুক্তি এখনো সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। রোমানদের তৈরি করা বেশ কিছু পথ এখনো ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সড়ক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ৩. ব্যাবিলনের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা প্রাচীন ব্যাবিলনে পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৪০০০ বছর আগে। প্যারিসে প্রথম পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা চালু হয় ১৮৫০ সালে। লন্ডনে চালু হয় ১৮৬৬ সালে। কিন্তু ব্যাবিলনে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৪০০০ বছর আগে। কিন্তু সেটি গ্রহণ করতে বাকি বিশ্বের এতো বেশি সময় কেন লাগলো? ধারণা করা হয়, প্রাচীন ব্যাবিলনেই প্রথম কাদা মথিত করে পাইপের আকার দেয়া হয়, যার মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে পয়ঃবর্জ্য বের করে দেয়া হতো। বেল এট নিপ্পুর এ হাজার হাজার বছর আগের এরকম পাইপ এবং টি-জয়েন্টের নমুনা পাওয়া গেছে। ৪. প্রাচীন গ্রিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কাদা মাটি ব্যবহার করে গ্রিকরা পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করেছিল খৃষ্ঠপূর্ব আঠারো শতকে এককথায় বলা চলে, প্রাচীনে গ্রিকরা ছিল পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রথম উদ্ভাবক। প্রাচীন ক্রেটান- মিনোয়ান্সরা প্রথম কাদাকে পাইপ বানিয়ে মাটির নীচে বসিয়ে দেয়। তাদের রাজধানী কোনোসোসে পরিষ্কার পানি নিয়ে আসা আর ময়লা পানি বের করে দেবার ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তারা বড় আকারে ঘরবাড়ি গরম রাখার ব্যবস্থা তৈরি করেছিল এবং টয়লেটে ফ্লাশিং ব্যবস্থা করেছিল। কার্বন পরীক্ষা দেখা গেছে, এই প্রযুক্তি চালু হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব আঠারোশো শতকে। ৫. পৌত্তলিক ব্রিটেন এবং সূর্য উপাসনা ব্রিটেনের আধুনিক শহর মিল্টন কেইনেসের অনেক কিছুই প্রাচীন ব্রিটেনের ইতিহাসকে বহন করছে মিল্টন কেইনেস হয়তো ব্রিটেনের সবচেয়ে সুন্দর শহর নয়, কিন্তু শহরটি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, সজ্ঞানে আর নিশ্চিতভাবে একটি আধুনিক শহর। গৃহ সমস্যা মেটাতে যদিও এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯৬০ সালে, কিন্তু শহরটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে ব্রিটেনের ইতিহাস নানাভাবে ফুটে উঠেছে। পৌত্তলিক ব্রিটেনের প্রথা আর বিশ্বাসের নানা বিষয় শহরের নকশায় ব্যাপকভাবে স্থান পেয়েছে। স্টোনহেজের মতো শহরের প্রধান সড়কটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে, গ্রীষ্মের সময় সেটি উদিত সূর্যের সমান্তরাল থাকে। ৬. প্রাচীন রোমান স্থাপত্য প্রাচীন রোমের টেম্পল অফ স্যাটুর্ন, যা খৃষ্টপূর্ব ৪৯৭ সালে নির্মিত হয়েছিল রোমের সড়কের কথা এর আগে এসেছে। এবার আলোচনায় আনা যাক আরেকটি বিষয়: 'রোম একদিনেই নির্মিত হয়নি'। শহরের নানা তোরণের ঘুরপ্যাঁচ, কলাম এবং গম্বুজগুলো যেভাবে স্থাপন করা হয়েছে, তাতে ওই প্রবাদ বাক্যটি সঠিক বলেই প্রমাণিত হয়। রোমান সাম্রাজ্যের স্থাপত্য নমুনা এখনো বিশ্বজুড়ে দেখা যাবে। যখন উনিশ শতকে নেপোলিয়ন তার নিজস্ব সাম্রাজ্য তৈরি করছিলেন, তিনি বেশ কয়েকটি পার্সিয়ান অবকাঠামো নির্মাণের আদেশ দেন, যা আসলে রোমানদের কাছ থেকেই ধার করা। উদাহরণ হিসাবে আর্ক ডে ট্রায়োম্ফ এবং প্যালেস ভেনডোমের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজের দিকেও একবার তাকিয়ে দেখুন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির এই বাসভবনের কলাম এবং তোড়ন পরিষ্কারভাবে প্রাচীন রোমেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। | আধুনিক শহরের পেছনে ভূমিকা রাখছে প্রাচীন সভ্যতা |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | বিল গেটসকে নিয়ে ছড়ানো হয়েছে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। সম্মেলনে তিনি বললেন,“আগামী কয়েক দশকের মধ্যে যদি কোন কিছুর কারণে এক কোটি মানুষ মারা যায়, সেটি কোন যুদ্ধের ফলে নয়, বরং কোন সংক্রামক ভাইরাসের কারণে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।” তার এই দূরদর্শী বক্তব্য সেসময় বিবিসি সহ কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তার কথায় খুব একটা কান দেননি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির পর তার সেই বক্তৃতা লোকে শুনেছে অন্তত ৬ কোটি ৪০ লক্ষ বার। বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ বিল গেটস কি বলেছেন সেটাতে নয়, কেন তিনি এমনটি বলেছিলেন, সে বিষয়ে। বিল গেটসকে নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। অনেকের অভিযোগ, বিল গেটস আসলে বিশ্বের এলিট বা সুবিধাভোগী শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য কিছু মানুষের বিশ্বাস, বিল গেটস আসলে পৃথিবীকে জনশূন্য করার চেষ্টা করছেন। আবার অন্য একদল আছেন, যাদের অভিযোগ, বিল গেটস টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করছেন। কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ তুলছেন, বিল গেটস সব মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চান। ‘জাদুর পুতুল’ বিল গেটস রোরি স্মিথ ‘ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ’ নামের এক ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারি ওয়েবসাইটে কাজ করেন। তিনি বলছেন, বিল গেটসকে নিয়ে বহু রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে। “তিনি এমন এক জাদুর পুতুল, যাকে নানা ধরণের গোষ্ঠী তাদের হরেক রকমের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে খুঁচিয়ে চলেছে। আর তিনি যে জাদুর পুতুলে পরিণত হয়েছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে করতে তিনি এর প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন।” গরীব দেশগুলোর জনস্বাস্থ্যের জন্য শত কোটি ডলারের তহবিল জোগাচ্ছেন বিল গেটস করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিল গেটসকে জড়িয়ে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো গত ফেব্রুয়ারি হতে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ১২ লক্ষ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং জিগনাল ল্যাবস। এরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো সাধারণত ফেসবুক গ্রুপে ছড়ানো হয়, এরপর সেগুলো শেয়ার করা হয় লক্ষ লক্ষ বার। ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ দেখেছে, টিকটক নামের চীনা ভাইরাল ভিডিও সাইটটি এধরণের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নতুন আখড়া হয়ে উঠেছে। বিল গেটসকে নিয়ে যতরকমের আজগুবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে বিবিসির এন্টি-ডিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্য বিরোধী টিম। বিল গেটস কেন টার্গেট মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, যিনি কীনা তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য শত শত কোটি ডলার ঢেলেছেন, তিনি কিভাবে কোভিড-১৯ ষড়যন্ত্র তত্ত্বকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন? ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোসেফ উসিনস্কি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার মতে, বিল গেটস ধনী এবং বিখ্যাত বলেই ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। “বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে ক্ষমতাবান লোকদের নিয়েই, তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক কোন কিছুর অভিযোগ আনা হয়”, বলছেন তিনি। “আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো প্রায় একই রকম, শুধু নামগুলো বদলে যায়।” “বিল গেটসের আগে ছিল জর্জ সোরোস, কিংবা রথচাইল্ডস বা রকেফেলারদের নাম।” বেশিরভাগ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মৃত্যু ঘটে আসলে খুব বেশি ডালপালা গজাবার আগেই। তবে কিছু টিকে থাকে। সাধারণত যেসব তত্ত্বে ভিলেনরা থাকে খুব বড় কেউ এবং যে ইস্যুতে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ থাকে, সেরকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো বেশ দীর্ঘ আয়ু পায়। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: বিল গেটসের করোনাভাইরাস টিকা কারখানা কেন শেষ পর্যন্ত কাজে লাগবে না করোনাভাইরাস: বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে ভাইরাসের মতোই দরিদ্র দেশগুলো কি করোনাভাইরাসের টিকা পাবে? বিল গেটসকে নিয়ে ছড়ানো এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোন প্রমাণ নেই জোসেফ উসিনস্কি বলেন, “ধনী লোকজন এবং বড় কর্পোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের এই যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর কারণ এরকম আশংকা আমাদের মধ্যে আছে।” “এরকম ভয় বা আশংকা আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এক বিরাট মশলা।” জোসেফ উসিনস্কি মনে করেন এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই, কিন্তু তারপরও মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতে পছন্দ করে। যুক্তরাষ্ট্রের এক চতুর্থাংশ মানুষ এবং ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান বিশ্বাস করে বিল গেটস কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহার করে মানুষের চামড়া নিচে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে চায়। এই জরিপটি চালিয়েছিল ইয়াহু নিউজ এবং ইউগভ। কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে হয়তো একদানা সত্য আছে, যেটিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ফাঁদা হয়েছে। যেমন, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন গত বছর একটি গবেষণার জন্য তহবিল দিয়েছিল, যেটি চালিয়েছিল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। কোন রোগীর টিকা নেয়ার রেকর্ড বা ইতিহাস বিশেষ কোন রঙের প্যাটার্নের মধ্যে সংরক্ষণ করা যায় কীনা, সেটা দেখা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। সাদা চোখে এটি দেখা যাবে না এবং এটি টিকা দেয়ার সময় একসঙ্গে মানুষের চামড়ার নীচে ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের শুরুটা কিভাবে তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে এরকম আজগুবি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বহু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি। “ইন্টারনেট যুগের আগে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তাদের নিজেদের মধ্যেই আবদ্ধ থাকতো, কিন্তু এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ, ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দ্রুত এসব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন ইন্টারনেটের আগের জমানার চেয়ে অনেক বেশি মূলধারায় চলে আসার সুযোগ পাচ্ছে।” তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্ব মহামারির সময় আরও বেশি বাড়ছে, কারণ মানুষ এখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি নাজুক অবস্থায় আছে। তার মতে মানুষ এরকম সংকটের সময় সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কোন কিছুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে। “যে কোন তথ্য পেলেই আমরা তার মানে বোঝার চেষ্টা করি, আর তখনই শুরু হয় গুজব ছড়ানোর কাজ। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তখন এই শূন্যস্থান পূরণ করতে থাকে, বিশেষ করে বিল গেটস জাতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।” বিবিসিকে বিল গেটস বলেছিলেন মানুষ যদি এরকম একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনে এবং লোকে টিকা নিতে না চায় তখন তো এই রোগে মানুষ মরা অব্যাহত থাকবে। বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এপর্যন্ত ৩০ কোটি ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। একের পর এক মিথ্যে প্রচার আর ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মুখেও এই ফাউন্ডেশন তাদের কাজের নিয়ে খুবই আশাবাদী। বিবিসির কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, “আমাদের সম্পর্কে অনলাইনে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে এবং এর ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।” “এরকম একটা সময়, যখন বিশ্ব এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে, তখন কিছু লোক যে এভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, তা খুবই পীড়াদায়ক। অথচ এখন আমাদের সবার উচিত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সহযোগিতা করা। কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে যে ভালো কাজটা এখন আমরা সবাই করতে পারি তা হলো সঠিক তথ্য প্রচার করা।” বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, তাকে ঘিরে যে এতসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে সেটি জেনে তিনি বিস্মিত। “এরকম পাগলামি যে চলছে, তা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। আমরা যখন টিকা তৈরি করবো, আমরা চাই মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষ এই টিকা নিক। এখন যদি তারা এরকম একটা ষড়যন্ত্রের কথা শোনে এবং লোকে টিকা নিতে না চায় তখন তো এই রোগে মানুষ মরা অব্যাহত থাকবে।” “আমি একরকম বিস্মিত যে, এসব আমাকে ঘিরেই বলা হচ্ছে। আমরা তো কেবল অর্থ দিচ্ছি, চেক লিখছি.. হ্যাঁ, আমরা চাই শিশুদের যেন রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর সঙ্গে তো মাইক্রোচিপ বা সেরকম কিছুর সম্পর্ক নেই। এসব শুনলে মাঝে-মাঝে হাসি পায়।” | করোনা ভাইরাস: কোভিডের টিকা ও বিল গেটসকে নিয়ে এত ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নেপথ্যে কী? |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | ঢাকার রাস্তা ঘাট খুলে যাওয়ায় আবার মানুষের চলাচল চোখে পড়ছে কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর গত দুমাস তার কোনো কাজ নেই, বন্ধ হয়ে গেছে উপার্জন। "তিন বাসায় কাজ করতাম। কাজ বন্ধ হওয়ার পর আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমরা কাজে কর্মে যেতেই পারছি না। খাওয়া দাওয়া, ঘরভাড়া নিয়া খুব কষ্ট হচ্ছে। কোনো সাহায্য সহযোগিতাও আমরা পাইনি"। রিনা বেগমের মতো অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে গত দু তিন মাসের লকডাউন ও সাধারণ ছুটির কারণে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে উন্নয়ন কার্যক্রম, অন্যদিকে মানুষকে দিতে হচ্ছে নগদ টাকা। ওদিকে করোনা পরিস্থিতিরও উন্নতির তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তা কি সরকারকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন বিভিন্ন খাতে সহায়তার জন্য এমন পরিস্থিতির জের ধরে গত প্রায় এক দশক ধরে কঠোরভাবে সরকার বা প্রশাসন সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে তাতে কি কোনো ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে ? আবার অর্থনৈতিক সংকটের জের ধরে সরকার বেকায়দায় পড়লে তাতে বিরোধী দলগুলোর লাভবান হবার সম্ভাবনাই বা কতটা। এসব কিছুও এখন নানাভাবে চিন্তায় আনছেন বিশ্লেষক বা গবেষকরা। লকডাউনের মধ্যে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ যদিও সরকারের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখনই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাননি কেউই, তবে স্বাস্থ্যসেবা পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তার কোন প্রতিক্রিয়া হবে না সেটিও মানতে নারাজ অনেকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলছেন সবাইকে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পারলে ভঙ্গুর অর্থনীতির হাত ধরে তৈরি হতে পারে চরম নৈরাজ্য। "যে চ্যালেঞ্জটা আসবে সেটা হলো অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা। এটি অনেকদিন ধরেই আছে। আমরা আগেই বলেছি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হয় না। তো আপনার সামাজিক অস্থিরতা আসবে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা আসবে। মানুষের চাকরি থাকবে না, খাওয়া থাকবে না। তখন একটা নৈরাজ্য তৈরি হতে পারে, যেটাকে আমরা বলি অরাজকতা"। গার্মেন্টসহ নানা খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার তিনি বলেন সরকার হয়তো তার কর্তৃত্ব হারাবে না, আবার বিরোধী দলগুলোও এ সুযোগে খুব বেশি লাভবান হবার সুযোগ পাবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে যেভাবে স্বচ্ছন্দে সরকার সব নিয়ন্ত্রণ করেছে এতদিন সেটি টিকিয়ে রাখাটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তবে এ ঝুঁকির মূল কারণ হবে যদি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কাজ না থাকে বা আয়ের সংস্থান না থাকে। আর এ দুটি সমস্যার সমাধান করতে হলে দরকার হবে পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘকাল হলে সেটি কতটা সম্ভব হবে তা বলা কঠিন। এখন করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতির কারণে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনে দরিদ্র শ্রমজীবীদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ফলে কবে নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে তা কারও জানা নেই। অথচ এর ওপরই নির্ভর করছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি। দিলারা চৌধুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে ৫০ লাখ দরিদ্র বা অতিদরিদ্র মানুষের জন্য এককালীন আড়াই হাজার টাকা নগদ দেয়ার কাজ করছে সরকার । অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলছেন ত্রাণ কিংবা প্রণোদনার বিষয়টিতেও সুশাসন নিশ্চিত করাটাই এখন প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তা মোকাবেলায় সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করা অর্থাৎ একটি ঐক্য তৈরি করা এবং মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে না দেয়াই হবে সামনের দিনগুলোতে সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। "অর্থনীতি শুধু না, স্বাস্থ্য খাত দেখেন সেখানেই অনেক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অসন্তোষের জায়গা বাড়তে না দিতে সমাজের সব শ্রেণী পেশার পরামর্শ নিতে হবে। সবাইকে নিয়ে এগুবার চেষ্টার দিকে নজর না দিলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার বিলম্বিত হবে, আরও নানামুখী অসন্তোষের জায়গা তৈরি হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করতে হলে মানুষকে আস্থার জায়গায় নিতেই হবে, এটিই হবে বড় চ্যালেঞ্জ"। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো গণতন্ত্র বা উন্নয়ন- কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গত দুটি বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনের পর সরকার পন্থীরা জোর দিয়ে বলছিলেন বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নটাই বেশি দরকার। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ফ্লাইওভার, কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে এগুলোকেই দেখানো হচ্ছিলো বেশি গুরুত্ব দিয়ে। পাশাপাশি সরকারের দাবি ছিলো মানুষের আয় বেড়েছে, কাজ বেড়েছে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক নাজনীন আহমেদ এখন এর সব কিছুকেই বড় ধাক্কা দিয়েছে করোনাভাইরাস। পদ্মা সেতু ছাড়া বাকী মেগা প্রকল্প যেমন বন্ধ তেমনি বন্ধ হয়ে গেছে সাধারণ মানুষের আয়ের পথও। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমালোচনার মধ্যেই গার্মেন্ট খুলে দেয়া হয়েছে, স্বল্প পরিসরে চালু করার চেষ্টা হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্যও। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন এমন পরিস্থিতিতেও সামনে সরকারের কর্তৃত্ব আরও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার যে প্রচারের মাধ্যমে সরকার রাজনৈতিক লাভ বা পলিটিক্যাল লিড নিচ্ছিলো সেটিকে করোনাভাইরাস বড় সংকটে ফেলে দিয়েছে, যা সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে বলে মনে করেন মিস্টার আহমেদ। "এটা স্পষ্টতই বোঝা যায় যে গত ১০/১৫ বছরে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ দারিদ্রসীমার বাইরে যেতে পেরেছিলো এবং মধ্যবিত্ত গোষ্ঠী বেশ স্ফীত হয়েছিলো। ফলে অনেক বড় একটা বাজার তৈরি হয়েছিলো। সেটা একটা ধাক্কা খাবে কারণ অনেকে দারিদ্রসীমার নিচে পড়ে যাবেন। ফলে মধ্য আয়ের দেশে সহসাই যাওয়ার যে ঘোষণা এসেছিলো সেটি হচ্ছে না"। সব কিছু মিলিয়ে দু মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রায় বন্ধ আছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিরোধিতার মুখেও গার্মেন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। ৫ই এপ্রিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিলো। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৮ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও গঠন করেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বিলম্বিত হলে অর্থনীতি স্থবির থাকার প্রভাবে যে ব্যাপক চাপ তৈরি হবে তাও সরকারের জন্য বড় ধরণের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। কারণ একদিকে বন্ধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য সামনে বাড়তি সময় ও অর্থের দরকার হবে। আবার যে বিপুল অর্থ এখন ব্যয় হচ্ছে তার সরাসরি অর্থনৈতিক ফল কমই পাওয়া যাবে। অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো এতো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার মনে রাখতে হবে সেজন্য যে বিশাল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সরকারকে তা দিয়ে অর্থনৈতিক কোনো উৎপাদন কিন্তু হচ্ছে না। "সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্য সময় যা ব্যয় করতে হয় এখন আরও বহুগুণ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু তা দিয়ে কোনো অর্থনৈতিক উৎপাদন হবেনা অর্থাৎ এটি দেশের প্রবৃদ্ধিতে তেমন কোনো অবদান রাখবেনা। তবে চ্যালেঞ্জ হবে পরে কতটা আমরা পুষিয়ে নিতে পারি, কত দ্রুত আমরা দৌড়াতে পারি। কিন্তু ক্ষতি যা হবার হয়েই গেলো। যার প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অর্থনীতিতে যে প্রবৃদ্ধি যা হবার তা হবে না"। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এমন নেতিবাচক অবস্থার পাশাপাশি মানুষের সহায়তায় দেয়া রিলিফসহ অন্যান্য সহায়তার ক্ষেত্রেও সুশাসন নিয়ে ইতোমধ্যেই বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য দেয়া সহযোগিতা তাদের হাতে কতটা পৌঁছাবে তা নিয়েও অনেকে সন্দিহান। ফলে গত কয়েক বছর ধরে যে সামাজিক স্থিতিশীলতার যে লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছিলো তা নিয়েও সংকট তৈরির আশংকা করছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা আরেকজন অর্থনীতিবিদ সায়মা হক বিদিশা বলছেন স্বাস্থ্য সেবা, মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা ও আয় রোজগার ফিরিয়ে আনাটাই হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। "কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং সংক্রমণ হার আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা। যাতে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারি। দ্বিতীয়ত কাউকে যেনো খাবারের অভাবে না পড়তে হয়। এর পর আরেকটি বড় পরীক্ষা হবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পূরণ করে আনা। ''আরেকটি বিষয় হলো দুর্নীতিকে কত শক্তভাবে দমন করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে লিকেজ দেখা যাচ্ছে। ত্রাণের টাকা মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে না। এটার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হলে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে।'' তিনি বলেন আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দরকার বড় ধরনের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ও এর বাস্তবায়ন, যা করতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংখ্যাগত দিক না থেকে গুনগত দিকে জোর দেয়া জরুরি বলেনই মনে করেন তিনি। অন্যথায় এসব কিছুই সরকারের জন্য বাড়তি রাজনৈতিক চাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? বিশ্ব মহামারি শেষ হতে কতদিন লাগবে? কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন | করোনা ভাইরাস কী বাংলাদেশে সরকারের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) অফিস যুক্তরাষ্ট্র এবং ডেনমার্কের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে জার্মানি এবং ফ্রান্স, সুইডেন সহ ইউরোপের শক্তিধর কয়েকটি দেশের সরকার।ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা বিভাগের করা তদন্তের রিপোর্টটি ফাঁস করেছে ডেনমার্কেরই রাষ্ট্রীয় মিডিয়া - ডিআর। সোমবার প্রচারিত ডিআরের এক রিপোর্টে বলা হয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সার পর্যন্ত ইউরোপে এই গুপ্তচরবৃত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) কে গোপনে সাহায্য করেছে ডেনমার্কের গুপ্তচর সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এফই)। ২০১৩ সালে সিআইএ‘র সাবেক ঠিকাদার এডওয়ার্ড স্নোডেন- যিনি এখন রাশিয়ার আশ্রয়ে রয়েছেন - ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে স্পর্শকাতর গোপন সব তথ্য ফাঁস করেন, তার সূত্রে ডেনমার্ক ২০১৫ সালে ঐ তদন্ত শুরু করে। এতদিন তার ফলাফল জানা না গেলেও, সোমবার ডিআর গোপন সূত্রের মাধ্যমে তা ফাঁস করে দেয়। ক্ষুব্ধ মের্কেল ও ম্যাক্রঁ প্রতিবেশী মিত্র দেশগুলোর ওপর গুপ্তচরবৃত্তিতে আমেরিকার সাথে ডেনমার্কের এই যোগসাজশ নিয়ে ইউরোপে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ক্ষেপে গেছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। তিনি ডেনমার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। জার্মান কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মুখপাত্র স্টেফান সেইবার্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ব্যাখ্যার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা সরকারের নীতি নয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রঁ। অ্যঙ্গেলা মের্কেলের সাথে এক বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, “ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে এ ধরণের তৎপরতা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে।“ মিসেস মের্কেল সেসময় বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্টের সাথে তিনি একমত। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল তবে ডেনমার্ক এবং আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনও এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি ।ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রাইন ব্রামসেন, এই তদন্ত রিপোর্টের সত্যতাও স্বীকার করেননি, আবার এটি যে মিথ্যা-বানোয়াট তাও বলেননি। তবে ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, “ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওপর পরিকল্পনা করে এ ধরণের গুপ্তচরবৃত্তি গ্রহণযোগ্য নয়।“ যখন এই গুপ্তচরবৃত্তি হয়েছে বলে বলা হচ্ছে সে সময় মিজ ব্রামসেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেননা । টার্গেট বহু ইউরোপীয় রাজনীতিক শুধু জার্মান চ্যান্সেলর নয়, জার্মানি, ফ্রান্স সুইডেন এবং নরওয়ের অনেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক এবং কর্মকর্তাদের ওপর কয়েক বছর ধরে আড়ি পাতা হয়েছে। ক্ষিপ্ত ঐ দেশগুলো ব্যাখ্যা দাবি করেছে। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এমা সোলবার্গ সেদেশের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম এসআরকে‘র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “যে দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে তারা যদি মিত্র দেশের ওপর এ ধরণের গুপ্তচরবৃত্তির প্রয়োজন বোধ করে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।“ অভিযোগ ঠিক কি? ফাঁস হওয়া তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের রাজনীতিক এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোনালাপ, ইমেল এবং টেক্সট মেসেজের ওপর আড়ি পেতেছে যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ। এই গুপ্তচরবৃত্তি জন্য তারা ডেনমার্কের গুপ্তচর সংস্থা এফই‘র সাহায্য নিয়ে ড্যানিশ ইন্টারনেট ব্যবস্থায় আড়ি পেতেছে। ইউরোপীয় ঐ রাজনীতিকদের টেলিফোনে কথাবার্তা এবং টেক্সট বার্তা চালাচালি হতো তার ওপর নজরদারি করতে পারতো এনএসএ। ডেনমার্ক ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের খুবই ঘনিষ্ঠ একটি মিত্র দেশ। ডেনমার্কে ইন্টারনেট সাবমেরিন কেবলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ল্যান্ডিং স্টেশন রয়েছে যার সাথে জার্মানি, ব্রিটেন, সুইডেন, নরওয়ে এবং হল্যান্ডের নেটওয়ার্কের সংযোগ রয়েছে। এই নেটওয়ার্কগুলোতে আড়ি পাতা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিআর মিডিয়া বলছে, এনএসএর তৈরি এক্স-কি-স্কোর সামে একটি সফটওয়ার ব্যবহার করে ডেনমার্কের আশপাশের দেশগুলোতে ফোনকল, টেক্সট এবং চ্যাট মেসেজে আড়ি পাতা হয়েছে। আড়ি পাতার ঐ তৎপরতার গোপন নাম ছিল “অপারেশন ডানহ্যামার।“ ড্যানিশ প্রচার মাধ্যম ডিআর অন্তত নয়টি ভিন্ন ভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলেছে যারা ড্যানিশ গুপ্তচর সংস্থার কাছে রক্ষিত গোপন নথিপত্র দেখেছে। সিআইএ‘র সাবেক ঠিকাদার এডওয়ার্ড স্নোডেন এখন রাশিয়ার আশ্রয়ে রয়েছেন জানা গেছে, মিসেস মের্কেল ছাড়াও সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার এবং সে সময়কার বিরোধী নেতা পিয়ার স্টেইনব্রাকের ওপর আড়ি পাতা হয়েছে। মি স্টেইনবার্ক জার্মানির এআরডি টিভিকে বলেছেন, বন্ধু দেশের গোয়েন্দা সংস্থা যেভাবে কথাবার্তায় আড়ি পাতছে “এটা ঘৃণ্য।“ তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে এটি একটি কেলেঙ্কারি।“ বিশ্ব জুড়ে গুপ্তচরবৃত্তির জাল ইউরোপের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আড়ি পাতার প্রথম এ ধরনের অভিযোগ ওঠে ২০১৩ সালে। সিআইএর সাবেক ঠিকাদার এডওয়ার্ড স্নোডেন সে সময় প্রথম অভিযোগ করেন যে এনএসএ জার্মান চ্যান্সেলর মের্কেলের ফোনে-ইমেলে আড়ি পাতছে। ঐ কথা সে সময় হোয়াইট হাউজ প্রত্যাখ্যান করেনি। তবে বলা হয়েছিল এখন মিসেস মের্কেলের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছেনা, এবং ভবিষ্যতেও হবেনা। সোমবার ডেনমার্কের মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া রিপোর্টের পর মি স্নোডেন টুইট করে বলেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় এই গুপ্তচর কেলেঙ্কারির সাথে “ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।“ মি স্নোডেন লিখেছেন, “ডেনমার্ক এবং তাদের সিনিয়র মিত্রকে (যুক্তরাষ্ট্র) পুরো বিষয়টি খোলাসা করতে হবে।“ আমেরিকা থেকে পালিয়ে গিয়ে মি স্নোডেন শুধু ইউরোপের ওপর আড়ি পাতার কথাই বলেননি, তিনি অভিযোগ করেছিলেন চীন সহ বিশ্বের নানা দেশের রাজনীতিক এবং কর্মকর্তাদের ওপর ওপর আড়ি পাতছে আমেরিকান গুপ্তচরেরা। দেশ থেকে প্রথম হংকংয়ে পালিয়ে গিয়ে মি স্নোডেন সেখানে দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ সারা বিশ্বের ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর হ্যাকিং অপারেশন চালাচ্ছে। স্নোডেন বলেছিলেন প্রতিটি কম্পিউটারে হ্যাকিং না করে এনএসএ “বড় বড় ইন্টারনেট রাউটারে“ অর্থাৎ ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মূল কাঠামোতে হ্যাকিং করে। ফলে, ঐ সব রাউটারের আওতায় সমস্ত কম্পিউটারে তারা নজরদারি করতে পারে। ২০১৪ সালে জুনে জার্মানির একটি দৈনিকে খবর বের হয় ওয়াশিংটনে এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে আড়ি পেতেছে এনএসএ। এমনকি ব্রাসেলসে ইইউ অফিসেও ইলেকট্রনিক যন্ত্র বসিয়ে আড়ি পাতা হয়েছে। ঠিক কি ধরণের তথ্য মার্কিন গোয়েন্দারা জোগাড় করতেন তা পরিষ্কার নয়। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাণিজ্য এবং সামরিক বিষয়ে ইউরোপীয় জোটের অবস্থানের ওপর নজরদারি করা হয়েছে। চ্যান্সেলর মের্কেলের মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হয় - এমন রিপোর্ট বের হওয়ার পর ২০১৪ সালের ২৪শে অক্টোবর বার্লিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল যা খুবই বিরল একটি ঘটনা। মিসেস মের্কেল তখন এতটাই ক্ষেপে গিয়েছিলেন যে তিনি প্রায় সাথে সাথে সে সময়কার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। ফ্রান্সের লাখ লাখ ফোন কলে আড়ি পাতা হয়েছে - এমন রিপোর্টের পর তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া অঁলদ তীব্র ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৪ সালের জুলাইতে লন্ডনের পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে বলা হয় বিশ্বের ৩৫ জন নেতার ফোনালাপে আড়ি পেতেছে এনএসএ। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের ৩৮টি দূতাবাস এবং মিশনের ওপর আড়ি পাতা হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে ছিল ফ্রান্স, ইটালি, গ্রীস, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত। এগুলোর সবই আমেরিকার মিত্র দেশ। ২০১৪ সালের ১০ই জুলাই ব্রাজিলের একটি পত্রিকায় রিপোর্ট হয় যে এনএসএ পুরো দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে তাদের গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে। ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান টেলিকম এজেন্সি মার্কিন গুপ্তচরদের সাহায্য করেছে। ঐ রিপোর্টে আরো বলা হয় যে মেক্সিকো এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোন কল, ই-মেলে আড়ি পাতা হয়েছে। রিপোর্টটি প্রকাশের পর ক্ষুব্ধ তৎকালীন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ যুক্তরাষ্ট্রে তার নির্ধারিত সফর বাতিল করে দিয়েছিলেন। এসব খবরের মূল সূত্র ছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথিপত্র। মার্কিন সরকার সেসময় এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি।। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তখন বলেছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার তৎপরতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিবিসি বাংলার অন্য খবর: তিন কাশ্মীরি যুবকের ঘটনায় ভারতের ব্যাখ্যা চান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা যেভাবে গরম বাড়ছে বাংলাদেশের ৫টি বড় শহরে যে পাঁচটি কারণে বাংলাদেশে পহেলা জুলাই থেকে অবৈধ ফোনসেট বন্ধ হয়ে যাবে মহামারির বছরেও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের বেশিরভাগ অর্থ খরচ হলোনা কেন? | মের্কেল এবং বেশকিছু ইউরোপীয় নেতার পেছনে মার্কিন গুপ্তচর |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | এখানে লুকিয়ে ছিলেন গ্রিক পাইলট ভাসিলেইওস ভাসিলেইও। গ্রিক পাইলট ভাসিলেইওস ভাসিলেইও হোটেলটিতে উঠেছিলেন এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে। দি ইন্টার-কন্টিনেন্টাল হোটেল বিদেশীদের কাছে জনপ্রিয় ছিলো, আর সে কারণেই তালিবান বন্দুকধারীরা হোটেলটিতে হামলা করে যাতে নিহত হয় ৪০ জন। তবে ভয়ংকর সেই হামলার মধ্যে পড়েও বেঁচে যান গ্রিক পাইলট ভাসিলেইওস। ভাসিলেইওস বেঁচে গিয়েছিলেন কিভাবে? ভাসিলেইওস বলছেন, সাধারণত রাত সাড়ে আটটার দিকে ডিনার করে তিনি কিন্তু সেদিন তিনি একটু তাড়াতাড়ি ডিনারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তখন সন্ধ্যা ছয়টা। তার বন্ধু কো-পাইলট মিশেন পুলিকাকস ছিলেন সাথে। তারা সাড়ে সাতটায় ডিনার শেষ করেন এবং হোটেলের উপরের তলায় নিজের রুমে ফিরে যান কিছু ফোন করবেন বলে। তার রুম নাম্বার ছিলো ৫২২। " আটটা ৪৭ মিনিটে আমি অ্যাথেন্সে কথা বলছিলাম। তখন নীচে লবিতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই"। এরপর তিনি দৌড়ে ব্যালকনিতে যান এবং দেখতে পান নীচে একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। আর হোটেলের ভেতরে ও বাইরে থেকে গুলির শব্দ। "মনে হলো আমি ভাগ্যবান, কারণ তখন আমি রেস্টুরেন্টে ছিলামনা। আর নিজেকে বললাম বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে কিছু করতে হবে"। এরপর ব্যালকনির দরজা খোলা রেখে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। তার রুমে দুটি বিছানা (বেড) ছিলো। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ইজতেমা একটাই হবে, সাদ কান্দালভী আসছেন না মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস গড়া নারী বাড়ি থেকে বিতাড়িত চীনের যে অস্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র "প্রথমে একটি ম্যাট্টেস নিলাম এবং সেটিকে দরজার বিপরীতে দিলাম যাতে করে গ্রেনেড থেকে বাঁচতে পারি। এরপর কিছু বেড শীট, তোয়ালে ও জামা কাপড় জড়ো করলাম। একটি রশি বানালাম যাতে দরকার হলে চতুর্থ তলায় কি হচ্ছে দেখতে পারি"। পেশায় পাইলট বলেই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তার প্রশিক্ষণ ছিলো। "এরপর ভাবতে শুরু করলাম পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে আমার। হামলাকারীরা কতজন ও তারা ভবনের কোথায় সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলোনা। আবার নিজেকে বোঝালাম যে পাঁচতলা থেকে লাফ দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না"। হামলার পর ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিলো হোটেলটিতে। ভাসিলেইওস সিদ্ধান্ত নেন রুমের ভেতরেই থাকার ও নিজেকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য যা করার আছে সেটি করার। তবে কোনো এক কারণে সেসময় অপ্রত্যাশিত রকমের শান্ত ছিলেন তিনি। "ম্যাট্টেস দিয়ে বিছানা বানালাম যেটা দেখতে ছিলো কিছুটা অগোছালো। এরপর লাইট বন্ধ করে দিলাম। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম ভারী পর্দার ও ফার্নিচারের আড়ালের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকবো"। প্রায় দেড় ঘণ্টা পার হলো এভাবে। তখনো তিনি জানেন না যে হামলাকারীরা হোটেলের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় লবি ও রেস্টুরেন্টে প্রায় সবাইকে মেরে ফেলেছে। এরপর তারা তৃতীয় ও চতুর্থ তলা হয়ে পঞ্চম তলার দিকেই এগিয়ে আসছিলো। ছাদের ওপর দৌড়ানোর শব্দ আসছিলো কানে। কারণ হেলিকপ্টারের নিশানা থেকে হামলাকারীরা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছিলো। কাছেই করিডোর থেকেও গুলির শব্দ আসছিলো এবং এর মধ্যে হঠাৎ করে পুরো হোটেলের বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। আফগান এয়ারলাইন্স ক্যাম এয়ারে কাজ করতেন তারা। পঞ্চম তলায় এসে হামলাকারীরা প্রথম যায় ৫২১ নম্বর রুমে। এরপর পরের রুমটাই ছিলো ভাসিলেইওস-এর। আর পরের রুমটাই ছিলো হামলাকারীদের পুরো রাত জুড়ে অপারেশন সেন্টার। এক পর্যায়ে নিজের রুমে দরজার গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি এবং তারপর মনে হলো যে অবস্থায় তিনি আছেন সেটা ঠিক ভালো পজিশন নয়। এরপর তিনি ফ্লোরে যান ও হাটুমুড়ে খাটের নিচে ঢুকে যান যার ওপরে একটি ম্যাট্টেস ছিলো। "এমন ভাবে শুয়েছিলাম যাতে খাটের ওজন হাত ও পা দিয়ে ধরে রাখতে পারি"। খাটের জন্য বাইরে কমই দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভাসিলেইওস ভাসিলেইও। "তারা (হামলাকারীরা) গুলি করে তালা ভাঙ্গে ও ভারী অস্ত্র দিয়ে দরজায় ধাক্কা দেয় এবং এরপর চারজন রুমে প্রবেশ করে। এরপর ব্যালকনির দরজা খোলা দেখে একজন দৌঁড়ে সেদিকে যায়"। "এরপর পিস্তলের গুলির শব্দ শুনতে পাই এবং আমি ভেবেছি যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি সম্ভবত মারা যাচ্ছি। পরিবার ও সন্তানদের মুখগুলো ভেসে উঠলো মনে"। রুমের দরজা খোলাই থাকলো। বন্দুকধারীরা আসা যাওয়া করতে লাগলো। এরপর তারা পঞ্চম তলার অন্য কক্ষ গুলোতে তল্লাশি করতে লাগলো। তার রুমের উল্টো দিকের কক্ষেই ছিলো তার সহকর্মী এয়ার স্টুয়ার্ড ও আরও কয়েকজন পাইলট। কখনো কখনো তাদের চিৎকার শোনা যাচ্ছিলো যখন তাদের মারা হচ্ছিলো। "মনে হলো প্রতিটি কক্ষ তারা তল্লাশি করেছে ও যাকে পেয়েছে তাকেই খুন করেছে। প্রতিবারই তারা হাসছিলো। মনে হচ্ছিলো খেলাধুলা করছে বা বড় পার্টি হচ্ছে তাদের"। ভোরে তিনটার দিকে পঞ্চম তলায় বড় ধরণের গুলি শুরু হয়। আবার ২০-২৫ মিনিট কোনো শব্দ ছিলোনা। হামলাকারীরা গুলি করে তালা ভাঙ্গে রুমের। তখন তিনি খাটের নীচ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। "বেরিয়ে আসার পর দেখলাম যে দুটি খাটের নীচে ছিলাম তার একটিতে গুলি। একটি খাটের কাঠ সরিয়ে তারা দেখেছে কেউ আছে কি-না। ওই দিন দ্বিতীয়বারের মতো মনে হলো অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম"। এরপর দীর্ঘ সময় পর রুমের দিকে ধোঁয়া আসতে শুরু করলো। তাই তিনি ব্যালকনির দিকে গেলেন। সেখানে ডান দিকে আগুন দেখতে পান যা তার রুমের দিকে ছুটে আসছিলো। এখান দিয়ে বন্দুকধারীরা পঞ্চম তলায় প্রবেশ করেন। এসময় তিনি দেখতে পান টিভি ক্যাবল ঝুলছে ছাদ থেকে যা সরাসরি নিচের দিকে চলে গেছে। তখন তিনি কিছু এগিয়ে দেখতে যান যে ওই তারটি বেয়ে তিনি নীচে নামতে পারবেন কিনা সেটি দেখতে। আর তখনি দুটি বুলেট। একটি বাম কাঁদের ২০ সেমি দুর দিয়ে আরেকটি আধা মিটার দুর দিয়ে গিয়ে জানালায় লাগে। তার ধারণা গুলি করেছিলো আন্তর্জাতিক বাহিনী যারা তাকে হামলাকারীদের একজন মনে করেছিলো। সম্ভবত ঝুঁকে ক্যাবল চেক করার কারণে তিনি সেবার বেঁচে যান। এরপর তিনি কক্ষের ভেতরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধীরে বাথরুমে প্রবেশ করেন যাতে করে কোন শব্দ না হয়। সেখান থেকে ছুড়ি নিয়ে একটা প্লাস্টিক কেটে নেন। রুম নং ৫২০ সাথে দু বোতল পানি ও কিছু দুধ নেন ফ্রিজ থেকে। আর একটি টি শার্ট। টিশার্ট টি টুকরো করে টেনে নাকে দেন ধোঁয়া থেকে বাঁচতে। আরেক টুকরো মুখের সাথে পেঁচিয়ে যতটুকু সম্ভব দুধ ও পানি নেন। অনেকটা ডাবল ফিল্টারের মতো যা তিনি অ্যাথেন্স বিমানবন্দরে ট্রেনিংয়ে শিখেছিলেন। এরপর তিনি যখন খাটের নীচে ঢুকে পড়েন তখনি রুমে ঢোকেন এক জন। আড়াল থেকে তার পা দেখা যাচ্ছিলো। তিনি আরেক জনকে কোনো নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। পরে তিনি বাথরুমে যান, এরপর ব্যালকনি ও তারপর একে-৪৭ থেকে গুলি করতে থাকেন। "এরপর মনে হলো আমি আবারো বেঁচে গেলাম। আর এ জায়গাটি লুকোনোর জন্য ভালো মনে হলো। আন্তর্জাতিক বাহিনী নিশ্চয়ই নিয়ন্ত্রণ নেবে। মনে হলো যেখানে আছি সেখানেই থাকলেই ঠিক আছে"। ডানে ৫২০, এরপর ৫২১ ও তারপরেই ছিলো ভাসিলেইওস ভাসিলেইও'র রুম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাহিনী সকাল থেকে রুম বরাবর গুলি বর্ষণ শুরু করলো ট্যাংক থেকে। তারা হামলাকারীদের ৫২১ নাম্বার রুমকেই টার্গেট করেছিলো। পরের দরজাতেই আমি। তারা একই সাথে আরও কয়েকটি রুম লক্ষ্য করে গুলি করছিলো। প্রতিবারই পুরো হোটেল কেঁপে উঠছিলো। সবকিছু ধূলায় পরিণত হচ্ছিলো। দ্বিতীয় দফায় গুলি শুরু হলো সকাল ছয়টায়। "এরপর দেখলাম কিছু লোক আমার রুম থেকে কিছু কাপড় নিচ্ছে। এরপর কার্পেট এবং সব এক করে ডিজেল দিয়ে দিলো। পরে ৫২১ নম্বর রুম তারা জ্বালিয়ে দিলো"। বাইরে মাইনাস তিন ডিগ্রি ছিলো রাতের তাপমাত্রা। সকাল সোয়া নয়টায় নীচের করিডোর থেকে গুলির শব্দ আসলো যা একটু আলাদা মনে হলো। আর একজন বন্দুকধারী ৫২১ থেকে তার কালাশনিকভ রাইফেল থেকে জবাব দিচ্ছিলো। সাড়ে নয়টা থেকে সোয়া এগারটার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাহিনী অসংখ্য গ্রেনেড নিক্ষেপ করলো। কয়েকটি ৫২১ নম্বরেও পড়লো। হোটেলে নীচে নামার সিঁড়ি। সাড়ে এগারটায় মনে হলো মাত্র একজনই আছে বন্দুকধারী আমার কাছে। তার আসলে গুলি শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তারপরেও সে বিস্ফোরণের চেষ্টা করছিলো কিন্তু গ্যাস না থাকায় সেটি হয়নি। সে অবস্থাতেও কোনো রকমে হাসি চেপে রেখেছিলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যে সে হাওয়া হয়ে গেলো। আগের দিন ও রাত ঘুমানো হয়নি। একনাগাড়ে প্রায় ৩৫-৪০ ঘণ্টা জেগেছিলেন এই গ্রিক পাইলট। "কিছুক্ষণের মধ্যেই হৈচৈ শুনলাম। লোকজন আসছে। কিন্তু তারা কারা জানিনা। ১১টা ৪০-এ আফগান উচ্চারণে একজন বললো পুলিশ পুলিশ। তারপরেও বেরিয়ে আসিনি। কিছুক্ষণ পর ইংরেজি উচ্চারণে পুলিশ শুনলাম। আমি তখন খাটের নীচ থেকে বেরিয়ে আসি। কিন্তু আমি শ্বাস নিতে পারছিলামনা। একভাবে খাটের নীচে দীর্ঘক্ষণ থাকায় বুকে ব্যথা হচ্ছিলো। ধোঁয়ায় কালো দেখাচ্ছিলো। ওইভাবে আমাকে দেখে চার কমান্ডার চিৎকার দিয়ে উঠেন, "নিচু হও। বলেই পিস্তল ঠেকান"। "নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম আমি ক্যাপ্টেন ক্যাম এয়ারলাইন্সের। গুলি করবেন না"। তারা বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। তারা জানতে চাইলো কতক্ষণ আছি ও কিভাবে থাকলাম"। দি ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাবুল। এরপর ছবি তুলে একজন নীচে নিয়ে এলো গ্রিক পাইলটকে। এভাবেই শেষ বারের মতো ওই হোটেল থেকে বেরিয়ে এলেন গ্রিক পাইলট ভাসিলেইওস ভাসিলেইও। উদ্ধারকৃত সবাইকে তারা কাবুলের ব্রিটিশ ঘাঁটিতে নিয়ে গেলো। সেখানে সহকর্মী মিশেলকে দেখে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। কয়েক ঘণ্টা পর পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগের সুযোগ পান ভাসিলেইওস এবং তারাও বিস্মিত হন কারণ যাদের আগে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে তাকে না দেখে পরিবার ভেবেছিলো তিনি বোধ হয় আর জীবিত নেই। "এখন আমি জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত উপভোগ করছি। কারণ জীবনটাই একটা উপহার। কাবুলের ওই ঘটনার পর আমি বুঝতে পারছি জীবন সত্যিই দারুণ সুন্দর"। | কাবুলের হোটেলে তালিবানদের প্রচণ্ড গুলি গ্রেনেডের মধ্যে যেভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন গ্রিক পাইলট |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | নির্বাচনী লড়াইয়ে মুখোমুখি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন, যিনি বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত, যদিও তিনি গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। নির্বাচনের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে জনমত যাচাইকারী কোম্পানিগুলো সারা দেশে লোকজনের পছন্দ অপছন্দ জানতে ততোই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভোটারদের তারা প্রশ্ন করছে তারা কোন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে আগ্রহী। প্রার্থীরা জাতীয়ভাবে কে কেমন করছেন? সারা দেশে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কোন প্রার্থী কতোটা এগিয়ে আছেন সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপ বা সমীক্ষা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে এসব জরিপ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ওই নির্বাচনের আগে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে এরকম হয়েছে। ফলে বেশি ভোট পেলেই নির্বাচনে জয়ী হবেন সেটা সবসময় নিশ্চিত করে বলা যায় না। এবছর জাতীয় পর্যায়ে যতো জরিপ হয়েছে তার বেশিরভাগ ফলাফলেই জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন। গত কয়েক সপ্তাহে যেসব জরিপ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে মি. বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০% এর কাছাকছি। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন ১০ পয়েন্টে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েকদিনে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। চৌঠা আগস্টের জরিপে দেখা যচ্ছে জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন যেখানে ৪৯%, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে সমর্থন ৪৫%। গত নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কার অবস্থান কোথায় এই চিত্রটা ততোটা পরিষ্কার ছিলো না। এবার দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি, কোথাও কোথাও ৫% থেকে ১০%। অথচ ২০১৬ সালের জনমত জরিপগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সামান্য কিছু পয়েন্ট। ফলাফল নির্ভর করবে কোন কোন রাজ্যের ওপর? গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোন প্রার্থী কতো বেশি ভোট পেয়েছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন রাজ্যে কোন প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছেন। সাধারণত বেশিরভাগ রাজ্যেই সবসময় একই রকমের ভোট পড়ে। কিছু কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুজন প্রার্থীর যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন। এসব রাজ্যেই নির্ধারিত হবে কে নির্বাচনে জয়ী আর কে পরাজিত হবেন। জয় পরাজয়ের যুদ্ধটা হয় সেখানেই আর তাই এসব রাজ্যকে বলা হয় ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন রাজ্যের কতো ভোট সেটা নির্ভর করে ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। ২০২০র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে রাজ্যগুলোকে ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট রয়েছে টেক্সাস রাজ্যের- ৩৮। ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে তাকে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। তাই প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে থাকেন। ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে কে এগিয়ে বর্তমান জরিপের ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি। যে কোন সময় এই ফলাফল দ্রুত বদলে যেতে পারে। জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মি. বাইডেন মিশিগান, পেনসালভেনিয়া এবং উইসকন্সিন রাজ্যে এগিয়ে আছেন। এই তিনটি শিল্প এলাকা। এসব রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ১% এরও কম ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। এখনকার জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব রাজ্যে এগিয়ে আছেন সেগুলো হচ্ছে – জর্জিয়া, আইওয়া এবং টেক্সাস। কিন্তু এখানে ব্যবধান খুব সামান্য। গত নির্বাচনেও এসব রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল আরো অনেক বেশি। জো বাইডেন এগিয়ে আছেন যেসব রাজ্যে: অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসালভেনিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকন্সিন। জো বাইডেনের জন্যে ভালো খবর হচ্ছে এসব রাজ্যে তিনি বড় রকমের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব রাজ্যের অধিকাংশগুলোতেই ব্যপক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মি. ট্রাম্প। কিন্তু এসব রাজ্যে এখন এগিয়ে গেছেন জো বাইডেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এখন এটাই দুশ্চিন্তার কারণ। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়ে রয়েছে প্রবল বিতর্ক। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আইওয়া, ওহাইও এবং টেক্সাসে তিনি ৮% থেকে ১০% ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন জো বাইডেনের সাথে তার অবস্থান প্রায় সমান সমান। এসব পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন গত জুলাই মাসে তার নির্বাচনী প্রচারণার দলের ম্যানেজার বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়াও মি. ট্রাম্প এসব জনমত জরিপকে প্রায়শই ‘ভুয়া’ বলে উল্লেখ করে থাকেন। বেটিং কোম্পানিগুলো অবশ্য এখনই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাতিল করে দিচ্ছেন না। কেউ কেউ বলছে, তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা এখনও এক তৃতীয়াংশ। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে কিছু তথ্য ২০২০ নির্বাচনে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রভাব ফেলবে? স্বাস্থ্যসেবায় যুক্তরাষ্ট্রকে কী দিতে চান ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীরা? করোনাভাইরাসের কারণে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেছে? এ বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম দখল করে আছে করোনাভাইরাস। মহামারির পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে তার পক্ষে বিপক্ষে কথা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন তার পক্ষে সমর্থন তুঙ্গে ওঠে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। তখন তিনি সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন এবং ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাজ্যগুলোর জন্য ঘোষণা করেছিলেন পাঁচ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষস্থানীয় একটি জরিপ কোম্পানি ইপসসের হিসেব অনুসারে সেসময় ৫৫% আমেরিকান তার গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাট দলের যারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন পরে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করেন। কিন্তু রিপাবলিকানরা তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখেন। তবে অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে তার গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। সর্বসাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরাও এখন তার নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তারা সমালোচনায় সরব হয়েছে। জুলাই মাসের শুরুতে তার প্রতি রিপাবলিকানদের সমর্থন কমে ৭৮%-এ নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো একারণে করোনাভাইরাস সম্পর্কে তার বক্তব্য পরিবর্তন করছেন। শুরুতে তিনি বলেছিলেন এই ভাইরাস একসময় “আপনা আপনি চলে যাবে” কিন্তু এখন তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, “পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে মহামারি আরো খারাপ রূপ” নিতে পারে। শুধু তাই নয়, এর আগে তিনি মাস্ক পরার সমালোচনা করতেন কিন্তু এখন তিনি নিজেই মাস্ক পরছেন। এবং আমেরিকানদের প্রতি মাস্ক পরার আহবান জানিয়ে “দেশপ্রেমের” পরিচয় দেওয়ার কথা বলছেন। ৩রা নভেম্বর ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন যে তারা হোয়াইট হাউসে মি. ট্রাম্পকে আরো চার বছরের জন্য দেখতে চান কিনা। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মডেল অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের মাত্র দু’দিন আগে অর্থাৎ ১লা নভেম্বরের মধ্যে করোনাভাইরাসে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এসব জরিপ কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি? আগের নির্বাচনের জনমত জরিপ ভুল প্রমাণ হয়েছিল- এটা বলে আমরা খুব সহজেই এসব সমীক্ষা বাতিল করে দিতে পারি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও প্রায়শ একাজটা করে থাকেন। কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্য নয়। বেশিরভাগ জাতীয় জরিপে হিলারি ক্লিনটনকে সামান্য পয়েন্টে এগিয়ে রাখা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা ভুল করেছে। এটাতো ঠিক যে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আগের নির্বাচনের জনমত জরিপগুলোতে কিছু সমস্যা ছিলো। সেসব জরিপ ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এবার তাদের সেই ত্রুটি কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু তারপরেও এবারের পরিস্থিতি আরো কঠিন, আরো অনিশ্চিত। এর কারণ করোনাভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং নভেম্বরে মানুষের ভোটের ওপর এই মহামারি কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। কেননা নির্বাচনের এখনও আরো কয়েক মাস বাকি। | আমেরিকায় নির্বাচন ২০২০: জনমত জরিপে কে এগিয়ে - ট্রাম্প না বাইডেন? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | কবি ইকবাল আর মুহম্মদ আলী জিন্নাহর 'স্বপ্নের' দেশ পাকিস্তান ভেঙ্গে গেল কেন? সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান তৈরির পেছনে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর যুক্তিতে সায় দিলেও পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা কখনই তাদের বাঙালি জাতিসত্তা এবং স্বাধীনভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেনি। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে এত দ্রুত কেন অস্থির হয়ে পড়লো বাঙালি? কেন পাকিস্তান সৃষ্টির দুই দশক না যেতেই বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে তাদের আবেগ, আকাঙ্ক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে পড়েছিল? এক কথায় উত্তর- বৈষম্য, শোষণ । পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা যেহেতু দেশের পশ্চিমাংশে ঘাঁটি গাড়েন, শাসন ক্ষমতাও সেখানেই কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। সেই সাথে শুরু হয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সমস্ত ক্ষেত্রে দেশের অন্য একটি অংশের নাগরিকদের প্রতি পদে পদে বৈষম্য। যেখানে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের দুই অংশে মাথাপিছু আয় ছিল সমান, ১৯৭১ সালে পশ্চিমের মানুষের আয় পূর্বের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ঐ ২৫ বছরে পূর্ব পাকিস্তানে বিনিয়োগের অভাবে শত শত স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু পশ্চিমে বেড়ে গেছে তিন গুণ। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে, সেনাবাহিনীর উঁচু পদে বাঙালিদের নিয়োগ পাওয়া খুব কঠিন ছিল। সেই সাথে, বিনিয়োগে অবহেলার কারণে পূর্ব পাকিস্তানে হয়ে উঠেছিল পশ্চিমের কল-কারখানার কাঁচামালের যোগানদাতা এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রধান ক্রেতা। আরো পড়ুন: যে চার নেতা বদলে দিলেন ১৯৪৭-পরবর্তী পূর্ব বাংলার রাজনীতি 'ডেডলি এমব্রেস': দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল (বোঁয়ে), তৎকালীন সিআইএ প্রধান জন ব্রেনানের সাথে ২০১৬ সালে এক অনুষ্ঠানে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল তার ‘ডেডলি এমব্রেস‘ বইতে লিখেছেন পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই “পাকিস্তানের কাছে বাংলার গুরুত্ব ছিল দ্বিতীয়“ এবং বাঙালিদের “দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক“ হিসাবে দেখা হতো। 'দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক' মি রিডেল, যিনি একসময় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর বিশ্লেষক হিসাবে কাজ করেছেন, তার বইতে লিখেছেন, প্রথম থেকেই পাকিস্তানের শাসনক্ষমতার ভরকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ পাঞ্জাব রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং সেই একচ্ছত্র প্রাধান্য ধরে রাখার চেষ্টা পাকিস্তানের জন্য কাল হয়ে যায়। “প্রথম থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য ছিল। পাকিস্তানের ঐ অংশে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ছিল পাঞ্জাবে। সবচেয়ে বেশি উর্বর কৃষি জমি ছিল সেখানে। সবচেয়ে বড় কথা সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল পাঞ্জাবের। অনেক পাঞ্জাবি সেনা কর্মকর্তা মনে করতেন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। তাদের অনেকেই বাঙালিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতেন, মনে করতেন বাঙালিদের লড়াই করার ক্ষমতা নেই।“ মার্কিন ঐ গবেষক আরো লিখেছেন, “সেনাবাহিনী এবং আমলাতন্ত্রে পাঞ্জাবিদের আধিপত্য কায়েম হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমাংশের উন্নয়নের দিকে প্রধান নজর দিল। পূর্ব পাকিস্তানকে একরকম উপনিবেশ হিসাবে দেখা শুরু হয়।“ পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরের ২৫ বছর সেই প্রভু-সুলভ মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে পদে পদে। সেইসাথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দূরত্ব ক্রমাগত বেড়েছে এবং বাঙালিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে বৈষম্যের খতিয়ান কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক মোহাম্মদ নিয়াজ আসাদুল্লাহ ২০০৬ সালে তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিমের চেয়ে বেশি হওয়া স্বত্বেও সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্য কতটা পাহাড় সমান ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের জায়গা পাওয়া কঠিন ছিল। পাকিস্তানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫০-৫৫), কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশ পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৬৫-৭০) সেই বরাদ্দ বাড়লেও তা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ । মি. আসাদুল্লাহ লিখেছেন, একেতো বরাদ্দ অনেক কম দেওয়া হতো, তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রকাশ্যে এবং গোপনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে তহবিল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জটিল সব কর ব্যবস্থায় আড়ালে নানা খরচ দেখিয়ে এই তহবিল নিয়ে যাওয়া হতো। এক হিসাবে ২৫ বছরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাচার এই টাকার পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। শিক্ষা বৈষম্য: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালে ২৪ বছরের আগের তুলনায় প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কমে যায়। বছরের পর বছর বরাদ্দে এই বৈষম্যের শিকার হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা। ভারত ভাগের সময় পাকিস্তানের দুই অংশে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল প্রায় সমান। কিন্তু ১৯৭১ সালে এসে পূর্ব পাকিস্তানে ২৪ বছরের আগের তুলনায় প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কমে যায়। অথচ পশ্চিমে ১৯৬০ এর দশকে এসেই প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা তিনগুণ বেশি হয়ে যায়। উনিশ'শ একান্ন সালে পূর্ব পাকিস্তানে গ্রাজুয়েটের সংখ্যা ছিল ৪১০০০ আর পশ্চিমে ছিল ৪৫০০০। কিন্তু দশ বছর পর ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে গ্রাজুয়েট তৈরি হয় ২৮০০০, যেখানে পশ্চিমে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪০০০-এ। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে ঐ দশ বছরে ৩২ শতাংশ কমে গিয়েছিল, পশ্চিমে বেড়েছিল ২১ শতাংশ। সরকারি বৃত্তি, অনুদান প্রধানত পেয়েছে পশ্চিমের শিক্ষার্থীরা,কারণ বিজ্ঞাপন যখন পূর্বে প্রকাশিত হত তখন আবেদনের সময় থাকতো না। চাকরির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এবং একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে সুযোগ প্রচারে এই দেরি করা হতো উদ্দেশ্যমুলকভাবে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিমের বাজারে পরিণত হয়েছিল। পাকিস্তানী পণ্যের বাজার পাশাপাশি, পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের উৎপাদিত শিল্প পণ্যের প্রধান বাজার। সরকারি হিসাবেই ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের বাণিজ্যে পশ্চিমের উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ১০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ মে মাসের ১৯৭১ একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল যাতে তারা দেখার চেষ্টা করেছিল যে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলে দুই ভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে তার কী পরিণতি হবে। দু'হাজার দশ সালে ঐ রিপোর্টের যে খণ্ডিত অংশ প্রকাশ করা হয়, তাতে দেখা যায় যে সিআইএ তখন মনে করেছিল পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তান বড় ধরণের বাণিজ্য সঙ্কটে পড়বে কারণ তাদের পণ্যের যে মান তাতে বিকল্প বাজার পেতে তাদের সমস্যা হবে। সিআইএর ঐ গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যত বেড়েছে দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য সেই সাথে বেড়েছে, জীবনযাত্রার মানের তারতম্য বেড়েছে। “পূর্ব পাকিস্তানকে বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে। তবে সেই বিনিয়োগ কখনই ঠিকমত আসেনি, বিশেষ করে ষাটের দশকের আগে। বেসরকারি বিনিয়োগও ছিল নামে মাত্র। ফলে পূর্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল খুবই নিম্ন। “ অসহায় এবং ভঙ্গুর: পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সালে ঘুর্ণিঝড়ের এক মাস পরেও বহু জায়গায় ত্রাণ পৌঁছায়নি ঐ রিপোর্টে বলা হয়, “১৯৭০ সালের বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঝড় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি কতটা অসহায় এবং ভঙ্গুর। ঐ সাইক্লোনের পর কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পেছনে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল।“ আয় বেড়েছে পশ্চিমে, কমেছে পূর্বে উনিশ'শ সাতচল্লিশ সালে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় তেমন কোনও তারতম্য না থাকলেও, অব্যাহত এই বৈষম্যের পরিণতিতে পরের ২৫ বছরে পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে ১৯৪৯-৫০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৩১১ রুপি (১৯৫৯-৬০ সালের মূল্যের ভিত্তিতে) এবং পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ২৮৭ রুপি যা প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু ১৯৬৯-৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথা পিছু আয় দাঁড়ায় ৫৩৭ রুপি এবং পূর্ব পাকিস্তানে ৩৩১ রুপি।পাকিস্তানের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দলিল থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি যুক্তি তুলে ধরা হয় যে পূর্ব পাকিস্তানের অব্যাহত অনগ্রসরতার ঐতিহাসিক একটি প্রেক্ষাপট ছিল যে যুক্তি পশ্চিমা অনেক বিশ্লেষকও অংশত স্বীকার করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান। উনিশ'শ সাতচল্লিশ সালে পাকিস্তানের পশ্চিম অংশ পূর্বের অংশের চেয়ে বাড়তি কিছু সুবিধা পেয়েছিল। পশ্চিমের অবকাঠামো অপেক্ষাকৃত উন্নত ছিল। কুড়ি শতাংশ মানুষ নগরের বাসিন্দা ছিলেন। ভারত থেকে অনেক দক্ষ উদ্যোক্তা পাকিস্তানের পশ্চিম অংশে চলে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রধানত একটি কৃষিনির্ভর অঞ্চল ছিল। অবকাঠামো ছিল খুবই সেকেলে। উদ্যোক্তা যারা ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন সম্পন্ন হিন্দু যারা ভারতে চলে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, এসব যুক্তি ছিল খোঁড়া। তিনি বলেন, শাসক শ্রেণী অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পাকিস্তানেও সেটাই হয়েছে। পাকিস্তানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি রিজভি, যিনি পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন, বিবিসি বাংলাকে বলেন, “শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা এবং উন্নয়নে পিছিয়ে ছিল এই যুক্তি সবসময় এখানে এক পক্ষ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের জন্য যে ভাগাভাগি, সাম্য, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল তা কি ছিল? আমি বলবো ছিলনা।“ বরঞ্চ পাকিস্তানের সামরিক এবং রাজনৈতিক শাসকরা উল্টো পথে হেঁটেছেন। উঁচু পদে উধাও বাঙালিরা জনৈতিক ক্ষমতা থেকে জবরদস্তি করে দূরে রাখার পাশাপাশি সরকারি চাকরি এবং সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব আটকানোর অব্যাহত চেষ্টা হয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে রিজওয়ান উল্লাহ কোকাব তার একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন কীভাবে সরকারি উঁচু পদের নিয়োগে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেনাবাহিনীতে বাঙালি নিয়োগ বাড়ানোর কথা বললেও কাজ হয়নি। উনিশ'শ পঞ্চাশ সালে, ২০ শতাংশ মেধা-ভিত্তিক নিয়োগের পর ৮০ শতাংশ সরকারি চাকরি দুই অংশের মধ্যে কোটা-ভিত্তিক নিয়োগের নীতি ঘোষণা করা হয়। কিন্ত গবেষক রিজওয়ান কোকাব বলছেন, পূর্ব পাকিস্তানে যোগ্য প্রার্থী নেই এই যুক্তিতে কখনই সে কোটা মানা হয়নি। ফলে, ১৯৬৬ সালে এসেও দেখা গেছে সরকারি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। উনিশ'শ ছেষট্টি সালে প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের ৮১ শতাংশ ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের আর মাত্র ১৯ শতাংশ পূর্বের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এই অনুপাত ছিল ৬৪ এবং ৩৬ শতাংশ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৯২ শতাংশ কর্মকর্তাই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৭৮ শতাংশই ছিলেন পশ্চিমের বাসিন্দা। উনিশ'শএকাত্তর সালে এসেও সেই চিত্র তেমন বদলায়নি। ঐ বছর সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তাদের মধ্যে বাঙালির সংখ্যা ছিল ১৯৬, সেখানে এক পাঞ্জাব প্রদেশের কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ১৯৯। বাংলাদেশের সাবেক সচিব ড. আকবর আলী খান, যিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, বিবিসিকে বলেন, সরকারি চাকুরীতে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যে কোনো রাখ-ঢাক ছিলনা। “প্রচুর বিহারী ( ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসা উর্দুভাষী) নিয়মিত বাঙালি কোটায় চাকরি পেয়েছে।“ ভারত ভাগের সময় ভারতীয় সিভিল সার্ভিস এবং ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের যে ৯৫ জন মুসলিম কর্মকর্তা পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তাদের মাত্র দুইজন ছিলেন বাঙালি। এক-তৃতীয়াংশই ছিলেন পাঞ্জাবি। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে জেলা বা মহকুমা পর্যায় পর্যন্তও প্রধান প্রশাসকরা ছিলেন অবাঙ্গালি।এই ব্যবধান থেকেই গিয়েছিল। একজন সচিব হতে বাঙালিদের ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। উনিশ'শ চৌষট্টি সালে দুইজন বাঙালি সচিব হয়েছিলেন, তাও একজনের পোস্টিং ছিল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সেক্রেটারিয়েটে, অন্যজনের পরিকল্পনা বিভাগে। সংস্থাপন, অর্থ, প্রতিরক্ষার মত জায়গায় বড় পদে বাঙালি অফিসারদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতো। গবেষক রিজওয়ান কোকাব বলছেন, বাঙালিদের এমন জায়গায় পোস্টিং দেওয়া হতোনা যেখানে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত হয়।গবেষণাপত্রের উপসংহারে তিনি লিখেছেন, “সরকারি চাকুরীতে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং কম প্রতিনিধিত্ব - এই দুটো বিষয় বাঙালিদের মধ্যে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতায় ইন্ধন দিয়েছে।“ সেনাবাহিনীতেও একই চিত্র জেনারেল ওয়াসিউদ্দিন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে একমাত্র তির তারকা বাঙালি অফিসার হতে পেরেছিলেন যদিও তার জন্য তাকে ১৯৬৯ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। উনিশ'শ উনসত্তর সালে এ ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা নেওয়ার পর বাঙালিদের অসন্তোষ সামাল দিতে সেনাবাহিনী এবং সরকারি উঁচু পদে তাদের নিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।কিন্তু তারপরও ১৯৭০ এ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ৬০০০ অফিসারের মেধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ৩০০। সিংহভাগই নিম্নপদের কর্মকর্তা। উনিশ'শএকাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তরুণ বাঙালি অফিসার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনিরুজ্জামান। তিনি বিবিসিকে বলেন, “একাকী মনে হতো। একটি জায়গায় বিশজন অফিসারের মধ্যে হয়তো একজন থাকতেন বাঙালি। যদি ২০০ ক্যাডেট অ্যাকাডেমিতে ঢুকতো, তার মধ্যে বড়জোর চার-পাঁচজন থাকতো বাঙালি। ১৯৭০ এর দিক এসে কিছুটা বেড়েছিল।“ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান তিনি বলেন, নিয়োগে একচোখা নীতি তো ছিলই, সেইসাথে সমান প্রতিযোগিতা করে ঢোকার মত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর একটি ঘাটতিও পূর্ব পাকিস্তানে ছিল। “দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান ব্রিটিশদের তৈরি কতগুলো আবাসিক ইংরেজি স্কুল পেয়েছিল যেগুলো তাদের পাহাড়ি শৈল শহরগুলোতে ছিল। আমাদের এখানে তা ছিলনা,“ তিনি বলেন। জেনারেল জামান বলেন, সেনাবাহিনীতে বাঙালি শুধু যে কম ছিল তা নয়,, সামরিক সরঞ্জামের ৯৫ শতাংশই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। “ইস্টার্ন ফ্রন্টকে তারা কখন গুরুত্বই দেয়নি।“ ''উনিশ'শ পইষট্টি সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত যেভাবে অরক্ষিত ছিল, তাতে বাঙালিদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছিল পাকিস্তান সরকার কাশ্মীরের জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে হারাতেও হয়ত কার্পণ্য করবে না,'' তিনি বলেন। সাংস্কৃতিক বৈষম্য, নির্যাতন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী জেনিফার কোটস পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই নিয়ে গবেষনাধর্মী একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। ঐ বইতে তিনি লেখেন, “পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতির অনেক অমিল ছিল এবং বাঙালিরা তাদের সংস্কৃতি রক্ষা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল।“ কিন্তু বিশেষ করে ১৯৫৮ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও বাঙালিদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কঠোর নজরদারিতে পড়ে। আউয়ুব খান ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা নিয়ে বাঙালির সংস্কৃতি দমনের পথে নামেন। জেনিফার কোটস লেখেন, “১৯৫৮ সালে পাকিস্তান শাসকরা বাঙালি সংস্কৃতিকে ভিন্ন খাতে - তারা বলতো সঠিক খাতে- পরিবর্তনের কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদকে চাপ দেওয়া। ''ইসলামি সংস্কৃতি ঢোকানোর চেষ্টা শুরু হয়। জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরো তৈরি হয় যার প্রধান কাজই ছিল বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন। সরকারের নীতির স্তুতির জন্য লেখক বুদ্ধিজীবীদের গাড়ি-বাড়ি-টাকা উপঢৌকন দেওয়া শুরু হয়। তাদের বিদেশে ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ''প্রেস এবং পাবলিকেশন আইন করে ১৯৬১ সালে সংবাদপত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দারুণভাবে খর্ব করা হয়।“ এমনকি ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান এবং আইয়ুব খানের তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন সরকারি প্রচারমাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম প্রচার নিষিদ্ধ করে দেন। নজরুল ইসলামের কবিতা প্রচারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়, এমনকি তার কবিতার অনেক শব্দ উর্দু করে নতুন করে প্রকাশ করা হয়। মিজ কোটস তার বইতে লিখেছেন কয়েকটি গ্রুপকে শায়েস্তার জন্য সনাক্ত করা হয়: ১. যেসব শিক্ষকের সাথে আওয়ামী লীগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, কারণ তারা স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে কাজ করবে। ২. নাম করা বুদ্ধিজীবী তা তিনি সরাসরি রাজনীতিতে থাকুন আর নাই থাকুন। ৩. বাঙালি হিন্দু বুদ্ধিজীবী ৪. ছাত্র এবং বিপ্লবী রাজনীতিক। “মোদ্দা কথা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করছেন, জাগিয়ে রাখছেন, প্রচার করছেন এমন যে কেউই টার্গেট। ২৫শে মার্চের রাতের হামলার টার্গেট এবং নৃশংসতা দেখে বোঝা যায় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা তাদের নিয়ন্ত্রণ আরোপের পথে কাদের প্রধান সমস্যা মনে করতেন,“ মিজ কোটস লেখেন। বছরের পর বছর এসব অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক-সংস্কৃতি নির্যাতন বাঙালিদের পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে মনস্তাত্বিকভাবে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করেছে এবং তাদের মধ্যে দিনে দিনে বাঙালি জাতীয়তাবাদ শক্ত হয়েছে। পাকিস্তানের কোনো অনুশোচনা? পাকিস্তানী শাসকরা বা সেখানকার সমাজের প্রভাবশালীরা পূর্ব পাকিস্তান এবং বাঙালিদের প্রতি এসব বৈষম্যকে কিভাবে দেখতেন? রাজনীতির শিক্ষক, লেখক এবং পাঞ্জাব প্রদেশের সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাসান আকসারি রিজভি ১৯৭১ সালে ব্রিটেনে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে স্বাধীন হয়। ফলে, পাকিস্তানের ঐ পর্ব নিয়ে পরে তিনি অনেক পড়াশোনা এবং লেখালেখি করেছেন। মি রিজভি বলেন, পাকিস্তান ভাঙার পেছনে যে অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতাই মূল কারণ ছিল এই বোধোদয় এখন পাকিস্তানে অনেক বেশি। “এ নিয়ে পাকিস্তানে এখন অনেক খোলামেলা তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, বিশ্লেষণ হচ্ছে।“ “পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে রাজনৈতিক এবং সামরিক শাসকরা এই বৈষম্যের বিষয়টি বুঝতে পারতেন না, বোঝার চেষ্টাও করতেন না। বিশেষ করে ৫৮ সালের পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর এই বোধোদয় আরো দূরে সরে গিয়েছিল।“ মি রিজভি বলেন, বাঙালিদের অসন্তোষ যত বেড়েছে শাসক শ্রেণী ততই বলেছেন ভারত এসব করাচ্ছে। “ সন্দেহ নেই যে ভারত পাকিস্তানের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছে, কিন্তু ব্যর্থতার প্রধান দায় সে সময়কার শাসকদের।“ “তারা বোঝেননি শুধু ধর্ম দিয়ে ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব নয়। জাতীয় ঐক্যের জন্য যে ভাগাভাগি, সাম্য, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন, তা ছিলনা।“ পাকিস্তান কি এখন অনুশোচনা করে? প্রশ্নে মি. রিজভি বলেন, এ নিয়ে দুই ধরনের মতামত রয়েছে। “একদল মনে করে পাকিস্তান অটুট থাকলে আজ বিশ্ব রাজনীতিতে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের অনেক বেশি প্রভাব হতে পারতো। আরেক দল মনে করে পাকিস্তান এখন অনেক ম্যানেজেবল, সামাল দেওয়া সহজ হয়েছে।“ তবে মি. রিজভি মনে করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে পাকিস্তান। “ষাটের বা সত্তরের দশকের পাকিস্তানের চেয়ে এখনকার পাকিস্তান জাতিগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিগত ভিন্নতা এবং স্পর্শকাতরতা নিয়ে অনেক বেশি অ্যাকোমোডেটিভ। এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক বেশি ভাবা হয়।“ | স্বাধীনতার ৫০ বছর: যে বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | "আওয়ার বডিজ আওয়ারসেল্ভস" বইটি নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে কথা বলছেন জুডি নরসিজিয়ান। বইটি সে সময় ব্যাপক বিক্রি হয়েছিল এবং তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। এই বৈপ্লবিক এবং বিতর্কিত এই বইটিকে কেউ কেউ বলেছিলেন "একটি অশ্লীল আবর্জনা," আবার অন্যরা বলেছিলেন, এটি হচ্ছে "নারীদের স্বাস্থ্য আর যৌনতা বিষয়ে তথ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস।" সেই বইয়ের লেখকদের অন্যতম জোয়ান ডিৎজিওনের সাথে কথা বলেছেন বিবিসির জোসেফিন ক্যাসার্লি । সেটা ১৯৬৯ সালের কথা। জোয়ানা'র বয়স তখন ২৫, তিনি তখন পেশায় একজন চিত্রকলার শিক্ষক। মাত্র কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছেন তিনি। এবং ঠিক সেই সময়টাতেই তিনি নারীবাদে আগ্রহী হতে শুরু করেছেন। "প্রথম যে বৈঠকটিতে আমি গিয়েছিলাম তা ছিল একেবারেই চমকপ্রদ। সেখানে ছিলেন ৫০ থেকে ৬০ জন নারী। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে শিশু সন্তান ছিল। কেউ কেউ বাচ্চাদের বুকের দুথ খাওয়াচ্ছিলেন। সবাই ছিলেন মানসিকভাবে খুব উদ্দীপ্ত" - বলছিলেন জোয়ান। আমেরিকার বস্টন শহরের একটা স্থানীয় সংবাদপত্রে একটা বিজ্ঞাপন দেখে ব্যাপারটা সম্পর্কে জেনেছিলেন জোয়ান- তাতে বলা হয়েছিল যে নারীদের স্বাস্থ্য ও যৌনতা নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ হবে। ব্যাপারটা তাকে আগ্রহী করে তুললো। কর্মশালার নাম দেয়া হয়েছিল 'নারী ও তার দেহ।' "আমার মনে আছে যে প্রথম অধিবেশনটাই ছিল যৌনতা নিয়ে। তবে সে সময় আমি ওসব বিষয়ে তেমন কিছুই জানতাম না। " "দেখলাম একটা বোর্ডে নারীর যৌনাঙ্গের একটা বিরাট ছবি বা ডায়াগ্রাম। তাতে তার নানা অংশকে নাম দিয়ে চিহ্নিত করা আছে।" "তখনকার দিনে মেয়েদের বেশির ভাগেরই এ নিয়ে শুধু এটুকুই জানা ছিল যে - হ্যাঁ, আমাদের শরীরের নিচের দিকে ওরকম একটা অংশ আছে। এটুকুই। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: "তুরস্কে নারীর ওপর যৌন সহিংসতা বন্ধের আইন আলোর মুখ দেখল যেভাবে যে নারীরা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘পুরুষ কেন ধর্ষণ করে’ উইঘুর নারীরা যেভাবে গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন চীনের বন্দী শিবিরে সেটা ছিল আমেরিকায় নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের কথা। তখন নারীরা পুরুষদের সমান বেতন, গর্ভপাতের অধিকার - এসব দাবি করছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতিও হয়েছিল। তখন সবেমাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বাজারে পাওয়া যেতে শুরু করেছে। সেই সময়টাকে যদিও বলা হচ্ছিল যৌনতার মুক্তির যুগ । কিন্তু জোয়ানের মত অনেক নারীই, এমনকি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তারাও - তাদের নিজের শরীর সম্পর্কে খুবই কম জানতেন। যৌন স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও তাদের খুব কমই জানা ছিল। "তেমন বেশি কিছু না। হ্যাঁ, আমরা নরনারীর যৌনমিলন সম্পর্কে জানতাম - কিন্তু সেই জানাটা ছিল খুবই সীমিত।" কিন্তু জোয়ান যে কর্মশালাটিতে গিয়েছিলেন তাতে শুরু থেকেই যৌনতার বিষয়ে খুবই খোলামেলা কথাবার্তা হয়েছিল। "সেখানে নারীরা কিভাবে বিভিন্ন উপায়ে যৌনতৃপ্তি পেতে পারে তা নিয়ে কথা হয়, স্বমেহন নিয়ে কথা হয়। আমার কাছে সেটা একেবারেই আশ্চর্য ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল।" সেটা কি আপনার নিজের যৌনজীবনে কোন পরিবর্তন এনেছিল। "হ্যাঁ নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। আমি যৌনমিলনের ক্ষেত্রে আমার নিজের দেহ কখন কিভাবে সাড়া দিচ্ছে তা বুঝতে শিখলাম, আমি ও আমার স্বামী নানা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলাম।" জোয়ান তখন থেকে এ ধরণের ওয়ার্কশপের আয়োজন করার কাজে আরো বেশি সক্রিয় হলেন। বইটিতে নারীদের স্বাস্থ্য ও যৌনতা বিষয়ক ব্যক্তিগত গল্পের সাথে বাস্তব তথ্যের সমন্বয় ঘটাো হয়েছিল। এগুলোতে আসা নারীরা যৌন-স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদান বা গর্ভপাতের মত সব বিষয়ে তাদের নিজেদের জীবনের গল্প অন্যদের সাথে বিনিময় করলেন। "এরকম অনেক মহিলা এসেছিলেন যারা গর্ভপাত করিয়েছেন। সেটা যে কত বিপজ্জনক এবং বেআইনি কাজ ছিল - কিভাবে গোপনে এ জন্য ডাক্তার খুঁজে বের করেছিলেন তারা, এমনকি একজন মহিলার গল্প শুনলাম যে গর্ভপাত করার জন্য একটি কাপড় ঝোলানোর হ্যাঙ্গার ব্যবহার করেছিলেন, এবং তার পর তার কীভাবে রক্তপাত হয়েছিল। এই নারীরা আরো কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে তাদের কি ধরণের কথাবার্তার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। অনেক নারীই এখন মনে করেন পুরুষ ডাক্তাররা তাদের কথা ঠিকমত শোনেননি, বা তাদের যথাযথ সম্মান দেখাননি। তবে কিছু ডাক্তার এই নারীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন। জোয়ান এবং তার সহযোগী নারীরা সেই সব ডাক্তারদের সাথে দেখা করেছিলেন সেই কোর্সের জন্য নানা উপকরণ তৈরির জন্য। "আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করলাম যে নারীদের প্রজননতন্ত্র এবং যৌনতা বিষয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, তার বেশিরভাগই পুরুষদের করা এবং তারাই মেয়েদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তা ছাড়া গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে বইয়ের সংখ্যাও খুবই কম। তারও বেশিরভাগই ডাক্তারি দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এবং পুরুষদেরই লেখা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: যৌন সহিংসতার ঘটনা প্রকাশে যেভাবে মূল্য দিতে হয় ভারতে যৌন আক্রমণের শিকার নারীরা কি বিচার পাচ্ছে? যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে 'চিন্তিত' মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষরা তারা ঠিক করলেন তারা একটা প্যামফ্লেট বের করবেন যার বিষয় হবে নারীর যৌনতা ও স্বাস্থ্য। "প্রথম নাম ছিল উইমেন এ্যান্ড দেয়ার বডিজ। তার পর আমরা ভাবলাম, না এটার নাম নারীরা ও "তাদের" দেহ - এমন কেন হবে? এটা তো "আমাদের"ই বিষয় - আমরা নিজেরাই, আমাদেরই দেহ, আমাদেরই জীবন।" সেই প্যামফ্লেট এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে ১৯৭২ সালে তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন সাইমন এ্যান্ড শুস্টার নামে একজন প্রকাশনা সংস্থা। তারা জানতে চাইলেন, এ বিষয়ে এই নারীরা একটি বই লিখতে আগ্রহী কিনা। প্রথম দিকে তারা ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না যে এ বিষয়ে একটি বই বের করা ঠিক হবে কিনা। ব্যাপারটা একটা বাণিজ্যিক উদ্যোগের মতো শোনাচ্ছিল। মনে রাখতে হবে এরা ছিলেন একদল বৈপ্লবিক চিন্তাধারার নারী যারা পুরুষতান্ত্রিকতা ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন। বই বের করা নিয়ে তাদের মনে একটা সন্দেহ ছিল। ১৯৮৯ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটনে নারী অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ তবে শেষ পর্যন্ত তারা রাজি হলেন। তবে তারা বললেন বইয়ের দাম খুব কম রাখতে হবে যাতে এটা সবাই কিনতে পারে। আর তা ছাড়া ক্লিনিকগুলোয় বইটি বিক্রির সময় ৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিতে হবে - যাতে রোগীদের মধ্যে এটি বিতরণ করা যায়। "বইটা আমরা যেভাবে লিখেছিলাম তা ছিল সত্যি এক ব্যতিক্রমী ব্যাপার। আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করেছিলাম। ফলে বইটার প্রতিটি শব্দের ব্যাপারে আমাদের ১২ জনের গ্রুপের সবাইকে সম্মতি দিতে হয়েছিল। কাজেই আমাদের দিনের পর দিন বৈঠক করতে হয়েছিল। সেটা ছিল এমনই যে আমরা দ্বিতীয়বার তা করার কথা ভাবতেও পারি না। কিন্তু এটা ছিল প্রকৃতপক্ষেই একটা যৌথ প্রক্রিয়া। আমার চোখে এটা ছিল এক দারুণ ব্যাপার।" 'আওয়ার বডিজ আওয়ারসেলভস'র প্রথম সংস্করণটি বের হয় ১৯৭৩ সালে। বইটি ছিল বৈপ্লবিক, দ্ব্যর্থহীন এবং আন্তরিক। "আমরা উপলব্ধি করছি যে আমাদের জীবনের এমন অনেক দিক আছে যা আমাদের ক্রুদ্ধ করে। অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে আমরা বড় বেশি উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু আমাদের মেজাজ আসলে অনেক বেশি জটিল।" এটি ছিল নারীদের দৈহিক গঠন এবং যৌন অনুভূতির বিষয়ে নানা তথ্যে ভরা একটি বিশ্বকোষের মত। "আমরা জোর দিয়ে বলছি আপনি একটি আয়না নিয়ে বসে নিজেকে পরীক্ষা করুন। নিজেকে স্পর্শ করুন। নিজের গন্ধ নিন। আপনার দেহই আপনি, এবং আপনি অশ্লীল কিছু নন।" বইটিতে একটি অধ্যায় ছিল যা লেসবিয়ান বা নারী সমকামিতার ওপর। আরো কয়েকটি অধ্যায় ছিল জন্মনিয়ন্ত্রণ, গর্ভপাত, গর্ভধারণ ও সন্তানের যত্ন নেবার ওপর। এতে আরো দুটি অধ্যায় ছিল ধর্ষণ ও আত্মরক্ষার কৌশল বিষয়ে। বইটিতে ব্যক্তিগত গল্পের সাথে বাস্তব তথ্যের সমন্বয় ঘটানো হয়েছিল। বইটি বেস্টসেলার হয়েছিল এবং পরিণত হয়েছিল একটি সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ন ঘটনায়। "বইটি সবাই সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। ক্লিনিকগুলোও বইটি কিনেছিল, মেডিক্যাল স্কুলগুলো এটিকে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করেছিল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পড়েছিলেন সাধারণ নারীরা। আমরা অনেকের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি যে কীভাবে বইটি তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন এনে দিতে পেরেছিল।" কিন্তু সবাই যে এ বই পছন্দ করেছিল তা নয়। উনিশশো সত্তুর দশকের শেষ দিকে জেরি ফুলওয়েল নামে একজন ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান প্রচারক বইটিকে অশ্লীল এবং আবর্জনা বলে বর্ণনা করলেন। বললেন, স্কুল ও লাইব্রেরিগুলোর উচিত এই বই নিষিদ্ধ করা। সত্যিই কিছু প্রতিষ্ঠান বইটিকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু জোয়ান বলছেন, তারা যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন তার বেশির ভাগই ছিল ইতিবাচক। "যখনই আমরা কোথাও যেতাম, লোকে বইটি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতো। কিন্তু এটা যে সারা দেশে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল - তা আমাদের খুবই অভিভূত করেছিল। " সেই আন্দোলনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন কলেজে-পড়া শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান নারী। তাদের অভিন্ন অভিজ্ঞতাই কি বইটিতে প্রতিফলিত হয়েছিল? "হ্যাঁ নিশ্চয়ই তাই। আমরা সবাই ছিল মধ্যবিত্ত শ্বেতাঙ্গ নারী। তবে তখনকার দিনে এটা নিয়ে আমাদের কোন আত্মসচেতনতা ছিল না। তবে পরে ধীরে ধীরে আমরা এই সীমাব্ধতা সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করেছিলাম। এবং আমাদের মধ্যে যেন অন্য জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ থাকে - তার জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি। বইটির পাঠকদের ব্যাপ্তি বাড়াতে তারা যা করেছিলেন তার অন্যতম হচ্ছে স্প্যানিশ ভাষায় বইটির একটি সংস্করণ বের করা। এর পর অন্য অনেক ভাষাতেই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি যত জনপ্রিয় হলো, ততই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নারী সংগঠনগুলো তাদের সাথে যোগাযোগ করতে লাগলো। তারা বললো তারা তাদের প্রেক্ষাপটের সাথে মানানসই করে বইটি প্রকাশ করতে চায়। এভাবে বইটির ৩৩ ভাষায় অনুবাদ হলো - আক্ষরিক অর্থেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। আওয়ার বডিজ আওয়ারসেলভস বইটি সারা পৃথিবীতে মোট ৪০ লক্ষ কপিরও বেশি বিক্রি হয়। যুক্তরাষ্ট্রেই বইটির নয়টি সংস্করণ বেরোয়। আধুনিক সংস্করণগুলোতে নতুন কিছু প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে - যেমন কিভাবে ইন্টারনেটে নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য মূল্যায়ন করতে হবে, তা ছাড়া নারীদের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং জেন্ডার পরিচয়ের মত বিষয়গুলো। যেদিন তারা প্রথম সেই বৈঠকে বসেছিলেন - তখন কি তারা চিন্তা করতে পেরেছিলেন যে একদিন এটাই তাদের সারা জীবনের কাজ হয়ে দাঁড়াবে? প্রশ্ন করা হয়েছিল জোয়ানকে। "না, এটাই হচ্ছে আমাদের প্রয়াসের সবচেয়ে সুন্দর দিক। বইটা আমাদের অংশ হয়ে গেছে, আমি এবং অন্যরা যেভাবে বেড়ে উঠেছি, বইটেও সাথে সাথেই বেড়ে উঠেছে, পরিবর্তিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। " "আমি কৃতজ্ঞ যে বইটি আমাদের জীবনে কিছু যোগ করার মতো শক্তি অর্জন করেছে। কিন্তু তখন আমরা ভাবতেই পারি নি যে একটি এমনটা হবে। সত্যি ভাবতে পারিনি।" নারী স্বাধীনতা বলতে কী বোঝেন নারীরা এবং পুরুষেরা? | ইতিহাসের সাক্ষী: কীভাবে লেখা হয়েছিল নারী ও নারীর দেহ নিয়ে বিতর্কিত সেই বইটি |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | আমেরিকায় ফেস মাস্ক পরার নতুন স্বাস্থ্য বিধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে মাস্ক পরার বিরুদ্ধে আমেরিকার অনেক জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। এমনকি মাস্ক না পরার জন্য ভুয়া ছাড়পত্রও বাজারে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। বিবিসির রিয়ালিটি চেক বিভাগ মাস্ক নিয়ে নানাধরনের দাবির সত্যতা যাচাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ফেস মাস্ক না পরার ভুয়া ছাড়পত্র কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে আমেরিকায় মাস্ক পরার বিরোধী যারা তারা প্রকাশ্য জনসভা এবং সামাজিক মাধ্যমে মাস্কের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। যেসব রাজ্যে দোকানের ভেতর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেখানে মাস্ক প্রতিহত করতে উদ্যোগী মানুষের ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। আমেরিকার বিচার বিভাগ এক বিবৃতি জারি করে বলেছে কেউ কেউ প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরার নিয়ম থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে যে ছাড়পত্র দেখাচ্ছে তা "জাল করা কার্ড"। ফেস মাস্ক না পরার জন্য ''ভুয়া ছাড়পত্র'' বাজারে যে কার্ড বিক্রি করা হচ্ছে তাতে লেখা আছে "আমাকে ফেস মাস্ক পরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে" এবং আরও বলা হচ্ছে "আমেরিকার ডিসেবিলিটি আইনের অধীনে, আমি আমার অক্ষমতার বিস্তারিত প্রকাশ করতে বাধ্য নই।" জাল ছাড়পত্রের একটি ভার্সানে এমনকি বিচার বিভাগের সিলমোহরও দেয়া হয়েছে এবং "ফ্রিডম টু ব্রিদ এজেন্সি" নামে নি:শ্বাস নেবার অধিকার সংক্রান্ত একটি সংস্থার লিংকও জুড়ে দেয়া হয়েছে। কার্ডে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাউকে জোর করে মাস্ক পরতে বাধ্য করলে তথাকথিত এই সংস্থার কাছে সেই দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে। কিন্তু বিবিসি জেনেছে এই কার্ড ভুয়া। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে: "এই কার্ডের কোন আইনপ্রয়োগকারী ক্ষমতা নেই। 'ফ্রিডম টু ব্রিদ এজেন্সি' নামে সরকারের কোন সংস্থা নেই।" একটি তথ্য অনুসন্ধান সংস্থা জানাচ্ছে ফ্রিডম টু ব্রিদ এজেন্সি একটি ফেসবুক গ্রুপ যারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছে এই বলে যে তারা "আমেরিকান নাগরিকের স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা রক্ষায় নিবেদিত একটি গর্বিত আন্দোলন গোষ্ঠী"। মাস্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে? এরই মধ্যে মাস্ক পরার গুণাগুণ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে নানা ধরনের খবর। একটি গ্রাফিক চিত্র সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে কয়েক হাজার বার। এতে রয়েছে বিভ্রান্তিকর দাবি। এতে তুলে ধরা হয়েছে আপনি ফেস মাস্ক পরলে আপনার কী হতে পারে? ইনস্টাগ্রামে আবার এটি ভুয়া বলেও পোস্টিং দেয়া হয়েছে। বিভ্রান্তিমূলক গ্রাফিক্স চিত্র দিয়ে দাবি করা হয়েছে ফেস মাস্ক কীভাবে শরীরের ক্ষতি করে এমনকি তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে দমিয়ে রাখে। অবশ্যই এর স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ নেই বলে বিবিসির তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ এ ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট। শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়া যায় এমন জিনিস দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক যদি ঠিকমত পরা হয় তা শরীরের জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না। তাদের নির্দেশনা হল: "মেডিকেল মাস্ক যদি ঠিকমত পরা হয়, তাহলে দীর্ঘ সময় পরে থাকলেও তার থেকে কোন কার্বন ডাই অক্সাইড বিষক্রিয়া বা অক্সিজেন ঘাটতি হবে না।" সামাজিক মাধ্যমে এইসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে মাস্ক শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চেপে রাখে। এর সমর্থনে যদিও কোন তথ্য প্রমাণ বিবিসি পায়নি। সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ কিথ নিয়েল বরং বলছেন, "মাস্ক পরলে জীবাণু আপনার মুখ ও নাক দিয়ে শরীরে ঢুকবে না। আর জীবাণু শরীরে না ঢুকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ারও সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রয়োজন হবে না। তবে মাস্ক পরার অর্থ এই নয় যে মাস্ক আপনার শরীরে এই ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিচ্ছে।" বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্য শেয়ার করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি দাবি করছে তাদের নাম "ন্যাচারাল মেডিসিন ডেটাবেস" এবং তাদের অনুসারীর সংখ্যা ৭০ হাজার। আর একটি অ্যাকাউন্ট থেকে রুশ ভাষায় এর একটি সংস্করণ পোস্ট করে নানাধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। মাস্কের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাই চালানো হচ্ছে মিমের মাধ্যমে যেখানে মাস্ক নিয়ে চলছে ঠাট্টা মস্করা। বিবিসি বাংলায় পড়তে পারেন: এবার মাস্ক নিয়ে সুর পাল্টালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প মাস্ক পরা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন পরামর্শ মাস্ক পরে কি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়? ল্যাবে পুরো করোনা সুরক্ষা পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে নিয়ে মিম । টেকস্টে লেখা : ''ভাইরোলজিস্টরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে এমন পোশাকই পরেন। তবে আপনার মুখে কাপড় বাঁধলেও চলবে।'' ল্যাবে ভাইরোলজিস্টের দরকার সুরক্ষা পোশাক আর আপনার দরকার শুধু কাপড় বা রুমাল - ভাইরাল হওয়া উপরের এই মিমের একটি ভার্সান প্রথমদিকে পোস্ট করা হয়েছিল কিউ-অ্যানন নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে, যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়ার পুনর্বার পোস্ট করেছিলেন। তার পোস্টিংয়ে শেয়ার বা লাইক পড়েছিল এক লাখের ওপর। তবে মজার ব্যাপার হল আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসি করোনার বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে পরামর্শ দিয়েছে মুখ ঢাকার জন্য যে কোন কাপড় এমনকি রুমাল ব্যবহারেরও।। 'একজন ডাক্তারের স্বীকারোক্তি ' শিরোনামে ড্যারেল উলফের ভিডিওর স্ক্রিনশট 'ডাক্তারের স্বীকারোক্তি'র ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক-এ 'একজন ডাক্তারের স্বীকারোক্তি' নাম একটি ভিডিও ১৫ লক্ষ মানুষ দেখেছে। এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে ওই ডাক্তার স্বীকার করছেন করোনাভাইরাস আক্রান্তের হিসাব বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এত বিশাল হবার কারণ হল, যেই হাসপাতালে যাচ্ছে, তা ভাঙা পা নিয়ে হোক বা বুলেটের জখম নিয়ে হোক- "লিখে দেয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তি করোনা পজিটিভ"। যে ব্যক্তিকে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তার নাম ড্যারেল উলফ, তিনি থাকেন কানাডায়। তিনি বলেছেন তিনি "প্রাকৃতিক ওষুধের" চিকিৎসায় কাজ করেন। তার ভিডিও প্রথম পোস্ট করা হয় ফেসবুকে। সেখানে এর ভিউ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার। ভিডিওতে স্থানীয় একটি হাসপাতালের কথা বর্ণনা করা হয় এবং তিনি বলেন এই "তথ্য সরাসরি একজন ডাক্তারের দেয়া"। তিনি কোন্ হাসপাতালের কথা বলেছেন তা স্পষ্ট নয়। বিবিসি বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে কোন উত্তর পায়নি। টিকটকের যে অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় তাতে ভিডিওতে কে কথা বলছেন তা বলা হয়নি। যে হাজার হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখে মন্তব্য করেছেন তারা স্পষ্টতই ধরে নিয়েছেন আমেরিকার কোন হাসপাতাল সম্পর্কে এই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তবে আমেরিকা অথবা কানাডার কোন হাসপাতালে যে কোন রোগীকেই করোনা পজিটিভ বলে নথিভুক্ত করার কোন তথ্য বিবিসি পায়নি। দুটি দেশেই করোনা পজিটিভ রোগীর তথ্য নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন আছে। অন্য যে কোন রোগ বা আঘাত নিয়ে কেউ হাসপাতালে গেলে তাকে করোনা রোগী হিসাবে নথিভুক্ত করার স্বপক্ষে কোন নজির দুটি দেশের কোন হাসপাতালেই পাওয়া যায়নি। ইউটিউবের ভিডিও-র স্ক্রিনশট যেখানে বলা হচ্ছে এই মহামারি পরিকল্পিত। বিবিসির অনুসন্ধানের এর পক্ষে কোন "তথ্য প্রমাণ নেই"। 'গভীর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিও যা দেখেছে সাড়ে সাত লাখ মানুষ তাতে এই মহামারিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে "গণমাধ্যমের ব্যাপক বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা" এবং "রাজনৈতিক ভাঁওতা" হিসাবে। এই ভিডিওতে নানা ধরনের ভিত্তিহীন দাবি তুলে ধরা হয়েছে যেখানে আমেরিকায় নির্বাচনের বছরে একটা মহামারি তৈরি করার গভীর ষড়যন্ত্রের গল্প বলা হয়েছে। শুরুতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফুটেজ আর ধোঁয়ায় আছন্ন আকাশ দিয়ে একটা ভয়ার্ত আসন্ন দুর্যোগের আবহ তৈরি করা হয়েছে - অনেকটা ঘরে তৈরি নেটফ্লিক্স তথ্যচিত্রের ধাঁচে। ভিডিওতে মানুষকে বলা হচ্ছে "মাস্ক খুলে ফেলে দাও"। ভাষ্যকার বলছে ডেমোক্রাটিক রাজনীতিকরা ইচ্ছে করে মাস্ক পরিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে চাইছে, যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ে আর মহামারি নিয়ে তৈরি হয় বিশাল একটা আতঙ্ক। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বিবিসি রিয়ালিটি চেকের জ্যাক গুডম্যান, তাকে সহযোগিতা করেছেন অলগা রবিনসন এবংয় শায়ান সারদারিজাদেহ। | করোনা ভাইরাস: ফেস মাস্কের ভাল মন্দ নিয়ে আমেরিকায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সামাজিক মাধ্যম |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া দুই সিরিয়ান শরণার্থী। সাতটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যে সাতটি দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে শোনা যাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া এবং ইয়েমেন। এসব দেশের নাগরিকরা যখন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার আবেদন করবেন, তখন তাদের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে খুবই কম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখনই এসব দেশের মানুষের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া খুবই কঠিন। যে বিশটি দেশের মানুষের ভিসা আবেদন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখ্যান করে, তাদের মধ্যে রয়েছে সোমালিয়া আর সিরিয়া। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যুদ্ধ কবলিত দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসা দেয়ার হার খুব কম। সোমালিয়া, ইরাক এবং সিরিয়া পড়েছে এই দেশগুলোর তালিকায়। তবে আফগানিস্তানের নাগরিকদের ভিসা প্রত্যাহারের হার এর চেয়েও অনেক বেশি। ২০১৬ সেখান থেকে ৭৬ শতাংশ আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হয়। এর পাশপাশি অনেক মুসলিম দেশের নাগরিকদের আবার ভিসা পেতে মোটেই অসুবিধা হচ্ছে না। ২০১৬ সালে সৌদি আরব থেকে মাত্র চার শতাংশ ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। ২০১৫ সালে সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন প্রায় দেড় লাখ সৌদি। ওমান থেকে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে মাত্র দুই শতাংশ। তবে শুধু মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনই বেশি প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, এটি সবসময় বলা যাবে না। যেমন আজারবাইজান (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ) থেকে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় পনের শতাংশ। অন্যদিকে প্রতিবেশি জর্জিয়া (খ্রীষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ) থেকে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসা আবেদন প্রত্যাহারের হারও অনেক বেশি। ২০১৬ সালে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কিরিগজস্তানের নাগরিকদের ৫০ শতাংশের বেশি ভিসা পাননি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের নাগরিকদের ভিসা আবেদন প্রত্যাহারের হার কম। সেখানে ২৬ শতাংশ ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ২০১৬ সালে। পাকিস্তান থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয় ৪৬ শতাংশ আবেদন। অন্যদিকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ৬৩ শতাংশের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অব কনসুলার এফেয়ার্সের মুখপাত্র উইল কক্সকে বিবিসি জিজ্ঞাসা করেছিল ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে এই তারতম্য ব্যাখ্যা করতে। তিনি দাবি করছেন, প্রতিটি ব্যক্তির ভিসার আবেদন আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়। এখানে দেশের জন্য আলাদা ভিসা নীতি নেই। | যুক্তরাষ্ট্র কি মুসলিমদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করে |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | কিশোরী রাহাফ মোহাম্মেদ আল কুনুন সৌদি থেকে পালিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। তিনি জানিয়েছেন আর পেছনে ফিরতে চাননা। কারণ সেখানে শিক্ষা, বিয়ে, ভ্রমণ ও বিচারসহ যেকোন ক্ষেত্রে নারীদের পুরুষদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। আরো পড়তে পারেন: আশ্রয় চান ব্যাংককে আটকে পড়া সৌদি তরুণী সৌদি নারীদের গোপন ইন্টারনেট রেডিও স্টেশন 'ভোগ' ম্যাগাজিনে সৌদি রাজকুমারী: কেন এত বিতর্ক সৌদি নারীরা এখনও যে ৫টি কাজ করতে পারে না | সৌদি আরবে মেয়েদের যেসব কাজের জন্য পুরুষদের অনুমতির প্রয়োজন হয় |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | এ কে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার জন্য ছিলেন সুপরিচিতি। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সর্বভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফজলুল হক। তাঁর আপোষহীন ন্যায়নীতি ও অসামান্য বাকপটুতার কারণে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) নামে। সর্বভারতীয় রাজনীতির পাশাপাশি গ্রাম বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য সর্বপ্রথম তিনি একটি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। বরিশাল জেলায় বাকেরগঞ্জের বর্ধিষ্ণু গ্রাম সাতুরিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৩ সালের ২৬শে অক্টোবর। আইনজীবী কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ ও সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন তিনি। এ কে ফজলুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়ির পরিবেশে। বাড়িতেই তিনি আরবি, ফারসি ও বাংলা ভাষায় শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরে তিনি ভর্তি হন বরিশাল জেলা স্কুলে এবং সেখান থেকে ১৮৯০ সালে এন্ট্রাস পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। প্রখর মেধাসম্পন্ন ছাত্র ছিলেন ফজলুল হক। পুরনো কলকাতায় সেকালের প্রেসিডেন্সি কলেজ (১৯২৫) সে সময় প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ফজলুল হকের মেধায় তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি একই বছরে রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পরীক্ষা পাশ করেন, যা ছিল একটি বিরল দৃষ্টান্ত। ইংরাজি ভাষায় এমএ পাঠ শুরু করলেও পরে তিনি গণিতশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি নেন ১৮৯৬ সালে। কথিত আছে তিনি ইংরাজি ভাষায় এম.এ. পড়তে গেলে তাঁর এক সহপাঠী তাঁকে বলেছিলেন মুসলমান শিক্ষার্থীরা অঙ্ক পড়তে ভয় পায়। সে কারণেই কি তিনি ইংরাজিতে এম.এ. পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ওই সহপাঠীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাত্র ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে অঙ্কে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন ফজলুল হক। তিনি আইনেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন এবং কলকাতার খ্যাতনামা আইনজীবী স্যার আশুতোষ মুখার্জির অধীনে আইনের শিক্ষানবিশ হয়েছিলেন। দুবছর শিক্ষানবিশীর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। যদিও এক বছরের মাথায় পিতার মৃত্যুর পর তিনি ফিরে গিয়েছিলেন বরিশালে এবং সেখানে বরিশাল আদালতে যোগ দিয়েছিলেন। কলকাতা হাইকোর্ট যেখানে ফজলুল হক বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪০ বছর আইন প্র্যাকটিস করেছেন। আইন ব্যবসা ছেড়ে ফজলুল হক সরকারি চাকরি নিলেন ১৯০৬ সালে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ফজলুল হক ১৯১১ সালে। আবার তিনি ফিরে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টে আইনের পেশায়। সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক শ্রমিকদের বাস্তব অবস্থা দেখেছিলেন, প্রত্যক্ষ করেছিলেন তাদের ওপর জমিদার ও মহাজনদের নির্মম অত্যাচার। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী জীবনে দরিদ্র নিপীড়িত কৃষক সমাজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে তিনি প্রবর্তন করেছিলেন ঋণ সালিশী বোর্ড, প্রণয়ন করেছিলেন বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর এনিয়ে বাংলার জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়লে, ঢাকার চতুর্থ নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠন তৈরির কথা ভাবেন। তিনি ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স আহ্বান করেছিলেন। এই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ফজলুল হক। ১৯০৬ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স যার সূত্র ধরে জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। সেই অর্থে মুসলিম লীগের পথচলার শুরু থেকেই দলটির সঙ্গে ছিলেন তিনি। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি ১৯১৩ সালে এবং ১৯১৬ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত তিনি ছিলেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি। ওই একই সময়ে পাশাপাশি তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। দিল্লিতে ১৯১৮ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফজলুল হকই ছিলেন একমাত্র বাঙালি যিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। লক্ষ্ণৌ শহরে ১৯১৬ সালে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তিনি যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তা 'লক্ষ্ণৌ চুক্তি' নামে অভিহিত হয়। এই চুক্তির অন্যতম একজন প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন মি. হক। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রাদেশিক পর্যায়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়। ওই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। উনিশশ চব্বিশ সালে তিনি বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ১৯৩৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তিনিই ছিলেন এ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম বাঙালি মুসলমান। লন্ডনে ১৯৩১ সালে অনুষ্ঠিত ভারতীয় শাসনব্যবস্থা বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক। ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৩০ এবং ১৯৩২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পরপর বেশ কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের সভাপতিত্বে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত ১৯৩০-৩১ সালের প্রথম বৈঠকে কংগ্রেসের যোগদান প্রত্যাখান করেছিলেন মি. গান্ধী। দ্বিতীয় বৈঠকে অবশ্য যোগ দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু মুসলিম লীগ ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিল। ফজলুল হক ওই বৈঠকে বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষেও বক্তৃতা দিয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন পাবার পর ১৯৩৭ সালে সেখানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ভারতে প্রজা পার্টি নামে সামন্ততন্ত্র বিরোধী যে দল ছিল ফজলুল হক সেটির রূপান্তর ঘটান কৃষক-প্রজা পার্টি নামে রাজনৈতিক দলে। ওই নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে তাঁর দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ এবং নির্দলীয় সদস্যদের সঙ্গে জোট গঠন করেন মি. হক এবং এ. কে ফজলুল হক হন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশন। ২২ থেকে ২৪শে মার্চ তিনদিনের ওই অধিবেশনে এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম 'পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব' পেশ করেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক। বাংলার দরিদ্র কৃষকদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ফজলুল হক আইনী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব এবং উত্তরপশ্চিমের মুসলমান প্রধান অংশে 'স্বায়ত্তশাসিত পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠার দাবি সম্বলিত সেই প্রস্তাব গৃহীত ও পাশ হয় ওই অধিবেশনে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে 'লাহোর প্রস্তাব' ছিল একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা পরে 'পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে পরিচিত হয়। তাঁর ওই বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে পাঞ্জাববাসীরা তাঁকে উপাধি দিয়েছিল শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘ। তখন থেকে তিনি শেরে-বাংলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদের দীর্ঘ প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। এ সময়ে তিনি 'ঋণ সালিশী বোর্ড' গঠন করেন, যার ফলে দরিদ্র চাষীরা সুদখোর মহাজনের কবল থেকে রক্ষা পায়। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হয়ে যাবার পর ফজলুল হক ঢাকায় চলে যান এবং ১৯৫২ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে তিনি 'যুক্তফ্রন্ট' দলের নেতৃত্ব দিয়ে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত ও কার্যকর হবার পর তিনি স্বারষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে করাচি থেকে ঢাকা চলে যান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঢাকায় তিন নেতার মাজার- বাংলার স্বাধীনতা-পূর্ব তিন রাজনৈতিক নেতা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধি এই পদে তিনি ছিলেন সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। আটান্ন সালে পাকিস্তানের এক অভ্যূত্থানের পর তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৪০ সালে ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরে তাঁর প্রচেষ্টায় মুন্সিগঞ্জে প্রতিষ্ঠা হয় হরগঙ্গা কলেজ। তাঁর নিজের গ্রামেও তিনি একটি কলেজ এবং পাশাপাশি মাদ্রাসা ও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফজলুল হকের উদ্যেগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামিয়া কলেজ ও মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লেডি ব্র্যার্বোন কলেজ। এছাড়া তিনি মুসলমানদের শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। এ কে ফজলুল হকের জীবনাবসান হয় ঢাকায় ১৯৬২ সালের ২৭শে এপ্রিল। | সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে চতুর্থ স্থানে এ কে ফজলুল হক-অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | আপেল ফলটি পুষ্টিকর হলেও এর বিচি বিষাক্ত আপাত দৃষ্টিতে এসব খাবারের অনেকগুলোকেই নিরাপদ মনে হলেও বিশেষ কারণে বা বিশেষ অবস্থায় এগুলো বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে, হয়ে উঠতে পারে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার কোন কোন খাবার রয়েছে যা তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। আবার কোন কোন খাবারের কারণে হওয়া ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা না গেলেও তা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে। এসব খাবার সম্পর্কে বিবিসি বাংলা পুষ্টিবিদ ও খাদ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে। যেসব খাবার অবস্থাভেদে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, এরকম কয়েকটি খাবারের বর্ণনা তুলে ধরা হলো: জাপানের মতো অনেক দেশে পটকা মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার পটকা মাছ বাংলাদেশ, চীন, জাপান, কোরিয়া-সহ বেশ কিছু দেশের মানুষের কাছে পটকা মাছ বা পাফার ফিশ বেশ জনপ্রিয় একটি মাছ। কিন্তু এই মাছটি ঠিকভাবে প্রসেস করা সম্ভব না হলে সেটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এর শরীরে থাকে বিষাক্ত টিউরোটক্সিন নামক উপাদান, যা সায়ানাইডের তুলনায় বহুগুণ বেশি কার্যকর। পুষ্টিবিদ অধ্যাপক খালেদা ইসলাম বলছেন, এই মাছ খাওয়ার আগে দক্ষতার সঙ্গে মাছের শরীরের বিষাক্ত অংশটি আলাদা করে ফেলতে হবে। তি নি বলেন, এমনিতে মাছটি হয়তো ক্ষতিকর নয়, কিন্তু বিষাক্ত অংশটি কোনওভাবে মাছের শরীরে রয়ে গেলে আর তা মানুষের পাকস্থলীতে গেলে অল্পক্ষণের মধ্যে এটা মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে পারে - এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। প্রকৃতিতে মাশরুমের হাজার হাজার জাত রয়েছে মাশরুম বিশ্বের অনেক দেশেই মাশরুম একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। মাশরুম রক্তচাপ কমাতে, টিউমার কোষের বিরুদ্ধে, বহুমূত্র রোগীদের জন্য, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, বাত-ব্যথার মতো রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন। তবে প্রকৃতিতে মাশরুমের হাজার রকমের জাত রয়েছে এবং এগুলোর অনেকগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন শুধু উত্তর আমেরিকায়ই মাশরুমের ১০ হাজারের বেশি প্রজাতির রয়েছে। খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে এগুলোর ২০ শতাংশই মানুষকে অসুস্থ করে দিতে পারে, আর শতকরা এক ভাগ তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ মেরেও ফেলতে পারে। মাশরুমের নানা জাতের মধ্যে বাংলাদেশে ৮-১০টি জাতের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশেই পাওয়া যায় মাশরুমের এমন অনেক জাত, বিশেষ করে বুনো মাশরুম, অনেক সময় শরীরের জন্য বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলছেন, ''পরিচিত জাতের বাইরে অন্য মাশরুম, বিশেষ করে বুনো মাশরুম কখনোই খাওয়া উচিত নয়। কারণ মাশরুম শরীরের জন্য উপকারী হলেও সব মাশরুম উপকারী নয়। বরং অনেক মাশরুম মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।" তিনি আরও বলেন, "বিশেষ করে ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত বুনো মাশরুমে এক ধরণের ছত্রাক থাকে, যা লিভার-কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।'' বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: মিষ্টি কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? কোন ধরণের শর্করা কতটুকু খাওয়া উচিত? খাবার নিয়ে সাবধান হচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে জেনে নিন বিশ্বের কোন খাবারগুলো পরিবেশ বান্ধব খেসারির মতো ডাল শরীরের জন্য ভালো নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন খেসারি ডাল বাংলাদেশে মসুর ও মুগডালের পাশাপাশি অনেকের খাদ্য তালিকায় খেসারি ডালও থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডালে বোয়া (BOAA) নামের এক প্রকার অ্যালানাইন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকতে পারে, যা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরি করে। এই অ্যাসিড 'নিউরো-ল্যাথারিজম' বা স্নায়ুবিক পঙ্গুতা তৈরি করতে পারে। এই রোগের লক্ষণ অনেক সময় হঠাৎ করেই দেখা দেয়। এতে করে হাঁটতে গিয়ে অসুবিধা এবং অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া কিংবা পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পরে। পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বিবিসি বাংলাকে জানান, বেশিদিন ধরে খেসারির ডাল খেলে এই রোগ হতে পারে। আলুতে শেকড়ের জন্ম হলে সেখানে গ্লাইকোঅ্যালকালোইড নামের এক ধরণের উপাদানের তৈরি হয়, যা বিষাক্ত আলু আলুতে শেকড়ের জন্ম হলে সেখানে গ্লাইকোঅ্যালকালোইড নামের এক ধরণের উপাদান তৈরি হয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন যাবৎ আলু পড়ে থাকলে এই ধরণের উপাদানের জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের পাতায় বা কাণ্ডেও এই উপাদান থাকে। বিশেষ করে আলুর গায়ে শেকড় জন্মালে যে লাল রঙের গাদ তৈরি হয়, সেখানে এই উপাদান বেশি থাকে। বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই গ্লাইকোঅ্যালকালোইড শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ডায়ারিয়া, মাথাব্যথা, এমনকি মানুষ কোমায়ও চলে যেতে পারেন। বলা হয়ে থাকে, কেউ কোনভাবে তিন থেকে ছয় মিলিগ্রাম পরিমান এই উপাদান খেয়ে ফেললে মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া আলুতে অনেক সময় সবুজ রঙের এক ধরণের পদার্থ দেখা যায়। সেটা হলো কারসিনোজেনিক নামের একটা উপাদান, যার ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এ ধরণের আলু খাওয়া উচিত নয়। কাঁচা টমেটো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন টমেটো টমেটো গাছের পাতা এবং কাণ্ডে অ্যালকালাই থাকে, যা পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁচা টমেটোর ভেতর এই উপাদান থাকে বলে মনে করা হয়। পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলছেন, এই কারণে ভালো করে রান্না না করে কাঁচা টমেটো খাওয়া উচিত নয়। কারণ বেশি পরিমাণে কাঁচা টমেটো খেলে যে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। "কাঁচা টমেটো খেয়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।'' টমেটো গাছের পাতাও কোনভাবে খাওয়া উচিত নয় বলে জানান তিনি। কাজু বাদাম কাজু বাদামের দুইটি জাত রয়েছে - একটি মিষ্টি, অপরটি তিতকুটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও তেতো কাজুবাদামের ভেতর সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামের একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ তা শরীরে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। কাঁচা অবস্থায় তেতো কাজুবাদাম খাওয়া একেবারে উচিত নয়। বলা হয়, প্রতিটা তেতো কাজুবাদামের ভেতর ছয় মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে। কারো শরীরে ১০০ মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রবেশ করলে তা তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট হতে পারে। তিতা কাজুবাদামের ভেতর গ্লাইকোসাইড নামের একটি বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে আপেল আসলে ঠিক আপেল নয়, আপেলের বিচির ভেতর খানিকটা পরিমাণে সায়ানাইড থাকে। ফলে কারো শরীরের ভেতর যদি বেশি পরিমাণে আপেল বিচি বা বিচির নির্যাস প্রবেশ করে, তাহলে তা তাকে মেরে ফেলার মতো সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। আর সায়ানাইড হলো একটি মারাত্মক ধরণের বিষ। বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, "অনেক সময় অনেকে আপেলের জুস তৈরি করে খান। তখন যদি অনেকগুলো বিচি-সহ আপেলের জুস করা হয়, তাহলে সেই বিচির কারণে ওই জুসে মারাত্মক বিষ তৈরি হতে পারে।'' তবে বিচি বাদ দিলে আপেলের বাকি অংশে অনেক পুষ্টি রয়েছে। খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাস্তুরায়িত করা হয়নি এমন কাঁচা মধু শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে কাঁচা মধু মৌমাছির চাক ভাঙ্গা তাজা মধু সংগ্রহ করতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাস্তুরায়িত করা হয়নি এমন কাঁচা মধু শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ কাঁচা মধুর মধ্যে অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া এমন মধু খাওয়ার ফলে ঘোর ঘোর ভাব আসা, দুর্বল লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি করার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলছেন, কাঁচা মধুর ভেতর গ্রায়ানোটক্সিন নামের একটি উপাদান থাকে। এর এক চামচ পেটে গেলে হালকাভাবে এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বেশি খাওয়া হলে সেটার ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। তাই বিশেষজ্ঞরা কাঁচা মধু না খেয়ে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সেই মধুর ভেতর যেন মৌমাছির চাকের বা মৌমাছির কোন অংশ না থাকে। কাসাভার পাতা ও শিকড়ে অনেক বেশি পরিমাণে সায়ানাইড থাকে কাসাভা আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে এই খাবারটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশে কাসাভা এখনো ততোটা জনপ্রিয় নয়, তবে দেশের কোন কোন স্থানে অল্প পরিমাণে চাষাবাদ এবং এর খাওয়ার চল শুরু হয়েছে। ড. খালেদা ইসলাম বলছেন, কাসাভা যদি ঠিকমতো প্রক্রিয়াজাত করা না হয়, তাহলে সেটা স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন যে কাসাভার পাতা ও শিকড়ে অনেক বেশি পরিমাণে সায়ানাইড থাকে। এটি একটি বিষাক্ত উপাদান, যা মানুষের শরীরে গেলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মটরশুঁটি-শিমের বিচি বাংলাদেশে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। শিমের বিচি অবশ্য সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলছেন, ''মটরশুঁটি ও শিমের মধ্যে ফাইটোহেমাগ্লুটিনিন নামের একটা পদার্থ থাকে, যা অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ কারণে তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন যে রান্নার আগে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি অবশ্যই ১৫ মিনিটি ধরে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিয়ে আবারও রান্না করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক পুষ্টিকর খাবারের ভেতরেও এমন কিছু উপাদান থাকে, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর কামরাঙ্গা এটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। সাধারণ মানুষ এটি খেলে কোন সমস্যা নেই। তবে যাদের কিডনির বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই ফলটি ক্ষতিকারক বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা। কচু কচু বাংলাদেশে একটি সবজি এবং এর পাতা শাক হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলছেন, কচু গাছ যদি ছায়ায় জন্মে বা বড় হয়, তাহলে এর মধ্যে এমন একটি কম্পোনেন্ট তৈরি হয়, যা অনেকের জন্য অ্যালার্জি তৈরি করে। ফলে কচু খেলে তাদের চুলকানি হয়, গলা ফুলে যায়। এর কারণ হলো, কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট। অনেক সময় এতে করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক খালেদা ইসলাম বলছেন, কচু জাতীয় জিনিস খেতে হলে সঙ্গে লেবু খেতে হবে। সেটা কচুর অক্সালেটের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করে বলে তিনি জানান। ডিম খাওয়া ভাল কি-না, এ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের ডিম বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ জানান, ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো - কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়া, আধা সেদ্ধ ডিম খাওয়া, বা ডিমের এক পাশ পোঁচ করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর, বলছেন তিনি। ক্যানড বা প্রসেসড ফুড ব্যস্ততার কারণে এখন অনেকেই ক্যানে থাকা খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে পছন্দ করেন, কারণ এগুলো অনেকটা প্রস্তুত অবস্থায় থাকে বলে সহজেই খাওয়া যায়। তবে পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ জাতীয় ক্যানড খাবার মানসম্পন্ন না হলে বা তৈরি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে তা ডায়রিয়া, ক্যানসার ইত্যাদির মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া, শুটকি মাছ, শুকনো ফল ইত্যাদি খাবারে অনেক সময় সালফার ব্যবহার করা হয়, যা পেটে গেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ধুতরা ফুল ও ফল একসময় বাংলাদেশি বিভিন্ন কবিরাজি ওষুধে এই ফলের ব্যবহার হতো। কিন্তু এটি অত্যন্ত বিষাক্ত একটি ফল এবং এর পাতাও বিষাক্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এখন অবশ্য এই গাছটি অনেকটাই দুর্লভ হয়ে উঠেছে। | খাদ্য: বাংলাদেশে প্রচলিত যেসব খাবার ক্ষতিকর, এমনকি এগুলো খেয়ে আপনার মৃত্যুও হতে পারে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | জাসিন্দা আরডের্ন ক্রাইস্টচার্চে হতাহতদের পরিবারের মাঝে। এই হত্যাকাণ্ড কেবল নিউজিল্যান্ডকে ভারাক্রান্ত করেনি, সারা বিশ্বজুড়ে মানুষকে আলোড়িত করেছে। এটা সংকেত দিচ্ছে যে প্রায় সর্বত্রই কিছু একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বব্যাপী বিস্তারের কারণে স্ব-ঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ব্যক্তির হামলা চালিয়ে ৫০জন মুসুল্লিকে হত্যার ফুটেজ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে অনেকে। প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি অস্ট্রেলীয় নাগরিক এবং হামলার শিকার হতাহত ব্যক্তিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। যাদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, জর্ডান এবং সোমালিয়া আছে। তাই যখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বিবৃতি প্রদানের জন্য হাজির হলেন, তখন শুধু নিউজিল্যান্ডই তার বক্তব্য শুনতে উদগ্রীব ছিল তেমন নয়। সারা বিশ্বের মনোযোগ ছিল সেদিকে। আরো পড়ুন: বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদ প্রতিহত করার আহ্বান আরডার্নের যেভাবে অল্পের জন্য বেঁচেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এরদোয়ান কেন ক্রাইস্টচার্চ হামলার ভিডিও দেখাচ্ছেন অতি দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে এই বন্দুক হামলাকে তিনি "সন্ত্রাসী হামলা" বলে বর্ণনা করেন। বহু মানুষ মনে করেন যে, শ্বেতাঙ্গ কোনও ব্যক্তির দ্বারা এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে (এমনকি সেটা যদি রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাবেও হয়ে থাকে) কর্তৃপক্ষ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে অনীহা বা অনিচ্ছুক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু মিজ আরডের্ন এর দ্বারা দ্রুত, স্পষ্টভাষায় এই 'সন্ত্রাসী হামলা' বলে বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে সে বিষয়ে তার সচেতনতা এবং বিবেচনার বিষয়টি উঠে আসে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাসিন্দা আরর্ডেন যখন দায়িত্ব নেন তার বয়স ৩৭ বছর। তাকে ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয় যার নাম দেয়া হয়েছিল "জাসিন্ডাম্যানিয়া"। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের শোক এবং ভীতির প্রতি তার স্বীকৃতিও সেখানেই ফুরিয়ে যায়নি। ক্রাইস্টচার্চে ঘটনার শিকার পরিবারগুলোর স্বজনদের জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান তিনি। সেসময় মাথায় কালো রং এর স্কার্ফ পরেন তিনি যা তাদের প্রতি শ্রদ্ধারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি মানুষকে একতার বন্ধনে বেঁধেছেন এবং বলেছেন, "তারা আমাদের"। এর কয়েকদিন পরে প্রথমবারের মত পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছেন তিনি , সেখানে তিনি সংক্ষিপ্ত কিন্তু দৃঢ় ভাষায় বক্তব্য রাখেন যেখানে ইসলামী কায়দায় সবাইকে সম্ভাষণ জানান - "আসসালামু আলাইকুম" বলে। হামলার শিকার যারা কিন্তু তিনি এই সহানুভূতির সাথে বাস্তবসম্মত আইনী ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতির মিশ্রণ ঘটান । হামলার ঘটনার কয়েক ঘণ্টার পরেই তিনি দেশের অস্ত্র আইনে "১০ দিনের মধ্যে" কঠোর সংস্কার আনার বিষয়ে ঘোষণা দেন। বিবিসির সাথে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি নিউজিল্যান্ড এবং বিশ্ব থেকে বর্ণবাদ "বিতাড়িত" করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে "সীমানা দিয়ে ভাবলে আমাদের চলবে না"। 'জাসিন্ডাম্যানিয়া' মিজ আরডের্নের প্রথম বক্তব্যের সূত্র ধরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের পর্যবেক্ষকরা তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে সুজানে মুর লিখেছেন "মার্টিন লুথার কিং বলেছেন সত্যিকারের নেতারা ঐক্য খোঁজে না তারাই ঐক্য তৈরি করে, আরডের্ন ভিন্ন ধরনের ঐক্য তৈরি, কর্ম, অভিভাবকত্ব ও একতার প্রদর্শন করেছেন।" "সন্ত্রাসবাদ মানুষের মাঝে ভিন্নতাকে দেখে এবং বিনাশ ঘটায়। আরডের্ন ভিন্নতা দেখেছেন এবং তাকে সম্মান করতে চাইছেন, তাকে আলিঙ্গন করছেন এবং তার সাথে যুক্ত হতে চাইছেন।" ওয়াশিংটন পোস্টের ঈশান থারুর লিখেছেন যে, "আরডের্ন তার জাতির শোক এবং দুঃখ এবং তা নিরসনের প্রতিমুর্তি হয়ে উঠেছেন।" এবিসি অস্ট্রেলিয়া ওয়েবসাইটে অ্যানাবেল ক্র্যাব লেখেন, "একজন নেতার জন্য ভয়াবহ বাজে খবরের মুখোমুখি হওয়ার পর... মিজ আরডের্ন এখনো পর্যন্ত কোনও ভুল পদক্ষেপ নেননি।" গ্রেস ব্যাক এক বাক্যে ম্যারি ক্লেয়ার অস্ট্রেলিয়াতে যেটা লিখেছেন: "একজন নেতা এমনই হয়ে থাকেন"। এই ধরনের প্রশংসা বাখ্যা কেবল বিশ্লেষকদের কাছ থেকেই আসছে তেমনটি নয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোহাম্মদ ফয়সাল বলেছেন, মিজ আরডের্ন পাকিস্তানিদের 'হৃদয় জয়' করেছেন। মার্টিন লুথার কিং এর স্মৃতি সংরক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত মার্টিন কিং সেন্টার টুইটারে লিখেছে- "নিউজিল্যান্ডে একজন নেতার ভালবাসার পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনী"। তার কথা আলোড়িত করেছে নিউজিল্যান্ডের শোকাহত পরিবারের মানুষদের। কেন ক্রাইস্টচাচে মসজিদে হামলাকারীর নাম বলেননি জাসিন্ডা আরডার্ন? নিউজিল্যান্ডে বিবিসির সংবাদদাতা হিউয়েল গ্রিফিথ বলছেন, "মিজ আরডের্ন এর বক্তব্য-'আমরা এক, তারা আমাদের' ক্রাইস্টচার্চের হতাহত পরিবারের মানুষদের মুখ থেকে শুনেছি।" এমনকি বিরোধী ন্যাশনাল পার্টির জুডিথ কলিন্স প্রধানমন্ত্রী "অসাধারণ" বলে পার্লামেন্টে উল্লেখ করেছেন। নিউজিল্যান্ডে রাজনৈতিক বিশ্লেষক কলিন জেমস বিবিসি নিউজকে বলেছেন, মিজ আরডের্নের সাথে "বেশ কিছু সময়" কাটিয়ে তার মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী যেসমস্ত প্রশংসা বাক্য পাচ্ছেন তা বিস্ময়কর কিছু নয়। "তিনি দৃঢ়, গম্ভীর, ইতিবাচক এবং দায়িত্বশীল এবং যেটা আমি প্রায়ই বলে থাকি যে, তার শরীরে কোন বাজে কোষ নেই, কিন্তু আবার তাকে সহজে প্রভাবিত করা যায়না , এটা একটা ব্যতিক্রমী সমন্বয়।" ২০১৭ সালে মিজ আরডের্ন যখন প্রথম তার নির্বাচনী প্রচার কাজ শুরু করেন তাকে নিয়মিতভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোর সাথে তুলনা করা হতো । এর অর্থ - এই তিনজনই প্রগতিশীল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তরুণ। মিজ আরর্ডেন যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন তখন তার বয়স ৩৭ বছর। এবং তাকে ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয় যার নামকরণ করা হয় "জাসিন্ডাম্যানিয়া" এবং তিনি শেষ পর্যন্ত 'অসার পদার্থে পরিণত' হন কি-না তা নিয়ে তখন অনেকেই এমনও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। হামলার পর গত সপ্তাহে বক্তব্য দিচ্ছেন মিজ আরডের্ন। সুশীল অ্যারোন নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় লিখেছেন "তিনি ডানপন্থী শক্তিশালীদের ভিড়ে দৃঢ় প্রগতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসছেন...যার ক্যারিয়ারে গড়ে উঠেছে উদারতা-হীন, মুসলিম-বিদ্বেষী আড়ম্বরের মধ্যে।" এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুরোধের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় যেখানে মিজ আরডের্নকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, 'আমেরিকা কী ধরনের সহায়তা দিতে পারে?' উত্তরে তিনি বলেছেন, "সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সহমর্মিতা এবং ভালবাসা।" অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেশার অ্যানিংস হামলার ঘটনার জন্য অভিবাসনকে দায়ী করে মন্তব্য করার পর তাকে সহজ ভাষায় "নিন্দনীয়" বলে বর্ণনা করেন তিনি। হামলার পর দিন মিজ আরডের্নকে হতাহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া যে ছবি দেখা গেছে তাতে রাজনৈতিক সমসাময়িক নেতাদের আচরণের সাথে বৈপরীত্য তুলে ধরে। হতাহতদের সমবেদনা জানাতে ক্রাইস্টচার্চে জাসিন্দা আরডের্ন। আল জাজিরার সাংবাদিক সানা সাইদ বলেছেন, "২০১৭ সালে কুইবেক মসজিদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এতটা গভীর মানবিকতা দেখিয়েছেন বলে মনে পড়ছে না।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "২০১২ সালে উইসকনসিন-এর ওয়াক ক্রিক গুরুদুয়ারায় বন্দুক হামলার ঘটনার পর আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘটনার শিকার লোকজনের মাঝে দেখা করতে যাননি।" গতবছর একটি বন্দুক হামলার ঘটনায় বিধবা হওয়া একজন নারী এমনকি মিস্টার ট্রুডোকে অপ্রীতিকর কোন কিছুর অংশ বলে ফোনে মন্তব্য করেন। কারণ তিনি যথেষ্ট সমবেদনা প্রকাশ করেননি বলে ওই নারী মনে করেছেন। বুধবার ক্যাশমেয়ার হাই স্কুলে যান প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডের্ন। ঐ স্কুলের দু'জন বর্তমান শিক্ষার্থী ও একজন সাবেক শিক্ষার্থী ক্রাইস্টচার্চ হামলায় প্রাণ হারান। মিস্টার জেমস ব্যাখ্যা দিয়েছেন, "অনেকসময় লোকজন তাকে (মিজ আরডের্ন) দেখতে আকর্ষণীয় এবং সঠিক বক্তব্য দিয়েছেন বলে খারিজ করে দিতে পারেন।" "কিন্তু তার ক্ষেত্রে এর চেয়েও আরও বেশকিছু রয়েছে- তিনি গত কয়েকদিনে তা প্রদর্শন করেছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অল্প কিছু মানুষ এখনো তা ধরে রাখতে পেরেছে।" | ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা: জাসিন্ডা আরডের্ন ভালবাসা, সহানুভূতি দিয়ে 'হৃদয় জয়' করলেন যেভাবে |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা এর মধ্যে ৪০ ছাড়িয়ে গেছে প্রশ্ন উঠছে, এই দাঙ্গা কী শুধুই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আন্দোলনের পক্ষের আর বিপক্ষের সংঘর্ষ? না কি, অনেকে যেটাকে বলছেন মুসলমানদের চিহ্নিত করে নিধন করার পরিকল্পনা - সেরকম কিছু? তা ছাড়া, এই দাঙ্গা কি নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বৃহত্তর বিতর্ক থেকে দৃষ্টি ঘোরাবার প্রচেষ্টা ছিল? না কি হিন্দুত্ববাদী এবং তার বিরোধীদের মধ্যে ভাবধারার সংঘাত? এই প্রশ্নগুলোই ঘুরছে অনেকের মাথায়। কিন্তু দিল্লির এই দাঙ্গা কি হঠাৎ করেই শুরু হলো? না কি অনেকদিন থেকেই তৈরি হচ্ছিল এর পটভূমি? 'রাষ্ট্রের মদতে একটা পোগ্রোম' নাগরিকত্ব আইনের পক্ষ-বিপক্ষের মানুষরা বলছেন, মাঝ ডিসেম্বরে যেদিন থেকে শাহীনবাগে মূলত নারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেন, আর তারপরে যখন সেই প্রতিবাদের আদলেই কলকাতার পার্ক সার্কাস বা দেশের নানা জায়গায় শুরু হয় লাগাতার ধর্না - তখন থেকেই শুরু এই দাঙ্গার পটভূমি তৈরির। লেখক দেবদান চৌধুরী বলছিলেন, "এটা সংঘর্ষও না, দাঙ্গাও না। দিল্লিতে যা হয়েছে, তার সঠিক শব্দটা হল রাষ্ট্রের মদতে একটা পোগ্রোম অর্থাৎ সংঘবদ্ধ নির্যাতন, হত্যা, লুন্ঠন।" "পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মুসলমান নিধন চলেছে ওখানে। কোনও ভাবেই যেন আরেকটা শাহীনবাগ যাতে না তৈরি হতে পারে।" দিল্লির দাঙ্গার প্রতিবাদে কোলকাতায় বিক্ষোভ "শাহীনবাগ সারা দেশের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এভাবেও যে প্রতিবাদ জানানো যায়, সেটাই দেখিয়েছে শাহীনবাগ। গোটা দেশকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই ওরা ভয় পাচ্ছে শাহীনবাগকে, কারণ এতগুলো কন্ঠ এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে," - বলছিলেন কলকাতার বাসিন্দা সোহিনী গুপ্ত। নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদকে অবশ্য মুসলমানদের প্রতিবাদ হিসাবেই দেখাতে চেষ্টা করছে বিজেপি। দলের এক কর্মী সুমন দাসের কথায় উঠে এল সেই প্রসঙ্গ। "সি এ এ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনটা কারা করছে? যাদের রুজি রোজগার, অস্তিত্বের সঙ্কট, তারাই আছে এতে। এরা কেউ ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে তো ভারতে আসে নি - অনুপ্রবেশকারী এরা।" "তাই যদি এদের চিহ্নিত করে আলাদা করা হয়, তাহলে এদের রুজি রোজগারে টান পড়বে। সেই আশঙ্কা থেকেই এরা আন্দোলনে নেমেছে" - বলছিলেন মি. দাস। দিল্লির শাহীনবাগ হোক বা কলকাতার পার্ক সার্কাস অথবা উত্তরপ্রদেশ সহ ভারতের অন্যান্য যেসব শহরে মাঝ-ডিসেম্বর থেকে ধর্ণা চলছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে - আর কোনও প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে অশান্তি ছড়ানো হয়েছে - সেরকম খবরও পাওয়া যায় নি বিশেষ। তাহলে কেন দিল্লির জাফরাবাদের রাস্তায় যখন নারীরা নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নামলেন গত রবিবার, তখন থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলো? কেনই বা তা পরের দিনই পরিণত হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়? শাহীনবাগ কি একটা কারণ ছিল? তাই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি শাহীনবাগ বা শাহীনবাগের আদলে আর যেসব প্রতিবাদ-ধর্ণা মঞ্চ গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে বাধা দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য? এক বিজেপি কর্মী শান্তনু বেরা শাহীনবাগের প্রসঙ্গে বলছিলেন, "আমরা দিনের শেষে বাড়ি গিয়ে যখন খবর দেখি - একটাই এজেন্ডা -- শাহীনবাগ, শাহীনবাগ, শাহীনবাগ। মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েই সেটা ফেটে বেরিয়েছে।" দিল্লির দাঙ্গার পর অনেকে বলছেন, এর ফলে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদ আরও ছড়িয়ে পড়বে "শাহীনবাগ হতে হতেই দিল্লির ভোট হয়েছে - তার সুফল পেয়েছে দিল্লিতে যারা সরকার গড়েছে। এখন এরা ভেবে নিয়েছে সরকার যখন আগেও আমাদের সাপোর্ট করেছে, পরেও করবে। তারা যখন আপার হ্যান্ড পেয়েছে, তারা আরও অ্যাগ্রেসিভ হয়েছে।" দিল্লির সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার যে প্রসঙ্গ আনলেন মি. বেরা। সে সময়েই অভিযোগ উঠেছিল যে বিজেপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী প্রচারে বারে বারেই টার্গেট করছেন শাহীনবাগ আর নাগরিকত্ব বিল বিরোধী আন্দোলনকে। এ নিয়ে অভিযোগও জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে। দিল্লির নির্বাচন থেকেই উস্কানির শুরু কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র বলছিলেন, শাহীনবাগের মতো যেসব জায়গায় নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলন চলছে সেগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার উস্কানি দেওয়া হয়েছিল ওই নির্বাচনের সময় থেকেই। "উস্কানিটা শুরু হয়েছিল সেই দিল্লির নির্বাচনের সময় থেকেই। বিজেপির তাবড় নেতা-মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা কেউ বলেছেন, দেশ কি গাদ্দারোঁকো গোলি মারো, কেউ বলেছেন - এত জোরে ভোটযন্ত্রে বিজেপিকে ভোট দিন, যাতে শাহীনবাগে কারেন্ট লাগে। এটাকে যদি ভোটজয়ের কৌশল বলা হয়, তাহলে বলব খুবই খারাপ কৌশল ছিল এটা।" "আর নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জমা পড়েছিল ওইসব মন্তব্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই দুর্বল," বলছিলেন মি. মৈত্র। পার্ক সার্কাসে শুধু নয়, দিল্লির দাঙ্গাবিরোধী বিক্ষোভ কলকাতার নানা জায়গায় হচ্ছে কদিন ধরে। নানা অরাজনৈতিক সংগঠনের লোকেরা বা বামপন্থীরা যোগ দিচ্ছেন সেই সব বিক্ষোভে-মিছিলে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমেও চর্চা চলছে দিল্লি দাঙ্গার কারণ, উৎপত্তি, নিয়ে - বীভৎসতা নিয়ে। দাঙ্গাবিরোধী এরকমই একটা সভায় কথা হচ্ছিল রাফয় সিদ্দিকির সঙ্গে। কোলকাতায় দিল্লির দাঙ্গার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তিনি বলছিলেন, "প্রায় তিনমাস ধরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কোথাও তো শান্তি বিঘ্নিত হয় নি। তাহলে এখন কেন হলো? দিল্লিতে যা হলো, তা থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে ওরা শান্তি চায় না, দাঙ্গা চায়।" "বেছে বেছে ঘর, দোকান, মসজিদ, মাজার লক্ষ্য করে আক্রমণ হয়েছে। এরা চেয়েছে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধুক" - বলছিলেন মি. সিদ্দিকি। পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন যে দ্রুততার সঙ্গে দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দাঙ্গা ছড়িয়েছে, আর তার যা সব ভিডিও এবং প্রতিবেদন সামাজিক ও গণমাধ্যমগুলিতে দেখা গেছে, তাতে প্রথমদিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি হাইকোর্টও, যদিও সেই বিচারপতিকে একদিনের মধ্যেই বদলি করে দেয়া হয়। দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক নন্দিতা রায়ও উত্তরপূর্ব দিল্লির এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার জন্য প্রশাসন এবং পুলিশকেই দায়ী করছিলেন। ঘটনাচক্রে দিল্লির পুলিশ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন - যে দপ্তরের মন্ত্রী অমিত শাহ। নন্দিতা রায়ের কথায়, "আমি তো বলব এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক ব্যর্থতা। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত ছিল, যে উত্তেজনা যখন শুরু হল, তখন কোনও ব্যবস্থাই নেয় নি। গোয়েন্দারা কী করছিলেন? তাদের কাছে তো খবর থাকার কথা ছিল যে কারা কোথায় ধর্ণা আন্দোলনের বসতে চলেছেন।" "এই যে লাফিয়ে লাফিয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বহু মানুষ আহত, এর দায় তো পুলিশ প্রশাসনেরই" - বলেন তিনি। গুজরাতের দাঙ্গার সাথে মিল? পুলিশ প্রশাসনের প্রথমেই দাঙ্গা থামাতে উদ্যোগ না নেওয়া এর আগেও একবার চোখে পড়েছে মানুষের -- সালটা ছিল ২০০২, স্থান গুজরাত - তখন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। "ওই সেনা অফিসার লিখেছিলেন যে আহমেদাবাদে তিনি বাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। রাজ্য সরকারের কথা ছিল তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার। সেই গাড়ির অপেক্ষা করতে করতেই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।" দাঙ্গায় বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লির একটি এলাকা "শেষমেশ তিনি গভীর রাতে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতও করেছিলেন। এ সবই তার লেখা বইটিতে আছে। বইটিতে যে অসত্য লেখা হয়েছে, তা বলা যাবে না, কারণ বইটি বিক্রি হয়, নিষিদ্ধ করা তো হয় নি," বলছিলেন শুভাশিস মৈত্র। ২০০২-এর গুজরাত আর ২০২০-র দিল্লি -- দুই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মিল পাচ্ছে অনেক সংবাদ মাধ্যমও। সেইরকম শিরোনামও করা হচ্ছে অনেক পত্রিকায়। তবে দিল্লির দাঙ্গায় বহু প্রাণহানি এবং সম্পত্তিহানি হওয়া সত্ত্বেও এর একটা ইতিবাচক দিক দেখছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকার দেবাশিস ভট্টাচার্য। প্রতিবাদ কি আরো বাড়বে? তিনি বলছিলেন, "শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপরে হামলা প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেবে, প্রতিবাদের স্থান আরও বেড়ে যাবে বলেই আমার ধারণা।" দিল্লির উত্তরপূর্বে যখন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে দাঙ্গার বীভৎসতার ছবি আর প্রতিবেদন, তার মধ্যেই চর্চা হচ্ছে দাঙ্গার ক্ষত কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে, তা নিয়েও। কেউ একদিকে মনে করছেন, এর ফলে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদ আরও ছড়িয়ে পড়বে। উল্টোদিকে নিহতদের মধ্যে কতজন কোন ধর্মের - সেই খোঁজেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন কেউ কেউ। তা থেকেই অনেকের আশঙ্কা, কে হিন্দু, কে মুসলমান বা কে জাতীয়তাবাদী আর কে দেশবিরোধী - এই বিতর্ক বোধহয় এখনই থামবে না। উল্টো আরও বাড়তেই থাকবে। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: করোনাভাইরাস কিভাবে ঠেকাতে পারে ব্যস্ত শহরগুলো দিল্লিতে যেভাবে নড়ে গেছে হিন্দু-মুসলিম বিশ্বাসের ভিত তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে 'সর্বাত্মক যুদ্ধের আশংকা' | দিল্লির দাঙ্গার মূলে কি নাগরিকত্ব আইন, নাকি সাম্প্রদায়িক হিংসা? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | পাকিস্তান সরকার নিরাপদ পরিবেশ ফিরে আসার দাবি করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তা মানতে রাজি নন পাকিস্তানে তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের কারণে নিরাপদ পরিবেশ ফিরে এসেছে বলে দেশটির সরকার দাবি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, পাকিস্তান সরকার জঙ্গি তৎপরতা এবং সন্ত্রাস নির্মূলে কোন ভূমিকাই রাখছে না। নয়বছর আগে শ্রীলংকার খেলোয়াড়দের বাস লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৮ জন। বাসের চালক গুলিবিদ্ধ হলেও তিনি বাসটি চালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। সেখানেই এবার আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। আর তা নিয়ে লোকজনের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ। স্বাগতিক দেশের বিরুদ্ধে লড়ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের ওপর জঙ্গি হামলার পর এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে মাটিতে আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান যে এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় লাহোরের জমজমাট এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম দেখে। এছাড়া, গত সপ্তাহেই সোয়াত উপত্যকায় নিজ বাড়ি ঘুরে গেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসূফজাই। এই শহরেই পাঁচ বছর আগে তালেবান হামলার শিকার হয়েছিলেন কিশোরী মালালা। ক্রিকেট ম্যাচ এবং মালালার আগমন দুটি ঘটনাই পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের ইঙ্গিত দেয়। সরকারও বলছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জঙ্গি তালেবান গোষ্ঠীগুলোর অনেককে হত্যা করেছে। অথবা এসব গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যকে পালাতে বাধ্য করেছে। আর সে কারণে এই পরিবর্তন এসেছে। তবে পাকিস্তানে নিরাপত্তার পরিবেশ নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণে ছিল ক্ষোভের সুর। তার মতে, পাকিস্তান সরকার সরকার জঙ্গি তৎপরতা বা সন্ত্রাস নির্মূলে কোন ভূমিকাই রাখছে না। পাঁচ বছর আগে তালেবান হামলার শিকার হওয়া কিশোরী মালালা ইউসূফজাই গত সপ্তাহেই সোয়াত উপত্যকায় নিজ বাড়ি ঘুরে গেছেন। "পাকিস্তানকে আমরা সন্ত্রাস নির্মূলে কোটি কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছি। অথচ তারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। অবশ্যই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে হবে।" তবে ট্রাম্পের এমন দাবির বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, চার বছর ধরে তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে সেনা অভিযানে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। বিদেশী সাংবাদিকদের পক্ষে মাঠ পর্যায়ের এসব তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলের একজন সাংবাদিক রহিম মওলা ইউসূফজাই মনে করেন, পরিস্থিতি বদলেছে। "হাক্কানি নেটওয়ার্ক, তালেবানের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এ অঞ্চলে সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে তারা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। আগে তাদের নেতৃত্ব মূলত এখান থেকেই পরিচালিত হতো। তবে এখন তারা আর আগের মতো সংগঠিত নেই।" সীমান্ত অঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, সেনা অভিযানের কারণে এখন পর্যন্ত সেখানকার ৯০ হাজার বেসামরিক নাগরিক বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ভিড়ে জঙ্গি নেতারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নিতে পারে। এই ধারণার ওপর ভর করে পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে ড্রোন নিয়ে হামলা চালাতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এতে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানান মধ্যপ্রাচ্য ইতিহাস বিষয়ক মার্কিন অধ্যাপক লরেন্স ডেভিডসন। "মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি নেতাদের এক এক করে হত্যা করা হচ্ছে। তবে এখানে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যমে এগুলো সেভাবে প্রকাশ পায়না।" এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই দেশের অরক্ষিত সীমান্ত পয়েন্টগুলো। আড়াই হাজার কিলোমিটারের এই সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ কঠিন হলেও কাজ করতে শুরু করেছে পাকিস্তান সরকার। সাংবাদিক ইউসুফজাই জানিয়েছেন, সীমান্ত নির্মাণ করতে গিয়েও দেশটির সেনাবাহিনী হামলার শিকার হয়েছে। | পাকিস্তান কি এখন নিরাপদ পরিবেশ ফিরে পেয়েছে? |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | চলতি বছরের এপ্রিল মাসে জার্মানির আমরাম সমুদ্রতীরে এক নারী এ বোতলটি খুঁজে পান। গবেষকরা ধারণা করছেন, ১৯০৪ থেকে ১৯০৬ সালের মাঝামাঝি কোনও এক সময় বোতলটি উত্তর মহাসাগরে ছোঁড়া হয়েছিল। পোস্টকার্ডে বলা হয়েছে বোতলটি যের যুক্তরাজ্যের 'মেরিন বায়োলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন' এর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। জর্জ পার্কার বিডার নামে একজন গবেষক এ বোতলগুলো নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমুদ্রের ঢেউয়ের গতিবিধি নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে তারা প্রায় এক হাজার বোতল সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। জর্জ পার্কার বিডার নামে একজন গবেষক এ বোতলগুলো নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন। প্রতিটি বোতলে একটি করে পোস্টকার্ড ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পোস্টকার্ডে লেখা ছিল, বোতল ফেরত দেয়ার বিনিময়ে প্রত্যেককে এক শিলিং করে দেয়া হবে। জার্মানির ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ম্যারিয়ান উইঙ্কলেরকে বোতলটির জন্য অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি পুরনো আমলের শিলিং দেয়া হয়েছে। জার্মানীর এক দ্বীপে ছুটি কাটানোর সময় সমুদ্রতীরে বোতলটি খুঁজে পান ম্যারিয়ান উইঙ্কলের। | ভাসমান বোতলে পাওয়া গেলো শত বছরের পুরনো চিঠি |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | ২০০০ সালের ১০ই নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বে ২০০০ সালের ১০ই নভেম্বর বাংলাদেশ দল ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি খেলতে মাঠে নামে। ক্রিকেটে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর খেলা ওই প্রথম ম্যাচটি বাংলাদেশ অবশ্য হেরেছিল বিরাট ব্যবধানেই - ৯ উইকেটে, আর তা চার দিনের মধ্যেই, অর্থাৎ খেলার আরও একটি দিন বাকী ছিল। এরপর গত ২০ বছরে বাংলাদেশ মোট টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ১১৯টি, আর তাতে পরাজয়ের পাল্লা বেশ ভারী। এই সময়ে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ১৪টি টেস্টে। আর হেরেছে ৮৯টি টেস্টে, ড্র করেছে ১৬টি টেস্ট ম্যাচ। অর্থাৎ মোটাদাগে বলা যায়, মোট খেলা টেস্টের ১০ ভাগের এক ভাগের মতো ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, এক ভাগ ড্র হয়েছে এবং বাকি আট ভাগ টেস্টেই বাংলাদেশ হেরেছে। এই ৮৯ টেস্টে বাংলাদেশ শুধু হারেনি, এর মধ্যে ৪৩টি টেস্টেই জাতীয় দল হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। অর্থাৎ ৪৩ বার প্রতিপক্ষ এক ইনিংসে যত রান তুলেছে, সেই রান বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দুই ইনিংস মিলিয়েও তুলতে পারেনি। এই ৪৩ বারের মধ্যে আবার প্রায় ১২ বার প্রতিপক্ষের এক ইনিংসের রানের চেয়েও ২০০ বা তার কাছাকাছি রানের ঘাটতি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দুই ইনিংসের রানে, অর্থাৎ ইনিংস ব্যবধানের হারগুলো ছিল এক কথায় হতাশাজনক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শুরুর ২০ বছরে কেবল বাংলাদেশই কি এতটা খারাপ পারফরম্যান্স করেছে, না-কি এক্ষেত্রে সঙ্গী-সাথীও কেউ আছে? কেমন ছিল অন্য দলগুলোর ফলাফল জিম্বাবুয়ে গত বিশ বছরে বাংলাদেশের কাছাকাছি মানের টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ে একে অপরের সাথে ১৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে - যার মধ্যে দুই দল সাতটি করে জিতেছে, আর তিনটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। ১৯৯২ সালে টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করা জিম্বাবুয়ে ২০১২ সাল, অর্থাৎ প্রথম ২০ বছরে ৮৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৯টিতে জয় পায়। এর মধ্যে ২৬টি টেস্টে ড্র করেছে জিম্বাবুয়ে, হেরেছে ৫২টি ম্যাচে। এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম ২০ বছরে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের চেয়ে কম টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে, আর জিতেছেও কম ম্যাচে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম বিশ বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অন্যতম খারাপ টেস্ট দল শ্রীলঙ্কা শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৯৮২ সালে। টেস্ট ক্রিকেটে তাদের ২০ বছর পূর্ণ হয় ২০০২ সালে। এই সময়ে ১২৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কা ৩২টিতে জয় পায়। আর হারে ৫১টি টেস্টে, ড্র করে ৪৬টি টেস্ট ম্যাচ। পাঁচ-দিনের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ২০ বার, যার মধ্যে ১টি টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশ ও ৩টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। বাকি ১৬টিতে শ্রীলঙ্কা জয় পেয়েছে। বাংলাদেশ নিজেদের ১০০তম টেস্ট ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একমাত্র জয়টি পায়। পাকিস্তান পাকিস্তানের সাথে এখন পর্যন্ত কোনো টেস্ট ম্যাচে জয় পায়নি বাংলাদেশ। ১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে ১০টিতে জয় পেয়েছে। ১টি মাত্র টেস্ট ড্র হয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে পাকিস্তান। প্রথম ১২০টি টেস্ট খেলতে পাকিস্তান সময় নেয় প্রায় ৩০ বছর। এই সময়ে তারা জয় পায় ২৩টি টেস্ট ম্যাচে, হারে ৩২টি ম্যাচে, আর ড্র করে ৬৫টি টেস্ট ম্যাচে। ভারত ১৯৩২ সালে টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করে ভারত, আর তাদের প্রথম ১২০টি টেস্ট খেলতে সময় লাগে প্রায় ৩০ বছর। এই সময়ে ভারত ১৬টি টেস্ট ম্যাচে জয় পায়, হারে ৪৯টিতে, আর ৫৬টি টেস্ট ড্র করতে সমর্থ হয়। ভারতের সাথে বাংলাদেশ এখনও কোন টেস্ট ম্যাচে জয় পায়নি। দুই দেশের অনুষ্ঠিত ১১টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ভারত ৯টিতে জয় পেয়েছে, ২টি টেস্ট ড্র হয়েছে। আরো পড়তে পারেনঃ টেস্ট ক্রিকেট দল থেকে মাহমুদু্ল্লাহ বাদ পড়লেন যে কারণে আড়াই দিনে টেস্ট হার, কোহলি-বুমরাদের কী হলো ১১৭ টেস্টের ৪২টিতেই বাংলাদেশের ইনিংস পরাজয় ভারতের পেসারদের বাউন্স সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিউজিল্যান্ড নিউজিল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করে ১৯৩০ সালে। খেলা শুরুর প্রায় ২৬ বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে নিউজিল্যান্ড প্রথমবারের মতো কোনো টেস্ট ম্যাচে জয় পায়। কিন্তু শুরুর সেই খারাপের পর থেকে ক্রমশ নিউজিল্যান্ড ক্রমশ তাদের অবস্থান শক্ত করে এবং ধীরে ধীরে বিশ্ব ক্রিকেটে সমীহ করার মতো একটি টেস্ট দল হয়ে ওঠে। এই পরিসংখ্যানে হয়তো এটা বোঝা যাবে - এখন পর্যন্ত ৪৪২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১০১টিতে জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। হেরেছে ১৭৫টিতে, আর ড্র করেছে ১৬৬টি ম্যাচ। এই মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেটের র্যাংকিংয়ে ২য় স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ১২০টি টেস্ট ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছিল মাত্র ৯টি টেস্টে। আর ওই সময়ে হারে ৫৫টি টেস্টে, ড্র করে ৫৬টি ম্যাচ। নিউজিল্যান্ডের সাথেও বাংলাদেশ এখনও কোন টেস্ট ম্যাচে জয় পায়নি। বাংলাদেশের সাথে এখন পর্যন্ত খেলা ১৫টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে নিউজিল্যান্ড ১২টিতে জয় পেয়েছে, ৩টি টেস্ট ড্র হয়েছে। আইসিসি'র সর্বশেষ হালনাগাদ হওয়া টেস্ট র্যাঙ্কিং ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরনো টেস্ট টিমগুলোর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে বাংলাদেশের রেকর্ড তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত এক যুগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ঠিক ততটা জোর দেয়নি, যতটা দিয়েছে ছোট দৈর্ঘ্যের ম্যাচের দিকে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ খর্ব শক্তির এক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো টেস্টে জয় পায়। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল দলের ক্রিকেটাররা বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে ধর্মঘটে চলে গিয়েছিল। এরপরে অবশ্য ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ একটি দুই-ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে। ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এবং বাংলাদেশ একে অপরের বিপক্ষে মোট ১৬টি টেস্ট খেলেছে - এর মধ্যে ৪টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, ১০টি ম্যাচে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আর ২টি টেস্ট ম্যাচ ড্র হয়েছে। ১৯২৮ সালে টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১২০তম টেস্ট খেলে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রথম খেলা ১২০টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৪২টি ম্যাচেই জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩৮টি ম্যাচে হেরে যায় এবং ৩৯টি ম্যাচ ড্র হয়। টেস্ট ক্রিকেটের দলগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের একটি করে জয় আছে ২০১৭ ও ২০১৬ সালে। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটের গোড়াপত্তন করা দু'টি দল। টেস্ট ক্রিকেটের শুরু সেই ১৮৭৭ সালে। গোড়ায় এক দশকেরও বেশি সময়, অর্থাৎ ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড নিজেদের মধ্যেই কেবল টেস্ট ক্রিকেট খেলতো। ১৮৮৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ক্রিকেট খেলা শুরু করে, আর ১৬-১৭ বছরের মধ্যেই তারা ইংল্যান্ডকে হারায় নিজেদের ১২তম টেস্টে এসে। তবে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম পাঁচ দশকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া একে অপরের সাথে ১১৪টি ম্যাচ খেলে - এগুলোর মধ্যে ৪৭টি ম্যাচে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া, ৪২টি ম্যাচে জয় পায় ইংল্যান্ড, আর তাদের ২৫টি ম্যাচ ড্র হয়। অর্থাৎ এই বিগ টু'র কোনো দলই সেই সময় বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকেনি। নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের তুলনায় শুরুর দিকে টেস্ট ক্রিকেটে কিছুটা বাজে অবস্থানে ছিল, কিন্তু কঠিন সময় পার করার পর নিউজিল্যান্ডকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ২০ বছরে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড তো বটেই, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড - কোনো দলের সাথেই সুবিধা করে উঠতে পারেনি টেস্ট ক্রিকেটে। জিম্বাবুয়ের সাথে দাপুটে কিছু পারফরম্যান্স থাকলেও এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যানের সমতায় রয়েছে দুই দল। ২০১৮ সালেও জিম্বাবুয়ের কাছে নিজেদের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। আর সবচেয়ে করুন ছিল আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলার ফলাফল - ২০১৯ সালে সদ্য টেস্টে স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের সাথে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটিতে হেরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের এই অবস্থা কেন? টেস্টে ফাস্ট বোলার নেই বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত যারা টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন, তাদের তালিকায় প্রথম চারজনই স্পিনার। এই চারজেনর পরেই আসে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নাম, যিনি ২০০৯ সালের পর আর টেস্ট ক্রিকেট খেলেননি। মাশরাফী ৩৬টি টেস্ট ম্যাচে ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের হয়ে গত ১০ বছরে কোনো পেস বোলারই ৭৮টি উইকেট পাননি। মাশরাফীই এখনও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারী পেস বোলার। ক্রিকেটারদের সাথে বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়মিত ২০২০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ চারশো'র বেশি রান তুলেছিল এক ইনিংসে। এর আগে টানা ১০ ইনিংসের একটিতেও বাংলাদেশ কখনো ২৫০ ছুঁতে পারেনি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের মাটিতে আফগানিস্তানের সাথে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মাঠে টানা ৪টি টেস্ট ম্যাচে হেরেছে। এই চারটি টেস্টের মধ্যে তিনটিতে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ, আর আফগানিস্তানের সাথে হেরেছে ২২৪ রানে। কোনো ইনিংসেই বাংলাদেশ ২৩৩-এর বেশি রানই করতে পারেনি। সামগ্রিক কারণ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং - এই তিন বিভাগেই দুর্বলতা বেশ চোখে পড়ার মতো। একে ধৈর্য ধরে ব্যাট করতে না পারা, তার ওপর যখন উইকেটে থাকার প্রয়োজন তখন এমন শট খেলে আউট হওয়া, যেটা দেখে মনে হবে তখন বোধহয় বেশ দ্রুত রান তোলা জরুরি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টেস্ট ক্রিকেটে খুব কমই পুরো সেশন কোনো উইকেট না হারিয়ে ক্রিজে কাটিয়েছেন। আরও দেখা গেছে যে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কোনো নির্দিষ্ট সেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগে কিংবা দিনের একদম শেষ মুহূর্তে উইকেট খুইয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। যদিও তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম বা সাকিব আল হাসানের মতো খেলোয়াড়রা মাঝেমধ্যে টেস্টে ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা ঢেকে দেন কিছু ইনিংস খেলে, বোলারদের মধ্যে অবশ্য সবাই মিলে প্রতিপক্ষের ২০টি উইকেট তুলে নেওয়ার মতো আগ্রাসী মনোভাব খুব কমই দেখা যায়। দেশের মাটিতে কিছু টেস্টে বাংলাদেশ স্পিন বোলিং দিয়ে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের ২০ উইকেট নিয়েছে কখনও কখনও, কিন্তু ঘরের বাইরে এমনটা খুব কমই দেখা গেছে। আর তাই, বাংলাদেশ শেষবার দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর এক দশক পেরিয়ে গেছে। সেই ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিকাংশ ক্রিকেটার ধর্মঘটে যাওয়ার পর একটি দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের সঙ্গে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল। | টেস্ট ক্রিকেটের দুই দশক: বাংলাদেশ কি শুরুর ২০ বছরে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বাজে টেস্ট দল? |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | উষসী চক্রবর্তী সরস্বতী পুজো করছেন কলকাতার এক কলেজ ছাত্রী এবার তার বাড়িতে সরস্বতী পুজো করে সেই ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছেন। তার সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে পুজোর দিন তিনি ঋতুমতী ছিলেন। ফেসবুকে পুজোর ছবি এবং নিজের শারীরিক অবস্থার কথা ঘোষণা করার পর থেকেই তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই যেমন মন্তব্য করছেন যে অত্যন্ত সাহসী এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি, তেমনই বদনামও করা হচ্ছে তাকে। উষসী চক্রবর্তী নামের ২৩ বছর বয়সী ওই ছাত্রীকে নেট নাগরিকদের যে একাংশ 'ট্রল' করছেন, তাদের বক্তব্য দুটি - এক, তিনি নারী হয়ে কী করে পুজো করলেন। আর দ্বিতীয়ত, রজঃস্বলা অবস্থায় পুজো করা তো ঘোর পাপ, একেবারে অনর্থ হয়ে যাবে, এমন কি সুনামি বা ভূমিকম্পও হয়ে যেতে পারে এই অনাচারের জন্য। শাস্ত্র বিশারদ নব কুমার ভট্টাচার্য বলছেন, "কে বলেছে মেয়েরা পুজো করতে পারবে না? এটা একেবারেই শাস্ত্রসম্মত। কিন্তু সেটা নিজের বাড়ির পুজো হতে হবে।" দুদিন ধরে 'ট্রলড' হওয়ার পরে মিস চক্রবর্তী ফেসবুকে একটু বক্রোক্তি করেই লিখেছেন যে তিনি ওইসব ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দায় নিয়ে নিচ্ছেন! উষসী চক্রবর্তী মিস চক্রবর্তী বলছেন, "ভেবেচিন্তেই এই প্রথা ভেঙ্গেছি। পিরিয়ড হয়েছে এই কথাটা বলতে আমাকে যেন লজ্জা না পেতে হয়, স্যানিটারি প্যাড যেন লুকিয়ে কিনতে না হয় বা জামার পিছনে রক্তের দাগ লেগে গেলে যেন আমাকে লজ্জায় মুখ লুকোতে না হয়। কেন আমাকে কাগজের মোড়কে বা কালো প্লাস্টিকে মুড়ে স্যানিটারি প্যাড কিনতে হবে!" "এই কথাগুলো আমার এবং আমার পরের প্রজন্মের মেয়েদের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি বলেই প্রথাটা ভেঙ্গেছি। যে কথাটা মেয়েদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বুঝিয়ে আসা হয়েছে, সেটা যে ভুল, সেটাই বলতে চেয়েছি জোর গলায়," বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন মিস চক্রবর্তী। কেন ভাঙ্গলেন দীর্ঘদিনের এই বিশ্বাস? "ঋতুমতী হওয়ার মতো একটা স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থায় মেয়েরা অশুচি হয়ে যায় বলে পুজো করতে পারবে না, সেটা ঘোর পাপ! অথচ যে পুরুষ পুরোহিত পুজো করছেন, তিনি যদি ধর্ষক হন তবুও সেই পুজো শুদ্ধ হয়ে গেল?" মন্তব্য উষসী চক্রবর্তীর। তিনি বলছিলেন, "আমি এই শুচি অশুচির নিয়ম মানবই না। মন থেকে যদি কেউ শুদ্ধ হয়, তার শুচিতা থাকে, তাহলে আর কোনও কিছুতেই সে অশুচি হয় না - এটাই আমার বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে কোন পুরাণ, কোন শাস্ত্রে এটা লেখা আছে আমাকে দেখাও, তবেই মানব। আমি ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, তাই বাড়িতে বহু শাস্ত্রের বইপত্র আছে। আমাকে কেউ দেখাতে পারে নি, তাই পুজো করেছি।" সরস্বতী পুজোয় মেয়ের প্রথা ভাঙ্গা দেখে মিস চক্রবর্তীর বাবা ঠিক করেছেন যে মেয়েকে এবার অন্যান্য পুজো পদ্ধতিও নিজে হাতে শিখিয়ে দেবেন। শুধু বাবা নয়, ঋতুমতী অবস্থায় নিজে পুজো করার ব্যাপারে উষসী চক্রবর্তী পাশে পেয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের এবং নিজের মাকে। 'পিরিয়ড'-এর সময়টা অশুচি - এই ধারণা পাল্টানোয় মেয়েরা পাশে পাচ্ছে মায়েদের "আমার ছাত্রীদের অনেকেই এখন ঋতুমতী অবস্থাতেও পুজোর অঞ্জলি দেয় এবং সেটা তারা করছে সবাইকে জানিয়েই। রোহিনী ধর্মপাল ( বাঁ দিক থেকে প্রথম) সুন্দরবনের পিছিয়ে থাকা অঞ্চল থেকে আসা এই মেয়েগুলি সেই সাহসটা দেখাচ্ছে, আর এ ব্যাপারে তারা নিজেদের মায়েদের পাশে পাচ্ছে," বলছিলেন রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যাভবন এর শিক্ষিকা রোহিনী ধর্মপাল। কলেজ শিক্ষিকা মিসেস ধর্মপালের মা গৌরী ধর্মপাল প্রথা ভেঙ্গে প্রথম নারী পুরোহিত হিসাবে বিয়ে দিতে শুরু করেন এবং সেই বিয়ের পদ্ধতিও প্রচলিত হিন্দু বিবাহ পদ্ধতির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। "ছাত্রীরা আমাকে বলে যে তাদের মায়েরা হয়তো এই প্রথাটা ভাঙ্গতে পারবে না, কারণ এটা তাদের সারা জীবনের সংস্কার। কিন্তু যখন মেয়েরা নিয়মটা ভাঙ্গছে, তখন মায়েরা পাশে দাঁড়াচ্ছে," বলছিলেন মিসেস ধর্মপাল। রোহিনী ধর্মপালের কথায়, "উষসী চক্রবর্তী ঠিকই করেছে তো! মেয়েরা ঋতুমতী হলে যে পুজোর কাজে অংশ নিতে পারবে না বা নিজেরা পুজো করতে পারবে না - এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। এগুলো বেদ-উপনিষদে তো নেই। মনুসংহিতা এবং স্মৃতিশাস্ত্র যখন থেকে এল, এটা সেই সময়কার ধারণা। তখন তো রক্তপাত বন্ধ করার বৈজ্ঞানিক উপায় ছিল না - স্যানিটারি প্যাড ছিল না!" "এখন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে যদি আমরা সব কাজ করতে পারি ওই কটা দিন, তাহলে পুজো করতে পারব না কেন! আমরা যে পুরোহিত হিসাবে বিয়ে দিতে যাই, তখন তো কই কেউ জিজ্ঞাসা করে না যে আমাদের মধ্যে কেউ ওই দিনটায় ঋতুমতী কী না! পুজো যদি করতে না দেওয়া হয়, তাহলে তো মেয়েদের ওই কদিন সব কাজ থেকেই ছুটি পাওয়া উচিত। কিন্তু সেটা কি কেউ মেনে নেবে?" বলছিলেন রোহিনী ধর্মপাল। আরো পড়ুন: দুর্গাপূজার ওপর বিধিনিষেধে হিন্দুত্ববাদীরাই বিজেপির ওপর খাপ্পা পুজো প্রাঙ্গণে বিরিয়ানি চিকেন কাবাব নিষিদ্ধ সরস্বতী পুজো বনাম নবী দিবস পালন : স্কুলে উত্তেজনা দুর্গাপূজার পরে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা ভারতে স্যানিটারি প্যাডের যেসব বিজ্ঞাপন দেখানো হয় টেলিভিশনে, সেখানেও এই ধারণা দেওয়ারই চেষ্টা করা হয় যে ঋতুস্রাবের কয়েকটা দিন খেলাধুলো থেকে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণ যে কোনও কাজ স্বচ্ছন্দেই করতে পারেন নারীরা। তবে ভারতে নারী বা ছাত্রীদের মধ্যে এখনও যে অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর-ভাবে কাপড় ব্যবহার করেন ঋতুস্রাবের সময়ে, তা উঠে এসেছিল জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায়। ২০১৫-১৬ এর তথ্য বলছে দেশের নারীদের মাত্র ৪২ শতাংশ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। যদিও জাতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা বা আই সি এম আরের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে ঋতুস্রাব এবং স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা নিয়ে সচেতনতা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। ঋতুস্রাবের কটা দিন শরীর খারাপ থাকে, পেটে ব্যথা হয়, রক্তস্রাব তো হয়ই, তাই নারীদের বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন এবং সেজন্যই শুধু পুজো করা নয়, রান্না করা সহ সংসারের সব কাজকর্ম থেকেই বিশ্রাম দেওয়া হত, একটু দূরে রাখা হত একটা সময়ে। উষসী চক্রবর্তী "কিন্তু পরে, সেটাকেই পুজোয় অংশ না নিতে দেওয়ার মতো একটা ধর্মীয় মোড়ক দিয়ে প্রথা বানিয়ে দেওয়া হল। আমার আপত্তিটা এখানেই। ছোটবেলায় বুঝতাম না, তাই মেনে নিতাম। কিন্তু বড় হয়ে যখন বুঝতে-ভাবতে শিখেছি, তখন প্রথাটা তো ভাঙ্গবই," বলছিলেন মিস চক্রবর্তী। 'রজঃস্বলা অবস্থায় পুজোয় অংশ নিতে বাধা আছে ধর্মীয় অনুশাসনে' উষসী চক্রবর্তীর পরিবার তাকে কোনও লিখিত ধর্মীয় অনুশাসন না দেখাতে পারলেও হিন্দু শাস্ত্র বিশারদরা বলছেন এরকম অনুশাসন আছে যে, রজঃস্বলা নারী কোনও রকম পুজোর কাজে অংশ নিতে পারবেন না। শাস্ত্র বিশারদ পণ্ডিত নব কুমার ভট্টাচার্য বলছেন, "মেয়েরা পুজো করতে পারবে না, এরকম কোনও বিধান শাস্ত্রে নেই। একশোবার তারা নিজের বাড়িতে পুজো করতে পারে। কিন্তু রজঃস্বলা অবস্থায় পুজো করায় নিষেধ আছে।" তার কথায়, এইসব অনুশাসন মনুসংহিতা আর স্মৃতি রঘুনন্দনে উল্লেখিত আছে। "রক্ত বেরলে ক্ষতাশৌচ হয়। ওই সময়ে কোনও পুজো অর্চনা করা যাবে না। সেটা অবশ্য নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। সেজন্যই কোনও পুজোর একদিন আগে আমরা দাড়ি কামিয়ে নিই। যদি দাড়ি কামাতে গিয়ে কেটে যায়, তাহলে রক্ত বেরবে, আর তাহলেই আমাকে একদিনের অশৌচ পালন করতে হবে। সেই একই নিয়ম মেয়েদের ক্ষেত্রেও। রজঃস্বলা হলে ত্রিরাত্রি রক্তপাত হয়, তাই ওই সময়ে কোনও শুভ কাজ করা যায় না," বলছিলেন নব কুমার ভট্টাচার্য। "কিন্তু কেউ যদি নিয়ম ভাঙ্গে, তাহলে কিই বা করা যেতে পারে। তবে ধর্মীয় নিয়ম আর অনুশাসন ভাঙ্গলে সুনামী আসবে, ভূমিকম্প হবে এসব ফালতু কথা," মন্তব্য নব কুমার ভট্টাচার্যের। বেদ- উপনিষদ হিন্দু ধর্মের আকর হলেও সেখানে এধরণের কোনও অনুশাসন নেই। ধর্মীয় অনুশাসনগুলি চালু হয়েছে মূলত স্মৃতিশাস্ত্রের মাধ্যমে। এই স্মৃতিশাস্ত্র রচয়িতারা অনেক সময়েই নিজের ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা এবং তৎকালীন সমাজে প্রচলিত নিয়ম ঢুকিয়ে দিয়েছেন তাদের রচনায়। এরকমই একটি, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য রচিত 'অষ্টাবিংশতি তত্ত্ব'। ওই গ্রন্থে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের সব ধরণের ধর্মীয় আচার পালনের পদ্ধতি লিপিবদ্ধ আছে। তিনি চৈতন্যদেবের প্রায় সমসাময়িক। প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা নবদ্বীপে জন্ম নেওয়া এই স্মার্ত পণ্ডিত ওই স্মৃতি নির্ভর গ্রন্থেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুজো অর্চনা নিয়ে বিশদ দিক নির্দেশ দিয়েছেন, যেগুলো এখনও মেনে চলা হয়। ভারতের পূর্বাঞ্চলে - বাংলা, বিহার, আসাম আর উড়িষ্যায় এখনও রঘুনন্দন ভট্টাচার্য রচিত 'অষ্টাবিংশতি তত্ত্ব' বইটি অনুসরণ করেই সব পুজো অর্চনা করা হয়। রঘুনন্দন ভট্টাচার্যের অষ্টাবিংশতি তত্ত্বের প্রবল সমালোচনাও আছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই। রোহিনী ধর্মপাল মহাভারত উল্লেখ করে বলছেন, "নার্য্যো ন দূষন্তি ব্যাভিচারেহপি ভর্ত্তৃনাম্। মাসি মাসি ভবেদ্রাগস্ততঃ শুদ্ধাঃ ভবন্ত্যুত । অর্থাৎ কোনও নারী কর্তাকে ত্যাগ করে ব্যভিচার করলেও সেই নারী দূষিত হয় না। তারা মাসে মাসে রজঃস্বলা হয় বলেই তার মাধ্যমেই শুদ্ধ হয়ে থাকে। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ ভট্টাচার্য মহাভারতের যে অনুবাদ করেছেন তার অনুশাসন পর্বেই এটা রয়েছে।" কলেজ ছাত্রী উষসী বলছিলেন অবৈজ্ঞানিক, অশাস্ত্রীয় একটা প্রথা ভাঙ্গার জন্য যেভাবে কদর্য ভাষায় তাকে ট্রলড হতে হয়েছে, কিন্তু সবথেকে খারাপ লেগেছে যারা কুকথা লিখেছেন, তাদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। নোয়াখালীতে আ. লীগের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ভাষা আন্দোলন কীভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা মঙ্গল গ্রহে নাটকীয় অবতরণের পর এখন যেসব অনুসন্ধান চালাবে নাসার নভোযান জিয়ার খেতাব বাতিল নিয়ে কী করতে চায় বিএনপি? | কেন প্রথা ভেঙ্গে ঋতুমতী অবস্থায় পুজো করলেন পশ্চিমবঙ্গের এক ছাত্রী |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | বোরহানউদ্দিনের ঈদগাহ মাঠের যে সমাবেশ থেকে সংঘর্ষ শুরু একদিকে 'তৌহিদী জনতা'র ব্যানারে সেই ফেসবুক পোস্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ আলেম ও স্থানীয়রা, অন্যদিকে হিন্দু বাড়িঘর মন্দিরে হামলা নিয়েও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক ফেসবুক আইডি থেকে ইসলামের নবীকে কটুক্তি করার খবর ছড়ানোর দুদিন পরে ভোলায় সৃষ্টি হয়েছিল সহিংস পরিস্থিতির। অথচ সংঘর্ষের আগের দুদিন ধরেই বিপ্লবকে নিয়ে পুলিশ প্রশাসন, অভিযুক্ত হ্যাকার এবং আলেম সমাজে চলছিল নানামুখী তৎপরতা। গত ১৮ই অক্টোবর বিপ্লব বোরহানউদ্দিন থানায় করা জিডিতে 'তার ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে অন্য কেউ ইসলামের নবীকে কটুক্তি করে পোস্ট এবং মেসেজ পাঠাচ্ছে' এ অভিযোগ করেন। জিডি করতে বিপ্লবের সঙ্গে গিয়েছিলেন তার চাচা অসীম কুমার বৈদ্য। তিনি বলেন, মোবাইল ডাটা বন্ধ করে বিপ্লব সেদিন মাঠে কাজ করতে গিয়ে ফিরে এসে বিতর্কিত পোস্টের কথা জানতে পারেন। "কাতার থেকে প্রথম এক লোক ফোন দিয়েছিল বলে জানায় বিপ্লব। ফেইসবুক আইডিতে পরিচিত আর কি। কাতার থেকে এক লোক ফোন দিয়ে বলে, বিপ্লব তুমি এগুলো কী লিখতেছো?" "বিপ্লব বলল, আমার তো ডাটাই বন্ধ আমি কী লিখবো? এরপর পাশের বাড়ির মিজান নামে একটা ছেলে বলতেছে, আরে মিয়া এগুলা আমারে কী মেসেজ লিখতেছেন।" "কিন্তু তখনো বিপ্লবের মোবাইলে ইন্টারনেট ছিল না, ডাটা বন্ধ ছিল" - বলেন মি. বৈদ্য। সহিংসতার সময় আগুনে পোড়া মোটরবাইক তিনি বলেন, "মানুষ ফোন করার পরে আমরা জানতে পারলাম যে এরকম সমস্যা হইছে।" অসীম কুমার জানান, বিপ্লব থানায় জিডি করতে যাবার পথে চাচা অসীম কুমার বৈদ্যর ফেইসবুক আইডি ব্যবহার করে লাইভ করে বলেছিলেন, তার নামের আইডি হ্যাক করে এসব বক্তব্য এবং বার্তা বন্ধু তালিকায় থাকা লোকজনকে পাঠানো হচ্ছে। বিপ্লব জিডি করার পর পরই একজন ফোন করে তার কাছে টাকা দাবি করে। ভোলা জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, "যে নাম্বার থেকে দুই হাজার টাকা চেয়েছিল - তাকে কিন্তু আমি ১২ ঘণ্টার মধ্যে পটুয়াখালী থেকে আটক করে নিয়ে আসি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুজনকে আমরা মুখোমুখি করি।" এদিকে ১৯শে অক্টোবর বোরহানউদ্দীনে প্রথম এ নিয়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়। বিবিসি বাংলায় আরো খবর: কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল? ভোলায় হিন্দুদের বাড়ি, মন্দিরে হামলার ঘটনাও ঘটেছিল ভোলা জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বোরহানউদ্দিন ঈদগা মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দীন বলেন, আসরের নামাজের সময় তারা জানতে পারেন যে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের একজন ফেইসবুকে কটুক্তি করেছে। এ নিয়ে বিকেলে তারা একটি বিক্ষোভ করেন। "আমরা বিক্ষোভ করে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। নামাজের পর আবার পরামর্শে বসলাম। পরামর্শ বসে সিদ্ধান্ত হলো এখানে মিছিল হবে, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কারা কারা দায়িত্ব নেবে স্বেচ্ছাসেবক কিভাবে নিয়োগ দেবে এগুলো সব ঠিক হইলো, দায়িত্ব বন্টন করা হইলো কে পোস্টার করবে, কে ব্যানার করবে - সবকিছু ঠিক হইলো।" অক্টোবরের ১৯ তারিখ রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আলেমদের বোরহানউদ্দিন থানায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। সেখানে বিপ্লব এবং তার কাছে টাকা দাবি করা শরীফ দুজনকে আলেমদের সামনে হাজির করা হয়। ভোলার পুলিশ সুপার বলেন, "ডিসি ওখানে গিয়েছিল, ইউএনও ছিল এবং সোশ্যাল এলিট যারা ছিলেন সবার সামনে তাদের দুজনকে হাজির করে বললাম, আপনারা কথা বলেন। তারাই জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। এরপর তারা আমাদের তৎপরতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পীর সাহেব মহীবুল্লাহসহ আলেম সমাজের সবার উপস্থিতিতে বলা হলো : কালকের প্রোগ্রাম বাতিল।" পুলিশ সুপার বলছেন, পীর সাহেবসহ আলেমদের সঙ্গে আলোচনার পর রোববারের সমাবেশ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে আলেমদের দাবি, লোকজন আসলে সমাবেশ হবে এমন আলোচনাও সেখানে হয়েছিল। বোরহানউদ্দিনে গুলির পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর মন্দিরে হামলা হয় মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, "পুলিশ আমাদের বললো যে এই লোকটার মোবাইল হ্যাক হইছে। এটাতো সে দায়ী না। যদি সে দায়ী না হয় তাহলে আপনারা এর বিরুদ্ধে কেন মিছিল করবেন? আমরা বললাম অবশ্যই কথা সঠিক। আমাদের টার্গেট তো কোনো বিশেষ ব্যক্তি না। যেই এটা করছে যেহেতু এটা তার মোবাইলে আসছে, হয় সে করছে, নয়তো আরেকজন ব্যক্তি এটা করছে - তাইলে সে দোষী। বের করার দায়িত্ব আপনাদের। আমাদের আন্দোলনটা হচ্ছে যে কাজটা করছে তার বিরুদ্ধে। তাকে আপনারা চিহ্নিত করবেন, শাস্তি দিবেন।" এদিকে রোববার যেন সমাবেশ না হয় তা নিয়ে তৎপর ছিল প্রশাসন। কারণ বিক্ষোভ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও ছিল পুলিশের। রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলেমদের আলোচনা চলে বোরহানউদ্দিন থানায় এবং সিদ্ধান্ত হয় ফজরের নামাজের সময় সবগুলো থানার মসজিদে মাইকিং করে প্রচার করা হবে যে সমাবেশ স্থগিত। এদিকে সমাবেশ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হলেও সেটির প্রচার ঠিকমতো হয়নি সেটি স্পষ্ট। সকালেই সেখানে ১৭টি মাইক বসানো এবং ছোট একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। আর পূর্বঘোষিত সমাবেশে যোগ দিতে রোববার সকালে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় মাঠে। আলেমদের দাবি, পুলিশ আগেই মাইকে কথা বলে সমাবেশ শেষ করার জন্য তাগাদা দিয়েছে। সাড়ে দশটার মধ্যেই মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করা। কিন্তু তারা যখন সমাবেশ শেষ করেন তখন মানুষের আসা মাত্র শুরু হয়েছিল। জালালউদ্দীন বলেন, "যদি সাড়ে দশটায় শেষ না করে এগারটা পর্যন্ত নেয়া যাইতো আর যে লোকগুলাকে আগে আমরা কথা বুঝায়ছি তারা কিন্তু সান্ত্বনা পেয়ে গেছে। আস্থা তাদের তৈরি হইছে। কিন্তু বাকি যে লোকগুলা পৌঁছতে পারে নাই আমাদের মাইক বন্ধ হয়ে গেছে তাদের মধ্যেই কিন্তু এই একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইছে যে কেন মাইক বন্ধ হইছে, কেন এখানে সমাবেশ হইলোনা?" তবে পুলিশের দাবি সমাবেশ বন্ধ করতে তারা কোনো চাপ প্রয়োগ করেননি। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ সাড়ে দশটা নাগাদ শেষ করে দেয়াতেই পরে মিছিল নিয়ে আসা মানুষেরা বিক্ষুব্ধ হয়। ঈদগাহ সংলগ্ন এই ভবনটিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রতিবাদ করতে আসা উত্তেজিত জনতার মধ্য থেকেই এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়লে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এদিকে ভোলার ঘটনায় আলেমদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন গুলিতে নিহত মাহফুজুর রহমানের মামাতো ভাই। তিনি বলেন, "আলেম সমাজ কেন সমাবেশ ডেকে আগেই শেষ করে দিল। আলেমরা তাদের স্বার্থে এই লোক দেখানো প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। তারা ইসলামকে ভালবেসে নবীর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এ সভা ডাকেন নি। যদি প্রতিবাদ সমাবেশ আগেই শেষ করা না হতো - তাহলে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না। গুলি না চালিয়েও উত্তেজিত জনগণকে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো আলেমরা আরো মনে করেন, পুলিশ চাইলে গুলি না চালিয়েও উত্তেজিত জনগণকে ছত্রভঙ্গ করা যেত। আর সমাবেশ করতে দিলে তাদের স্বেচ্ছাসেবকরাই হিন্দু এলাকা পাহারা দিতেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারতো না। পুলিশ কেন শুরুতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করলো না, থানা থেকে বা ভোলা থেকে ফোর্স ডাকা হলো না। এমনকি কাছেই ফায়ার সার্ভিস ছিল - তাদের ডেকে পানি ব্যবহার হলো না কেন, এসব প্রশ্ন তাদের। এদিকে ফেইসবুক পোস্টকে ঘিরে অতীতে সব ঘটনাতেই অভিযুক্ত হিন্দু বা বৌদ্ধ সম্পদায়ের বাড়ি ঘর উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। সেদিক থেকে বিচার করে এ ঘটনায় বোরহানউদ্দীনের রবীন্দ্র পল্লীতে আগে থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি। থানা থেকে মাত্র দুশ' গজ দূরের হিন্দু পল্লীর প্রবেশমুখে পুলিশের পাহারা থাকলেও এ ঘটনা এড়ানো যেত বলেই মনে করেন আক্রান্তদের অনেকে। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, যেহেতু তারা নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং আলেম সমাজ আশ্বস্ত হয়ে সমাবেশ বাতিল করেছেন তাই তারা এসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেননি। "আর উত্তেজিত জনতা এতটাই আক্রমণাত্মক এবং মারমুখী হয়ে গিয়েছিল যে শুধুমাত্র আত্মরক্ষার্থেই শেষ পর্যন্ত গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ" - বলেন তিনি। আরো পড়তে পারেন: বিপ্লবের আইডি কে হ্যাক করলো তা এখনো অজানা কীসের এত ভাব হেনরি কিসিঞ্জার আর নরেন্দ্র মোদীর? নুসরাত হত্যা: ১৬ জন আসামীর সবার মৃত্যুদণ্ড ক্রিকেটারদের ধর্মঘট অবসানের পর ভারতের দল ঘোষণা | কাতার থেকে একজন ফোন করে বলে: 'বিপ্লব এসব কী লিখতেছো?' |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই হুঁশিয়ারি এমন সময়ে এলো যখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে ইসলামপন্থী দলের একটি অংশ। প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরি করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিল অনেকগুলো ইসলামপন্থী দল। অক্টোবরের শুরু থেকেই ভাস্কর্য তৈরির প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি দল ঢাকার কয়েকটি জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হক গত ১৩ই নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন। পনেরোই নভেম্বর এক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন মি. হক। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। তার ওই বক্তব্য সরকারি দল আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি করে। এরপর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। ২৮শে নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বললেন, "আমি কোন পার্টির নাম বলছি না, কোন নেতার নাম বলছি না.... কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমি আমার আব্বার ভাস্কর্যকে ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব"। গত ২০১৪ সালে এক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মদিনা সনদ বাস্তবায়ন করা হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেই বক্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, "মদিনা সনদে যদি দেশ চলে, তাহলে কোন ভাস্কর্য থাকতে পারে না"। আরও পড়তে পারেন: শেখ হাসিনা: 'করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা' 'আমার আব্বার ভাস্কর্যও ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব' - বাবুনগরী 'রাজাকার' এর সাথে তুলনা করায় প্রতিবাদ হেফাজতের 'আলোচনার মাধ্যমে'' ভাস্কর্য বিতর্কের সমাধান চায় সরকার শেখ হাসিনা: নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে বিবিসির মুখোমুখি তবে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে কোন দল বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মেয়াদে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ করেছে, অতীতে কোন সরকারই তা করেনি। তিনি কিছু বর্ণনাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ''আমরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি, ৮০টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চারু করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স মান দেয়া হয়েছে।। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। লক্ষাধিক আলেম-ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।'' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলন, ''তারপরেও ১৯৭১' র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানীং মাঠে নেমেছে। '' তিনি বলেন, ''বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান-সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।'' ''এ দেশ সকলের। এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোন ধরণের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবো না।'' করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হলেও সামনের বছর মহামারি না থাকলে যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যুব শক্তি, তরুণ সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের প্রতি আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ''তোমরা তোমাদের পূর্বসূরিদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনোই ভুলে যেও না। তাদের উপহার দেয়া লাল-সবুজের পতাকার অসম্মান হতে দিও না''। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: এবার দিল্লির কুতুব মিনার প্রাঙ্গণেও পূজার অধিকার চান হিন্দু অ্যাক্টিভিস্টরা ১২ বছরের লড়াই শেষে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন বিউটি বেগম 'আলোচনার মাধ্যমে'' ভাস্কর্য বিতর্কের সমাধান চায় সরকার মুক্তিযুদ্ধের শেষ ১০ দিনে শক্তিধর দেশগুলো যেভাবে ঠান্ডা লড়াই চালায় | ৭১-এর পরাজিত শক্তির একটি অংশ সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে মাঠে নেমেছে: শেখ হাসিনা |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | আমাজনের উষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমি যেসব এলাকা বিক্রি হচ্ছে এগুলো সংরক্ষিত এলাকা - যার মধ্যে আছে জাতীয় বনভূমি এবং আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা। ফেসবুকে 'ক্লাসিফায়েড এ্যাড' সেবার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত আমাজনের এসব প্লটের কোনো কোনোটি এক হাজার ফুটবল মাঠের সমান বড়। ফেসবুক বলছে, তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে, কিন্তু এই বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য তারা নিজেরা স্বাধীনভাবে কোন পদক্ষেপ নেবে না বলে তারা আভাস দিচ্ছে। তারা বলছে, "আমাদের বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতিমালা এমন যে সেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে আইন-কানুন মেনে চলতে হয়।" তবে এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোর একটির নেতা ফেসবুককে এ ব্যাপারে আরো বেশি কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন যে দেশটির সরকার এসব বিক্রি বন্ধ করতে ইচ্ছুক নয়। আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস - তবে এখানে ব্যাপকভাবে বন ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ বিষয়ক একটি বেসরকারি সংস্থা 'কানিন্দে'-র প্রধান ইভানেইদ বানদেইরা বলছেন, "ভূমি দস্যুরা এখন নিজেদের এতই ক্ষমতাবান মনে করছে যে তারা ফেসবুকে এসব অবৈধ জমি বেচাকেনার চুক্তি করতে লজ্জা বোধ করছে না।" কোন সার্টিফিকেট নেই ফেসবুক মার্কেটপ্লেসের 'সার্চ' ব্যবহার করে কেউ যদি পর্তুগীজ ভাষায় 'বনভূমি' বা 'দেশীয় জঙ্গল' এ জাতীয় শব্দ লেখেন, এবং আমাজনিয়ান রাজ্যগুলোকে 'লোকেশন' হিসেবে বেছে নেন - তাহলে যে কেউ এসব অবৈধভাবে দখল করা প্লটের সন্ধান পেতে পারেন। তালিকাভুক্ত কোন কোন বনভূমির উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি এবং জিপিএসের অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশও দেয়া আছে। পৃথিবীর প্রতি ১০ প্রজাতির প্রাণীর একটি বাস করে আমাজন বনভূমিতে এগুলো যারা বিক্রি করছেন - তারা খোলাখুলি স্বীকার করেন যে তাদের এসব জমির মালিকানার কোন দলিলপত্র নেই - যা ব্রাজিলীয় আইন অনুযায়ী কোন জমির মালিকানার প্রমাণ। ব্রাজিলে এখন যে 'ক্যাটল র্যাঞ্চিং' বা বড় আকারে গবাদিপশুর খামার শিল্প গড়ে উঠেছে - তা এই অবৈধ কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করা হয়। কোন ঝুঁকি নেই গত ১০ বছরের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান আমাজনে এখন বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। বনভূমি বিক্রেতাদের একজন হচ্ছেন ফ্যাব্রিসিও গিমারেস। তিনি বনভূমির একটি অংশ আগুনে পুড়িয়ে খোলা প্রান্তরে পরিণত করেছেন। এটা করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং জমিটি এখন চাষাবাদের জন্য তৈরি। গোপন ক্যামেরা দিয়ে তার কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা হয়। "এখানে রাষ্ট্রীয় কোন কর্মকর্তার পরিদর্শনের কোন ঝুঁকিই নেই" - বলছিলেন তিনি। তিনি জায়গাটির প্রাথমিক দাম হেঁকেছিলেন ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার। তবে এখন সে দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে। সংরক্ষিত বনভূমিকে গরু চরানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্যাব্রিসিও নিজে কৃষক নন। তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর, একটি শহরে ভালো চাকরি করেন। তিনি এই উষ্ণমণ্ডলীয় বনভূমিকে দেখেন একটা বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে। বিবিসি পরে তার তদন্তের ব্যাপারে ফ্যাব্রিসিওর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। স্টিং অপারেশন ব্রাজিলের আমাজন বনভূমি সবচেয়ে বেশি উজাড় হচ্ছে যেখানে - সেই রাজ্যটির নাম রন্ডনিয়া। ফেসবুকের বিজ্ঞাপনের অনেকগুলোই আসে এই এলাকা থেকে । বিবিসি এখানকার চারজন বিক্রেতার সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিল। এজন্য একজনকে ছদ্মবেশী আইনজীবী হিসেবে পাঠানো হয় - যিনি নিজেকে কয়েকজন ধনী বিনিয়োগকারীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। একজন জমি বিক্রেতার নাম আলভিম সুজা আলভেস। তিনি স্থানীয় মুদ্রায় ১৬,৪০০ পাউণ্ড দামে একটি প্লট বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। এই জায়গাটি উরু ইউ ওয়াউওয়াউ নামে একটি সংরক্ষিত আদিবাসী এলাকায়। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন; ফ্যাব্রিসিও বনের জমি বিক্রি করছেন ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে এখানে ২০০ জনেরও বেশি উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ জনগোষ্ঠীর লোক বাস করে। এছাড়া ব্রাজিল সরকারের তধ্যমতে এখানে অন্তত আরো পাঁচটি জনগোষ্ঠী বাস করে যাদের সাথে বাইরের বিশ্বের কোন যোগাযোগই হয়নি। কিন্তু আমাদের সাথে বৈঠকে মি. আলভেস দাবি করলেন, তার জায়গাটিকে কোন 'ইন্ডিয়ান' নেই। "এখানে কোন ইন্ডিয়ান নেই। আমার জমিটা যেখানে - তারা সেখান থেকে ৩১ মাইল দূরে বাস করে। তবে এমন নয় যে সেখানে আপনি তাদের আনাগোনা দেখতে পাবেন না।" উরু ইউ ওয়াউ ওয়াউ সম্প্রদায়ের নেতা বিতাতে উরু ইউ ওয়াউওয়াউ-কে বিবিসি ফেসবুকের বিজ্ঞাপনটি দেখিয়েছিল। তিনি জানালেন, প্লটটি এমন এক জায়গায় যেখানে তারা শিকার, ফল সংগ্রহ ও মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করেন। "এখানে সম্মানের অভাব আছে। আমি এসব লোককে চিনি না। আমার মনে হয় তারা আদিবাসীদের জমির বন উজাড় করতে চায়, বলতে পারেন তারা আমাদের জীবনটাই উজাড় করতে চায়। " তিনি বলেন - এখানে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করা উচিত এবং ফেসবুকের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান স্বত:প্রণোদিত হয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পরিস্থিতি বদলে গেছে অবৈধ জমির বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠার পেছনে আরেক কারণ হলো, ক্ষমা পেয়ে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। মি. আলভেস বলেন, তিনি অন্য কয়েকজনের সাথে মিলে কাজ করছেন যেন চুরি করা এসব জমির বৈধ মালিকানা পাবার জন্য রাজনীতিকদের সহায়তা পাওয়া যায়। তিনি বলছেন, "সত্যি কথাটা হলো, মি বোলসোনারোর সময় যদি এর সমাধান না হয় - তাহলে আর কখনোই হবে না।" উরু ইউ ওয়াওওয়াও জনগোষ্ঠী বলছে তারা বনভূমি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বিবিসি বাংলায় আরো খবর: খাসোগজি হত্যা রিপোর্ট প্রকাশের আগে সৌদি বাদশাহকে বাইডেনের ফোন ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন না শামীমা বেগম কারাগারেই মৃত্যু লেখক মুশতাক আহমেদের ৭ই মার্চের কর্মসূচি 'আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে না': বিএনপি বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের নতুন ট্রেনে ভারতীয়দের কী লাভ বিবিসির ছদ্মবেশী রিপোর্টারকে তিনি এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিযে দেন, যিনি কুরুপিরা সমিতি নামে এক গোষ্ঠীর প্রধান। ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ এ গ্রুপটিকে অবৈধ জমি দখলের সাথে যুক্ত বলে অভিহিত করেছে। তাদের কৌশলটা হচ্ছে, প্রথমে জঙ্গল কেটে সাফ করে ফেলা- এবং তারপর 'জঙ্গল এখন আর নেই" এ যুক্তি দেখিয়ে তার সংরক্ষিত মর্যাদা বাতিল করিয়ে সরকারের কাছ থেকে সেই জমি কিনে নেয়া। এ জন্য উচ্চস্তরের রাজনীতিবিদদের সহায়তায় ব্রাসিলিয়াতে সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠকের আয়োজন করার তদ্বির চলছে বলেও জানান তিনি। তাদের একজন প্রধান মিত্র হচ্ছেন কংগ্রেসম্যান কর্নেল ক্রিসোতোমো। তিনি সোশ্যাল লিবারেল পার্টির সদস্য। মি. বোলসোনারো নিজের দল গঠনের আগে এই দলেরই সদস্য ছিলেন। বিবিসি তার সাথে যোগাযোগ করলে মি. ক্রিসোতোমো বৈঠকের আয়োজনে সহায়তার কথা স্বীকার করলেও বলেন, এই কুরুপিরা গোষ্ঠী যে জমি দখলের সাথে যুক্ত তা তিনি জানতেন না। "এটা করে থাকলে তারা আমার সমর্থন আর পাবে না," বলেন তিনি। মি. আলভেস এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। এ্যালভিম সুজা আলভেস বিবিসি ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী রিকার্ডো সালেসের সাথে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেন "প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর সরকার পরিবেশগত অপরাধসহ সব অপরাধের ক্ষেত্রে 'শূন্য সহিষ্ণুতা' দেখিয়ে আসছে।" তবে রন্ডনিয়ার একজন ফেডারেল কৌঁসুলি রাফায়েল বেভিলাকুইয়া বলেন, বর্তমান সরকারের সময় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। ফেসবুক তাদের মার্কেটপ্লেসে আমাজনের জমি বিক্রি বন্ধ করার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেয় বলে মনে হচ্ছে না। তারা বলছে, কোন বেচাকেনা অবৈধ তা বের করা খুবই জটিল, এবং তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বিচারবিভাগেরই দেখা উচিত। ইভানেই বানদেইরা - যিনি ৩০ বছর ধরে রন্ডনিয়ায় বন উজাড়ের বিরুদ্ধে লড়ে আসছেন - বলছেন, তিনি এখন আশা হারিয়ে ফেলছেন। "বনভূমি রক্ষা করা এর আগে কখনো এত কঠিন ছিল না" বলেন তিনি। আমাজন | ব্রাজিলের আমাজন বনভূমি বিক্রি হচ্ছে ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | নিজের করা বেশ কিছু কার্টুন চরিত্রের মিমিক্রির ভিডিও রেকর্ড করে প্রকাশ করেন সামাজিক মাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে ঐতিহ্যের মিমিক্রির ভিডিও। মাদারীপুরের একটি স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ছে ঐতিহ্য। সামাজিক মাধ্যমে নিজের মিমিক্রির জনপ্রিয়তা দেখে এখন উৎসাহ পাচ্ছেন নিজেকে পেশাদার মিমিক্রি শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার। কীভাবে এই দক্ষতা আয়ত্ব করেছেন ঐতিহ্য সে কথা জানিয়েছেন বিবিসিকে। জানতে দেখুন ভিডিওটি। | মিমিক্রি: ঐতিহ্যের একই কণ্ঠের নানা রূপ |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | করোনাভাইরাসের কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা যেন অনেক বেড়ে গেছে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত কয়েক মাসে আমাদের জীবনে যেসব নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে আমাদের মানসিক দুশ্চিন্তা যেন অনেক বেড়ে গেছে। এক নতুন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকরা বিশেষ করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাদের সন্তানদের নিয়ে। কোনটাকে আমরা মানসিক দুশ্চিন্তা বলবো? আর এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় কী? মানসিক উৎকন্ঠা বা দুশ্চিন্তা কি? যখন বলা হয়, কেউ মানসিক উৎকন্ঠা বা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, তার মানে এটা মানসিক চাপ বা কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত হওয়ার চাইতে বেশি কিছু। আমরা সবাই কমবেশি কোন না কোন বিষয়ে চিন্তায় থাকি, বা মানসিক চাপে ভুগি। এগুলো মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এরকম প্রতিক্রিয়া দেখানো ভালো। কিন্তু কেউ যখন সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন, যেটা রীতিমত ভীতিকর হয়ে উঠে এবং যা থেকে আর মুক্তি পাওয়া যায় না, তখন সেটাই আসলে মানসিক উৎকন্ঠা বা দুশ্চিন্তা। এই সমস্যা এতটাই তীব্র হয়ে উঠতে পারে যে এটি আপনার পুরো জীবন বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, আপনার নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন তৈরি করতে পারে। এর ফলে আপনাকে সারাক্ষণই খুব চিন্তিত মনে হবে, আপনি ক্লান্তিতে ভুগবেন এবং কোন কিছুতেই মন বসাতে পারবেন না। আপনার ঘুমাতে অসুবিধা হবে এবং আপনি বিষন্ন বোধ করবেন। প্রায়শই এমন কিছু লক্ষণ চোখে পড়বে, যার প্রভাব শরীরেও পড়বে। যেমন হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়া, শরীর কাঁপা, ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা, ডায়ারিয়া এবং অসুস্থ বোধ করা। মানসিক উৎকন্ঠার অনেক রকমফের আছে। কারও ক্ষেত্রে এটা হয়তো খুবই মৃদু, কারও ক্ষেত্রে এটি খুবই তীব্র হয়ে উঠতে পারে। প্রতি দশ জনের একজন জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় বা কোন ধরণের ফোবিয়া বা ভীতিতে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু অনেকেই এরজন্য চিকিৎসকের কাছে যান না। কোথায় সাহায্য মিলবে? মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষদের প্রথমেই উচিৎ নিজেই নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত করার চেষ্টা করা। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব সাইক্রিয়াট্রিস্টসের পরামর্শ হচ্ছে, নিজেকে নিজে সাহায্য করার কিছু কৌশল আছে, প্রথমে সেটাই চেষ্টা করা উচিৎ। যেমন: বিশেষজ্ঞরা বলেন, মদ পান এবং ধূমপান বন্ধ করলেও মানসিক উৎকন্ঠা অনেক কমে যায়। এরপরও যদি দুশ্চিন্তা দূর না হয়, তখন অনেক ধরণের আত্মোন্নয়নমূলক (সেলফ হেল্প) বই আছে, সেগুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে। এসব বইতে নানা ধরণের থেরাপির বর্ণনা আছে। যেমন, কগনিটিভ বিহ্যাভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি)। যুক্তরাজ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) মাধ্যমেও এসব থেরাপি নেয়া যায়। আরও পড়ুন: ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ যে কারণে বিষণ্ণতায় ভুগছে 'আমার বান্ধবী চায়না আমি তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখি' করোনাভাইরাস: মানসিক চাপ কীভাবে কাটানো যেতে পারে? কেন রোগীকে সারারাত জেগে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা সিবিটি থেরাপি মূলত দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষকে কথা বলে প্রশান্তি দেয়ার চেষ্টা । যখন কেউ খুব বড় ধরণের সমস্যার কারণে দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন, তখন তার সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে সেগুলো মোকাবেলার পরামর্শ দেয়া হয়। যেসব শিশু মারাত্মক মানসিক দুশ্চিন্তা ভোগে, তাদের জন্যও এটা বেশ কার্যকরী। বাবা-মাকে এই থেরাপি শেখানো যায়, যাতে তারা তাদের সন্তানদের এটি দিতে পারেন। যুক্তরাজ্যে মানসিক দুশ্চিন্তা বিষয়ক একটি সংস্থা অ্যাংজাইটি-ইউকে'র নিকি লিডবেটার বলেন, কেউ যেন মানসিক দুশ্চিন্তা চেপে রেখে একা একা না ভোগেন, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পরামর্শ হচ্ছে, এজন্যে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে লক্ষণগুলো তাকে বলা। "তবে সবার জন্য এটাই যে একমাত্র নিরাময়ের পথ, তা নয়", বলছেন তিনি। শিশু এবং তরুণরাও কি মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগে তরুণরা মানসিক দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হচ্ছে কীনা সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা দরকার ক্যাথি ক্রেসওয়েল হচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্টাল ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলছেন, "স্কুলের চাপ যেহেতু এখন নেই, তাই কেউ কেউ তাদের জীবন নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে, কেউ কেউ আবার বেশ ভালোই করছে।" প্রফেসর ক্রেসওয়েল করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর যে লকডাউন জারি করা হয়, তার প্রথম মাসে শিশুদের এবং তাদের বাবা-মার ওপর একটি সমীক্ষা চালান। এতে তিনি দেখেছেন, প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, নিরানন্দ এবং মন খারাপ থাকার ব্যাপারগুলো বেড়ে গেছে। তবে মাধ্যমিক স্কুলের ছেলে-মেয়েদের বেলায় এরকম আবেগজাত সমস্যা কম দেখা গেছে। এরা বলেছে, তাদের মনে বা ব্যবহারে সেরকম কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তেরএবং ১৪ বছর বয়সীদের ওপর চালানো আরেকটি জরিপে এটার প্রতিফলন দেখা গেছে। এই জরিপে দেখা যায়, গত অক্টোবরে ছেলে-মেয়েরা যতটা দুশ্চিন্তায় ভুগতো, লকডাউনের মধ্যে তাদের মধ্যে ততটা দুশ্চিন্তা ছিল না। এর মানে হচ্ছে, বয়সভেদে শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তায় ভোগার ব্যাপক তারতম্য ঘটে। দুশ্চিন্তায় ভোগা শিশুদের এবং তরুণ ছেলে-মেয়েদের সাহায্য করতে এনএইচএস পাঁচটি পরামর্শ দিচ্ছে অভিভাবকদের: কীভাবে মানসিক দুশ্চিন্তা শুরু হয় যে কোন কিছু থেকেই মানসিক দুশ্চিন্তার শুরু হতে পারে। স্বাস্থ্য বা টাকা-কড়ি থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে কোন পরিবর্তন। কারও সঙ্গে সম্পর্কও এর কারণ হতে পারে। এর যে কোনটাই একটা গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় মানসিক দুশ্চিন্তার এরকম অনেক সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। যেমন ভাইরাস নিয়ে ভয়, বাইরে যাওয়া নিয়ে ভয়, অন্যদের করোনাভাইরাস সংক্রমিত করার ভয়, মাস্ক পরা কিংবা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া- এরকম হাজারটা চিন্তার সঙ্গে ভবিষ্যতে কী অবস্থা দাঁড়াবে সেই চিন্তা তো আছেই। এসব দুশ্চিন্তাকে করোনা-অ্যাংজাইটি বলে নাম দিয়েছে দাতব্য সংস্থা অ্যাংজাইটি ইউকে। তারা বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাদের হেল্পলাইনে সাহায্য চেয়ে আসা কলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এখন যারা সাহায্য চেয়ে কল করে, তাদের সমস্যাগুলো স্বাভাবিক সময়ের সমস্যার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। কলগুলো অনেক দীর্ঘ, বলছে এই সংস্থাটি। মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য চাইতে হবে পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলার নানা বিধিনিষেধ মানুষের আগের রুটিনে অনেক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তারা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়মিত দেখতে যেতে পারছে না। এর ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা যারা ভুগছেন, তার অবস্থা আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে। এর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের ভয়ে অনেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য কারও সাহায্যও চাইছে না। এতে করে অনেকের অবস্থা গুরুতর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। "কেউ যদি ভালো বোধ না করেন, তাহলে এই করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও কিন্তু তিনি সাহায্য চাইতে পারেন, বলছেন রয়্যাল কলেজ অব সাইক্রিয়াট্রিস্টের ড: বিলি বোলান্ড। "যদি আপনার কোন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, দয়া করে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা যেটা আছে, সেটাকে ব্যবহার করুন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের জন্য এনএইচএসের ১১১ অনলাইন বা টেলিফোন সার্ভিস ব্যবহার করুন।" কার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি? অ্যাংজাইটি বা মানসিক দুশ্চিন্তা খুব হামেশাই ঘটে এমন একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। আর এখন তো বহু মানুষ তাদের জীবন নিয়ে চিন্তিত। আপনার জীবনে যা ঘটেছে, হতে পারে সেটা বড় কোন পরিবর্তন বা নিষ্ঠুর কোন ঘটনা- সেটি আপনাকে মানসিক দুশ্চিন্তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর কোন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে সেটা আপনাকে যে কোন বিষয়ে খুব দ্রুত দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। অনেক সময় এই বেশি মানসিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আপনার জিন বা বংশগতি। টিনএজার এবং তরুণরা অনেক সময় বেশি দুশ্চিন্তায় ভোগে। যাদের বিশেষ ধরণের শিক্ষা চাহিদা থাকে বা যারা নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা, তারা বেশ ঝুঁকিতে। তবে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, শিশু এবং তরুণরা যে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাস রুমের বাইরে রয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আসলে কী হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। প্রফেসর ক্রেসওয়েল বলেন, "স্কুলের পরিবর্তিত রুটিনের সঙ্গে বা অনিশ্চয়তার সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে, সেটার ওপর নজর রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।" | করোনা ভাইরাস: মানসিক উৎকন্ঠা থেকে মুক্তি পেতে যা করতে পারেন |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | দিল্লির প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছে স্বাস্থ্যকর্মীরা ভারত জুড়ে দুমাস ধরে যখন কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছিল তখন দিল্লির কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ হাতছাড়া করেছেন বলেই মনে হয়। এরজন্য দায়ী করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি বিষয়কে। প্রথমত, কন্টাক্ট ট্রেসিং এর কোন ব্যবস্থা না রাখা; দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং তৃতীয়ত, ব্যক্তি খাতের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব। এর পাশাপাশি ভারতের রাজধানীতে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে রাজ্য কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক বিবাদকেও এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। ভারতের অনেক ছোট ছোট শহর দিল্লির তুলনায় অনেক ভালোভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করেছে। যেমন ধরা যাক দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোরের কথা। সেখানে কন্টাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সাফল্যের সঙ্গে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব হয়। দক্ষিণ ভারতের আরেকটি নগরী চেন্নাইও বেশ এগিয়ে আছে দিল্লি তুলনায়। সেখানে সংক্রমণ বেশ ছড়ালেও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কিন্তু দিল্লি এবং মুম্বাই, দুটি শহরেই ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। এই দুটি শহরেই সংক্রমনের হার খুবই বেশি। ভারতের সব নামী-দামী সরকারি হাসপাতাল এই দুই শহরে। অথচ এসব বড় বড় হাসপাতাল এখন করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। দিল্লির ক্ষমতায় আছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। এ বছরের শুরুতে দলটি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল বিশেষ করে জনসেবা এবং স্বাস্থ্যসেবার মত কাজে সাফল্যের জন্য। তাহলে ভুলটা কোথায় হয়েছিল? যথেষ্ট পরীক্ষা এবং ট্রেসিং এর ব্যবস্থা না রাখা জুন মাসের শুরু থেকে দিল্লিতে সংক্রমনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কেবল এ মাসেই ৫০ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঘটনা ধরা পড়েছে দিল্লিতে। এর একটা কারণ হয়তো দিল্লিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এটি করা হচ্ছে একটি নতুন রেপিড টেস্টিং কিট দিয়ে, মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যেই পরীক্ষার ফল জানা যায়। করোনাভাইরাসর বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ দিল্লি হাতছাড়া করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলছেন, টেস্টিং কোন মহৌষধ নয়। মিস্টার রেড্ডি ভারতের ন্যাশনাল কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের একজন সদস্য। “আপনাকে টেস্টিং অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেটা করতে হবে বিচার বিবেচনা করে, লক্ষণ দেখে এবং এর একটা পরিস্কার ভিত্তি থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, এটা কেবল তখনই করা সম্ভব যখন কনট্যাক্ট ট্রেসিং এর ব্যবস্থা থাকবে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে ভারতের কন্টাক্ট ট্রেসিং এর ওপর। তারা দেখেছে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে প্রতিটি কনফার্মড করোনাভাইরাস কেসের জন্য গড়পড়তা ২০টি কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হয়েছে। যখন কর্নাটকের মত কোন কোন রাজ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছিল ৯৩ জন পর্যন্ত, সেখানে দিল্লিতে করা হয়েছে মাত্র ৯ জন। এ মাসের শুরুর দিকে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সেখানে সংক্রমনের সংখ্যা এত বেশি যে করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগীদের সরাসরি সংস্পর্শে আসা নিকটজনদেরই কেবল পরীক্ষা করা হচ্ছিল। কিন্তু অনেক মানুষ টুইটারে এমন অভিযোগ করেছেন যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের পরিবারের সদস্যদের পর্যন্ত টেস্ট করা হয়নি। তাদের এলাকাগুলোতে সংক্রমন প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। “আমি এমন অনেক ঘটনা জানি যেখানে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এমন লোকদের পরিবারগুলোর সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করা হয়নি”, বলছিলেন অল ইন্ডিয়া ড্রাগ একশন নেটওয়ার্ক নামে একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়াচডগ-এর সদস্য মালিনি আইসোলা। মিস্টার কেজরিওয়ালের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বন্দ্বকেও দায়ী করা হচ্ছে পরিস্থিতির অবনতির জন্য। অনেক ক্ষেত্রেই এসব পরিবারের সদস্যদের টেস্ট পর্যন্ত করা হয়নি। টেস্ট তখনই করা হয়েছে যখন বারবার সরকারের কাছে এ নিয়ে তারা আবেদন নিবেদন করেছে। দিল্লির কর্তৃপক্ষ এখন বেশ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন। দিল্লির প্রায় দুই কোটি ৯০ লাখ বাসিন্দাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে। প্রতিদিন দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৬ হাজার মানুষকে বাছাই করা হবে। আর লোকজন সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে চলছে কিনা সেটি পুলিশ এবং ড্রোন ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হবে। দিল্লির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যে এখন প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে সেজন্য সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দোষারোপ করছেন যে গতিতে নগরীতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল সেটিকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পদক্ষেপগুলো আসলে নেয়া উচিত ছিল অনেক আগে, যখন লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি ছিল। যদি তখন এই কাজ করা হতো তাহলে হয়তো সরকারের পক্ষে অনেক দ্রুত এবং বেশ বিচক্ষণ ভাবে পদক্ষেপ নেয়া সহজ হতো। সরকার পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে ব্যর্থ দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের একজন ভাসকুলার সার্জন ডক্টর আমবারিশ সাত্ত্বিক মনে করেন, ভারতে করোনাভাইরাস রোগটিকে একটি গ্লানিকর বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। এটিকে জনস্বাস্থ্যের বিষয় হিসেবে গণ্য না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারত এখনও সরকারিভাবে কম্যুনিটি সংক্রমণের কথা অস্বীকার করছে। দিল্লিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষাকে খুবই সীমিত করে রাখা হয়েছিল। কেউ যখন এই পরীক্ষায় পজিটিভ বলে প্রমাণিত হবেন, তারপর কি হবে সেটা নিয়ে কোন সঠিক তথ্য ছিল না। আর করোনাভাইরাস পজিটিভ প্রমানিত হলে সরকার ধরে নিয়ে নিম্নমানের কোন জায়গায় নিয়ে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আটকে রাখবে এমন ভয় লোকজন কোন পরীক্ষাই করাতে চায়নি। “যদি আপনাকে পুলিশ ফোন করে, যদি আপনাকে ডিস্ট্রিক্ট সার্ভেইলেন্স অফিসার ফোন করে বলে, আপনাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে কোয়ারেনটাইনের জন্য, তখন কে যাবে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করাতে”, বলছেন ডক্টর সাত্ত্বিক। “এরকম অবস্থায় আপনি হয়তো বরং অপেক্ষা করবেন, কারণ এই পুরো প্রক্রিয়াটা তো একটা শাস্তির মত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” ভারতের চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত খাত একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। অথচ করোনাভাইরাস মোকাবেলার পুরো দায়িত্বটা এসে পড়েছে সরকারি খাতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর। সরকারি স্বাস্থ্য সেবা খাতে জনবলের ঘাটতি আছে। সরকারের ল্যাবরেটরী এবং হাসপাতালগুলোতে সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। ফলে বহু মানুষ, যাদের হয়তো লক্ষণ ছিল, তারা পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর পরিবর্তে ঘরে থাকাটাই শ্রেয় বলে ভেবেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লির হাসপাতালগুলোর যে অব্যবস্থাপনা এবং বিশৃঙ্খলার কথা প্রচার পেয়েছে, তা মানুষের উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। “এই ভয় আর এই স্টিগমার কারণে করোনাভাইরাস মহামারী যেন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে”, বলছেন প্রফেসর রেড্ডি। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল ব্যক্তি খাতের চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা, যাতে করে করোনাভাইরাসের টেস্টিং এবং হাসপাতালে বেশি রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু দিল্লির সরকার আসলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফি, কিভাবে পরীক্ষা করা হবে তার নিয়ম কানুন এসব নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চালিয়ে অনেক সময় নষ্ট করেছেন। প্রফেসর রেড্ডি বলছেন, সরকার আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ক্লিনিক্যাল সার্ভিস, বিশেষ করে টেস্টিং এবং হাসপাতালে চিকিৎসা এসবের ব্যবস্থা করার জন্য। এর ফলে মৌলিক জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কাজগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। দিল্লিতে ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র আরেকটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দিল্লির প্রশাসনিক ব্যবস্থা। যদিও এই রাজ্যটি পরিচালনা করেন মিস্টার কেজরিওয়াল এবং তার সরকার, কিন্তু দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর, যিনি ফেডারেল সরকারের প্রতিনিধি, তারও কিছু ক্ষমতা আছে। এই দ্বৈত প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে বেশ কিছু পরস্পরবিরোধী নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, যেগুলো আবার পরে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। অনেক সময় এরকম নির্দেশ জারি করা এবং প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। মিস্টার কেজরিওয়ালের সঙ্গে ভারতের ফেডারেল সরকারের সম্পর্ক যে খুব ভাল ছিল না এটা তারই প্রমাণ। প্রফেসর রেড্ডি বলেন, “আমরা একটা সিদ্ধান্ত থেকে আরেকটা সিদ্ধান্তের মধ্যে এভাবে দোল খেতে পারিনা, যখন কিনা এরকম জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে খাবি খাওয়ার পরিবর্তে রাজধানী শহর হিসেবে দিল্লির একটা আলাদা মনোযোগ পাওয়া উচিৎ ছিল।” তবে প্রফেসর রেড্ডি বলছেন, কোনো মহামারী মোকাবেলার ক্ষেত্রেই সময় চলে গেছে, একথা বলার সুযোগ নেই। “এই মহামারি ঠেকাতে আপনাকে এখনো বেশ শক্ত একটা প্রচেষ্টা নিতে হবে। আপনাকে সেটা করতেই হবে।” আরও পড়তে পারেন: দশগুণ ভাড়া, ফ্লাইট কম, রিটার্ন টিকেটেও সিট নেই যেভাবে এক কোটি ছাড়িয়ে গেলো করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নানা অভিযোগের জবাব কী? রেলে বিক্রি করা হবে ৫০% টিকেট, পহেলা জুন থেকে চলবে বিমান সৌদি আরবে এক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে বাংলাদেশের সাথে কুয়েতের কেন বিমান চলাচল স্থগিত | দিল্লি কেন ভারতের সবচেয়ে বড় করোনাভাইরাস হটস্পট |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | শীতে কাতর: ঢাকার রাস্তায় বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা। তাই এ সপ্তাহে এই বিষয় নিয়েই বেশি চিঠি-পত্র হাতে এসেছে। তবে শুরু করছি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় দিয়ে, লিখেছেন মাদারীপুর থেকে সাবরিন সুলতানা: ''এখন আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এতে করে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দরিদ্র ও অসহায় মানুষজন। ইতোমধ্যে সরকারি উদ্যোগে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে এসব কম্বলের বেশিরভাগই যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকদের বাড়িতে। এখান থেকে ছিটেফোঁটা কিছু অংশ সহায় সম্বলহীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করা হলেও, বাকি বৃহত্তর অংশ বড়লোকদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ভাগ হচ্ছে। কতদিন চলবে এমন?'' আপনার প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই মিস সুলতানা। তবে বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ত্রাণ যদি দুস্থ মানুষের কাছে না পৌঁছায় তাহলে সেটাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না। ব্যাংকিং সংকট: বৃহৎ শিল্পে অল্প জামানতে ঋণ দেয়া বড় সমস্যা। আমাদের অনুষ্ঠানে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে, লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান: ''পহেলা জানুয়ারি সন্ধ্যার প্রবাহ অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতের সংকট নিয়ে সাইয়েদা আক্তারের বিশেষ প্রতিবেদনটি শুনলাম। তবে, প্রতিবেদনটিতে খেলাপি ঋণের যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি প্রধানতম কারণ উল্লেখ করা হয়নি। আসলে যখন কোন বৃহৎ শিল্পে চলতি মূলধন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঋণ প্রদান করা হয়, তখন প্রদানকৃত ঋণের চেয়ে বন্ধকীকৃত জামানতের মূল্য অনেক কম নেওয়া হয়। ''এক্ষেত্রে গ্রাহক খেলাপি হলে ব্যাংক জোরালো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না এবং প্রদানকৃত ঋণের চেয়ে জামানতের মূল্য বেশ কম হওয়ার কারণে অর্থঋণ আইনে বিক্রয় করাও সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক বৃহৎ ঋণ দীর্ঘদিন যাবত অনাদায়ী পড়ে থাকে এবং এরা সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের কাছ থেকে নানাবিধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে।'' কারণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটা উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ মি. রহমান। কিন্তু প্রতিবেদনে যে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং দুর্নীতির আভাস দেয়া হয়েছে, এটাও তারই ফসল বলে আমার মনে হয়। ব্যাংকগুলো যে নামমাত্র অংকের জামানতের বিনিময়ে বড় বড় ঋণ দিয়ে থাকেন, সেটা কি আসলেই ব্যবসায়িক বিবেচনায় দেয়া হচ্ছে, নাকি সেখানে দুর্নীতি বা রাজনৈতিক প্রভাবও কাজ করছে? ব্যাংক পাড়া: মতিঝিল কি রাজনৈতিক প্রভাবে কাবু হয়ে আছে? এবারে আসা যাক আমাদের রেডিও সময়সূচী পরিবর্তনের বিষয়ে। প্রথমে লিখেছেন খুলনার ডুমুরিয়া থেকে দীপক বিশ্বাস: ''অভিনন্দন জানাচ্ছি ১২ই জানুয়ারি হতে আবারো রাতের অধিবেশন ফিরিয়ে আনার জন্য। এর জন্য খুবই ভালো লাগছে। তবে একটু কষ্টও অনুভব করছি, কারণ সকালের অধিবেশনটা হারাতে হচ্ছে। মানে, একটি আঙ্গুল কেটে আর একটি আঙ্গুল স্থাপন করা হচ্ছে। তাতে কোন সমস্যা নেই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, পরপর দুটি না রেখে প্রথমটা আর শেষেরটা রাখলে কি কোন অসুবিধা ছিল?'' হ্যাঁ মি, বিশ্বাস, অসুবিধা অবশ্যই ছিল। প্রথমত, সকালের চেয়ে রাতে অনেক বেশি লোক রেডিও শোনেন। অন্যদিকে, প্রত্যুষা বন্ধ করে দিয়ে আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে লোকবল বাড়াতে পারবো, কিন্তু সকালের প্রত্যুষা বহাল রেখে, সন্ধ্যার প্রবাহ বন্ধ করে পরিক্রমা শুরু করলে সেটা সম্ভব হত না। শ্রোতা সম্মেলন: খুলনায় ২০১১ সালের সম্মেলনে ছবির বাঁ দিকে মুকুল সরদার। খুলনা থেকেই আরেকটি চিঠি, লিখেছেন দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: ''দুই হাজার উনিশ এর শেষ প্রান্তে এসে বিবিসি বাংলার কাছ থেকে পাওয়া ধাক্কাটা সামলে নেওয়া বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের জন্য একটু কষ্টকর হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। আপনারা বলছেন, বাংলাদেশে সকালে রেডিওর যথেষ্ট চাহিদা নেই। আমার কিন্তু তেমনটা মনেই হয় না। পরিক্রমা ফিরে আসার খবরে যতটা খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি হতাশ হয়েছি প্রত্যুষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে। আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত, দিনের শুরুতে একটি অধিবেশন থাকাটা খুবই জরুরি।'' আমিও কিন্তু আপনার সাথে একমত মি. সরদার যে, সকালে একটি অনুষ্ঠান রাখা দরকার। কিন্তু শুধু মাত্র ধারণার ওপর ভর করে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। বাংলাদেশে সকালে শ্রোতা আছে, কিন্তু সেটা রাতের চেয়ে অনেক কম। আর সব চেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশে রেডিওর চাহিদা ক্রমশই কমছে। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাগেরহাট থেকে মোহাম্মদ তৈমুর হুসাইন: ''খুবই আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে,আমি আবার বিবিসি শোনা শুরু করব! কেননা আবার রাতের অধিবেশন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আমি তো ভীষণ খুশি। বিবিসির এই সিদ্ধান্তের সাথে আমি একমত, কেননা সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকলেও রাতের অধিবেশনটা শুনতে কোন অসুবিধা হয়না। রাতের ও সকালের দুটি অধিবেশন বন্ধ হবার পর আমি আর নিয়মিত বিবিসি শুনতে পারিনি।'' পরিবর্তনশীল সম্প্রচার: এক সময়ের বুশ হাউস স্টুডিও থেকে সংবাদ পরিবেশন করছেন মোয়াজ্জেম হোসেন আর মিজান খান। যুক্তিটা সেরকমই মি. হুসাইন। অনেকে সন্ধ্যার অধিবেশন শোনার সময় পান না, সেজন্য পরিক্রমার চাহিদা আছে। আশা করি পরিক্রমা বন্ধ হবার ফলে যারা বিবিসি শুনতে পারছিলেন না, তারা আবার আপনার মত ফিরে আসবেন। তবে আমাদের সিদ্ধান্তে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন ময়মনসিংহের আশেক মাহবুব: ''প্রত্যুষা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত তো নিয়েই ফেলেছেন, বুঝতে পারছি এখন আর বলে কোন লাভ নেই। তবে ঘটনাটা ঘটলো অনেকটা বাংলাদেশ সরকারের স্বৈরাচারী একক সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো। ঘোষণাটা হঠাৎই এলো, আপনারা একটা শ্রোতা মতামত নিতে পারতেন। একেবারেই অযৌক্তিক। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দুটো প্রোগ্রামের কোন যুক্তি কোনভাবেই কেউ দেখাতে পারবে না যেখানে বাকি ২১ ঘণ্টা বিবিসি বাংলা টোটালি নীরব থাকবে। খুবই দুঃখজনক!'' স্বৈরাচারী কি না, তা বলতে পারবো না মি. মাহবুব, তবে এসব সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে এবং একক ভাবেই নিতে হয়। তবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে, বিশেষ করে কোন সময় বাংলাদেশে শ্রোতারা রেডিও শুনছেন, তার ওপর। আমি বলবো, সিদ্ধান্তটা দু:খজনক, তবে অযৌক্তিক না। আরেকটি ছোট প্রশ্ন করেছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ: ''যখন শুনলাম রাতের পরিক্রমা ফিরে আসছে তখন বেশ খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু খুশি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না, যখন শুনলাম প্রত্যুষা বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে আমার সবচেয়ে প্রিয় সংবাদপত্র পর্যালোচনা অনুষ্ঠানটির কী হবে?'' সংবাদপত্র পর্যালোচনাটা আমাদেরও প্রিয় ছিল মি. রশিদ, কিন্তু এটা আসলেই সকালের জন্য উপযুক্ত, সন্ধ্যা বা রাতের জন্য নয়। কাজেই, এই অনুষ্ঠানটি আমাদের হারাতে হচ্ছে। আমাদের একটি না, দুটি ভুল সংশোধন করে লিখেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে মোহাম্মদ রেজাউল রহিম: ''প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই গত সপ্তাহের এডিটারস মেইলবক্সে, স্যার ফজলে হাসান আবেদকে নিয়ে আমার লেখা প্রকাশ করবার জন্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমার নামটি ভুল লেখা হয়েছে। আমার নাম মোহাম্মদ রেজাউল করিম হবে না। আমার নাম মোহাম্মদ রেজাউল রহিম হবে। আর উপজেলা লোহাগড়া হবে না। হবে লোহাগাড়া।'' আমাদের ভুল সংশোধনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মি. রহিম। এবং ভুলের জন্য আমরা অত্যন্ত দু:খিত। নতুন প্রত্যুষা নিয়ে ছোট একটি প্রশ্ন করেছেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে মোহাম্মদ বেলাল হোসেন: ''আগামী ১২ই জানুয়ারি থেকে প্রত্যুষা আর প্রচার হবেনা শুনে দুঃখ পেলাম। সেই সাথে পরিক্রমা প্রচার হবে শুনে আনন্দও পেলাম। পরিক্রমায় শ্রোতাদের চিঠি পত্রের অনুষ্ঠান প্রীতিভাজনেষু থাকবে কি?'' হ্যাঁ মি. হোসেন, পরিক্রমায় প্রীতিভাজনেষু আপাতত রেখে দেয়ার সিদ্ধান্তই আমরা নিয়েছি, যেহেতু এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা শ্রোতা-দর্শক আর পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারি। তবে তার অনলাইন সংস্করণ এডিটারস মেইলবক্স রাখা হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে পাঠকের চাহিদার ওপর। ছোট প্রশ্ন করেছেন পটুয়াখালীর মৌকরন থেকে শাহীন তালুকদার: ''অনুষ্ঠানে বার বার পরিবর্তন এনে বিবিসি বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে । তারপরও বলি, ফোন ইন ও প্রীতিভাজনেষু নিয়ে পরিকল্পনা কী?'' অনুষ্ঠানের সময়সূচী পরিবর্তন করে কোন গণমাধ্যম তার ঐতিহ্য হারায় না মি. তালুকদার। ঐতিহ্যের মূলে আছে সম্পাদকীয় নীতিমালা এবং সংগঠনের মূল্যবোধ। সেগুলো অটুট রাখা মানেই ঐতিহ্য ধরে রাখা। আর ফোন-ইন অবশ্যই থাকবে, যেমন থাকবে প্রীতিভাজনেষু। পরের চিঠি লিখেছেন সাতক্ষিরা সরকারি কলেজ থেকে রাজিব হুসাইন রাজু: ''বিগত সাত বছর ধরে নিয়মিত বিবিসি বাংলা শুনে আসছি। রাতের পরিক্রমা না শুনলে সে সময় আমার ভালো ঘুমই হতো না। ব্যস্ততার কারণে এখন প্রবাহ শুনি বিবিসি বাংলার ওয়েব সাইট থেকে ডাউনলোড করে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি ডাউনলোড করা সংবাদ পরিবেশনা শুনতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি শ্রোতাদের কাছে কিছুটা বিরক্তিকর। ''আশা করি, এই টেকনিকাল সমস্যাটি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমাধান করবেন। রাত সাড়ে ১০টার পরিক্রমা আবারও চালু হচ্ছে জেনে ভালো লাগছে।'' আপনার ভাল লাগছে জেনে আমাদেরও ভাল লাগলো মি. হুসাইন। তবে আমাদের ওয়েব সাইট থেকে অনুষ্ঠানের অডিও ডাউনলোড করার কোন ব্যবস্থা নেই, আগেও ছিল না। আপনি কীভাবে ডাউনলোড করতেন, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। পরের চিঠি লিখেছেন নরসিংদীর পলাশ থেকে মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইকবাল: ''আমি বিবিসি'র একজন নিয়মিত শ্রোতা। তবে সরাসরি অনুষ্ঠান শুনার চেয়ে রেকর্ড থেকেই বেশি শুনে থাকি। লাইভ চলার সময় অফিসে যাওয়া এবং আসার পথে থাকি বলে সম্ভব হয়ে ওঠে না। অফিস এবং বাসায় পৌঁছেই খবর শুনে থাকি। বর্তমানে ওয়েবসাইটে রেকর্ড করা থাকায়, মোবাইলের স্ক্রিন বন্ধ করেও শুনতে পারছি। যা আমার জন্য খুবই উপকারী। বিবিসির টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং ক্লিক ও খুব ভালো লাগে।'' আপনাকেও ধন্যবাদ মি. ইকবাল। আমরা জানি অনেকে স্রোতাই এখন কাজ বা অন্যান্য ব্যস্ততার চাপে অনুষ্ঠান লাইভ শুনতে পারেনা। সেজন্য রেকর্ড করে পরে শোনার সুযোগটা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। বিবিসি বাংলা অ্যাপ নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছেন খুলনার কৌশিক সরদার: ''আপনাদের লাইভ অনুষ্ঠান অ্যাপ-এ শুনি আসছি এক মাসের মতো। কিন্তু ২৮শে ডিসেম্বর থেকে সকালে আর শুনতে পাই না। আবার ২৯ তারিখ সকালের অনুষ্ঠানে বললেন আপনাদের কোন অ্যাপ নেই। তাহলে আপনাদের নামে যে অ্যাপ আছে সেটা কাদের মাধ্যমে চলে?'' বেশ বিপদেই ফেললেন মি. সরদার। বিবিসি বাংলার কোন অ্যাপ নেই। যদি ঐ নামে কোন অ্যাপ বাজারে থাকে তাহলে সেটা ভুয়া এবং বেআইনি। বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করে দেখবো। এবার কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক: কাজী সারোয়ার হোসেন বিপু, মহাখালী, ঢাকা। রতন রঞ্জন রায়, বোদা,পঞ্চগড়। শামীম উদ্দিন শ্যামল, ধানমন্ডি, ঢাকা। আব্দুল কুদ্দুস মাস্টার , ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম। মোহাম্মদ বেলাল, ঢাকা। মোহাম্মদ শাহ জালাল ফয়সাল, ঢাকা। পাংকু মিয়া, ত্রিপুরা। বিলকিছ আক্তার, কাউনিয়া, রংপুর। সামিদুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ। মোহাম্মদ সোহাগ বেপারী, নাংগলকোট, কুমিল্লা। আর হৃদয় হোসেন, বাঘা, রাজশাহী। মেনহাজুল ইসলাম তারেক, পার্বতীপুর, দিনাজপুর। এইচ, এম, তারেক, বন্দর, নারায়নগঞ্জ। মোহাম্মদ সেলিম, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম। সোহেল ৱানা হৃদয়, ঢাকা সেনানিবাস। পলাশ চন্দ্র রায়, মাড়েয়া, পঞ্চগড়। | এডিটারস মেইলবক্স: শ্রোতাদের প্রশ্নের মুখে বিবিসির সিদ্ধান্ত |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | কেনিয়া এয়ারওয়েজের বিমানটি ফ্লাইট শুরু করেছিল নাইরোবি থেকে এরকম মৃত্যু এই প্রথম নয়। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশেরও এক তরুণ চট্টগ্রাম থেকে ওড়া একটি বিমানের চাকার খোপে লুকিয়ে সৌদি আরব যাবার চেষ্টা করেছিল বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। বিমানটি সৌদি আরব অবতরণ করার পর তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু এভাবে যারা আরেক দেশে যেতে চায় তারা ঠিক কোথায় এবং কিভাবে লুকিয়ে থাকে? বিমানটি যখন আকাশে উড়ছে তখন সেখানকার পরিবেশ কেমন হয়? আর, কেউ এরকম করলে তার মৃত্যু কি অনিবার্য? নাকি কেউ কেউ ভাগ্যক্রমে বেঁচেও যেতে পারে? রোববার বিকেলে লন্ডনে অবতরণের আগে - নাইরোবি থেকে আসা কেনিয়ান এয়ারওয়েজের বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারের ঢাকনা খোলার পর - লুকিয়ে থাকা লোকটির মৃতদেহ পড়ে যায় ক্ল্যাপহ্যাম এলাকার এক বাড়ির বাগানে। বিস্ময়করভাবে, এত উঁচু থেকে পড়লেও তার মৃতদেহটি প্রায় অক্ষত ছিল। কিন্তু ভালো করে দেখার পর পরিষ্কার হয়: কেন তা ঘটেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন: লোকটির দেহটা জমে গিয়ে একটা বরফের টুকরোর মত হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপে স্থলপথে বা সমুদ্র পার হয়ে অভিবাসী হবার চেষ্টা প্রতিনিয়তই ঘটছে, কিন্তু বিমানে লুকিয়ে ইউরোপে আসার চেষ্টা বেশ বিরল। এর কারণ অনুমান করা কষ্টসাধ্য নয়। এভিয়েশন সাংবাদিক ডেভিড লিয়ারমন্ট বলছেন, কারণ উড়ন্ত বিমানের চাকার খোপের ভেতরে আপনার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কেমন পরিবেশ হয় ল্যান্ডিং গিয়ারের ভেতরে? মি. লিয়ারমন্ট বলছেন, "প্রথম চ্যালেঞ্জটা হলো, প্লেনটা আকাশে ওড়ার পর পরই যখন চাকাগুলো গুটিয়ে আবার খোপের ভেতরে ঢুকে যায় - সেই সময়টা। " "এ সময় ওই ভাঁজ হতে থাকা চাকাগুলো আপনাকে পিষে মেরে ফেলতে পারে।" বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: উড়ন্ত বিমান থেকে মৃতদেহ পড়লো বাড়ির বাগানে বিমানের নিচের দিকে চাকার খোলের ভেতরে বিবিসির সাংবাদিক রব ওয়াকার দ্বিতীয় ঝুঁকি: গরম আবহাওয়ায় বিমানের ব্রেকগুলো অসম্ভব উত্তপ্ত হয়ে যায়, এবং এর কাছে থাকা অবস্থায় আপনি গরমে ভাজাভাজা হয়ে মারা যেতে পারেন। তবে ধরে নেয়া গেল, আপনি ভাগ্যবান এবং এই প্রথম দুটো ঝুঁকি আপনি পার হয়ে এসেছেন। কিন্তু বিমানটি যখন আকাশে উড়ছে, তখন আপনার সামনে আরো দুটো ভয়ংকর বিপদ উপস্থিত। একটি হলো ঠান্ডায় জমে যাওয়া। দ্বিতীয়টি হলো অক্সিজেনের তীব্র অভাব। মনে রাখতে হবে বিমানের ভেতরে যেখানে যাত্রীরা বসেন - সেখানে বাতাসের চাপ, অক্সিজেনের পরিমাণ এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এত উচ্চতায়ও মানুষের বেঁচে থাকার উপযোগী পরিবেশ কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয় । কিন্তু বিমানের চাকার খোপে তা করা হয় না। দূরপাল্লার যাত্রায় বিমান ওড়ে অন্তত ৩৫,০০০ ফিট উচ্চতায়। সেখানে বিমানের বাইরের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। সেটা হচ্ছে এ্যান্টার্কটিকায় শীতলতম অংশে বছরের গড় তাপমাত্রার সমান। এই ঠান্ডায় সাধারণ কাপড়চোপড় পরে মানুষের পক্ষে বেশিক্ষণ বেঁচে থাকা কঠিন। তা ছাড়া বিমান যখন মাটি থেকে প্রায় ৬-৭ মাইল ওপর দিয়ে উড়ছে - সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম এবং বাতাসের চাপও খুব কম। তাই সে অবস্থায় শ্বাস নেবার সময় মানুষের ফুসফুস ঠিকমত ফোলে না এবং যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন নিতে পারে না। এটাও কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাবার মতোই এক পরিস্থিতি। দূরপাল্লার বাণিজ্যিক ফ্লাইট সাধারণত ৩০ হাজার ফিটেরও বেশি উচ্চতায় ওড়ে তাই বিমানের চাকার খোলে লুকিয়ে যারা বিদেশ যাবার চেষ্টা করেন তাদের বেশির ভাগই বিমান অবতরণের অনেক আগেই ঠান্ডায় এবং অক্সিজেনের অভাবে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন - অথবা মারা যান। বিমান অবতরণের সময়ও বিপদ বিমানটি যখন মাটিতে নামার জন্য এয়ারপোর্টের কাছাকাছি আসছে, তখন ল্যান্ডিং গিয়ারের খোপের ঢাকনাটি খুলে যায়। সেসময় কেউ এর ভেতরে থাকলে তাকে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে খুবই সতর্ক থাকতে হবে, নিরাপদ জায়গায় স্থির থাকার জন্য তার গায়ে যথেষ্ট শক্তি থাকতে হবে। মি. লিয়ারমাউন্ট বলছেন, লুকিয়ে থাকা লোকদের বেশিরভাগই এ সময়টায় বিমান থেকে পড়ে যান - কারণ তারা একটা বিপজ্জনক জায়গায় বসা, অথবা তারা ইতিমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে গেছেন, বা মারা গেছেন। সবাই কি মারা যায় ? নাকি কেউ কেউ বেঁচে থাকতে পারেন? বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ এ্যালেস্টেয়ার রোজেনশাইন বলছেন, "বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।" মার্কিন ফেডারেল বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফএএ) ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত এধরণের ঘটনাগুলোর উপাত্ত পরীক্ষা করেছে। লন্ডনের ক্ল্যাপহ্যাম এলাকার এই বাড়ির বাগানে সবশেষ স্টোএ্যাওয়ের মৃতদেহটি পড়েছে বিমানের চাকার খোলে লুকিয়ে ভ্রমণের চেষ্টাকারীদের ইংরেজিতে বলা হয় 'স্টোএ্যাওয়ে'। এফএএ বলছে, গত ৭২ বছরের সময়কালে ১১২টি ফ্লাইটে ১২৬টি স্টোএ্যাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই ১২৬ জনের মধ্যে ৯৮ জন বিমান অবতরণের আগেই মারা গেছেন, বেঁচে গেছেণ ২৮ জন - এবং বিমান অবতরণের পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা নিহত হয়েছেন - তাদের অনেকে বিমান উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় নিচে পড়ে গেছেন অথবা চাকার খোলের মধ্যেই মারা গেছেন। এফএএ-র উপাত্ত অনুযায়ী ৪০টি দেশে এমন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে কিউবা (৯টি) চীন (৭টি) ডমিনিকান রিপাবলিক (৮টি) দক্ষিণ আফ্রিকা (৬টি) এবং নাইজেরিয়া (৬টি)। কোন কোন ক্ষেত্রে বিমান যেখান থেকে উড়েছে সে তথ্য পাওয়া যায়নি। আঞ্চলিকভাবে দেখতে গেলে - বিমানের নিচে লুকিয়ে বিদেশে যাবার চেষ্টা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে আফ্রিকায় (৩৪টি), ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে (১৯টি), এবং এশিয়ায় (১২টি) বিমান থেকে পড়লো লাশ লন্ডনের হিথরো বিমান বন্দরে অবতরণের পথে আকাশ থেকে লাশ পড়ার ঘটনা এর আগে বেশ অনেকবার ঘটেছে। ২০১৫ সালে পশ্চিম লন্ডনে একটি অফিস ভবনের ছাদে একজন লোকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, জোহানেসবার্গ থেকে হিথরোগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে এই মৃতদেহটি পড়েছে। তার একজন সঙ্গীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তারা পড়েছিল ৪২৭ মিটার ওপর থেকে। বিমান থেকে পড়া লোকেরা বেশির ভাগই ছিল হিথরোগামী ফ্লাইটে এর তিন বছর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের রাস্তায় জোসে মারাদা নামে মোজাম্বিকের এক নাগরিকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে জানা যায় এ্যাঙ্গোলা থেকে আসা একটি বিমান থেকে সে পড়ে গিয়েছিল। ওই একই বছর কেপটাউন থেকে আসা একটি বিমান হিথরোয় অবতরণ করার পর তার নিচে মালপত্র রাখার কুঠরিতে একজন লোকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। চাকার খোলে লুকিয়ে বিমানযাত্রার পর কতজন বেঁচেছেন? বিশেষজ্ঞদের মতে এরকম ক্ষেত্রে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু কিছু লোক সত্যি এর পরও বিস্ময়করভাবে বেঁচে গেছেন। তবে এই দু:সাহসের মূল্য তাদের দিতে হয়েছে নানাভাবে। বেঁচে-যাওয়াদের বেশির ভাগই হাত-পা হারিয়েছেন। কারণ চরম ঠান্ডায় তাদের হাত-পায়ে ফ্রস্টবাইট হয়ে গিয়েছিল অর্থাৎ মাংসপেশী সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে তাদের হাত বা পা কেটে বাদ দিতে হয়। তবে হ্যাঁ, কম দূরত্বের ফ্লাইট যেখানে বিমান অপেক্ষাকৃত নিচু দিয়ে ওড়ে সেখানে স্টোএ্যাওয়ে-দের বেঁচে যাবার কিছুটা সম্ভাবনা থাকে - এটা বলা যায়। ২০১০ সালে ভিয়েনা থেকে একটি প্রাইভেট বিমানের নিচের কুঠরিতে লুকিয়ে লন্ডনের হিথরোতে এসে নেমেছিলেন ২০ বছরের এক রোমানিয়ান তরুণ। তা ছাড়া ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গ থেকে আসা একটি বিমানে লুকিয়ে থাকার যে দুই যুবকের কথা আগে বলা হয়েছে - তার একজন মারা গেলেও অপরজন বেঁচে গেছেন। এরকম ঘটনা আরো আছে। কিউবা থেকে পালিয়ে ১৯৬৯ সালে মাদ্রিদে এসে নেমেছিলেন আরমান্দো সোকারাস রামিরেজ (২২)। তার ফ্রস্টবাইট হলেও শরীরের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি। ১৯৯৬ সালে দিল্লি থেকে বিমানের খোলে লুকিয়ে লন্ডন আসতে চেয়েছিলেন - দুই ভাই বিজয় আর প্রদীপ সাইনি। হিথরোতে নামার পথে খোল থেকে নিচে পড়ে মারা যান বিজয়, কিন্তু প্রদীপ বেঁচে যান। ২০০০ সালে তাহিতি থেকে লসএঞ্জেলেসগামী বিমানে লুকিয়ে ৪,০০০ মাইল পথ পাড়ি দিযেও বেঁচে থাকেন ফিদেল মারুহি। ২০০২ সালে কিউবা থেকে কানাডার মন্ট্রিয়লগামী বিমানে চার ঘন্টার ফ্লাইটের শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ভিক্টর আলভারেজ মোলিনা। ২০১৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে থেকে হাওয়াইয়ের মাওয়ি পর্যন্ত লুকিয়ে বিমানভ্রমণ করেন ইয়াহিয়া আবদি। এভাবে বিদেশে যাবার ঝুঁকি কারা নেবেন? বিমান থেকে মানুষের লাশ পড়ার শেষ ঘটনাটি ঘটেছে লন্ডনে ক্ল্যাপহ্যাম এলাকার এক বাড়ির বাগানে - যা হিথরোগামী বিমানের ওড়ার পথেই পড়ে। সাংবাদিক লিয়ারমাউন্ট বলছিলেন, প্রতিটি বিমানেরই নিচের দিকটা ওড়ার আগে পরীক্ষা করা হয়। এ কাজটা করে একজন স্থানীয় গ্রাউন্ড মেকানিক বা ক্রু এবং কখনো কখনো তারা দুজনে মিলেই এ পরিদর্শনের কাজটা করে। বেশির ভাগ লোকই বিমানের চাকার খোলে বা মালপত্রের কুঠরিতে লুকাতে চান ফলে কেউ যদি বিমানের চাকা বা মালপত্রের কুঠরিতে ঢুকতে চায়, তা করা হয় একেবারে শেষ মুহুর্তে। তাই যারা এ কাজটা করতে সক্ষম হয় - তারা প্রায়ই হয়ে থাকে অদক্ষ কোন বিমানবন্দর কর্মচারী, বা অন্য কোন কর্মীর পরিচিত জন - যাদের এই এলাকায় থাকার মতো নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স আছে। কিন্তু লিয়ারমাউন্ট মনে করেন - যারা এভাবে প্লেনে উঠতে চায় - তারা হয়তো জানে না যে এই চেষ্টাটা কত বিপজ্জনক । এতে রয়েছে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকি। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: মন্দিরে হামলার জেরে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলেন রাহুল গান্ধী ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে সাতটি তথ্য জেনে রাখুন বাংলাদেশকে 'চিবিয়ে খাব' বিজ্ঞাপন নিয়ে ভারতে বিতর্ক | বিমানের চাকার খোলে লুকিয়ে বিদেশে যেতে চাইলে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত - কিন্তু সবাই কি মারা যায়? |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | দিল্লি পুলিশ একজন সিরিয়াল কিলারকে গ্রেপ্তার বলেছে বলে দাবি করেছে। আদতে এক পাশ করা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ৬২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম দেভেন্দার শর্মা। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির উপকন্ঠে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানাচ্ছে। জেরায় মি. শর্মা জানিয়েছেন এতগুলো খুন করেছেন তিনি, যে ৫০ এর পরে আর হিসাব রাখেননি। খুন ছাড়াও কিডনি পাচার এবং আরও নানা জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই ব্যক্তি, এমনটাই দাবি দিল্লি পুলিশের। দিল্লির ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডেপুটি কমিশনার রাকেশ পাওয়েরিয়া বলছেন, "আমাদের ধারণা একশোরও বেশি খুন করে থাকতে পারে এই ব্যক্তি। আমরা উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা আর দিল্লির পুরনো তথ্য খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।" বেশ কয়েকটি খুন আর অপহরণ আর একশোরও বেশি কিডনি পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে রাজস্থানে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছিলেন দেভিন্দার শর্মা। ষোলো বছর কারাবাসের পরে জানুয়ারি মাসে তাকে ২০ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এবং তারপর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। প্যারোল ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই তাকে খুঁজছিল দিল্লি পুলিশ। তারা জানতে পারে যে প্রথমে তিনি দিল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। তারপর তিনি বাপরোলায় চলে যায়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি কিডনি পাচার চক্রের সাথে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ জানাচ্ছে সেখানে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়াকে বিয়ে করে জমি বাড়ির দালালি করছিলেন এবং দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসের একটি বাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন জয়পুরের এক ব্যবসায়ীর কাছে। এইসব সূত্রই দিল্লি পুলিশের কাছে এসে পৌঁছয় আর তার বাসস্থানে তল্লাশী চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ডিসিপি ক্রাইম মি. পাওয়েরিয়া জানিয়েছেন। একজন চিকিৎসক থেকে সাংঘাতিক খুনী হয়ে ওঠার যে বিবরণ মি. শর্মা জেরার সময়ে পুলিশকে দিয়েছেন, তা খুবই অদ্ভুত। বিহার থেকে ডাক্তারি পাশ করে তিনি রাজস্থান চলে যান আশির দশকের মাঝামাঝি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় তিনি একটা রান্নার গ্যাসের এজেন্সি নিতে চেষ্টা করেন। এর জন্য তার ১১ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেলেও তিনি ধোঁকা খান। নেমে আসে আর্থিক অনটন। "তারপরেই ধীরে ধীরে তার অপরাধ জীবনের শুরু। তিনি জাল গ্যাস এজেন্সি খোলেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে। আবার ওদিকে রাজস্থানে কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়েন। ১২৫টি কিডনি তিনি পাচার করেছেন, যার প্রতিটার জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পেতেন। ২০০১ সালে জালিয়াতির জন্য ধরাও পড়েন উত্তরপ্রদেশে," জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এর পরেই তিনি একের পর এক খুন করতে শুরু করেন। তাদের খুন করার কায়দাটা ছিল অভিনব। তিনি এবং সঙ্গীসাথীরা একটি গাড়ি ভাড়া করতেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে যাওয়ার জন্য। চালককে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে খুন করে কাশগঞ্জের হাজারা খালে ফেলে দেওয়া হত বলে পুলিশ জেরা থেকে জেনেছে। ওই খালটিতে প্রচুর কুমীর রয়েছে। মৃতদেহ সেগুলোই খেয়ে ফেলত। তাই দেহ আর খুঁজে পাওয়া যেত না। একই ভাবে রান্নার গ্যাস ভর্তি ট্রাকও ছিনতাই করে চালককে হত্যা করে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হত ওই খালে। মি. পাওয়েরিয়া জানিয়েছেন তারা রাজস্থান পুলিশকে জানিয়েছেন যে দেভিন্দার শর্মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি যেহেতু ওই রাজ্যেই বন্দী ছিলেন, তাই তারাই ধৃতকে নিয়ে যাবেন এখন। | সিরিয়াল কিলার: '৫০টা খুনের কথা মনে আছে, তারপর আর হিসাব রাখি নি' |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | রিফুয়েলিং এর সময় বি-৫২ বোমারু বিমানটিতে গোলযোগ দেখা দেয়। (ফাইল ফটো) সেদিন জ্যাক রেভেলের ঘুম ভেঙ্গেছিল বেশ ভোরে ফোনের শব্দে। ভোর পাঁচটা কি ছয়টা তখন। টেলিফোন করেছেন তাঁর বস। ১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাস। জ্যাক রেভেল তখন মার্কিন বিমানবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট। থাকেন ওহাইওতে। কাজ করেন বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, অর্থাৎ বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলে। পেশাগত কাজে যখন কেউ এভাবে ফোন করেন, তখন কিছু কোড নেম এবং কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেই দিনটা ছিল ব্যতিক্রম। "আমার বস সেদিন কোন কোড নেম বা কোড ওয়ার্ড ব্যবহার না করে সরাসরি আমার নাম ধরে সম্বোধন করলেন। তিনি বললেন, জ্যাক, আমি তোমাকে আমি একটা সত্যিকারের কাজে পাঠাচ্ছি এবার।" জ্যাক রেভেলের কোন ধারণা ছিল না, কী কাজে যাচ্ছেন তিনি। খুব দ্রুত তৈরি হতে হয়েছিল। এরপর ছুটে গেছেন কাছের এক বিমান ঘাঁটিতে। সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত ছিল একটি সামরিক বিমান। তার অপেক্ষায় ছিলেন বিমানবাহিনীর এক পাইলট। যেভাবে এই বিমানটির উড্ডয়নের জন্য সব আনুষ্ঠানিকতা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়েছিল, তাতে পাইলটের মনে হয়েছিল, অতি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে যাচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে ব্যাপারটি কী জানতে চেয়েছিলেন পাইলট। "আমি বিমানে চড়ার আগেই আমার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন। এটা সচরাচর ঘটে না। নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটছে। পাইলট আমার কাছে জানতে চাইছিলো বিষয়টা কী। আমি বললাম, এটা খুবই গোপনীয় ব্যাপার, বলা সম্ভব নয়।" ঘটনাটি নিয়ে এরকম কঠোর গোপনীয়তার দরকার ছিল। কারণ বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়ে যেত দুনিয়া জুড়ে। দুটি পরমাণু বোমা নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনীর এক যুদ্ধ বিমান। আকাশে খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়া বিমানটি পড়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার গোল্ডসবোরোতে। লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেলের কাজ হবে তার দলকে নিয়ে মাটিতে পড়া পরমাণু বোমা নিষ্ক্রিয় করা। আরো পড়ুন: কোন দেশের কত পরমাণু অস্ত্র আছে, কোথায় আছে? ভারত-পাকিস্তান: পারমাণবিক অস্ত্রে কে এগিয়ে? ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে কী আছে? হিরোশিমায় ফেলা হয়েছিল এরকম পরমাণু বোমা। এখনকার হাইড্রোজেন বোমা এরচেয়ে হাজারগুন শক্তিশালী। বিকল বোমারু বিমান: ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৬১ সাল। সেমুর জনসন বিমানবাহিনী ঘাঁটি থেকে আকাশে উড়েছিল বি-৫২ বোমারু বিমান। সেটিতে বহন করা হচ্ছিল দুটি পরমাণু বোমা। মাঝ আকাশে বিমানটিতে রিফুয়েলিং বা জ্বালানি ভরার দরকার হয়। একটি ট্যাংকার বিমান আসে বি-৫২ বোমারু বিমানে জ্বালানি ভরতে। কিন্তু তখনই ট্যাংকার বিমানের পাইলট বি-৫২ বোমারু বিমানকে এই বলে সতর্ক করে দেয় যে তাদের একটি ডানা দিয়ে তেল পড়ছে। তখন রিফুয়েলিং এর চেষ্টা বাদ দেওয়া হয়। বি-৫২ বিমানকে জরুরী অবতরণের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। বিমানের একটি ডানা দিয়ে গল গল করে পড়ছিল জ্বালানি তেল। এটি যখন নর্থ ক্যারোলাইনার একটি বিমান ঘাঁটিতে জরুরী অবতরণের জন্য যাচ্ছিল, একটি ডানা ভেঙ্গে পড়ে। মাঝ আকাশেই বিমানটি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গোল্ডসবরোতে একটি কৃষি খামারে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ছিল পাইলটসহ মোট আট জন ক্রু। এদের মধ্যে তিনজনই নিহত হন। বাকীরা নিরাপদে বিমান থেকে নিজেদের 'ইজেক্ট' করতে সক্ষম হন। প্যারাস্যুটে তারা নীচে এসে নামেন। কিন্তু বিমানে যে দুটি শক্তিশালী পরমাণু বোমা ছিল, সেগুলোর কী হলো? 'ব্রোকেন অ্যারো' সামরিক পরিভাষায় এই দুর্ঘটনাকে উল্লেখ করা হচ্ছিল 'ব্রোকেন অ্যারো' বলে। ২৫ বছর বয়স্ক লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল বিমানবাহিনীর একপ্লোসিভ এন্ড অর্ডন্যান্স ডিসপোসাল টিমকে নিয়ে পৌঁছালেন দুর্ঘটনাস্থলে। তিনি ছিলেন পুরো ইউনিটের অগ্রবর্তী দলের নেতা। ঘটনাস্থলে গিয়ে যা দেখলেন, তাতে তাদের রক্ত হিম হয়ে গেল। "বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে অনেক জায়গা জুড়ে। বিমানটির ইঞ্জিন, লেজ পড়ে আছে নানা জায়গায়। পুরো দৃশ্যটি ছিল আমাদের কল্পনারও বাইরে।" বি-৫২ বিমানটিতে ছিল দুটি থার্মো নিউক্লিয়ার বোমা। বিমানটি যখন ভেঙ্গে পড়ছে, তখন এই দুটি বোমা বিমানটির বোমা রাখার যে বিশেষ প্রকোষ্ঠ, সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। দুটি বোমার সঙ্গেই ফিট করা আছে প্যারাস্যুট। যদি কখনো দুর্ঘটনার শিকার হয় এই প্যারাস্যুট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে ধীরে ধীরে বোমা দুটিকে মাটিতে নামিয়ে আনার কথা। কিন্তু লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল এবং তাঁর দলের কেউ নিশ্চিত নয়, বোমা দুটি মাটিতে পড়ার পর, সেগুলোর কী অবস্থা। "দুটি বোমার একটির প্যারাসুট প্যাক খুলে গিয়েছিল। কাজেই সেটি বেশ ধীরে ধীরে মাটিতে এসে নামে। বোমাটি মাটিতে পড়ার পর প্রায় ১৫ হতে ১৮ ইঞ্চি মাটির গভীরে গেঁথে যায়," বলছিলেন তিনি। "একটা কৃষিক্ষেতের মাঝখানে বোমাটিকে দেখাচ্ছিল ওয়াশিংটনের কোন মনুমেন্টের মতো। এটা দেখতে অনেকটা একটা বর্জ্য ফেলার বিন বা পাত্র, তার মতো। চার-পাঁচ ফুট চওড়া, দশ-বারো ফুট উঁচু, শেষ মাথায় একটা লেজের মতো। লেজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্যারাসুটটি। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, এটা কী? আমি বললাম এটা একটা বোমা!" জ্যাক সেখানে গিয়েই প্রথমে চেক করে দেখলেন বোমার সেফটি সুইচের অবস্থা। সেটি অন হয়নি, অর্থাৎ বোমাটি নিরাপদই আছে। সব নিয়ম মেনে জ্যাক সেটি বোমা থেকে বিচ্ছিন্ন করলেন। পরে এটিকে একটি ট্রাকে করে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বোমাটির বেলায় কাজটা অত সহজ ছিল না। সেখানে ঘটেছিল ভিন্ন ঘটনা। ক্রিসমাস আইল্যান্ডে অনেক পরমাণু বিস্ফোরণ দেখার সুযোগ হয়েছে জ্যাক রেভেলের। কাদামাটির গভীরে 'হাইড্রোজেন বোমা' দ্বিতীয় বোমার ক্ষেত্রে প্যারাসুটটি ঠিকমত খোলেনি। প্রায় সাতশো মাইল বেগে এসে এটি পড়ে মাটিতে। যেখানে এই বোমাটি পড়েছিল সেটি ছিল একটা কাদাময় জলাভূমির মতো। বোমাটি সেখানে সেই কাদা ভেদ করে ঢুকে পড়ে। জ্যাক রেভেল এবং তাঁর দলবল যখন দ্বিতীয় বোমাটির জায়গায় আসলেন, তখন বুঝতে পারলেন পরিস্থিতি কতটা গুরুতর। তারা কী ধরণের বোমা উদ্ধারে কাজ করছিলেন সেটা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। এগুলো ছিল হাইড্রোজেন বোমা, থার্মো নিউক্লিয়ার বোমা। হিরোশিমা বা নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্র যে বোমা ফেলেছিল তার চেয়ে প্রায় হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী এই বোমা। কারণ এই বোমাগুলিতে ছিল দুটি করে পরমাণু অস্ত্র। একটি প্রাইমারি। আরেকটি সেকেন্ডারি। প্রাইমারি ডিভাইস যেটা, সেটা নিউক্লিয়ার ফিশন বা পরমাণু বিক্রিয়ার সূচনা করে এটম বা পরমাণু ভাঙ্গার মাধ্যমে। আর এর মাধ্যমে যে বিস্ফোরণের সূচনা ঘটে, সেটি তাপ, তেজস্ক্রিয়তা এবং চাপ তৈরি করে। আবার এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে দুটি পরমাণুর মধ্যে সংযুক্তি ঘটিয়ে এটিকে এটম বোমা থেকে হাইড্রোজেন বোমায় রূপান্তরিত করা হয়। জ্যাক রেভেল বলছিলেন, কী কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। "এখন এই বোমাটি আমাদের খুঁজতে হচ্ছিল, এমন সব যন্ত্রপাতি দিয়ে, যেসব যন্ত্রপাতি থেকে কোন আগুনের ফুলকি বের হয় না। আমার সঙ্গে ছিল দশজন। আমরা সেখানে রীতিমত খনন কাজ শুরু করে দিলাম।" "আমাদের এমন কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হচ্ছিল, যা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, আমাদের সামনে তো তার কোন টেক্সট বুক ছিল না, কোন চেকলিস্ট ছিল না। কারণ এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্বে এর আগে কেউ হয়নি।" জ্যাক রেভেলের ভাষায়, বিশ্ব হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের এতটা কাছাকাছি আর আসেনি। "এই হাইড্রোজেন বোমার দুটি অস্ত্রের কোনটিরই অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু আমরা জানতাম, যখন আমরা সেখানে কাজ করছিলাম, যে কোন সময় এই অস্ত্র বিস্ফোরিত হতে পারতো। তবে এটা বলা কষ্টকর, বিস্ফোরণের কতটা কাছাকাছি ছিলাম আমরা। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, খুবই কাছাকাছি।" এর মাত্র কয়েক মাস আগেই পরমাণু অস্ত্র নিয়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। পরমাণু অস্ত্র লাগানো ছিল এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্রে আগুন ধরে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পরও ডাক পড়েছিল জ্যাক এবং তার টিমের। দুর্ঘটনাকবলিত মিসাইলটি নিরাপদ করার এবং পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব পড়েছিল তাদের ওপর। কিন্তু এবারের ঘটনা একেবারে ভিন্ন। এখানে তাদের দিনের পর দিন কাজ করতে হচ্ছিল অস্ত্রটির খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাওয়া একেকটি অংশ নিয়ে। "যখন বোমাটি মাটির ভেতরে প্রবেশ করে, প্রায় ৫০ ফিট গভীরে ঢুকে গিয়েছিল। এর খোলস ভেঙ্গে ভেতরের কলকব্জা বেরিয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে কিছু কিছু যন্ত্রপাতি তো খুবই বিপদজনক।" "আমাদের কাছে নিজেদের রক্ষার মতো কোন প্রটেকটিভ স্যুট ছিল না। তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত করার যন্ত্র ছিল না। এমনকি খাবার পর্যন্ত ছিল না। আমাদের কফি আর ডোনাট খেয়ে থাকতে হচ্ছিল। আর তখন আবহাওয়া ছিল খুব ঠাণ্ডা। কোন কোন দিন তুষার পড়ছিল। তাপমাত্রা সবসময় হিমাংকের নীচে।" যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরী। পরমাণু বোমা তৈরির অনেক গবেষণা চালানো হয়েছে এখানে। "আমরা খনন শুরু করলাম। মাটির তিরিশ ফুট নিচে গিয়ে দেখি সেখানে পানির স্তর। পানি উঠে সব ডুবে যাচ্ছিল। তখন আমাদের বহু পাম্প নিয়ে আসতে হয় এই পানি বের করে ফেলার জন্য। যখন আমরা অস্ত্রটির বিভিন্ন অংশ খুঁজে পাচ্ছিলাম, সেটি আমাদের খুঁজতে হচ্ছিল কাদার ভেতরে।" তারপর জ্যাকের টিমের একজন একটা জিনিস আবিষ্কার করলেন। "সার্জেন্ট ল্যারি ল্যাক আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, লেফটেন্যান্ট, আমি একটা জিনিস খুঁজে পেয়েছি। আর্মস সেফ সুইচটি আমি খুঁজে পেয়েছি। আমি বললাম, গ্রেট! কিন্তু ল্যারি বললেন, গ্রেট নয়। এটা আন আর্মড। আমরা যতদূর জানি, এটা কোন ভালো খবর নয়। আমাদের শরীরে ঘাম দেখা দিল।" তারা খনন অব্যাহত রাখলেন। তারপর তারা এই হাইড্রোজেন বোমার যে নিউক্লিয়ার কোর, বা মূল অংশ, সেটি খুঁজে পেলেন। "বোমার প্রাইমারি অংশটিতে থাকে ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম। এই অংশটার বেড়্ হবে একটা ফুটবলের সমান। যখন এটি খুঁজে পাওয়া গেল, টিমের প্রধান হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব বর্তালো, এটিকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসার।" "আমি তখন সেই বিশ-তিরিশ ফুট গর্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে। আমার শরীরে মিলিটারি ইউনিফর্ম। হাতে গ্লোভস। আমার পোশাকের সঙ্গে সেই গ্লোভস টেপ দিয়ে আটকানো। পায়ে বুট। এই ছিল আমাদের পোশাক। আমাদের কাছে আসলে কোন ধরণের প্রেটেকটিভ পোশাকই ছিল না।" "আমি দুই হাতে এই যন্ত্রটি তুলে আমার বুকের কাছে ধরলাম। এরপর সেই অবস্থায় একটা নড়বড়ে কাঠের মই বেয়ে সেই গর্তের ভেতর থেকে আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি উপরে উঠে আসলাম। এরপর যন্ত্রটি একটি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হলো সিমুর জনসন বিমান ঘাঁটিতে।" আট দিন ধরে অনেক তল্লাশি আর খননের পর তারা বোমাটির বেশিরভাগ অংশ খুঁজে পেলেন। কিন্তু একটা অংশ তখনো নিখোঁজ। 'সেকেন্ডারি নিউক্লিয়ার ডিভাইস' তখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। জ্যাক এবং তার টিম ফেরত এলেন। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে আরও পাঁচ মাস ধরে খনন অব্যাহত রইলো। কিন্তু এই সেকেন্ডারি ডিভাইস আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত এই পুরো জায়গাটি মাটি দিয়ে ভরে কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পুরো এলাকাটি কিনে নিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনী। সেখানে পাঁচ ফুটের বেশি খনন করা নিষেধ। ব্লাড ক্যান্সার লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল এবং তার সহকর্মীরা যে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করেছিলেন, সেটি কতটা শক্তিশালী, তা প্রত্যক্ষভাবে জানার সুযোগ হয়েছিল কয়েক মাস পরেই। ক্রিসমাস আইল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কয়টি পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালায়। জ্যাক রেভেলকে সেখানে নেওয়া হয়েছিল। ক্রিসমাস আইল্যান্ডে বিশটি পারমাণবিক পরীক্ষা দেখার সুযোগ হয় তার। "ছবিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের যে দৃশ্য আপনি দেখেন, সেটা দেখে আসলে কিছুই বোঝা যায় না। কারণ আলোর ঝলকানি আর চাপ, এবং শব্দ, এটা এমন এক অভিজ্ঞতা, যে সেখানে ছিল না, তার পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন।" জ্যাক রেভেল একদিন মার্কিন সামরিক বাহিনী ছেড়ে দেন। পরবর্তী জীবনে তিনি সফল এক পরিসংখ্যানবিদ হয়েছিলেন। কিন্তু যে পরমাণু বোমা নিয়ে যে কাজ তিনি করেছেন, তার একটা বিরাট মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। তিনি এখন বিরল এক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। "অনেক ডাক্তার আমি দেখিয়েছি। তারা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছে। কিন্তু সরকার এটা স্বীকার করতে নারাজ যে পরমাণু বিকিরণের শিকার হওয়ার কারণেই আজ আমি এই রোগে আক্রান্ত। আমি বিমানবাহিনীতে যে কাজ করতাম সেটার কারণেই আমার আজ এই অবস্থা।" "আর কিছুদিন পর আমার ৫০তম বিয়ে বার্ষিকী। আমি জানিনা সেই অনুষ্ঠান করার সুযোগ হবে কি-না। যদিওবা হয়, তারপর আর কদিন থাকবো, সেটাও আমি জানি না।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: আইসিইউ-তে মৃত ৮০ শতাংশ রোগীর শরীরে সুপারবাগ শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের সন্তানরা কেন জঙ্গিবাদের দিকে? শ্রীলংকা হামলা: এক হামলাকারীকে ঠেকালেন যিনি | ইতিহাসের সাক্ষী: আকাশ থেকে পড়া হাইড্রোজেন বোমার সন্ধানে |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | অনেক গবেষণা বলে যে, ডিম হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় "দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদানই রয়েছে ডিমে, আর তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ," বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাটের পুষ্টিবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ব্লেসো। অন্যান্য খাবারের সাথে ডিম খেলে তা আমাদের শরীরে বেশি পরিমাণে পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সালাদের সাথে ডিম খেলে তা সালাদ থেকে ভিটামিন এ গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকার কারণে দশকের পর দশক ধরে, ডিম খাওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে-অনেক গবেষণার ফলাফলে বলা হয় যে, ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা মার্কিন খাদ্য নীতিতে থাকা দৈনিক গ্রহণযোগ্য কোলেস্টেরলের মাত্রার অর্ধেক। এই নীতি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করা যায়। তার মানে কি এটা যে, ডিম আসলে আদর্শ খাবারের তুলনায় আমাদের ক্ষতিই বেশি করছে? আরো পড়ুন: মুরগির ডিম থেকে পাওয়া যাবে ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ সিনেটরের মাথায় ডিম ভেঙ্গে ভাইরাল 'ডিম বালক' সপ্তাহে তিনটির বেশি ডিম খেলেই হৃদরোগের ঝুঁকি? কোলেস্টেরল বা এক ধরণের হলুদাভ চর্বি যা আমাদের যকৃত এবং অন্ত্রে তৈরি হয়, তা সব মানুষের দেহকোষেই পাওয়া যায়। সাধারণত আমরা একে 'খারাপ' মনে করি। কিন্তু কোষের মেমব্রেন বা পর্দা গঠনের অন্যতম উপাদান কোলেস্টেরল। দেহে ভিটামিন ডি এবং টেসটসটেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদনেও এটি দরকারি। আমাদের দরকারি সব কোলেস্টেরল আমাদের দেহেই তৈরি হয়। তবে প্রাণীজ খাবার যেগুলো আমরা গ্রহণ করি যেমন গরুর মাংস, চিংড়ি, ডিম, পনির এবং মাখনেও কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। প্রানীজ খাবার যেমন গরুর মাংস এবং ডিমে কোলেস্টেরল পাওয়া যায় রক্তের লাইপোপ্রোটিন অণু আমাদের দেহে কোলেস্টেরল বহন এবং স্থানান্তরিত করে। প্রত্যেক মানুষের দেখে এসব লাইপোপ্রোটিনের আলাদা আলাদা ধরণ থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হবে কিনা তা নির্ধারণ করে এ ধরণের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের উপর। কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল কোলেস্টেরলকে খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে ধরা হয়-যা কিনা যকৃত থেকে ধমনী এবং কোষে পরিবাহিত হয়। গবেষকরা বলেন যে, এর ফলে রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে গবেষকরা অবশ্যই কোলেস্টেরল গ্রহণের মাত্রার সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার কোন সংশ্লিষ্টতা আছে বলে উল্লেখ করেননি। এ কারণেই, মার্কিন খাদ্য বিধিতে কোলেস্টেরল গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি; যুক্তরাজ্যেও এমন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এর পরিবর্তে, সম্পৃক্ত চর্বি খাওয়া কমানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে, এর কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে সতর্ক করা হয়। যেসব খাবারে ট্র্যান্স ফ্যাট বা কৃত্রিমভাবে তৈরি চর্বি থাকে, সেগুলো বেশি পরিমাণে এলডিএল থাকে। যদিও কিছু ট্র্যান্স ফ্যাট পশু থেকে প্রাপ্ত বা উৎপাদিত খাবারে প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়, তবুও এ ধরণের চর্বির বেশিরভাগই কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়। সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এ চর্বি পাওয়া যায় মার্জারিন, স্ন্যাক্স এবং ডুবো তেলে ভাজা এবং বেক করা খাবার যেমন পেস্ট্রি, ডোনাট এবং কেক-এ। ডুবো তেলে ভাজা খাবারে ট্র্যান্স ফ্যাট পাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এরমধ্যে, চিংড়ি ছাড়া ডিম হচ্ছে একমাত্র খাবার যাতে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে কিন্তু সম্পৃক্ত চর্বি থাকে নগণ্য মাত্রায়। "যদিও ডিমে মাংস এবং অন্যান্য প্রাণীজ খাবারের তুলনায় কোলেস্টেরল বেশি থাকে, তবুও সম্পৃক্ত চর্বি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বহু বছর ধরে অনেক গুলো গবেষণায় এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে," বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাটের পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক মারিয়া লুজ ফার্নান্দেজ। যার সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ডিম খাওয়ার সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার কোন সম্পর্ক নেই। ডিমের স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা একটু ভিন্ন খাতে গড়িয়েছে। কারণ আমরা যে কোলেস্টেরল গ্রহণ করি তা পুষিয়ে নিতে সক্ষম আমাদের দেহ। "এর জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে শরীরে, তাই বেশিরভাগ মানুষের জন্য খাদ্য তালিকায় কোলেস্টেরল থাকাটা কোন সমস্যা নয়," বলেন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ট্রাফটস ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞানের গবেষণা বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক এলিজাবেথ জনসন। ২০১৫ সালে ৪০টি গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করেন জনসনের নেতৃত্বে একদল গবেষক। তারা খাদ্য তালিকায় কোলেস্টেরল থাকার সাথে হৃদরোগের কোন ধরণের সম্পর্ক খুঁজে পাননি। "খাবারের সাথে মানুষ কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে তখন যে বিষয়টি ঘটে তা হলো দেহ কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেয়," তিনি বলেন। ডিমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোলেস্টেরলকে অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারিত হওয়া প্রতিরোধ করে আর এটি যখন ডিমের ক্ষেত্রে হয়, তখন বলা যায় যে, এই কোলেস্টেরল সাধারণ স্বাস্থ্য ঝুঁকির চেয়েও কম ঝুঁকিপূর্ণ। কোলেস্টেরল যখন আমাদের ধমনীতে জারিত হয় তখন এটি আরো বেশি ক্ষতি করে। কিন্তু ডিম থেকে পাওয়া কোলেস্টেরল জারিত হয় না, বলেন ব্লেসো। "কোলেস্টেরল যখন অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে ভাঙে বা জারিত হয়, তখন এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে, আর ডিমে সব ধরণের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা একে জারিত হওয়া থেকে রক্ষা করে," তিনি বলেন। এছাড়া, কিছু কিছু কোলেস্টেরল আমাদের জন্য ভালো। উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল কোলেস্টেরল যকৃতে পরিবাহিত হয়, যেখানে এটি ভেঙ্গে যায় এবং শরীর থেকে নির্গত হয়ে যায়। ধারণা করা হয় যে, এইচডিএল রক্তে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না বিধায় এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে প্রভাব রাখে। "রক্তে কি ধরণের কোলেস্টেরল প্রবাহিত হচ্ছে সে সম্পর্কে মানুষের জানা উচিত। তা না হলে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে," বলেন ফার্নান্দেজ। দেহে এইচডিএল এবং এলডিএলের পার্থক্যের হার কত তা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এলডিএল এর ক্ষতিকর প্রভাবকে রুখে দেয় এইচডিএল। যাই হোক, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই আমরা যে কোলেস্টেরল খাই সেটিকে যকৃতে উৎপন্ন কোলেস্টেরলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও ব্লেসো বলেন যে, এক তৃতীয়াংশ মানুষ খাবারের সাথে কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০% থেকে ১৫% বেড়ে যায়। পরীক্ষায় পাওয়া যায় যে, রোগা এবং স্বাস্থ্যবান মানুষদের মধ্যে খাবারের মাধ্যমে কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে তাদের রক্তে এলডিএলের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে, স্থূলকায় এবং ডায়াবেটিক রয়েছে তাদের রক্তে এলডিএল কম পরিমাণে বাড়ে, কিন্তু এইচডিএল বেশি পরিমাণে বাড়ে, ব্লেসো বলেন। তাই আপনি যদি স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকেন তাহলে ডিম খাওয়াটা স্থূলকায় ব্যক্তির তুলনায় আপনার জন্য বেশি ক্ষতিকর। কিন্তু যেহেতু আপনার স্বাস্থ্য ভালো তাই আপনার রক্তে এইচডিএলের মাত্রাও বেশি থাকবে, তাই এলডিএলের মাত্রা বাড়াটা খুব ক্ষতিকর হবে না। এক গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রতিদিন অর্ধেক পরিমাণ ডিম বেশি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত গবেষণা, ডিম যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, এমন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। গবেষকরা ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ১৭ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখেন যে, প্রতিদিন অর্ধেক ডিম বেশি খেলে তা উল্লেখজনক হারে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এমনকি মৃত্যুও ঘটায়। (অবশ্য এ পরীক্ষায় তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও শারীরিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে যাতে করে তাদের উপর ডিমের প্রভাব আলাদা করে লক্ষ্য করা যায়।) "আমরা দেখেছি যে, কোন ব্যক্তি প্রতি ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল অতিরিক্ত গ্রহণ করলে, তা সে যে খাবার থেকেই হোক না কেন, তা তার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ১৭%, মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায় ১৮%," বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রিভেনটিভ মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক নরিনা অ্যালেন। "আমরা আরো পেয়েছি যে, প্রতিদিন অর্ধেক পরিমাণ ডিম বেশি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৬% এবং মৃত্যু ঝুঁকি ৮% বাড়ে।" যদিও এটি এ খাতের বড় গবেষণাগুলোর একটি ছিলো, যা কিনা ডিম এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বিষয় দুটির মধ্যে নির্দিষ্ট সম্পর্ক খুঁজে পায়, তবুও এটি ছিলো আসলে পর্যবেক্ষণমূলক একটি গবেষণা। এটিতে কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে তেমন কিছু বলা হয়নি। এটি তৈরি করা হয়েছিলো একমাত্র অংশগ্রহণকারীদের স্ব-প্রণোদিত হয়ে দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে-এখানে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করা হতো যে, তারা আগের মাসে বা বছরে কি খেয়েছিলো, তারপর বিগত ৩১ বছরে তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে খোঁজ নিয়েছিলো। তার মানে হচ্ছে, অংশগ্রহণকারীরা কী খাচ্ছে, গবেষকরা তার আংশিক জানতে পেরেছিলেন, যদিও সময়ের সাথে সাথে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়। এই গবেষণা আগের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলো। অসংখ্য গবেষণা রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। চীনে ৫ লাখ মানুষের উপর পরিচালিত এক বিশ্লেষণ যা ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়, সেখানে ওই গবেষণার পুরো উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। এতে বলা হয় যে, ডিম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকিকে কমিয়ে দেয়। যারা প্রতিদিন ডিম খান তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৮% কমে যায়। একইসাথে যারা ডিম খান না তাদের তুলনায় স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ২৮%। তবে আগের মতোই এই গবেষণাটিও ছিলো পর্যবেক্ষণমূলক-অর্থাৎ কারণ এবং প্রভাব আলাদাভাবে বোঝাটা আসলে খুবই কঠিন ছিলো। (চীনের স্বাস্থ্যবান লোকেরা বেশি ডিম খান নাকি ডিম তাদেরকে বেশি স্বাস্থ্যবান করে?) এটি আসলেই বিভ্রান্তির একটি বড় অংশ হতে পারে। ভালো ডিম যদিও এসব গবেষণা আমাদের শরীরে ডিম থেকে পাওয়া কোলেস্টেরলের প্রভাব নিয়ে বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে, তবু কিছু উপায় রয়েছে যা আমাদের রোগের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে কোলাইন নামে এক ধরণের ডিম যা আলঝেইমার রোগ থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। এটা যকৃতকেও সুরক্ষা দেয়। কোলাইন, ডিমে থেকে পাওয়া এই উপাদানটি আলঝেইমার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে কিন্তু এটার নেতিবাচক প্রভাবও থাকতে পারে। কোলাইন ভালো মাইক্রোবায়োটার মাধ্যমে বিপাকিত হয়ে টিএমও নামে অণুতে পরিণত হয়। যা পরে মানুষের যকৃতে শোষিত হয়। এই রূপান্তরিত টিএমএও এমন এক ধরণের অণুতে পরিণত হয় যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ব্লেসো বিস্ময় প্রকাশ করেন যে, ডিম থেকে বেশি পরিমাণে কোলাইন খেলে তা টিএমএও-এর উন্নয়ন ঘটায় কিনা। তিনি এক গবেষণায় দেখেন যে, ডিম খাওয়ার পর মানুষ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত টিএমএও-র মাত্রার উন্নয়ন ঘটায়। ডিম খাওয়া এবং টিএমএও নিয়ে এক গবেষণায় এ পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা হলো, এতে টিএমএও সাময়িকভাবে বাড়ে। যাই হোক, শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়েই হৃদরোগের সাথে টিএমএও-এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, যা শুধু রোজার সময়ই সনাক্ত করা সম্ভব। এর থেকে ব্লেসো দেখেন যে, কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর কিভাবে আমাদের রক্তে শর্করা বেড়ে যায়, কিন্তু রক্তে শর্করার বৃদ্ধি শুধু ডায়াবেটিকের সাথে যুক্ত যা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর কারণ এটি হতে পারে যে, যখন আমরা ডিম খাই, তখন কেবল ডিমের কোলাইনের ইতিবাচক সুবিধা পাই আমরা, তিনি বলেন। "সমস্যা হয় যখন রক্তে মেশার পরিবর্তে কোলাইন বৃহদন্ত্রে চলে যায় যেখানে এটি প্রথমে টিএমও এবং পরে টিএমএও-তে পরিণত হয়," ফার্নান্দেজ বলেন। "কিন্তু ডিমে, কোলাইন শোষিত হয় এবং বৃহদন্ত্রে যায় না, তাই এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না।" এরইমধ্যে বিজ্ঞানীরা ডিমের অন্যান্য স্বাস্থ্যকর দিক সম্পর্কে ধারণা পেতে শুরু করেছেন। লুটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে ডিমের কুসুম। চোখে দেখা এবং চোখের রোগ নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত লুটিন। চোখের দৃষ্টির জন্য উপকারী লুটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে ডিম "চোখের রেটিনায় দুই ধরণের লুটিন পাওয়া যায়, যা নীল আলোর ফিল্টার হিসেবে কাজ করে আলো থেকে চোখের রেটিনাকে রক্ষা করে, কারণ আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর," জনসন বলেন। তবে ডিম কেন আমাদের উপর আলাদা আলাদা ভাবে প্রভাব ফেলে তা বুঝতে এখনো ঢের বাকি গবেষকদের, সম্প্রতি পরিচালিত অনেকগুলো গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ডিম স্বাস্থ্যের প্রতি কোন ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে না, উল্টো স্বাস্থ্যের জন্য এটি ভালো। এরপরেও, প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ডিম রাখাটা স্বাস্থ্যকর কোন বিকল্প হতে পারে না যদি না অন্য সব খাবার বাদ দিয়ে শুধু ডিমকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। | ডিম কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি এটি হৃদরোগের কারণ? |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | সারা বিশ্ব জুড়ে, পুরুষের চেয়ে নারীদের আয়ুষ্কাল বেশি। কিন্তু নারী ও পুরুষের আয়ুষ্কাল আলাদাভাবে তুলে আনার পর দেখা যায় নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর দুই মাস, অন্যদিকে পুরুষদের গড় আয়ু ৬৯ বছর আট মাস। ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩ হাজার ৩৬৪ জন ব্যক্তিকে পাওয়া যায় যাদের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা মাত্র নয় হাজার ৯১৬২ জন। অন্যদিকে নারীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ২০২ জন। তাহলে নারীদের মধ্যে এমন কি আছে যার কারণে তারা পুরুষদের চাইতে গড়ে বেশি সময় বাঁচেন? আরো পড়ুন: নারীদের ফেসবুক গ্রুপ: যেখানে একে অপরের সহায়ক খাবার নিয়ে সাবধান হচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা ব্রিটেনে দক্ষিণ এশিয়ান নারীরা কেন ক্যান্সারের কথা গোপন করেন? এখন অনেক নারী ও পুরুষ তাদের শততম জন্মদিন পালন করতে পারছেন। এর কয়েকটি কারণ সনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা: ১. জিন মানুষের মৃত্যুহারের তালিকায় বর্তমানে ৪০টি দেশের তথ্য রয়েছে, যার মধ্যে সুইডেন ও ফ্রান্সের ১৭৫১ এবং ১৮১৬ সালের পুরনো তথ্য পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু জাপান ও রাশিয়ার মতো দেশগুলির তথ্য ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যায়। ওই ডাটাবেসে দেখা যায় যে, প্রতি বছর সব দেশেই নারীর গড় আয়ু পুরুষের গড় আয়ুকে ছাড়িয়ে গেছে। জেনেটিক গঠনের কারণেই পুরুষরা এই অগ্নিরেখায় আছে বলে মনে করা হয়। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: বাংলাদেশ-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি: কী থাকছে চুক্তিতে? কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি মাংস খায়? এক মাস নিজেদের দেহের লোম কামান নি যে নারীরা কলকাতায় মমতা ব্যানার্জীর ধর্ণা: কে এই রাজীব কুমার? নারীদের দুটি এক্স ক্রোমোজম থাকে। ২. ভ্রূণ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ডেভিড জেমস বলেছেন, " নারী ভ্রূণের চেয়ে পুরুষ ভ্রূণ বেশি হারে মারা যায়।" এর সম্ভাব্য কারণ নির্ভর করে লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোমগুলোর কার্যকলাপের ওপর। XX হল নারী ক্রোমোজোম এবং XY হল পুরুষ ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমগুলো আমাদের জিন ধারণ করে থাকে। এক্স ক্রোমোজোমগুলোতে প্রচুর জিন রয়েছে যা আপনাকে জীবিত থাকতে সহায়তা করে। বিবিসি এর ক্রাউড সায়েন্স রেডিও প্রোগ্রামের সাথে কথা বলার সময় ডেভিড জেমস বলেন, "যদি আপনার এক্স ক্রোমোজোমে জেনেটিক ত্রুটি থাকে তাহলে একজন নারীর ব্যাকআপ হিসেবে আরেকটা এক্স ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু পুরুষের এক্স ক্রোমোজোম একটাই থাকায় তাদের ব্যাকআপের কোন সুযোগ নেই।" "বেশি বয়সে গর্ভধারণের কারণে মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুর মারা যাওয়ার হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেয়ার হার ছেলে শিশুদের বেলায় ১৪ শতাংশ বেশি। ছেলে শিশুরা সাধারণত আকারে বড় হয়ে থাকে এবং জন্মের সময় বেশি আঘাত পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে," এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লর্না হ্যারিস বলেছেন। তবে পাখিদের মধ্যে পুরুষের এক্স ক্রোমোজোমের দুটি কপি থাকে। এ কারণে তারা মেয়ে পাখিদের চেয়ে বেশি সময় বাঁচে। পাখিদের মধ্যে পুরুষের এক্স ক্রোমোজোমের দুটি কপি থাকে। এ কারণে তারা মেয়ে পাখিদের চেয়ে বেশি সময় বাঁচে। ৩. হরমোন বয়:সন্ধিকালের সময় শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণে ছেলে ও মেয়েরা পুরুষ ও নারীতে পরিণত হয়। টেস্টোস্টেরন এমন একটি হরমোন যেটা মূলত পুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে। যেমন: দীর্ঘকায় দেহ, শক্তিশালী পেশি, ভারী কণ্ঠ এবং লোমশ শরীর ইত্যাদি। সাধারণত বয়:সন্ধিকালের শেষ সময়টার দিকে ছেলেদের শরীরে এই টেস্টোস্টেরন হরমোন নি:সরণ হয়। এ সময় তাদের মৃত্যুর হার তুঙ্গে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের এই হরমোন বেশি থাকার কারণে তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে উৎসাহী হয়, যেমন লড়াই করা, খুব দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল বা গাড়ি ড্রাইভিং এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও পুরুষের মধ্যে বেশি থাকে। এই হরমোনের কারণেই যেকোনো দুর্ঘটনায় পুরুষদের মৃত্যুর মুখে পড়ার হার বেশি। যুদ্ধের সময় নারীদের চাইতে পুরুষরাই বেশি মারা যান। ১৯ শতকের চৌসুন রাজবংশের আমলে সাম্রাজ্যিক আদালতের কিছু বিস্তারিত তথ্য সম্প্রতি বিশ্লেষণ করেন কোরিয়ান বিজ্ঞানী হান-নাম পার্ক । সেখানে তিনি ৮১ জন নপুংসক ব্যক্তির ওপর বিস্তারিত গবেষণা করতে গিয়ে জানতে পারেন যে তাদের প্রত্যেকের যৌনাঙ্গ বয়:সন্ধির আগেই অপসারণ করা হয়েছিল। তার বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে, ওই নপুংসক ব্যক্তিরা প্রায় ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। যেখানে আদালতের অন্য পুরুষদের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫০ বছর। এছাড়া ওই ৮১ জনের মধ্যে তিনজন তাদের শততম জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন বলেও জানা গেছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, যৌনাঙ্গ-বিহীন পুরুষ সেটা মানুষ হোক বা কোন পশুপাখি, তারা বেশি সময় বাঁচে। এছাড়া নারীদের যৌন হরমোন এস্ট্রোজেনকে "অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট" হিসাবেও দেখা হয়। এর মানে হল যে এটি শরীরের বিষাক্ত রাসায়নিকগুলিকে সরিয়ে দেয় এবং কোষের ওপর চাপ কমায়। তবে পশুপাখিদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, যেসব নারী প্রজাতির এস্ট্রোজেনের অভাব রয়েছে তাদের বেঁচে থাকার হার কম। অর্থাৎ যেসব নারীর যৌন অস্ত্রোপচার হয়নি তারা বেশিদিন বাঁচেন। এখানে বিষয়টি পুরুষদের পুরোই বিপরীত। স্পেনের গবেষকরা ২০০৫ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয়েছে যে এস্ট্রোজেন হরমোন আয়ুষ্কালের সঙ্গে জড়িত জিন এবং এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের কার্যকলাপ বাড়িয়ে দেয়। এস্ট্রোজেন শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নির্মূল করতে সেইসঙ্গে হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে। এস্ট্রোজেন শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নির্মূল করতে সেইসঙ্গে হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে। ৪. অভ্যাস এবং আচরণ যেসব এলাকা সংঘাতপূর্ণ, সেসব এলাকায় থাকা পুরুষদের আয়ুষ্কালও কমতে থাকে। এছাড়া যেসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা অপর্যাপ্ত, সেখানে অনেক নারী শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ওপরও নির্ভর করে কে কতো বছর বাঁচবে সেটা। যেমন রাশিয়ান পুরুষ, রাশিয়ার নারীদের চেয়ে ১৩ বছর আগে মারা যায়, কারণ রাশিয়ার পুরুষরা প্রচুর মদপান করে থাকে। পুরুষদের চাইতে নারীরা বেশি হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ৫. দীর্ঘতর কিন্তু সুস্বাস্থ্যময় নয় এখন যারা ভাবছেন নারীরা এই আয়ুর ক্ষেত্রে একতরফা কোন সুবিধা পাচ্ছে, তাদের এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন যে নারীরা দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন ঠিকই তবে সেটা সুস্থতার সাথে নয়। জীবনের এক পর্যায়ে তারা নানা ধরণের অসুখ বিসুখে জর্জরিত থাকে। বিভিন্ন দেশে ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীরা, একই বয়সের পুরুষদের তুলনায় বেশি ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন। অ্যালাব্যামা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিভেন এন অস্টাড এবং ক্যাথলিন ই ফিশ্চার কেটি বায়োমেডিকেল জার্নাল "সেল প্রেস"এ প্রকাশিত প্রবন্ধে বলেছেন যে, "পশ্চিমা সমাজে নারীরা ডাক্তার দেখান বেশি, ঔষধ গ্রহণ করেন বেশি, এছাড়া কর্মক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে নারীরা বেশি ছুটি কাটান এবং পুরুষদের তুলনায় হাসপাতালে বেশি সময় থাকেন। জীবনের একটি পর্যায়ে নারীদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার সে প্রবণতা দেখা যায় সেটা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে বাংলাদেশসহ , চীন, মিশর, গুয়াতেমালা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জ্যামাইকা, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং তিউনিসিয়া। ২০৩০ সাল নাগাদ নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের ফারাক কমে আসবে। ৬. ব্যবধান ছোট হয়ে আসছে: সাম্প্রতিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের এই ব্যবধান আর থাকবেনা। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের ফারাক শুধুমাত্র এক বছর নয় মাস থাকবে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের মতে, যুক্তরাজ্যে আজ জন্ম নেয়া একটি ছেলে শিশু গড়ে ৭৯ বছর দুই মাস এবং মেয়ে শিশুর ৮২ বছর নয় মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। কাজ বিজনেস স্কুলের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লেস মেহিউয়ের নেতৃত্বে আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুরুষ ও নারীর জীবনকাল ২০২৩ সাল নাগাদ সমান সমান হবে। তিনি বলেন, "আমরা হৃদরোগ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রেও বড় ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছি, সাধারণত পুরুষরা এই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বেশি।" এছাড়া যেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত মৃত্যু কমছে, সেটাও পুরুষদের গড় আয়ুতে অতিরিক্ত বছর যোগ করতে সাহায্য করছে। নিজের হৃদপিণ্ড ব্যাগে নিয়ে ঘুরে বেড়ান যে নারী | নারীরা কেন পুরুষদের চাইতে বেশি বাঁচে? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | পরিবেশবান্ধব থেকেও ফ্যাশনেবল থাকা সম্ভব। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনি চাইলে পৃথিবীকে রক্ষায় কাজ করার পাশাপাশি নিজের পোশাকি রুচির সঙ্গে আপোষ ছাড়াই ফ্যাশনেবল থাকতে পারবেন। সাহায্য করতে পারবেন ফ্যাশন শিল্পের পরিবর্তনে । পৃথিবীর সবুজ রক্ষায় ফ্যাশন সচেতন ভোক্তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ লুসি সিগল। এরপর থেকে কেনাকাটা করার আগে নীচে উল্লেখিত ১০টি উদ্ভাবন, প্রবণতা এবং টিপস বিবেচনায় রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। যা আপনাকে সবসময় স্টাইলিশ থাকতে সাহায্য করবে। আরও পড়তে পারেন: জেনে নিন ফ্যাশন কিভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে মুসলিম ফ্যাশন: বছরে হাজার কোটি টাকার বাজার ফ্যাশন ব্রান্ড জারা'র ক্যাটালগে এটি লুঙ্গি নাকি স্কার্ট? গ্রিন কার্পেট ফ্যাশন পুরস্কার পেয়েছেন মডেল গিসেলে বান্ডশেন। ১. বারবার না কিনে, অদলবদল করুন আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে আলমারির চকমকে এই পোশাকটি আপনি ইতোমধ্যে অনেকগুলো অনুষ্ঠানে পরে ফেলেছেন। কিন্তু পোশাকটি এখনও নতুনের মতো আছে এবং আপনার বন্ধু বান্ধবের অনেকেই সুযোগে আছেন পোশাকটি আপনি কবে বাতিল করবেন। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পোশাকটি এমনই কারও সঙ্গে অদল বদল করে নিতে পারেন, যার ওয়ারড্রবেও হয়তো এমন কোন পোশাক আছে যেটা কিনা তার কাছে পুরনো হলেও আপনার জন্য নতুন। এভাবে অদল বদল অথবা গরিব মানুষদের দান করার মাধ্যমে একটি পোশাকের আয়ু বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব। ওয়েস্ট অ্যান্ড রিসোর্স অ্যাকশন প্রোগ্রাম-র্যাপ নামে একটি দাতব্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, পুরনো পোশাক অদল বদল বা বিতরণের কারণে যুক্তরাজ্যে পোশাক বর্জ্যের পরিমাণ ২০১২ সালের তুলনায় ৫০ হাজার টন কমে গিয়েছে। ওয়াশিং মেশিনে পানির তাপমাত্রা কমিয়ে দিন। ২. তাপমাত্রা কমিয়ে নিন পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হওয়া মানে এই নয় যে দাগযুক্ত ময়লা কাপড় পরতে হবে। কিন্তু যখনই আপনি কাপড় ধুতে যাবেন তখন পানির তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের পরিবর্তে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে নিন। এছাড়া ওয়াশিং মেশিনে টাম্বল ড্রায়ারে কাপড় শুকানোর পরিবর্তে বাইরের বাতাসে কাপড় শুকিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে যতোটা সম্ভব আয়রনের ব্যবহার কমিয়ে হালকা কোঁচকানো পোশাকে অভ্যস্ত হওয়ার কথাও সেখানে উল্লেখ করা হয়। র্যাপের মতে, শুধুমাত্র বাড়িতে ওয়াশিং মেশিনে পানির তাপমাত্রা কমিয়ে সেইসঙ্গে টাম্বল ড্রাইং ও আয়রনের ব্যবহার কমিয়ে কার্বন নি:সরণের হার ৭০ লাখ টন কমানো সম্ভব হয়েছে। পোশাকে নতুনত্ব আনতে পারাটাই আসল কথা। ৩. লেস ইজ মোর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাকের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে দেখা যায়। ২০১৬ সালে শুধু যুক্তরাজ্যেই ১১ লাখ ৩০ হাজার টন পোশাক বিক্রি হয়েছে। তবে এখনকার ভোক্তাদের মধ্যে যে প্রবণতাটি লক্ষ্য করা যায়, সেটি হল টাকা জমিয়ে দামি ও ভালো মানের টেকসই পোশাক কেনা। একটি কাপড় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার, নতুন পোশাকের উৎপাদন কমাতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখে। মনে রাখতে হবে: "সস্তা কিনুন, দু'বার কিনুন!" এম সি হ্যামার তার লাকি প্যান্টস পরে পারফর্ম করছেন। ৪. ভাগ্যবান জামা তত্ত্ব: মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ এমন একটি পোশাক ধরে রাখতে চান যেটার কোন প্রতীকী অর্থ রয়েছে। যদি তিনি বিশ্বাস করেন যে, কোন সফল সাক্ষাতকারের জন্য সেদিনের পরে থাকা জামাটি ভাগ্য-কবজের মতো কাজ করেছে। তাহলে পরের সাক্ষাতকারেরও তিনি এই পোশাকটি পরিধান করতে চাইবেন। একই বিষয় কাজ করে জন্মদিন বা বিয়ের পোশাকের ক্ষেত্রে। এভাবেই আমাদের সবার উচিত নিজেদের প্রতিটি পোশাককে ঘিরে একটি ব্যাখ্যা তৈরি করা। এতে পুরনো পোশাককে ঘিরেও আমাদের ভালোলাগা তৈরি হবে এবং আমরা একে হারাতে চাইব না। অনলাইনে পোশাক অদল বদল করা যায়। ৫. বিনিময় হতে পারে অনলাইনে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে দর কষাকষি করে স্বল্প মূ্ল্যের ব্যবহৃত পোশাক কেনেন। পুরানো কাপড় ফেলে না দিয়ে এমনই কোন অনলাইন শপে নিজের পোশাকটি বিক্রি করা যেতে পারে। এছাড়া অনেক চেইন শপ বা ফ্যাশন হাউজ ব্যবহৃত কাপড় রি-কন্ডিশন স্টকে বিক্রি করে থাকে। এতে পোশাক বিনিময় শিল্পটি যেমন বিস্তার লাভ করবে তেমনি পুরনো পোশাকও পায় নতুনত্বের ছোঁয়া। ইদানিং বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে থ্রিডি মুদ্রিত পোশাক। ৬. থ্রি-ডি মুদ্রণ তেল আবিব-ভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার দেনিত পেলেগ "ফিলাফ্লেক্স" নামের শক্তিশালী ও নমনীয় ফিলামেন্ট ব্যবহার করে থ্রি-ডি মুদ্রিত পোশাক ডিজাইন করেছেন। যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চাইলে যে কেউ তার পুরনো পোশাকে থ্রিডি প্রিন্ট করে নতুন রূপ দিতে পারেন। এ ধরণের একটি প্রিন্টার থাকলে বাড়িতে বসে যে কেউই নিজের কাপড় নিজে ডিজাইন করতে পারবেন। সেলাইয়ের দক্ষতা আপনার পোশাককে নতুন রূপ দিতে পারে। ৭. নতুন কিছু তৈরি করুন আগেকার মানুষের সেলাইয়ের দক্ষতা থাকার কারণে নিজেদের পোশাকটিকে নিজেরাই মাপ মতো বানাতে পারতেন বা কাটছাঁট করে নতুন রূপ দিতে পারতেন। কিন্তু আজকাল কেউ আর সুঁই সুতা হাতে তোলেননা। এখনও অনেকেন বোতাম পর্যন্ত জোড়া দিতে সংগ্রাম করতে হয়। তবে আজকাল সেই মানুষগুলোর সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানা ধাঁচের দর্জির দোকান। আয়োজন করা হচ্ছে সেলাই নিয়ে নানা ধরণের কর্মশালার। এছাড়া অনলাইনে সেলাইয়ের টিউটোরিয়ালগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সামান্য জোড়াতালি, রিফু, বোতাম জুড়ে দেয়া অথবা জিপার প্রতিস্থাপন একটি পোশাককে ডাস্টবিনের পরিবর্তে আপনার ওয়ারড্রবে জায়গা দিতে পারে। এছাড়া পুরাতন পোশাককে মেরামত বা কাটছাঁট করে নতুন করে তোলা যায়। যেমন ফুলপ্যান্ট কেটে বানিয়ে নিতে পারেন শর্টস। প্রিয় টপসটা হয়তো রং করে নিতে পারেন। নতুন পকেট জুড়ে, বোতাম লাগিয়ে বা সেলাইয়ের ফোড় দিয়ে বদলে দিতে পারেন পুরো পোশাকটাই। ফলের তৈরি কাপড় হতে পারে পরিবেশবান্ধব। ৮. ফলের তৈরি কাপড় ফল থেকে তৈরি কাপড় ফ্যাশন শিল্পে নতুন জোয়ার তুলেছে। এখন কমলা, আনারস এমনকি আপেলের শাঁস থেকে তৈরি করা হচ্ছে নানান ধাঁচের কাপড়। সাধারণত নানা ধরণের ফলের বর্জ্যে পলিইউরেথেন মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই কাপড়। এ ধরণের কাপড় এবং চামড়া যেমন হালকা এবং টেকসই। তেমনই পরিবেশ-বান্ধব। কিন্তু এই ফলের তৈরি কাপড় যদি আপনার পছন্দ না হয় তাহলে আপনি "নিউলাইফ"-এর পোশাক পরতে পারেন। "নিউলাইফ" এক ধরণের সুতা যেটা কিনা পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল থেকে বানানো হয়। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টেকসই তুলা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ৯. টেকসই তুলো তুলার উৎপাদন পরিবেশের ওপর একটি বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে। এক কেজি তুলা উৎপাদনের জন্য গড়ে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। একজন মানুষের ২০ বছর সময়ে এই পরিমাণ পানি পান করে থাকে। অথচ ওই এক কেজি তুলা দিয়ে একটি শার্ট ও দুটি জিনসের চেয়ে বেশি কিছু বানানো সম্ভব না। তাছাড়া তুলা চাষের জন্য প্রচুর ফাঁকা জমির প্রয়োজন হয়। সেইসঙ্গে দরকার হয় প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর কীটনাশকের। তবে বর্তমানে কয়েকটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ টেকসই তুলা ব্যবহারের অঙ্গিকার করেছে। এই টেকসই তুলা উৎপাদনে পানি ও কীটনাশকের ব্যবহার যেমন অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। তেমনি কাজের নিরাপদ পরিবেশও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সোলার ফাইবার তৈরি করা হচ্ছে। ১০. সৌর আনুষঙ্গ ভোক্তাদের খুশি করার লক্ষ্যে এখন বাজারে এসেছে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কাপড়। যেটা ভোক্তারা বারবার পরিধান করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তেমনই একটি কাপড় হল "সোলার ফাইবার" বা "সৌর তন্তু"। মূলত সুতার আকারে উৎপাদিত এই সৌর কোষ দিয়ে কাপড় বোনা হয়। সেইদিন আর দূরে নয় যেদিন আমরা নিজেদের মাথার সৌর স্কার্ফটিতে ফোন প্লাগ ইন করে পোর্টেবল চার্জার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো। যেখানে পরনের কাপড়ে পাওয়া যাবে ঘাড় গরম রাখার সুবিধা। | পরিবেশ-বান্ধব থেকেও আপনি হতে পারবেন স্টাইল আইকন: জেনে নিন ১০টি ফ্যাশন আইডিয়া। |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | নাম গোপন করে এই আইএস যোদ্ধা কথা বলেছেন বিবিসির সাথে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন তার কাহিনি - কি ভাবে সিরিয়ার বাশার আসাদ-বিরোধী বিক্ষোভকারী থেকে তিনি একজন সশস্ত্র যোদ্ধায় পরিণত হলেন, নানা সংগঠন ঘুরে একসময় আইএসে যোগ দিলেন, - তার পর আইএস ছেড়ে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিলেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে একটি প্রধান রণক্ষেত্র ছিল রাক্কা শহর - বিশেষ করে যখন তা ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর জিহাদিরা দখল করে নিয়ে তাকে তাদের স্বঘোষিত 'খেলাফতের রাজধানী' বানায়। এটি একজন সিরিয়ানের গল্প - যিনি একজন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী হিসেবে বাশার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দেন - কিন্তু পরে চারপাশের যুদ্ধ-সহিংসতা-রক্তপাতের পরিবেশের মধ্যে নিজেই পরিণত হন এক ঘাতকে। খালেদ (আসল নাম নয়) শুধু যে রাক্কার পরিস্থিতির কারণেই একজন হত্যাকারীতে পরিণত হয়েছিলেন তা নয় - তাকে আসলে এ কাজে যোগ দিতে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। খালেদ বলছেন, "আমাদের প্র্যাকটিস টার্গেট ছিল ধরা পড়া সিরিয়ার সরকারী সৈন্যরা। তাদের বসানো হতো কঠিন সব জায়গায়, যেখানে তাদের গুলি করার জন্য স্নাইপার দরকার হতো। কখনো একদল বন্দীকে বাইরে ছেড়ে দেয়া হতো, বলা হতো, তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট একজনকে এমনভাবে গুলি করতে - যাতে অন্য কারো গায়ে গুলি না লাগে।" তারা আরো প্রশিক্ষণ নেয় কিভাবে মানুষ মারতে হয়। এবং এ কাজে শিকার হিসেবে ব্যবহার করা হতো তাদের হাতে ধরা পড়া বন্দীদের। ছয় জন লোককে ওই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের বলা হয় আলেপ্পোর একটি বিমানঘাঁটিতে হাজির হতে। সেখানে একজন ফরাসী প্রশিক্ষক তাদের শেখাবে কিভাবে পিস্তল চালাতে হয়, কিভাবে আগ্নেয়াস্ত্রে সাইলেন্সার লাগাতে হয়, আর কিভাবে চালাতে হয় 'স্নাইপার রাইফেল' - যা ব্যবহার করে চোরাগোপ্তা বন্দুকধারীরা, লুকোনো একটি জায়গায় বসে থেকে তারা নির্ভুল নিশানায় একটি মাত্র গুলি খরচ করে কাউকে হত্যা করতে পারে। "বেশির ভাগ সময়ই হত্যাকান্ডগুলো ঘটানো হতো মোটরবাইক থেকে। একজন মোটরবাইক চালাবে, আর তার পেছনে যে বসবে সে গুলি করবে। আপনাকে মোটর বাইকটা লক্ষ্যবস্তুর গাড়ির পাশে নিয়ে যেতে হবে - তার পর তাকে গুলি করতে হবে এবং সে পালাতে পারবে না।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: ফেসবুকে গড়ে উঠেছে মেয়েদের ঘুরে বেড়ানোর দল দিল্লিতে কবরকে মন্দির বানানোর খবরে তদন্ত শুরু ভারতে ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে হত্যা: মূল আসামী গ্রেফতার তাইওয়ান কি চীনের অংশ ? নাকি আলাদা দেশ? এই যোদ্ধাটি একসময় সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের কারাগারে আটক ছিলেন খালেদ বলছেন, তিনি শিখেছেন কিভাবে কোন লোককে অনুসরণ করতে হয়, কিভাবে অপরিচিত লোকদের দিয়ে টার্গেটকে চিহ্নিত করতে করতে হয়, কি ভাবে একটা গাড়ির বহরকে বিভ্রান্ত করতে হয়। এটা ছিল একটা রক্তাক্ত, অমানবিক প্রশিক্ষণ। খালেদ ছিলেন আহরার আল-শামের একটি গ্রুপের কমান্ডার। রাক্কার নিরাপত্তা অফিস ছিল তার দায়িত্বে। কিন্তু ২০১১ সালে সিরিয়ান বিপ্লবের যখন সূচনা, তখন খালেদ ছিলেন শান্তিপ্রিয় একজন লোক। বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, "আমি কিছুটা ধার্মিক ছিলাম, তবে খুব গোঁড়া ছিলাম না।" তিনি প্রথম যেদিন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন - সেদিন তার মুক্তি আর সরকার-ভীতি মিলে এক বিচিত্র অনুভুতি হয়েছিল। প্রথমদিকে ওই সব বিক্ষোভে অস্ত্র নিয়ে যাবার কথা কেউ বলে নি, কারো তেমন সাহসই ছিল না।কিন্তু তবু তাদের নিরাপত্তাবাহিনীর গ্রেফতার দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে। একদিন খালেদ নিজেও আটক হলেন। একমাসে কারাগারে থেকে তিনি ছাড়া পেলেন। তবে কারাগারে ঢোকানোর আগে তাকে এত নির্যাতন করা হয় যে তিনি পিঠের ব্যথায় হাঁটতে পারতেন না। সিরিয়ার রাক্কা শহরটি ২০১৪ সালে আইএস যোদ্ধারা তাদের রাজধানী ঘোষণা করে খালেদ বলছিলেন, সবচেয়ে বর্বর অত্যাচার করেছিল বিশেষ একজন নিরাপত্তা রক্ষী। সে খালেদকে বাশার আসাদের একটা ছবির সামনে হাঁটু মুড়িয়ে বসাতো, বলতো "তোমার ঈশ্বর মারা যাবে, কিন্তু বাশার আসাদ মারা যাবে না। সে টিকে থাকবে।" খালেদকে সিলিং থেকে বেঁধে ঝোলানো হতো, কাপড় খুলে তাকে পেটানো হতো। সেই রক্ষীটা বলতো "আমি তোমাকে ঘৃণা করি, আমি চাই তুমি আমার হাতে মরো।" খালেদ বলেন, "আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে যদি আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে আমি যেভাবেই হোক ওকে হত্যা করবো।" ছাড়া পাবার পর বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেবার পর খালেদ সত্যি সত্যি খুঁজে বের করেছিলেন ওই নিরাপত্তা রক্ষীকে। "আমি তাকে ধরে নিয়ে গেলাম একটা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। আমি তার হাত ও জিভ কেটে ফেলেছিলাম, কিন্তু তাতেও আমার তৃপ্তি হয় নি। সে যখন আমাকে অনুনয় করছিল তাকে মেরে ফেলার জন্য তখনই আমি তাকে হত্যা করি। আমি প্রতিশোধ নিতে এসেছিলাম - তাই আমার কোন ভয় করে নি। তাকে অত অত্যাচার করার পরও আমি কোন দু:খ বা অনুতাপ বোধ করি নি।।" কিছুদিন পর খালেদ বিপ্লবের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেললেন। শুধু তার নিজের টিকে থাকার জন্যই তিনি যুদ্ধ করছিলেন। রাক্কা শহরে আইএসের পতাকা যুদ্ধকৌশল নিয়ে বিবাদ, প্রতারণা, ক্ষমতার লড়াইয়ে নানা পরিবর্তন - এসব নানা কারণে বিদ্রোহীরা অনেকেই দল পরিবর্তন করতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটেই খালেদ আহরার আল-শাম ত্যাগ করেন - যারা তাকে একজন ঘাতক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এর পর তিনি যোগ দেন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট আল-নুসরা ফ্রন্টে। সে সময় ইসলামিক স্টেট ছিল ছোট সংগঠন, খালেদ এবং তার সাথীদের হাসি-ঠাট্টার পাত্র। কিন্তু সেই আইএসই ২০১৪ সালে রাক্কা দখল করে নিয়ে তাকে তাদের খেলাফতের রাজধানী ঘোষণা করে। সেখানে তারা কয়েম করে এক ত্রাসের রাজত্ব। শিরশ্ছেদ, ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা, নির্যাতন, শিশুদের সামনে মেয়েদের মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে হত্যা, ধর্ষণ - রাক্কায় সবই করেছে আইএস, বলছিলেন খালেদ । আইএস অন্য দলগুলোর উর্ধতন বিদ্রোহী নেতাদের টাকা এবং বড় পদ দিয়ে 'কিনে' নেয়। খালেদকে প্রস্তাব দেয়া হয় তাদের একজন নিরাপত্তা প্রধান হবার। খালেদ বলেন, তিনি বুঝতে পারছিলেন যে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হলো মৃত্যু পরোয়ানায় সই করা। কাজেই তিনি এক ফন্দি আঁটলেন। "আমি রাজি হলাম, এবং আল-নুসরার নেতা আবু আল-আব্বাসের অনুমতি নিয়ে একজন ডাবল এজেন্ট হয়ে গেলাম। আমি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতাম, কিন্তু গোপনে তাদের সদস্যদের অপহরণ করে হত্যা করতাম।" খালেদের কাজ ছিল তার টার্গেটদের বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা "আবু আল-আব্বাস যা চাইতো তা আমি আইএস-এর কাছে 'ফাঁস' করে দিতাম। এর মধ্যে কিছু সঠিক তথ্যও থাকতো - যাতে আইএস আমাকে বিশ্বাস করে। কিন্তু পাশাপাশি আমি তাদের গোপন তথ্যগুলো জেনে নিতাম।" খালেদ পরিণত হলেন ইসলামিক স্টেটের একজন ঘাতকে। খালেদ বলছেন, আইএসের হয়ে তিনি অন্তত ১৬ জনকে হত্যা করেছেন, তাদের বাড়িতে ঢুকে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল দিয়ে। তার একজন শিকার ছিল একজন ইসলামিক আলেম। "আমি পিস্তল উঁচিয়ে তার বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে তার স্ত্রী চিৎকার করতে লাগলো। সেই আলেম বললো, তুমি কি চাও, টাকা? নিয়ে যাও।যদি আমার স্ত্রীকে চাও, তুমি আমার সামনেই তার সাথে শুতে পারো, কিন্তু আমাকে মেরো না। কিন্তু তার কথা শুনে আমি তাকে হত্যা করতে আরো উৎসাহিত হলাম।" আইএসের আমিররা নতুনত্ব ভালোবাসতো। কিছুদিন পর পরই তাদের নিজেদেরই কেনা লোকদের তারা হত্যা করে তাদের জায়গায় নতুন লোক বসাতো। কখনো বলতো, মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের হামলায় সে মারা গেছে। কখনো কখনো সেটা বলার পরোয়াও করতো না। মাসখানেক পরই খালেদ বুঝলেন. আইএস শিগগিরই তাকেও মেরে ফেলবে। ফলে ঘাতক নিজেই প্রাণের ভয়ে পালালেন, একটা গাড়ি নিয়ে দেইর আল-জুর চলে গেলেন, তার পর সেখান থেকে এলেন তুরস্কে। "আমি বিভিন্ন যুদ্ধে ১০০-র বেশি লোককে হত্যা করেছি। আমি এ নিয়ে অনুতাপ বোধ করি না। কারণ আল্লাহ জানেন আমি কখনো কোন বেসামরিক লোক বা নিরপরাধ লোককে হত্যা করি নি।" খালেদের কথা: "আমি যা করেছি তা অপরাধ নয়, আপনি যথন দেখবেন কেউ আপনার বাপ-ভাই বা আক্মীয়স্বজনকে হত্যা বা নির্যাতন করছে তখন আপনি চুপ করে থাকতে পারবেন না। আমি যা করেছি তা আত্মরক্ষার্থে।" "আমি যখন আয়নায় নিজেকে দেখি আমি নিজেকে একজন রাজপুত্র মনে করি। রাতে আমার ভালো ঘুম হয়। কারণ ওরা আমাকে যাদের হত্যা করতে বলেছিল -তারা সবারই মৃত্যুই প্রাপ্য ছিল।" আমি সিরিয়া ছেড়ে আসার পর আবার এজন বেসামরিক লোক হয়ে গেছি। এখন যখন আমাকে কেউ কোন রূঢ় কথা বলে - আমি শুধু তাদের বলি , "আপনি যা মনে করেন।" | শতাধিক লোককে আমি হত্যা করেছি: আইএসের এক ঘাতকের কাহিনি |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে ৪ঠা ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়ার পর তিন বছরেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অবস্থান বোঝার জন্য অপেক্ষায় থাকার কথা বলছেন। অং সান সু চি' র সরকারের পর এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সরকারের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থানের কোন পার্থক্য হবে কিনা, বাংলাদেশে অনেকে এখন এই প্রশ্ন তুলেছেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে 'হতাশা, সন্দেহ' মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ায় শিবিরগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাঝে নতুন করে হতাশা দেখা দিয়েছে। উখিয়ার কুতুপালং শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মোহাম্মদ নূর বলেছেন, অং সান সু চি'র সরকারের সময়ে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটা আলোচনা চলছিল। এখন মিয়ানমারের সেনা সরকার এ ক্ষেত্রে কি অবস্থান নেবে- এ নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কক্সবাজার ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা (ফাইল ফুটেজ) "গণতান্ত্রিক সরকারের একটা পদ্ধতি এসেছিল। ওদের সাথে বাংলাদেশ সরকার সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচনা চলছিল। এখন সামরিক সরকার গঠন করেছে। এই সামরিক সরকারের সাথে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ বা আলোচনা হবে কিনা-তা এখন বোঝা যাচ্ছে না।" "আর সেনাবাহিনীই নির্যাতন করে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কিভাবে আমরা সেই সেনাবাহিনীর ওপর আশা করতে পারি?" তিনি প্রশ্ন করেন। মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকে হতাশার কথা বলছেন। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সু চি সরকার বনাম সামরিক সরকার কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চি'র সরকার এবং এখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অবস্থানের কোন পার্থক্য হবে কিনা - সেই প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে। ইয়াঙ্গুন থেকে একজন মানবাধিকার আইনজীবী রারেশ মাইকেল জিলজেন মনে করেন, দুই সরকারের অবস্থানে কিছুটা পার্থক্য হবে। তিনি বলেছেন, আগের সরকারের সময়ে চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ ছিল না। এখন সেনা সরকার ঐ চুক্তি মানবে না বলে তিনি মনে করেন। "একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়া স্বত্ত্বেও আগের সরকারের অধীনেও কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেদিক থেকে তেমন একটা পরিবর্তন হবে না।" মিয়ানমারের মানবাধিকার আইনজীবী মি: জিলজেন আরও বলেছেন, "নতুন সরকার আগের চুক্তিগুলোর কোনটি মানবে বলে আমি আশা করি না। আর তারা শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোন সহযোগিতা করবে বলেও আমি মনে করি না, কারণ সেটি তাদের রাজনীতির পুরোপুরি বিপরীত একটি কাজ হবে।" সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং লাই এবং অং সান সু চি মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের কিছুদিন আগেই গত ১৯শে জানুয়ারী দেশটির সাথে বাংলাদেশ এবং চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় পর এই বৈঠকে আবার আলোচনার দিন ঠিক করা হয়েছিল ৪ঠা ফেব্রুয়ারি। তবে নির্ধারিত এই বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সৈয়দা রোযানা রশীদ বলেছেন, আগের সরকারের সাথে সেনা সরকারের অবস্থানের কিছু পার্থক্য হবেই। সেজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে নতুনভাবে কৌশল নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। "দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এখন একটা ছেদ হবেই। এখন নতুন করে ভাবনার বিষয় আছে অবশ্যই। একেবারে নতুনভাবে ভাবতে হবে। কারণ বাংলাদেশ আগে একভাবে ভাবছিল। সেখানে গণতান্ত্রিক সরকার এবং তার সাথে আর্মি থাকলেও আমরা ভাবছিলাম যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, যেখানে সু চি হয়তো তার নীতি পরিবর্তন করবেন - সেটা আন্তর্জাতিক চাপে হোক বা তার নিজের কারণেই হোক।" "সেখানে পুরো জিনিসটা উল্টে গেলো এখন। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমরা আগে আর্মির অবস্থান দেখেছি। সেজন্য আমাদের আসলে অন্য ভাষায় কথা বলতে হবে। অন্যভাবে চাপ দিতে হবে," - বলছিলেন মিস রশীদ। পুরনো আলোচনাই আবার শুরু করবে বাংলাদেশ তবে এখন যে আলোচনা থমকে গেছে, বাংলাদেশ সরকার সেই আলোচনাই আবার শুরু করতে চায়। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছিল ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক সেই চুক্তিকে মূল ভিত্তি হিসাবে তুলে ধরছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দুই দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সেই চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারেই বাংলাদেশ চেষ্টা করবে। "আমরাতো সরকার বা সরকারের এগ্রিমেন্ট (চুক্তি) হয়েছে। কোন ব্যক্তি বিশেষে এগ্রিমেন্ট হয়নি। সুতরাং দ্য প্রসেস শুড কন্টিনিউ। আর আমাদের ইতিহাস আছে, আগে যখন মিয়ানমারে সামরিক সরকার ছিল, সেটা ৭৮ সাল বা ৯২ সাল বলেন, সামরিক সরকারের সময়ই প্রত্যাবাসনটা হয়েছে। সো হোয়াই নট দিজ টাইম?" পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলছেন, "তারা রিপ্যাট্রিয়েশন যদি করে, তাহলে তাদের জন্য একটা সুযোগ যে তারা অন্যদের সাথে আছে। সো দে শুড টেক দ্যাট অ্যাডভান্টেজ। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে-আমরা সেটা আশা করি।" দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তিন বছরেও আং সান সূ চি'র সরকার তা বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয়নি। 'কালক্ষেপণই উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারের' রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। তিনি বলেছেন, চুক্তি করলেও মিয়ানমারের চেষ্টা ছিল কালক্ষেপণ করা। "ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে আমি আশাবাদী হতে চাই। কিন্তু আশাবাদী হওয়ার মতো কোন কারণ এ মুহুর্তে দেখছি না। কারণ আমার মনে হয় যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের ইনটেনশন কখনও পরিস্কার ছিল না। ইভেন আমরা যখন খুবই সিরিয়াস ছিলাম, তখন তারা কিন্তু সিরিয়াস ছিল না।" রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে অং সান সু চি'র সরকারের সাথে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের অবস্থানের কোন পার্থক্য হবে না বলে মনে করেন মিয়ানমারের একজন মানবাধিকার কর্মী উয়ে লোয়। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গঠিত কোফি আনান কমিশনে একজন উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমারের পরারাষ্ট্রনীতি একই থাকতে পারে। "তাদের পররাষ্ট্রনীতি মোটামুটি একইরকম থাকবে। তারা একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে, যিনি কিনা ২০১০ সালের দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনিই এখন পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করবেন। আমি মনে করি, মিয়ানমারের উচিত হবে মিয়ানমার বাংলাদেশ সরকারের সাথে যে চুক্তিতে পৌছেছে এবং বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং জাতিসংঘের সংস্থার সাথে যে চুক্তি হয়েছে - তা সম্মান করা।" প্রত্যাবাসনে সেনাবাহিনীই সবসময় 'মূল ভূমিকায়'? অং সান সু চি ক্ষমতায় থাকাকালে সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে পালিয়ে আসেন। সেজন্য সেনাবাহিনীকে মূল অভিযুক্ত করা হলেও মিজ সু চি রোহিঙ্গাদের পক্ষে শক্ত কোন অবস্থান নেননি। সাবেক একজন কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেছেন, মিয়ানমারের আগের সরকারের নেতৃত্বে মিজ সু চি থাকলেও প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে দেশটির সেনাবাহিনীই মূল ভূমিকায় ছিল এবং সেজন্য এখন অবস্থানে পার্থক্য হওয়ার সম্ভবনা কম বলে তার ধারণা। "হয়তো প্রক্রিয়ার দিক থেকে আমরা কিছুটা বিলম্বিত অবস্থার মধ্যে পড়তে পারি। কিন্তু গত তিন বছর ধরে যে কার্যক্রম হয়েছে, মিয়ানমার সরকার একেবারেই সেগুলো থেকে সরে যাবে তা মনে করছি না। কারণ সরকারের সামনে সু চি থাকলেও সামরিক বাহিনীই এই বিষয়টাতে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল।" "এখন তারাইতো ক্ষমতায় এসেছে সু চিকে সরিয়ে দিয়ে। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যেটুকুই নাড়াচাড়া বা অগ্রগতি হচ্ছিল, তা থেকে তারা সরে যাবে বলে আমার মনে হয় না। তবে এখন তাদের বাস্তব পরিস্থিতির কারণে একটা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা আমি করছি।" কিন্তু মিয়ানমারে এখনও ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ধারণা। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক এদিকে, বাংলাদেশের কক্সবাজারে টেকনাফ এবং উখিয়ায় ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার শিউলী শর্মা। বিভিন্ন শিবিরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে মিজ শর্মা ধারণা পেয়েছেন যে, মিয়ানমারে এখনও যে রোহিঙ্গারা আছেন, তাদের আবার সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় কিনা - শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এমন আশঙ্কা কাজ করছে। "এখন মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়া হতে পারে-এমন আশঙ্কা এখন সবার মাঝে। ফলে তাদের (রোহিঙ্গাদের) মধ্যে হতাশা বেড়েছে, টেনশন বেড়েছে।" রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দেয়া স্বচক্ষে দেখলো বিবিসি সু চি'র সম্মতিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন:জাতিসংঘ সশস্ত্র রোহিঙ্গা মুসলিম গোষ্ঠী 'আরসা'র নেপথ্যে কারা? চীনের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিলেও মিয়ানমারের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে নতুন করে রোহিঙ্গা যাতে না আসে এবং এখানে থাকা শরণার্থীদেরও যেন ফেরত পাঠানো যায়, সেজন্য এখন চীনের সহায়তা নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দা রোযানা রশীদ বলেছেন, "এখানে চীন একটা ফ্যাক্টর। এখানে দ্বিপাক্ষিক যে প্রক্রিয়াটা চলছে, সেখানে চীন আরও বেশি করে ইনভল্ভ করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যতটা চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়, সেই জায়গায় যেতে হবে।" তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের সেনা শাসকদের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো এখন গণতন্ত্রের জন্য যে চাপ দিচ্ছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাতে রোহিঙ্গা ইস্যুকে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালাতে হবে। মিয়ানমার এবং চীনের পতাকা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত সিলগালা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পরিস্থিতি সামলাতে চীনের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। "রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা সবার কাছে অ্যাপ্রোচ করেছি। আমরা মিয়ানমারের কাছে অ্যাপ্রোচ করেছি। সব রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতেও আমরা গেছি। এবং চীন এ ব্যাপারে কিছু অগ্রসর হয়ে এসেছে। জাপানও এগিয়ে এসেছিল। তবে চীন অনেকে অগ্রসর হয়েছে।" মি. মোমেন বলেন, "আমরা চীনকে আস্থার মধ্যে রেখেছি। আমাদের পশ্চিমা অনেক বন্ধু রাষ্ট্রের একটা উৎকণ্ঠা যে এখন বোধায় আরও রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে আসতে পারে। আমরা বর্ডার সিকিউর করে রেখেছি। আগে যারা এসেছিল। আমাদের জনগণই তাদের গ্রহণ করেছিল। এখন আমাদের জনগণ আর তাদের গ্রহণ করার মুড়ে নাই। এখন এই ধরনের দুর্ঘটনা হলে অন্যরা নিয়ে যাক। আমরা নিতে রাজি নই।" মিয়ানমারের পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করা সহসাই সম্ভব নয়-সেটা নিশ্চিত বলা যায়। এখন মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের আলোচনা শুরু করার ক্ষেত্রে চীনের ওপরই নির্ভর করতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। | মিয়ানমার সেনা অভ্যুত্থান: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ কি থমকে গেল? |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমানটি বিশ্বের বহু বিমান সংস্থা ব্যবহার করছিল কিন্তু যে মার্কিন সংস্থা নতুন কোন বিমান নিরাপদ কিনা তার সার্টিফিকেট দেয়, সেই ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসন এফএএ-ও এখন এক জরুরি আদেশে এই বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। তারা বলছে, নতুন কিছু তথ্যপ্রমাণ ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পরই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর বোয়িং কোম্পানির সম্ভবত আর কিছু করার ছিল না । তারাও এর পর পৃথিবীতে তাদের যে মোট ৩৭১টি বিমান উড়ছে - তার সবগুলোকেই ''গ্রাউন্ডেড'' করে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো: ঠিক কি প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা ঝুঁকির কথা এখানে বলা হচ্ছে? গত অক্টোবর মাসে বিধ্বস্ত হয় ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিমান, আর তার মাত্র পাঁচ মাসে পরেই ইথিওপিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। দুটিই ছিল বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমান। এফএএ বলেছে, দুটি দুর্ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তার মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখা যাচ্ছে। সন্দেহের তীর এক নতুন প্রযুক্তির দিকে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহের তীর বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্সে বসানো 'এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম'-এর দিকে। বলা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিমানটির দুর্ঘটনার কারণ ছিল এই প্রযুক্তিই। যুক্তরাষ্ট্রের ফিনিক্স বিমান বন্দরে গ্রাউন্ডেড হয়ে যাওয়া কয়েকটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান এই স্বয়ংক্রিয় এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম একটি নতুন প্রযুক্তি - যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিমানটি যাতে ওপর দিকে ওঠার সময় হঠাৎ থেমে না যায়। একটি বিমান যখন ওপর দিকে উঠছে, তখন মাটির সাথে তার কোণ যদি খুব বেশি বড় হয়, অর্থাৎ তা যদি খুব বেশি খাড়াভাবে ওপর দিকে উঠতে থাকে - তাহলে অনেক সময় তা 'থেমে যেতে' পারে। সেটা যেন না হয় - তা ঠেকানোর জন্যই এই এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম। জানা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পাইলট ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন যে, টেকঅফের সময় সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স বিমানটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। আরো পড়তে পারেন: বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স এইট ওড়া বন্ধ করেছে ভারতও বিমানে ওঠার ভয় কাটাবেন যেভাবে একের পর এক দেশ নিষিদ্ধ করছে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের বহু ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে তারা যে ধরণের সমস্যার কথা বলেন, তার সাথে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হবার সময় যা ঘটেছিল তার অনেক মিল আছে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটিও উড্ডয়নের মাত্র কয়েক মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। অভিযোগকারী আমেরিকান পাইলটরা বলছেন, এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেমটা সক্রিয় হলেই তা বিমানটির নাক নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছে। মার্কিন বিমান-চলাচল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানানোর একটি ব্যবস্থা আছে - তাতে পাইলটরা নাম-পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানেই দু'জন পাইলট নভেম্বর মাসে সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স-এর ঝুঁকি সম্পর্কে দুটি ঘটনা জানিয়েছিলেন। এই পাইলটরা আরো জানান, তারা অটোপাইলট বা স্বয়ংক্রিয় বিমানচালনা পদ্ধতি সক্রিয় করার পরই বিমানটির নাক নিচের দিকে নেমে যায়, এবং বিমানটির বিপদসংকেত ব্যবস্থা থেকে "ডোন্ট সিংক, ডোন্ট সিংক" (ডু্বে যেওনা!) বলে চিৎকার শোনা যেতে থাকে। দুটি ক্ষেত্রেই বিমানটির পতন ঠেকাতে পাইলটকে অন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানটির ধ্বংসাবশেষ এখন এফএএ বলছে, ইথিও্পিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানটির গতিপথের সাথে এর আগে বিধ্বস্ত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিমানটির গতিপথের ব্যাপক মিল দেখা যাচ্ছে। ফ্লাইটরাডারটুয়েন্টিফোর নামে একটি নজরদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স বিমানটির টেকঅফ বা উড্ডয়নের পর যখন ওপর দিকে উঠছে তখন তার গতি কমবেশি হচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের ফ্লাইট উপাত্ত থেকে দেখা যায় তার উচ্চতাও ওঠানামা করছিল। এখন এফএএ যা বলছে, তাতে মনে হতে পারে দুটি দুর্ঘটনার যে মিল তা কোন আকস্মিক ব্যাপার নয় - এরকম কিছু প্রমাণ হয়তো তারা পেয়েছে। লায়নএয়ারে দুর্ঘটনার পর বোয়িং একটি বুলেটিন বের করেছিল - যাতে পাইলটদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয় যে বিমানের সেন্সর থেকে ভুল তথ্য পেলে কি করতে হবে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: মার্কিন সৈন্যরা 'মোটা', চীনারা 'হস্তমৈথুনে আসক্ত' ডাকসুর নতুন ভিপি কে এই নুরুল হক একের পর এক দেশ নিষিদ্ধ করছে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স | বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানকে নিরাপদ মনে করা হচ্ছে না ঠিক কী কারণে? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | মীর নিসার আলী তিতুমীর বিপ্লবী, বিদ্রোহী মীর নাসির আলী বেশি পরিচিত শহীদ তিতুমীর হিসাবে। তিনি শুধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধেই লড়াই করেননি, তিনি বাংলার জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বাঁশের কেল্লা থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মীর নিসার আলী তিতুমীরের নাম উজ্জল হয়ে আছে। তিনি সর্বপ্রথম ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মীর নিসার আলী তিতুমীরের জন্ম ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার বারাসত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে। বাবা সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মা আবিদা রোকেয়া খাতুন। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণের পর তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। কোরান ও হাদিস বিষয়ে অল্প বয়সেই তিনি পাণ্ডিত্য লাভ করেন। পবিত্র হজ্জ পালন করতে গিয়ে মক্কায় অবস্থানকালে তিতুমীর মুক্তি সংগ্রামের পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ১৮২৭ সালে দেশে ফিরে গিয়ে তিনি সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেন। বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১২- লালন ফকির বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৩- সত্যজিৎ রায় বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৪- অমর্ত্য সেন নীলচাষীদের বিদ্রোহের পিছনে ছিল অর্ধ শতাব্দী ধরে নীল চাষীদের উপরে ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচার ও নিপীড়ন। ভারতীয় উপমহাদেশের মাটি নীল চাষের উপযোগী হওয়ায় ব্রিটিশ নীলকররা এতে বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল। প্রথমদিকে নীলচাষ একচেটিয়া ছিল ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির। এই অনুষ্ঠানমালা তৈরির সময় বাংলাদেশে ইতিহাসের অধ্যাপক আব্দুল মোমেন চৌধুরী জানান তিতুমীর জীবন শুরু করেছিলেন একজন সমাজ ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে। "তখন মুসলমান সমাজে যেসব বিদআত (এমন রীতি যা ইসলামসম্মত নয়) এবং শিরক্ (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা) ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলোকে দূর করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন।" "কিন্তু এই ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট পরে একটা অর্থনৈতিক এবং ব্রিটিশ বিরোধী প্রেক্ষাপটে পরিণত হয়েছিল," বলেন আব্দুল মোমেন চৌধুরী। তিতুমীর হিন্দু ও মুসলমান কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে উৎসাহিত করেন। ২৪ পরগণা ও নদীয়ার অনেক কৃষক তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানান কৃষকদের নিয়ে তিতুমীরের আন্দোলন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। "তিতুমীরের আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মকাণ্ড এবং জীবনাদর্শ সব কিছুকেই আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে ঔপনিবেশিক পটভূমিতে," বলেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বাংলায় ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে জয়ী হবার সুবাদে প্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি। "এই বাংলায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে জয়ী হবার সুবাদে প্রথম রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সেখান থেকেই ক্রমাগত সারা উপমহাদেশে তাদের রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত হয়। আবার এই বাংলা থেকেই ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিরোধ আন্দোলন," বলেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন একাধিক এবং অসংখ্য প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছে বাংলায় ইংরেজ রাজত্বের বিরুদ্ধে। "ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনগুলির পটভূমিতে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে তিতুমীরের সংগ্রাম," ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক হোসেন। প্রজাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিকার তিতুমীর করতে চেয়েছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বারাসাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদ্রোহ। তিনি ২৪ পরগণার কিছু অংশ, নদীয়া ও ফরিদপুরের একাংশ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ "বারাসাতের বিদ্রোহ" নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহে তিরাশি হাজার কৃষক সেনা তিতুমীরের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন। "তাঁর আন্দোলনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল উপনিবেশ বিরোধিতায়। এবং এই উপনিবেশ বিরোধিতা করতে গিয়ে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে গিয়ে, তিনি কখনও ভাবেননি যে তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, ক্ষুদ্র একটি শক্তির প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তাঁর বিপরীতে আছে বিরাট, বিশাল, শক্তিধর ইংরেজ রাজশক্তি," বলেছেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বারাসাত বিদ্রোহের পর তিতুমীর বুঝতে পারেন ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য। বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৫-ভাষা শহীদ বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৬-মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৭ নম্বরে বিবেকানন্দ ১৮৩১ সালে তিনি বারাসতের কাছে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে সেখানে অস্ত্র জমা করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা এই কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর আন্দোলনের একটি বড় প্রতীকী তাৎপর্য ছিল অন্যায়, এবং শাসকবর্গের অসঙ্গত শোষণের বিরুদ্ধে একটি ন্যায়সঙ্গত অবস্থান নিয়ে দাঁড়ানো এবং প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা। সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করেন তিতুমীরের আন্দোলনের দ্বিমাত্রিক একটা তাৎপর্য রয়েছে। "তিনি শুধু উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন একথা বললে তাঁর অবদানকে কিছুটা সীমিত করা হয়, খণ্ডিত করা হয়। সমাজে অন্যায়, অবিচার, শোষণের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ, আন্দোলন ও সংগঠন- সেসব ব্যাপারে তাঁর যে অবদান ছিল, ঐটিই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বলে আমার মনে হয়," বলেছেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আঠারোশ একত্রিশ সালে কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে পদাতিক বাহিনী, অশ্বারোহী ও বন্দুকধারী সৈন্যদের একটি বিশাল বাহিনী পাঠায় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি তিতুমীরের সঙ্গে লড়াইয়ের লক্ষ্যে। নারিকেলবাড়িয়ায় ১৮৩১এর উনিশে নভেম্বর ভীষণ যুদ্ধ বাঁধে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ১৮৩১ সালে বারাসতের কাছে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীরা একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে সেখানে অস্ত্র জমা করেছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাদের বাঁশের কেল্লা। তিতুমীর তাঁর অনুসারীদের অভয় দিয়ে বলেন মৃত্যুকে ভয় পলে চলবে না। এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ দেশ উদ্ধার করবে। এই লড়াইয়ের পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে। ইংরেজদের কামানের গোলাবর্ষণে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। তিতুমীর ও তাঁর চল্লিশজন সঙ্গী যুদ্ধরত অবস্থায় সেই বাঁশের কেল্লাতেই প্রাণ হারান। তিতুমীরের এই আন্দোলন, দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগ সব স্বাধীনতাকামীদের মনে প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৮নম্বরে অতীশ দীপঙ্কর বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান বিবিসির জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ২০তম স্থানে সোহরাওয়ার্দী | সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি: বিবিসি বাংলার জরিপে ১১ নম্বরে মীর নিসার আলী তিতুমীর |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | সম্মাননা নিচ্ছেন মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেলে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মেহেরপুরে তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি বলেন, ''সমবেত সাংবাদিক বন্ধুগণ এবং উপস্থিত জনসাধারণ, আপনাদের সামনে আমার মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীকে আপনাদের সামনে সর্বপ্রথমে উপস্থিত করছি। জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ।'' এ সময় সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ ছাড়াও তিনি মন্ত্রী হিসাবে অনুষ্ঠানে হাজির করেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীর নাম ঘোষণা করা হয়। এই মুজিবনগর সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: বাংলাদেশের নামকরণ করা হয়েছে যেভাবে কলকাতায় বাংলাদেশ সংগ্রহশালা স্থাপন নিয়ে জটিলতা শপথ গ্রহণের পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার দেয়ার হচ্ছে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা - যা পরে মুজিবনগর নামে পরিচিতি পায় - সেখানে অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল, তা আয়োজনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সেসময় মেহেরপুরের সাবডিভিশনাল অফিসার তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। মি. চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ওই অনুষ্ঠান আয়োজনের নানা খুঁটিনাটি কথা। ''আমি এবং আমার বন্ধু মাহবুব, আমাদের সহযোগিতায় তাজউদ্দীন সাহেব এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে আমরা সীমান্ত পার করে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম,'' বিবিসিকে জানাচ্ছিলেন তিনি। ''সেই সুবাদে তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় এবং পরের দিকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। আমরা টেলিফোনে কলকাতার সঙ্গে মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গার সংযোগ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলাম।'' তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ''এরই ধারাবাহিকতায় যখন সরকার গঠন করার প্রয়োজন দেখা দিল, তখন আমাকে বলা হলো যে অতিসত্বর সরকার গঠন করা হবে, তোমাদের দিক থেকে একটা প্রস্তুতি নাও। ধারণা দেয়া হলো যে ওই এলাকাটায় এটি গঠিত হতে পারে।'' ''কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তখন আমরা পিছু হটতে শুরু করেছি। পাকিস্তান আর্মি যশোর থেকে আক্রমণ শুরু করেছে, চুয়াডাঙ্গায় বম্বিং শুরু করেছে। আর্টিলারির সহায়তায় তারা বেশ অগ্রসর হচ্ছে। টেকনিক্যাল রিট্রিট বলতে যেটা বোঝায়, আমরা সেটা এর মধ্যেই শুরু করে দিয়েছি।'' ''এসব ঘটনার মধ্যেই আমাদের মাঝে মাঝে বলা হচ্ছে যে, তোমরা তৈরি থেকো, সরকার গঠন হতে পারে। এরকম সময়ে ১৫ই এপ্রিলের দিকে আমরা যখন মেহেরপুরে চলে এসেছি, তখন আমাকে খবর দেয়া হলো যে একটা জায়গা তোমরা বাছাই করো,'' স্মৃতিচারণ করছিলেন মি. চৌধুরী। মুজিবনগর সরকার: বাম থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান, জেনারেল এমএজি ওসমানী তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন ছিলো যে বৈদনাথতলার ওই স্থানটিকে বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আমলে নেয়া হয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, এমন একটি জায়গা বাছাই করতে বলা হয়েছিলো যেখানে ভারত থেকে সহজেই ঢোকা যায়, যে এলাকা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে - বিশেষ করে আকাশ থেকে এবং বাংলাদেশের দিক বিবেচনা করলে একটু যেন দুর্গম হয়। ''লেফটেন্যান্ট কর্নেল চক্রবর্তী নামে বিএসএফের একজন কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৈদ্যনাথতলার আমবাগানটি বাছাই করা হলো। সেখানে আমবাগান থাকায় আকাশ থেকে সহজে দেখা যায় না। মেহেরপুর থেকে ১০/১২ কিলোমিটার দূরত্বে হলেও রাস্তাঘাট নষ্ট থাকায় সহজে যাওয়া যায় না। আবার ভারত থেকে সহজেই সেখানে প্রবেশ করা যায়।'' তিনি বলেন, পুরো বিষয়টির আয়োজন করা হয়েছিল খুবই গোপনে। ''কী হবে সেটা কাউকে বলিনি। তখন আমাদের সীমান্ত এলাকায় রেগুলার ইপিআর নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই সঙ্গে আনসারের একটি ছোট কন্টিনজেন্ট রেখেছিলাম - সীমান্তের প্রতীকী নিরাপত্তার জন্য।'' মি. চৌধুরী বলেন, ''তাদের কাছে গিয়ে আমরা বললাম যে, ভারতের দিক থেকে কয়েকজন লোক আসতে পারে। এখানে একটা জায়গায় অনুষ্ঠান হতে পারে, তোমরা তাদের সাথে যোগাযোগ রেখো এবং যা বলে করো। পরে খবর পাঠানো হলো যে ১৭ই এপ্রিল তোমরা প্রস্তুত থেকো।'' ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পিছু হটে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার কৃষ্ণনগরে পৌঁছেন মাগুরার তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক ওয়ালিউল ইসলাম এবং পাবনার প্রশাসক নুরুল কাদের। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের খবর তাদের কাছেও পৌঁছেছিল, বলছেন ওয়ালিউল ইসলাম। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন,''তখন মেজর ওসমান চুয়াডাঙ্গা থেকে তার হেডকোয়ার্টার মেহেরপুরে নিয়ে গেছেন। চুয়াডাঙ্গায় কিছু বোমাবর্ষণ হওয়ায় তারা জায়গা বদল করেছেন। ওখানে দুই দিন থাকার পরে আমরা যখন ভারতে প্রবেশ করি, তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে।'' ''সেখান থেকে আমরা কৃষ্ণনগরে গেলাম - এটা ১৬ তারিখের কথা। নুরুল কাদের আমাকে বললেন, তুমি কাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চলে এসো, কিছু কাজ আছে।'' ''আমি সাড়ে ৮টা-পৌনে ৯টার দিকে গেলে তিনি বললেন, নদীয়ার ডিএম (ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট) খুঁজছে, তুমি একটু কথা বলো। আমি ফোন করলে তিনি বললেন, দেখুন আমাদের কাছে খবর আছে, আমাদের কাছাকাছি বাংলাদেশের ভেতরে আপনাদের সরকার শপথ নেবে। তো, আপনারা যারা এখানে আছেন, তাদের পাঠিয়ে দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ পেয়েছি,'' বলছেন মি. ইসলাম। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে সকালে। মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানান, স্থান নির্বাচনের পর তাদের অনুষ্ঠান আয়োজনের যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলো। ''সেখানে আমরা ছোট একটা মঞ্চের মতো ব্যবস্থা করলাম। কাছাকাছি ভবেরপাড়ার একটি মিশনারি হাসপাতাল থেকে কিছু চেয়ার টেবিল ধার করে নিয়ে আসলাম। ভারতীয় আর্মির কিছু লোককে যেতে দেয়া হলো, যাতে কোন বিমান হামলা হলে সেটাকে দমন করা যায়।'' তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ''আমাদের লোকজনকে নিয়েও একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলো, যাতে শত্রু আক্রমণ করলে প্রতিরোধ করে সবাই নিরাপদে চলে যেতে পারেন।ওই সময় যুদ্ধের পরিস্থিতিতে গ্রামেগঞ্জে খুবই সীমিতভাবে আয়োজন করতে হয়েছিল।'' সকাল ৯টার সময় থেকে অনুষ্ঠানস্থলে আমন্ত্রিত অতিথিদের আসা শুরু হয়। কৃষ্ণনগর থেকে সেখানে গিয়ে ওয়ালিউল ইসলাম দেখতে পান, বৈদ্যনাথতলায় একটি মঞ্চ বানানো হয়েছে। মঞ্চে সাতটি বা আটটি চেয়ার ছিল, যার একটি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য খালি ছিল। সেখানে 'ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স' পাঠ করলেন গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী। তিনিই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। ''এরপর আমরা ভেবেছিলাম ইপিআরের লোকজনকে দিয়ে একটা গার্ড অব অনার দেয়া হবে। কিন্তু মেজর ওসমানসহ ইপিআরের লোকজন তখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। তখন আমি বিকল্প সমাধান খুঁজতে বাধ্য হলাম,'' বলছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ''সেখানে আনসারের যে লোকজন ছিল, তাদের একত্রিত করে আমার বন্ধু মাহবুব - যে ঝিনাইদহের এসডিও ছিল। যেহেতু তার গার্ড অব অনার দেয়ার প্রশিক্ষণ রয়েছে, তখন তাদের নিয়ে একটি রিহার্সাল দেয়া হলো। এরপরে তারাই গার্ড অব অনার দিলেন।'' তখন সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদেরও পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং উপস্থিত অভ্যাগতদের সঙ্গে। ওয়ালিউল ইসলাম বলছেন, ''গার্ড অব অনারের পর তৌফিক এসে বললো, 'আপনারা যারা মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই'। তখন আমরা সাত অথবা আটজন দাঁড়ালাম। বাকিরা সবাই সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বা ক্যাপ্টেন পদের কর্মকর্তা ছিলেন। কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো যে আমি একজন প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা।'' অনুষ্ঠানটি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানাচ্ছেন যে গোটা সময়টা জুড়ে তার মধ্যে একটা উদ্বেগ কাজ করছিল। ''সব সময়ে একটা ভয় ছিল কোন কারণে যদি পাকিস্তান আর্মি আক্রমণ করে বসে! তবে একটা আশার কথা ছিল যে, ওখানে আসতে হলে ভারতের আকাশসীমা হয়ে আসতে হয় - না হলে বিমান ঘুরতে পারে না। তাই একটা চেষ্টা ছিল যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু শেষ করে চলে যাওয়া। অনুষ্ঠানটি দীর্ঘায়িত করার কোন পরিকল্পনা ছিল না।'' আমবাগানের ঘন পাতার আচ্ছাদনে আড়াল করা ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নবগঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ তার ভাষণে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ''আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্যে যে, তারা আমাদের আমন্ত্রণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি দেখে যাওয়ার জন্য বহু কষ্ট করে, বহু দূর দূরান্ত থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন।'' তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সেদিন অনুষ্ঠানে অন্ততপক্ষে একশো' সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছিলেন, আর তাদের মধ্যে ছিলেন অনেক বিদেশী সাংবাদিক। ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ১০ই এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে সার্বভৌম বাংলাদেশের যে সরকার গঠন করা হয়েছিল, ১৭ই এপ্রিল সেই সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লড়াই একটা অঙ্গীকার পেয়েছিল। ''আমি সেখানে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম, এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানিরা কখনোই এখানে জয়লাভ করতে পারবে না। সরকার গঠন হওয়ায় আমি এটাকে একটা পজিটিভ দিক হিসাবে দেখেছি যে এর ফলে আমরা আনুষ্ঠানিকতা পেলাম, একদিন স্বাধীন আমরা হবোই,'' বলছিলেন ওয়ালিউল ইসলাম। সেদিন ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলো মেহেরপুরের একটি অখ্যাত আমবাগান। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ''ওই আমবাগানটা খুব ঘন আমবাগান। অনেক পুরনো আমগাছ - গাছে গাছ লেগে ছাতার মতো হয়ে থাকে। দিনের আলো ঝিলমিল করছিল, আনন্দঘন উৎসবের মতো লাগছিল। মনে হচ্ছিল প্রকৃতিও যেন এটাকে সমর্থন দিচ্ছে, আর রূপকথার মতো অনুষ্ঠানটা শেষ হলো।'' ''অজপাড়াগায়ের একটি পল্লী - যে আমবাগানে কখনো কিছু হতো না - সেখানে একটা দেশের সরকারের প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। আমারা সবাই যখন চলে গেলাম, তখন যেন রূপকথার রাজকন্যাকে সোনার কাঠি দিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো।'' | মুজিবনগর সরকার: ১৯৭১ সালে যেভাবে শপথ নিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | কিছু ধর্মীয় নেতা "হালাল বিয়ের" নামে নারী ও শিশুদের শোষণ করে আসছে। ইরাকের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাজারের আশেপাশে ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা পরিচালিত কাজী অফিসগুলোয় গোপন অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ধর্মীয় নেতা স্বেচ্ছায় খুব স্বল্প সময়ের জন্য মাঝে মাঝে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য 'উপভোগের জন্য বিয়ে' দিয়ে থাকে যেন যৌনমিলনকে বৈধতা দেয়া যায়। কেউ কেউ নয় বছরের কম বয়সী মেয়েদেরও এই 'অস্থায়ী বিয়ে'র জন্য স্বেচ্ছায় সরবরাহ করেছে। তারা এই উপভোগের বিয়ের জন্য কনে হিসাবে নারী, এমনকি এবং অল্প বয়সী মেয়েদের সরবরাহ করার প্রস্তাবও দিয়েছিল। প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়েছে যে ধর্মীয় নেতারা শিশুদের যৌন নির্যাতনকে আশীর্বাদ জানানোর মাধ্যমে দালাল হিসেবে কাজ করছে। আরো পড়তে পারেন: বুয়েটের হল থেকে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার দুর্গাপূজা: নারীরা যেখানে কাঁধে তুলে নেয় ঢাক যুবলীগ নেতা সম্রাট যেভাবে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলেন 'বাংলাদেশের উপকূলে ভারতীয় রেডার ব্যবস্থার লক্ষ্য চীন' নাওয়াল আল-মাগাফির নেতৃত্বে বিবিসির তদন্ত শেষ হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। উপভোগের জন্য বিয়ে বা অস্থায়ী বিয়ে উপভোগের জন্য বিবাহ - নিকাহ মুত'আহ - একটি বিতর্কিত ধর্মীয় রীতি যা শিয়া মুসলমানরা অস্থায়ী বিয়ের জন্য ব্যবহার করে। এর বিপরীতে নারীদের অর্থ প্রদান করা হয়। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় তথাকথিত 'মিসিয়াহ' বিয়ে একই ধরণের কাজ সম্পাদন করে। মূলত এই প্রথায়, একজন পুরুষকে ভ্রমণের সময় তার স্ত্রীকে সঙ্গে রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে আজকাল এই প্রথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে নারী ও পুরুষকে সীমিত সময়ের জন্য যৌন মিলনের অনুমতি দিতে। এই অনুশীলনটি মুসলমান পণ্ডিতদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করেছে। কারও কারও মতে এর মাধ্যমে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে এবং বিবাহ কীভাবে স্বল্পমেয়াদী হতে পারে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিবিসি'র ইরাকি ও ব্রিটিশ দল বিষয়টি নিয়ে ১১ মাস অনুসন্ধান চালিয়ে, ধর্মীয় নেতাদের ছবি গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করে, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের সাথে যোগাযোগ করে, সেই সাথে সেইসব পুরুষদের সাথে কথা বলে যারা অস্থায়ী বিয়ের জন্য নারীদের পেতে ধর্মীয় নেতাদের টাকা দিতো। ১৫ বছরের যুদ্ধের পরে, আনুমানিক ১০ লাখ ইরাকি নারী বিধবা হয়ে পড়েন এবং আরও অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে যান বলে ধারণা করা হয়। বিবিসির দল জানতে পেরেছে যে দারিদ্র্যের কারণে অনেক নারী এবং মেয়েরা এই অস্থায়ী আনন্দ বিবাহ প্রথায় প্রবেশ করছে। বিবিসির প্রতিবেদক একজন ভুক্তভোগী মেয়ের সাক্ষ্য শুনেছিলেন যিনি অভিযোগ করেছেন যে তাকে একজন ধর্মীয় নেতা এমন কাজের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। ব্যাপক সহজলভ্য ডকুমেন্টারি দলটি প্রমাণ পেয়েছিল যে ইরাকের পবিত্রতম দুটি মাজার অঞ্চলে অস্থায়ী বিবাহ ব্যাপকভাবে প্রচলিত। উদাহরণস্বরূপ, বাগদাদে শিয়া মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাজার কাদিমিয়ায় ১০ জন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে তারা কথা বলেছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন বলেছেন যে তারা অস্থায়ী বিয়ের ব্যবস্থা করবেন; পাঁচজন বলেছেন যে তারা ১২-১৩ বছর বয়সের একটি মেয়ের সাথে অস্থায়ী বিয়ে করাবেন। বিশ্বের বৃহত্তম শিয়া তীর্থস্থান কারবালায় বিবিসির এই দলটি চারজন ধর্মীয় নেতার কাছে যান। তাদের মধ্যে দু'জন অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে অস্থায়ী বিয়ে করাতে রাজি হন। চারজন আলেমকে গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল। তিনজন বলেছেন যে তারা নারী সরবরাহ করবে, আর চারজনের মধ্যে দুজন বলেছেন যে তারা অল্প বয়সী মেয়ে সরবরাহ করবে। বাগদাদের একজন আলেম সাইয়িদ রাদ বিবিসির গোপন প্রতিবেদককে বলেছিলেন যে শরিয়া আইনে অস্থায়ী বিবাহের কোনও সময়সীমা বেধে দেয়া হয়নি: "একজন পুরুষ তার যত খুশি নারীকে বিয়ে করতে পারবেন" "আপনি আধা ঘণ্টার জন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন এবং যত তাড়াতাড়ি তা শেষ হবে, তাৎক্ষণিকভাবে আপনি অন্য আরেকজনকে বিয়ে করতে পারবেন। কাদিমিয়া শিয়া মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান নয় বছরের বেশি হলেই হয় অনুসন্ধানকারীরা যখন সাইয়িদ রাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে কোনও শিশুর সাথে অস্থায়ী বিয়ে করা গ্রহণযোগ্য কিনা, তখন ওই আলেম জবাব দিয়েছিলেন: "কেবল সতর্ক থাকতে হবে ওই শিশু যেন তার কুমারীত্ব না হারায়।" তিনি আরও বলেন: "আপনি তার সাথে ফোরপ্লে করতে পারেন, তার সাথে শুয়ে থাকতে পারেন, তার শরীর, তার স্তনগুলো স্পর্শ করতে পারেন ... আপনি তার সামনে থেকে সেক্স করতে পারবেন না বলে পায়ু পথে করতে পারবেন।" মেয়েটিকে আহত হলে কী হবে, এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে আলেম তাড়াহুড়ো করে জবাব দেন। "মেয়েটি ব্যথা নিতে পারবে কি পারবে না সে বিষয়টি আপনার এবং তার মধ্যকার ব্যাপার।" কারবালার একজন আলেম শেখ সালাউইকে তদন্তকারী গোপন ক্যামেরায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কোনও ১২ বছরের কিশোরী কী মুত'আহর জন্য গ্রহণযোগ্য হবে? "হ্যাঁ, নয় বছরের বেশি হলেই হবে- কোনও সমস্যা নেই। শরিয়া অনুসারে কোনও সমস্যা নেই," তিনি বলেছিলেন। সাইয়্যিদ রাদের মতো তিনিও বলেছিলেন যে একমাত্র বিষয় হল মেয়েটি কুমারী কিনা। সেক্ষেত্রে ফোরপ্লের অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং নাবালিকা সম্মতি জানালে পায়ুপথে সেক্সও গ্রহণযোগ্য, তিনি আরও বলেন: "আপনি যা চান তা করুন।" কাদিমিয়া মাজার ফোনে বিয়ে শিশুদের সাথে অস্থায়ী বিয়ের প্রক্রিয়াটি পরীক্ষা করার জন্য, এই প্রতিবেদক সাইয়্যিদ রাদকে 'শায়মা' নামে একটি কাল্পনিক ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর বর্ণনা দিয়েছিলেন যার সাথে তিনি অস্থায়ী বিয়ে চান। বাস্তবে মেয়েটির ভূমিকায় বিবিসির একজন সহকর্মী অভিনয় করেছিলেন। সাইয়িদ রাদ ওই মেয়েটির সাথে দেখা করেননি বা তার পরিবারের সাথে কথা বলেননি। ছদ্মবেশী প্রতিবেদকের সাথে ট্যাক্সিতে বসে ফোনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করতে রাজি হন তিনি। তিনি মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করন: "শায়মা, তুমি কি তাকে বিয়ে করার ব্যাপারে আমাকে তোমার সম্মতি জানাতে রাজি হয়েছ এবং এক দিনের জন্য সে দেড় লক্ষ দিনার দেবে?" শেষে তিনি বলেন: "এখন আপনারা দুজনই বিবাহিত এবং আপনাদের এক সাথে থাকা হালাল।" তিনি কয়েক মিনিটের আনুষ্ঠানিকতার জন্য গোপন প্রতিবেদকের কাছে ২০০ ডলার দাবি এবং কাল্পনিক ১৩ বছর বয়সের মেয়েটির কল্যাণের জন্য কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। দারিদ্র্যের কারণে অনেক নারীকে পথে আসতে বাধ্য করা হয়। ধর্মীয় আচ্ছাদন একজন বিবাহিত ব্যক্তি যিনি অপরিচিত নারীদের সাথে সহবাস করার জন্য আলেমদের মাধ্যমে নিয়মিত অস্থায়ী বিবাহ ব্যবহার করে থাকেন, তিনি বিবিসিকে বলছিলেন: "১২ বছর বয়সের এক শিশুর দাম অনেক বেশি কারণ সে এখনও নিখুঁত। তার জন্য অনেক খরচ করতে হবে- ৫০০, ৭০০ এমনকি ৮০০ ডলার-শুধুমাত্র ওই ধর্মীয় নেতাকেই দিতে হবে।" তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁর এমন আচরণকে ধর্মীয় আচ্ছাদনে বৈধতা দেয়া হয়েছে: "যদি কোনও ধার্মিক লোক আপনাকে বলেন যে অস্থায়ী বিবাহ হালাল, তবে এটি পাপ হিসাবে গণ্য হবে না।" নারী অধিকার কর্মী ইয়ানার মোহাম্মদ, যিনি পুরো ইরাক জুড়ে নারীদের আশ্রয়ের একটি নেটওয়ার্ক চালাচ্ছেন, বলেছেন যে মেয়েদেরকে মানুষের চেয়ে বরং 'পণ্যদ্রব্য' হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, "তারা এই মেয়েদের নির্দিষ্ট উপায়ে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে তারা কুমারীত্ব টিকিয়ে রাখছে ভবিষ্যতে বড় ধরণের ব্যবসা করার জন্য," তিনি বলেন। 'বড় ধরণের ব্যবসা' বলতে তিনি বিয়েকে বুঝিয়েছেন। যেখানে একটি মেয়ের কুমারীত্ব হারিয়ে গেলে, তাকে বিবাহের অযোগ্য হিসাবে দেখা হয় এমনকি সে তার পরিবারের জন্য অসম্মান বয়ে আনার কারণে নিজ পরিবারের দ্বারা হত্যার ঝুঁকিতেও থাকে। তিনি বলেন, "সব সময় মেয়ে এবং নারীদেরই এর মূল্য দিতে হয়।" কারবালা মসজিদ শিয়া মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র স্থান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ডকুমেন্টারি নির্মাতারা এই ধর্মীয় নেতাদের সাথে কথোপকথন গোপনে ক্যামেরায় রেকর্ড করেন যেখানে তারা বলেছিল যে তারা অল্প বয়সী মেয়েদের সরবরাহ করতে রাজি আছে। বিবিসির এই দলটি একজন ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যও নিয়েছিলেন, যিনি অভিযোগ করেছেন যে তাকে একজন ধর্মীয় নেতাই এই দেহ-ব্যবসায় ঠেলে দিয়েছে। এবং তার সাক্ষ্যের প্রতি অন্যান্যরাও সমর্থন জানিয়েছে। দলটি গোপনে এমন একজন আলেমকে ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন যিনি ছদ্মবেশী প্রতিবেদকের সামনে একজন তরুণীকে ২৪ ঘণ্টার সম্ভাব্য অস্থায়ী বিয়ের জন্য হাজির করেছিলেন। এখানে মূলত ওই ধর্মীয় নেতা দালালের ভূমিকা পালন করছিলেন। ছদ্মবেশী প্রতিবেদক যখন অস্থায়ী বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান, তখন ওই ধর্মীয় নেতা বলেন যে তিনি তার কোনও কিশোরী মেয়ের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন কিনা। সেক্ষেত্রে তিনি তেমন কাউকে খুঁজে বের করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আরও পড়তে পারেন: কৈশোরে পা দেবার আগেই অন্ধকার জীবন নারীবিদ্বেষ ও বর্ণবাদ: মোহনদাস গান্ধীর যত বিতর্কিত দিক 'যৌন আকর্ষণ কী জিনিস সেটা আমি জানিনা' নিন্দা গাইথ তামিমি ইরাকের একজন প্রাক্তন উচ্চ পদস্থ শিয়া আলেম, যিনি মৌলবাদের বিষয়ে কথা বলার কারণে এখন লন্ডনে নির্বাসনে আছেন। তিনি সেইসব ধর্মীয় নেতাদের প্রতি নিন্দা জানান যারা নারীদের শোষণ করার জন্য অস্থায়ী বিবাহ প্রথাকে ব্যবহার করছে, বিশেষত খুব অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে অস্থায়ী বিয়ের বৈধতা দিচ্ছে। তার মতে,"এটি এমন একটি অপরাধ, যার জন্য আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।" ইরাকের কয়েকজন শিয়া ধর্মীয় নেতা লিখেছেন যে ইসলামী আইন শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্কের অনুমতি দেয়। তামিমি শিয়া নেতাদের আহ্বান জানান যেন তারা এ ধরণের অনুশীলনকে নিন্দা জানান। বিবিসি নিউজ আরবি গোপনে চিত্রায়িত তিনজন আলেমের মধ্যে দুজন, নিজেদের শিয়া ইসলামের অন্যতম জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব আয়াতুল্লাহ সিস্তানির অনুসারী বলে বর্ণনা করেছেন। তবে বিবিসির কাছে এক বিবৃতিতে আয়াতুল্লাহ বলেছেন: 'আপনি যেভাবে বলছেন সেভাবে যদি এই ঘটনাগুলো ঘটে থাকে তবে আমরা অকপটে তাদের নিন্দা জানাই। অস্থায়ী বিয়েকে এভাবে যৌনতা বিক্রির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি যা নারীদের মর্যাদা এবং নারীর প্রতি মানবিকতাকে ছোট করে।" ইরাকি সরকারের একজন মুখপাত্র বিবিসি আরবিকে বলেছেন: "নারীরা যদি আলেমদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে না যান, তবে কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন।" | ইরাকের ধর্মীয় নেতারা অল্পবয়সী মেয়েদের অস্থায়ী বিয়ের নামে ঠেলে দিচ্ছে দেহ ব্যবসায়: বিবিসির অনুসন্ধান |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করা হতো ৬২ বছর বয়সী সোলেইমানিকে। এর মাঝেই ইরানের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ জনের মৃত্যু। অনেকেই আশংকা করেছিলেন এই হামলা-পাল্টা হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে হয়তো যুদ্ধই বেঁধে যাবে। কিন্তু সেটা আর হয়নি এবং সবাই উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলেই আপাতত মনে হচ্ছে। যাই হোক, এই লম্বা ভূমিকা দেবার কারণ হচ্ছে, আজকের এডিটারস মেইলবক্স-এর একটি বড় অংশ জুড়ে আছে ইরান নিয়ে চিঠি। শুরুতে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: ''মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের হামলার মাত্রা এবং ধরন দেখে এটি বলা যেতেই পারে, ইরান প্রকৃত অর্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গালে থাপ্পড় মেরেছে। বিশ্লেষকরা যেমনটা বলছেন, অর্থনৈতিক কারণে দুটি দেশই হয়তো বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে চাইছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যা চরিত্র তাতে কি এটি নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে, মিঃ ট্রাম্প ইরানের দেওয়া এই থাপ্পড় সহজে হজম করে নেবেন?'' ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে বিভিন্ন কারণে ইরানকে পছন্দ করেন না, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই মি. সরদার। সাম্প্রতিক উত্তেজনা সৃষ্টির আগেও তিনি পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, ইরানের ওপর অত্যন্ত কড়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জারি করেছেন, ইরানের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছেন। কিন্তু একেবারে যুদ্ধ শুরু হোক, সেটা তিনিও সম্ভবত চান না। তাই ইরানের পাল্টা হামলার পরও নতুন কোন হামলা চালান নি। এ'বিষয়ে একটি প্রশ্ন করে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান: ''ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি ইরানকে কোন মতেই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে দিবেন না। আমার প্রশ্ন, ট্রাম্প কী এটা থামাতে পারবেন এবং তার কী এ ক্ষমতা আছে?'' আমেরিকার প্রেসিডেন্টের একটি বড় অস্ত্র হচ্ছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতি গত দু'বছরে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। এমনকি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইরানের সাথে বাণিজ্য করতে পারছে না। কাজেই, ইরান যদি পারমানবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়, তাহলে ট্রাম্প হয়তো সেটা থামাতে পারবে না, কিন্তু তখন তার অর্থনীতির যতটুক আছে সেটাও যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইরান কি সেই ঝুঁকি নেবে? ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি আর মানবেনা বলে জানিয়েছে ইরান ইরাকে মার্কিন হামলায় ইরানী জেনারেল নিহত হবার খবর নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন রংপুরের মোহাম্মদ আবদুল্লা আল-মামুন, কিন্তু তিনি কি বিবিসির ওপর ক্ষুব্ধ, না কি অন্য কারো ওপর, তা ঠিক বুঝতে পারছি না: ''বিবিসিতো কিছু হলেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে দৌড়ায়। কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর সে রকম কিছু দেখা যাচ্ছে না কেন? নাকি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লুকায় আছে? নাকি তাদের ক্রিসমাস ছুটি এখনো শেষ হয় নাই? নাকি এটাকে বিচার বহির্ভূত হত্যা বলে মনে হচ্ছে না? নাকি ঐ কথা গুলো শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্যই প্রযোজ্য?'' হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কী ভাবছে না ভাবছে তার জবাব তো আর আমি দিতে পারবো না মি. আল-মামুন। আমি এটুকুই বলতে পারি, জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যা নিয়ে বিবিসি বাংলা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খবর এবং বিশ্লেষণ প্রচার করেছে। আশা করি সেগুলো আপনি শুনেছেন বা পড়েছেন। বিষয়টিকে আরেক আঙ্গিকে দেখছেন রংপুরের পীরগঞ্জের মুশফিকুর রহমান ওলিউল্লাহ: ''বছরের গোড়াতেই যেভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হয় বিশ্ব আবার বড় ধরনের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে যাচ্ছে। সোলেইমানিকে হত্যা করার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভীমরুলের চাকে খোঁচা দিয়েছেন।এই মুহূর্তে বিশ্ব মোড়লদের উচিৎ,আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা প্রশমিত করা ।তা না হলে বিশ্ব তেলের বাজারে এর চরম প্রভাব পড়বে। ফলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে, কিন্তু প্রাণ যাবে উলুখাগড়ার।'' কথাটা ঠিকই বলেছেন মি. রহমান। যে কোন দেশে যুদ্ধে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সাধারণ নাগরিকদের। যুদ্ধের আশংকা তো অবশ্যই ছিল, তবে আমরা দেখতে পেলাম আমেরিকা এবং ইরান, উভয় দেশের নেতারা উত্তেজনা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। বিগত দশকে সন্ত্রাস ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সন্ত্রাস নিয়ে যে প্রতিবেদন এ'বছরের শুরুতে প্রচার করা হয়, তা নিয়ে মন্তব্য করে লিখেছেন নোয়াখালী থেকে অরবিন্দ দাস: ''অনেক জানা-অজানা ঘটনার মাঝে এমন কিছু ঘটনা থাকে যা ভাবতে গেলে শরীরে যেন কাটা বেঁধে উঠে। সন্ত্রাসবাদ এমন সব ভয়াবহ ঘটনার মাঝে অন্যতম। আর এই ভয়াবহ ঘটনা গুলো এমন ভাবে সাজিয়ে তুলে ধরা বিবিসি ছাড়া কোন সংবাদ মাধ্যমের পক্ষে সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। গত এক দশকের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনটা এতই গুরুত্বপূর্ণ আর সেই সাথে এতই মর্মস্পর্শী ছিল, যে আমি আমি ওয়েবসাইটে গিয়ে কয়েক বার শুনেছি। আর প্রতিবারই শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠেছে। জানিনা আগামী দশকে কী ঘটবে। তবে যেন এমন ভয়াবহ কোন ঘটনা না ঘটে সেই কামনা করি।'' আপনার সাথে আমি একমত মি. দাস, সন্ত্রাসের মত ভয়াবহ ঘটনা নতুন দশকে কমে যাবে, সবাই সেটাই আশা করবেন। বুশ হাউসে ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যেতি বসুর সাক্ষাৎকার নেন শ্যামল লোধ। পাশে বিবিসি বাংলার তৎকালীন প্রধান জন রেনার। আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে মজার প্রশ্ন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাকামে মাহমুদ চৌধুরী: ''বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠানগুলো একবারে ৩০ মিনিটের মধ্যেই কিভাবে শেষ করা হয়? কখনো কি এমন হয়েছে যে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় লেগেছে অথবা অনুষ্ঠান শেষ না হতেই এফ এম ব্যান্ড বন্ধ করা দেয়া হয়েছে?'' সেরকম যে একেবারেই হয় নি তা না মি. চৌধুরী। আমার নিজের কপালেই সেরকম ঘটেছিল একদিন, ১৯৯৯ সালে দুপুরের খবরের সময়। সেটার জন্য অফিসে আসতে হত ভোর সাড়ে পাঁচটায়। তখন নতুন ছিলাম, সময় মত ঘুম থেকে উঠতে পারিনি, দেরি করে এসে কোন মতে অনুষ্ঠান চালাতে গিয়ে সময় ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। আমার কথা শেষ হবার আগেই অনুষ্ঠান শেষ। তবে এরকম দুর্ঘটনা বলতে গেলে ঘটেই না, কারণ প্রতিটা নিউজ, সাক্ষাৎকার, প্রতিবেদন মেপে মেপে করা হয়। এটা অভ্যাসের ব্যাপার। বুশ হাউসের স্টুডিওতে সুনীল গাভাস্কারের সাক্ষা'কার নিচ্ছেন দীপঙ্কর ঘোষ। বিবিসি শোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ত্রিপুরার সিপাহীজেলা থেকে হুমায়ুন মিঞা: ''আমি সেই নব্বইয়ের দশক থেকে বিবিসি বাংলা শুনি ।গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আমার প্রিয় ক্রিকেট খেলার সঙ্গে পরিচয় লাভ করি এবং আমার প্রিয় জন্মভূমি ভারতবর্ষের ক্রিকেট দলের ম্যাচের খবর শোনার জন্য বিবিসি বাংলার খবর শুরু হলে রেডিও চালিয়ে কান পেতে বসে থাকতাম ।কিন্তু আপনাদের অন্যান্য খবর গুলোও আমার হৃদয়কে ছুঁয়ে যেত। সবশেষে আপনাদের বন্ধ করে দেওয়া বিজ্ঞানের আসরটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতের নিত্যনতুন খবরাখবর শুনতে আমার খুবই ভালো লাগত ।তাই অনুষ্ঠানটি পুনরায় চালু করার জন্য বিবিসি বাংলা কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছি।'' অনেক দিন থেকে আমাদের অনুষ্ঠান শুনছেন জেনে ভাল লাগলো হুমায়ুন মিঞা। বিজ্ঞানের আসর নতুন করে শুরু না করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। তবে নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান ক্লিক আপনি দেখতে পাবেন বিবিসি নিউজ বাংলার ইউ টিউব চ্যানেলে। এবারে আসা যাক আমাদের অনুষ্ঠানসূচীতে পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন মতামতের বিষয়ে। সকালের প্রত্যুষা মিস করবেন বলে লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমরান হোসেন ফয়সাল: ''আপনাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, ও বিশেষ প্রতিবেদনগুলো আমার একাডেমিক জীবনে অনেক কাজে লেগেছে। তবে সম্প্রতি আপনারা যে প্রত্যুষা বন্ধের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তা আসলে যৌক্তিক নয়। সকালে যে খবরটা আমরা পেতাম সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরো গুরুত্ব বহন করে সংবাদপত্র পর্যালোচনা, সেটারও বা কী হবে।'' প্রত্যুষা আমরাও মিস করবো মি. হোসেন, তবে বৃহত্তর স্বার্থেই সেটা বন্ধ করতে হয়েছে। সংবাদপত্র পর্যালোচনা আসলেই সকালের জন্য উপযুক্ত অনুষ্ঠান, তাই দু:খের বিষয় প্রত্যুষার সাথে সেটাও হারিয়ে যাবে। বিবিসির সম্প্রচার নীতির তীব্র সমালোচনা করে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার থেকে লিখেছেন আব্দুস সাত্তার মোল্লা: ''কয়েক বছর ধরে বিবিসি 'রেডিও-দরিদ্র' হয়ে গিয়ে সকালের অনুষ্ঠান 'প্রভাতী' এবং রাতের 'পরিক্রমা' বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিবিসি এখন অতিমাত্রায় 'ডিজিটাল' হয়ে যাচ্ছে-তাই 'রেডিও-দরিদ্র' থেকে বোধ হয় 'রেডিও-কাঙাল' হওয়ার পথে! বলা হচ্ছে সকালে পৃথিবীর বাঙালিরা তেমন রেডিও শোনেন না। জরিপটি কবে, কোথায় করা হয়েছে জানি না। ''তবে আমার জোর দাবি, শ্রোতাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সকাল সাড়ে সাতটার অনুষ্ঠানটি 'প্রভাতী' নাম দিয়ে চালু রাখুন, রাজনীতিকদের মতো স্বৈরতান্ত্রিক হবেন না। সন্ধ্যা (প্রবাহ) ও রাতের (পরিক্রমা) মধ্যে শ্রোতা জরিপে যেটা বেশি ভোট পায়, সেটা রাখুন।'' সম্প্রচার কৌশল ভোটাভুটি করে ঠিক করা হয় না মি. মোল্লা। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কী এবং যাদের জন্য কনটেন্ট পরিবেশন করা হবে, তাদের মিডিয়া ব্যবহারের অভ্যাস কী, এই দুটি বিষয় সমন্বয় করেই কৌশল ঠিক করা হয়। আমরা কিন্তু কখনোই বলি নাই যে, পৃথিবীর সকল বাঙালি সকালে রেডিও শোনেন না। আমরা বলেছি বাংলাদেশের শ্রোতারা সকালের চেয়ে রাতে অনেক বেশি রেডিও শোনেন। ডিজিটাল যেহেতু ভবিষ্যতের মাধ্যম, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের পছন্দের মাধ্যম, সেজন্যই বিবিসি বিশ্বব্যাপী এই মাধ্যমের ওপর জোর দিচ্ছে। ভিন্ন ভাবে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা সেনানিবাস থেকে সোহেল হোসেন হৃদয়: ''আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, বিবিসির শ্রোতা নাকি কমে যাচ্ছে/গেছে। তাহলে আমৱা যাৱা মেইল করি তাদেৱ ঠাঁই হয়না কেন প্রীতিভাজনেষূতে?'' সাধারণ শ্রোতা আর পত্রলেখকদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে মি. হোসেন। আমি আগেও বলেছি, আমাদের অধিকাংশ শ্রোতা কখনোই চিঠি লেখেন না। আমাদের শ্রোতা সংখ্যা বর্তমানে তিরিশ লক্ষ মত হবে। কিন্তু ক'জন চিঠি লেখেন? গোটা বছরে হাজার খানেক শ্রোতা লিখলেও লিখতে পারেন। প্রীতিভাজনেষুতে মাত্র ১০-১২টা চিঠির উত্তর দেয়া যায় এবং ১২-১৪টা চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যায়। কাজেই চিঠির সংখ্যা থেকে শ্রোতা সংখ্যা নির্ণয় করা একদম বোকামি হবে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেছেন বাগেরহাটের মোহাম্মদ তৈমুর হুসাইন: ''খুবই আশ্চর্য হবার মত আবহাওয়ার সাথে পরিচিত হয়ে চলছি আমরা। গত বছরের মার্চ -এপ্রিল মাসে রেকর্ড পরিমাণ গরম পড়ে,এরপর বৃষ্টির মাএার আধিক্যের ফলে দুইবারের বেশি বন্যা হয়। আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, এ'বছরের জানুয়ারিতে গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ''আমার উদ্বেগের কারণ হল, যেখানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা ক্রমেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। জলবায়ুর এই ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মেরই বা ভবিষ্যৎ কি?'' বিশাল প্রশ্ন করেছেন মি. হুসাইন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একের পর এক বিশ্ব সম্মেলন হয়ে চলছে। মানুষের কারণেই যে এই পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা মোটামুটি সবাই মেনে নিয়েছে, তবে ঐ কারণগুলো দূর করার জন্য যা করতে হবে তা নিয়ে চলছে দর কষাকষি। সব শেষে একজন প্রবীণ শ্রোতার মৃত্যু সংবাদ দিয়ে লিখেছেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে নুর মোহাম্মদ: ''সেপ্টেম্বর মাসের সাত তারিখে বিবিসি পাগল যে দাদাকে উদ্ধৃত করে বিবিসিকে একটি মেইল পাঠিয়ে ছিলাম সেই দাদা গত ৩১শে ডিসেম্বর মারা গেছেন। আসলে এই রকম বিবিসি পাগল লোক আমি কখনও দেখিনি। এই রকম লোকদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আবদার করেছিলাম বিবিসির কাছে কোন ফল হয়নি।'' আপনার দাদা এবং একজন প্রবীণ শ্রোতার মৃত্যু সংবাদে আমরা সবাই শোকাহত মি. নুর মোহাম্মদ। তাঁদের শ্রোতাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছুই করা হয়ে উঠে না। আপনাকে ধন্যবাদ। এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক: মুনির আহম্মদ, খুলনা। মোহাম্মদ রেজাউল রহিম, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। মোহাম্মদ জামির হোসেন সজিব, বড় খোচাঁবাড়ী, ঠাকুরগাঁও। মোহাম্মদ রাবিউল ইসলাম রাশেদ, ডিমলা, নীলফামারী। রতন আহমেদ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ। মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ঢাকা। এম নাজমুল হোসাইন, দৌলতপুর , কুষ্টিয়া রিপন বিশ্বাস , ইয়াংপু, সাংহাই, চীন। কাজী সারোয়ার হোসেন বিপু, মহাখালি, ঢাকা। অমরেশ কুমার পাল, বাগমারা, রাজশাহী। দিপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়। মাহবুবুর রহমান মামুন, দারিয়াপুর, গাইবান্ধা। দেব প্রসাদ রায়, রংপুর। মোহাম্মদ জুয়েল, দশমাইল, পঞ্চগড়। শামীমউদ্দিন শ্যামল, ধানমন্ডি, ঢাকা। | সোলেইমানি আর ইরান, ট্রাম্প আর আমেরিকা নিয়ে ক্ষোভ, আশংকা |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | টিকা তৈরিতে বহু গবেষণা চলছে সারা বিশ্বে। প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক নামের একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করার কথা ঘোষণা করেছিল। আর এখন রাশিয়া দাবি করছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের গবেষণার এতোটাই অগ্রগতি হয়েছে যে কোভিড-১৯ রোগের টিকা তৈরির প্রতিযোগিতাতেও তারা জিতে গেছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন এনিয়ে মস্কো বাড়াবাড়ি করছে। রাশিয়ার এই ঘোষণা নিয়ে সবাই যে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছে তাও নয়। বরং প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই দাবি করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে সারা বিশ্বে যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে সে কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। শর্ট কাট রাস্তা এই প্রতিযোগিতায় শর্ট কাট রাস্তা ধরার অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগ উঠেছে গুপ্তচরবৃত্তি, অনৈতিকতা, ঝুঁকি গ্রহণ এবং ঈর্ষা-পরায়ণতার। রাশিয়ায় টিকা তৈরি সংক্রান্ত সভায় প্রেসিডেন্ট পুতিন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'টিকার জাতীয়তাবাদ' বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বলেছে, 'করোনাভাইরাস থেকে প্রত্যেকে নিরাপদ না হলে কেউ নিরাপদ নয়।' এই ভাইরাসের সফল কোনো টিকা তৈরি হলে বর্তমানে সেটাই হবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও দামী উপহার। এটা যে শুধু মানুষের জীবন বাঁচাবে তা নয়, মহামারির কারণে সারা বিশ্বে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এটি তারও অবসান ঘটাবে। "কোনো একটি চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য এরকম তীব্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এর আগে আমি কখনো দেখিনি," বলেন প্রফেসর লরেন্স গোস্টিন, যুক্তরাষ্ট্রে জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য আইন বিষয়ক শিক্ষক। "কোভিড-১৯ নিয়ে এতোটা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পেছনে কারণ হলো বিশ্বের সুপার-পাওয়ার বা ক্ষমতাশালী দেশগুলো এটিকে দেখছে তাদের বৈজ্ঞানিক শৌর্য বীর্যের প্রতীক হিসেবে। এর মাধ্যমে যেন তাদের রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতার বৈধতা পাওয়া যাবে।" করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে সারা বিশ্বে দুশোটির মতো গবেষণা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে তার মধ্যে প্রায় অর্ধ-ডজন গবেষণা পৌঁছে গেছে পরীক্ষার একেবারে শেষ পর্যায়ে। এসব গবেষণার তিনটি চলছে চীনে, একটি যুক্তরাজ্যে, একটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং আরেকটি জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টায়। সাধারণত একটি টিকা তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু বর্তমান মহামারিতে সব দেশই এই টিকা উদ্ভাবনের ব্যাপারে তাদের গবেষণার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্পুটনিক নামের একটি টিকা তৈরির ঘোষণা দেওয়ার পর অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে টিকা তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কোন শর্ট কাট অবলম্বন করা হয়েছে কীনা। টিকা তৈরির যুদ্ধ টিকা তৈরিতে অক্সফোর্ডের গবেষণা। জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পক্ষ থকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পশ্চিমা দেশগুলোতে টিকা তৈরির ব্যাপারে যেসব গবেষণা চলছে সেগুলো হ্যাক করে সেখান থেকে তথ্য চুরি করেছে। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। এর পরের সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস থেকে অভিযোগ করা হয় যে দুজন চীনা হ্যাকার বেইজিং-এর গোয়েন্দাদের হয়ে তাদের ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা থেকে তথ্য চুরি করেছে। চীন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে তারা ভাইরাসের ব্যাপারে তথ্য শেয়ার করেছে এবং বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু টিকা আবিষ্কার করার এই দৌড়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে এটা করতে গিয়ে পরীক্ষার স্বাভাবিক যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয় সেখানে কি কোন ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে? সময় কমাতে ধরা হচ্ছে শর্ট কাট রাস্তা? "এটা নিশ্চিত যে এই প্রক্রিয়ায় শর্ট কাট করা হয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়ার ক্ষেত্রে," বলেন টমাস বলিকি, যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশেন্সে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক। তিনি বলেন, "টিকা তৈরি করা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সেই টিকা যে নিরাপদ ও কার্যকর সেটা প্রমাণ করাই কঠিন। কোনো দেশ যদি শুধু টিকা তৈরি করাকেই মুখ্য কাজ বলে ধরে নেয় তাহলে তারা শর্ট কাট রাস্তা নিতেই পারে।" গবেষণার তথ্য প্রকাশ না করে এবং শেষ পর্যায়ের বড় ধরনের পরীক্ষার আগেই রাশিয়া যে তার স্পুটনিক টিকা নিবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে তার সমালোচনা হচ্ছে। হোয়াইট হাউজে করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন এই টিকা কতোটা কার্যকর ও নিরাপদ এবং রাশিয়া সেটা কতোটা প্রমাণ করতে পেরেছে এনিয়ে তার "গুরুতর সন্দেহ" আছে। আস্থা তৈরির চেষ্টা এসব কথায় কান দিচ্ছে না মস্কো। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঈর্ষা পরায়ণ হয়েই তাদের টিকার ব্যাপারে এধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। টিকাটি তৈরির পেছনে যেসব গবেষক যুক্ত আছেন তারা আশ্বস্ত করেছেন যে খুব শীঘ্রই প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে তাদের গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হবে। এর মধ্যে চীনও বলেছে যে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য তাদের গবেষণাতেও উল্লেখযোগ্য রকমের অগ্রগতি হয়েছে। কার আগে কে টিকা তৈরি করতে পারে এনিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। চীনে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো বলছে তারা যে টিকা তেরির কাজ করছে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর সেসব টিকার পরীক্ষা চালানো শুরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এসবের পরীক্ষায় তাদেরকে কয়েক ডোজ টিকা দেওয়াও হয়েছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে চীনা কোম্পানিগুলো দেখাতে চায় যে তাদের তৈরি টিকার কোন ঝুঁকি থেকে থাকলে তারা সেই দায় দায়িত্ব এড়াতে চায় না এবং প্রয়োজন হলে ত্যাগ স্বীকার করতেও তারা প্রস্তুত। রাশিয়াতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার নিজের মেয়েকেও স্পুটনিকের এক ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই দুটো দেশেই সশস্ত্র বাহিনীর লোকজনের শরীরে তাদের টিকার পরীক্ষা চালানোর কথা ঘোষণা করার পর এর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এসব বাহিনীর কর্মকর্তারা কতোটা স্বেচ্ছায় ও স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চীনা কোম্পানি ক্যানসিনো টিকা তৈরির জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মির সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে টেস্টের আগে সামরিক বাহিনীর লোকজনের ওপর এর পরীক্ষা চালানোর ব্যাপারে জুন মাসেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। "মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর ব্যাপারে নীতি নৈতিকতার কিছু বিষয় রয়েছে যাতে করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা হয়রানির শিকার না হন," বলেন অধ্যাপক গোস্টিন। গ্রহণযোগ্যতা যে টিকার জন্য জনগণের মধ্যে এতো চাহিদা, সেটি তৈরি করতে গিয়ে শর্ট কাট প্রক্রিয়ায় কাজ করা কতোটা গ্রহণযোগ্য? পুরো পরীক্ষা সম্পন্ন না করে তাড়াহুড়ো করে কোন টিকা বাজারে ছাড়া হলে এর ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তার জের ধরে আরো অধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, কোনো টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তখন মানুষের মধ্যে টিকা-বিরোধী মনোভাবও গড়ে উঠতে পারে। টিকা তৈরির জন্য যেসব গবেষণা চালানো হয় তার বেশিরভাগই হয় বেসরকারি উদ্যোগে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। সেগুলো প্রায়শই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে এই টিকা আবিষ্কারের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। "মহামারি মোকাবেলায় দেশগুলো কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে সেটা দেখাতে গিয়েও কোন কোন দেশের মধ্যে এধরনের প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে," বলেন মি. বলিকি। একটি ল্যাব পরিদর্শন করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আরো পড়তে পারেন: করোনাভাইরাস: দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশে? ভারতে উৎপাদিত টিকা বাংলাদেশ কীভাবে পাবে বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষের কাছে কীভাবে করোনার টিকা পৌঁছন হবে? বাংলাদেশে টিকার ট্রায়াল আয়োজনের সুপারিশ কারিগরি কমিটির করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশ কীভাবে পাবে? এবছরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেকারণে ট্রাম্প প্রশাসন একটা চাপের মধ্যে আছে। টিকা তৈরির প্রতিযোগী মনোভাব দেখাতে এই দেশটির মধ্যেও কোন রাখঢাক নেই। যুক্তরাজ্যে যদি নিরাপদ ও কার্যকর টিকা তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে সেটা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারকেও কিছু বাড়তি সুবিধা দেবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ক্ষেত্রে তার সরকারও সমালোচনার মুখে পড়েছে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, করোনাভাইরাস তৈরিতে ব্রিটেনের নেতৃত্ব অব্যাহত থাকবে। শুধু তাই নয়, অন্য কোন দেশ এই টিকা তৈরিতে সফল হলে ব্রিটেন তাদের কাছ থেকে সেটা কেনার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে। "পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে টিকা তৈরির ব্যাপারে যে জাতীয়তাবাদ কাজ করছে সেটা নিশ্চিত," বলেন টমাস বলিকি। তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সেটা হলো কোন টিকা তৈরি হলে সেটার বিপুল পরিমাণ ডোজ যেন পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করা।" অবশ্য করোনাভাইরাসের মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন সেই শক্তি আরো বেশি জোরালো হয়েছে। প্রতিযোগিতার সূচনা মহামারির শুরুর দিকে প্রতিযোগিতা ছিল যে কোন দেশ কতো বেশি ভেন্টিলটের ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই সংগ্রহ করতে পারে। এসবের চালান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ সরবরাহকারী দেশকে কে কতো বেশি অর্থ দিতে পারে তার প্রতিযোগিতাতেও লিপ্ত হয়েছে। টিকা তৈরি হলে সেটা সারা বিশ্বে বিতরণের বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কারণ করোনাভাইরাস থেকে প্রত্যেকে নিরাপদ না হলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। তারপরেও যেসব দেশে এই টিকাটি তৈরি হবে তার দেশের নাগরিকদের জীবন বাঁচানো ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা যে অগ্রাধিকার পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার পরেও যদি ওই দেশ থেকে সরকার টিকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয় সেটা জনরোষ তৈরি করতে পারে এবং প্রশ্ন উঠতে পারে সরকারের দক্ষতা নিয়েও। বলা হচ্ছে, টিকা তৈরি হলে সেটি কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অগাস্ট মাসে টিকার এই জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। দরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে টিকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্যে একটি বিশ্ব কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনি ধনী দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসাস বলেছেন, "আমাদেরকে টিকার এই জাতীয়তাবাদ ঠেকাতে হবে।" কূটনীতির হাতিয়ার টিকা উদ্ভাবনকারী দেশ তার প্রতি অন্যান্য দেশের সমর্থন পেতে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও এটিকে ব্যবহার করতে পারে। মি. বলিকি বিশ্বাস করেন, "যেসব দেশ এই টিকা পাবে তাদের প্রত্যেক সরকারই কূটনীতির জন্য এসব টিকার কিছু অংশ রেখে দেবে।" সবার আগে কেউ টিকা তৈরি করতে পারলেই যে তাদের টিকা সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এটা এমন প্রতিযোগিতা নয় যাতে মাত্র একজনই বিজয়ী হবেন এবং এর কোন ফিনিশিং লাইনও নেই। অর্থাৎ এই দৌড় শেষ করার নির্দিষ্ট কোন সীমারেখা নেই। এর অর্থ হলো করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি ও সরবরাহ নিয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে শত্রুতা ও প্রতিযোগিতা হয়তো মাত্রই শুরু হলো। আরো পড়তে পারেন: আজীবন থাকতে পারে করোনাভাইরাস, ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর হুঁশিয়ারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা চার হাজারের দোরগোড়ায় দুই বছরের মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারি শেষ হওয়ার আশা কখন আসবে করোনা টিকা? | করোনা ভাইরাস: স্পুটনিক ফাইভ টিকা নিয়ে রাশিয়া কি লুকোচুরি করছে? |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | মায়া এবং মেহেক একই লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তিনি উত্তর পাকিস্তানের নওশেরা থেকে এসেছিলেন, যেখানে সমাজ অনেক রক্ষণশীল এবং ভিন্ন মানুষদের জন্য সহনশীলতা খুব কম। আর মায়া সেই রক্ষণশীলতা মেনে চলেননি। তিনি হিজড়া ছিলেন, অর্থাৎ তিনি পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি নারী হিসাবে নিজের পরিচয় দেন এবং নারীদের মতো জীবনযাপন করেন। তিনি নিজ বাড়িতে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ নিয়ে তিনবার পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিবার অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি নতুন একটি সম্প্রদায়ে নিজের সুখ খুঁজে পান তবে এরপর তিনি পেশাওয়ারে তার পরিবারের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ নেন। তার শৈশবের বন্ধু মেহেক খান বলেন, "আমরা নিজেদের আরও ভালোভাবে চিনতে পারলে ভাল হতো।" কারণ মায়ার পরিবার তাকে খুঁজে বের করে এবং তিনি পালিয়ে যাওয়ার এক মাসের মাথায় মারা যান। পুলিশ সন্দেহ করেছে যে তার ভাই এবং চাচা তাকে হত্যা করেছে, তবে তারা জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ যে, পুলিশ এই মামলায় অনেক ফাঁকফোকর রেখে দিয়েছে, যার অর্থ মায়া হয়তো কখনোই ন্যায়বিচার পাবেন না, যেমনটা পাননি পাকিস্তানের খুন হওয়া বহু হিজড়া নারী। নওশেরা গ্রামে দুই হিজরা নারীর জীবন ছিল দুর্বিসহ। 'আমরা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি' খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্যে মায়ার বাড়িতে, হিজড়া নারীদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করার প্রবণতা রয়েছে - তারা নিজেদের প্রায়ই 'শি-মেইল' হিসেবেও উল্লেখ করে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের আদালতের একাধিক রায়ে তৃতীয় লিঙ্গকে আইনি স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন এখনও ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেছে। দেশটিতে সামাজিকভাবে, এখনও হিজড়াদের নিম্নশ্রেণীর হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। গোপনীয়তা, ব্যক্তিগত মর্যাদা বা এমনকি নিজেদের সুরক্ষা দাবি করার কোনও অধিকার তাদের নেই। মায়ার গল্পটি সেই বাস্তবতার অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছে। "আমরা প্রথম থেকেই একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম," মেহেক বলেন। "এটির একটা কারণ হতে পারে যে আমরা জানতাম, আমাদের লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য একই ধরণের।" মায়া ও মেহেক নওশেরা গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন। তাদের বাড়ির দূরত্ব রাস্তার এপার আর ওপার। উভয়ই পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে তারা সবসময়ই নিজেদের নারী হিসেবে অনুভব করতেন, বলেন মেহেক। তিনি মাঝে মধ্যে মাথায় ওড়না জড়াতেন, নখে নেইলপলিশ লাগাতেন। মেহেকের বাবা এবং চাচা তাকে বাড়ির কলঙ্ক বলে মনে করেছিলেন। "তারা প্রায়শই আমাকে মারধর করত, আমাকে একটি ঘরে আটকে রাখত ... তবে আমি নারীর মতো বেশ ধরা থামাতে পারিনি," মেহেক বলেন। নারীদের মতো পোশাক পরার জন্য মায়াও তার পুরুষ আত্মীয়দের কাছ থেকে একই ধরণের আচরণের শিকার হয়েছিলেন। মায়াকে প্রতিনিয়ত মনে করেন তার বন্ধুরা। কৈশোর বয়সে পা রাখার সাথে সাথে এই বিষয়গুলি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। মেহেক বলেন, "এই সময়ে শি-মেইলরা অনুভব করতে শুরু করেন যে, মানুষ তাদেরকে যা ভাবে, আসলে তারা তেমন নয়।" "যখন এমনটা হয়, তখন পরিবারের সাথে জীবনযাপন করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে এবং আপনি বেরিয়ে আসার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেন।" মায়া ও মেহেক দুজনই বাড়ি থেকে পালিয়ে নামকরা নৃত্যশিল্পী হওয়ার কথা কল্পনা করতেন। তারপর ২০১৬ সালে, মেহেক অবশেষে এটি করতে পেরেছিলেন। তিনি পেশাওয়ারে পালিয়ে যান, সেখানে তার একজন প্রেমিক তাকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ খুঁজে দেন। মায়ার সাথে মেহেকের সবশেষ কথা হয়েছিল এক বছর আগে। মেহেককে, মায়া বলেছিল যে সেও পালানোর পরিকল্পনা করছে। "আমি খুশিতে কেঁদেছিলাম," মেহেক বলেন। পরে মায়া ও মেহেক একসাথে পাঞ্জাব প্রদেশের উত্তরাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকা কামরায় একজন গুরুর কাছে আশ্রয় নেন। সমাজের বেঁধে দেয়া নিয়মের চাপে পড়ে, পাকিস্তানের হিজড়া নারীরা সাধারণত ছোট একটি সম্প্রদায় হিসেবে জোট বাঁধেন। হিজড়া নারীদের উপার্জন করা অর্থের একটি অংশের বিনিময়ে প্রবীণ হিজড়া নারীরা সেখানে গুরু হিসাবে, সম্প্রদায়ের অভিভাবক এবং সুরক্ষকর্তা হিসাবে কাজ করেন। গুরু তাদের শিখিয়ে দেন কীভাবে পোশাক পরতে হবে এবং কিভাবে পারফর্ম করতে হবে। যেন তারা, হিজড়াদের জন্য নির্ধারিত হাতে গোনা কয়েকটি উৎস থেকে যেমন বিয়ে বাড়িতে নাচ দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। মেহেক প্রথমে তার বাড়ি থেকে পালাত সক্ষম হন। বিশ্বাসঘাতকতা করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সে বছর দু'জনই তাদের নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সময় ব্যয় করেন। মেহেক বলেন, "ওই বছরটি আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ বছর ছিল" পাকিস্তানে বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করার একটি সস্তা বিকল্প হল হিজড়া নাচ। এছাড়া বিয়ে বাড়িতে হিজড়াদের আমন্ত্রণ জানানোর আরেকটি কারণ হল, বিয়েতে তাদের ডাকলে ওই সম্প্রদায়ের প্রবীণদের তিরস্কার থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর হিজড়াদের জন্য এই নাচ হল, ভিক্ষা করা বা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করা এড়ানোর একটি উপায়। "আমরা পুরো পেশাওয়ারের প্রায় সবখানে গিয়েছিলাম, বিয়েতে এবং অন্যান্য পার্টিতে নেচেছি, এবং আগের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেছি।" তবে এই সুখের সময়টা ছিল অনেক ছোট - তাদের দুজনই শেষ পর্যন্ত তাদের প্রেমিকদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন। দুজনের প্রেমিক ফন্দি করে তাদের খবর যার যার পরিবারের কাছে জানিয়ে দেয়। পরে তাদের দুজনকেই বাসায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনের চুল কেটে দেয়া হয় এবং নির্যাতন করা হয়। মেহেক বলেন, মায়াকে ভয়াবহ মারধর করা হয়েছিল, এবং তার ভাই তাকে বেশ কয়েক দিন ধরে বাড়ির বেজমেন্টে একটি বিছানায় বেঁধে রেখেছিল। অব্যাহত নির্যাতনের মুখে মার্চ মাসে, তারা দুজনেই আবারও পালিয়ে যান, শেষ পর্যন্ত পেশাওয়ারে এসে পৌঁছান, যেখানে টমি নর্তকীর প্রচলন রয়েছে। টমি নর্তকী বলতে হিজরাদের নাচই বোঝায়, তবে এখানে হিজরাদের সাজসজ্জায় নারীর বেশ কম থাকে। এর অর্থ ন্যাড়া মাথা সত্ত্বেও তারা বিয়ের কাজ পাবে। সেখানে নায়না খান হয়ে গেলেন তাদের নতুন গুরু। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে মায়া কীভাবে পেশাওয়ারে বেশ ভালভাবে টিকে গিয়েছিলেন। "মায়া বেশ স্বচ্ছন্দ্য, সাহসী এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন," তিনি বলেন। কিন্তু তারপরে এক শনিবার, "ডোরবেল বেজে ওঠে এবং মায়ার পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তি হাতে একটি ফোন নিয়ে আসেন। তিনি নয় রুমের ওই অ্যাপার্টমেন্টে বসেন। যেখানে প্রায় ২০জন শিষ্যকে জায়গা দেয়া হয়েছে।" দুই নারী হিজড়া অবশেষে নর্তকী হয়ে তাদের শৈশব স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিলেন। মায়া সামনের ঘরের একটি খাটে হেলান দিয়ে ফোনে কথা বলছিল। ওই ব্যক্তি অন্য খাটে বসেছিলেন এবং তার ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মাঝে মাঝে মায়ার দিকেও এক ঝলক তাকাচ্ছিলেন। নায়না বলছেন, "এখন আমার সন্দেহ হয় ওই ব্যক্তির ফোনে নিশ্চয়ই মায়ার ছবি ছিল এবং তিনি মায়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।" এরপর ওই ব্যক্তি হঠাৎ চলে যান। এর কয়েক মিনিট পরে আবার দরজায় ঘণ্টা বাজে, এবং তিন জন ঘরের ভেতরে ঢোকে। "আমি দেখলাম মায়া তাড়হুড়ো করে ঘরে ঢুকেই তার কানের দুল এবং নাকফুল খোলে আর মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়, সবকিছু একটি পার্সে রেখে আমার হাতে দেয় সে। খুব ভয় পেয়েছিল মায়া। আমাকে সে জানায় যে তার ভাই এবং চাচা তাকে নিতে এসেছেন।" এরপর লম্বা গড়নের এক যুবক ঘরে ঢুকে মায়াকে পেটায়। নায়না ও তার শিষ্যরা সাথে সাথে ঘরে ঢোকে। ওই লোকটি একটি বন্দুক বের করলেও ভয় পায়নি বলে জানান নায়না। পরে সবার সহায়তায় তারা ওই তিনজন ব্যক্তিকে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের করে দিতে সক্ষম হন। কিন্তু আধ-ঘণ্টার মধ্যে একটি একদল পুলিশ হাজির হয় এবং পুলিশ কর্মকর্তা মায়াকে তার সাথে যাওয়ার আদেশ দেন। নায়না হস্তক্ষেপ করলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন যে, মায়া তার নিজের বাড়ি থেকে সোনা চুরি করেছে। কোনও উপায় না পেয়ে নায়না ও তার শিষ্যরা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা মায়ার সাথে থানায় যাবে। পরের কয়েক ঘণ্টা ধরে, তাদের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। মায়া যেহেতু নিজে থেকে বাড়ি যেতে চাচ্ছে না তারপরও তাকে কেন থানায় আনা হয়েছে, সে নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। মায়া প্রাপ্তবয়স্ক এবং সে যেটা চায় না, তাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করা যাবে না। এরপর থানার প্রধান তাকে আশ্বাস দেন যে তারা কেবল মায়াকে তার বাবার সাথে কথা বলিয়ে দিতে চান, যিনি নওশেরা থেকে এই পেশাওয়ারের পথে রয়েছেন। তারপরে মায়া তার যেখানে যেতে ইচ্ছা করে সেখানে যেতে পারবে। নায়না ও তার শিষ্যরা এরপর একটি বিয়ে বাড়ির কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হন, কিন্তু তারা যখন ফিরে আসেন তখন মায়াকে আর থানায় দেখতে পান না। একজন গুরুর ঘরে হিজড়া নারীরা নিরাপত্তা ও কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। যে আইন খুনিদের রেহাই দিতে পারে সেই রাতে মায়ার সাথে কী হয়েছিল তা পরিষ্কার নয়, এবং কখনই হয়তো তা জানা যাবে না। পেশাওয়ার শহরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জহুর আফ্রিদি বিবিসিকে বলেন যে, মায়া নিজের ইচ্ছায় তার বাবা, চাচা এবং অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়দের সাথে চলে যায়। তবে হাস্টনাগরী পুলিশের একটি গোপন সূত্র বিবিসিকে সাদা কাগজে লেখা একটি অনুমতিপত্র দেখায়, যেখানে শুধু মায়ার বাবা এবং চাচা স্বাক্ষর করেছিলেন, মায়ার কোন স্বাক্ষর ছিল না।। নওশেরা পুলিশের তদন্তে প্রমাণ হয় যে মায়াকে যে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটা তার চাচার মালিকানাধীন একটি পেট্রোল স্টেশনে কিছু সময়ের জন্য থামে। সেখান থেকে মায়া আরেকটি গাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে তার চাচা এবং ভাই ছিলেন। এরপর পরিবারের বাকী সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। পরদিন সকালে মায়াকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, নওশেরার কাছে একটি জঙ্গলে রক্তাক্ত অবস্থায় মায়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নায়না সন্দেহ করেন যে মায়ার পরিবার একটি লোককে পাঠিয়েছিল তার অবস্থান নিশ্চিত হতে। ওই ঘটনায় মায়ার বাবা, তার ভাই, চাচা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে বিবৃতিতে তারা সবাই মায়াকে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাদের সবাইকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। হিজড়া অধিকার কর্মী তৈমুর কামাল বলেন, এই মামলায় যথেষ্ট শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। তবে পুলিশ "এই মামলায় কিছু প্রাসঙ্গিক ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে না, যেটা অপরাধীদের শাস্তি এড়ানো কঠিন করে তুলতো।" পাকিস্তানে বছরের পর বছর ধরে, একটি প্রাচীন আরব রীতি প্রচলিত রয়েছে। যেখানে খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবার, অর্থের বিনিময়ে খুনি ব্যক্তিকে ক্ষমা করার অধিকার রাখে। সেই অর্থকে ব্লাড মানি বলা হয়। তবে ২০১৬ সালে তথাকথিত সম্মানের জন্য হত্যাকাণ্ড বা অনার কিলিং রোধে - এবং খুনি পরিবারগুলোকে অর্থের বিনিময়ে হত্যার দায় থেকে পালানো ঠেকাতে- পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সম্মান রক্ষার নামে অপরাধ করার অধিকার বাতিল করেছে। "মায়া পরিষ্কারভাবে এই অনার কিলিং এর শিকার ছিলেন।" তৈমুর কামাল বলেন, "তবে পুলিশ এই মামলায় সম্মানের এই ধারাটি অন্তর্ভুক্ত করেনি, এর ফলে মায়ার মা বা বোন যেন খুনিদের ক্ষমা করতে পারে সেই সুযোগ রেখে দিয়েছে।" এই সম্মান অপরাধ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ সকল ক্ষেত্রে এই অধিকার বাতিল করে দিয়েছে। মেহেক বলেন নায়নার (বাম) সাথে তিনি যে সময় কাটিয়েছেন সেটা তার জীবনের সবচেয়ে সুখী সময় ছিল যার মরদেহ কেউ দাবি করেনি তবে অর্থ দিয়েছে পেশাওয়ার ভিত্তিক ট্রান্সজেন্ডার রাইটস গ্রুপ ট্রানজেকশন বলছে যে ২০১৫ সাল থেকে শুধুমাত্র খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে কমপক্ষে ৭০জন হিজড়া নারীকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে সংস্থাটি এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে পেশাওয়ারে নাজো নামে এক হিজড়া নারীর হত্যার খবরটিও সামনে আসে। গত বছর জুলাইয়ে দুই বন্ধু তাকে হত্যা করে এবং তার দেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভর্তি করে। তবে সেই ব্যাগ ফেলে দিতে যাওয়ার সময় তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। নাজোর পরিবার তাদের মর্যাদাহানি হওয়ার ভয়ে তার মরদেহ গ্রহণ করেনি। পরে পেশাওয়ারে পুলিশের কবরস্থানে নাজোর ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দাফন করা হয়। তবে আদালতে যখন মামলা দায়ের করা হয় এবং খুনিরা যখন নাজোর পরিবারের কাছে ব্লাড মানি বা অর্থের বিনিময়ে ক্ষমা চাইতে আসে। তখন তারা ঠিকই নাজোকে নিজেদের বলে দাবি করেন। দু'মাস আগে তাদের ক্ষমার কারণে নাজোর হত্যায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি খালাস পান। সাম্প্রতিককালে, মারদানের এক হিজড়া নারীকে তার পরিবার হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। মানবাধিকারকর্মীরা তার মৃতদেহের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলেও কেউ পুলিশের কাছে কোন হত্যা মামলা দায়ের করেনি, বা পুলিশও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কোন চেষ্টা করেনি। তাইমুর কামাল বলেছেন, পুলিশ ইচ্ছা করেই এই মামলায় ফাঁক ফোকর রেখে দিয়েছে যেন খুনিরা মায়ার পরিবারকে টাকা দিয়ে মুক্তি পেতে পারে। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, বেশিরভাগ সময় প্রেমিকরা রাগের বশে এই ধরণের হত্যা করে থাকে। পরিবারের সদস্যদের দ্বারা হত্যার ঘটনা বিরল, কারণ বেশিরভাগ হিজড়া নারীরা অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এই হিজড়া নারীদের "আত্মীয়" বলতে তারা যেখানে বাস করেন সেই সম্প্রদায়ের সদস্যদের বোঝায়। এবং যখন তারা চলে যায়, এই সম্প্রদায়ের মানুষই সবচেয়ে বেশি তাদের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। মায়ার প্রাক্তন গুরু নায়না বলেন যে, তিনি যতবার তার সিন্দুক খোলেন, ততবার তার মায়াকে মনে পড়ে। "আমি তার পার্সটি দেখি, এবং কাঁদি। তার সবই সেখানে আছে; কিছু টাকা, তার ফোন, তার জাতীয় পরিচয়পত্র, তার গহনা। সে অনেক কম বয়সী ছিল। আপনি এই বয়সী কারও দিকে তাকিয়ে তার মৃত্যুর কথা ভাবতে পারবেন না।" মেহেকের কাছে মায়ার স্মৃতি আরও গভীরভাবে গেঁথে আছে। "নায়না দয়াবান এবং আমাদের নিরাপত্তা দেন এবং আমাদের এই জায়গাটি বন্ধুত্বপূর্ণ শি-মেইলদের কথায় আর হাসিতে মুখরিত থাকতো। তবে আমার হৃদয় বেদনা অব্যাহত রয়েছে। আমি আমার বন্ধুকে হারিয়েছি এবং কেউই তার স্থান নিতে পারবে না," তিনি বলেন। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, বেশিরভাগ সময় প্রেমিকরা রাগের বশে এই ধরণের হত্যা করে থাকে। পরিবারের সদস্যদের দ্বারা হত্যার ঘটনা বিরল, কারণ বেশিরভাগ হিজড়া নারীরা অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এই হিজড়া নারীদের "আত্মীয়" বলতে তারা যেখানে বাস করেন সেই সম্প্রদায়ের সদস্যদের বোঝায়। এবং যখন তারা চলে যায়, এই সম্প্রদায়ের মানুষই সবচেয়ে বেশি তাদের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। মায়ার প্রাক্তন গুরু নায়না বলেন যে, তিনি যতবার তার সিন্দুক খোলেন, ততবার তার মায়াকে মনে পড়ে। "আমি তার পার্সটি দেখি, এবং কাঁদি। তার সবই সেখানে আছে; কিছু টাকা, তার ফোন, তার জাতীয় পরিচয়পত্র, তার গহনা। সে অনেক কম বয়সী ছিল। আপনি এই বয়সী কারও দিকে তাকিয়ে তার মৃত্যুর কথা ভাবতে পারবেন না।" মেহেকের কাছে মায়ার স্মৃতি আরও গভীরভাবে গেঁথে আছে। "নায়না দয়াবান এবং আমাদের নিরাপত্তা দেন এবং আমাদের এই জায়গাটি বন্ধুত্বপূর্ণ শি-মেইলদের কথায় আর হাসিতে মুখরিত থাকতো। তবে আমার হৃদয় বেদনা অব্যাহত রয়েছে। আমি আমার বন্ধুকে হারিয়েছি এবং কেউই তার স্থান নিতে পারবে না," তিনি বলেন। ভিডিওতে দেখুন: তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার পাওয়া বাংলাদেশের হিজড়াদের প্রতিক্রিয়া নিজেকে আর পুরুষ বা নারী পরিচয় দিতে হবে না হিজড়াদের | পাকিস্তানে হিজড়া: মায়া নামে যে নারী পালিয়েও বাঁচতে পারেননি |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | একসময় পেশা ছেড়ে, যৌনকর্মীদের বাচ্চাদের লেখাপড়া, খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন তিনি। নিজের জমানো পয়সা দিয়ে গড়ে তোলেন যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র। হাজেরা বেগমের কথায় তিনি চান যৌনপল্লীতে জন্ম নেওয়া এই বাচ্চাগুলোকে যেন বাধ্য হয়ে তাদের তাদের মায়ের পেশায় না ঢুকতে হয়, অথবা অন্য কোনো অন্ধকার জগতের বাসিন্দা না হতে হয়। ত্রিশোর্ধ নারীদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে বিবিসি বাংলার ধারাবাহিক 'তিরিশে ফিনিশ'-এর এই গল্পটি হাজেরা বেগমের। #তিরিশেফিনিশ? | যৌনকর্মীর পেশা ছেড়ে হাজেরা বেগম গড়ে তুলেছেন যৌনকর্মীদের বাচ্চাদের জন্য এক আশ্রয়কেন্দ্র |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | ফাঙ্গাসের রঙ ভিন্ন হলেও এগুলো আসলে একই প্রজাতির ছত্রাক এর আগে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেলেও সোমবার প্রথম কোনো রোগীর মধ্যে ইয়েলো বা হলুদ ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হার্ষ ইএনটি হাসপাতালে একজন রোগীর মধ্যে তিন ধরনের - কালো, সাদা ও হলুদ ফাঙ্গাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হার্ষ ইএনটি হাসপাতালের প্রধান ডা. বিপিএস ত্যাগীর মতে এটি অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা। ৫৯ বছর বয়সী একজন রোগীর দেহে হলুদ ফাঙ্গাসের, চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ''মিউকর সেপটিকাস'', উপস্থিতি পান তিনি। "এই ফাঙ্গাস সাধারণত সরীসৃপদের মধ্যে পাওয়া যায়। অন্য চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে যতদূর জানতে পেরেছি, এই প্রথম এই ধরনের কোনো রোগী পাওয়া গেল। ঐ একই রোগীর দেহে কালো ও সাদা ফাঙ্গাসের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে।" আরো পড়তে পারেন: ঢাকায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সন্দেহে একজনের মৃত্যু, চিকিৎসাধীন আরেকজন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার সাতটি উপায় হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক করোনা রোগীদের জন্য নতুন আতঙ্ক কোভিড রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য স্টেরয়েড একটা জরুরি ওষুধ মিউকোরমাইকোসিস: প্রাণঘাতী 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' সংক্রমণ যেই ব্যক্তির দেহে তিন ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, সঞ্জয় নগরের অধিবাসী ঐ ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়নি। তবে ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাকে স্টেরয়েড দেয়া হয়েছিল। ঐ ব্যক্তির ডায়াবেটিসও ছিল। ডা. ত্যাগীর ভাষ্য অনুযায়ী, "ঐ রোগী ৮-১০ দিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। তার সামান্য জ্বর, ক্ষুধামন্দার পাশাপাশি নাক দিয়ে কালো-লাল তরল নির্গত হচ্ছিল এবং নাকের আশেপাশে কিছুটা ব্যথা ছিল।" "তার এন্ডোস্কপিতে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর পরপরই তার অস্ত্রোপচার করা হয়।" "এই ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণকে এক ধরনের মিউকরমাইকোসিস হিসেবে চিহ্নিত করা যায়", বলেন ডা. ত্যাগী। ফাঙ্গাসের রং কি গুরুত্বপূর্ণ? ভারতে এর আগে কালো ও সাদা বর্ণের ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। প্রথমদিকে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কর্নাটক, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানেও এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে। অনেক হাসপাতালে মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়। করোনাভাইরাস সম্পর্কে আরো পড়তে পারেন: কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরও যেসব জটিলতা থেকে যায় ভয়ঙ্কর 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' এর আক্রমণে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে কোভিড রোগীরা করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি আসলে ঠিক কী? গুরুতর করোনা রোগীদের যে ১১টি পরীক্ষা করতে বলেন চিকিৎসকেরা করোনা-পরবর্তী 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন' সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন ভারতে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশনে এর কিছুদিন পর বিহারে চার জন হোয়াইট বা সাদা ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর উত্তর প্রদেশেও একই ধরনেরর কিছু রোগী পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে এই তিন ধরণের ফাঙ্গাস সম্পর্কে আতঙ্ক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আতঙ্কিত না হয়ে মানুষের এই ফাঙ্গাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা উচিত। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের পরিচালক রনদীপ গুলেরিয়া সম্প্রতি ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এই ফাঙ্গাসগুলো নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, "ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বোঝাতে কালো, সাদা, হলুদ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে এটি সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফাঙ্গাসটি একেক অঙ্গে একেক রকম রঙয়ের হয়ে প্রতীয়মান হতে পারে, কিন্তু এটি আসলে একই জাতের ফাঙ্গাস।" "যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের এই ফাঙ্গাসের দ্বারা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।" ডা গুলেরিয়া জানান, "সাধারণত তিন ধরণের ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখতে পাই আমরা - মিউকরমাইকোসিস, ক্যানডিডা অথবা অ্যাসপারগিলাস ফাঙ্গাস সংক্রমণ।" "সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় মিউকোরমাইকোসিস । এটি পরিবেশেই অবস্থান করে এবং এটি সংক্রামক নয়। যেসব রোগীর কোভিড চিকিৎসার সময় স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়েছে বা যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই ফাঙ্গাসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।" ভারতের পুনেতে মিউকোরমাইকোসিস আক্রান্ত একজন রোগীকে পরীক্ষা করছেন একজন চিকিৎসক। গুরুগ্রামের ফর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান পরিচালক ডাক্তার রাহুল ভার্গবও মনে করেন আলাদা আলাদা রং থাকলেও ফাঙ্গাসগুলো একই ধরনের। ডা ভার্গব বলেন, "ফাঙ্গাসের ভেতরে কোনো রং নেই। এই ফাঙ্গাসটি যখন নাক ও মুখ থেকে সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা হয়, তখন এর মধ্যে মৃত কোষ দেখা গেছে। 'মিউকর' গ্রুপের ফাঙ্গাস 'রাইজোপাস' শরীরের কোষ মেরে ফেলে এবং মৃত কোষগুলোর কালো একটি দাগ রেখে যায়।" "সেই থেকে রাইজোপাস ফাঙ্গাসকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটি এক ধরণের মিউকোরমাইকোসিস ।" অন্য দু'টি ফাঙ্গাস সম্পর্কে ডা ভার্গব বলেন, "শরীরে ক্যানডিডা দেখতে অনেকটা দই'য়ের মত দেখায়। তাই এর নাম সাদা ফাঙ্গাস।" "তৃতীয় এক ধরনের ফাঙ্গাসের নাম অ্যাসপারগিলাস। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এটি শরীরে কালো, নীলচে সবুজ, হলদেটে সবুজ এবং খয়েরি রংয়ে দেখা যায়। বাইরে থেকে কোন রঙয়ের দেখতে, সেই অনুযায়ী এই ফাঙ্গাসের নাম দেয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও এর প্রজাতি নির্ণয় করা না গেলে এটির সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।" ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণ কী? প্রত্যেকটি ফাঙ্গাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিষয় ছিল - যাদের ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ছিল। চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয় না। ফাঙ্গাসটি পরিবেশে অবস্থান করলেও খুব কম ক্ষেত্রেই সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। কারা ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন, সেসম্পর্কে দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালের ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. রোমেল টিক্কু বলছেন: করোনাভাইরাস রোগীদের ফুসফুসের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের চোখ অপসারণ করতে হয় পাশাপাশি করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন অতিরিক্ত মাত্রায় কাজ করতে থাকে, তখন স্টেরয়েড শরীরের ক্ষয় রোধ করার কাজ করে। স্টেরয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা দুর্বল করে রোগীদের দেহে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যার ফলে ফাঙ্গাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। শরীরে ফাঙ্গাসের সংক্রমণের বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। চিকিৎসার সুবিধার্থে সময়মতো এই ফাঙ্গাস শনাক্ত করা জরুরি। কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ফাঙ্গাস সংক্রমণের বর্তমান উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানা যায়। মিউকর নামের ছত্রাক দেখা যায় মাটিতে, গাছপালায়, সার এবং পচন ধরা ফলে মিউকোরমাইকোসিস, অর্থাৎ 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' মিউকোর বা রাইজোপাস ফাঙ্গাসের মাধ্যমে এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। এই ফাঙ্গাস সাধারণত মাটি, গাছ, সার, পচা ফল এবং সবজিতে পাওয়া যায়। এই ফাঙ্গাস সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে প্রভাব ফেলে। কয়েকটি ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাসের কারণে পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ধরণের সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে চোখ বা চোয়াল অপসারণেরও প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এই ফাঙ্গাস ফুসফুস বা পরিপাকতন্ত্র আক্রমণ করলে তা শনাক্ত করা কঠিন, কারণ তখন উপসর্গগুলো দেরিতে প্রকাশিত হয়। মিউকোরমাইকোসিসে মৃত্যুহার প্রায় ৫০ শতাংশ। এর উপসর্গগুলো হলো: নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত বা কালো তরল নির্গত হওয়া, মাথা ব্যথা, চোখ ফুলে যাওয়া বা ব্যথা, চোখের পাতা খসে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব। এছাড়া নাকের আশেপাশে কালো ছোট দাগ দেখা যেতে পারে এবং নাকের চারপাশে অসাড়তা তৈরি হতে পারে। ফুসফুসে সংক্রমণের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মিউকোর সেপটিকাস এটিও এক ধরণের মিউকোরমাইকোসিস। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, নাক দিয়ে লাল বা কালো তরল নির্গত হওয়া, দুর্বলতা ও নাকের আশেপাশে অসাড়তা। 'ক্যানডিডা' বা হোয়াইট ফাঙ্গাস যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের দীর্ঘসময় আইসিইউতে থাকতে হয়েছে, তাদের মধ্যে এই ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে জিহ্বায় সাদা ছোপ দেখা যায়। এই সংক্রমণ যকৃত ও ফুসফুসে হয়ে থাকে। এটি মিউকোরমাইকোসিসের মত ভয়াবহ নয়। এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার শতকরা প্রায় ১০ ভাগের মত। সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে গেলে এই ধরনের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। অ্যাসপারগিলাস সংক্রমণ করোনাভাইরাস রোগীদের মধ্যে এই ধরনের ফাঙ্গাসের সংক্রমণও দেখা গেছে। তবে এরকম ঘটনা এখন পর্যন্ত খুবই বিরল। এর ফলে ফুসফুসে গহ্বর তৈরি হতে পারে। এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হলে সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। যেভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন এই ধরনের ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের ধুলাবালির কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের পরিচালক ডা, রনদীপ গুলেরিয়া বলেন হাত ধোয়া, অক্সিজেন টিউব পরিষ্কার রাখা, অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য ব্যবহৃত পানি জীবাণুমুক্ত করার দিকে নজর দেয়া খুবই জরুরি। যেসব রোগীদের করোনাভাইরাসের চিকিৎসা চলমান রয়েছে, তাদের অনেকে সুস্থ হয়ে গেলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। বর্তমানে ভারতে নয় হাজারের বেশি মিউকোরমাইকোসিস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তবে ক্যানডিডা ও অ্যাসপারগিলাসের রোগী অনেক এখনও অনেক কম। | ফাঙ্গাস: কোভিড পরবর্তী কালো, সাদা বা হলুদ ছত্রাকের সংক্রমণ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোটে ৩৪ হাজার যাত্রী এসেছে। তিন মাসের মতো বন্ধ থাকার পর বিমান চলাচল স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও যাত্রী পাচ্ছে না এয়ারলাইন্সগুলোর কোনটিই। দেশের তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোম্পানির একটির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সকল কর্মীকে তারা অবৈতনিক ছুটিতে পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন হারে তাদের কর্মীদের বেতন কমিয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের ১৭শ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও দেশের বাকি তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ মার্চ থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত কোন ফ্লাইটই চালাতে পারেনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন কোম্পানিটির পরিস্থিতি বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলেছেন, "ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ক্যাপাসিটি লস ছিল ২৬ শতাংশ, যেটা মার্চের শেষে এসে দাঁড়িয়েছিল ৭৬ শতাংশ। মার্চের শেষে সব কমার্শিয়াল অপারেশন বন্ধ হয়ে গেল জুন পর্যন্ত। এরপর থেকে আমরা শুধু চার্টার্ড ও কার্গো ফ্লাইট চালাচ্ছি কিন্তু সেগুলোতো সীমিত। আমরা সম্প্রতি কেবলমাত্র কমার্শিয়াল ফ্লাইট সপ্তাহে একটা ঢাকা-লন্ডন শুরু করেছি। আর শুরু করেছি ইউএইতে শুরু করেছি যেহেতু তারা বিমানবন্দর চালু করেছে। তবে সেখানে অনেক রেষ্ট্রিকশন আছে।" বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৭ টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যের মধ্যে মাত্র দুটি গন্তব্যে ফ্লাইট চালু আছে। যেখানে বিশ্বের ১৭ টি গন্তব্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করতো বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স, সেখানে এখন মাত্র দুটি গন্তব্যে ফ্লাইট চালু আছে। মি. হোসেন বলছেন, এর ফলে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির ১৭শ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। তিনি বলছেন, কোভিড- ১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্য বিধির কারণে এই দুটি গন্তব্যেও উড়োজাহাজের আসন অনুযায়ী যাত্রী নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। "আইকাও-এর নির্দেশনা হচ্ছে, বিমানের পিছনের দুটি সারি খালি থাকতে হবে। যদি বিমান চলা অবস্থায় কেউ অসুস্থ হয় তাহলে তাকে সেখানে আইসোলেট করা হবে। আবার আমাদের সিভিল এভিয়েশন বলছে পাশাপাশি দুইজন বসতে পারবে না। ''তার মধ্যে এখন কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিতে হবে যাত্রীদের যা ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টা আগে করাতে হবে। এখন টিকেট আগে বিক্রি হল কিন্তু তাদের মধ্যে যদি কেউ কোভিড পজিটিভ হয় তাহলে তাদের আমি নিতে পারবো না। ফ্লাইট পরিচালনায় এরকম একটা অনিশ্চয়তা রয়ে যাচ্ছে," মি. হোসেন বলছেন। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর পরিস্থিতি বাংলাদেশে সর্বশেষ তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স চালু ছিল। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জুন পর্যন্ত ইউএস বাংলার প্রায় চারশো কোটি টাকার লোকসান হয়েছে, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ২০০ কোটি টাকা এবং নভো এয়ারের লোকসান ৬৯ কোটি টাকা। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর সাথে জড়িতদের বেতন কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সকল প্রকার কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির সকল কর্মীকে তিন মাসের অবৈতনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিলো যা সম্প্রতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শুধু মহামারি পূর্ববর্তী সময়ে বিক্রি হওয়া টিকেটের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য অল্প কিছু কর্মী কাজ করছেন। কোম্পানিটি ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিপাকে এভিয়েশন খাতের কর্মীরাও ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন আয়াটা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে যে বাংলাদেশে এয়ারলাইন্স-সহ এভিয়েশন খাতের সাথে নানাভাবে জড়িত ৬৩ হাজার কর্মীর চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত কোন এয়ারলাইন্স কর্মী ছাঁটাই না হলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান কোম্পানি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের বেতন বিভিন্ন হারে কমিয়ে দিয়েছে। বিমান শ্রমিক লীগ বলছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর সাথে জড়িতদের বেতন কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ আর কর্মকর্তা পর্যায়ে কাটা হয়েছে ২০ শতাংশ। লীগের সভাপতি মশিকুর রহমান বলছেন, বিমান বাংলাদেশই দেশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান যারা কর্মীদের বেতন কমিয়েছে। তিনি বলছেন, "শ্রমিকদের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে যে আর কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান বেতন কাটেনি। সরকার তাহলে আমাদের দায়িত্ব নিলো না। আমরা লিখিতভাবে সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছি যে বিমান সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানি। সরকারতো আর দেউলিয়া হয়ে যায়নি। সেখানে ছয়মাসও কেন আমাদের চালাতে পারলো না?" সাধারণ সময়ে ঢাকায় বিমানবন্দরের টার্মিনালে বসার যায়গা পাওয়া যায় না। যাত্রীরাও বিমান যাত্রা এড়িয়ে যাচ্ছেন মার্চের ২৬ তারিখ থেকে বন্ধ থাকার পর জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় চালু হলেও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। যেসব বিমানবন্দর চালু হয়েছে সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ির কারণে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পয়লা জুন থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু হলেও কোন এয়ারলাইন্সই যাত্রী পাচ্ছে না। তাই প্রতিনিয়ত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। যাত্রীরা খুব বড় ধরনের প্রয়োজন ছাড়া বিমান যাত্রা থেকে বিরত থাকছেন। ঢাকার আয়েশা মজুমদার নিয়মিত আকাশপথে যাতায়াত করতেন। তিনি বলছিলেন কেন তিনি বিমানে ভ্রমণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলছেন, "প্রধান কারণ আমরা যেভাবে তথ্য লুকাচ্ছি। কোভিড পজিটিভ হলেও বলছি নেগেটিভ। করোনাভাইরাস চীনের উহানে উৎপত্তি হলেও এটা ছড়িয়েছে কিন্তু বিমান যাত্রার কারণে। কে কী বহন করছে আমরা কিন্তু জানি না।" "বিমান যাত্রাটা হল খামে ভরে পার্সেল পাঠানোর মতো। একটা বন্ধ যায়গায় বসে ৩০ বা ৪০ জনের সাথে যাচ্ছি। নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত দরজা জানালা সবকিছু বন্ধ অবস্থায়। আমরা সবাই একসাথে বন্দি হয়ে আছি। সবার নিশ্বাস এক যায়গায় পড়ছে। একটা ভয় ধরে গেছে।" এখন সকল যাত্রীকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিতে হবে। আয়াটার আর একটি হিসেব বলছে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে গত বছরের তুলনায় এই বছর বিমান যাত্রীর সংখ্যা গড়ে ৪৯ শতাংশ কম হবে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে এবছরের শুরু থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে বিমান যাত্রী এসেছে প্রায় আট লাখের মতো কিন্তু এর পর থেকে জুনে বিমান চলাচল পুনরায় চালুর আগ পর্যন্ত মোটে ৩৪ হাজার যাত্রী এসেছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া বিমান যাত্রীদের অর্ধেকই অভিবাসী শ্রমিক। তাদের কাজ ঝুঁকিতে থাকায় একটা বড় অংশের যাত্রীই এখন নেই। টিকে থাকার চেষ্টা টিকে থাকতে টিকেটে মূল্যহ্রাস সহ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করার চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। কোন ফ্লাইটে টিকিট বিক্রি কম হলে সেদিন যাত্রীদের যেকোনো একটি কোম্পানি বহন করবে, এমন চুক্তি করেছে বিমান বাংলাদেশ ও নভো এয়ার। যাত্রী চলাচল না থাকলেও খরচ ঠিকই রয়েছে এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর। ফ্লাইট পরিচালনা ও বিমানবন্দরে পার্কিং সহ নানা ফি ঠিকই দিতে হচ্ছে। বিমানে পাশাপাশি দুইজন বসতে পারবে না। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো:কামরুল ইসলাম বলছিলেন, "বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে বিভিন্ন ফি মওকুফের অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা চাচ্ছিলাম আমাদের যে অ্যরোনটিকাল, নন-অ্যরোনটিকাল চার্জেসগুলো আছে যেমন ল্যান্ডিং, পার্কিং, নিরাপত্তা, ন্যাভিগেশন এসবের চার্জগুলো যেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা হয় বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটা সুযোগ করে দেয়া।" "আর একটা বিষয় হল ফুয়েল কস্ট। বাংলাদেশে শুধু একটা কোম্পানির কাছ থেকে আমরা এটা কিনতে পারি। তাদের একটা মনোপলি আছে। জেট ফুয়েলের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দামে ডিফারেন্স আছে। সেটা যেন একটা যৌক্তিক পর্যায়ে আসে। একটা এয়ারলাইন্সের অপারেশন কস্টের ৪০ শতাংশই হল জ্বালানি খরচ।" বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন দেশে বাড়তি কড়াকড়ি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিমানের ক্ষেত্রে অনেক দেশ বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করেছে। কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী সহ গুয়াংঝো যাওয়ায় সপ্তাহখানেকের জন্য ইউএস বাংলার ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল চীনা কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টেস্টের ফল নেগেটিভ হলেও বিদেশে যাওয়ার পর সেই ফল পজিটিভ হয়েছে এমন ঘটনা ঘটার পর সম্প্রতি কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে বিমান চলাচলের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলছেন, "কোভিড ১৯ পরীক্ষা নিয়ে একটা ভুল বার্তা গেছে। এর ফলে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছে তা পরিবর্তন না করতে পারলে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলো আরও বড় বিপদে পড়বে। আমাদের দূতাবাসগুলোর উচিৎ প্রচার প্রচারণা চালানো যে আমরা এটা পরিবর্তন করবো। আমাদের সম্পর্কে যে ধারনা তৈরি হয়েছে তা থেকে বিশ্ববাসীকে ফিরিয়ে আনতে হবে।" করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় সরকারের পক্ষ থেকে কি সহায়তা দেয়া হচ্ছে? বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিমান বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সহজ শর্তে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেয়েছে। যার সুদের একটি অংশ সরকার দেবে। ইতিমধ্যেই কিছু ঋণ নিয়েছে কোম্পানিটি। বেসরকারি কোম্পানিগুলোকেও সাড়ে চার শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা দেয়া হবে। তবে এই ঋণ এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করত হবে। বিশ্বব্যাপী বিপাকে পড়া বিমান কোম্পানিগুলোকে সংকট থেকে উত্তরণে তাদের সরকার নানা ধরনের বেইল আউট প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের সরকার কি ভাবছে? জিজ্ঞেস করেছিলাম বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মহিবুল হকের কাছে। তিনি বলছেন, "বেসরকারিদের জন্যেও ঋণ সুবিধা দেয়া হলেও এখনো কেউ আবেদন করেনি। আপাতত আমরা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে নন-অ্যরোনটিকাল চার্জ নেবো না। আর অ্যরোনটিকাল চার্জও আমরা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেবো।" তিনি আরও বলছেন, "তারা পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ চাইতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ বিমানসহ যত কোম্পানি আছে, সিভিল এভিয়েশন তাদের কাছে শত শত কোটি টাকা পায়। এটা কোভিড মহামারি শুরুর আগের কথা বলছি। মহামারি শুরুর পর থেকে তারা সুবিধা পাবে কিন্তু তার আগের যে বকেয়াগুলো আছে সেগুলো যদি তারা আমাদের পরিশোধ করে তাহলে আমরা সারচার্জ মওকুফ করা যায় কিনা সেই উদ্যোগ নেবো।" তার মানে দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা পেতে হলে, মি. হকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আগে সবাইকে বকেয়া ১৫শ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এয়ারলাইন্সগুলো বলছে যার সামর্থ্য এই মুহূর্তে তাদের নেই। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির অনেকের আশঙ্কা মহামারির ধাক্কায় দেশিয় এয়ারলাইন্স দু-একটি বন্ধ হয়ে যাবে কিনা। | করোনা ভাইরাস: মহামারির কারণে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | আফগানিস্তানে অজ্ঞাত স্থানে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে হামিদ মীর ওসামা বিন লাদেনের একাধিক সাক্ষাৎকার নেওয়া মি: মীরকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে বিবিসিকে মি: মীর বলেছেন ওসামা বিন লাদেনের আদর্শের সঙ্গে অনেকে একমত না হলেও সাংবাদিকদের জন্য তিনি ছিলেন খবরের উৎস। কাজেই ''আমি মনে করি সাংবাদিক হিসাবে আমি একটা ইতিহাসের সাক্ষী।'' এগারোই সেপ্টেম্বর ২০০১এ টুইন টাওয়ারে হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছিলেন ধ্বংস ও মৃত্যুর ন্যায় বিচার চান তিনি। জীবিত অথবা মৃত - ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে চায় আমেরিকা। হামিদ মীর, পাকিস্তানের এক সুপরিচিত সাংবাদিক সেসময় গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। ''আমি যখন আফগানিস্তানে ঢুকলাম - সেখানে তখন ভয়ঙ্কর অবস্থা । ঘটনাস্থলের দৃশ্য অবর্ণনীয়, চারিদিকে ধ্বংসলীলা, মৃতদেহ। নিজেকে আমি বলছিলাম- তুমি পাগল নাকি- এখানে কেন এসেছো?'' ওসামা বিন লাদেনের শেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন যে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর শুনুন তার স্মৃতি নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী ২০০১এ নভেম্বরের গোড়ার দিকে হামিদ মীরের পরিচিত আল কায়েদার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি তাকে সঙ্গে করে কাবুলে নিয়ে যাবার জন্য আল কায়েদার একজন লোককে ঠিক করে দেন। হামিদ মীরের ধারণা তাকে কাবুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাতের অন্ধকারে অ্যাম্বুলেন্সে করে চোখ বেঁধে। তাকে যেখানে নেওয়া হয় সেখানে আমেরিকা তখন প্রচণ্ড বিমান হামলা চালাচ্ছে। ''সে রাতটা ছিল আমার জন্য খুবই কঠিন। যেসব আল কায়েদা যোদ্ধা সেখানে ছিল তারা প্রত্যেকেই প্রাণ দিতে চায়। প্রত্যেকেই শহীদ হতে চায়। ভবনটির ওপর মুহুর্মুহু হামলা চালানো হচ্ছে। আমি তখন আমার স্ত্রীকে একটা চিঠি লিখে বলেছিলাম - আমি দু:খিত- আমি হয়ত এখানে মারা যাব - বাচ্চাদের দেখো।'' হামিদ মীর এর আগে দুবার ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মি: মীর, বিন লাদেনের কাজের ধারা নিয়ে খোলাখুলিই সমালোচনা করতেন, কিন্তু বিন লাদেন তাকে বলেছিলেন তার বক্তব্য বাইরের বিশ্বের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারায় মি: মীর তার আস্থা অর্জন করেছেন। তবে ১৯৯৭ সালে হামিদ মীর যখন প্রথম বিন লাদেনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন বিন লাদেন সম্পর্কে তিনি বিশেষ কিছুই জানতেন না। ''তার কাছে আমি পৌঁছেছিলাম তৎকালীন তালেবান নেতা মোল্লা উমরের মাধ্যমে। বিশ্বাস করুন সে সময় আমি ওসামা বিন লাদেনের কথা জানতামই না। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম- উনি কে? মি: উমর আমাকে বলেছিলেন উনিই তো সেই ব্যক্তি যিনি সোমালিয়ায় আমেরিকানদের ওপর হামলা চালিয়েছেন এবং তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদেরও হত্যা করেছেন।'' ডিসেম্বর ২০০১- তোরাবোরা পাহাড়ে আল কায়দার পরিত্যক্ত এক গুহায় গুলিবারুদের সরঞ্জাম মোল্লা উমর তাকে বলেছিলেন মি: লাদেন আফগানিস্তানে তার অতিথি। তিনি মি: লাদেনের সঙ্গে হামিদ মীরের বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে বলেছিলেন। ''এরপর ওরা আমাকে নিয়ে গেল তোরাবোরা পাহাড়ে।'' ''আমার মনে আছে সময়টা তখন সন্ধ্যে। যখন আমি পাহাড়ে একটা গুহায় ঢুকলাম, তখন কয়েকজন আরব আমাকে থামাল। আমার সারা শরীরে তল্লাশি শুরু করল, এমনকী আমার জাঙ্গিয়ার মধ্যে হাত ঢুকিয়েও তারা তল্লাশি চালাচ্ছিল। আমি চেঁচামেচি শুরু করলাম। কারণ ওদের আচরণ খুব একটা সভ্য ছিল না। হঠাৎ করে একজন লম্বা লোক এসে হাজির হলেন - জিজ্ঞেস করলেন - কী হয়েছে? ওরা তার সঙ্গে আরবী ভাষায় কথা বলছিল। বুঝলাম উনি ওসামা বিন লাদেন।'' মি: মীর বলেন মি: লাদেন খুব ভদ্র ও নম্র ছিলেন। তিনি তার কাছে দু:খপ্রকাশ করে বলেছিলেন - এটা তাদের নিরাপত্তা পরীক্ষার একটা অংশ। বলেছিলেন তার পরিবারের লোকজন দেখা করতে এলেও এভাবেই তাদের পরীক্ষা করা হয়।'' তাদের আবার দেখা হয় ১৯৯৮ সালে। ধারণা করা হয় সে সময়ের মধ্যেই মি: লাদেন বেশ কিছু সন্ত্রাসী হামলা সমর্থন করে তার জন্য অর্থ জুগিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন তিনি আরও সহিংস - আরও নাটকীয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছেন- বিশেষ করে আমেরিকার ওপর। এরপরই আসে ২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারের ওপর ঐতিহাসিক ও নাটকীয় হামলা। ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০১ -এ টুইন টাওয়ারের নাটকীয় হামলা ওই হামলার ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন হামিদ মীর? মি: মীর বলছেন তিনি ছিলেন নিজের অফিসে। ''বিকেলের শেষ দিক তখন। একজন আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আগে তাকে কখনও দেখিনি। তিনি আমাকে একটা ঘড়ি দিয়ে বললেন ওটা শেখের উপহার। হাতঘড়িটা আমি ওসামা বিন লাদেনকে পরতে দেখেছিলাম যখন দ্বিতীয়বার আমি তার সাক্ষাৎকার নিই। যখনই নামাজের সময় হচ্ছিল ওই ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজছিল। ঘড়িটা আমি চিনতে পারলাম । বুঝলাম ওসামা বিন লাদেন উপহারটা পাঠিয়েছেন।'' ওই ব্যক্তিকে মি: মীর জিজ্ঞেস করেছিলেন - শেখ তাকে কেন পাঠিয়েছেন? লোকটি তাকে বলেছিল- সে মি: মীরকে একটা চিঠি দেব। কিন্তু আপাতত তার অফিসে একটু বসার অনুমতি চেয়েছিল আর বলেছিল টিভিতে সিএনএন বা বিবিসি কোন একটা চ্যানেল একটু ছাড়তে। ''কিছুক্ষণ পরে ঘরে গিয়ে দেখি লোকটি লাফাচ্ছে, নাচছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কী হল? সে বলল - দেখো টিভিতে দেখো আমেরিকার ওপর হামলা হয়েছে! আমি বললাম- ওটা তো একটা বিমান দুর্ঘটনা। কিন্তু দেখলাম সে খুশিতে চেঁচাচ্ছে। আর বলছে -বা: আরেকটা আক্রমণ- দ্বিতীয় আক্রমণ। তার সে কী উল্লাস- আমার মনে হচ্ছিল সে বিরাট বিপদজনক একটা মানুষ।'' ১১ই সেপ্টেম্বরের ওই জোড়া হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় তিন হাজার মানুষ। নজিরবিহীন ওই আক্রমণ বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানার পর আফগানিস্তান থেকে আসা ওই দূত হামিদ মীরের হাতে একটা চিঠি তুলে দেয়। চিঠিটি লিখেছিলেন ওসামা বিন লাদেন। ''সেটা ছিল ছোট্ট একটি বিবৃতি। লেখা ছিল যারা এই অভিযান চালিয়েছে তাদের আমি প্রশংসা করি। কিন্তু আমি এ হামলার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী নই।'' হামিদ মীর চিঠিটি প্রকাশ করেন। তোলপাড় পড়ে যায় সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে। অনেক সংবাদ অনুষ্ঠান তার সাক্ষাৎকার নেয়। অনেকে তার ব্যাপক সমালোচনা করে সন্দেহ প্রকাশ করে যে তিনি আল কায়েদার খুবই ঘনিষ্ঠ। আফগানিস্তানে তালেবান নেতৃত্বের ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের আক্রমণ শুরুর এক মাস পর হামিদ মীর তৃতীয়বার যান বিন লাদেনের কাছে। ''আমি হাতে লেখা একটা চিঠি পেয়েছিলাম- জালালাবাদ আসতে পারবে? আমি ভেবেছিলাম এটা হয় একটা ফাঁদ- নয়ত কেউ আমার সঙ্গে মস্করা করছে। আমি ভয় পেয়েছিলাম চিঠিটা হাতে পেয়ে- কারণ ব্যাপারটা ছিল খুবই ঝুঁকির।'' ২০০১এর ৯ই জানুয়ারি আফগানিস্তানের কান্দাহারে ওসামা বিন লাদেনের পুত্র মোহাম্মদ বিন লাদেনের বিবাহ অনুষ্ঠানে। আল জাজিরা টিভিতে দেখানো হয়েছিল সেই ছবি। বাঁ পাশে কনের বাবা আবু হাফাস আল মাসরি। কেমন দেখেছিলেন তিনি বিন লাদেনকে? মি: মীর বলছেন পুরো আবেগহীন আর শান্ত ছিলেন মি: লাদেন। নর্দান অ্যালায়েন্স আর আমেরিকান বাহিনী তখন কাবুলের দখল নিতে যাচ্ছে। ''আমার মনে আছে তিনি আমাকে বলেছিলেন আমেরিকানরা আমাকে জীবিত ধরতে পারবে না।'' মি: মীর বলেছেন বিন লাদেনের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে প্রতিবারই তিনি সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করে মি: লাদেনকে তার কাজের ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ''এমনকী প্রথমবার সাক্ষাৎকারের সময়ও আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি সোমালিয়ায় পাকিস্তানি সৈন্যদের কেন মেরেছিলেন? দ্বিতীয়বার আমি প্রশ্ন করেছিলাম ইসলামী আদর্শের দোহাই দিয়ে তিনি কোন্ যুক্তিতে নিরীহ অমুসলিম মানুষদের হত্যাকে তিনি সমর্থন করছেন? তৃতীয়বারেও আমি তাকে বলেছিলাম আমেরিকায় যারাই থাকে তারা সবাই খারাপ একথা তিনি কীভাবে বলেন?'' মি: মীর বলেন তৃতীয়বারের ওই সাক্ষাৎকারে নেবার সময় তারা যখন কথা বলছেন তখন বিন লাদেনের নিরাপত্তা রক্ষীরা সন্দেহ করে যে বাইরে একজন গুপ্তচর রয়েছে এবং হামলা হতে পারে। মুহুর্তে একটা ত্রাস তৈরি হয়। ''হঠাৎ শুনলাম তারা চিৎকার করছে পালাও পালাও । তখনও বিন লাদেন খু্বই শান্ত ছিলেন। তারপরেই তিনি বললেন 'ইয়েল্লা- ইয়েল্লা- ইয়েল্লা- যাও যাও যাও। ওনার সঙ্গে আমার সেটাই ছিল শেষ কথোপকথন।'' তারা সবাই সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে পালিয়েছিলেন ৫ মিনিটের মধ্যে। তার ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে সেখানে শুরু হয়েছিল বোমাবর্ষণ । বিন লাদেন আর মি: মীর দুজনেই বেঁচে গিয়েছিলেন। হামিদ মীরকে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি গেলেন একদিকে আর ওসামা বিন লাদেন ও তার দলবল আরেকদিকে। এর কয়েকদিনের মধ্যে বিন লাদেন গোপন আস্তানায় চলে যান। এর দশ বছর পর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তার সন্ধান মেলে একটি সেনা ঘাঁটির কয়েকশ মিটার দূরত্বে এক গোপন ডেরায়। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ৩রা মে ২০১১ এই গোপন আস্তানায় আমেরিকান বিশেষ বাহিনী হামলা চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিল। ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কারণে হামিদ মীরকে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অনেকে বলেছে আল কায়েদার হয়ে তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু হামিদ মীর মনে করেন তিনি সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ''আমি একমাত্র সাংবাদিক নই যে ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে আগ্রহী ছিল। সেসময় সব সাংবাদিকই তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে কারণ তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তার আদর্শের সঙ্গে আপনি একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু সাংবাদিকের জন্য তিনি খবরের উৎস। কাজেই আমি মনে করি সাংবাদিক হিসাবে আমি একটা ইতিহাসের সাক্ষী।'' হামিদ মীরই শেষ সাংবাদিক যিনি ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। | ওসামা বিন লাদেন তার শেষ সাক্ষাৎকারে কী বলেছিলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীরকে |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | তালেবানের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন শাজিয়া হায়া "আমি খুনি নই, কিন্তু আমাকে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে একজন খুনি হিসেবে। আমি রাজনীতি নিয়ে কথা বলবো না। বরং আপনাদের সবার সঙ্গে বসার জন্য একটা সময় ঠিক করা যাক। আমরা একসঙ্গে চা খাব এবং আমি আপনাদের কিছু কবিতা শোনাবো।" কথাগুলো তিনি বললেন নরমভাবে, তার মুখে মৃদু হাসি। তালেবানের খুব গুরত্বপূর্ণ একজন নেতা এভাবে কথা বলবেন, সেটা আমি আশা করিনি। কাতারের দোহায় জঙ্গিদের সঙ্গে আফগান সরকারের ঐতিহাসিক আলোচনার শেষ দিনে আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম একটা সাক্ষাৎকারের অনুরোধ নিয়ে। আমি তখন বিমানবন্দরের দিকে রওনা দেব। তখন হোটেলের লবিতে দেখলাম তালেবান প্রতিনিধিদলের কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের ঘিরে রেখেছে রিপোর্টাররা। একটা চমৎকার প্রতিবেদন লেখার জন্য তার কাছ থেকে দারুণ কোন তথ্য পাওয়ার এটাই শেষ সুযোগ। কিন্তু তিনি তো কবিতা নিয়ে কথা বলতে দোহায় আসেন নি। আমিও না। 'আমি কথা বলবো না' দোহার যে হোটেলে আলোচনা চলবে সেখানে এসে পৌঁছাচ্ছেন তালেবান প্রতিনিধিদল। শাজিয়ার তোলা সেলফি। রুদ্ধদ্বার আলোচনার খবর সংগ্রহ করা সবসময় কঠিন। আমাদের জন্য শুরুটা মোটেই আশাব্যঞ্জক ছিল না। দোহার শেরাটন হোটেলটা দাঁড়িয়ে আছে একেবারে সাগরের তীরে। যখন প্রথম এই হোটেলে এলাম, তখনই চোখে পড়লো তালেবান নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমি আমার ব্যাগটা মেঝেতে রেখে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম তক্ষুনি একটা সাক্ষাৎকারের অনুরোধ নিয়ে। অনেক সময় যদি কাউকে অপ্রস্তত অবস্থায় ধরতে পারেন, তাদের কাছ থেকে কথা বের করা যায়। খুব সতর্কভাবে লেখা কোন প্রেসবিজ্ঞপ্তির চেয়ে বরং এভাবেই একমাত্র পাওয়া যেতে পারে আপনার প্রতিবেদনে ব্যবহারযোগ্য কোন উদ্ধৃতি। "আমি কথা বলবো না," তালেবানের এই নেতা সাথে সাথে বললেন। আমি যখন আসলে তার দিকে ক্যামেরা হাতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনি আমাকে আশা করছিলেন না। আমি তার অস্বস্তি বুঝতে পারছিলাম এবং সাথে সাথেই একটু পিছিয়ে এলাম। আমি হাসিমুখে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম সাক্ষাৎকার নেবেন আমার পুরুষ সহকর্মী। আমি সেখানে থাকবো ক্যামেরা ধরার জন্য। দোহায় আমার কাজটা কথা কঠিন হতে যাচ্ছে, সেটা দ্রুতই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। চোখে চোখ না রাখা সম্মেলন কক্ষ থেকে লাইভ রিপোর্টিং করছেন শাজিয়া হায়া শেষ পর্যন্ত আমি অবশ্য কথা বলতে অনিচ্ছুক ঐ তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু সাক্ষাৎকারের পুরোটা সময় আমি খেয়াল করলাম, তিনি এবং তার প্রতিনিধিদলের অন্য তালেবান নেতারা আমার চোখে চোখ রাখছেন না। এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে তারা পুরুষদের সঙ্গে কথা বলার সময় যতটা সহজ, মেয়েদের বেলায় মোটেই তা নন। এরা বিশ্বাস করে, একজন অপরিচিত নারীর চোখে রাখা মানে তাকে অশ্রদ্ধা করা। তাদের দৃষ্টিতে এটা পাপ। আমি পুরো তিন মিনিট সময় ধরে একজন তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিলাম কিন্তু তিনি একবারও আমার দিকে তাকালেন না। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি তিনি যদি ভবিষ্যতে আমাকে দেখেন, তিনি মনেই করতে পারবেন না যে আমাকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু এসবের কিছুতেই আমি অবাক হইনি। যে গোষ্ঠীটি বহু বছর ধরে লুকিয়ে ছিল, লড়াই করছিল- তাদেরকে চোখের সামনে দেখা, নানা প্রশ্নের মুখোমুখি করা, সেটাও কয়েকমাস আগে অকল্পনীয় ছিল। কাজেই আমি আরও অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য তৈরি ছিলাম। ঐতিহাসিক ঘটনা বিমানে আফগান প্রতিনিধিদলের নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে শাজিয়া আফগান সরকার এবং তালেবান নেতৃত্ব বহু মাস ধরে আলোচনা চালিয়েছে এরকম একটি মুখোমুখি বৈঠকের জন্য। তাদের আলোচনা কখনো এগিয়েছে, কখনো পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই বৈঠক কখন, কোথায় হবে, সে ব্যাপারে তারা একমত হয়েছে। তখন আরও অনেক আফগান সাংবাদিকের মতো আমারও মনে হয়েছে, এই ঐতিহাসিক ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু দশকের রক্তপাত এবং খুনোখুনির পর দুই পক্ষ শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে রাজী হয়। আমাদের চোখের সামনেই উন্মোচিত হচ্ছিল এক নতুন ইতিহাস। দ'হাজার দুই সাল থেকে আমি অনেক ঘটনা, অনেক পরিবর্তন দেখেছি। তালেবানের পতনের পর এক নতুন আফগানিস্তান তখন যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু নতুন সরকারকে সাথে সাথেই আবার তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হলো। কিন্তু ১৮ বছর পর দুই চরম শত্রুপক্ষ সমঝোতার জন্য আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি। কী পোশাক পরবো? দোহার উদ্দেশে কাবুল থেকে যখন বিমান ছাড়লো, আমি এই ঐতিহাসিক ঘটনার নানা দিক নিয়ে ভাবছিলাম। নারী অধিকার থেকে নারী স্বাধীনতার ভাগ্য, আফগানিস্তানের সংবিধান থেকে শুরু করে দুই পক্ষের আলোচনার বিষয়। কীভাবে এই আলোচনার খবর সংগ্রহ করবো, সেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম। কার সাক্ষাৎকার নেব, কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবো এসবের পাশাপাশি একটি বিষয়ও আমার ভাবনায় এলো। আমি কী পোষাক পরবো? নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি। শেরাটন হোটেলে রিপোর্ট রেকর্ড করছেন শাজিয়া এটি আমার কোন অহমিকার ব্যাপার নয়। অনেক পুরুষ সহকর্মীর বেলায় এরকম প্রশ্ন হয়তো তাদের মাথাতেই আসবে না। কিন্তু নারী স্বাধীনতা এবং অধিকারের ব্যাপারে তালেবানের যে কঠোর নিয়ম-কানুন, সেজন্যে একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে আমাকে আমার পোশাক নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। যদিও আমার মাথা হতে পা পর্যন্ত পোশাকে আবৃত। কাবুলের রাস্তায় যে পোশাক পরে মেয়েরা প্রতিদিন অফিসে যান, যে পোশাক নিয়ে তাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না, আমার পরনে সেরকম পোশাকই। আমি এখানে এসেছি তালেবানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিতে। যে তিনদিন আমি এখানে থাকবো, তাদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমি এখানে যে পোশাকে এসেছি, ১৮ বছর আগে এই পোশাকে আমার পক্ষে রাস্তায় হাঁটা সম্ভব ছিল না। তখন আফগানিস্তানে তালেবান মেয়েদের পোশাকের ব্যাপারে যে কঠোর বিধান চালু করেছিল, তাতে নীল চাদর (হিজাবের মতো একটি পোশাক যা নারীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত করে রাখে) পরা বাধ্যতামূলক ছিল। যারা এটি পরতো না, তাদের তালেবান কঠোর সাজা দিত। আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে নারীবাদী রেডিও চালান সাহসী যে নারী অস্ত্র হাতে একাই তালেবান জঙ্গিদের রুখে দিয়ে ভাইরাল কিশোরী 'ডাক্তারকে নাম বলায় পেটালেন স্বামী' - যে দেশে মেয়েদের নাম প্রকাশ নিষেধ জান বাজি রেখে ফুটবল খেলছেন আফগান নারীরা তারা এখন কতটা বদলেছে, আমি ভাবছিলাম। তারা এখন আমাকে কীভাবে নেবে? 'ভুল হতেই পারে' তাদের অবস্থান আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে আমার এমন আশা করার যথেষ্ট কারণ আছে। যখন আমার বয়স মনে হয় চার বছর, তখন একদিন আমি আমার খালার বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন আমার মা, তিনি চাদরে নিজেকে আবৃত করেছিলেন। যখন আমরা এসে পৌঁছাচ্ছি, তিনি চাদর খুলে ফেললেন, তার মুখ উন্মোচন করলেন। মুক্তি পাওয়া এক তালেবান বন্দীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন শাজিয়া তখন এক তালেবান পুরুষ এসে তাকে একটা চাবুক দিয়ে আঘাত করলো। আমার চোখের সামনে। লোকটা চিৎকার করে বললো, 'তোমার মুখ ঢাকো।' আমার শৈশবের সেই স্মৃতি আমার মনে গেঁথে আছে। আমি জীবনে কখনো সেই দিনটির কথা ভুলতে পারবো না। যখন আমরা আমার খালার বাড়িতে ঢুকে গেছি, তখন আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বারবার আমার মাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, লোকটা কি আমাদের পেছন পেছন আসছে, আমাদের অনুসরণ করছে? এই সম্মেলন আমি যখন এক তালেবান প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন এই স্মৃতির কথা তাকে বললাম এবং জানতে চাইলাম, এটা শুনে তার প্রতিক্রিয়া কী। "অতীতে অনেক ভুল হয়েছে এবং এসব ভুলের আর পুনরাবৃত্তি হবে না," শান্তভাবে তিনি জবাব দিলেন। এই তালেবান প্রতিনিধিদল যদি এখন কাবুল যায়, তারা অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে সব জায়গায় মেয়েদের অনেক বেশি প্রকাশ্য উপস্থিতি। পার্লামেন্টের অন্তত ২৫ শতাংশ আসনের এমপি এখন নারী। গণমাধ্যমে এবং বিনোদন জগতে তাদের এখন বেশ উল্লেখযোগ্য অবস্থান। সরকারি দফতরে কাজ করছে অনেক তরুণী কর্মকর্তা। স্কুলে প্রত্যাবর্তন আর যে পরিবর্তনটা আপনি সত্যই দেখতে পাবেন সেটা হলো শিক্ষায় মেয়ে এবং নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ। আমার পরিবার পাকিস্তানে কয়েকমাস কাটিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা করার পর তারা ফিরে আসে। এরপর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলো। আমার মনে আছে কাবুলের চারিদিকে তখন শিক্ষা বিষয়ক অনেক বিজ্ঞাপন। একটা পোস্টারে হাসিখুশী এক ছেলে আর এক মেয়ের স্কুলে যাওয়ার ছবি ছিল। পোস্টারে লেখা ছিল, 'চলো লেখাপড়া করি।' তালেবান শাসনের সময় আমার বড় বোন পড়াশোনা করতে পারেনি। কিন্তু আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি স্কুলে যেতে পারি কিনা এবং স্কুলের খাতায় নাম লেখাতে পারি কিনা। আফগানিস্তানে এখন প্রায় এক কোটি ছাত্র-ছাত্রী, এদের একটা বড় অংশ হচ্ছে মেয়ে। যদি কোন শান্তি চুক্তি হয়, এসব অর্জনের কোনগুলোকে বিসর্জন দিতে হবে? কাতারে তালেবানের যে রাজনৈতিক অফিস, তার মুখপাত্র হচ্ছেন সুয়াহিল শাহীন। তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, "যদি আপনারা একটা শান্তি চুক্তিতে পৌঁছান এবং কাবুলে যান, এরকম কি আবার ঘটবে, আমি কি আমার ক্যামেরা আর মাইক হাতে এভাবে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে পারবো?" "অবশ্যই পারবেন," একটু হেসে উত্তর দিলেন তিনি, "তবে আপনাকে ইসলামী কায়দায় হিজাব পরতে হবে।" স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন হোটেলের করিডোরে আমি লক্ষ্য করলাম, যখন বিদেশি নারীরা ভিন্ন পোশাকে চারিদিকে হাঁটছে, সেটা নিয়ে তালেবান প্রতিনিধিদের সেরকম মাথাব্যাথা নেই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি আফগানিস্তানের প্রত্যেক নারী তার ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করতে চায়, তালেবান সেটাও এরকম সহজভাবে মেনে নেবে কীনা। তালেবান দলের ছবি তুলছেন শাজিয়া। দুই পক্ষের মধ্যে দোহায় যে শান্তি আলোচনা চলছে সেখানে নারী অধিকার এবং নারী স্বাধীনতা নিয়েই সবচেয়ে কঠিন দরকষাকষি চলবে। আফগান সরকারের যে প্রতিনিধিদল আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, তার পাঁচজন সদস্য নারী। যাদের মুখোমুখি তাদের আলোচনার টেবিলে বসতে হচ্ছে, তাদের সবাই পুরুষ। তালেবান দাবি করছে, মেয়েদেরকে ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী চলতে হবে। আফগান সরকারের প্রতিনিধি এই নারীদের অন্য অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ের সঙ্গে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে হবে। গত দুই দশকে নারীর যে অর্জন, সেগুলোকে কি শ্রদ্ধা করা হবে? তালেবানের সময় আলোচনায় এগুলো ঘুরে-ফিরে আসবে। তালেবান প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্যকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, নারীদের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গী কী? তালেবানদের পক্ষে আলোচনা করছে যে প্রতিনিধিদল, সেখানে কেন একজন নারীও নেই? "আমাদের অনেক শিক্ষিত নারী আছে; তারা পর্দার অন্তরালে কাজ করে এবং তাদের এখানে আসার সময় হয়নি," জানালেন তিনি। তারপর তিনি আবার বললেন, মেয়েরা যদি কাজ করতে চায়, তালেবান গোষ্ঠীর তাতে কোন আপত্তি নেই। তারা চায় মেয়েরা যেন আরামে থাকে, তাদের যেন শ্রদ্ধা করা হয়। "আপনার মতো নয়, আপনি এখানে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন," রসিকতা করে বললেন তিনি। প্রজন্মের ব্যবধান দোহায় একটা মজার জিনিস চোখে পড়লো। এখানে তালেবানের মধ্যে দুটি প্রজন্ম। সামনের সারিতে বসে আছে খুব রাশভারী, গুরুগম্ভীর বয়স্ক নেতারা। তার বিপরীতে পেছনের সারিতে বসা তরুণ নেতারা অনেক সহজ এবং মিশুক। তালেবান প্রতিনিধিদলের নেতা মোল্লাহ বারাাদার যখন সম্মেলন কক্ষে ঢোকেন, সাথে সাথেই যে পরিবেশটা বদলে যায় সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। হঠাৎ যেন সবাই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যখন তিনি থাকছেন না, তখন তালেবান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যেন অনেক বেশি স্বাভাবিক। আমি তালেবান প্রতিনিধিদলের নয় জন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিনিধিদলের তরুণ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা অনেক সহজ। তাদের পাওয়া যায় সহজে, তারা বেশ কথা বলে এবং আমি যে নারী সাংবাদিক তাতেও কিছু আসে যায় না। কিন্তু তালেবানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণদের বা নারীদের কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে। অথচ তালেবান কিন্তু স্বীকার করে যে আজকের আফগানিস্তানের জনসংখ্যার বড় অংশই হচ্ছে তরুণ। এই তরুণরা লেখাপড়া শিখছে। তাদের ইন্টারনেট আছে, আছে স্মর্টফোন। তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার অধিকার দাবি করছে তারা। কিন্তু তাদের জন্য এখন কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে? দোহায় আমি যা দেখে এসেছি, কিছু আশাব্যজ্ঞক ইঙ্গিত হয়তো আছে। কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, দোহায় ইস্ত্রি করা পাটভাঙ্গা কাপড় পরা যে তালেবান পুরুষদের আমি দেখেছি, আফগানিস্তানের রণাঙ্গনে তার চেয়ে অনেক বিরাট সংখ্যায় আছে যুদ্ধপোশাকে সজ্জিত তালেবান। তারা সেখানে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে। | দোহা শান্তি আলোচনা: এক আফগান নারী সাংবাদিক যখন তালেবানের মুখোমুখি |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | ভিডিওতে দেখা যায়, দুবাইয়ের রাজকুমারী লতিফাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে "জেলের মতো বাড়িতে" বন্দী রাখা হয়েছে তিনি প্রিন্সেস লতিফা। বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানকে দেয়া ওই ফুটেজে রাজকুমারী লতিফা আল মাকতুম বলেন, তিনি বোটে করে পালিয়ে যাওয়ার পর কমান্ডোরা তাকে মাদকাচ্ছন্ন করে এবং আবার তাকে বন্দীশালায় নিয়ে আসে। গোপনে পাঠানো বার্তাগুলো আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার বন্ধুরা জাতিসংঘকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এর আগে জানিয়েছিল যে, তিনি তার পরিবারের তত্ত্বাবধানে নিরাপদেই রয়েছেন। জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার কমিশনার ও আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, যিনি ২০১৮ সালে রাজকুমারীর সাথে দেখা করার পর তাকে একজন "বিপদগ্রস্থ তরুণী" বলে উল্লেখ করেছিলেন, এখন বলছেন যে রাজকুমারীর পরিবার তাকে "ভয়াবহভাবে ধোঁকা দিয়েছিল।" লতিফার বর্তমান অবস্থা এবং তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। "লতিফার বিষয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন রয়েছি। সবকিছু বদলে গেছে। আর তাই আমার মনে হয়ে এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার," তিনি বলেন। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ২০১৮ সালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার আগে দুবাইয়ের রাজকুমারী লতিফা লতিফার পিতা শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন - তিনি দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। লতিফাকে আটক করার পর দুবাইয়ে ফেরত নেয়ার বছর খানেক পর তাকে গোপনে দেয়া একটি ফোনে কয়েক মাস ধরে ওই ভিডিওগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি স্নানঘরে বসে সেগুলো রেকর্ড করেছিলেন কারণ সেটিই ছিল একমাত্র কক্ষ, যেটির দরজা তিনি বন্ধ করতে পারতেন। ভিডিও বার্তায় তিনি যা বলেছেন: •নৌকা থেকে যে সেনারা তাকে আটক করেছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন তিনি, তাদের "লাথি মেরেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে মারামারি করেছিলেন" এবং আমিরাতের এক কমান্ডোর হাতে সে চিৎকার না করা পর্যন্ত কামড়ে ধরেছিলেন। •তাকে অচেতন করার ওষুধ দেয়ার পর তিনি চেতনা হারান এবং তাকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে তোলা হয়। সেটি দুবাইয়ে অবতরণের আগ পর্যন্ত অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি। •তিনি পুলিশের পাহারায় একটি ভিলাতে আটক ছিলেন যারা জানালাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেখানে তার কোন চিকিৎসা বা আইনি সহায়তা নেয়ার সুযোগ ছিল না। লতিফার ফিটনেস প্রশিক্ষক টিনা জাওহিআইনেন, যিনি তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন প্যানোরামার কাছে লতিফার আটক হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু টিনা জাওহিআইনেন, মায়ের দিককার এক ভাই মার্কাস এসাব্রি এবং প্রচারকর্মী ডেভিড হেই। এরা সবাই লতিফাকে মুক্ত করার প্রচারণার সাথে যুক্ত। তারা বলেন যে লতিফার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তারা এখন এই ভিডিও বার্তাগুলো প্রকাশের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা দুবাইয়ে ওই "ভিলায়" বন্দী লতিফার সাথে যোগাযোগ স্থাপনে এরাই সক্ষম হয়েছিলেন, পুলিশ পাহারায় যে বাড়ির জানালাগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। লতিফাকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে সেটি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করেছে প্যানোরামা। শেখ মোহাম্মদ একটি বিশাল সফল শহর গড়ে তুলেছেন, কিন্তু অধিকারকর্মীরা বলেছেন যে সেখানে ভিন্নমতের প্রতি কোন সহনশীলতা নেই এবং বিচার ব্যবস্থা নারীদের প্রতি বৈষম্য করতে পারে। তার ঘোড়-দৌড়ের বড় ধরণের প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং মাঝে মাঝেই তিনি রয়াল অ্যাসকটের মতো বড় ধরণের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকেন - এখানে যেমন ছবিতে তাকে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে রানী এলিজাবেথের সাথে শেখ মোহাম্মদ (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়।) কিন্তু তিনি রাজকুমারী লতিফা এবং তার সৎমা প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল হুসাইনকে নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। প্রিন্সেস হায়া ২০১৯ সালে তার দুই সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন। নৌকায় করে পলায়ন বর্তমানে লতিফার বয়স ৩৫ বছর। কিন্তু তিনি প্রথম পালানোর চেষ্টা করেন ১৬ বছর বয়সে। তবে পালানোর একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন তিনি শুরু করেন ২০১১ সালে ফরাসি ব্যবসায়ী হার্ভি জবার্টের সাথে যোগাযোগের পর। মিজ জাওহিআইনেন, যিনি ক্যাপোইরা নামে ব্রাজিলিয় মার্শাল আর্ট বিষয়ে তার প্রশিক্ষক ছিলেন, তিনি তাতে তাকে সহায়তা করেছিলেন। ২০১৮ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি লতিফা এবং মিজ জাওহিআইনেন রাবারের তৈরি নৌকা এবং জেট স্কি'র সাহায্যে আন্তর্জাতিক জলসীমায় মার্কিন পতাকাবাহী একটি প্রমোদতরীতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ওই প্রমোদতরীতে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন মি. জবার্ট। কিন্তু আট দিন পর ভারতের উপকূলের কাছে প্রমোদতরীটি খুঁজে পায় কমান্ডোরা। মিজ জাওহিআইনেন বলেন, তারা ধোয়া তৈরি করে এমন গ্রেনেড ব্যবহার করে স্নানঘরে লুকিয়ে থাকা তাদের দু'জনকে বেরিয়ে আসতে করে। পরে তাদেরকে বন্দুকের মুখে আটক করা হয়। লতিফাকে দুবাইয়ে ফেরত নেয়া হয় এবং তখন থেকে এর আগ পর্যন্ত তার কোন কথা শোনা যায়নি। মিজ জাওহিআইনেন এবং ওই বোটে থাকা ক্রুদের দুই সপ্তাহ দুবাইয়ে আটকে রাখার পর মুক্তি দেয়া হয়। তবে নিজেদের ভূমিকার বিষয়ে কখনোই কোন মন্তব্য করেনি ভারত সরকার। ২০১৮ সালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার আগে লতিফা আরেকটি ভিডিও ধারণ করেছিলেন, যেটি তাকে আটক করার পর ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই ভিডিও-তে তিনি বলেছিলেন, "আপনি যদি এই ভিডিও দেখে থাকেন, তাহলে এটা আসলে ভাল কিছু নয়, এর মানে হচ্ছে হয় আমি মৃত কিংবা আমি খুব খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছি।" এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিষয়ে বিপুল আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তৈরি হয় এবং তার মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। এরপর তার বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যাপক চাপের মুখে পরে এবং এক পর্যায়ে মিজ রবিনসনের সাথে একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। রবিনসনের সাথে সাক্ষাত বান্ধবী প্রিন্সেস হায়ার অনুরোধে মেরি রবিনসন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দুপুরের খাবারের নিমন্ত্রণে দুবাইয়ে যান। সেখানে লতিফাও উপস্থিত ছিলেন। মিজ রবিনসন প্যানোরামা অনুষ্ঠানে বলেন, তাকে এবং প্রিন্সেস হায়াকে এর আগে বলা হয় যে লতিফার বাইপোলার ডিসঅর্ডার নামে মানসিক রোগ রয়েছে, যা আসলে তার ছিল না। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক হাই কমিশনার মেরি রবিনসনের সঙ্গে রাজকুমারী শেখ লতিফা তিনি বলেন, তিনি আসলে লতিফাকে তার অবস্থা সম্পর্কে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি, কারণ তিনি তার "পরিস্থিতি" নিয়ে "মানসিক আঘাত আর বাড়াতে" চাননি। এর নয় দিন পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজ রবিনসনের সাথে লতিফার ছবি প্রকাশ করে, যার মাধ্যমে দাবি করা হয় যে রাজকুমারী সুস্থ এবং নিরাপদে রয়েছেন। মিজ রবিনসন বলেন: "ছবি প্রকাশের মাধ্যমে আমার সাথে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতারণা করা হয়েছিল। এটা বিস্ময়কর ছিল... আমি একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।" ২০১৯ সালে দুবাইয়ের ক্ষমতাসীন পরিবারের নিজস্ব উত্তেজনার বিষয়টি ইংল্যান্ডের হাইকোর্টের সামনে উন্মোচিত হয়, যখন শাসক শেখ মোহাম্মদের একজন স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া তার দুই সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আসেন এবং নিজেদের সুরক্ষা ও নিপীড়িত না হওয়ার অধিকার চেয়ে শেখের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন। গত বছর হাইকোর্ট বেশ কয়েকটি রায় দেয়, যেখানে বলা হয় যে শেখ মোহাম্মদ ২০০২ এবং ২০১৮ সালে লতিফাকে জোর করে ফেরত নেয়ার নির্দেশ এবং পরিকল্পনা করেছিলেন। এছাড়া ২০০০ সালে তার বোন রাজকুমারী শামসাকেও যুক্তরাজ্য থেকে বেআইনিভাবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনিও পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালে নিজের আইনজীবী ব্যারোনেস ফিওনা শ্যাকলটনের সাথে হাই কোর্টে উপস্থিত হন প্রিন্সেস হায়া (বামে) আদালত এমনটা খুঁজে পায় যে শেখ মোহাম্মদ "এমন একটি শাসন পরিচালনা করে যাচ্ছেন, যেখানে এই দুই তরুণ নারীকে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।" লতিফার বন্ধুরা আশা করছিলেন যে গত বছর মার্চে প্রিন্সেস হায়ার পক্ষে এবং শেখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, যেখানে তাকে "সৎ নয়" বলে উল্লেখ করা হয়, সেটি হয়তো সহায়তা করতে পারে। এখন বার্তাগুলো প্রকাশ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিজ জাওহিআইনেন বলেন, তার সাথে শেষ বার যোগাযোগের পর "অনেক সময় পার হয়ে গেছে"। তিনি বলেন যে, এই সময়ে ভিডিও প্রকাশের বিষয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছেন তিনি। তবে তিনি এও যোগ করেন: "আমার মনে হয়েছে যে তিনি চান আমরা যাতে তার পক্ষে লড়াই করে যাই, হার না মানি।" লতিফার বর্তমান অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার। বিবিসি বাংলার আরও খবর: করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন: টিকাদানে আপনার দেশের অবস্থান কোথায়? আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ | দুবাই প্রিন্সেস লতিফা: নিজের 'বন্দিদশা'র কথা যেভাবে উন্মোচন করলেন দুবাইয়ের রাজকুমারী |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | কলকাতার অনেক পূজামণ্ডপেই দেখা যাবে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে ঢাক বাজাচ্ছেন নারীরা। নারীদের দায়িত্ব বেশীরভাগ সময়েই থাকে শুধু পূজার উপাচারের ব্যবস্থা করা। তবে পশ্চিমবঙ্গে সেই পুরুষকেন্দ্রিক দুর্গাপূজার চিরাচরিত প্রথা কিছু ক্ষেত্রে হলেও ভাঙ্গা হচ্ছে। নারীরা যে শুধুই পূজার যোগাড়যন্ত্র করছেন তা নয়, তারা কাঁধে ঢাক তুলে নিচ্ছেন, গোটা একটা মণ্ডপ গড়ে ফেলছেন, আবার কোথাও এক সাধারণ নারী তার অনন্য পেশার কারণে হয়ে উঠছেন দুর্গাপূজার 'থিম' বা বিষয়ভাবনা। যদিও সংখ্যাটা এখনও হাতে গোনা, তবুও কলকাতার দুর্গাপূজায় যেসব নারীরা প্রথা ভেঙ্গে এগিয়ে এসেছেন, বা পুরুষকেন্দ্রিক পূজা কমিটিগুলো নারীদের সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন, নারীরাই সামলাচ্ছেন গুরুদায়িত্ব, তাদেরই খোঁজ এই প্রতিবেদনে: নারী ঢাকি কথায় বলে, ঢাকে কাঠি পড়া মানেই পূজা এসে গেল। কদিন আগে শহরতলির একটা পূজা প্যান্ডেলের বাইরে এক নারী কণ্ঠ বলে উঠল, "এই তোরা ঢাকগুলো তোলরে!" পশ্চিমবঙ্গে সেই পুরুষকেন্দ্রিক দুর্গাপূজার চিরাচরিত প্রথা কিছু ক্ষেত্রে হলেও ভাঙ্গা হচ্ছে। যাঁদের উদ্দেশ্যে বলা, তারাও নারী - কেউ গৃহবধূ, কেউ স্কুল ছাত্রী, কেউ অন্য কোনও কাজ থেকে এখন শুধুই ঢাকি। ঢাক কাঁধে তুলে দলের বাকিদের বাজনা শুরু করতে বললেন যিনি, তিনি মানসী দত্ত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মসলন্দপুরের নারী ঢাকিলের অন্যতম সদস্য। ঢাক বাজানোর মতো একটা পুরুষালি পেশায় এলেন কী করে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যে ছেলেরাই ঢাক বাজায়। আমি যে কোনোদিন বাজাবো, ভাবিনি। বেশ কয়েকবছর আগে আমাদের শিক্ষক আর গুরু শিবপদ দাস একদিন এসে বললেন যে তিনি মেয়েদের নিয়ে ঢাকের দল গড়বেন। আমি শিখব কি না! রাজী হয়ে গেলাম। ব্যাস.. তারপর থেকে এটাই পেশা আমার।" দলের আরেক সদস্য গৃহবধূ সুলতা মালি মিস্ত্রি। তিনি বলছিলেন, "বাড়ির বৌ ঢাক বাজাবে, এটা প্রথমে কেউই মেনে নিতে পারে নি। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করাতে হয়েছে। আর এখন তো আমরা দেশে বিদেশে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াই ঢাক নিয়ে। ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাজিয়েছি, রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি - সব জায়গায় গেছি। এত সম্মান পাই, তাই এখন বাড়িতে আর কিছু বলে না। সবাই উৎসাহই দেয়।" দলের কনিষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে একজন প্রার্থনা দাস স্কুলে পড়েন। তার অবশ্য ঢাক বাজানো নিয়ে বাড়িতে কোনও আপত্তি ওঠে নি, কারণ তার মা, দিদি, পিসী, বৌদি - সকলেই ঢাক বাজান। প্রার্থনা গোঁড়ার দিকে বড়দের ঢাক বাজানো দেখতেনই শুধু। তারপরে একদিন নিজেই কাঁধে তুলে নিলেন ঢাক। কলকাতার একটি পূজামণ্ডপে এবারের থিম হিসেবে নেয়া হয়েছে শহরটির প্রথম নারী বাসচালককে। ওর অবশ্য পূজার সময়ে ঢাক বাজানোর জন্য বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকতে মন খারাপ হয়। "বন্ধুদের সঙ্গে পূজা দেখতে যেতে পারি না, ঘোরা - আড্ডা দেওয়া হয় না। মন তো একটু খারাপ লাগবেই," বলছিলেন প্রার্থনা। কাঠের তৈরি ভারী ঢাক নিয়ে নেচে নেচে বাজাতে নারী ঢাকিদের কষ্ট হচ্ছে বুঝে তাদের দলনেতা আর গুরু শিবপদ দাস এখন টিনের ঢাক বানিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি নারী ঢাকিদের যেখানেই বাজাতে পাঠান না কেন, তাদের নিরাপদে রাখার দায়িত্ব দিয়ে অন্তত দুজন পুরুষ ঢাকিকেও সঙ্গে পাঠান। সাধারণ এক নারী এবার পূজার 'থিম': কলকাতার দুর্গাপূজায় 'থিম' বা কোনও একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গোটা পূজা সাজিয়ে তোলার শুরু মোটামুটিভাবে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে। গোঁড়ার দিকে সেগুলিকে বলা হত 'আর্টের ঠাকুর' আর চিরাচরিত, পুরাণে আখ্যায়িত রূপে যেসব প্রতিমা তৈরি হত সেগুলো 'সাবেকী ঠাকুর'। তারপরে বিষয়টা আর শুধু প্রতিমা তৈরিতে সীমাবদ্ধ থাকল না। প্রতিমা-মণ্ডপসজ্জা-আলোকসজ্জা, সব মিলে গড়ে উঠত একটা বিষয়কেন্দ্রিক ভাবনা। সেটারই চালু নাম 'থিমের পূজা'। সাধারণত কোনও চলতি সামাজিক বিষয় বা ক্রীড়া ক্ষেত্রের কোনও বিষয়, অথবা কোনও বিখ্যাত ব্যক্তি বা কোনও সময়ে আবার রাজনৈতিক-কূটনৈতিক এসব বিষয়ও উঠে আসে 'থিমের পূজা'য়। কিন্তু কখনও একেবারে সাধারণ এক নারী পূজার 'থিম' হয়ে উঠেছেন, এমনটা আগে শোনা যায়নি। ওই নারী সাধারণ হলেও তিনি যে কাজটা করেন, সেটা একেবারেই অনন্য। প্রতিমা পোদ্দার কলকাতার প্রথম নারী বাসচালক তিনি একটা যাত্রীবাহী বাস চালান কলকাতা শহরে। প্রতিমা পোদ্দার কলকাতার প্রথম নারী বাসচালক। গোঁড়ায় ট্যাক্সি চালাতেন, তারপরে স্বামী যে বাসে ড্রাইভার ছিলেন, সেই বাসের স্টিয়ারিং ধরেন নিজে। আর স্বামী কন্ডাক্টর। বছর ছয়েক ধরে বাস চালিয়ে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। একজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, অন্যজন কিছুটা ছোট। আর দুই মেয়েকেই গড়ে তুলেছেন জাতীয় স্তরের সাঁতারু হিসাবে। আবার বাড়িতে কুড়ি বছর ধরে শয্যাশায়ী শাশুড়ির দেখাশোনাও তাকেই করতে হয়। তাকে এবং তার কাজকে সম্মান জানাতেই উত্তর কলকাতার একটি পূজা 'থিম' হিসাবে বেছে নিয়েছে মিসেস পোদ্দারকে। "যখন এরা প্রথম জানালেন যে আমাকে পূজার থিম করতে চান তারা, খুব অবাক হয়েছিলাম। এর আগে কয়েকটা টিভি অনুষ্ঠানে গেছি - তাই অনেক মানুষ হয়তো আমার কথা জানেন, কিন্তু পূজার থিম হব আমি - এটা খুব অবাক করেছিল," বলছিলেন মিসেস পোদ্দার। কিন্তু তারপরে পোদ্দার দম্পতি ভেবে দেখেন, যে কাজ তিনি করছেন, সেটা যে নারী হয়েও করা যায়, এই ভাবনাটা যদি পূজা দেখতে আসা নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তো আরও অনেকেই এগিয়ে আসতে পারেন। অন্তত এটা ভাবতে পারেন যে এমন কোনও পেশা নেই যা পুরুষরাই শুধু পারে, নারীরা পারেন না! যে পূজাতে প্রতিমা পোদ্দারকে থিম করা হয়েছে, সেই প্যান্ডেলে রয়েছে মিসেস পোদ্দার যে বাসটি চালান তার প্রতিকৃতি - তার বাসের রুট ম্যাপ - আর আস্ত একটি মূর্তি। গোটা মণ্ডপেই ছড়িয়ে আছে নারীশক্তির এই জীবন্ত চিহ্ন। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুর্গম অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম থেকে আসা একদল নারী শিল্পী এবার সাজিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার একটি নামকরা পূজামণ্ডপ। মণ্ডপও বানাচ্ছেন নারীরা নারীরা আবার কিছুটা অন্যভাবে হাজির দক্ষিণ পূর্ব কলকাতার একটি নামকরা পূজার প্যান্ডেলে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুর্গম অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম থেকে আসা নারীরাই ওই মণ্ডপের অঙ্গসজ্জা হাতে তৈরি করেছেন। সোহরাই আর কোভার পেইন্টিং নামে স্বল্প পরিচিত এই আর্টফর্মে চার রঙের মাটি দেওয়ালের গায়ে লেপে তার ওপরে চিরুনি দিয়ে ছবি এঁকেছেন ওই আদিবাসী নারীরা। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম প্যান্ডেল বানানোর মতো একটা পুরুষালী কাজ করার জন্য বাড়ি ছেড়ে এতদূর চলে আসতে পারলেন সাহস করে? একজন নারী শিল্পী পার্ভতী দেবী। তিনি বলছিলেন "পুরুষদের যে ক্ষমতা আছে, আমরাও সেই সব কাজই করতে পারি। আমাদের হাত থেকেও শিল্প বেরোয়। কোনও অংশেই পুরুষদের থেকে কম নই আমরা। আর গ্রামের বাড়িতে তো মেয়েরা এভাবেই দেওয়াল ছবি আঁকি!" আরেক শিল্পী অনিতা দেবী । "এত বড় প্যান্ডেল বানানোর ক্ষমতা যে আমাদেরও আছে, সেই সাহসে ভর করেই এত বড় কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। অনেকদিন বাড়ি ছেড়ে থাকতে হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার জন্য পরিবারের কেউ কখনও বাধা দেয় না। তবে নিয়মিত ভিডিও কলে বাড়ির সঙ্গে কথা হয় - তারা আমাদের কাজ দেখে। আর শুধু কলকাতা নয় - দেশ বিদেশের নানা জায়গাতেই তো যাই আমরা শিল্পকলা দেখাতে," বলছিলেন গৃহবধূ অনিতা দেবী । দক্ষিণ কলকাতার আরেকটি পূজামণ্ডপের ব্যবস্থার দায়িত্বে আছেন এই নারীরা। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নারী: নারীরা যেমন কেউ ঢাক বাজাচ্ছেন, কেউ মণ্ডপ গড়ছেন বা কেউ নিজেই পূজামণ্ডপের মূল ভাবনা হয়ে উঠেছেন, তেমনই অনেক পূজার গোটাটাই সামলাচ্ছেন নারীরাই। দক্ষিণ কলকাতার এরকমই একটি পূজা প্যান্ডেলে নারীরাই সব ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকেন। তাদের মণ্ডপে যেদিন সকালে গিয়েছিলাম, তারা আলোচনা করছিলেন শেষ মুহূর্তের পূজার ব্যবস্থাপনা নিয়েই। নারীদের পরিচালিত ওই পূজার অন্যতম উদ্যোক্তা পুতুল গুপ্তের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ঘর-সংসার সামলিয়েও পূজার ব্যবস্থা করেন কীভাবে? "পূজার আগে আমরাই অনেকটা দশভুজা হয়ে উঠি। সবারই সংসার আছে, তারমধ্যেই মিটিং করে ঠিক করে নিই কে কোন কাজটা করবে। তারপরে আছে চাঁদা তুলতে বেরনো। প্রতিমা নিয়ে আসার কাজটা অবশ্য ছেলেরাই করে - আমরা পাশে থাকি। তারপরে পূজার দিনগুলোতে অনেক ভোরে উঠে সব যোগাড় করতে হয়। কিন্তু সারাদিনে যত মানুষ আসেন আমাদের পূজাতে, তাদের আনন্দ দেখে আমরা যেন আরও বেশী উৎসাহ পাই প্রতিবছর পূজার কাজে আরও জড়িয়ে পড়তে," বলছিলেন পুতুল গুপ্ত। এই প্রতিবেদনের জন্য যতজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছি, তারা হয়তো কেউ কাউকে চেনেন না -- কিন্তু এক জায়গায় তাদের মতের ভীষণ মিল - নারীরা যদি মহাকাশে যেতে পারে, যুদ্ধবিমান চালাতে পারে - তাহলে পূজা সামলানো বা ঢাক বাজানো অথবা প্যান্ডেল তৈরি কী এমন কঠিন - বিশেষ করে পূজাটাই যখন নারীশক্তির উদ্দেশ্যেই। | দুর্গাপূজা: পশ্চিমবঙ্গের পূজা আয়োজনে পুরুষকেন্দ্রিক প্রথা ভাঙ্গা হচ্ছে যেসব ক্ষেত্রে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | বরং মেয়েদের প্রতি সেই সহিংসতা, বিশেষত পারিবারিক সহিংসতা একটুও প্রতিরোধ করা যায়নি। যে কোনো জায়গায়, যে কোনো দ্বন্দ্ব সংঘাত, দাঙ্গা কিম্বা যুদ্ধ বিগ্রহ অথবা কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটুক না কেন - নারী ও শিশুরাই তাতে সব থেকে বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়। সহিংসতারও শিকার হয় বেশি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারিও সেই দুর্দশা থেকে তাদের এতটুকুও মুক্তি দেয়নি। আর ভারতের দরিদ্র পরিবারগুলিতে শিশু কন্যাদের অবস্থা যে কতটা করুণ, গণমাধ্যমগুলিতে সে সত্যেরও উদঘাটন হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের চিত্রকূটে ঘটা সাম্প্রতিক ঘটনায় তেমনটাই হচ্ছে, যেখানে গরিব আদিবাসী পরিবার তাদের ১২ - ১৪ বছরের বালিকাদের জোর করে অবৈধ খনিতে কাজ করতে পাঠাচ্ছে। অন্তত যতক্ষণ না তারা তাদের শিশু শরীর সেই খনির কন্ট্রাক্টার ও দালালদের থাবায় তুলে দিতে রাজি হচ্ছে। আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন। এমনকি তাতে আপত্তি জানালে, শুধু ওই বালিকাদের কাজে না রাখার শাসানিই নয়, পাহাড় থেকে নীচে ফেলে দেওয়ার হুমকিও তাদের দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সময় ভারতে নারী ও শিশুরা বেশি নির্যাতনে শিকার হচ্ছে। এই ভাবেই প্রথমে পরিবার তাদের নিরাপত্তা কেড়ে নিচ্ছে। তারপর দুর্বিনীত সমাজ ওই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে শিশু বয়সেই তাদের বাধ্য করছে। এবং ইতিমধ্যেই যে কত বালিকাকে জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হচ্ছে, অভাবের তাড়নায় কত কন্যা শিশু ও নারী পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার হিসেব মেলাই কঠিন। আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দরবনের কথা প্রসঙ্গত, এক দশক আগে আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দরবনে দ্বীপবাসীদের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে দেখেছিলাম, ওই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর জীবিকার সন্ধানে পুরুষরা অন্যত্র চলে গেলে, প্রায় পুরুষ শূন্য গ্রামগুলিতে কী অসহায় শিশু ও নারীরা। মনে পড়ছে, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সেই মহিলার কথা, যিনি মাঝ রাতে নদী খাঁড়িতে ডিঙি বেয়ে বনের কোর এলাকায়, বেশি কাঁকড়া পাবেন বলে প্রাণ হাতে নিয়ে বাঘের ডেরায় ঢুকে পড়েছিলেন। এবং যার অমোঘ পরিণতিতে বাঘের কবল থেকে তাঁর আর ঘরে না ফেরার সেই মর্মন্তুদ কাহিনী। আসলে যে কোনো বিপর্যয়, তা প্রাকৃতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক যাই হোক, কীভাবে তাদের জীবনের সমস্ত অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেবে, কীভাবে জীবন ও জীবিকার শিকড় উপড়ে তাকে নিষ্ঠুরতার অন্ধকূপে নিক্ষেপ করবে - তার কোনো সঠিক পূর্বাভাস থাকে না। তাই হাতে থাকে না তার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়ও । লকডাউনের সময় ভারতে বাল্য বিবাহ সহ শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। কোভিড-১৯'র বিপর্যয়েও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। যেমন, বেসরকারি সংস্থা 'অ্যাকশন এইড'র হাসনাবাদ হিঙ্গলগঞ্জ মুসলিম মহিলা সংগঠনের কর্মী হালিমা খাতুন জানালেন, পশ্চিমবঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগনায় 'এই লকডাউনেই দিন কয়েক আগে রোজগারহীন বাবা জোর করে তার ১৩ বছরের কন্যার বিয়ে দিয়েছে। সাত মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে তার বেকার স্বামী অত্যাচার করে করে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে।' 'আয়লার মতোই এখনকার লকডাউন আর আম্পানে চরম আর্থিক দুরবস্থায় মেয়েরা সীমাহীন নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। মনে হচ্ছে প্রায় দেড় দশক ধরে আমরা যে কাজ এখানে করে চলেছি, সে সব যেন বৃথা হয়ে গেল,'' হালিমা খাতুন বলেন। হতাশার প্রতিধ্বনি এই হতাশার প্রতিধ্বনি যেন শুনলাম দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় কয়েক দশক ধরে মেয়েদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা, 'নিষ্ঠা'র সচিব মীনা দাসের গলাতেও। 'এই লকডাউনে পারিবারিক সহিংসাতা অসম্ভব বেড়ে গেছে । কাজ নেই বলে যে বেড়েছে মেয়ে পাচারের প্রবণতাও, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। পরিবারগুলি যেন এখন একদম দিশেহারা হয়ে গেছে,'' মীনা দাস বলেন। বস্তুতই তাই । হায়দ্রাবাদে একজন শুধু মদ জোগাড় করতে না পেরে স্ত্রী ও সন্তানের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। আবার দিল্লিতে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সদ্য মায়ের বাড়িতে ফিরে আসা মেয়েটিকে, লকডাউনে বাড়তি বোঝা মনে করা ভাইয়ের হাতে আবারও মার খাওয়ার খবর উঠে এসেছে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে তুরস্কে প্রতিবাদ: ইউরোপে পারিবারিক সহিংসতা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন'র চেয়ার পার্সন রেখা শর্মাও জানিয়েছেন যে, এই লকডাউন পিরিয়ডে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার ইত্যাদি রাজ্য থেকে অজস্র অভিযোগ, যার বেশির ভাগই ই-মেলের মাধ্যমে তাঁরা পেয়েছেন। এবং সেই অভিযোগে দেখা যাচ্ছে ঘরের মধ্যেই নানা লাঞ্ছনা, দৈহিক নির্যাতন, ধর্ষণ, এমনকি পনের জন্য বধূ হত্যার ঘটনাও ঘটে চলেছে। সবিস্তারে জানতে এখানে ক্লিক করুন। ইউরোপে পারিবারিক সহিংসতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এই বছর এপ্রিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলিতে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। গত তিন মাসের লকডাউনে, জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ দেশে ওই পারিবারিক সহিংসতা গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এবং আগামী বছরগুলিতে তা যে আরো বাড়তে পারে তেমনটাই আশঙ্কা গবেষকদের। তাঁরা মনে করছেন, দেশগুলিকে এই সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং সংক্রমিতের চিকিৎসায় সম্পদের অনেকটাই ব্যয় করতে হচ্ছে বলে মেয়েদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে চালু প্রকল্পগুলির কাজ কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। যার দরুন একের পর এক দেশে পারিবারিক সহিংসতায় নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা আরও বেশি করে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আশঙ্কা হচ্ছে এই ভেবে যে, কোভিড-১৯ এর হামলায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে, যে অনিশ্চয়তা মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে, তাতে তাদের জীবনের নিরাপত্তাও প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। এইভাবেই গবেষকদের আশঙ্কা প্রতিনিয়ত সত্য হয়ে উঠছে। কোভিড - ১৯ এর ধাক্কা যে অনিশ্চয়তা, যে নিরাপত্তাহীনতা আমাদের জীবনে ছায়া ফেলছে, তাতে তার সামগ্রিক ভারসাম্যই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জীবনের সুস্থিতি। | করোনাভাইরাস যেভাবে ভারতের নারী-শিশুকে সহিংসতার মুখে ফেলেছে |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | পাকিস্তান-ইজরায়েল: সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে বিতর্ক পাকিস্তানের বেসরকারি জিএনএন টিভি চ্যানেলে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তানের ওপর চাপ রয়েছে। “আমেরিকায় ইসরায়েলের গভীর প্রভাব রয়েছে যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আরো বেড়েছে ... চাপটা সেখান থেকেই।“ মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম“ মুসলিম দেশও কি পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে - এমন প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলেও তা সামলে ইমরান খান উত্তর দেন, “সব কথা সব সময় বলা যায়না। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো।“ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে কেউ কি পাকিস্তানকে কোনো লোভ দেখাচ্ছে ? - এই প্রশ্নে বিব্রত ইমরান খান উত্তর দেন, “বাদ দেন এসব প্রশ্ন, অন্য কথা বলেন। আমাদের দেশ যখন নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে, তখন এসব প্রশ্ন করবেন।“ বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু (বামে), ইমরান খান (মাঝে) এবং সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান (ডানে) তবে পরপরই ইমরান খান বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ বিকিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরি নিয়ে তিনি ভাবছেন না। “যতক্ষণ না ন্যায়সঙ্গত এমন কোনো মীমাংসা হয় যা ফিলিস্তিনিদের মন:পুত হয় ততক্ষণ আমার ভেতর দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই।“ অবশ্য সেই সাথে ইমরান খান বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় আপোষ করতে হয়। তিনি বলেন, নবীও বৃহত্তর স্বার্থে হুদাইবিয়ার চুক্তি করেছিলেন। এই সাক্ষাৎকার প্রচারের সাথে সাথেই ইমরান খানের এসব কথা নিয়ে পাকিস্তানের ভেতর এবং বাইরে কাঁটাছেড়া চলছে। ইসরায়েলের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কথার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে। হৈচৈ দেখে সাক্ষাৎকারটি প্রচারের দুদিন পরেই ১৭ই নভেম্বর পাকিস্তানের সরকার এক বিবৃতি জারী করে বলে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের ওপর কোনো চাপ নেই। সেই মুসলিম দেশ কোনটি তবে তাতে বিতর্ক আলোচনা থেমে নেই। বিশেষ করে ভ্রাতৃপ্রতিম“ মুসলিম রাষ্ট্রের কাছ থেকে চাপ তৈরির যে প্রশ্ন ইমরান খান এড়িয়ে গেছেন সেই দেশটি কে হতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে। পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক কানওয়ার খুলদুন শহিদ ইসরায়েলি দৈনিক হারেতজে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন - চাপ দিচ্ছে এমন যে “ভ্রাতৃপ্রতিম' মুসলিম দেশের নাম ইমরান খান করতে চাননি সেই দেশটি সৌদি আরব।“ কানোয়ার শহিদ বলেন, তাদের ওপর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক নির্ভরতার সুযোগ সৌদিরা নিতেই পারে। পাকিস্তানের প্রায় ২০০ কোটি ডলারের জরুরী ঋণ সাহায্য সৌদি আরব আটকে রেখেছে যা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কি ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে? ঐ সাংবাদিক আরো লিখেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও ইসরায়েলের সাসথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে কারণ, তার মতে, সেনাবাহিনী মনে করে তাতে ভারত-ইসরায়েল কৌশলগত সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আনা যাবে। সৌদি আরবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর “অর্থনৈতিক স্বার্থের“ কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানী ঐ সাংবাদিক ইঙ্গিত করেন যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও হয়ত সৌদি আরব ইসরায়েল নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান বদলের চেষ্টা করছে। কিন্তু এই বিশ্লেষণের সাথে সবাই অবশ্য একমত নন। পাকিস্তানের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাসান আসকারি রিজভি বিবিসি বাংলাকে বলেন, সৌদি আরব পাকিস্তানের ওপর এসব স্পর্শকাতর ইস্যুতে কতটা চাপ দিতে পারে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। বরঞ্চ, তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে, ফলে ওয়াশিংটন যদি এ নিয়ে পাকিস্তানকে কিছু বলে থেকে তাতে তিনি অবাক হবেননা। “নানা কৌশলগত ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের সাথে অব্যাহত কথাবার্তা পাকিস্তানের হয়। সে সব যোগাযোগের সময় ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কিছু পরামর্শ, প্রস্তাব আসতেই পারে। এটাকে অনেকে চাপ হিসাবেও দেখতে পারেন ...আমি এতে বিস্মিত নই।“ ফিলিস্তিনের পক্ষে পাকিস্তান: করাচীতে জেরুসালেম দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নারী। ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা‘ তবে চাপ বা পরামর্শ যেটাই আসুক তাতে পাকিস্তানের সায় দেয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? হাসান রিজভি মনে করেন পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসরায়েল বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নেওয়া ইমরান খানের জন্য ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা‘ হবে। “ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে কোনো চাপ বা পরামর্শে নিশ্চিতভাবে ইমরান খান স্বস্তি বোধ করবেন না। এমনিতেই দেশের প্রধান বিরোধ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে তিনি বড় ধরণের চাপে পড়েছেন। তার ওপর ইসরায়েলকে স্বীকৃতির যে কোনো ইঙ্গিতে কট্টর ইসলামি দলগুলোর যে প্রতিক্রিয়া হবে, তা সামাল দেওয়া তার জন্য কঠিন হবে।“ মি রিজভি বলেন, এসব ইসলামি দলগুলো ভোটে না জিতলেও রাস্তায় অরাজকতা তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম। “আমি কোনোভাবেই মনে করিনা যে ইমরান খান এখন তেমন বিপদ ডেকে আনতে চাইবেন।“ পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জে, পারভেজ মুশাররফ ইজরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন ইসরায়েল কী ভাবছে? ইসরায়েলে নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেরুজালেম ইন্সটিটিউট অব স্ট্রাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটি‘র (জেআইএসএস) গবেষক ড. জনাথন স্পায়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, আরব মুসলিম দুটি দেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর ইজরায়েল এখন এ ধরণের সম্পর্ককে আরব বিশ্বের বাইরে নিয়ে যেতে চাইছে। “সেই অর্থে পাকিস্তান ইসরায়েলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ তাতে সন্দেহ নেই,“ তিনি বলেন। কিন্তু একই সাথে ড. স্পায়ার বলেন, “ইসরায়েল এবং ইহুদিদের“ নিয়ে পাকিস্তানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিরূপ মনোভাব সম্পর্কে ইসরায়েল ওয়াকিবহাল। “এছাড়া, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বা ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানের যে কথা ইমরান খান বার বার বলছেন ইসরায়েল তাতে গুরুত্ব দিতে রাজী নয়। ফিলিস্তিন ইস্যুর সাথে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। এই নিয়ে পাকিস্তানের স্পর্শকাতরতাকে ইজরায়েল গুরুত্ব দেবে বলে মনে হয়না।“ ভারতীয় সাংবাদিক হারিন্দার মিস্র ২২ বছর জেরুজালেমে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, সম্পর্কের সাথে ফিলিস্তিন ইস্যুকে যুক্ত করতে ইসরায়েল এখন আর কোনোভাবেই রাজী নয়। “এখানে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি মুসলিম বিশ্বের সাথে বিচ্ছিন্নতা ঘোচাতে ইসরায়েল উদগ্রীব হলেও, মি নেতানিয়াহু এবং ডানপন্থীরা সবসময় এই সম্পর্কের ফিলিস্তিন ইস্যু যুক্ত করতে অস্বীকার করেছে,'' মি. মিস্র বলেন। ''কয়েকটি আরব দেশের সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর এখন ইসরায়েলে সবাই বলছে মি. নেতানিয়াহুর নীতিই সঠিক ছিল বলে প্রমাণিত হচ্ছে।“ ভারত এবং তুরস্ক ফ্যাক্টর ড. স্পায়ার মনে করেন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের যে কোনো স্পর্শকাতরতা ইসরায়েলের পক্ষে অগ্রাহ্য করা এখন প্রায় অসম্ভব। “অর্থনৈতিক এবং স্ট্রাটেজিক দিক দিয়ে আমেরিকার পর ভারত এখন ইসরায়েলের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণদেশ। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের চেয়ে ভারতের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া ইসরায়েলের কাছে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।“ সেই সাথে, তিনি বলেন, হালে ইসলামাবাদের সাথে আঙ্কারার ঘনিষ্ঠতার কারণে পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে ইসরায়েল সন্দিহান। ড. স্পায়ার মনে করেন, ইমরান খান সরকারের ওপর যদি কোনো চাপ তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে তা প্রধানত আসছে সৌদি আরবের কাছ থেকে, এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে। “পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমেরিকার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে উদগ্রীব। তারা হয়ত মনে করছে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কথা বললে তাতে সুবিধা হবে,“ ড. স্পায়ার বলেন। প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপারের সাথে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পাকিস্তান নিয়ে আগ্রহ তবে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমানবিক অস্ত্রধর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে ইজরায়েলের আগ্রহ নতুন কিছু নয়। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল মুশাররফও এতে আগ্রহী ছিলেন। তার ইচ্ছাতেই ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তৎকালীন ইসরায়েলিরপররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান শালোমের সাথে পাকিস্তানের সে সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মেহমুদ কাসুরির একটি বৈঠক হয়। কয়েক মাস পরে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে জেনারেল মুশাররফ করমর্দন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল শ্যারনের সাথে। তাদের মধ্যে আড়ালে কথা হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। তবে পরে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. মুশাররফ ইঙ্গিত দেন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাজী হলে পাকিস্তান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। ঐ মাসেই পাকিস্তানের ডন পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান শালোম বলেন, “ইসরায়েল তাদের ৫৮ বছরের ইতিহাসে কখনই পাকিস্তানকে শত্রু রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করেনি, এবং ইসরায়েল বিশ্বাস করে ইরান, লিবিয়া বা সিরিয়ার মত পাকিস্তান কখনই ইসরায়েলের ক্ষতি করতে চায়না।“ তিনি বলেন, ইসরায়েল ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্র ধ্বংস করতে চায় বলে যে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব‘ রয়েছে, সেটা ডাহা মনগড়া। ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৮ সালে তার ভারত সফরের সময়ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তার দেশ পাকিস্তানকে শত্রু হিসাবে বিবেচনা করেনা। কিন্তু ড. জনাথন স্পায়ার মনে করেন ১০ বা ১৫ বছর আগে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে ইসরায়েলের সরকার মহলে যতটা আগ্রহ দেখা যেত, এখন ততটা নেই। “প্রধান কারণ গত বছরগুলোতে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠতা।“ ইজরায়েলকে আরব আমিরাতের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদে পাকিস্তানে বিক্ষোভ পাকিস্তানে জনমত কয়েকটি আরব দেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক তৈরি এবং ইমরান খানের সর্বশেষ সাক্ষাৎকারের পর পাকিস্তানের মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করছেন। হাসান আসকারি রিজভি বলেন, ইসরায়েল নিয়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা থাকলেও পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত একটি শ্রেনীর মধ্যে এই ইস্যুতে মতভেদ রয়েছে। “কেউ কেউ মনে করেন ইসরায়েল এবং ইহুদিদের যেহেতু আমেরিকাতে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে সুতরাং তাদের সাথে সম্পর্ক পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য ভালো। আবার কেউ কেউ তাড়াহুড়ো না করে অপেক্ষা করার পক্ষে।“ মি রিজভি মনে করেন, সৌদি আরব যদি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে পাকিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থীদের একটি অংশ অনেকটাই চুপ হয়ে যাবে। “তখন হয়ত রাজনীতিকদের পক্ষে অন্য রকম কিছু ভাবা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।“ তবে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের ও ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। | ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তান কি চাপে পড়েছে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | যুদ্ধ শেষে কুয়েত সিটির বাইরে পরাজিত ইরাকি বাহিনীর বিধ্বস্ত ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যান। কুয়েতের মানুষ হতভম্ব। চারিদিকে বিভ্রান্তি। কুয়েতের সরকারি রেডিও তখনও চালু। সেখান থেকে বাইরের দুনিয়ার সাহায্য চেয়ে আবেদন জানানো হলো। সামি আল-আলাউইর বয়স তখন মাত্র বিশ বছর। তার বাবা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। "আমার বাবা আমাকে যা বললেন, তা শুনে আমি অবাক। তিনি আমাকে বললেন, সামি, ওঠো, তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হও। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দাও। সেনা সদর দফতরে যাও, দেখো কীভাবে সাহায্য করতে পারো।" সামি তাড়াতাড়ি বাইরে এসে তার গাড়িতে উঠলেন। কিন্তু কুয়েত সিটির যে অংশে তিনি থাকেন, সেটা ততক্ষণে ইরাকি বাহিনীর দখলে চলে গেছে। "পুরোপুরি যুদ্ধসাজে সজ্জিত সৈন্যরা ততক্ষণে রাস্তা দখল করে নিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম এরা হয়তো কুয়েতি সেনা। একজন সৈন্য আমার দিকে বন্দুক তাক করলো। তখন আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। সৈন্যটি আমার গালে একটা চড় মারলো।" কুয়েতের তৎকালীন আমীর শেখ জাবের আল আহমেদ আল সাবাহ "আমাকে সে বলছিল, তুমি কি আমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করছো? আমি বললাম, ভাই, আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি। কী হচ্ছে দেশে?" "আসলে ও ছিল একজন ইরাকি সৈন্য। সে বুঝতে পারলো, আমি আসলে নার্ভাস। আমাকে সে বললো, তোমার গাড়িতে উঠে এক্ষুনি এখান থেকে ভাগো। নইলে আমি তোমাকে হত্যা করবো।" ইরাক এবং কুয়েতের মধ্যে বহু বছর ধরে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ চলছিল। দুটি দেশই তেল রফতানির ওপর নির্ভরশীল। ইরাকের অভিযোগ ছিল, কুয়েত অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ধস নামাচ্ছে। দুদেশের সম্পর্কে আরও সমস্যা তৈরি করে ১৪০০ কোটি ডলারের এক ঋণ। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইরাক এই অর্থ ধার করেছিল কুয়েতের কাছ থেকে। কিন্তু বহু বছরের যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইরাক এই ঋণ শোধ করতে পারছিল না। সাদ্দাম হোসেন চাইছিলেন, কুয়েত এই ঋণ মওকুফ করুক। কিন্তু কুয়েত তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর পরিস্থিতি মারাত্মক দিকে মোড় নিল। এক রাতের মধ্যেই ইরাকি সৈন্যরা কুয়েতে অভিযান চালিয়ে সরকারকে উৎখাত করলো। ইরাকি সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য ট্যাংক নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে রাজধানী কুয়েত সিটিতে পৌঁছে গেল। তখন কুয়েতের মোট জনসংখ্যা মাত্র ২১ লাখ। বেশিরভাগ বিদেশি সাথে সাথেই কুয়েত ছেড়ে চলে গেলেন। আর কুয়েতের নাগরিকদেরও দুই-তৃতীয়াংশ হয় দেশ ছেড়ে পালালেন, বা বিদেশে আটকে পড়লেন। যারা কুয়েতে রয়ে গেলেন, তারা নানাভাবে ইরাকি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেন। আত্মসমর্পনের পর মরুভূমিতে ইরাকী সৈন্যদের পাহারা দিচ্ছে জোট বাহিনীর সৈন্যরা। সামি এবং তার বাবা বেসামরিক মানুষ থেকে রাতারাতি হয়ে গেলেন প্রতিরোধ যোদ্ধা। তারা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সংগ্রহ শুরু করলেন, যোগ দিলেন প্রতিরোধ বাহিনীতে। "আগষ্ট মাসে আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরী ছিল নিজেদের জন্য একটা জায়গা খুঁজে বের করা - যেখান থেকে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারি, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখতে পারি। ইরাকিরা তখনো আমাদের দেশ ঠিকমত জানে না, চেনে না। অন্তত আমাদের মতো অত ভালোভাবে নয়। কাজেই আমরা যত পারি অস্ত্র সংগ্রহ করলাম, তারপর আত্মগোপনে চলে গেলাম।" ইরাকিরা কুয়েতে তাদের নিয়ন্ত্রণ যত কঠোর করে আনতে থাকলো, প্রতিরোধ যুদ্ধ তত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলো। অক্টোবর মাসে সামি এবং তার চাচা ধরা পড়লেন। তাদেরকে ইরাকের বসরা নগরীর এক জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। পথে তাদের এক জায়গায় থামানো হলো। আরও পড়ুন: যে যুদ্ধে মানুষ মরেছে লাখ লাখ, জেতেনি কেউ সাদ্দামের ফাঁসির সময়ে কেঁদেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যরা সাদ্দাম হোসেনকে প্রথম জিজ্ঞাসাবাদের অভিজ্ঞতা "আমাদের পিঠমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরানো হলো। তারপর বাস থেকে নামিয়ে লাইন বেঁধে দাঁড় করানো হলো। সৈন্যরা তাদের বন্দুকে গুলি ভরছিল, আমরা তার শব্দ পাচ্ছিলাম। এরপর গুলি চালানোর শব্দ পেলাম। তখন আমার মনে হলো, আমার সামনের জনকে বোধহয় গুলি করা হয়েছে, এরপর হয়তো আমার পালা।" "আমি অপেক্ষা করছিলাম কখন একটা বুলেট এসে আমাকে আঘাত করবে, তারপর আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়বো। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই শুনলাম ইরাকিরা হাসাহাসি করছে। ওরা আসলে ভান করছিল যে আমাদের ওরা গুলি করে মারছে। কিন্তু এরপর ওরা আমাদের আবার বাসে তুললো।" ১৯৯০ সালে ডিসেম্বরের শেষে সামিকে মুক্তি দেয়া হলো। কিন্তু ছাড়া পেয়েই আবার কুয়েতে ফিরে প্রতিরোধ সংগ্রামে যোগ দিলেন তিনি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইরাক বিরোধী এক সামরিক জোটে যোগ দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ইরাকের দখল থেকে কুয়েতকে মুক্ত করা। কুয়েত মুক্ত হওয়ার পর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উল্লাস ১৭ জানুয়ারি, ১৯৯১। শুরু হলো 'অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম।' আন্তর্জাতিক জোট বাহিনী কুয়েতে ঢুকলো ২৪শে ফেব্রুয়ারি। তখন ভোর পাঁচটা, চারিদিকে গোলাগুলি, বিস্ফোরণের শব্দ। সামির মনে হলো কুয়েত এবার মুক্ত হতে চলেছে, নিজের দেশ এবার তারা ফিরে পাবেন। "এক একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছিলাম খুশিতে। আমাদের লক্ষ্য সফল হতে চলেছে।" কিন্তু না, এরমধ্যেই ঘটে গেল অন্যরকম এক ঘটনা, যা হিসেবের মধ্যে ছিল না। সামির বাবা হাদি আল-আলাউই একটি প্রতিরোধ সেলের নেতৃত্বে ছিলেন। এর নাম ছিল 'মাসিলা সেল।' কুয়েত সিটির দক্ষিণে এক বাড়িতে ছিল এই সেলটির ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক জোট বাহিনী তখনো কুয়েত সিটিতে পৌঁছেনি। ইরাকি বাহিনী তখন এ্ই জায়গায় এসে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করলো। বাড়ির ভেতরে তখন সামি এবং তার বাবা। তাদের সঙ্গে ছিল আরও ১৭ জন তরুণ। ইরাকি সৈন্যরা যখন দরোজায়, তখন তাদের বাধা দিতে এক তরুণ গুলি ছুঁড়লো। ইরাকি সৈন্যরা পাল্টা গুলি ছুঁড়লো। কিন্তু দুপক্ষের এই গোলাগুলি ব্যাপক লড়াইয়ে রূপ নিল। ইরাকীরা আরও সৈন্য নিয়ে আসলো। ট্যাংক নিয়ে এলো। "খুবই ভীতিকর অবস্থা। অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়ে ওরা সুবিধেজনক অবস্থায় ছিল। যখন ওরা ট্যাংক নিয়ে আসলো, পরিস্থিতি বদলে গেল। তখন তখন আমার মনে হলো, এর মোকাবেলা করা আমাদের কাজ নয়।" সময় যত গড়াতে লাগলো, কুয়েতি প্রতিরোধ বাহিনীর বিপরীতে ইরাকি সেনাদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। সামির বাবা, যিনি প্রতিরোধ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি বুঝতে পারলেন, তাদের পরাজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাদের সবাই হয়তো ধরা পড়বেন, তাদেরকে হত্যা করা হবে। সামির জন্য একটি ছিল এক বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। "আমার বাবা আমার খুব প্রিয় ছিলেন। আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম। কাজেই তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে এটাই শেষ, তখন তিনি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন।" সাদ্দাম হোসেন: কুয়েতকে ইরাকের প্রদেশ বলে ঘোষণা করেছিলেন "আমার বাবা যেন বলছেন, এখানে আমিই সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী। কাজেই আমিই আগে মরবো।" "তিনি বাড়ির ছাদে উঠলেন। একটা গোলা এসে আঘাত করলো। আমি বাবাকে ডাকলাম। বাবা উত্তর দিলেন, আমি ঠিক আছি। এবার দ্বিতীয় একটি গোলা এসে পড়লো। আমি আবার বাবাকে ডাকলাম। কিন্তু এবার তিনি কোন উত্তর দিলেন না। উপরে গিয়ে দেখার সাহসও আমার ছিল না। পুরো বাড়ি তখন অরক্ষিত। আমার মনে হলো বাবা আর নেই।" "ঠিক ঐ মূহুর্তে আমার অনুভূতি, আমার সাহসিকতা, আমার সবকিছু যেন উবে গেল। আমি তখন একটা জিনিসই চাইছিলাম। আমি ঘর থেকে বেরুতে চাইছিলাম।" "আমি জীবিত অবস্থায় এখান থেকে বেরুতে চাই। আমি জামাল আর তালালকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। আমরা পাশের বাড়িতে গিয়ে ঢুকলাম।" ইরাকী বাহিনী এই বাড়িতেও ঢুকবে, এটা জেনে সামি এবং তার এক বন্ধু একটা ছোট কুঠুরিতে গিয়ে লুকিয়ে থাকলেন। "সেখানে আমরা কিছু কম্বল এবং শাল পেলাম। বেশ ঠান্ডা ছিল তখন। আমরা সেগুলো গায়ে জড়ালাম। আমি এবং জামাল সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। এরপর আমরা শুনলাম ইরাকীরা সেখানে আসছে। একজন ইরাকী সেনা বললো, আমি এখানে একটা ঘর দেখতে পাচ্ছি। এটা দেখা দরকার" আত্মসমর্পনের জন্য সাদা পতাকা হাতে এগিয়ে যাচ্ছে ইরাকি সৈন্যরা "এই সৈন্যটি এসে তার লাইটার জ্বালালো। আমাদের সেলটা ছিল দুই মিটার বাই দুই মিটার। ভেতরে কি আছে, সেটা তার না দেখতে পাওয়ার কথা নয়। আমার মনে হলো, সে নিশ্চয়ই আমাকে দেখতে পাচ্ছে। আমি কোরানের একটা আয়াত পড়তে শুরু করলাম মনে মনে।" ইরাকি সেনাটি কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে তার সাথের অফিসারকে বললো, "মনে হয় এখানে কিছু নেই!" "আমার মনে হচ্ছিল, লোকটা হয়তো ভালো লোক ছিল। আমাদের অনুকম্পা করছে।" "কিন্তু একটু পরেই এই সৈন্য তার তার অফিসারকে বললো, এই বাড়িটাকে একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে শত্রুমুক্ত করা দরকার। কিন্তু ঠিক তখন বাইরে থেকে একটা অফিসারের ডাক শোনা গেল। তখন ভেতরের অফিসারটা বললো, বাদ দাও, বাদ দাও।" ২৪ শে ফেব্রুয়ারি কুয়েত সিটির উপকন্ঠে সেই লড়াই চলেছিল দশ ঘন্টা ধরে। সামির বাবা এবং ঐ প্রতিরোধ সেলের আরও দুজন লড়াইয়ে নিহত হয়। যে নয়জন ইরাকি সেনাদের হাতে ধরা পড়ে, তাদের মৃতদেহ কাছাকাছি ফেলে রাখা হয়। সামি এবং অপর সাতজন বেঁচে যান। "মঙ্গলবার সকালে আমাদের দেশ মুক্ত এবং স্বাধীন হলো। মানুষ খুশিতে উল্লাস করছিল। কুয়েত তার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে।" "কিন্তু যে মূহুর্তের জন্য আমি এতদিন অপেক্ষা করেছি, যখন সেই মূহুর্ত এলো, আমি সেটা উদযাপন করতে পারলাম না। আমি হাসপাতালগুলোর মর্গে মর্গে ঘুরছিলাম। আমার বন্ধুদের খুঁজছিলাম।" "এখনো আমার নাকে ট্যাংকের, বারুদের গন্ধ পাই। আমি সেই ঘরটার গন্ধ পাই। যখন আমি একা থাকি, এই পুরো ঘটনার স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে। এটা যেন একটা উল্কির মতো আঁকা হয়ে আছে আমার মনে।" শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে ইরাক পরাস্ত হয়েছিল। কুয়েত মুক্ত হয়েছিল ইরাকী দখলদারিত্ব থেকে। তবে কুয়েত যতদিন ইরাকের দখলে ছিল, তখন এক হাজারের মতো কুয়েতি নাগরিক লড়াইয়ে নিহত হয়। ৬০০ জনের মতো গুম হয়। ইরাকেরও হাজার হাজার সৈন্য এই যুদ্ধে নিহত হয়। | ইতিহাসের সাক্ষী: ইরাকের সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত দখল করে নিয়েছিল |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী খাদিজা বিন খুওয়াইলিদ বলছিলেন আসাদ জামান, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরের একজন ইমাম। তিনি বলছিলেন বিবি খাদিজার কথা - যার জন্ম ষষ্ঠ শতাব্দীতে আজকের দিনের সৌদি আরবে। তিনি ছিলেন ধনী এবং ক্ষমতাশালী, একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। সে যুগের অনেক নামী ও সম্ভ্রান্ত পুরুষ তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন - তিনি তিনি সাড়া দেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি অবশ্য বিয়ে করেছিলেন, দু'বার। তার প্রথম স্বামী মারা গিয়েছিলেন, আর তার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয় । এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর বিয়ে করবেন না... যতদিন পর্যন্ত না সেই মানুষটির সাথে তার পরিচয় হয়েছিল - যিনি হবেন তার তৃতীয় এবং শেষ স্বামী। মি. জামান বিবিসিকে বলছিলেন, সেই মানুষটির মধ্যে বিবি খাদিজা এমন কিছু অসামান্য গুণাবলী দেখেছিলেন - যা বিয়ে সম্পর্কে তার মনোভাব বদলে দেয়। তাঁকে বেছে নেয়া এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়া -দুটিই করেছিলেন খাদিজা নিজেই। খাদিজার সময়ে উটের কাফেলায় আরবের বিভিন্ন শহরের মধ্যে পণ্য আনা-নেয়া হতো সে যুগে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। খাদিজার বয়স তখন ৪০। আর তার ভবিষ্যৎ স্বামী ছিলেন ২৫ বছর বয়সের সাধারণ পরিবার থেকে আসা এক যুবক। কিন্তু এটা কোন প্রেমের গল্প নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এটি হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মের সূচনার কাহিনি। খাদিজার সেই নতুন স্বামী আর কেউ নন, তিনি পরবর্তীকালের ইসলামের নবী মুহাম্মদ। 'ব্যবসায়ী' নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ইতিহাসের অধ্যাপক রবার্ট হোইল্যান্ড বলছেন, খাদিজা কে ছিলেন তার সম্পর্কে একটা বিস্তারিত চিত্র পাওয়া খুবই কঠিন। তিনি বলছেন, এর একটা কারণ হলো, তার সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে তার সবই তার মৃত্যুর বহু বছর পরে লিখিত। "তবে বেশিরভাগ সূত্রই আভাস দিচ্ছেন যে - খাদিজা ছিলেন স্বাধীন চেতনা এবং অত্যন্ত দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন এক নারী" - বলছেন হোইল্যান্ড। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, তিনি তার সম্পর্কীয় ভাইদের বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলেন। সে সময়কার ঐতিহ্য অনুযায়ী তার পরিবার এটাই চেয়েছিল। ইতিহাসবিদ বেটানি হিউজ কিন্তু খাদিজা চেয়েছিলেন, তিনি নিজেই তার জীবনসঙ্গী বেছে নেবেন। খাদিজা ছিলেন একজন ব্যবসায়ীর কন্যা। তার পিতা তার পারিবারিক ব্যবসাকে এক বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন। এক যুদ্ধে তিনি নিহত হন। তার পর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন খাদিজাই। বিবিসির তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইতিহাসবিদ ও লেখক বেটানি হিউজ বলেন, "স্পষ্টতই তিনি তার নিজের পথ নিজে তৈরি করে নিতে অভ্যস্ত ছিলেন।" "প্রকৃতপক্ষে তার এই যে ব্যবসায়িক দক্ষতা - এটাই তাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়"। 'সহকারী' খাদিজা তার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন মক্কা থেকে। তার ব্যবসার জন্য অনেক পণ্যবাহী যানের কাফেলা দরকার হতো - যা দিয়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শহরগুলোর মধ্যে পণ্য আনা-নেয়ার কাজ করতেন। বেটানি হিউজ বলেন, "স্পষ্টতই তিনি তার নিজের পথ নিজে তৈরি করে নিতে অভ্যস্ত ছিলেন। এই সব কাফেলাগুলো দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিশাল এক অঞ্চল জুড়ে চলাচল করতো। খাদিজার সম্পত্তির একটা অংশ এসেছিল তার পরিবার থেকে, কিন্তু তিনি নিজেও বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছিলেন, বলছিলেন ফোজিয়া বোরা - যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের অধ্যাপক। "তিনি নিজের যোগ্যতাতেই একজন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন।" তিনি তার কর্মচারীদের নিয়োগ করতেন নিজেই। তার ব্যবসার জন্য কাজে লাগবে এমন বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন লোকদের খুঁজে নিতেন তিনি। খাদিজা একজন লোকের কথা শুনেছিলেন যার অত্যন্ত সৎ এবং পরিশ্রমী বলে সুনাম ছিল। তার সাথে সাক্ষাতের পর সন্তুষ্ট হয়ে তিনি তাকে তার একটি কাফেলার দায়িত্ব দিলেন। লোকটির ঐকান্তিকতা খাদিজার প্রশংসা পেলো এবং কিছুকাল পরে তিনি এতটাই মুগ্ধ হলেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন - তিনি আবার বিয়ে করবেন। "ইসলামের ভবিষ্যৎ নবী - যিনি ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারানোর পর চাচার পরিবারে বড় হয়েছিলেন - তিনি সহসা এমন এক জীবনে প্রবেশ করলেন যেখানে অধিকতর স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আছে" - বলছিলেন ফোজিয়া বোরা। খাদিজার পরিবার বাস করতেন বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায় জানা যায় যে এই দম্পতির মোট চারটি সন্তান হয়েছিল, তবে শুধু মাত্র কন্যাসন্তানরাই শৈশব পার হয়েছিল। এই বিয়ের আরো একটি দিক ছিল যা সেই সময়ের তুলনায় অনন্য। "এটি ছিল একটি 'মনোগ্যামাস' বিবাহ - অর্থাৎ যে বিয়েতে স্বামীর একজনই মাত্র স্ত্রী" - বলছিলেন লন্ডনের মুসলিম ইনস্টিটিউটের রানিয়া হাফাজ। "সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে সেটা ছিল 'পলিগ্যামি'র সমাজ অর্থাৎ তখনকার বেশিরভাগ পুরুষেরই একাধিক স্ত্রী থাকতো। সেদিক থেকে এটা খুবই ব্যতিক্রমী। " প্রথম প্রত্যাদেশ ইসলামের নবীর জন্ম হয়েছিল কুরাইশ গোষ্ঠীতে, খাদিজারও ছিল তাই। সে সময় ওই এলাকার বিভিন্ন গোষ্ঠী নানা রকম দেবতার উপাসনা করতো। বিয়ের কয়েক বছর পর ভবিষ্যৎ নবীর জীবনে কিছু আধ্যাত্মিক পরিবর্তন আসতে থাকে। তিনি মক্কার বাইরের পর্বতে ধ্যান করতে যেতেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি আল্লাহর প্রত্যাদেশ পান জিব্রাইলের কাছ থেকে। ইনিই সেই ফেরেশতা যিনি মেরির কাছে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি যীশুর মা হতে যাচ্ছেন। এ ভাবেই মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরান অবতীর্ণ হয়। বলা হয়, নবীর কাছে প্রথম প্রত্যাদেশ আসার পর তিনি ভয় পেয়েছিলেন - কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে কি ঘটছে। ফোজিয়া বোরা বলছিলেন, "তার যে অভিজ্ঞতা হচ্ছিল তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না। কারণ তিনি একেশ্বরবাদী ধর্ম সম্পর্কে পূর্বপরিচয় আছে এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠেন নি ।" "এসব ঘটনায় তিনি অত্যন্ত বিভ্রান্ত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন। বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়, এসব প্রত্যাদেশ সহজ ছিল না এবং এ অভিজ্ঞতা শান্ত হলেও শারীরিকভাবে তা ছিল অপ্রত্যাশিত।" "তিনি ঠিক করলেন, এ অভিজ্ঞতা তিনি তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষটিকে বলবেন" - বলছিলেন অধ্যাপক হোইল্যান্ড। খাদিজা ব্যাপারটা শুনলেন এবং তাকে শান্ত করলেন। তিনি তার সহজ বুদ্ধি দিয়েই বুঝেছিলেন যে যা হচ্ছে তা ভালো কিছুই হচ্ছে, এবং তিনি তার স্বামীকে আশ্বস্ত করলেন। ইসলামের নবীর কাছে প্রথম কোরানের বাণী নিয়ে আসেন ফেরেশতা জিবরাইল খাদিজা এমনকি তার একজন আত্মীয়ের পরামর্শ চাইলেন - যার খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে জানাশোনা ছিল। এই ওয়ারাকা ইবনে নওফাল নবীর পাওয়া প্রত্যাদেশগুলোকে নবী মুসা যা পেয়েছিলেন তার সাথে সম্পর্কিত করলেন। বোরা বলছিলেন, "আগেকার কিতাবগুলো সম্পর্কে তার জানা ছিল, এবং সে কারণেই ইসলামের নবীর পাওয়া প্রত্যাদেশগুলোর যথার্থতার নিশ্চয়তা মিলেছিল তার কাছ থেকে।" "আমরা জানি যে যখন কোরান অবতীর্ণ হচ্ছিল তখন নবীও নিজের ব্যাপারে সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু খাদিজাই তাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি আসলেই একজন নবী" - বলছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লাইলা আহমেদ । বাণী প্রথম শুনলেন বিশেষজ্ঞরা একমত যে খাদিজাই নবীর প্রাপ্ত কোরানের বাণী প্রথম শুনেছিলেন। "তিনি এই বার্তা বিশ্বাস এবং গ্রহণ করেছিলেন" বলেন ফোজিয়া বোরা - "এটা নিশ্চয়ই নবীকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল এবং তাকে সেই বার্তা প্রচার করার কণ্ঠ দিয়েছিল।" ফোজিয়া বোরা ইতিহাসবিদ বেথানি হিউজ বলছেন, এই পর্যায়ে এসে ইসলামের নবী বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের চ্যালেঞ্জ করেন এবং প্রকাশ্যে এ বার্তা প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেন যে "আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র উপাস্য এবং অন্য কারো উপাসনা হচ্ছে ধর্মদ্রোহিতা।" ফোজিয়া বোরা বলছিলেন, ইসলাম প্রচার শুরুর সময় নবীকে একঘরে করে দিয়েছিলেন মক্কার সমাজের অনেকেই- যারা এক আল্লাহয় বিশ্বাসের বিরোধী ছিলেন। ফোজিয়া বোরা বলছিলেন, "কিন্তু খাদিজা তাকে সেই সমর্থন এবং সুরক্ষা দিয়েছিলেন - যা নবীর তখন অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।" হিউজ বলেন, "পরবর্তী ১০ বছরে খাদিজা তার স্বামীকে সমর্থন দেয়া এবং সেই নতুন ধর্ম সম্প্রদায়ের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতে - তার সমস্ত সম্পদ এবং পারিবারিক যোগাযোগগুলোকে ব্যবহার করেছিলেন।" হিউজ বলছিলেন, "সে সময়কার বহু-ঈশ্বরে বিশ্বাসী সমাজে এক আল্লাহ-বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠা ইসলাম ছিল এক বিতর্কিত ধর্ম।" শোকের বছর খাদিজা তার স্বামী এবং ইসলাম ধর্মকে সহায়তা দিতে তার সাধ্যমত সব কিছুই করেছিলেন, কিন্তু ৬১৯ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। একসাথে ২৫ বছর কাটানোর পর ইসলামের নবী এই মৃত্যুতে একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন অনেক নারী অধ্যাপক হোইল্যান্ড বলেন, খাদিজার মৃত্যুর শোক তিনি কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। "তখনকার দিনের সূত্রগুলো যেভাবে খাদিজা সম্পর্কে কথা বলেছেন -তা সত্যি চমকপ্রদ। তাদের কথায়, নবীর সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিলেন খাদিজা - তার ঘনিষ্ঠতম সঙ্গী আবু বকর বা ওমরের চাইতেও বেশি।" ইতিহাসবিদ বেটানি হিউজ বলেন যে মুসলিমরা খাদিজার মৃত্যুর বছরটিকে এখনো শোকের বছর হিসেবে উল্লেখ করেন। ইসলামের নবী অবশ্য এর পরে আরো অনেকবার বিবাহ করেছিলেন। খাদিজাকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন ইসলাম বিশেষজ্ঞ ফাতিমা বরকতুল্লাহ। বিবিসির এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, খাদিজা সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি তার বেশির ভাগেরই উৎস বিভিন্ন হাদিস - যা ইসলামের নবীর উক্তি, ও তার জীবনের নানা কাহিনির সংকলন। নবীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা এগুলো বলেছেন এবং মনে রেখেছেন - যা পরে লিপিবদ্ধ করা হয়। হাদিসের বর্ণনাকারীদের একজন হচ্ছেন বিবি আয়শা - নবীর অন্যতম স্ত্রী এবং ইসলামের ইতিহাসে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ফাতিমা বরকতুল্লাহ বলছেন, এটা খুবই স্বাভাবিক যে নবী তাকে খাদিজার গল্প , এবং তার নবী হয়ে ওঠার সময়কার কথা বলেছিলেন। বিবি আয়শা যদিও নবীর জীবনের আগেকার পর্ব নিজ চোখে দেখেননি কিন্তু তিনি অন্য মুসলিমদের সেগুলো জানানোর মাধ্যমে তার কর্তব্য বিশ্বস্তভাবেই পালন করেছিলেন।" এক অনন্য দৃষ্টান্ত ফোজিয়া বোরা বলছিলেন, খাদিজার ইতিহাস জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথম দিককার মুসলিম সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে নারীদের ঘরে বন্দী করে রাখা হতো এমন যেসব ভুল ধারণা আছে - তা ভাঙার জন্য এটাই খুবই প্রয়োজনীয়। অনেক তরুণ মুসলিম নারীর কাছে খাদিজা একজন 'রোল মডেল' "খাদিজা যা করতে চাইতেন তা থেকে বিরত থাকতে কখনো বলেননি নবী" - তিনি বলছিলেন, "প্রকৃতপক্ষে সেই সময়ের তুলনায় ইসলাম নারীদের অনেক বেশি অধিকার ও গুরুত্ব দিয়েছে।" "একজন ইতিহাসবিদ এবং মুসলিম হিসেবে আমার কাছে খাদিজা, আয়শা এবং নবীর মেয়ে ফাতিমাসহ অন্য নারীরা অনুপ্রেরণা দেবার মত ব্যক্তিত্ব" - বলেন ফোজিয়া বোরা। "তারা ছিলেন বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় - ধর্ম প্রচার ও ইসলামী সমাজকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন।" তিনি বলছেন, "আমার জন্য এটা একটা দারুণ ব্যাপার যে আমার ছাত্রছাত্রীদেরকে - তারা মুসলিম বা অমুসলিম যাই হোক - আমি এই নারীদের সম্পর্কে শিক্ষা দান করতে পারছি।" নারী কোরআন তেলাওয়াতকারীরা 'ইসলামিক ধারারই অংশ' | বিবি খাদিজা: ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার টিকা নেওয়ার পর আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। আমি করোনাভাইরাস মহামারির খবর সংগ্রহ করে সেসব পরিবেশন করেছি, টিকা তৈরির যে প্রতিযোগিতা সেটাও আমি কভার করেছি। চীনের উহান শহরে যখন অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তখন থেকেই আমি এসব করছি। তার পর যখন ডাক্তারখানায় গিয়ে শার্টের হাতা গুটিয়ে আমার নিজের টিকা নেওয়ার সময় এলো মনে হলো এটা সত্যিই এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কিন্তু আমি এখানে আপনাদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে সততার সঙ্গে সবকিছু তুলে ধরবো: এই টিকা আমাকে একেবারেই কাবু করে ফেলল। পরিষ্কার করে বলি, এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েও আমি আবার টিকা গ্রহণ করব। কোভিডে আক্রান্ত হওয়া, অথবা আরো এক বছরের বিধি-নিষেধের মধ্যে পড়ে যাওয়া, কিম্বা দুর্ঘটনাবশত প্রিয়জনের দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার উচ্চ ঝুঁকি নেওয়ার চেয়ে আমি বরং টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনে নিতে রাজি। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রথম ডোজটি আমি নিয়ে নিয়েছি সকাল সাড়ে ন'টায়। সেদিন সন্ধ্যায় খুব দ্রুত আমার অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং পরের তিনদিন আমি বিছানা থেকে একরকম উঠতেই পারিনি। সবচেয়ে খারাপ যেটা হলো তা হচ্ছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা এবং সেই সঙ্গে বমি। শরীরে ব্যথা হচ্ছিল, ঠাণ্ডা লাগছিল এবং আমার নিজেকে চরম ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে থেকে আমি যখন কাতরাচ্ছিলাম তখন তো আমি বলতেই পারি "আমার কেন এই অবস্থা হলো?" কিন্তু আমি সুস্থ হয়ে উঠতে উঠতে আমি ভাবছিলাম কেন কিছু কিছু মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অন্যদের তুলনায় খুব খারাপ হয়, তার মানে কি এই যে তাদের তুলনায় আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি শক্তিশালী। টিকা নিতে আগ্রহী হলে যেসব বিষয় আপনার জানা থাকা জরুরি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কোত্থেকে আসে, কেন হয়? কোভিড টিকা শরীরের সাথে একটি কৌশলের আশ্রয় নেয়। টিকা নেওয়ার পর শরীর মনে করে যে সে করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এই টিকা তখন সংক্রমণের সাথে লড়াই করার জন্য আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধী স্বাভাবিক ব্যবস্থাকে টোকা মেরে জাগিয়ে তোলে। প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় বাহুতে যেখানে টিকাটি দেওয়া হয়- ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়- কারণ তখন রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন দেহের বাকি অংশে এর প্রভাব পড়তে পারে এবং দেখা দিতে পারে ফ্লুর মতো উপসর্গ যেমন জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা এবং বমি বমি ভাব। "জ্বালা যন্ত্রণাময় সাড়া দেওয়ার কারণে এরকম হয়," একথা আমাকে বললেন এলেনর রাইলি, যিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ও সংক্রামক রোগ বিভাগের শিক্ষক। এটা কাজ করে রাসায়নিক ফায়ার এলার্মের মতো। টিকা দেওয়ার পর শরীরের ভেতরে কিছু রাসায়নিক প্রবাহিত হতে শুরু করে যা দেহকে সতর্ক করে দেয় বলে যে কোথাও সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রফেসর রাইলি বলেন: "এটা রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করে তোলে এবং আপনার বাহুর চারপাশে যেসব টিস্যু আছে সেগুলোতে রোগ প্রতিরোধী কিছু সেল প্রেরণ করে। সেখানে আসলে কী হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করতেই এসব সেল পাঠানো হয়।" এসব রাসায়নিকের কারণে আমরা অল্প কিছু সময়ের জন্য অসুস্থ বোধ করতে পারি। কিছু মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেন বেশি হয়? একেকজন মানুষের শরীরে একেক রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। ব্যক্তিভেদে এর তারতম্যও খুব বেশি হতে পারে। কেউ হয়তো কোন কিছুই লক্ষ্য করবে না, কেউ দুর্বল বোধ করবেন, কিন্তু কাজে যেতে পারবেন, আর বাকিদের হয়তো বিছানায় শুয়ে থাকার দরকার হতে পারে। টিকা নিচ্ছেন অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রফেসর এন্ড্রু পোলার্ড। "এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান, এবং এটা হয়তো তোমার জন্য প্রাসঙ্গিক জেমস (আমার বয়স মধ্য তিরিশে)," আমাকে একথা বললেন প্রফেসর এন্ড্রু পোলার্ড, যিনি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। "আপনার বয়স যত বেশি হবে, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হবে তত কম- যাদের বয়স ৭০ এর উপরে তাদের কোন ধরনেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে না।" তবে একই বয়সের দু'জন মানুষেরও টিকা নেওয়ার ফলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। "আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থায় বিশাল জেনেটিক বৈচিত্র রয়েছে। আর একারণেই একেকজনের শরীরে একেক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে," বলেন প্রফেসর রাইলি। এই বৈচিত্র্যের অর্থ হচ্ছে কোনো কোনো মানুষের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা একটু বেশি সক্রিয় এবং এর ফলে তারা আক্রমণাত্মক উপায়ে সাড়া দেয়। প্রফেসর রাইলি বলেন, "আপনার মতো কিছু মানুষ, যাদের শরীরে ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তারা পুরো বিষয়টাতে অতিরিক্ত সাড়া দিয়ে থাকে।" "এবং আপনি হয়তো তাদের মধ্যে একজন যারা ঠাণ্ডা লাগলে কিম্বা ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সবসময় বেশ অসুস্থ বোধ করে। আমি আপনাকে এজন্য অভিযুক্ত করতে চাই না যে আপনি এধরনের ম্যান-ফ্লুতে আক্রান্ত, কিন্তু আপনি হয়তো তাদেরই একজন।" আরো একটি কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আপনি যদি এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে টিকা নেওয়ার পর পর আপনার দেহে প্রচণ্ড শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। তখন এধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। টিকার ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় বক্তব্যের বিপদ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার অর্থ কী এই যে আমি প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি? স্বার্থপর-ভাবেই আমি আশা করেছিলাম যেহেতু আমার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তাই আমার প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। আগের কিছু টিকার ক্ষেত্রে এরকম কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। "এরকম কিছু উদাহরণ আছে, যেমন ২০০৯ সালের ফ্লু মহামারি, সেসময় দেখা গিয়েছিল যাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি ছিল তাদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও তত বেশি শক্তিশালী ছিল," বলেন প্রফেসর পোলার্ড। কিন্তু কোভিড টিকার ক্ষেত্রে এরকম ঘটেনি। এই টিকা নেওয়ার পর প্রত্যেকেই প্রায় সমান নিরাপত্তা পাচ্ছে। "এটা দারুণ একটা বিষয়, যদিও বয়স্ক লোকজনের খুব সামান্যই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও একই সমান নিরাপত্তা দেয়।" রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার যে দুটো দিক সেগুলো একসঙ্গে কাজ করে। প্রথমটিকে বলা হয় ইনেট রেসপন্স বা সহজাত প্রতিক্রিয়া। এর মধ্যেই রয়েছে রাসায়নিক ফায়ার অ্যালার্ম। এটা মানুষের অন্তর্জাত রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা। আরো পড়তে পারেন: সাতটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা স্থগিতের পর যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে কোম্পানি বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই চলবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে আবারও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হবে সময় মতোই পাওয়া যাবে সিরামের টিকা- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাকি অর্ধেকটিকে বলা হয় অ্যাডাপটিভ রেসপন্স বা প্রদত্ত প্রতিক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা প্রথমে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কীভাবে সে লড়াই করবে সেটা সে মনে রাখে। বি-সেল তৈরি করার মাধ্যমে এই লড়াই পরিচালিত হয়। ভাইরাসটিকে ধ্বংস করার জন্য এই বি-সেল এন্টিবডি উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়ায় টি-সেলও তৈরি হয় যা আক্রান্ত যেকোনো সেলকে আক্রমণ করে থাকে। প্রফেসর রইলি বলেন, "মানুষের সহজাত যে প্রতিরোধী ব্যবস্থা তাতে বয়সের সঙ্গে তারতম্য ঘটে, মানুষে মানুষেও এটা একেক রকমের হয়, এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কতোটুকু ও কেমন হবে সেটাও তার ওপর নির্ভর করে। "প্রদত্ত প্রতিক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলার জন্য আপনার সামান্য সহজাত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয়। সেখান থেকেই তৈরি হয় বি-সেল ও টি-সেল যা আপনাকে রক্ষা করবে।" আমার দ্বিতীয় ডোজও কি খারাপ হবে? যারা প্রথম ডোজটি নিয়েছেন তাদের অনেকের মধ্যেই একটা উদ্বেগ যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেও কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। এবিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। "আপনার দ্বিতীয় ডোজে কোন অপকার হবে না, এটি নির্বিষ। প্রথম ডোজটির তুলনায় দ্বিতীয় ডোজটি খুবই মৃদু," বলেন প্রফেসর পোলার্ড, যিনি অক্সফোর্ড টিকার পরীক্ষা চালিয়েছেন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে কিছু কিছু তথ্যে দেখা যাচ্ছে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজের তুলনায় দ্বিতীয় ডোজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সামান্য বেশি হতে পারে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে কোভিশিল্ড নামে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে কি উদ্বেগের কিছু আছে? টিকা দেওয়ার পর সামান্য কিছু লোকের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার খবরে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সেটা সংবাদ মাধ্যমে প্রাধান্য পেয়েছে। স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত এধরনের কাকতালীয় ঘটনার ব্যাপারে টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার আগেই আমাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি বলেছেন, "টিকা নেওয়ার ফলে যে রক্ত জমাট বেঁধে যায় তার পক্ষে কোন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়নি।" তবে এই টিকার ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এবং অধ্যাপক পোলার্ড বলেছেন এসবের বিষয়ে খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গি ও সৎ থাকাও জরুরি। তিনি বলেন: "পরীক্ষার সময় আপনার এটা বলার সুযোগ আছে যে আপনারও জেমস গ্যালাহারের মতো অবস্থা হতে পারে এবং কয়েকদিনের জন্য আপনার খারাপ লাগতে পারে। আপনি তাহলে জানবেন যে আপনার কী হতে পারে। আপনি কিছু প্যারাসিটামল খাবেন এবং সব ঠিক হয়ে যাবে।" "কিন্তু আপনার যদি এরকম কিছু হয়, এবং সেবিষয়ে আপনি কিছু না জানেন তাহলে তো সেটা আপনার জন্য উদ্বেগের হবেই," বলেন তিনি। | করোনাভাইরাস: টিকা নেওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং এসব প্রতিক্রিয়া থেকে কী বোঝা যায় |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | ঘরটিতে লোহার তৈরি ছয়টি বাঙ্ক বেড ছাড়া তেমন কিছুই নেই। প্রত্যেকটি বেডের সামনে কাপড় আর বেমানান তোয়ালে ঝুলিয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আড়াল তৈরি করা হয়েছে। "দিন রাত আমরা এই একটা ঘরের ভেতরেই থাকি। এটা আসলে আমাদের ওপর মানসিক নির্যাতন। এটা জেলখানার মতো," বলেন তিনি। "ঘরের ভেতরে জায়গা না থাকার কারণে আমরা সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখতে পারি না।" করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সেরে ওঠার পর কাজেও ফিরে গেছেন। জাকির ভেবেছিলেন তার খারাপ দিনগুলো চলে গেছে। তিনি যে ডরমিটরিতে থাকেন সেটাও জুন মাসে ভাইরাসমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু অগাস্ট মাসে সেখানে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিলে হাজারো অভিবাসী শ্রমিকের মতো তাকেও আবার কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গৃহীত ব্যবস্থার জন্য এক সময় সিঙ্গাপুরের প্রশংসা করা হয়েছিল। কিন্তু ভাইরাসটি যখন বিদেশি অভিবাসীদের ডরমিটরিতে গিয়ে পৌঁছায় তখন এবিষয়ে দেশটির সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, সিঙ্গাপুরে যে এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে সেটা আগে থেকেই বোঝা উচিত ছিল। কয়েক মাস ধরে সিঙ্গাপুরের স্থানীয় কমিউনিটিতে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা একক সংখ্যার ঘরে। লোকজন কাজে ফিরে যাচ্ছে, সিনেমা খুলে দেওয়া হয়েছে, রেস্তোরাঁগুলো থেকে আবার মানুষের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সিঙ্গাপুরে যারা অল্প আয়ের মানুষ তাদেরকে ঘরের ভেতরেই থাকতে হচ্ছে। তারা এখন এক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। বেশিরভাগ শ্রমিক নির্মাণ-শিল্পে কাজ করেন। এই শহর গড়ে তুলেছেন যারা সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয় জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। ওই ব্যক্তি দেশের বাইরে থেকে এসেছিলেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। সেসময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকজনকে খুঁজে বের করতে ব্যাপক কন্টাক্ট ট্রেসিং কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সারা দেশে চালু করা হয় করোনাভাইরাস-ট্রেসিং অ্যাপ। এবিষয়ে লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও বাড়ানো হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞরা সিঙ্গাপুরের গৃহীত এই পদ্ধতির প্রশংসা করেন। এই পদ্ধতিকে তারা "সর্বোচ্চ মানের নিখুঁত শনাক্তকরণ" বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু দেশটিতে ইতোমধ্যে একটি সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল যা বেশিরভাগ মানুষই দেখতে পায় নি। সিঙ্গাপুরে তিন লাখেরও বেশি অল্প আয়ের বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন। তারা সেখানে গেছেন ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে। তাদের বেশিরভাগই কাজ করেন নির্মাণ ও উৎপাদন শিল্পে। এসব শ্রমিকের সিঙ্গাপুরে থাকার বিষয়টি নির্ভর করে তাদের চাকরির ওপর। চাকরিদাতার পক্ষ থেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়। ভিড়ে ঠাসা গাড়িতে করে তারা তাদের ডরমিটরি থেকে কাজের জায়গায় যাতায়াত করেন। অন্যান্য ডরমিটরি থেকে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে তারা একত্রে বিশ্রাম নেন যা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য খুবই উপযোগী এক পরিস্থিতি। একটি ডরমিটরিতে সর্বোচ্চ কতজন থাকতে পারবেন আইনে তার কোন সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে কোভিড মহামারির আগে সাধারণত ২০ জনেরও বেশি শ্রমিক ডরমিটরির একটি কক্ষে একত্রে থাকতেন। মার্চ মাসের শেষের দিকে অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি গ্রুপ 'ট্রানসিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু' সতর্ক করে দিয়েছিল যে "এসব অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যে নতুন করে ক্লাস্টার সংক্রমণের ঘটনা ঘটবে না সেটা অস্বীকার করা যায় না।" একজন শ্রমিকের একবেলার খাবার। আরো পড়তে পারেন: করোনাভাইরাস ঠেকাতে সিঙ্গাপুরে নতুন প্রযুক্তি সিঙ্গাপুরে এতো বাংলাদেশি শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন কেন? সিঙ্গাপুর কোয়ারেন্টিনে ২০ হাজার শ্রমিক, জাপানে জারি হচ্ছে জরুরি অবস্থা সিঙ্গাপুরে আংশিকভাবে জাতীয় লকডাউন জারি করার কয়েক সপ্তাহ পর সাধারণ লোকজনের মধ্যে সংক্রমণ পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর মধ্যে অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের আশঙ্কা সত্যি হয়। প্রতিদিন কয়েক শ' শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হতে থাকেন। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে সরকার প্রতিদিন আলাদা আলাদা করে দুই ধরনের পরিসংখ্যান তুলে ধরতে শুরু করে। এগুলো হচ্ছে স্থানীয় কমিউনিটিতে ও ডরমিটরিতে শনাক্ত হওয়া লোকের সংখ্যা। এসব পরিসংখ্যানে দেখা যায় কমিউনিটিতে ও ডরমিটরিতে আক্রান্ত লোকের সংখ্যায় কতো তারতম্য- ডরমিটরিতে প্রচুর সংখ্যক লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কমিউনিটিতে এই সংক্রমণের হার ছিল খুবই কম। নিউজিল্যান্ডের ম্যাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ের অধ্যাপক মোহন দত্ত বলেছেন, "অন্য যেকোনো মহামারির মতো কোভিড-১৯ মহামারিও অসাম্যের।" "সিঙ্গাপুরে ভিন্ন ভিন্ন দুই ধরনের সংখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে। এর ফলে এই বৈষম্য আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।" তালাবদ্ধ ডরমিটরি এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বিদেশি শ্রমিকদের ডরমিটরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঙ্ক বেড সরিয়ে পাতা হয়েছে সিঙ্গেল খাট। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাতে কাজ করেন এরকম ১০,০০০ স্বাস্থ্যবান কর্মীকে আলাদা করে ফেলা হয় যাতে দেশটির কাজ কর্ম স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। তবে গণহারে পরীক্ষা চালানোর সময় বেশিরভাগ শ্রমিক ডরমিটরিতে আটকা পড়েন। কাউকে কাউকে তাদের ঘর থেকেও বের হতে দেওয়া হয়নি। আক্রান্ত কর্মীদের ধীরে ধীরে সরিয়ে নেওয়া হয়, সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। লকডাউনের সময় সারা দেশের অভিজ্ঞতা থেকে এসব ডরমিটরির চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সারা দেশে দোকানপাট খোলা ছিল, প্রাত্যহিক শরীর চর্চাকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সব ধরনের আউটলেট থেকে পণ্য ও সেবা সরবরাহ অব্যাহত ছিল। কিন্তু এই বিদেশি শ্রমিকদের রাখা হয়েছিল লকডাউনে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় খাবারটুকুও দেওয়া হয়নি। "যখন লকডাউন জারি করা হলো, আমাদেরকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হলো না। আমরা পাশের ঘরেও যেতে পারতাম না," বলেন ভাইথ্যানাথান রাজা, দক্ষিণ ভারত থেকে যাওয়া একজন শ্রমিক। আরো পড়তে পারেন: করোনাভাইরাস: সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা কি বাকি বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে? সংক্রমণ রোধে যেভাবে কাজ করেছেন সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দারা ডরমিটরিতে একটি শোওয়ার ঘর। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই এসব ডরমিটরির ওপর দৃষ্টি পড়ে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নতুন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এগুলোর জন্য দানের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং যারা এসব ডরমিটরি পরিচালনা করেন তারা এগুলোর অবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নেন। মহালিঙ্গম ভেটরিসেলভান ৫১ বছর বয়সী একজন ভারতীয় শ্রমিক। তিনি বলেন, তাদের ডরমিটরিতে যেসব ব্যবস্থা আছে সেগুলো ঠিকই আছে। আগে ঠাসা ঠাসি করে কিছু বাঙ্ক বেড রাখা ছিল। এখন সেগুলো সরিয়ে সিঙ্গেল খাট পাতা হয়েছে। "একটা খাট থেকে দুরত্বও এখন বেশি," বলেন তিনি। আরেকজন বিদেশি শ্রমিক তার ঘরের একই ধরনের কিছু ছবি পাঠিয়েছেন যেখানে সব নতুন করে সাজানো হয়েছে। তিনি বলেছেন বেডের সংখ্যা ১৫ থেকে কমিয়ে এখন আটটি করা হয়েছে। আরেকজন শ্রমিক বিবিসিকে বলেছেন তিনি ভাগ্যবান যে তার চাকরিদাতা তাকে একটি হোটেলে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জাকিরের বেলায় এমনটা ঘটেনি। নির্মাণ-শিল্পের একটি প্রকল্পে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তাকে একটি অস্থায়ী আবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার তাকে তার ডরমিটরিতে ফিরিয়ে আনা হয়। "আমি ডরমিটরি ছেড়ে যাই ১৭ই এপ্রিল এবং যখন আমি ৯ই জুলাই ফিরে আসি, এর মধ্যে আমি কোন উন্নতি দেখিনি।" এই বাথরুমটি ১৮০ জন ব্যবহার করেন। জাকির জানান, ছয় মিটার বাই সাত মিটারের একটি ঘরে তারা ১২ জন থাকেন। "তারা আমাদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলে, কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয় এটা একটা কৌতুক," বলেন জাকির। "ছোট্ট একটি ঘরের ভেতরে আমরা কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখবো?" প্রত্যেক তলায় আছে এধরনের ১৫টি করে ঘর। প্রত্যেকটি ঘর যদি লোকে ভর্তি থাকে তাহলে একেকটি ফ্লোরে ১৮০ জনের মতো থাকার কথা। তারা সবাই একই টয়লেট ব্যবহার করেন যাতে আছে ছয়টি বেসিন, গোসলখানা, পায়খানা এবং প্রস্রাব করার স্থান, জানান জাকির। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে প্রতি ১৫টি বেডের জন্য একটি করে টয়লেট, গোসলখানা ও সিঙ্কের ব্যবস্থা থাকার কথা। "তারা আমাদেরকে এগুলো পরিষ্কার রাখতে বলে কিন্তু এজন্য সেখানে কোন সাবান নেই।" এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিবিসি ডরমিটরি পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কাছ থেকে কিছু শোনা যায় নি। অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা 'ইটস রেইনিং রেইনকোটসের' প্রতিষ্ঠাতা দিপা সোয়ামিনাথান বলেন, অনেক শ্রমিকই এধরনের পরিস্থিতিতে বহু বছর ধরেই বসবাস করছেন। সিঙ্গাপুরের উপকণ্ঠে একটি ডরমিটরি। "এখন আমরা যেসব বিষয়ে কথা বলছি- তাদের থাকার জায়গা, তাদের খাবার- এগুলোর অবস্থা বহু বছর ধরেই এরকম। এতদিন এসব বিষয়ে শোনা যায় নি কারণ তারা কেউ অভিযোগ করেন না। সিঙ্গাপুরে তাদের যা আছে সেসব নিয়েই তারা সন্তুষ্ট। তারা যদি কোন চাপে পড়েন তাহলে তারা সত্যিই একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন।" করোনাভাইরাস মহামারি শ্রমিকদের ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তার ফলে অনেক দুঃখজনক ঘটনাও ঘটে গেছে। অনেকে আত্মহত্যা, মৃত্যু কিম্বা নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন বলেও জানা গেছে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একজন শ্রমিক ডরমিটরির জানালার কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সঙ্গে যারা থাকেন এক পর্যায়ে তারা তাকে ঘরের ভেতরে টেনে ধরেছেন। বিবিসির পক্ষে অবশ্য এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। জাকির বলেন, "আমার ডরমিটরির কেউ কেউ তাদের পরিবারকে ফোন করে বলেন যে তারা আর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারছেন না। তারা কাঁদে আর বলে যে তারা বাড়িতে ফিরে যেতে চায়।" বেতনের বিষয়টিও তাদের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করে। কারণ দেশের বাড়িতে তাদের পরিবার তাদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। "বাইরে যেতে পারি না বলে আমরা টাকা পাঠাতে পারি না," বলেন জাকির। তিনি জানান যে অনেক শ্রমিক তাদের নিয়মিত বেতনও পায়নি। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন বিদেশি যেসব শ্রমিক পূর্ণকালীন কাজ করেন তাদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু যারা কাজ করতে পারেন নি তাদেরকে বেতন দিতে বলা অযৌক্তিক হবে। তিনি বলেন, "চাকরিদাতাদের উচিত হবে তারা যাতে বেতন দিতে পারেন সেজন্য পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি উপযুক্ত ব্যবস্থায় পৌঁছানো।" একটি পোস্ট মর্টেম সিঙ্গাপুর সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থা আরো উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সরকার বলছে, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ প্রত্যেক বাসিন্দাকে থাকার জন্য অন্তত ছয় বর্গমিটার করে জায়গা দেওয়া হবে। একেকটি ঘরে থাকবে সর্বোচ্চ ১০টি বেড এবং অন্তত এক মিটার দূরে দূরে বেডগুলো রাখতে হবে। অধ্যাপক দত্ত বলছেন, ডরমিটরির পরিস্থিতি কেন এতো খারাপ অবস্থায় যেতে দেওয়া হলো এখন সেটাই প্রশ্ন: "মহামারির আগেই অনেক সংস্থার পক্ষ থেকে এসব মৌলিক সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।" প্রধানমন্ত্রী লী সিয়েন লং এসব ডরমিটরির ঝুঁকির বিষয়ে যে সরকারের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেকথা স্বীকার করেছেন। এমাসের শুরুর দিতে পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন,"আমরা আগাম সতর্কতা বাড়িয়েছিলাম। একটা সময় পর্যন্ত সেগুলো পর্যাপ্ত মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে ডরমিটরিতে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হলো যা আমাদের সকলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করলো।" এর অল্প কিছু দিন আগে তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। নির্বাচনে অভিবাসীদের বিষয়ে খুব কমই আলোচনা হয়েছে। ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও শেষে তিনি বলেছেন: "যুদ্ধাবস্থাতে সবসময় তো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না।" একজন শ্রমিকের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত মাসে সরকার ঘোষণা করে যে ডরমিটরিতে যারা থাকেন তারা সবাই সুস্থ অথবা করোনাভাইরাসমুক্ত। কিন্তু ঠিক কয়েক সপ্তাহ পর কয়েকটি ডরমিটরিতে আবারও বেশ কিছু সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশি শ্রমিক জাকির হোসেন জানেন না যে তিনি কবে ঘর থেকে বের হতে পারবেন। কিন্তু তার একমাত্র আশা কাজে ফিরে যাওয়া এবং সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হওয়া। "আমাদের অনেকেই এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছে। আমি আছি ১৭ বছর ধরে। আমরা যেন এই সিঙ্গাপুরেরই একটা অংশ হয়ে গেছি," বলেন তিনি। "আমরা বলছি না আমাদের সঙ্গে একজন নাগরিকের মতো আচরণ করো। একটা মানুষের সঙ্গে যেরকম আচরণ করা উচিত শুধু সেটুকুই করো- আমরা তো এই সমাজেরই অংশ। এটুকু করলেই চলবে।" রিপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কৃত্থিকা কান্নান। | করোনা ভাইরাস মহামারি: সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি জাকির হোসেনের মতো অভিবাসী শ্রমিকরা যেভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | দিল্লিতে ১৯৬৬ সালে গোহত্যাবিরোধী আইনের দাবিতে সেই বিক্ষোভ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১৯৬৬ সালের ৭ই নভেম্বর গো-হত্যা বন্ধের আইন করার দাবিতে সত্যিই এক বিক্ষোভ হয়েছিল, এবং তাতে পুলিশ গুলি চালালে সরকারি তথ্যমতে অন্তত ৭ জন নিহত হয়। তখন মাত্র ১০ মাস আগে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই ঘটনার ব্যাপারে অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে যে নিহতের সংখ্যা ছিল - তা গত ক'দিনের মধ্যে পাল্টে ফেলে ৭ থেকে বাড়িয়ে ৫,০০০ করে দেয়া হয়েছে। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে এখন চলছে বিধানসভা নির্বাচন। এর মধ্যে তিনটি রাজ্যে আছে বিজেপির সরকার - যার মধ্যে রাজস্থানে তারা বেশ চাপে রয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই রকম এক পরিস্থিতিতেই শুক্রবার রাজস্থানে টুইটার, ফেসবুক আর হোয়াটস্অ্যাপে কয়েকটি ছবিসহ 'ভাইরাল' বা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে একটি বার্তা । ছবিটির সাথে দেয়া বার্তায় লেখা রয়েছে, "আপনি কি জানেন, মুসলমানদের খুশি করতে ১৯৬৬ সালের ৭ নভেম্বর গোহত্যা বন্ধের দাবী জানাতে সংসদ অভিযানে যাওয়া ৫০০০ সাধু-সন্তকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী? হাজার হাজার সাধুসন্তকে গুলিতে জখম করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীন ভারতে ওটাই ছিল সবথেকে বড় ও নৃশংস হত্যাকান্ড। মানুষ জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাস জানে, কিন্তু সংসদ ভবনের সামনে হাজার হাজার সাধু সন্তের এই ঘটনা লোকে জানেই না।" বেশ কয়েকটা হ্যাশট্যাগ দিয়ে সহজেই গুগল সহ অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলিতে এই বার্তাটি পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকজনের পোস্টে উইকিপিডিয়ার একটি পৃষ্ঠার লিঙ্ক দেয়া হয়েছে। আরো পড়তে পারেন: তাবলীগ জামাতে দু'গ্রুপের দ্বন্দ্বের মূল কারণ কী? বিশ্ব ঐতিহ্যের যে তালিকা আপনাকে অবাক করবে আসামেও কি রোহিঙ্গাদের মত সংকট তৈরি করবে এনআরসি? টুইটার, ফেসবুক আর হোয়াটস্অ্যাপে ভাইরাল হওয়া সেই বার্তা বিবিসি বাংলায় এ নিয়ে আরো পড়তে পারেন: উগ্র হিন্দুত্ববাদ ভারতে ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রধান কারণ রামকে নিয়ে আবার এত তোড়জোড় কেন বিজেপির কেন 'হিন্দুত্ব বিরোধী' বই বাদ দিচ্ছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় উইকিপিডিয়ার ওই পাতায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে এই বর্ণনা: 'গোহত্যা বিরোধী ওই আন্দোলনে তিন থেকে সাত লক্ষ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ সংসদ ভবন ঘেরাও করলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ৩৭৫ থেকে ৫০০০ মানুষকে মেরে ফেলে। আহত হয়েছিলেন প্রায় দশ হাজার মানুষ।' ওই পৃষ্ঠাটি ভাল করে দেখলে জানতে পারবেন, ২২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ওই বিবরণ শেষবার পাল্টানো হয়েছে। এর আগে ওই পৃষ্ঠাতেই লেখা হয়েছিল, কর্মকর্তাদের দেওয়া হিসাবে, ওই ঘটনায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সংখ্যাটিই বাড়িয়ে ৩৭৫ করে দেওয়া হয় ২২ নভেম্বর। বিবিসি হিন্দির সাংবাদিকরা ভাইরাল হওয়া ছবিগুলি পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা যায়, দক্ষিণপন্থী মতামতে বিশ্বাসী কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে এই ছবিগুলি একটা নির্দিষ্ট কায়দায় শেয়ার করা হয়েছে। কয়েকটা পোস্ট আবার ২০১৪-১৫ সালের। ১৯৬৬ সালের ওই ঘটনা নিয়ে যত পোস্ট চোখে পড়ছে, সেগুলিতে বক্তব্য মোটামুটি এক - গোহত্যার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে নিজেদের প্রাণ বাজি রেখেছিলেন হিন্দু সাধুসন্তরা, কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গার সঙ্গেও ১৯৬৬ সালের এই ঘটনার তুলনা টেনেছেন। কতজনের মৃত্যু হয়েছিল ১৯৬৬ সালের ওই ঘটনায়, তা নিয়েও ছড়িয়ে পড়া মেসেজগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা দেখা গেছে। কেউ লিখেছেন, মৃতের সংখ্যা এক হাজার, কেউ লিখেছেন ২৫০। ইন্দিরা গান্ধী ভাইরাল হয়ে যাওয়া ছবি আর তথ্যগুলি আমরা যাচাই করে দেখেছি। ১৯৬৬-র সাত নভেম্বরের ঘটনা বলে যে ছবিগুলি ভাইরাল হয়েছে, সেগুলো যে ওই দিনের অশান্তিরই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে রাজপথ নামের প্রশস্ত রাস্তা আছে, সেখানকার এবং তার পাশের সবুজ ঘাসের বাগিচার এলাকায় তোলা হয়েছে ওই ছবিগুলি। কিন্তু সেদিন আসলে কী হয়েছিল, তা জানাচ্ছিলেন ইতিহাসবিদ হরবংশ মুখিয়া। "গোটা দেশেই গোহত্যার বিরুদ্ধে একটা আইন আনার দাবী তোলা হচ্ছিল ১৯৬৬ সালে। অনেকে মনে করেছিলেন যে একা একটা অজুহাত মাত্র। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথাও অনেকে মনে করেছিলেন, কারণ তার কিছুদিন আগেই ইন্দিরা গান্ধী সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন আর তাঁর বিরোধীরা 'গুঙ্গি গুড়িয়া' বা বোবা পুতুল বলে বিদ্রুপ করতে শুরু করেছে। কংগ্রেস দলের ভেতরেও অনেকে এই বিদ্রুপে অংশ নিতেন।" "প্রথম থেকেই ইন্দিরা গান্ধীকে একটা অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল," বলছিলেন অধ্যাপক মুখিয়া। দিল্লির কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীরা তার মতে, ৭ নভেম্বরের ঘটনা কোনও নিয়ন্ত্রিত আন্দোলন বা বিক্ষোভ ছিল না, পরিকল্পনা করে অশান্তি তৈরি করা হয়েছিল সেদিন। "যতটা কম সময়ের মধ্যে ওই আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল, ততটাই দ্রুত মানুষ ওই ঘটনা ভুলেও গিয়েছিল," বলছিলেন হরবংশ মুখিয়া। সিনিয়ার সাংবাদিক রশিদ কিদওয়াইয়ের অন্যতম একটি পরিচিত বই হল 'ব্যালট: টেন এপিসোডস দ্যাট হ্যাভ শেপড ইন্ডিয়ান ডেমোক্র্যাসি', অর্থাৎ যে দশটি ঘটনা ভারতের গণতন্ত্রের কাঠামো গড়েছিল। ওই বইতে মি. কিদওয়াই ৭ নভেম্বর, ১৯৬৬-র কিছুটা বর্ণনা দিয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বিশদে জানিয়েছেন, "হরিয়ানার কারনাল জেলা থেকে নির্বাচিত জনসংঘের (বিজেপির পূর্বসুরী, আর এস এসের মতাদর্শের অনুসারী প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন) সংসদ সদস্য স্বামী রামেশ্বরানন্দ ওই কথিত আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল দেশে একটা আইন তৈরি করা হোক, যার মাধ্যমে গোহত্যাকে অপরাধ বলে গণ্য করা যায়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আর এস এসও এই দাবীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।" "কয়েক হাজার সাধু-সন্ত এই দাবি নিয়ে দিল্লিতে হাজির হয় আর সেদিন সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছিল, মন্ত্রণালয় ভবনগুলির বাইরের দিকে ভাঙচুর করা হয়েছিল, সংসদের ভেতরেও ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছিল তারা। ভারতীয় ইতিহাসে সেটাই ছিল সংসদের ওপরে প্রথম হামলা। সংসদ ভবন রক্ষা করতেই পুলিশ গুলি চালায়, যাতে ৭ জন মারা গিয়েছিলেন। কয়েকটা কাগজে বোধহয় ৮-৯ জনের মৃত্যুর খবরও লেখা হয়েছিল, কিন্তু সংখ্যাটা কখনই দশের বেশি নয়," বলছিলেন রশিদ কিদওয়াই। হরবংশ মুখিয়াও বলছিলেন যে মৃতের সংখ্যা কোনওমতেই দশের ওপরে যায় নি। ওই দিনের অনেকগুলি দেশী, বিদেশী সংবাদপত্রের রিপোর্টও আমরা খতিয়ে দেখেছি। ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী গুলজারি লাল নন্দ মোটামুটি সবগুলিতেই দেখা যাচ্ছে যে সংসদের ভেতরে ঢুকে পড়ার প্রচেষ্টার কথা লেখা হয়েছে, গুলি চালনার পরে দিল্লিতে কার্ফূ জারি করার খবর আছে, বিক্ষোভকারীরা যে সরকারী গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন, সেটাও রয়েছে খবরে। রশিদ কিদওয়াই আরও জানাচ্ছিলেন যে বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীকেই পুলিশ বাসে চাপিয়ে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল শহরের বাইরে এখন যেখানে গুরগাও, সেই অঞ্চলে মেহরৌলি-আরাবল্লী পাহাড়ের জঙ্গলে। তবে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে নি পুলিশ। "ওই ঘটনার পরেই ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী গুলজারি লাল নন্দকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। অনেকে বলেন, ইন্দিরা গান্ধী মি. নন্দকে আগেই বলেছিলেন যে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় যাতে সব ধরণের প্রস্তুতি রাখা হয়। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও মি. নন্দ ছিলেন 'ভারত সাধু সমাজ'-এর অধ্যক্ষ। তাই তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই আন্দোলনকারীদের নিরস্ত করা যাবে," বলছিলেন রশিদ কিদওয়াই। ওই ঘটনা যে এই প্রথমবার নির্বাচনের আগে প্রচারে এলো - তা নয়। হরবংশ মুখিয়া এবং মি. কিদওয়াই দুজনেই জানিয়েছেন, যে ১৯৭১ এর নির্বাচনী প্রচারেও আরএসএস এবং জনসংঘ গ্রামে গ্রামে ৬৬ সালের ওই ঘটনার কথা বলত। কিন্তু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওই প্রচার তখন মোটেই দানা বাঁধে নি। (ভারতে ভুয়ো সংবাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য 'একতা নিউজরুম' প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই প্রতিবেদনটি। যদি আপনার কাছে এরকম কোনও খবর, বার্তা, ছবি বা দাবি কেউ করেন, যা নিয়ে আপনার মনে সন্দেহ রয়েছে, তাহলে সেটির সত্যতা যাচাই করতে আপনি ওই বার্তাটি 'একতা নিউজরুমে' পাঠিয়ে দিতে পারেন এই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে: +৯১ ৮৯২৯০২৩৬২৫) | ভারতের রাজস্থানে ভোটের আগে সামাজিক মাধ্যমে 'হিন্দু গণহত্যার' ভাইরাল বার্তা |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | প্রদীপ কুমার গ্যায়ালি মে মাসে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ধারচুলা থেকে চীন সীমান্তে লিপুলেখ পর্যন্ত একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন। নেপালের দাবি ছিল যে ওই রাস্তা তাদের এলাকার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার আগে, ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য থেকে লাদাখকে যখন আলাদা করা হল, তারপর ভারত যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে লিপুলেখ আর কালাপানি - এই দুটি অঞ্চল ভারতের অন্তর্ভুক্ত বলেই দেখানো হয়েছিল। এবছর, নেপাল তাদের দেশের একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে, কালাপানি আর লিপুলেখ তাদের দেশের অংশ বলে দেখায়। তারপরেই দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিবাদ আবারও সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গ্যায়ালি বিবিসি হিন্দিকে বলছিলেন, "নেপাল আর ভারতের মধ্যে সীমানা নিয়ে যে বিবাদ রয়েছে, তা সমাধান করতেই হবে। যতদিন না এর মীমাংসা হচ্ছে, ততদিন এই ইস্যুটা ফিরে ফিরে আসবে। সীমান্ত সমস্যার সমাধান না হলে দুই দেশের সম্পর্ক বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে না।" "ইতিহাসের যেসব অমীমাংসিত সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান সরকারের ওপরে এসে পড়েছে, সেগুলোর সমাধান করতেই হবে। কিন্তু নেপাল এটা চায় না যে সীমান্ত সমস্যার কারণে দুই দেশের বাকি সব সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যাক। সেগুলোকে সচল রেখেই সীমান্ত সমস্যা মেটাতে হবে, আবার অন্যদিকে লিপুলেখ এবং কালাপানি - এই ইস্যুটাও নেপালের সার্বভৌমত্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ," বলছিলেন প্রদীপ কুমার গ্যায়ালি। সীমান্ত নিয়ে যখন দুই দেশের মধ্যে মতভেদ চলছে, তার মধ্যেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি মন্তব্য করেছিলেন যে তাকে পদচ্যুত করতে একটা ষড়যন্ত্র চলছে দিল্লিতে আর কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসে। ভারতের বিরুদ্ধে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে। নেপালের বিদেশমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে সত্যিই কি নেপালের প্রধামন্ত্রীকে পদচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছিল ভারত? প্রদীপ গ্যায়ালির জবাব ছিল, " আমার মনে হয় ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলোতে ওই সময়ে যে ধরনের খবর প্রচারিত হচ্ছিল, তার দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ওলি। নেপালের পক্ষে খুবই অপমানজনক খবর দেখানো হচ্ছিল নিয়মিত। কোনও দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অথবা সেদেশের সরকারের সামনে যে সঙ্কট চলছিল, তা নিয়ে এধরনের খবর কেন দেখানো হবে!" "অন্য দেশের সংবাদমাধ্যম বা সেখানকার কথিত বুদ্ধিজীবিরা কি নেপালের বিদেশনীতি তৈরি করে দেবেন? তারা ঠিক করবেন নাকি যে নেপাল কোন দেশের সঙ্গে কীরকম সম্পর্ক রাখবে? নেপালের বিদেশনীতি কোনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় দেশ তৈরি করে দেয় না," মন্তব্য প্রদীপ কুমার গ্যায়ালির। ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধে নেপাল-বিরোধী খবর নিয়মিত প্রচার করার জন্য বেশ কয়েকবছর আগে কয়েকটি ভারতীয় চ্যানেল নেপালে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে ভারত থেকে নেপালের কোনও পণ্যবাহী ট্রাক যেতে দেওয়া হচ্ছিল না - পেট্রল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্যের জন্য ভারতের ওপরেই তারা নির্ভরশীল, সেগুলোর সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মি. গ্যায়ালি বলছিলেন, সেটা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দফার সরকারের সময়ে। নেপাল আর ভারতের সম্পর্কে কি দূরত্ব বাড়ছে? কিন্তু একই সঙ্গে নেপালের বিদেশমন্ত্রীর কথায়, "ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের দুটো দিক আছে। একটা দিকে অবকাঠামো উন্নয়নের মতো খাতগুলোতে যখন দুই দেশের মধ্যে খুব ভাল কাজ হচ্ছে, নেপালের ভূমিকম্পের পরেও ভারত খুব সাহায্য করেছিল। আবার পেট্রলিয়াম পাইপলাইনের ব্যাপারেও ভারতের সহযোগিতা পাচ্ছে নেপাল।" "কিন্তু অন্যদিকে বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে জটিলতাও আছে - সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বিবাদ। আর এটাও ভুললে চলবে না মি. মোদীর প্রথম দফায় সরকারে থাকার সময়েই কিন্তু অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল নেপালকে," বলছিলেন প্রদীপ গ্যায়ালি। কিন্তু নেপালের সঙ্গে ভারতের কেন বিবাদ -- দুটি দেশেই তো হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ.. এই প্রশ্নের জবাবে নেপালের বিদেশমন্ত্রী বলেছেন দুই দেশের সম্পর্কটা খুবই গভীর -- সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। কিন্তু সংস্কৃতি আর ধর্ম মেশালে চলবে না - দুটো পৃথক ব্যাপার। তার কথায়, "ধর্মকে দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে যেমন টেনে আনা উচিত নয়, তেমনই অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় বিষয় আনা উচিত নয়। ঘটনাচক্রে নেপাল যখন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান গ্রহন করে ২০১৫ সালে, তার আগেই ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে সেদেশে গিয়েছিলেন ভগত সিং কোশিয়ারি। তিনি নেপালী সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে নেপালের মাওবাদী পার্টির নেতা প্রচান্ডার সঙ্গে কথোপকথোনের সময়ে তিনি নাকি উল্লেখ করেছিলেন যে নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে হয়তো তারা চান না, কিন্তু সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দট সরিয়ে দেওয়া উচিত। ওই প্রশ্ন যখন মি. গ্যায়ালিকে করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেন, যে তার মনে হয় মি. কোশিয়ারি ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছিলেন সেটা। এর আগে, ২০০৬ সালে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংও বলেছিলেন হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে নেপালের যে পরিচিতি, তা টিকিয়ে রাখাই উচিত। | নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী: 'ভারতের বুদ্ধিজীবীরা কি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করে দেবেন?' |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | (বামদিক থেকে ক্লকওয়াইজ) ব্রায়ান জুঙ্কো, টাসোবিয়া এনসুবুগা, ফঅ্রন্সিস সেনকেযি, এস্থার বাথাই, প্রিন্স আর্নল্ড সিম্বোয়া এবং শারিফা এমবাটুডে বেঁচে যান। নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে ফিরে আসা একজন যাত্রী তাশোবিয়া এনসুবুগা সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, "ডিজে (ডিস্ক জকি) আমাদের বিরক্ত করে যাচ্ছিল, বারবার 'নৌকার ভারসাম্য' রক্ষা করতে বলছিল। একটা সুন্দর গান বেজে উঠবে আর তখনই আপনাকে শুনতে হবে 'নৌকার ভারসাম্য রক্ষার করুন'।" ততক্ষণে নৌকার সবকিছু যে ঠিকঠাক নেই সেটা বুঝে গিয়েছিলেন তিনিও। এরপর তাদের নৌকাটি উপকূল থেকে দুশো মিটার দূরে ডুবে যায়। তাশোবিয়া এনসুবুগা তিন সন্তানের মা । তার ভাগ্য ভাল যে তিনি ও তার বোন জীবিত ফিরে আসতে পেরেছেন। কিন্তু এই নৌ-দুর্ঘটনায় হতভাগ্য ৩০ জন নিশ্চিত মৃত্যুর কবলে পড়েছেন। মিজ এনসুবুগা এবং তার বোন এস্থার বাথাই সম্প্রতি বেঁচে যাওয়া আরও চারজনের সাথে রাজধানী কাম্পালায় দেখা করেন। এর হলেন প্রিন্স আর্নল্ড সিম্বোয়া, ব্রায়ান জেজুঙ্কো, শারিফা এমবাটুডে এবং ফ্রান্সিস এসসেনকেযি। উদ্ধার করা এমভি টেম্পলার নৌকা আরও পড়তে পারেন: লিফট দুর্ঘটনা থেকে আতঙ্ক: আসলে কতটা উদ্বেগজনক? বাংলাদেশে যে ভিডিও নাড়া দিয়েছে সবাইকে ইউএস বাংলা: পত্রিকার রিপোর্ট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া পার্টির উত্তেজনা: দারুণ জমে উঠেছিল একটা বিষয়ে এই ছয়জনই একমত আর সেটা হল সেদিন এমভি টেম্পলার-এ তাদের পার্টি দারুণ জমে উঠেছিল। পেশায় মার্কেটিং ম্যানেজার তরুণ মিস্টার জেজুঙ্কো । রাজা বুগুন্ডার রাজার ছোটভাই প্রিন্স ডেভিড ওয়াসাজ্জা ব্যক্তিগতভাবে নিমন্ত্রণ জানালে তাতে সাড়া দিয়ে ওই প্রমোদ ভ্রমণের নৌকায় উঠেছিলেন তিনি। মিস্টার জেজুঙ্কো বলেন, "সেখানে তিনটি গ্রুপের লোকজন ছিল। বুগুন্ডা রাজ্যের লোকজনের একটি গ্রুপ, ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ এবং রাজকীয় পরিবারের একটি দল"। আর মিজ এমবাটুডে একজন তরুণ নারী উদ্যোক্তা। চীন থেকে গহনা এনে বিক্রি করাই তার ব্যবসা। তিনি নৌকাভ্রমণ পছন্দ করেন জেনে এক বন্ধু তাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। ওই নৌকার আরোহীদেরকে বলা হয়েছিল তারা কাম্পালার কেকে বিচ থেকে স্থানীয় সময় এগারোটার দিকে ছেড়ে যাবে, কে পাম বিচের উদ্দেশ্যে ১২ কিলোমিটার যাত্রা করবে এবং তারপর সন্ধ্যে নাগাদ রাজধানীতে ফিরে আসবে। কিন্তু নৌকাটি ছাড়তে দেরি হয়ে এবং মধ্য-দুপুরের দিকে অতিথিরা চিন্তিত হেয় পড়েন সেটি আদৌ রওনা হবে কি-না। এরপর নৌকাটির মালিকের কাছে ফোন করা হয়, জানান মিস্টার জেজুঙ্কো। "আমরা টেম্পলারকে কল করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তিনি জানালেন নৌকাতে অন্য আরেকটি ইঞ্জিন লাগানো হচ্ছে। আধাঘণ্টা সময় লাগবে বলেও তিনি জানান"। প্রমোদতরীতে পার্টি যখন পুরোদমে চলছিল তেমন সময় বোনের সাথে সেলফি পোস্ট করেন টাসোবিয়া এনসুবুগা , তখনো কেউ জানেনা সামনে কী অপেক্ষা করছে। বিনে পয়সায় খাবার ও মদ তবে ছাড়তে দেরি হলেও লোকজনকে দমাতে পারেনি এবং ততক্ষণে কেকে বিচেই পুরো-দমে পার্টি শুরু হয়ে গেছে। হুইস্কিসহ অন্যান্য পানীয় এবং খাবার পরিবেশন চলতে থাকে সম্পূর্ণ বিনে পয়সায়। কেউ কেউ যদিও দেরি থেকে অন্য কোন নৌকা ভাড়ার কথা বলছিলেন কিংবা নিজেরা এই ট্রিপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা-বার্তা বলছিলেন, তবে যখন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর অবশেষে এমভি টেম্পলার যখন ইঞ্জিন চালু করলো তখন সবাই চেঁচিয়ে উল্লাস করতে শুরু করে দিল। মিজ এমবাটুডে বলেন, এটা ছিল রোমাঞ্চকর এক মুহূর্ত। "আমরা খুবই উত্তেজিত ছিলাম। সবাই চেঁচাচ্ছিল-"চলো যাই" "চলো যাই" বলে। তবে কেউ জানতো না সঠিকভাবে যে ঠিক কতজন নৌকায় উঠেছে। মিস্টার এসসেনকেযি যতদূর মনে করতে পারেন, আয়োজকদের একজন ৯০ জনের মত অতিথি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রমোদ-তরীর আরোহীদের পোস্ট করা ছবি এবং ভিডিও দেখে প্রতীয়মান হয় যে, সময় তাদের বেশ ভালই কাটছিল। মিজ এমবাটুডে নৌকার সামনের দিকে বসে ছিলেন আরও অনেক তরুণ অতিথিদের সাথে এবং সেখানে একধরনের "উত্তেজনাকর" পরিবেশ বিরাজ করছিল। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক অতিথিদের সাথে পেছনের দিকে বসে ছিলেন মিজ এনসুবুগা। তিনি বলেন, " আমরা বসেছিলাম, ফুর্তিবাজ লোকজন দেখছিলাম, এবং খাচ্ছিলাম"। বেশ দারুণ পার্টি হচ্ছিল-বলেন মিস্টার এসেনকেযি। এমভি টেম্পলারকে উদ্ধারের পর তীরে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভয়ঙ্কর উন্মত্ত ঢেউ নৌকার ভেতর সঙ্গীত পরিচালনা করছিলেন যিনি সেই ডিজে একটা সময় ফুর্তিবাজদের উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন "নৌকার ভারসাম্য ঠিক রাখুন"। তার এই চিৎকার অনেককে কেবল বিরক্তই করেনি, বরং মিইজকের সাথে সাথে ছন্দময় আবহতে রূপ দিয়েছে। সমস্যা যেটা ছিল তা হল-অনেকেই জানতো না যে আসলে কোথায় দাঁড়ালে ভারসাম্য ঠিক থাকবে। অথবা তারা এতটাই মদ্যপ হয়ে গিয়েছিল যে এই নির্দেশনার দিকে মনোযোগ দেয়ার অবস্থা তাদের ছিলনা। একটা সময় মিজ এনসুবুগা এবং মিজ বাথাই লক্ষ্য করলেন নৌকার ভেতর পানি উঠে তাদের ব্যাগ ভিজে যাচ্ছে। দুইবার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দুজন যুবক মিলে তা সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এরপর মিউজিক বন্ধ হয়ে যায় এবং তারও পর বন্ধ হয়ে যায় বাতি। যদিও তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে কিন্তু তবুও কার মাঝে তেমন ভয়-ভীতির চিহ্ন ছিলনা। এমভি টেম্পলার ছিল বেশ পুরনো এবং ভঙ্গুর ধরনের। এরপর অন্ধকার নেমে আসে। মিজ এমবাটুডে পৌনে আটটার দিকে শেষবারের মত তার ফোনের দিকে তাকান । তখন দুজন পুরুষ নৌকা থেকে পানি সেঁচে বাইরে ফেলছিলেন। তারা তাদের কাজের সুবিধার জন্য তাকে ফোনটি রেখে দিতে বলেন । এরপর নৌকাটি তীরের দিকে জরুরি প্রত্যাবর্তনের জন্য ঘুরে যায়। ডেকের দিকের দরোজা খোলা থাকায় সেসময় নৌকার বেশিরভাগ অংশেই পানি ঢুকে যায় এবং ঢেউগুলো আরও ভয়ঙ্কর ও উন্মত্ত হয়ে ওঠে। 'আমার বগলের তলায় হুইস্কির বোতল' মিজ এমবাটুডে'র মোবাইলে এইসময় একটি ফোন আসে। কিন্তু তিনি তা রিসিভ করলেন না। "যখনই আমি ফোনটি ব্যাগের ভেতর রেখে দিলাম তখনই নৌকাটি পানিতে আছড়ে পড়লো। যখন সেটি উল্টে গেল তখন "বুফ" শব্দ হল। এবং সবাই দেখলো যে, নৌকাটি একদিকে কাত হতে কেবল কয়েক সেকেন্ড সময় নিল। উদ্ধারকাজের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন একজন নারী নৌকা যখন ডুবে যাচ্ছিল, মিজ এনসুবুগা জানান তখন তার মনে মধ্যে কী চলছিল। " একটা বাক্সের মধ্যে ব্র্যান্ড নিউ হুইস্কির বোতল ছিল। আমার চিন্তাটা ছিল এমন যে 'এটা পরে কাজ আসবে'। কেন তিনি এটা করেছিলেন তাও বলেন। " আমি ভেবেছিলাম আমরা নেমে গেলে নৌকটি আবার কাত হয়ে আগের অবস্থানে আসবে । আমরা নেমে যাবো এবং তখন এটি স্থির হবে। তখন আবার আমরা ফিরে আসবো। সে কারণে হুইস্কির বোতল আমি বগলদাবা করে নিলাম"। এবং এরপর আসলেই আমরা নিচের দিকে যেতে লাগলাম। এবং ততক্ষণে বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি আমাকে সম্বিৎ এনে দিল। প্রিন্স আর্নল্ড স্বীকার করেন যে তিনি এতটাই মদ্যপ হয়ে গিয়েছিলেন যে সাঁতার কাটা সম্ভব ছিলনা। নিজের মনতে নিজেই বললেন যে সাতার কাটবেন না তিনি। নৌকার একপাশের কাঠ ধরে ঝুলে থাকলেন তিনি। কিন্তু মাথা তুলে রাখতে পারছিলেন না। কোনক্রমে এক-একবার মাথা তুলে নিশ্বাস নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন তৃতীয়বার যখন মাথা তুললেন, ততক্ষণে লোকজনের চেঁচামেচি কমে যেতে শুরু করেছে অর্থাৎ অনেকেই তখন ডুবে মারা যাচ্ছে। চতুর্থ-বার মাথা তোলার পর তিনি মৃতদেহ ভেসে উঠতে দেখেন। "তখন আমার পায়ের কাছে একজন মানুষের স্পর্শ পাই। আমি ভাবলাম এই মানুষটিকে যদি লাথি দিয়ে সরিয়ে দেই তাহলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না। কিন্তু আমি জানতাম লোকটি মারা যাচ্ছে"। প্রিন্স আর্নল্ড বলেন, "কোন কোন সময় আপনি ততটাই স্বার্থপর। একটা সময় অনুভব করলাম লোকটি নিচে চলে যাচ্ছে, সে সাথে নিয়ে গেছে আমার জুতোজোড়া।" এরপর একজন মাছ ধরার জেলে এসে বাঁচান প্রিন্স আর্নল্ডকে। বেঁচে ফিরে আসা কারও কাছেই লাইফ জ্যাকেট ছিলনা, তবে তারা সবাই সাঁতার কাটতে পেরেছিলেন। মিস্টার জেজুঙ্কো প্রাথমিকভাবে নৌকার ভেতর আটকা পড়েছিলেন। তার বন্ধু আইরিন সেখানে তার সাথে ছিল যে সাঁতার জানতো না। তার পরনে লাইফ জ্যাকেট ছিল। "আমি তার সাথে ছিলাম এবং তাকে নিয়ে আসি।আমরা বেরিয়ে আসি। চারদিকে আতঙ্ক এবং লোকজন চিৎকার করছে। মুসলিম, ক্যাথলিক, 'মাদার মেরি' সব ধর্মের লোকজন- সবাই প্রার্থনা করছিল। এরমাঝে "এরই মাঝে একজন লোক স্বীকার করে বসলেন যে, তার একটি সন্তান আছে যার কথা তার স্ত্রী জানেন না।" দুর্যোগের ওই ঘটনার পর লোকজন ভীড় করে উদ্ধারকাজ দেখছে। উদ্ধারকারী নৌকাও নিমজ্জিত বেঁচে ফিরে আসা এই ছয়জন আরোহী কয়েকজন জেলের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যারা তাদের উদ্ধারে এগিয়ে এসেছিল। তবে জেলেদের যেসব নৌকা উদ্ধারকাজের জন্য এগিয়ে এসেছিল তার একটি মানুষের গাদাগাদিতে ডুবে যায়। এটা দেখে মিস্টার জেজুঙ্কো নিজেই সাঁতার কেটে তীরে যাওয়ার মনস্থির করেন। একজন জেলেও ডুবে যান। তীরের দেক যাবার সময় তিনি দুজন নারীকে দেখেন একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে আটকে আছেন। তিনি তাদের একজনকে সাহায্য করেন উপকূলে পৌঁছাতে কারণ সে তার হাত ধরে রেখেছিল। "অন্য মেয়েটিকে আমরা রেখে গেলাম, সে কাঁদছিল। সে বলতে থাকে 'তোমরা আমাকে ফেলে যাচ্ছো, আমি মারা যাবো'"। সেই মেয়েটি আদৌ বেঁচে ছিল কি-না কারও জানা নেই। নৌকাটি উদ্ধারের পর পুলিশ তাদের উদ্ধার কাজ বন্ধ ঘোষণা করে। তারা জানায়, এই দুর্ঘটনায় ৩২ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে এবং আনুমানিক ৩৭ জন জীবিত আছেন। নিহতদের মধ্যে নৌকার এবং যে রিসোর্টটিতে যাওয়ার কথা ছিল সেই রিসোর্টের মালিক মিস্টার বিসাসে এবং তার স্ত্রী শেইলাহ রয়েছেন। পার্টি নিয়ে স্টিগমা এখনো ২০ থেকে ৬০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে বেঁচে ফিরে আসা অনেকেই এই সংখ্যাটি সঠিক বলে বিশ্বাস করেন না। তাদের সন্দেহ, বেঁচে ফিরে আসা অনেকেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সামনে আসছেন না। প্রমোদ-তরীতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আরোহী তোলা নিয়ে অভিযোগে সয়লাব উগান্ডার বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যম। "বিষয়টি নিয়ে কলঙ্কজনক চেহারা দেয়ায় অনেকেই সামনে আসছেন না বলেই আমার বিশ্বাস" বলেন মিস্টার জেজুঙ্কো। দুর্ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও নৌকাটির মালিক-পক্ষের দুজনই প্রাণ হারানোর ফলে সে রহস্য উদঘাটন আসলে কতটা সম্ভব হবে সে নিয়ে খুব একটা আশা নেই বলে মনে করছেন অনেকেই। | উগান্ডায় প্রমোদতরীতে ভ্রমণ যেভাবে রুপ নিলো ট্রাজেডিতে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | চীনা টিভিতে স্পাই সাবমেরিন ধরা পড়ার খবর "সাগরে জাল ফেলে বিদেশি গুপ্তচর ড্রোন ধরার পর জেলেদের পুরস্কার দিলো চীন" - এই শিরোনামে খবরটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। তবে ব্যাপারটা আসলে অত সরল নয়। এই পুরস্কার যে এক-দুজন জেলে পেয়েছে তা-ও নয়। মোট ১১ জন জেলে -তার মধ্যে একজন আবার নারী - সাগর থেকে সব মিলিয়ে ৭টি 'গুপ্তচর সাবমেরিন ড্রোন' ধরে এই পুরস্কার পেয়েছেন। তা ছাড়া এ ঘটনা খুব নতুনও নয়। ২০১৮ সালে এবং তার আগেও জিয়াংসু প্রদেশের জেলেরা স্পাই সাবমেরিন ড্রোন ধরা পড়েছে। পুরস্কারের অংকটাও কম নয় - ৫ লক্ষ ইউয়ান , যা ৭২,০০০ ডলারের সমান। এগুলো আকারে খুব বেশি বড় নয়। আকাশে যেরকম সামরিক আক্রমণ বা নজরদারির জন্য চালকবিহীন ড্রোন আজকাল ব্যবহৃত হচ্ছে, সমুদ্রের পানিতে ঠিক একইভাবে কাজ করে এসব চালকবিহীন ছোট ছোট স্পাই সাবমেরিন ড্রোন। কিন্তু চীন সাগরে এই ক্ষুদে সাবমেরিনগুলো আসছে কোথা থেকে? এরা কী করে? কেন এগুলো এত মূল্যবান? আর চীনা জেলেরা এত এত স্পাই সাবমেরিন ধরছেই বা কি করে? স্পাই সাবমেরিনগুলো কোন দেশের তা চীন প্রকাশ করে না। তারা শুধু বলে, 'এগুলো অন্য নানা দেশে তৈরি।' স্পাই সাবমেরিন ধরে পুরস্কার পেয়েছেন এরা বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: মাত্র চার দশক আগে যেমন ছিল চীন চীন আর আমেরিকার মধ্যে কি যুদ্ধ বেধে যাবে? থামার আগে যে ক্ষতি করেছে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের উপকুল ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর অন্য দিকে আছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান। এখানে প্রবল উপস্থিতি রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ আলেক্সান্ডার নিল বলেন, এই জায়গাটায় সবসময়ই শক্তিধর দেশগুলো প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তার কথা, সম্ভবত এসব ড্রোন সাবমেরিনগুলো আসে মার্কিন নৌবাহিনী, জাপানের আত্মরক্ষামূলক বাহিনী অথবা তাইওয়ান থেকে। কিন্তু এগুলো দিয়ে কি ধরণের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে আমেরিকান, জাপানি বা তাইওয়ানিরা? ২০০৯ সালে মার্কিন নৌবাহিনী একটি গবেষণা চালিয়েছিল ইউইউভি বা আনম্যানড আন্ডারসি ভেহিকলস নিয়ে। তারা বলেছে - এগুলো ব্যবহৃত হতে পারে শত্রুপক্ষের সাবমেরিনের গতিবিধির খবর পেতে, পানির নিচে বিশেষত: অন্য দেশের সমুদ্রসীমার ভেতরে কোন বোমা পাতা আছে কিনা তা জানতে, নজরদারির যন্ত্রপাতি মোতায়েন করতে, বা সাগরের নিচে ক্যাবলের মতো যেসব অবকাঠামো আছে তার তত্বাবধান করতে। এতে বলা হয়, সাগরের নিচে এরকম শত শত স্পাই ড্রোন সাবমেরিন মোতায়েন আছে। এগুলো কয়েক মাস ধরে কার্যকর রাখা যায়, এবং এর খরচও খুব বেশি নয়, তাই এগুলো দু-চারটা ধরা পড়লে কিছু আসে যায়না। এ থেকেই বোঝা যায় কেন চীনা জেলেদের জালে এসব সামমেরিন ড্রোন ধরা পড়ছে। চীনের নিজস্ব ড্রোন সাবমেরিন চীনা জেলেদের সংখ্যা বিপুল, তা ছাড়া কিছু জেলে সামরিক বাহিনীর হয়েও কাজ করে। চীনের জাতীয় মিলিশিয়ার একটি অংশ হচ্ছে এই মেরিটাইম মিলিশিয়া। মি. নিল বলছেন, তার মানে হলো যাদের হাতে এসব স্পাই সাবমেরিন ধরা পড়ছে তারা আসলে জেলের ছদ্মবেশে চীনা মিলিশিয়া। তাদের মাছধরার ট্রলারগুলো অন্যরকম, এগুলো কাঠের তৈরি নয়, বরং ইস্পাতের তৈরি। তাদের সিগনালিং ক্ষমতা আছে, চীনা নৌবাহিনী সাথে তাদের যোগাযোগ আছে। সাগরে তাদের আসল কাজই হলো নজরদারি, এবং তাদের একটা কাজ হয়তো এসব স্পাই সাবমেরিন ধরা। শুধু তারা যে শত্রুপক্ষের ড্রোন সাবমেরিন ধরে তাই নয়, চীনের নিজস্ব ড্রোন সাবমেরিনও আছে। ইন্দোনেশিয়ায় ধরা পড়া চীনা ড্রোন সাবমেরিন চীনের সামরিক প্যারেডেও এরকম ড্রোন দেখা গেছে। এগুলো দিয়ে ছোট ড্রোন সাবমেরিন বহন ও মোতায়েন করা যায়। প্রায় পাঁচ মাস আগে ইন্দোনেশিয়র জেলেদের জালে চীনা অক্ষর লেখা একটি সামুদ্রিক ড্রোন আটকা পড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীন এগুলো দিয়ে সাগরের নিচে আরেকটা 'মহাপ্রাচীর' গড়ে তুলছে। আরো খবর: ভারতে দোকানদাররা ও জেফ বেজোস যখন মুখোমুখি 'ক্রসফায়ার' বিতর্ক: এমপিদের বক্তব্যে দ্বিমত কাদেরের ইরানের বিরোধী দলগুলো কতটা শক্তিশালী? পিতার সহায়তায় কিশোরীকে বছর ধরে ধারাবাহিক ধর্ষণ | চীনা জেলেরা সাগর থেকে এত স্পাই সাবমেরিন ধরছে কেন? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | অনুশীলনের মাঠে কোচ টিটে আয়োজক দেশ ব্রাজিল ৭-১ গোলে হেরেছে জার্মানির কাছে। কী হবে এখন? "ব্রাজিল কি এবার তাদের ফুটবলের আগা-পাছ-তলা পরিবর্তন করবে?" মার্ক চ্যাপম্যান জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমার জবাব ছিল- "আমি তাই মনে করি।" কিন্তু সেইসাথে আমার আশঙ্কা ছিল ১০ দিন পর শোকের ধাক্কা কাটলে, যা ছিল তাই-ই থেকে যাবে। এবং বাস্তবে আমার সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছিল। আবারো ডুঙ্গার হাতে ব্রাজিল বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপরই সাবেক মিডফিল্ডার ডুঙ্গাকে নতুন করে কোচ হিসাবে নিয়োগ করা হলো। ২০০৬ সালে থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রাজিল দলের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে, তার আর একটি মাত্র অভিজ্ঞতা ছিল -ব্রাজিলের ক্লাব ইন্টারন্যাসিওনালের কয়েকমাসের কোচের দায়িত্ব। কিন্তু সেখানে তার সাফল্য কিছু ছিলনা। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ডুঙ্গার প্রধান বুলি ছিল - 'কীভাবে শিখতে হয়, আমি তা শিখেছি।' খোল-নলচে পাল্টে ফেলার মত সংস্কারক ছিলেন না ডুঙ্গা। তার নিয়োগ ছিল অনেকটা বাস্তবতাকে অস্বীকার করার সামিল। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ভাবটা ছিল এমন - আমাদের যদি ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়, তাহলে আমরা ডুঙ্গার পেছনেই থাকবো। ডুঙ্গারও ভাবটা ছিল যে সমস্ত বিশ্ব তার পেছনে লেগেছে এবং সেও ছেড়ে কথা বলবে না, আগুনের জবাব আগুন দিয়েই দেবে। দু বছর পর যখন ২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের এক-তৃতীয়াংশ শেষ, ব্রাজিল তখন ছয় নম্বরে অর্থাৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে তাদের যাওয়া হবেনা। ভয় ঢুকলো যে প্রতিটি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার রেকর্ড থেকে ছিটকে পড়তে পারে ব্রাজিল। চাপে পড়ে গেলেন ডুঙ্গা। তার ভরসা ছিল রিও অলিম্পিকস। যদি তিনি সেখানে দলকে সোনা জেতাতে পারেন, তাহলে হয়ত তার অবস্থান কিছুটা শক্ত হবে, কিছুটা সময় তিনি পাবেন। হয়তো বা সেটা হতো। কিন্তু অলিম্পিকের ঠিক আগে কোপা আমেরিকার শততম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এই টুর্নামেন্টের একটি বাড়তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে । ডুঙ্গার ব্রাজিল সেখানে একুয়েডরের সাথে ড্র করে এবং পেরুর কাছে হারে গ্রুপ পর্যায় থেকে ছিটকে যায়। সেই সাথে কোপ পড়ে ডুঙ্গার ওপর। তার জায়গায় কোচ হিসাবে আসেন করিন্থিয়ানস্ ক্লাবের কোচ টিটে। ২০১৪ সালেও তিনিই ছিলেন ফেভারিট। দেরিতে হলেও তিনি চাকরিটা পেলেন। তারপর সবকিছুই ইতিহাস। দলে কিছু অদল-বদল করা হলো। চীনা লীগ থেকে পলিনিওকে ডেকে আনা হলো। সমালোচনা হলেও, পরে সিদ্ধান্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে দুর্বলতা কাটাতে তরুণ গ্যাব্রিয়েল জেজুজকে নিয়ে ঝুঁকি নিলেন টিটে। সাথে সাথেই ফল পেলেন। মাত্র দু-তিনটি পরিবর্তন এনেই টিটে ভালো ফল পেতে শুরু করলেন। বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই না করার যে হুমকি তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেল। টিটে'র ব্রাজিল ১০টি ম্যাচ জিতলো, দুটো ড্র করলো, ৩০টি গোল দিল, গোল খেল মাত্র তিনটি। তারপর ইউরোপিয়ান বিভিন্ন দলের সাথে প্রীতি ম্যাচ গুলোতেও সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রইল। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার ডাভিড লুইজ। তাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন থিয়াগো সিলভা। কীভাবে পারলেন টিটে? স্বভাবতই প্রশ্ন উঠলো- কীভাবে একজন ব্যক্তি এই পার্থক্য তৈরি করতে পারলেন? দুটো উত্তর - টিটের সন্দেহাতীত যোগ্যতা ছাড়াও তার পূর্বসূরি কয়েকজনের দুর্বলতা এবং সেইসাথে ব্রাজিলের ফুটবলের দুর্দশার শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকা। ব্রাজিলের ফুটবল অকস্মাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ তকমা নিয়ে জন্ম নেয়নি। একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই সুনাম এবং খ্যাতি অর্জিত হয়েছিল। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭০ এর মধ্যে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে তাদের যে প্রস্তুতি এবং কৌশল ছিল, তা অন্যদের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিল। ১৯৫৮ সালেই ব্রাজিল দলে বিরাট সংখ্যায় সাপোর্ট-স্টাফ ছিল - ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, ফিজিও, এমনকি ক্রীড়া বিষয়ক একজন মনোবিজ্ঞানী। ব্রাজিলের অন্যতম কিংবদন্তি মারিও জাগালোকে - যিনি ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালের দলে খেলোয়াড় ছিলেন এবং পরে ১৯৭০ এ ব্রাজিলের কোচ ছিলেন - যখন আমি বলেছিলাম যে ১৯৬২ সালে চিলির বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড একজন ডাক্তার ছাড়াই গিয়েছিল, শুনে চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল তার। এছাড়া, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা এবং হাঙ্গেরি থেকে আসা কোচদের ধ্যান-ধারণা নিজেদের কৌশলের সাথে যোগ করে নতুন এক ফুটবল স্টাইল তৈরি করেছিল ব্রাজিল। চারজনের রক্ষণভাগের সূচনা করেছিল তারা। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিল যখন রক্ষণভাগের নতুন সেই স্টাইল প্রবর্তন করলো, সেমিফাইনালের আগে তারা কোনো গোলই খায়নি। ১৯৭০ সালে এসে আরেক ধাপ এগিয়ে ব্রাজিল ফুটবলে প্রথমবারের মতো ৪-২-৩-১ পদ্ধতি চালু করেছিল। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে অসামান্য সাফল্যে ব্রাজিলের ফুটবলে আলস্য এবং অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস জেঁকে বসে। ব্রাজিলিয়ানরা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে ফুটবলে মেধা তাদের মজ্জাগত, চেষ্টার তেমন প্রয়োজন নেই। ফলে, ফুটবলের যখন দ্রুত প্রসার হয়েছে , ব্রাজিল ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ স্তরে কোচ হিসাবে খুব কম ব্রাজিলিয়ানই এসেছে। যারা এসেছেন, তেমন সাফল্য তারা পাননি। পেপ গার্দিওলা যখন এক দশক আগে ফুটবলের স্টাইলে বিপ্লব ঘটান, ব্রাজিল সেই ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়ে। ব্রাজিলের ফুটবলে অনেকেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে শারীরিক শক্তির ক্রমবর্ধমান প্রয়োগের কারণে পজেশন-ফুটবল সম্ভব নয়, একমাত্র উপায় হচ্ছে উইং দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে কাউন্টার-অ্যাটাক। কিন্তু ধ্যান-ধারনায় ব্রাজিল যে কতটা পেছনে পড়ে গিয়েছিল, তার প্রমাণ হয়ে যায় যখন ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে গার্দিওলার পাসিং সূত্র প্রয়োগ করে জার্মানি তাদেরকে সাত গোল দেয়। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অধিনায়ক ছিলেন ডুঙ্গা টিটে- ইউরোপ থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে ব্রাজিলের যে ব্যর্থতা, টিটে তার ব্যতিক্রম। তার সিভি বা বায়োডাটা দেখলে অবশ্য প্রথমে ব্যতিক্রমী তেমন কিছু চোখে পড়বে না। একটা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে কোচিং করিয়েছেন তিনি, অনেক জায়গা থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কখনই ইউরোপে কাজ করেননি। তার যুক্তি ছিল এই বয়সে দ্বিতীয় একটি ভাষা শেখা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু যোগাযোগ এবং বোঝাপড়ার অসামান্য দক্ষতা রয়েছে টিটের। সেই সাথে রয়েছে একটি তীক্ষ্ণ অনুসন্ধিৎসু মন। তার মন্ত্র - "কীভাবে শিখতে হয়, আমি তা শিখেছি।" এই শতকের গোঁড়ায় তিনি যখন নজর কাড়তে শুরু করেন, টিটের পছন্দ ছিল ৩-৫-২ ঘরানার ফুটবল। পরে, ইন্টারন্যাসিওনাল ক্লাবে আর্জেন্টাইন মিড-ফিল্ডার অন্দ্রেস আলেহান্দ্রোর সাথে কাজ করে ইউরোপীয় ফুটবল সম্পর্কে বিস্তর ধারণা পান তিনি। ইংলিশ ক্লাব পোর্টসমথে খেলার সুবাদে অলেহান্দ্রোই প্রথম টিটেকে ইউরোপিয়ান ৪-৪-২ ফুটবল বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারপর ইউরোপে এসে দীর্ঘদিন ধরে দিনের পর দিন তিনি প্রথম সারীর ক্লাবে কিছু ক্লাবের খেলা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ইউরোপ থেকে পাওয়া জ্ঞান তিনি প্রয়োগ করেন করিন্থিয়ানস্ ক্লাবে। সাথে সাথেই ফল পান। ইউরোপীয় কায়দার আঁটসাঁট রক্ষণভাগের কল্যাণে ২০১১-১২ সালে ব্রাজিলিয়ান লীগ এবং দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব শিরোপা জেতে করিন্থিয়ানস্। এরপর ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনালে তারা হারায় ইংলিশ ক্লাব চেলসিকে। এরপর ইউরোপীয় শীর্ষ ক্লাবগুলোকে আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন টিটে। করিন্থিয়ানস্ ২০১৫ সালে আবারো ব্রাজিল লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়। করিন্থিয়ানসের পর ইউরোপের শিক্ষা টিটে এখন প্রয়োগ করছেন ব্রাজিল জাতীয় দলে। ২০১৬ সালে নভেম্বরে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ তে হারানোর পর আর্জেন্টাইন কোচ সেজার লুইজ মেনোট্টি ভূয়সী প্রশংসা করেন টিটের। "তিনি (টিটে) রক্ষণভাগকে ২০ মিটার সামনে নিয়ে গেছেন, ফলে পুরো টিম একসাথে খেলতে পারছে...এ যেন ১৯৭০ এর ব্রাজিল।" ব্রাজিলের হয়ে ৫৩টি গোল করেছেন নেইমার টিটে কি নেইমারের শ্রেষ্ঠটা আদায় করতে পারবেন? ব্রাজিলে টিভি বিজ্ঞাপনে এখন হরদম টিটেকে দেখা যায়। যেখানে ডুঙ্গার ভাবমূর্তি ছিল একজন যোদ্ধার, টিটেকে দেখানো হয় একজন ধীর-স্থির জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব হিসাবে যিনি চোখে চোখ রেখে কথা বলেন। একজন সমালোচক তাকে সাপুড়ের সাথে তুলনা করেছেন। সত্যিই টিটে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার ম্যাচগুলোর টিভি রেটিং খুবই উঁচুতে ছিল। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটে পর্যুদস্ত ব্রাজিলে এখন জাতীয় ফুটবল দল আশার একমাত্র আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই টিটে যদি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতেন, চোখ বুজে পার হয়ে যেতেন। অবশ্য এ নিয়ে রসিকতা করতেও রাজী নন তিনি। না চাইতেই, ব্রাজিলে টিটের এখন নেইমারের মতই তারকা-খ্যাতি। তবে আগামী সপ্তাহগুলোতে এই দুজনের সম্পর্ক কেমন থাকবে, অনেক কিছুই নির্ভর করছে তার ওপর। অবশ্য ২০১৪ সালের মতো বর্তমানের ব্রাজিল দলটি নেইমার নির্ভর নয়। এই দলে এখন বোঝাপড়া চোখে পড়ার মতো। নেইমার যখন জখমের চিকিৎসা করছিলেন, সে সময় তাকে ছাড়াই দল প্রীতি ম্যাচে জার্মানি এবং রাশিয়াকে তাদের মাঠেই হারিয়েছে। সন্দেহ নেই নেইমারের প্রতিভা দলের জন্য বিরাট শক্তি। কিন্তু এর দুটো সম্ভাব্য সমস্যাও রয়েছে। এক, নিজের ব্যক্তিগত খ্যাতির জন্য নেইমার সচেষ্ট হতে পারে যেটা দলের স্বার্থের পক্ষে নাও যেতে পারে, যেটা চোখে পড়েছে নভেম্বরে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডের সাথে একটি প্রীতি ম্যাচে। অন্য সমস্যাটি হলো- চাপের মুখে নেইমার মাঠে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা। নেইমারকে নিয়ে এই দুটো সম্ভাব্য সমস্যার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে টিটেকে। এছাড়া, নেইমারের মধ্যে ফাউলে জড়ানোর প্রবণতা রয়েছে। কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ১৪টি ম্যাচে ছয়টি হলুদ কার্ড পেয়েছে সে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে একইরকম ঘটলে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচ মিস করার ঝুঁকি থাকবে। ব্রাজিল চায় নেইমার টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচ যেন খেলতে পারে। তাহলেই ষষ্ঠবারের মতো এবং ৬০ বছরের মধ্যে প্রথমবার ইউরোপে তাদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। | বিশ্বকাপ ২০১৮: কীভাবে কোচ টিটে ব্রাজিলকে আধুনিক যুগে নিয়ে এলেন |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ওলগ গোলডেটস ২০১৭ সালে বলেছিলেন যে, এখানে পুরুষের চাইতে নারীর শিক্ষা হার বেশি। উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি রয়েছে ৩৭ শতাংশ নারীর। অন্যদিকে পুরুষ ২৯ শতাংশ । তারপরও উচ্চ বিদ্যালয়ে ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে নারীর হার বেশি থাকলেও চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। এমনকি নারীর উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি পুরুষের তুলনায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও নারীর মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। নারীর মজুরি পুরুষের গড় বেতন ৭৩ শতাংশ । রাশিয়ায় বিপ্লবের আগে ধনী নারীদের কাছে সীমিত শিক্ষার সুযোগ ছিল। আর গ্রামে কৃষক নারীদের বেশির ভাগ শিক্ষিত ছিলেন না। গ্রামে নারীদের জীবন আরো কঠিন ছিল। তাদের জীবন প্রচুর শ্রমে ভরা । শিক্ষায় এগিয়ে: রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের রাজধানী গ্রজনিতে পরীক্ষা চলছে। গ্রামে কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীদের মূল্য দেয়া হয় কে কতটা ভাল কাজ করতে পারে, তার উপর । রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া , উলের পোশাক তৈরি করা, পরিবারের জন্য ঘরদোর পরিষ্কার তো আছেই। বাইরে স্বামীর সাথে আগাছা কাটা, জল সংগ্রহ করা, ফসল রোপণের সময় এবং ফসল সংগ্রহ ও প্রস্তুত করায় নারীদের অগ্রাধিকার ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণা রাশিয়ান মেয়েদের বর্তমান বিয়ের বয়স ১৮ থেকে শুরু। কিন্তু আঠারো শতকের প্রথম দিকে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ১২ । পরিবারের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করা ছিল অসম্ভব । বিধবা বা অবিবাহিত নারীদের বিয়ে করার আগে গ্রামে সমাবেশ করে অনুমতি নিতে হতো। সমাজ দৃঢ়ভাবে পিতৃতান্ত্রিক ছিল এবং সকল পটভূমিতেই নারীদের ১৯১৭ সাল পর্যন্ত ভোট দেয়া বা পাবলিক অফিসে রাখার অনুমতি ছিল না। অথচ অবাক হবার মতো ঘটনা হলো ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে জানা যায় রাশিয়ায় ৪১ শতাংশ নারী বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিয়োজিত। বৈজ্ঞানিক গবেষণা: উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন নারী বৈজ্ঞানিক তবে আপনি জানলে অবাক হবেন যে, রাশিয়ার মত উন্নত দেশে নারী যেখানে বাস চালানো থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিয়োজিত, সেখানে উইমেনহুড অর্থাৎ নারীত্ব বিষয়ে বিদ্যালয় আছে, যেখানে একজন নারীকে পারফেক্ট গৃহবধূ হতে শেখানো হয়। মস্কোতে 'উইমেন ইনসাইড' নামে একটি স্কুল আছে সেখানে নারীদের তাদের স্বামীদের কাছে সুন্দর থাকা, সুন্দর ব্যবহার করা এবং গৃহকর্মের নানারকম কোর্স করানো হয়। এইসব স্কুলগুলো বিশ্বাস করে, পুরুষরা সমাজের সুরক্ষক আর নারী তত্ত্বাবধায়ক। তারা নারীদের এমন ভাবে শিক্ষা দেন এবং মনে করেন সবচেয়ে সফল যুবতী তারাই যারা পুরুষদের স্বপ্ন সার্থক করতে পারে। সে যাই হোক, রাশিয়া এখনো খুব রক্ষণশীল সমাজ। নারী-পুরুষের যদিও আর্থিক ভাবে সমান অধিকার আছে তবু সেখানে স্পষ্টভাবে কিছু রোলস রয়েছে যা পুরুষদের থেকে নারীকে অবদমিতই করে রাখছে। রাশিয়ার কর্মরত জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ নারী। রাশিয়াতে কর্মরত জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ নারী। সোভিয়েত আমলের মতোই বেশিরভাগ নারী শ্রমিক চিকিৎসা, শিক্ষা, কেরানি কাজের মত স্বল্প মজুরির কাজে আটকা পড়ে আছেন। পার্থক্য হলো সোভিয়েত যুগের ডে কেয়ার শিশু ভাতা এখনো আছে তবে কেবল নামমাত্র, এগুলা মোটেই যথেষ্ট নয়। চাকুরিক্ষেত্রে পেনশনের বয়স নারীদের জন্য পঞ্চান্ন। তবে পেনশন খুব কম যার ফলে বৃদ্ধ মহিলারা এখনও বৈরি আবহাওয়াতেও কাজ করে খান। মাইনাস ১০/১৫ তে শীতের সন্ধ্যাবেলা কত বৃদ্ধাকে দেখেছি মেট্রোর সামনে লিফলেট বিলি করতে, অনেক বাবুশকা সাত সকালে নিজের বাগানের সবজি, এক ঝুড়ি ফল, মাটি লাগানো আলু বা বিট নিয়ে বসে থাকে বিক্রির উদ্দেশ্য। আবার কেউ কেউ পরম যত্নে নিজের হাতে বোনা উলের জামা, মোজা, মাফলার নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে আসে বিক্রি করতে। শীতের দেশে জীবন আসলেই কষ্টের। মাঝে মাঝে মনে হয় এর চেয়ে আমাদের দেশে নানী-দাদীরাই ভালো আছেন। হামান দিস্তায় পান ছেঁচে আয়েশ করে মুখে পুরে নাতি নাতনীদের রাক্ষস-খোক্কসের গল্প শোনায়। প্রখ্যাত রুশ নারী: ভ্যালেন্তিনা তেরেষ্কোভা (সবুজ জামা) বিশ্বের প্র্রথম নারী নভোচর ছিলেন। সবখানেই নানী-দাদীদের এই আদর আছে নাতি নাতনির জন্য। এখানে রুশ মেয়েরা খুব দ্রুত বিয়ে করে বাচ্চা নিয়ে নেয় । আর বাচ্চা নেয়ার জন্য অন্যরকম আগ্রহ কাজ করে এদের। ভারভারা আর তাতানিয়া আঠারো বছর পার হবার পর পরই পরিবার থেকে বিয়ের চাপ দেয়া হয়। ভারভারা আমাদের রুশ ভাষার টিচার। ওর বয়স বাইশ। কিন্তু তার মা বাবা তাকে নিয়ে চিন্তিত -কবে বিয়ে করবে, কবে তারা নাতি নাতনীর মুখ দেখবে। আর তাতানিয়া আমার ক্লাসমেট যার 'এইম ইন লাইফ' হচ্ছে অনেক বাচ্চার মা হওয়া। মা হতে পারাটা তাদের জন্য আনন্দের। এখানে তাই অনেক কম বয়সেই মেয়েরা তিন চার বাচ্চার মা হয়ে যায়। আর তাই 'বাবুশকা'দের বয়সও তুলনামূলক কম। বলা হয়ে থাকে রাশিয়ান নারীরা ত্রিশ বছরের আগ পর্যন্ত সুন্দরী থাকে, ত্রিশে বুড়ি। ত্রিশের পর তারা বাবুশকা (দিদিমা)তে পরিণত হন। এদেশে বাবুশকা একটি পরিবারে ভাইটাল রোল প্লে করেন। বাবুশকা একটি পরিবারের জীবনীশক্তি। পরিবারকে একত্রে রাখা, প্রত্যেক সদস্যের আরাম আয়েশ নিশ্চিত করা, সংসারের তত্ত্বাবধান করা, সদস্যদের সমস্যা সমাধান করা, সর্বক্ষেত্রে বটবৃক্ষের মতো আগলে রাখেন বাবুশকা। জেলি, জুস, কাশা, বিন্নি ,তর্ত, নানারকম ট্র্যাডিশনাল খাবার বানানো , নাতি নাতনীদের পার্কে ঘুরতে নেয়া ,পোষা বিড়াল কুকুরের যত্ন নেয়া সমস্ত কাজ এই বাবুশকারা করেন। পরিবারের কেন্দ্রবিন্দুই হচ্ছেন বাবুশকা। বৃদ্ধ বয়সেও পরিশ্রম: মস্কোতে একজন 'বাবুশকা' ফল-সবজি বিক্রি করছেন। এখানকার পার্কগুলোতে খুব কমন দৃশ্য বাবুশকা, মা আর সাথে নানা সাইজের ছানাপোনা সহ প্যারামবুলেটরে ছোট্ট সদস্যটিকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাঝেসাঝে বাবা আর দেদুশকাদের (দাদা)ও দেখতে পাওয়া যায়। রুশ পুরুষদের কেয়ারিং এবং ভালোবাসা দেখে বোঝার উপায় নেই রাশিয়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এদেশে বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী তাদের নামের সারনেইম শেয়ার করতে পারেন। তবে শুধু স্বামীর নামই নয়, স্ত্রীর সারনেইমও স্বামী চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। আর পরিবারের ক্ষেত্রে রাশিয়াতে প্রত্যেক শিশুর একটি করে নাম দেয়া হয় - ডাক নাম আর ফেমিলিয়া অর্থাৎ ফ্যামিলি টাইটেল। যা তার বাবার নাম থেকে প্রাপ্ত। পুরুষতান্ত্রিকতার গ্যাঁড়াকল মেয়েদের ক্ষেত্রে নামের শেষে 'আভোনা' 'ইভোনা' (ডটার অব) আর ছেলেদের ক্ষেত্রে 'ভিচ'(সন অব) যোগ হয়। যেমন, মাশা, তার বাবার নাম ইভান পুশকিন। তাহলে মাশার নাম হবে 'মাশা ইভানাভোনা পুশকিনা'(ইভান পুশকিনের কন্যা মাশা) মাশার ভাইয়ের নাম আরতম; সাথে ফ্যামিলি নেইম যুক্ত হবে আরতম ইভানোভিচ পুশকিন(ইভান পুশকিনের পুত্র আরতম)। অফিসিয়ালি রুশরা তাদের ডাক নামের চেয়ে ফ্যামিলিয়াকে বেশি প্রাধান্য দেয়। রুশ নারী অগ্রসর এবং স্বাধীন হলেও এখনো রক্ষণশীলতার বেড়াজালে আবদ্ধ। রাশিয়ান নারীরা নিজেদের গর্বিত মনে করে সম্পদ ও পরিশ্রমের জন্য। এদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার খুব বেশি । নারীদের স্বাধীনভাবে চলা আর স্বনির্ভরতার কারণে বিচ্ছেদ বেশি। বেশিরভাগ বিচ্ছেদ নারীদের দ্বারাই হয়। আর কিছু সংখ্যক পুরুষ নিজ থেকে বিচ্ছেদ নেয় কারণ তারা বেশি যোগ্য নারীদের সাথে বসবাস করায় পেরে উঠে না। তবে রাশিয়ান সিঙ্গেল মায়েদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। যারা তাদের সন্তানদের জন্য বাবার কাছ থেকে কোন সহায়তা পান না তারা সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা পান। আর ঘরে বাইরে নারীরাই সব কাজ করেন। পুরুষরা মাতাল হয়ে পড়ে থাকা আর বউকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া আসলেই তেমন কোন কাজ করে না। অথচ তবুও অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণে এদেশের নারী স্বনির্ভর হয়েও পুরুষতান্ত্রিকতার গ্যাঁড়াকলে। | রাশিয়ায় নারীরা সংখ্যায় বেশি, শিক্ষায় এগিয়ে, তারপরও কেন তারা বৈষম্যের শিকার? |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | ২০০১ সালের চিনি খাওয়ার হার ১২৩.৪ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ১৭২.৪ মিলিয়ন টনে। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ শীর্ষক ঐ গবেষণাটির ২০১৯ সালের সংস্করণ এ বছরের শুরুর দিকে প্রকাশ করা হয়। ওই নিবন্ধে উৎসাহ দেয়া হয় যে, 'ইসরায়েলিদের মতো খাও।' কিন্তু কেউ যদি সেটা করতে যায়, তাহলে তাকে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকদের চেয়ে খাবারে বেশি চিনি খেতে হবে। 'ভয়াবহ ব্যাপার' ২০১৮ সালে একেকজন ইসরায়েলি গড়ে ৬০কেজি করে চিনি খেয়েছেন, প্রতিদিনের হিসাবে যার পরিমাণ ১৬৫ গ্রাম। আন্তর্জাতিক চিনি সংস্থার (আইএসও) হিসাবে, এটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরো পড়ুন: 'চিনির কোমল পানীয় ডেকে আনতে পারে অকাল মৃত্যু' চিনিযুক্ত পানীয় কি ক্যান্সারের কারণ? শিশুদের জন্য কি ‘মিষ্টি’ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে? চিনি খাওয়াকে এখন ধূমপানের মতো করেই দেখতে হবে সুফগানিয়োট নামের এই খাবারটি ইসরায়েলিদের অত্যন্ত প্রিয়, যেখানে চিনির আস্তরন দেয়া থাকে ''ইসরায়েলে গড়ে একেকজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন চা চামচের আকারের ৩০ চামচের বেশি চিনি খেয়ে থাকে-যা আসলে ভয়াবহ একটা ব্যাপার'', বলছেন অধ্যাপক ইতামার রায, ইসরায়েলের ডায়াবেটিক জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান এবং এই রোগের ব্যাপারে একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চিনি খাওয়া দেশের তালিকার শীর্ষ পাঁচের মধ্যে আরো আছে মালয়েশিয়া, বার্বাডোস, ফিজি এবং ব্রাজিল। আর সবচেয়ে কম চিনি গ্রহণকারী দেশের মধ্যে আছে উত্তর কারিয়া, যে দেশে প্রত্যেক নাগরিকের গত চিনি খাওয়ার হার ২০১৮ সালে ছিল ৩.৫ কেজি। কিন্তু তাদের তুলনায় প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিকরা বছরে গড়ে চিনি খেয়েছেন ৩০.৬ কেজি করে। যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সংক্রান্ত রোগের অনেক সমস্যা থাকার পরেও, দেশটির নাগরিকরা গড়ে ৩১.১ কেজি করে চিনি খেয়েছেন। তবে এই পরিমাণ চিনি খাওয়ার পরই শীর্ষ বিশটি দেশের নীচেই রয়েছে তারা। মোট পরিমাণের হিসাবে বেশি চিনি ব্যবহার করেছে ভারত। ২০১৮ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৫.৩৯ মিলিয়ন মেট্রিকটন- যা পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহার করা চিনির চেয়েও বেশি। 'বেশি চিনি খাওয়ার কারণ' চিনি ব্যবহারের এই পরিসংখ্যান এটা বলছে না যে, মানুষজন শুধুমাত্র খাবার বা পানীয়তে চিনি খাচ্ছে। অনেক খাবারের ভেতরে উচুঁ মাত্রার চিনি মেশানো থাকে এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষায় বলা 'ফ্রি সুগার'-যা বিভিন্ন খাবার প্রস্তুতের সময় চিনি যোগ করা হয় অথবা ফলের জুসের মতো যেসব খাবারের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই উচ্চ মাত্রার চিনি যুক্ত থাকে। আইএসও-র তথ্য অনুযায়ী, এসব কিছু যোগ করলে ২০০১ সালের চিনি খাওয়ার হার ১২৩.৪ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ১৭২.৪ মিলিয়ন টনে। যার মানে হলো, বিশ্বে গড়ে জনপ্রতি ২২.৬ কেজি করে চিনি খাওয়া হচ্ছে। ব্যাপকহারে চিনির ব্যবহার কিন্তু কেন আমরা বেশি পরিমাণে চিনি খাচ্ছি? এর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে যে, চিনির দাম বরাবরই কম এবং আমাদের শরীরের শক্তির অন্যতম সহজলভ্য উৎস এটি। জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, ভারতে মানুষের খাওয়া খাদ্যের মধ্যে চিনি একটি অপরিহার্য উপাদান এবং গরীব মানুষের শক্তি সঞ্চয়ের সবচেয়ে সস্তা উৎস। আরো পড়তে পারেন: পরিকল্পনা নিয়ে চুপচাপ মুমিনুল, কোহলি আত্মবিশ্বাসী আবরার হত্যার বিচার হবে দ্রুতবিচার ট্রাইবুনালে ওয়াজ মাহফিলের বয়ান নিয়ে নীতিমালা নেই গত কয়েক দশক জুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে, যার মধ্যে চিনি মেশানো থাকে দেশটিতে চিনি খাওয়ার হার সাম্প্রতিক দশকগুলোতে রাতারাতি বেড়ে গেছে। ষাটের দশকের শুরু থেকে নব্বুই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চিনির ব্যবহারের পরিমাণ বছরে ২.৬ মিলিয়ন টন থেকে ১৩ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ দশক জুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমাদের খাদ্যের মধ্যেই চিনি যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে চিনি-এটি খাবারের ঘ্রাণ বাড়ানো অথবা বেশিদিন টিকিয়ে রাখার কাজে সহায়তা করে। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, আমাদের অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে বিশ্বে স্থূলতার সমস্যাও মহামারি আকারে বেড়ে যাচ্ছে। কম চিনি খাওয়ার হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চিনি খাওয়ার নির্ধারিত মাত্রা কমিয়ে দেয়। সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুর প্রতিদিন যতটুকু শক্তি সঞ্চয়ী খাবার গ্রহণ করেন, সেখানে চিনির পরিমাণ ১০ শতাংশের কম হওয়া উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো, প্রতিদিন ৫০গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয় সংস্থাটি বলছে, এই পরিমাণ যদি পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা যায়- প্রতিদিন গড়ে ৬ চা চামচ বা ২৫ গ্রাম পরিমাণ - তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য বাড়তি অনেক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ভিক্টোরিয়া টেইলর বলছেন, ''এটা পরিষ্কার যে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো চিনি খাওয়ার হার কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছে। তবে এখনো সব বয়সের এবং সব আয়ের মানুষের মধ্যে চিনি খাওয়ার হার অনেক বেশি।'' করারোপ এসব কারণে বেশ কয়েকটি দেশ শুধুমাত্র চিকিৎসা পরামর্শের বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে বিশটির বেশি দেশ চিনি দিয়ে তৈরি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, যার বেশিরভাগই তরল পানীয়। এ মাসের শুরুর দিকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে উঁচু মাত্রার চিনিযুক্ত তরল পানীয়ের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে সিঙ্গাপুর। সামনের বছর থেকে সেটি কার্যকর হবে। স্থূলতা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সিঙ্গাপুর ''আমাদের দ্রুত বয়স্ক হতে থাকা জনসংখ্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার ফলে একটি অস্থিতিশীল ও ব্যয়বহুল, কিন্তু দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করছে। সেটা ঠেকাতে আমাদের এখনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত'', গত অক্টোবরে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এডউইন টঙ। তবে চিনি যুক্ত তরল পানীয়ের ক্ষেত্রে এসব ব্যবস্থা হঠাৎ করে নেয়া হয়নি। এগুলোয় চিনির পরিমাণ অনেক বেশি এবং পুষ্টির পরমাণ কম। কিন্তু এসব তরল পানীয় প্রায় সব দেশেই ব্যাপক পরিমাণে খাওয়া হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫৫ মিলিলিটার অরেঞ্জ জুসে প্রায় ১১চা চামচ পরিমাণের চিনি থাকে। অনেক গবেষণায় বার বার দেখা গেছে যে চিনিযুক্ত পানীয়ের সঙ্গে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। সেই সঙ্গে টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি তাড়াতাড়ি মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে। তরল পানীয়ে অনেক বেশি পরিমাণে চিনি থাকে, কিন্তু সারা বিশ্বেই এটি অনেক খাওয়া হয় এককভাবে দোষারোপ তবে অনেকে মনে করেন, চিনির অযথা বদনাম করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চিনি সংস্থার প্রেসিডেন্ট হোসে অরিভ বিবিসিকে বলেছেন যে, মানুষের খাওয়া খাদ্যের মধ্যে আরো অনেক অস্বাস্থ্যকর খাবার থাকলেও এখানে চিনিকে এককভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে। ''চিনির বদনাম দেয়া হচ্ছে, কিন্তু আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, ঐতিহাসিকভাবেই এটি শক্তি সঞ্চয়ের একটি মৌলিক উৎস। এমনকি মায়ের বুকের দুধেও চিনি রয়েছে'।' ''স্থূলতার সমস্যার জন্য এককভাবে শুধুমাত্র চিনিকে দোষারোপ করলে চলবে না। সেজন্য দায়ী আরো অনেক উপাদান রয়েছে, যেমন শারীরিক পরিশ্রমের চর্চা কমে যাওয়া এবং মানুষের পুরো খাদ্যাভ্যাস।'' ''আমরা এ ব্যাপারেও পরিষ্কার যে, কোন কিছুর বেশি খাওয়া কারো জন্যই ঠিক নয়,'' অরিভ যোগ করেন। 'ভেঙ্গে পড়া খাদ্য ব্যবস্থা' গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা অ্যাকশন সুগার চিনির ওপর আরো বেশি কড়াকড়ি আরোপ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে দেন দরবার করছে। সংস্থাটির একজন পুষ্টিবিদ হোলি গ্যাব্রিয়েল বলছেন, সমস্যার একটি অংশ হলো চিনি। ''স্থূলতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো স্থূলতার পরিবেশ এবং ভেঙ্গে পড়া খাদ্য ব্যবস্থা'', তিনি বলছেন। ''এ কারণেই নানা ধরণের অনেক পদক্ষেপ নেয়া উচিত, যার মধ্যে শুল্ক আরোপ থেকে শুরু করে বাধ্যতামূলক বিকল্প কর্মসূচী নেয়া উচিত।'' দীর্ঘমেয়াদি শুল্কারোপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইএসও নির্বাহী অরিভ, তাই বলে খাবার ও পানীয় শিল্পে চিনি ব্যবহারের সমালোচনা বন্ধ করেন নি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে চিনি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যা খাবারটিকে দীর্ঘস্থায়ী করে স্বাদ বাড়ানোর বাইরে প্রক্রিয়াজাত খাবারে চিনি ব্যবহারের অন্য কারণ রয়েছে- আরো অনেক জিনিসের মতো এটি পণ্যের জীবনকাল বাড়িয়ে দেয়। ''শুল্কারোপ করার ফলে এ পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে যে, সরকারের বাড়তি আয়ের উৎস হবে। কিন্তু এই বিতর্কে খাদ্য শিল্পের অংশ নেয়া উচিত এবং তাদেরও ভূমিকা রাখা উচিত।'' বেশ কয়েকটি দেশে ঠিক এই কাজটি করেছে খাদ্য ও পানীয় কোম্পানিগুলো। গত ডিসেম্বর মাসে জার্মানির বেশ কয়েকটি বড় খাদ্য কোম্পানি সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে যে, তারা ২০২৫ সালের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে চিনি ও লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনবে। তরল পানীয়ে চিনি ব্যবহারের পরিমাণ তারা ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। কিন্তু শুল্কারোপের কি অবস্থা? এটি কি কাজ করবে? নিউজিল্যান্ডের অটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিনিযুক্ত তরল পানীয়ের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে সেধরণের খাবার ক্রয় ও খাওয়ার হার গড়ে ১০ শতাংশ কমে যায়। তা সত্ত্বেও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে বিস্কুট, কেক আর মিষ্টির ওপর শুল্ক আরোপের ফলে স্বাস্থ্যগত উল্লেখযোগ্য উপকারিতা পাওয়া যাবে। চিনিযুক্ত খাবারের ওপর শুল্ক আরোপ করার ফলে সেগুলোর ব্যবহার কমেছে, কিন্তু এর ফলে জনস্বাস্থ্যের ওপর কি প্রভাব পড়ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অনেক দেশে এ জাতীয় পদক্ষেপের ফলে খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক এড়াতে নতুন করে তাদের পণ্য তৈরি শুরু করেছে। যেমন যুক্তরাজ্যে এপ্রিল ২০১৮ থেকে পানীয়ের মধ্যে চিনির ব্যবহার ২৮.৮ শতাংশ কমে গেছে যেহেতু বেশিরভাগ দেশে চিনি শুল্ক সাম্প্রতিক একটা ব্যাপার, তাই এর ফলে জনস্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ যৌথভাবে গবেষণা করেছে যে, এ জাতীয় খাদ্য ও পানীয়ের ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির ফলে কি ঘটতে যাচ্ছে। ফলাফল? চিনিযুক্ত খাদ্য-পানীয়ের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সব শ্রেণীর মানুষের বছরে গড়ে ১.৩ কেজি করে ওজন কমবে। তবে তারা এটাও দেখতে পেয়েছেন, আরেকবার এ ধরণেরও দাম বাড়লেও বছরে ওজন কমবে মাত্র ২০৩ গ্রাম। হালকা খাবারে কর ''ব্রিটিশ সরকার একটি আদর্শ উদাহরণ হতে পারে যে, কীভাবে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে নীতি গ্রহণ করতে হয়। ব্রিটিশরা চিনি বা তরল পানীয়ের তুলনায় হালকা খাবারের মাধ্যমে অনেক বেশি চিনি খেয়ে থাকে,'' বলছেন গবেষণার প্রধান লেখক পাউলিন স্কেহিলবেক। তিনি এবং তার সহকর্মীরা ধারণা করেন যে, 'হালকা খাবারের ওপর কর' ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে স্থূলতার হার বছরে ২.৭ শতাংশ হারে কমিয়ে দিতে পারে। ''আমাদের ক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার যে, শুল্কারোপ কাজ করছে, যদিও স্থূলতা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্যের পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য একমাত্র কোন পন্থা নেই।'' ''তবে যেটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, তা হলো এই সমস্যা মোকাবেলার অন্যতম বড় অনুষঙ্গ হলো যতটা এ জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়া।'' | খাবারে উচ্চমাত্রায় চিনি কেন বিশ্বজুড়ে বড় একটি সমস্যা এবং এটি সামলাতে কি করা হচ্ছে? |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হিসেবে সামনে আসছে। একইসাথে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে নির্বাচনের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়েও এক ধরণের সংশয় রয়েছে। টেকনাফ এবং উখিয়া নিয়ে কক্সবাজার-৪ আসনে ২লাখ ৬৪ হাজার ভোটার রয়েছে। আরও পড়তে পারেন: হিন্দু ভোটারদের ঘিরেই নাসিরনগরে যত সমীকরণ সাংবাদিকদের চোখে মোটরসাইকেল নিষেধাজ্ঞা বরিশালে ছয় আসন কিন্তু সবার দৃষ্টি সদর ও গৌরনদীতে রোহিঙ্গা ইস্যু কেন প্রাধান্য পাচ্ছে ভোটারদের কাছে? উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের পাশেই কলেজ শিক্ষার্থী শামসুল আলমের বসতবাড়ি। সেই গত বছরের অগাষ্টে যখন মিয়ামার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে আসতে থাকে, তখন মি: আলম নিজে তাদের বাড়ির আঙিনায় এবং আশে পাশের এলাকায় অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্রয় দীর্ঘ সময় হওয়ায় এখন তাদের স্থানীয় লোকজনের জীবন যাত্রার ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সে কারণে তিনি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে প্রার্থী এবং দলগুলোর প্রতিশ্রুতির দিকে নজর রাখছেন। "প্রথমে মানবতার খাতিরে এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিলাম। পরে দেখা যাচ্ছে, এরা এসে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ধরণের সমস্যা, তয়তরকারি থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া-সবকিছু দ্বিগুণ হয়েছে। রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে থাকলে আমাদের সমস্যা।" উখিয়ায় কুতুপালং শিবিরের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে তাদের অনেকে ভিড় করছেন স্থানীয় মানুষ নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবছে টেকনাফ এবং উখিয়ায় স্থানীয় মানুষের সংখ্যা সাড়ে চার লাখের মতো হবে। তারাই এখন সংখ্যা লঘু হয়ে পড়েছে ১১লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে। যদিও শরণার্থীদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে টেকনাফ এবং উখিয়ায় ৩০টি শিবিরে রাখা হয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ শরণার্থীকে সামাল দেয়া সহজ বিষয় নয়। তারা শিবিরের বাইরে লোকালয়ে এসে সস্তায় শ্রম দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার দখল করে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যসহ সবক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের বড় অংশের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। টেকনাফের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা বেগম তাঁর একজন সহকর্মীর সাথে। টেকনাফে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা বেগম বলছিলেন, এই ইস্যুতে তারা দলগুলোর কাছে স্পষ্ট অঙ্গীকার চান। "রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের জীবনে অনেক বেশি প্রভাব পড়েছে।সেটা হচ্ছে, প্রথমে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে।গাড়িভাড়া বলেন, সবখানেই কিন্তু অনেক প্রভাব পড়েছে।" ওয়াহিদা বেগম তাঁর ক্ষোভ ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বললেন, "রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের জীবনযাত্রার মানটা একবারে নিম্নমানের হয়ে গেছে।আমরা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছি।আমরা অঙ্গীকার চাই, রোহিঙ্গারা তাদের দেশ বর্মাতেই চলে যাক।" সহানুভূতিও আছে অনেকের মাঝে আমি টেকনাফে একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কাছে সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। নাফ নদী পারি দিয়ে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা প্রথমে এই গ্রামে এসে আশ্রয় পেয়েছিল। গ্রামটির মানুষ তাদের তাদের বাড়ির উঠান, স্কুল এবং খালি জায়গাসহ সর্বত্রই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই গ্রামের মানুষ অনেকের সাথে কথা বলেছি, তারা কিন্তু এখনও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় লোকজনের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় লোকজনকেও ত্রাণ সহায়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা হয়েছে। তবে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কোন মতপার্তক্য নেই। তাদের আশ্রয় যে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যাচ্ছে, মিয়ানমারে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি যে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এর প্রভাব নিয়েই স্থানীয় লোকজনের মাঝে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে তারা তাদের উদ্বেগের বিষয়ে বক্তব্য চান প্রার্থী এবং দলগুলোর কাছে। কুতুপালং এ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবির দলগুলো বা প্রার্থীরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন? প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রার্থীর সমর্থনে গণসংযোগ, সমাবেশ সহ নির্বাচনী প্রচারণায় ঘুরে ফিরে রোহিঙ্গা ইস্যুতেই বক্তব্য আসছে। বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা এবং বিতর্কের কারণে এবার মনোনয়ন পাননি। তবে তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর পক্ষে দলটির স্থানীয় একজন নেতা মো: শাহ আলম বলছিলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি সারাবিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। এই বিষয়গুলোর সাথে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সরকারের উদ্যোগের কথাও তারা ভোটারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। "এটা ছোট ইস্যু নয়, অনেক বড় একটা ইস্যু।১১লাখের বেশি মানুষকে লালন করা সহজ কথা নয়।এই মানবিক বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরছি।রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টাতো সরকার করছে।নির্বাচনের পর নতুন সরকার সেই চেষ্টা এগিয়ে নেবে।এই বিষয়টিও আমরা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছি।" আর বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর প্রতিশ্রুতির অগ্রাধিকারের তালিকাতেই আছে শরণার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়। দলটির স্থানীয় নেতা সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলছিলেন, ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে না পেরে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এটাই তাদের মুল বক্তব্য। "যারা রোহিঙ্গা এবং যারা আমরা স্থানীয় আছি,তাদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে কিন্তু একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়ে গেছে।এই রোহিঙ্গাদের তাদের অধিকার নিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠাবো। এটি একটি অন্যতম ইস্যু হিসেবে আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দিয়েছি স্থানীয়ভাবে।" বাংলাদেশের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে কোনভাবে জড়িত না হয়, শিবিরগুলোর ইমামদের মাধ্যমে সেই বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রশ্নেও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইস্যু হয়েছে ভোটের দিনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা কোন সমস্যা তৈরি করতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। টেকনাফের একজন সমাজসেবক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, "নির্বাচনে এদের দ্বারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও হতে পারে।অবনতি হতে পারে মানে, ভোটের দিনে এরা গোপনে জাল ভোট দিতে যেতে পারে।এরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেও জড়িত হতে পার্ কারণ এদের মাঝে সন্ত্রাসী গ্রুপও আছে।" অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরও বলেছেন, "রোহিঙ্গারা অন্যদের দ্বারা ব্যবহারও হতে পারে।ভোটের সময়তো পক্ষ প্রতিপক্ষ সবাইতো এই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।" স্থানীয় প্রশাসন এবং সেখানে দায়িত্বপালনকারি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর নেতাদের সাথে ইতিমধ্যেই কয়েকদফা বৈঠক করেছে। শিবিরগুলোতে নজারদারি বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে ভোটের আগে ও পরে রোহিঙ্গাদের শিবিরের বাইরে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ করেছে। টেকনাফ এবং উখিয়ায় ৩০টি শিবিরে ১১লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মোহাম্মদ নূর বলছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে কোনভাবে জড়িত না হয়, শিবিরগুলোর মসজিদে মসজিদে সেই বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। "এরমধ্যে জিওসি আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পের চেয়ারম্যান এবং রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন।সেখানে আমাদের বলে দেয়া হয়েছে,আমাদের রোহিঙ্গারা নির্বাচনের আগে শিবিরের বাইরে অন্য কোথাও যাইতে পারবে না।কোন মিছিলে কেউ যাইতে পারবে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সাথে আপনাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই।ক্যাম্পে সবাইকে এগুলো বলে দিতে বলেছে ঐ বৈঠক থাকি।" "এসব আমরা শিবিরগুলার মসজিদে মসজিদে ইমাম সাহেবের দ্বারা বার বার বলে দিচ্ছি।" আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলোর প্রচারণাতেও রোহিঙ্গা ইস্যু অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ শোয়াইব, ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল হোছাইন এবং মুসলিম লীগের সাইফুদ্দিন খালেদ। | সংসদ নির্বাচন: টেকনাফ উখিয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলছে নির্বাচনী লড়াই |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | আসামের ১৯ লাখেরও বেশী মানুষের নাম চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। তারা বলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার আগে যে ধরণের ঘৃণা ছড়ানো হয়েছিল, আসামে এন আর সি চলাকালীন হেট স্পীচগুলোর সঙ্গে সেগুলির বেশ মিল রয়েছে। আসামে ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়ানো ওইসব ফেসবুক পোস্ট বিশ্লেষণ করে 'আওয়াজ' জানিয়েছে, সেগুলি সর্বমোট ৫৪ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় এক লক্ষবার শেয়ার করা হয়েছে। বাংলাভাষীরাই ওইসব বিদ্বেষমূলক পোস্টের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন, কিন্তু বিশেষভাবে মুসলমানদের ব্যাপকহারে গালিগালাজ করা হয়েছে ওইসব পোস্টে। 'মেগাফোন ফর হেট' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের ওয়েবসাইট 'আওয়াজ' তাদের প্রতিবেদনে বলছে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর প্রক্রিয়া চলাকালীন আসামের বাংলাভাষীদের বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে তাদের 'অপরাধী', 'ধর্ষক', 'সন্ত্রাসী', 'শুকর', 'কুকুর' - এসব বলে গালাগালি দেওয়া হয়েছে নানা সময়ে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'আওয়াজ' মূলত অনলাইন অ্যাক্টিভিজম করে থাকে সারা পৃথিবী জুড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, পশু-অধিকার, দুর্নীতি, দারিদ্র আর সংঘাতের মতো বিষয়গুলিতেই তারা মনোনিবেশ করে। লন্ডনের 'দা গার্ডিয়ান' পত্রিকা এই সংগঠনটি সম্পর্কে মন্তব্য করেছে, "বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে প্রভাবশালী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক" বলে। আরো পড়ুন: 'এখন আমার কী হবে'- নাগরিকত্ব হারানো জমিরন আসামের নাগরিক পঞ্জী থেকে বাদ ১৯ লক্ষ মানুষ যে কারণে নাগরিকত্ব নিয়ে শঙ্কায় আছে আসামের বাংলাভাষীরা যে কারণে আসামের ৯০ লক্ষ মুসলমান আতঙ্কে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করার কাজ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে কীভাবে ঘৃণামূলক ওইসব পোস্ট খুঁজে পেয়েছে 'আওয়াজ'? তাদের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, "বেশ কিছু শব্দ আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল যেমন 'মিঞা', 'বহিরাগত', 'অবৈধ নাগরিক' এবং 'অ-অসমীয়া'। এর পরে আসামের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পেজগুলিকে খুঁজে বার করা হয় এবং ওইসব শব্দগুলি রয়েছে, এমন পোস্ট আর কমেন্ট চিহ্নিত করা হয় একটি একটি করে। এর জন্য ক্রাউডট্যাঙ্গল নামের সামাজিক মাধ্যমে নজরদারির যে ওয়েবসাইট আছে, তার সাহায্যও নেওয়া হয়েছিল। ১০২টি ফেসবুক পেজ আর প্রোফাইলে ৮০০টি পোস্ট চিহ্নিত করা গিয়েছিল যেখানে এন আর সি এবং আসাম নিয়ে কিছু লেখা ছিল।" ওই ৮০০ পোস্টের মধ্যে ২৬.৫ % পোস্ট ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হেট স্পীচ বা ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছে 'আওয়াজ'। বাংলাভাষী মুসলমানদের গালিগালাজ 'আওয়াজ' আরও বলেছে যে ধরণের ঘৃণামূলক পোস্ট তারা খুঁজে পেয়েছে, আসলে হয়তো সেটি হিমশৈল চূড়া মাত্র। কারণ তারা শুধু ফেসবুকেই নজর দিয়েছিল আর সেইসব পোস্ট খুঁজেছে, যেখানে এন আর সি আর আসামের সম্বন্ধে লেখা হয়েছিল। শুধু যে ফেসবুকে পোস্ট করেই বাংলাভাষীদের, বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের গালাগালি করা হয়েছে, এমন নয়। অনেকদিন ধরেই আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের অভিযোগ যে বাংলা কথা বলতে শুনলেই অনেকে 'অবৈধ বাংলাদেশী' বলে কটু মন্তব্য করে থাকেন। এর সঙ্গে যদি কাউকে টুপি, দাড়িসহ দেখা যায়, তাহলে ঘৃণার পরিমাণটা বেড়ে যায়। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: ভারতের সাথে চুক্তি: প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবে বিএনপি খাবার পৌঁছুতে গিয়ে মরতে বসে যে ডেলিভারি ড্রাইভারেরা দিল্লির বায়ুদূষণের মধ্যে কেমন খেলবে বাংলাদেশ? রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার উদ্যোগ আটকে গেছে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামের রাজধানীতে বিক্ষোভ এন আর সি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই কটূক্তি চলে আসছে বলে নানা সময়ে আসামের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ জানিয়েছেন বিবিসিকে। এন আর সি প্রক্রিয়া নিয়ে খুব সক্রিয় থেকেছেন, এমন একজন বরপেটা জেলার শাহজাহান আলি। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন ফেসবুকের বাইরেও দৈনন্দিন জীবনে তারা কীভাবে ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন। "এন আর সি শুরু হওয়ার আগে থেকেই মিঞা, বাংলাদেশী এসব বলে ঘৃণা ছড়ানো হয়ে আসছে। ভাষিক আর ধর্মীয় সংখ্যালঘু যারা আসামে, তাদেরকেই টার্গেট করা হয় সবসময়ে," বলছিলেন শাহজাহান আলি। আসামের বেশিরভাগ বাংলাভাষী হিন্দু-মুসলমান এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো ওই 'অবৈধ বাংলাদেশী' তকমা থেকে মুক্তি পেতেই চেয়েছিলেন যে সুষ্ঠুভাবে এন আর সি শেষ হোক, যাতে নাগরিক পঞ্জীতে নাম উঠে গেলে আর 'অবৈধ বাংলাদেশী' বলে ঘৃণার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হতে হয়। পরিচিত রাজনৈতিক নেতারাও বাইরে নয় 'আওয়াজ' বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে এটা বোঝাতে যে ঠিক কী ধরণের পোস্ট ফেসবুকে করা হয়েছিল। ওইসব পোস্টগুলি যারা করেছিলেন, তাদের মধ্যে পরিচিতি রাজনৈতিক নেতারাও রয়েছেন বলে 'আওয়াজ' তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। এনআরসির প্রতিবাদে দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপিদের বিক্ষোভ যাদের নাম প্রকাশ করেছে 'আওয়াজ', তাদের মধ্যে যেমন রয়েছে প্রাক্তন আলফা নেতা এবং বিজেপির আইরপ্রণেতাও। ওইসব মন্তব্যগুলি নিয়ে এন আর সি প্রক্রিয়া চলাকালীনই বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের কয়েকজনের সাথে অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায় নি। 'আওয়াজ' আরও কিছু ফেসবুক পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, যেগুলো কারা পোস্ট করেছেন, সেই পরিচয় গোপন রেখেছে তারা। কয়েকটি ঘৃণামূলক পোস্টের উদাহরণ শুধু ফেসবুকের পোস্টগুলিকে বিশ্লেষণ করে নি 'আওয়াজ'। ঘৃণামূলক পোস্টে যেসব কমেন্ট পড়েছে, সেগুলির দিকেও তাদের নজর গেছে। 'আওয়াজ' সেরকম কয়েকটি উদাহরণও দিয়েছে। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ঘৃণামূলক পোস্টের কমেন্টে লিখেছেন, "হয় মারব নয় মরব। এক হাজার যুবক তৈরি আছে। স্যার, দয়া করে কিছু করুন।" আরেকটি কমেন্ট ছিল এরকম: "অস্ত্র তুলে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। রাতের মধ্যেই সব সেরে ফেলতে হবে।" তৃতীয় একজনের বক্তব্য, "এখনই নদীর ধারে ওদের বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া যায়।" বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ব্যাপকহারে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছিল বলে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে 'আওয়াজ' নামের অনলাইন অ্যাক্টিভিজিমের একটি ওয়েবসাইট 'আওয়াজ' বলছে, তারা বেশ কিছু পোস্টের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ফেসবুককে 'রিপোর্ট' করেছিল। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়ে ঘৃণামূলক কয়েকটি পোস্ট বা পেজ সরিয়েও দিয়েছিল ফেসবুক। কিন্তু তারপরেই দেখা গেছে নতুনভাবে সেই সব পেজ ফিরে এসেছে এবং আবারও সেগুলি থেকে ঘৃণা আর বিদ্বেষমূলক পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে। ৮০র দশকের যে আসাম আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটেছিল আসাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে আর নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করা ছিল সেই চুক্তির অংশ। আসাম আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসুর প্রধান উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলছিলেন, "যে সব হেট স্পীচের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো কী আমি দেখি নি, তাই নির্দিষ্টভাবে কোনও মন্তব্য করব না। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক নেতা নিজের নিজের ভোট ব্যাঙ্ক অটুট রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একপক্ষ বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমানদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে, আরেক পক্ষ বেআইনি বাংলাদেশী হিন্দুদের ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।" "এছাড়া আবার কিছু মানবাধিকার সংগঠন বেআইনি বাংলাদেশী মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। আসামের মূল নিবাসী বা ভারতের বৈধ নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার কথা কেউ ভাবছে না। আমাদের বরাবরের অবস্থান হল অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন - তিনি হিন্দু হোন বা মুসলমান, তাদের এখান থেকে বার করে দিতেই হবে", বলছিলেন আসু নেতা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য। শাহজাহান আলি অবশ্য বলছিলেন, "বারে বারেই দেখা যায় যে একটা বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হয়। তাদের ধর্ষক, চোর, ডাকাত এসব বলা হয়। গোটা ধর্মীয় আর ভাষিক সংখ্যালঘু সমাজকেই আসামে এবং সারা দেশে ঘৃণার পাত্র করে তুলতে চাইছে একটা চক্র।" আসামের নাগরিক পঞ্জী থেকে বাদ পড়েছেন গৃহবধু জমিরন পারভিনের মতো ১৯ লক্ষ বাসিন্দা ঘৃণামূলক পোস্ট ৫৪ লক্ষবার দেখা হয়েছে গণমাধ্যমের একটা অংশও ফেসবুকের পোস্ট অনুসারে খবরের শিরোনাম করে ঘৃণা ছড়ানোয় ইন্ধন জুগিয়েছে বলে বিশ্লেষণ 'আওয়াজ'-এর। যেসব পোস্ট ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের নিরিখেই 'হেট স্পীচ' বলে পরিগণিত হতে পারে, সেরকম পোস্টগুলি মোট ৫৪ লক্ষবার দেখা হয়েছে আর শেয়ার হয়েছে প্রায় এক লক্ষ বার। গুয়াহাটি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলছিলেন ওইসব পোস্টগুলি আসলে ছিল সুষ্ঠু ভাবে যাতে এন আর সি না হতে পারে, তারই একটা প্রচেষ্টা। "অসমীয়া-বাঙালী বিভেদ লাগানোর জন্য একটা চক্র সবসময়েই কাজ করে যাচ্ছে। বাঙালী হিন্দু, বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরোধ লাগিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে বলেই আমার সন্দেহ। সাইবার অপরাধ দমনের জন্য পুলিশের যে বিভাগ আছে, তাদের উচিত এরকম প্রত্যেকটা ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার। তাহলেই আর কেউ এরকম করতে সাহস করবে না," বলছিলেন মি. চৌধুরী। 'আওয়াজ' একটি তুলনামূলক তালিকাও দিয়েছে রোহিঙ্গা গণহত্যার আগে কি ধরণের ঘৃণামূলক মন্তব্য ছড়ানো হয়েছিল আর আসামের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে। ১৯৮০র দশকের যে আসাম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই এনআরসি - সেই আন্দোলনের নেতৃত্বকারী অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসু'র সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবিসিকে বলেন, তিনি ফেসবুক পোস্টগুলো দেখেন নি বলে এ নিয়ে মন্তব্য করবেন না তবে কিছু রাজনৈতিক নেতা এখানে নিজ নিজ ভোট ব্যাংক অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করছেন। "এক পক্ষ বেআইনিভাবে আসা বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে, অন্য পক্ষ বেআইনি বাংলাদেশী হিন্দুদের ভোট ধরে রাখার চেষ্টা করছে" - বলেন তিনি। | আসাম এন আর সি: ফেসবুকে বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেভাবে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | পেশাওয়ারে একশ বছরের পুরনো কাপুর পরিবারের বিশাল মহল্লাটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছিল বাড়ির বর্তমান মালিক এই দুটি বাড়ি ছিল রাজ কাপুর ও দিলীপ কুমারের পিতৃপুরুষের বাসভবন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে যাবার কয়েক বছর আগে তারা সপরিবারে আজকের ভারতীয় ভূখন্ডে চলে যান। পেশাওয়ারের কর্মকর্তারা বলেছেন, জরাজীর্ণ এই বাড়ি দুটি তারা কিনে নেবেন এবং বাড়ি দুটো সংস্কার করে তারা সে দুটিকে যাদুঘর বানাবেন। পেশাওয়ার শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য খুবই বর্ণময়। বলিউডে যারা বিখ্যাত তারকা হয়েছিলেন তাদের বেশ অনেকের শেকড় ছিল এই শহরে। রাজ কাপুর এবং দিলীপ কুমার জন্মেছিলেন এবং বড় হয়েছিলেন খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশাওয়ারের সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে বিখ্যাত রাস্তা কিস্যা খোয়ানিতে। কিস্যা খোয়ানির অর্থ হল কাহিনীকারদের গলি। পরে দুই পরিবারই মুম্বাইতে চলে যান এবং কালক্রমে দুজনেই হয়ে ওঠেন হিন্দি চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তী তারকা। বলিউডের বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক সুপারস্টারের শেকড় রয়েছে পেশাওয়ারের পুরনো অংশে ওই একই এলাকায়। এদের মধ্যে রয়েছেন বলিউড মেগাস্টার শাহরুখ খানও। শহরের বলিউড যোগাযোগ রাজ কাপুর এবং দিলীপ কুমার অভিনয় শুরু করেছিলেন ১৯৪০এর দশকে। যে চলচ্চিত্র শিল্প ভবিষ্যতে বলিউড হয়ে ওঠে, সেই শিল্পের অন্যতম দুজন শীর্ষ তারকা হয়ে ওঠেন তারা দুজনেই। তারা এমনকী দুজনে একসঙ্গে অভিনয়ও করেছিলেন ১৯৪৯য়ের একটি খুবই সফল ছবি 'আন্দাজ'এ। রাজ কাপুর আর দিলীপ কুমার কয়েক প্রজন্ম ধরে হিন্দি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে বিশাল একটা আসন তৈরি করে নিয়েছিলেন। দিলীপ কুমার বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ''বিরহী নায়ক'' হিসাবে।। প্রায়ই তাকে দেখা যেত নরম প্রেমিকের ভূমিকায়, যিনি আঘাত খাওয়া, দুঃখী নায়কের ভূমিকায় মানুষের মন ছুঁয়েছেন তার অসামান্য অভিনয় প্রতিভায়। আর রাজ কাপুর হয়ে উঠেছিলেন রূপালি পর্দার অদ্বিতীয় "শোম্যান"। হাসিখুশি, মজাদার, উচ্ছ্বল নায়ক চরিত্রে, কখনও মনভোলানো নায়ক, আবার সময়ে সময়ে করুণাপ্রার্থী নায়ক - সব চরিত্রেই বাজারমাত করেছেন মি. কাপুর। রাজ কাপুর মারা যান ১৯৮৮ সালে। আর দিলীপ কুমারের বয়স এখন ৯২। তিনি থাকেন মুম্বাইতে তার স্ত্রী অভিনেত্রী সায়রা বানুর সাথে। ১৯৫০এর দশকে দিলীপ কুমার ছিলেন বলিউডের অতি জনপ্রিয় হিরো পেশাওয়ারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ১৯৭০য়ের দশক থেকে ম্লান হতে শুরু করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেশাওয়ার জঙ্গি কার্যকলাপ আর রক্ষণশীলতার কারণে বেশি পরিচিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানের উত্থানের কারণে বহু স্থানীয় ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। পেশাওয়ারের প্রাদেশিক সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলাকার যে সংরক্ষণ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তার অধীনে একশ' বছরের বেশি পুরনো প্রায় ১,৮০০টি ভবন তারা অধিগ্রহণ করবেন এবং সেগুলো পুনরুদ্ধার করবেন। ''সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে পেশাওয়ারের যে প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে গেছে তা পুনরুদ্ধারের প্রয়াসের অংশ হিসাবে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে,'' বিবিসি ঊর্দুকে বলেছেন প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘরের পরিচালক ড. আবদুস সামাদ। তিনি জানিয়েছেন এধরনের দুটি ভবন সংস্কারের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। কাপুর পরিবার ও কুমার পরিবারের পৈতৃক বাসভবন দুটি বর্তমানে বেসরকারি মালিকদের হাতে। তাদের বাসভবন দুটির খুব কাছেই বর্তমান বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের পিতৃপুরুষের সাবেক বাড়ি। কর্মকর্তারা বলছেন, চলচ্চিত্রের এই তিনজন কিংবদন্তী তারকা এবং আরও অনেক বলিউড তারকার পৈতৃক বাসভবন ছিল পেশাওয়ারের এই ছোট্ট এলাকাটিতে। ফলে ওই এলাকায় বলিউডের একধরনের যাদুঘর গড়ে তোলা খুবই যৌক্তিক হবে। আর ঠিক সেটাই রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়। তারা কাপুর আর কুমার পরিবারের শতাব্দী প্রাচীন দুটি ভবন পুনরুদ্ধার করে গড়ে তুলতে চান যাদুঘর, যেখানে ওই দুই তারকা এবং শাহরুখ খানের নানাধরনের স্মৃতিবিজড়িত জিনিস থাকবে। সেখানে একটি চলচ্চিত্র বিষয়ক পাঠাগারও তৈরি করা হবে এবং পেশাওয়ার আর বলিউডের যোগাযোগের নানা ইতিহাস ও সামগ্রী দিয়ে সাজানো হবে যাদুঘর ও পাঠাগার গড়ার এই প্রকল্প। পুনরুদ্ধার কাজ দুটি বাড়ির খুবই ভগ্নদশা। সেগুলো সারিয়ে তুলতে সময় লাগবে অনেক। কাপুরদের মূল যে অট্টালিকা তা ছিল খুবই কারুকাজখচিত। তা একরকম ভেঙে ভেঙে পড়ছে। বাড়িটির কারুকাজ করা বাইরে বেরিয়ে আসা বারান্দা আর তার খিলান ঢাকা জানালা দেখলে বোঝা যায় এককালে কতটা জমকালো ছিল এই অট্টালিকা। অন্যদিকে, কাছেই যে বাড়িতে জন্মেছিলেন দিলীপ কুমার, সেটি অত জমকালো ভবন ছিল না। সেটি ছিল সরু একটা গলির ভেতর ঘিঞ্জি এলাকায়। তবে বাড়িটাতে একসময় বেশ দামী কাঠের কাজ করা ছিল। এখন তার জরাজীর্ণ অবস্থা। কাঠের কাজ নষ্ট হয়ে গেছে, কাঠ পচে ভেঙে গেছে আর চতুর্দিকে মাকড়সার জালে ভরা। কাপুরদের অট্টালিকাটি তৈরি হয়েছিল ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে। তৈরি করেছিলেন রাজ কাপুরের পিতামহ দেওয়ান বাশেশ্বরনাথ। তিনি ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতেন। তার আদিবাড়ি ছিল আজ যেটা পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ। তবে কাজের সূত্রে তিনি পেশাওয়ারে বাস করেছেন দীর্ঘদিন। তার ছেলে পৃথ্বীরাজ কাপুর, যিনি একসময় হিন্দি সিনেমার প্রথম যুগের বিখ্যাত তারকাদের একজন ছিলেন, তিনি চলচ্চিত্রে তার কেরিয়ার শুরু করেন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে। তার অভিনয় জীবনের শুরু হয় পেশাওয়ারে। সেখানে তিনি স্থানীয় থিয়েটারে অভিনয় করতেন। এরপর ১৯২০এর শেষের দিকে তিনি বম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) যান এবং বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান। আরও পড়তে পারেন: পৃথ্বীরাজ কাপুরের ছেলে রণধীর কাপুর (বামে) এবং ঋষি কাপুর ১৯৯০ সালে পেশাওয়ারে তাদের পৈতৃক বাড়ি দেখতে গেলে তাদের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় ওই বাড়িতে তার ছেলে রাজ কাপুরের জন্ম হয় ১৪ই ডিসেম্বর ১৯২৪ সালে। পৃথ্বীরাজ কাপুর সপরিবারে প্রায়ই পেশাওয়ারে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হবার কয়েক বছর আগে তার পেশাওয়ারের বাড়িটি বিক্রি করে দেন বলে জানাচ্ছেন পেশাওয়ার কাউন্সিলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগের প্রধান শাকিল ওয়াহিদুল্লাহ। কাউন্সিলের এই বিভাগটি এই ভবনগুলো সংরক্ষণের জন্য অনেক বছর ধরে লড়ছেন। মি. ওয়াহিদুল্লাহ বলছেন এই বাড়িটির হাতবদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। এমনকী বাড়িটির বর্তমান মালিক - যিনি গহনা ব্যবসায়ী - তিনি বাড়িটি প্রায় ভেঙে ফেলার সব উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বাড়িটি ভেঙে সেখানে একটি শপিং মল বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পেশাওয়ার কাউন্সিলের হেরিটেজ বিভাগ সেসময় হস্তক্ষেপ করে বাড়িটি ভাঙা বন্ধ করেন। কাপুরদের সাবেক এই অট্টালিকার দুটি তলা ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাজ কাপুরের এই পৈতৃক ভবনটির উপরের দুটি তলা ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনটি ভাঙা বন্ধ করার জন্যে পেশাওয়ারের প্রাদেশিক প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ যখন হস্তক্ষেপ করে, তখন এটি ভাঙার জন্য মালিককে গ্রেফতার করা হয়। পৃথ্বীরাজ কাপুরের দুই ছেলে রণধীর কাপুর আর ঋষি কাপুর ১৯৯০ সালে সেখানে বাড়িটি দেখতে পান। এ বছরের গোড়াতে যখন ঋষি কাপুর মারা যান, তখন পেশাওয়ারের মানুষ তার মৃত্যুতে শোক পালন করেছিলেন। তারা ঋষি কাপুরের চাচা শশী কাপুরের জন্যও মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন। শশী কাপুর মারা যান ২০১৭ সালে। দিলীপ কুমারদের পৈতৃকটি বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তার বাবা। তিনি ফলের ব্যবসা করতেন। দিলীপ কুমার ১১ই ডিসেম্বর ১৯২২ সালে পেশাওয়ারে জন্মান। তার নাম ছিল মোহম্মদ ইউসুফ খান। মি. ওয়াহিদুল্লাহ বলছেন, ১৯২০এর দশকের মাঝামাঝি দিলীপ কুমারের বাবা ব্যবসায়ে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েন। তখন উন্নত জীবিকার সন্ধানে পেশাওয়ারের বাস তুলে দিয়ে তিনি সপরিবারে বম্বে চলে যান। দিলীপ কুমারের পৈতৃক বাসভবন এখন একটি গুদাম, কিন্তু কর্তৃপক্ষ চাইছে এটিকে যাদুঘরে রূপান্তর করতে ভারতে গিয়ে দিলীপ কুমারের বাবা তার হারানো ভাগ্য আবার গড়ে তোলেন, তিনি বিত্তশালী হয়ে ওঠেন এবং ১৯৩০ সালে তাদের পেশাওয়ারের বাড়িটি ৫ হাজার রূপিতে বিক্রি করে দেন। এরপর বাড়িটি কয়েকবার বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে এটি একটি গুদাম। দিলীপ কুমার তার পৈতৃক বাসভবন দেখতে গিয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে। তিনি ১৯৯৭ সালে যখন পাকিস্তান সরকারের একটি পুরস্কার নিতে সে দেশে গিয়েছিলেন তখন আবার পেশওয়ারে তাদের আদি বাড়িটি আবার দেখতে যাবার ইচ্ছা তার ছিল। কিন্তু তিনি যাবেন এমন আগাম খবর পেয়ে সেখানে যে বিশাল সংখ্যক জনতা জমায়েত হয়েছিল তাতে তাকে সেখানে না যাবার পরামর্শ দেয়া হয়। | পাকিস্তান: বলিউড সুপারস্টারদের পৈতৃক বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবরে পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গভবনের মুখপাত্র জয়নাল আবেদীন। বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি দেশে ফিরবেন কি-না সে নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটেই জানা গেল সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে তার পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার খবর। তিনি শুক্রবার পদত্যাগপত্র দেন এবং সেটি বঙ্গভবনে পৌঁছেছে শনিবার সকালে। রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীন বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে পদত্যাগের কারণ হিসেবে চিঠিতে কি লেখা হয়েছে সেটি এখনই জানাতে পারেননি রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব। বিচারপতি এস কে সিনহার পক্ষ থেকেও কোন বক্তব্য জানা যায়নি। গত ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানের অনুমতি চেয়ে প্রধান বিচারপতি যে চিঠি দেন, সে ছুটি শেষ হয়ে গেছে গতকালই। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সে টানাপড়েনের এক পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বিবিসিকে জানান বিচারপতি এস কে সিনহা তাকে জানিয়েছেন যে তিনি ক্যান্সারের রোগী। এরপরই জানা যায় প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাচ্ছেন। এরপর বিচারপতি এস কে সিনহা লম্বা ছুটি নিয়ে প্রথমে অস্ট্রেলিয়া যান, সেখান থেকে যান সিঙ্গাপুরে। কিন্তু দেশ ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে যান কিছু লিখিত বক্তব্য যা সরকারের দেয়া বক্তব্যের সাথে পুরোটাই অসঙ্গতিপূর্ণ। সেইসাথে তিনি অসুস্থ নন বলেও জানান। আরও পড়ুন: বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন কেন? আলীগের কাঠগড়ায় প্রধান বিচারপতি, পরিণতি কি? | বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা পদত্যাগ করেছেন |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | অবিভক্ত বাংলার পথে পথে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর শান্তি মিশন। মি. গান্ধীর ঐ সফরের এক পর্যায়ে তাঁর একটি ছাগল চুরি যায়। তিনি ছাগলের দুধ পান করতেন। ফলে, এই চুরির ঘটনার জন্য দায়ী করে নোয়াখালীবাসীকে হেয় করার প্রচেষ্টা আজকের দিনেও দেখা যায়। কিন্তু ঐ সামান্য ঘটনার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ঐ অঞ্চলের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের এক বছর আগে থেকেই অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ ছিল অগ্নিগর্ভ। হিন্দু ও মুসলমান সমাজের পারষ্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর ঘৃণা এমন এক অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল যার জেরে ১৬ই অগাস্ট, ১৯৪৬ ঘটে যায় পূর্ব ভারতের ইতিহাসের কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞ - 'দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস'। দাঙ্গা শুরুর প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণ হারান ৪,০০০ নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান, এবং গৃহহীন হন এক লক্ষেরও বেশি মানুষ। কলকাতায় দাঙ্গা ঠেকানোর চেষ্টা করছে সেনা বাহিনী। ঐ দাঙ্গার কিছু বিলম্বিত প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন নোয়াখালীতে শুরু হয় আরেকটি হত্যাযজ্ঞ। যেভাবে শুরু হয় দাঙ্গা: দশই অক্টোবর ছিল কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন। উত্তপ্ত সাম্প্রদায়িক আবহাওয়ার মধ্যে হঠাৎ করেই একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজবটি ছিল: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার করপাড়ার জমিদার রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর বাড়িতে ভারত সেবাশ্রম সংঘের এক সন্ন্যাসী এসে উঠেছেন। তার নাম সাধু ত্রিয়াম্বাকানন্দ। তিনি নাকি ঘোষণা করেছেন, পূজার জন্য ছাগবলির বদলে এবার তিনি মুসলমানের রক্ত দিয়ে দেবীকে প্রসন্ন করবেন। এটা বারুদে স্ফুলিঙ্গের কাজ করে। করপাড়া থেকে সামান্য দূরে শ্যামপুর দায়রা শরীফ। গোলাম সারোয়ার হুসেইনী এই পীর বংশের উত্তর পুরুষ। গুজব পত্রপল্লবে ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি ১০ই অক্টোবর ভোরবেলা চৌকিদারের মারফৎ রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর কাছে একটি চিঠি পাঠান এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু মি. চৌধুরী এতে সাড়া না দিলে গোলাম সারোয়ার হুসেইনী সকালে শাহ্পুর বাজারে তার অনুগত ভক্ত এবং মুসলমানদের এক সমাবেশ ডাকেন। রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর বিধ্বস্ত বাড়ি। সেখানে তিনি মুসলমানদের সেই সময়কার অবস্থান তুলে ধরেন এবং হিন্দু জমিদারকে উৎখাত করার ডাক দেন। অভিযোগ রয়েছে, ঐ সমাবেশ থেকে তিনি জমিদার ও সাধুর মুন্ডু কেটে আনার নির্দেশ দেন। এরপরই সহিংসতার আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। শাহ্পুর বাজারের সব হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাট লুঠ করা হয় এবং আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। রামগঞ্জ এবং দশঘরিয়া বাজার লুঠ হয়। নারায়ণপুরের জমিদার সুরেন বোসের কাছারি বাড়িতে হামলা হয়। পরের দিন ১১ই অক্টোবর সকাল বেলা করপাড়ার চৌধুরী বাড়িতে হামলা হয়। পরিবারটি প্রথম দিকে বন্দুক ব্যবহার করে হামলাকারীদের ঠেকিয়ে রাখলেও একসময় তাদের গুলি ফুরয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা এসে রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর মাথা কেটে ফেলে। সাধু ত্রিয়াম্বাকানন্দ এর আগেই কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যান। রায়পুরের জমিদার চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরী নোয়াখালীতে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক শক্তিকে গোড়া থেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে তার সাথে গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর শুরু হয় দ্বন্দ্ব। নোয়াখালীতে দাঙ্গা-বিধ্বস্ত গ্রাম ঘুরে দেখছেন মি. গান্ধী। কংগ্রেস নেতাদের কাছে চিঠি: যেহেতু মি. রায় চৌধুরী কংগ্রেসের সাথে যুক্ত ছিলেন, তাই মি. হুসেইনী কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা এমনকি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর কাছেও চিঠি পাঠিয়ে জমিদারের অত্যাচারের কথা জানান এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে তিনি নিজেই চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক দেন। তার অধীন আধাসামরিক বাহিনী 'মিয়ার ফৌজ' এবং এক সহযোগীর অধীন 'কাশেম ফৌজ'র সদস্যরা রায়পুরের জমিদার বাড়ি অবরোধ করে। এ নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ, যার পরিণামে মি. রায় চৌধুরী তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন। এসব ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়লে নোয়াখালী জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া এবং পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা (বৃহত্তর কুমিল্লা) জেলার চাঁদপুর, চৌদ্দগ্রাম, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ এবং লাকসাম থানার বিশাল এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ধারণা করা হয়, এসময় ঐ অঞ্চলের পাঁচ হাজারেরও বেশি হিন্দু প্রাণ হারান। নোয়াখালীতে শান্তি মিশনে মি. গান্ধী ১১৬ মাইল হেঁটে প্রায় ৪৭ টি দাঙ্গা-ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করেন। ইতিহাসবিদরা মূলত তিনটি কারণে নোয়াখালীর হত্যাযজ্ঞকে ভারতের অন্যান্য জায়গার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সাথে তুলনা করতে চান না। প্রথমত, এখানে দুই পক্ষের শক্তি সমান ছিল না, যেমনটি দেখা গিয়েছিল কলকাতা দাঙ্গার সময়। এখানে মূলত হিন্দু জনগোষ্ঠী হামলার শিকার হন। দ্বিতীয়ত, ঐ হত্যাযজ্ঞের সময় এবং পরে বহু হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়। তৃতীয়ত, হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষদের জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। যাদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল তাদের কাছ থেকে লিখিয়ে নেয়া হয়েছিল যে তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটছিল সেই গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও ছিল। ভিডিও: মি. গান্ধীর নোয়াখালী সফরের ওপর নির্বাক চলচ্চিত্র (সৌজন্যে : বিএফআই) গদ্দিনশীন পীর ছাড়াও তিনি ছিলেন নোয়াখালী কৃষক সমিতির অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা। কৃষকের খাজনা মওকুফ, ঋণ সালিশি বোর্ড থেকে সুদখোর ব্যবসায়ীদের উৎখাত করা এবং জমিদারি বাজার বয়কট করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি তৎকালীন নোয়াখালীর ক্ষমতাধর হিন্দু জমিদার এবং মহাজনদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে রামপুর ও রায়গঞ্জ নির্বাচনী এলাকার কৃষক প্রজা পার্টির টিকেটে নির্বাচন করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ১২,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন এবং বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য পরে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। শ্যামপুর দায়রা শরীফ, গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর আস্তানা। কিন্তু তার কৃষকপন্থী নীতির কারণে তিনি কখনই নোয়াখালীর 'হিন্দু ভদ্রলোকদের' কাছের মানুষ হতে পারেননি। যার পরিণতিতে কংগ্রেস তার ব্যাপারে প্রথমদিকে আগ্রহী হলেও পরে আর তাকে দলে টানতে পারেনি। বলা যায়, নোয়াখালীর মুসলমান কৃষকের দলে টানার প্রচেষ্টা মূলত তিনি নস্যাৎ করে দেন এবং এককভাবে নোয়াখালীর গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতার বিরোধকে 'হিন্দু-মুসলমান ইস্যুতে' পরিণত করেন। শান্তির লক্ষ্যে পদযাত্রা: নোয়াখালী দাঙ্গার চার সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার হিন্দু ঘরবাড়ী হারিয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এই পটভূমিতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নোয়াখালীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গবেষকরা বলছেন, নোয়াখালীতে গিয়ে কী করতে চান কিংবা কী হবে তার কৌশল -- যাত্রার আগে, এমনকি যাত্রার সময়ও, মি. গান্ধী সে সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। তিনি শুধু এটুকু বুঝতে পেরেছিলেন যে তার সেখানে যাওয়া দরকার। পরিস্থিতির জটিলতা অনুধাবন করে তার সফরের এক পর্যায়ে তিনি তার সেক্রেটারি নির্মল কুমার বোসকে বলেছিলেন, তাকে হয়তো নোয়াখালীতে বহু বছর থাকতে হবে। মি. গান্ধী নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন ৬ই নভেম্বর। পরদিন চৌমুহনীতে যোগেন্দ্র মজুমদারের বাড়িতে দুই রাত কাটিয়ে ৯ই নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি তার শান্তির লক্ষ্যে পদযাত্রা শুরু করেন। নোয়াখালীর এক কুঁড়েঘরে বাসে চিঠি লিখছেন মি. গান্ধী। এর পরের দিনগুলোতে তিনি খালি পায়ে মোট ১১৬ মাইল হেঁটে প্রায় ৪৭ টি দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি নিয়মিত প্রার্থনা সভা পরিচালনা ছাড়াও স্থানীয় মুসলমানদের সাথে বৈঠক করে হিন্দুদের আস্থা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। নোয়াখালীতে এসে মি. গান্ধী গোলাম সারোয়ার হুসেইনীর সাথেও দেখা করতে চান। মি. হুসেইনী ততদিনে মি. গান্ধীর ওপর সম্পূর্ণভাবে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই তিনি প্রথম দিকে সাক্ষাতে রাজী ছিলেন না। পরে মি. গান্ধীর আহ্বানে চাটখিলে দুজনের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনি গান্ধীকে বলেন যে, দাঙ্গার সূত্রপাত নোয়াখালীতে নয়। কলকাতা ও বিহারে যখন দাঙ্গা থেমে যাবে তখন নোয়াখালীতেও হানাহানি বন্ধ হবে। গান্ধীর ছাগল: মি. গান্ধী ছাগলের দুধ পান করতেন। তাই তিনি সাথে করে একটি ছাগল এনেছিলেন। কিন্তু চাটখিলের বৈঠকের আগে কাশেম ফৌজের লোকজন ছাগলটিকে হস্তগত করেছিল। চাটখিলে ঐ বৈঠকে সেই ছাগলের রান্না মাংস নিরামিষাশী মি. গান্ধীর সামনে পরিবেশন করা হয়। এর মাধ্যমে মি. হুসেইনী একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেই জানা যায়। মি. গান্ধী ছাগলের দুধ পান করতেন। লন্ডনে গিয়েও তিনি দুটি ছাগল কিনেছিলেন। তবে নোয়াখালীতে হিন্দু-মুসলিমে সম্পর্কের মধ্যে যে পারষ্পরিক ঘৃণা ও অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি হয়েছিল মি. গান্ধীর মতো ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও তা ভেঙে ফেলতে ব্যর্থ হন বলেই গবেষকরা বলছেন। ইতোমধ্যে নোয়াখালীর ঘটনার জের ধরে বিহারে শুরু হয় দাঙ্গা। এতে প্রচুর মুসলমান প্রাণ হারাতে শুরু করলে মুসলিম লীগ নেতারা তাকে বিহারে যেতে অনুরোধ করে। ভগ্নহৃদয়ে নোয়াখালী শান্তি মিশন অসমাপ্ত রেখেই মি. গান্ধী ১৯৪৭ সালের ২রা মার্চ বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নোয়াখালী সফরের একমাস পর যখন তাকে জানানো হয় যে সেখানে তখনও সহিংসতা চলছে, তখন মি. গান্ধী পরিতাপের সাথে মন্তব্য করেছিলেন, নোয়াখালীর অবস্থা এমনই দুর্বিষহ যে হিন্দুদের হয় নোয়াখালী ছাড়তে হবে, নয়তো ধ্বংস হয়ে যেতে হবে। (তথ্যসূত্র: বাঙলা ভাগ হলো - জয়া চ্যাটার্জী; Communalism, the Noakhali Riot and Gandhi - Rakesh Batabyal; 1946: The Great Calcutta Killings and Noakhali Genocide - Dinesh Chandra Sinha: Ashok Dasgupta; Noakhali's Darkest Hour - Andrew Whitehead; Syed Ghulam Jamaluddin Baker Husseini; Wikipedia.) আরো খবর: পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা করছে মানুষ ফারাক্কা: যে ফর্মুলায় পানি ভাগাভাগি করে ভারত-বাংলাদেশ চীন কিভাবে 'অলৌকিক অর্থনীতি' হয়ে উঠলো 'এখন এমন কোন অপরাধ নেই যেটাতে পুলিশ জড়িয়ে পড়ছে না' | নোয়াখালীতে গান্ধী: সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞের রক্তাক্ত অধ্যায় |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | ঢাকাই মসলিন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কাপড় ঢাকায় এখনো জামদানি নামে মসলিনের শাড়ি তৈরি হয় বটে - কিন্তু তার সাথে দুশো বছর আগের ঢাকাই মসলিনের অনেক তফাত। সেই মসলিন তৈরির পদ্ধতি ছিল একেবারে অন্যরকম - তাতে ব্যবহৃত হতো বিশেষ ধরনের তুলা - যা এখন আর পাওয়া যায় না। কীভাবে বিলুপ্ত হলো প্রাচীন ঢাকাই মসলিন? একে কি আবার পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব? মসলিনের স্বচ্ছতা ছিল কেলেংকারির বিষয় অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপে শুরু হয়েছিল এমন এক নতুন ফ্যাশন - যা আবার জন্ম দিয়েছিল এক আন্তর্জাতিক কেলেংকারির। সমাজের একটি গোটা শ্রেণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে তারা নগ্ন অবস্থায় জনসমক্ষে উপস্থিত হচ্ছেন এর জন্য দায়ী জিনিসটি ছিল ঢাকাই মসলিন - এক ধরনের দামী কাপড় - যা তৎকালীন ঔপনিবেশিক ভারতের বেঙ্গল প্রদেশের ঢাকা শহর থেকেই আসতো - যা আজকের বাংলাদেশের রাজধানী। মসলিনের শাড়ি এখনো বাংলাদেশে তৈরি হয় - যার নাম জামদানি - তবে আধুনিক কালের মসলিনের সাথে সেই প্রাচীন যুগের মসলিনের অনেক তফাৎ। সেকালে মসলিন তৈরি হতো ১৬ ধাপের এক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। তাতে ব্যবহৃত হতো এক দুর্লভ জাতের তুলা থেকে তৈরি সূতা। সেই তুলা জন্মাতো মেঘনা নদীর পাড়ে। সে যুগে মসলিনের মর্যাদা ছিল ধনরত্নের মতই। আর ঢাকাই মসলিনের সমাদর ছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। সেই সুখ্যাতি তৈরি হয়েছিল হাজার হাজার বছর ধরে। প্রাচীন গ্রিসে মনে করা হতো মসলিনই হচ্ছে দেবীদের মূর্তিকে পরানোর উপযুক্ত কাপড় । দূরদূরান্তের বহু রাজ্যের রাজারা পরতেন এই মসলিন। আর ভারতের মোগল রাজবংশে তো অনেক প্রজন্ম ধরে পরা হয়েছিল মসলিনের পোশাক। উনবিংশ শতকে ইউরোপে ব্যঙ্গাত্মক প্রিন্টে স্বচ্ছ মসলিন-পরা মহিলাদের প্রায় নগ্ন হিসেবে দেখানো হতো। সে যুগেও মসলিন ছিল অনেক রকমের। তবে এর মধ্যেও সবচেয়ে সূক্ষ্ম আর দামী মসলিনের প্রশংসা করে নানা নাম দিতেন রাজকীয় কবিরা। একটি নাম ছিল 'বাফৎ হাওয়া' - অর্থাৎ 'বাতাস দিয়ে বোনা কাপড়'। নামেই বোঝা যাচ্ছে, এসব উচ্চস্তরের মসলিন ছিল হাওয়ার মতই হালকা আর নরম। একজন ভ্রমণকারী বর্ণনা করেছেন তিনশ' ফুট লম্বা (৯১ মিটার) মসলিনের থান গোটানো-অবস্থায় এতই নরম ছিল যে তা একটা আংটির মধ্যে দিয়ে গলে যেতো। আরেকজন লিখেছেন ৬০ ফুট লম্বা একটি মসলিন ভাঁজ করে রাখা যেতো একটি নস্যির কৌটায়। তার ওপরে - ঢাকাই মসলিন ছিল একেবারে স্বচ্ছ। ঐতিহ্যগতভাবে অত্যন্ত দামী এই কাপড় দিয়ে তৈরি হতো শাড়ি আর পুরুষদের জামা। কিন্তু ব্রিটেনে এই মসলিন আসার পর তা সমাজের বিত্তশালীদের পোশাকের ধরন পাল্টে দিল। তাদের মধ্যে এমন এক ধরনের হালকা লম্বা ধরনের 'শেমিজ-গাউন' পোশাক জনপ্রিয় হলো - যা অনেকটা তারও আগের যুগে অন্তর্বাস বলে গণ্য হতো। ঢাকাই মসলিনের পোশাক পরা নেপোলিয়নের স্ত্রী জোসেফিন বোনাপার্ত সেযুগে ব্যঙ্গাত্মক ছবি এঁকে জনপ্রিয় হয়েছিলেন আইজাক ক্রুইকশ্যাংক বলে একজন শিল্পী। তার একটি প্রিন্ট আছে যার শিরোনাম "১৮০০ সালের শীতের পোশাকে প্যারিসের মহিলারা"। এতে কয়েকজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তারা উজ্জ্বল রঙের লম্বা ছাঁটের মসলিনের পোশাক পরে আছেন। সে পোশাক এতই স্বচ্ছ যে তাদের নিতম্ব, স্তনের বোঁটা, এমনকি যৌনকেশ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। তার পরেও ঢাকাই মসলিন ছিল 'হিট' পোশাক - অবশ্য তাদের জন্য যাদের এটা কেনার মত অর্থ ছিল। সে যুগে সবচাইতে দামী পোশাক ছিল মসলিন। এর বিখ্যাত ভক্তদের মধ্যে ছিলেন ফ্রান্সের রানি মেরি আঁতোয়ানেৎ, ফরাসী সম্রাজ্ঞী জোসেফিন বোনাপার্ত, এবং লেখিকা ইংরেজ লেখিকা জেন অস্টেন। কিন্তু মসলিন সেই 'এনলাইটমেন্ট' যুগের ইউরোপে যেমন হঠাৎ চমক সৃষ্টি করেছিল - তেমনি হঠাৎ করেই তা আবার অদৃশ্যও হয়ে গেল। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পুরো পৃথিবী থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায় ঢাকাই মসলিন। তার যে ক'টি নমুনা টিকে ছিল - তার স্থান হয়েছে ইউরোপের জাদুঘরে, বা মূল্যবান ব্যক্তিগত সংগ্রহে। মসলিন বোনার যে জটিল প্রক্রিয়া - তা-ও লোকে এক সময় ভুলে গেল। শুধু তাই নয় - মসলিন বানাতে যে "ফুটি কার্পাস" নামে বিশেষ ধরনের তুলা ব্যবহৃত হতো - হঠাৎ করে তাও গেল বিলুপ্ত হয়ে। এই ফুটি কার্পাসের বোটানিক্যাল নাম ছিল গোসিপিয়াম আরবোরেটাম ভার নেগ্লেক্টা। এটা ছাড়া আর কোন তুলা দিয়ে মসলিন তৈরি হতো না। প্রশ্ন হলো, কেন আর কি করেই বা এমন হলো? একে আবার ফিরিয়ে আনার কি কোন উপায়ই নেই? এক নাজুক আঁশ ঢাকাই মসলিনে ব্যবহৃত তুলার গাছ জন্মাতো মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা মাটিতে। এই মেঘনা হচ্ছে গঙ্গা অববাহিকার সবচেয়ে বড় নদীগুলোর একটি। এর পাতা দেখতে অনেকটা মেপলের মত। প্রতি বসন্তকালে ধূসর পলিমাটিতে এই গাছ জন্মাতো, আর পূর্ণবয়স্ক গাছে বছরে দু'বার একটি করে ড্যাফোডিলের মত হলুদ রঙের ফুল হতো। সেই ফুল থেকে পাওয়া যেতো তুষারশুভ্র তুলা। এই তুলা কোন সাধারণ তুলা নয়। পৃথিবীতে এখন যে তুলা উৎপাদিত হয় - তার ৯০ শতাংশই হচ্ছে মধ্য আমেরিকা থেকে আসা গোসিপিয়াম হিরসুটাম জাতের তুলা। তার আঁশ হচ্ছে সরু আর লম্বা আকৃতির। পুরোনো যুগের মসলিনের থ্রেড কাউন্ট হতো ১২০০ পর্যন্ত, তবে সম্প্রতি ঢাকায় ৩০০ কাউন্ট পর্যন্ত মসলিন বানানো হয়েছে কিন্তু ফুটি কার্পাস থেকে যে সূতা হয় তা খাটো আর মোটা ধরনের, তার আঁশ সহজেই আলগা হয়ে যায়। এ বর্ণনা শুনলে মনে হতে পারে, এ তুলা কোন কাজে লাগার মতো নয়। আসলেই, ছোট আঁশওয়ালা এই তুলা মেশিন ব্যবহার করে সস্তা কাপড় বোনার উপযোগী ছিল না। এটা হাতে ধরে কাজ করা কঠিন, একে পেঁচিয়ে সূতা বানাতে গেলে খুব সহজেই ছিঁড়ে যায়। কিন্তু স্থানীয় লোকেরা এই তুলাকেই কাপড় বোনার উপযুক্ত করে তুললেন - তাদের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে । পুরো প্রক্রিয়াটাতে ১৬টি ধাপ আছে। সেই টেকনিক এতই বিশেষ ধরনের যে তা করতে জানতেন শুধু ঢাকার কাছে অন্য আরেকটি গ্রামের লোকেরা। এতে যোগ দিতেন গ্রামের ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই। প্রথমে সেই তুলোর দলাগুলো পরিষ্কার করা হতো বোয়াল মাছের দাঁত দিয়ে - যে রাক্ষুসে মাছ তখন ওই এলাকার নদীতে বা বিলে পাওয়া যেতো। ফুটি কার্পাস থেকে সূতা তৈরি করা খুব কঠিন এর পর সেই তুলাকে চরকা দিয়ে সূতায় পরিণত করা হয়। এই তুলার আঁশ যেহেতু ছোট ছোট তাই একে টেনে লম্বা করার জন্য বাতাসে উচ্চ আর্দ্রতা দরকার হতো। সে জন্য এই কাজটা করা হতো নৌকার ওপর, ভোরে বা সন্ধ্যায় যখন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে। চরকা কাটার কাজ করতেন দক্ষ অল্পবয়সী মহিলারা। কারণ এই সূতা এতই সূক্ষ্ম হতো যে বয়স্ক মানুষরা তা দেখতে পেতেন না। "এভাবে বোনা সূতাতে একটা রুক্ষতা থাকতো -যা হাতে ধরলে একটা চমৎকার অনুভূতি হতো" - বলছিলেন ডিজাইন ইতিহাসবিদ সোনিয়া এ্যাশমোর, যিনি ২০১২ সালে মসলিনের ওপর একটি বই লিখেছেন। এর পর হচ্ছে আসল কাজটা - সেই সূতা দিয়ে কাপড় বোনা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: জামদানি শাড়ি আসল নাকি নকল চিনবেন যেভাবে ব্যাঙ্গালোরে বর্জ্য পানি ব্যবহৃত হচ্ছে সিল্ক শাড়ি তৈরির কাজে শত কোটি টাকার শাড়ি কিনেও নারীদের খুশি করা যায়নি এই প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো মাসের পর মাস লেগে যেতো। কারণ মসলিন কাপড়ে যে বিশেষ ধনরনের জ্যামিতিক ফুলেই ডিজাইন থাকতো তা সরাসরি কাপড় তৈরির সময়ই যোগ করা হতো। এতে যে টেকনিক ব্যবহৃত হতো তা মধ্যযুগের ইউরোপে রাজকীয় কাপড়ের ডিজাইনের পদ্ধতির সাথে মিলে যায়। এর পলে যে কাপড় তৈরি হতো - তা দেখতে হতো হাজার হাজার রেশমি-রূপালি সূতোর স্তরের ওপর তৈরি করা সূক্ষ্ম শিল্পকর্মের মতো। এশিয়ার বিস্ময় পশ্চিমা ক্রেতারা সে যুগে মসলিন দেখে বিশ্বাস করতে পারতেন না যে ঢাকাই মসলিন মানুষেরই হাতে বোনা। এমন গুজবও ছিল যে এই মসলিন বুনেছে মৎস্যকন্যা, পরী বা ভূতেরা। "মসলিন ছিল এত নরম আর এত হালকা যে এ যুগের কোন কাপড়ের সাথেই তার কোন তুলনা চলে না" - বলছিলেন রুবি গজনভী, বাংলাদেশের ন্যাশনাল ক্র্যাফট কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট। মেঘনার পারে বিলুপ্তপ্রায় ফুটি কার্পাসের গাছের সন্ধানে গবেষকদল মসলিন বোনার আসল কৃতিত্ব ছিল এর বুননের সূক্ষ্মতায় - এত মিহি বুননের কাপড় কিভাবে এর কারিগররা বানাতে পেরেছিলেন। এই হিসাবকে একে বলে থ্রেড কাউন্ট - অর্থাৎ প্রতি বর্গইঞ্চি কাপড়ে লম্বালম্বি এবং আড়াআড়ি কতগুলো সূতা ব্যবহৃত হয়েছে। ঢাকাই মসলিনকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি প্রকল্পের প্রধান হচ্ছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি ব্যাখ্যা করছেন, "আজকাল যে মসলিন তৈরি হয় তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থ্রেড কাউন্ট থাকে ৪০ থেকে ৮০র মধ্যে । যেমন সাধারণভাবে ৮০ থ্রেড কাউন্ট মানে হলো প্রতি বর্গ ইঞ্চি কাপড়ে আড়াআড়ি-লম্বালম্বি মোটামুটি ৮০টি সূতো আছে। " "কিন্তু সে যুগের ঢাকাই মসলিনে এই থ্রেড কাউন্ট হতো ৮০০ থেকে ১২০০-র মধ্যে"- বলছেন তিনি। এত বেশি থ্রেড কাউন্ট মানে হলো সেই কাপড় হতো অত্যন্ত নরম এবং টেকসই । যদিও আমরা যে ঢাকাই মসলিনের কথা বলছি তা এক শতাব্দীরও বেশি আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে - কিন্তু অনেক দেশের জাদুঘরে পুরোনো মসলিনের শাড়ি, ওড়না, বা অন্যান্য পোশাক দেখা যায়। ক্রিস্টি বা বনহ্যামসের মতো উচ্চস্তরের নিলামে কখনো কখনো এরকম দু-একটি মসলিন উঠতে দেখা যায় - আর তা বিক্রি হয় হাজার হাজার পাউণ্ড দামে। ঔপনিবেশিক যুগের বিপর্যয় "মসলিনের বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে - একে ধ্বংসও করেছে তারাই" - বলছিলেন এ্যাশমোর। ইউরোপের অভিজাত মহিলাদের গায়ে মসলিনের পোশাক ওঠার অনেক আগে তা বিক্রি হতো সারা দুনিয়া জুড়ে। প্রাচীন গ্রিকদের মধ্যেও জনপ্রিয় ছিল এই মসলিন। প্রাচীন যুগে মসলিন ব্যবহারের উল্লেখ প্রথম সম্ভবত দেখা যায় রোমান লেখক পেট্রোনিয়াসের লেখায় - সেখানে তিনি মসলিন কাপড় কত স্বচ্ছ তা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। "একজন নববধূর জন্য মসলিনের মেঘের নিচে প্রকাশ্যে নগ্ন হয়ে দাঁড়ানো - আর বাতাস দিয়ে তৈরি পোশাক পরে দাঁড়ানো একই কথা" - লিখেছিলেন তিনি। আসল ফুটি কার্পাসের সন্ধানে সাইফুল ইসলাম পরবর্তী কালে বহু বিদেশী পর্যটকের লেখায় মসলিনের প্রশংসা দেখা গেছে। এদের অন্যতম চতুর্দশ শতাব্দীর বারবার-মরোক্কান ইবনে বতুতা, এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর চীনা পর্যটক মা হুয়ান। সম্ভবত মোগল শাসনকালই ছিল ভারতবর্ষে মসলিনের স্বর্ণযুগ। এই সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল ১৫২৬ সালে এখনকার উজবেকিস্তানের একজন সমরনায়কের হাতে। অষ্টাদশ শতক নাগাদ প্রায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশই ছিল মোগল শাসনাধীন। এই সময়টায় পারস্য (আধুনিক যুগের ইরান) ইরাক তুরস্ক আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা বণিকদের সাথে বিপুল পরিমাণ মসলিনের বাণিজ্য হতো। মোগল বাদশাহ এবং তাদের স্ত্রীরা মসলিনের খুব ভক্ত ছিলেন। সেযুগের চিত্রকলায় তাদেরকে মসলিন ছাড়া অন্যকিছু পরিহিত অবস্থায় প্রায় দেখাই যায়না। মসলিনের সেরা কারিগরদের তারা পৃষ্ঠপোষকতা করতেন, তাদের সরাসরি নিয়োগ দিতেন এবং তাদের সেরা কাপড়গুলো অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে দেয়া হতো না। মসলিনের স্বচ্ছতা মোগল যুগেও সমস্যার কারণ হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে যে বাদশাহ আওরঙ্গজেবের কন্যা সাত পাক দিয়ে মসলিন পরার পরও সম্রাট তাকে 'নগ্ন হয়ে প্রকাশ্যে আসার জন্য' তিরস্কার করেছিলেন। সবকিছু ভালই চলছিল - ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগ পর্যন্ত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সাল নাগাদ মোগল সাম্রাজ্য দখল করে নেয়। তার এক শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে ভারত চলে যায় ব্রিটিশ রাজের নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাজ্যে মসলিনের প্রথম প্রদর্শনী হয় ১৮৫১ সালে - 'ওয়ার্ক অব ইন্ডাস্ট্রি অব অল নেশন্স' নামে এক মহা-প্রদর্শনীতে। এর পরিকল্পনা করেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্ট। তার চিন্তাটা ছিল, তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নানা চমকপ্রদ জিনিস তার প্রজাদের সামনে তুলে ধরবেন। লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেসে ৪০ মিটার উঁচু কাচের গ্যালারিতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আনা প্রায় ১ লক্ষ জিনিস তুলে ধরা হলো সেই প্রদর্শনীতে। তখনকার দিনে এক গজ ঢাকাই মসলিনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৪০০ পাউণ্ড পর্যন্ত - আজকের মূল্যমানে ৭,০০০ থেকে ৫৬,০০০ পাউণ্ড। সেই যুগের সবচেয়ে ভালো সিল্কের চাইতেও এই মসলিন ছিল ২৬ গুণ বেশি দামী। কিন্তু ভিক্টোরিয়ান লন্ডনের অভিজাতরা যখন মসলিন নিয়ে মুগ্ধ - তখন সেই মসলিনের উৎপাদকরা ঋণের বোঝা আর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে আটকা পড়েছে। গুডস ফ্রম দি ইস্ট নামে একটি বইয়ে বলা হয়েছে, অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঢাকাই মসলিন তৈরির প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। ওই অঞ্চলে মসলিনের যারা স্বাভাবিক ক্রেতা ছিল - তাদের পরিবর্তে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের লোকেরা নতুন ক্রেতা হয়ে দাঁড়ায়। এ্যাশমোর বলছিলেন, কোম্পানি নানা ভাবে উৎপাদনের প্রক্রিয়া এবং সম্পূর্ণ বাণিজ্যটিই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। তাঁতীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, কম দামে আরো বেশি পরিমাণ মসলিন কাপড় তৈরির জন্য। সাইফু ইসলাম - যিনি একটি ফটো এজেন্সির পরিচালনার সাথেও জড়িত - তিনি বলছেন, "মসলিন উৎপাদন একটা কঠিন এবং পরিশ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। এর জন্য দরকার বিশেষ ধরনের দক্ষতা। এক কিলোগ্রাম ফুটি কার্পাস থেকে মাত্র আট গ্রাম সূক্ষ্ম মসলিন তৈরি হয়। " বর্ধিত চাহিদার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে তাঁতীরা ঋণের জোলে আটকা পড়লো। একটা কাপড় তৈরি করতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতো । কিন্তু কাপড় যদি মান অনুযায়ী না হতো তাহলে তাদের দাম ফেরত দিতে হতো। তারা কখনোই ঋণ শোধ করতে পারছিল না - বলছিলেন এ্যাশমোর। আরো বড় আঘাত হয়ে এলো প্রতিযোগিতা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো ঔপনিবেশিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব শিল্পের ওপর নির্ভর করতো - তার সমস্ত খুঁটিনাটি তারা নথিভুক্ত করতো। মসলিন তৈরি প্রতিটি ধাপের প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতো তারা। ইউরোপে যখন বিলাসবহুল কাপড়ের চাহিদা বাড়লো তখন তাগিদ তৈরি হলো যে ঘরের কাছেই এর অপেক্ষাকৃত সস্তা সংস্করণ উৎপাদন করতে হবে। উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ল্যাংকাশায়ারের কাপড় ব্যবসায়ী স্যামুয়েল ওল্ডনো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অর্জিত জ্ঞান আর নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে উন্নত তাঁত দিয়ে লন্ডনের ক্রেতাদের জন্য বিপুল পরিমাণে কাপড় বানাতে শুরু করলেন। ১৭৮৪ সাল নাগাদ তার কারখানায় কাজ করতো ১০০০ তাঁতী। ব্রিটিশদের তৈরি মসলিন মানের দিক থেকে ঢাকাই মসলিনের ধারেকাছেও ছিল না। এই মসলিন বানানো হতো সাধারণ তুলা দিয়ে। এর থ্রেড কাউন্টও ছিল অনেক কম। কিন্তু এর ফলে হঠাৎ করেই ঢাকাই মসলিনের চাহিদা কমে গেল, তার সাথে ছিল দশকের পর দশকের অত্যাচার। দুয়ে মিলে ডেকে আনলো ঢাকাই মসলিন শিল্পের মৃত্যু । ঢাকাই মসলিন কীভাবে বানাতে হয় সেই বিদ্যা হারিয়ে গেছে এর পর যুদ্ধ, দারিদ্র্য আর ভূমিকম্পের মত আরো কিছু কারণে অনেক তাঁতী নিম্ন মানের কাপড় বানানোর দিকে চলে গেল, অনেকে পেশা বদলে কৃষক হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত মসলিন তৈরি পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গেল। "এটা মনে রাখতে হবে যে এটা ছিল একটা পারিবারিক পেশা। আমরা তাঁতীদের কথা বলি, তাদের দারুণ কাজের কথা বলি - কিন্তু এসব কাজের পেছনে ছিল নারীরা - তাঁত-চরকার কাজ করতো তারাই" বলছিলেন হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী যিনি বাংলার মসলিন শিল্পেও ওপর একটি বই লিখেছেন। এর পর প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার হয়ে গেল - আর ঢাকাই মসলিন কীভাবে বানাতে হয় সেই বিদ্যাও হারিয়ে গেল। যেহেতু মসলিন নেই - তাই সেই ফুটি কার্পাসের গাছও ধীরে ধীরে অপরিচিত জংলী গাছে পরিণত হয়ে গেল। দ্বিতীয় জন্ম সাইফুল ইসলামের জন্ম বাংলাদেশে - তবে প্রায় ২০ বছর আগে তিনি লন্ডনে প্রবাসী হন। তিনি যে প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করতেন - সেই 'দৃক'কে ঢাকাই মসলিনের ওপর একটি ব্রিটিশ প্রদর্শনীকে বাংলাদেশী দর্শকদের জন্য পরিবেশনের প্রস্তাব দেয়া হয় ২০১৩ সালে। এর মধ্যে দিয়েই তিনি ঢাকাই মসলিন সম্পর্কে সচেতন হন। তারা অনুভব করলেন যে উদ্যোগটিতে খুঁটিনাটি অনেক কিছুর অভাব আছে - তাই তারা নিজেরাই এ নিয়ে এক গবেষণা শুরু করলেন। পরের এক বছরে সাইফুল এবং তার সহকর্মীরা স্থানীয় শিল্পের সাথে জড়িত লোকজনের সাথে কথা বললেন। যে অঞ্চলে এটা তৈরি হতো সেই এলাকাটা ঘুরে দেখলেন এবং ইউরোপের মিউজিয়ামগুলোতে ঢাকাই মসলিনের নমুনাগুলো সন্ধান করলেন। ঢাকায় এখনো জামদানি নামের মসলিন তৈরি হয়। "লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে শত শত মসলিন আছে। ইংলিশ হেরিটেজ ট্রাস্টে ২০০০টি মসলিন আছে, কিন্তু বাংলাদেশে একটিও নেই" - বলছিলেন সাইফুল। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় মসলিনের ওপর একাধিক প্রদর্শনী হলো। একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দেয়া হলো, সাইফুলের লেখা একটি বই প্রকাশিত হলো। এক পর্যায়ে তারা ভাবতে শুরু করলেন, হয়তো এই ঐতিহাসিক বস্ত্রটি আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও হতে পারে। এ লক্ষ্য নিয়েই তারা বেঙ্গল মসলিন নামে তারা একটি যৌথ উদ্যোগ চালু করলেন। তাদের প্রথম কাজ ছিল মসলিন উৎপাদনের উপযোগী তুলার গাছ খুঁজে বের করা। তখন ফুটি কার্পাসের বীজ কারো সংগ্রহেই ছিল না। কিন্তু লন্ডনের কিউ গার্ডেনের রয়াল বোটানিক গার্ডেনের সংগ্রহে তারা খুঁজে পেলেন ফুটি কার্পাসের শুকনো সংরক্ষিত অনেকগুলো পাতা - যা সংগৃহীত হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীতে। এটা থেকে তারা ফুটি কার্পাসের ডিএনএ সিকোয়েন্স তৈরি করতে সক্ষম হলেন। তাদের হাতে এসে গেল এর জেনেটিক রহস্য। এ নিয়ে তারা বাংলাদেশে পিরে এলেন। এর পর শুরু হলো ফুটি কার্পাস গাছ খুঁজে বের করার কাজ। তারা মেঘনা নদীর পুরোনো মানচিত্র পরীক্ষা করলেন, তাকে আধুনিক উপগ্রহ চিত্রের সাথে মিলিয়ে সম্ভাব্য জায়গাগুলো চিহ্নিত করলেন - যেখানে এখনো সেই গাছ পাওয়া যেতে পারে। তার পর তারা নৌকা ভাড়া করে সে সব জায়গায় গিয়ে জংলী গাছের মধ্যে ফুটি কার্পাস খুঁজে বেড়াতে লাগলেন। যেখানে যে তুলোর গাছ পাওয়া গেল তার জেনেটিক সিকোয়েন্স তৈরি করা হলো - আসলটির সাথে তা মিলিয়ে দেখা হলো। এক পর্যায়ে তারা এমন একটি কার্পাস গাছ খুঁজে পেলেন - যা ফুটি কার্পাসের সাথে ৭০ শতাংশ মিলে যায় । এই কার্পাস উৎপাদনের জন্য তারা ঢাকার ৩০ কিলোমিটার উত্তরে মেঘনার একটি দ্বীপ নির্বাচন করলেন। সাইফুল বলছিলেন, "জায়গাটি ছিল আদর্শ খুবই উর্বর এবং নদীর পলি দিয়ে তৈরি জমি।" এখানে ২০১৫ সালে তারা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু বীজ বপন করলেন। কিছুকালের মধ্যেই সেখান থেকে গজালো ফুটি কার্পাসের সারি সারি গাছ - কয়েক শতাব্দীর মধ্যে এই প্রথম আবাদ। সেই বছরই দলটি ফসল হিসেবে তাদের প্রথম তুলা পেলেন। যদিও তারা শতভাগ খাঁটি ঢাকা মসলিন বানানোর জন্য যথেষ্ট ফসল পাননি, কিন্তু তারা ভারতীয় তাঁতীদের সাথে যৌথ উদ্যোগে সাধারণ ও ফুটি কার্পাস তুলা মিলিয়ে একটি হাইব্রিড সূতা তৈরি করলেন। তবে এই সূতা দিয়ে মসলিন বুনতে গিয়ে তারা দেখলেন কাজটা অনেক জটিল। বাংলাদেশে এখন যে মসলিন তৈরি হয় তার নাম জামদানী মসলিন - এটার থ্রেড কাউন্ট পুরোনো ঢাকাই মসলিনের চেয়ে অনেক কম। তবে এটা তৈরি করতে জানেন এমন অনেক তাঁতী বাংলাদেশে আছেন। ঢাকাই জামদনি এখনো মহিলাদের প্রিয় সাইফুল ভেবেছিলেন, তিনি এই কারিগরদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবেন এবং তাদের শেখাবেন কিভাবে পুরোনো ঢাকাই মসলিনের কাছাকাছি মানের কাপড় তৈরি করা যায়। সাইফুল তাঁতীদের বললেন, তিনি ৩০০ থ্রেড কাউন্টের শাড়ি উৎপাদন করতে চান। "কিন্তু তাদের কেউই এ কাজ করতে চাইলো না। সত্যি কথা বলতে কি- তারা বললো এটা পাগলামি" - বললেন সাইফুল। অন্তত ২৫ জন তাঁতীর সাথে কথা বললেন সাইফুল। শেষ পর্যন্ত একজন রাজি হলেন। তার নাম আল-আমিন। তিনি এখন তাদের প্রকল্পের প্রধান তাঁতী। আল আমিন তার ওয়ার্কশপে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং আর্দ্রতা রক্ষার যন্ত্রপাতি বসালেন - যাতে সেই সূক্ষ্ম সূতা তৈরি করা যায়। অন্তত ৫০টি মত যন্ত্র দরকার ছিল তাদের - যা এখন আর পাওয়া যায় না। সুতরাং প্রকল্পের কারিগররা নিজেরাই সেগুলো বানিয়ে নিলেন। ছয় মাসের কঠোর পরিশ্রম শেষে আমিন ৩০০ থ্রেড কাউন্টের একটি শাড়ি বানাতে সক্ষম হলেন। সেটা আসল ঢাকাই মসলিনের মানের কাছাকাছি নয়। কিন্তু গত অনেক প্রজন্মের তাঁতীরা যা বানিয়েছেন - তার চেয়ে অনেক উন্নত মানের। এর পর কয়েক বছর পার হয়েছে। সাইফুল ও তার দল ২০২১ সাল নাগাদ অনেকগুলো শাড়ি বানিয়েছেন - তাদের হাইব্রিড মসলিন থেকে। ইতোমধ্যেই তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে এবং তার কোন কোনটি হাজার হাজার পাউণ্ড দামে বিক্রিও হয়েছে। সাইফুল এখন বলছেন, এই সমাদর থেকে তার ধারণা হয়েছে যে মসলিনের একটা ভবিষ্যৎ আছে। "এটা হচ্ছে ম্যাস প্রোডাকশন বা একসাথে বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদনের যুগ, কিন্তু সে কারণেই যা বিশিষ্ট, অনন্য - এমন জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে। মসলিন এখনো একটা শক্তিশালী ব্র্যান্ড" - বলেন তিনি। সাইফুল আশা করেন, একদিন তারা এমন একটি বিশুদ্ধ ঢাকাই মসলিন শাড়ি বানাতে সক্ষম হবেন - যার থ্রেড কাউন্ট হবে ৩০০-র চেয়ে অনেক বেশি। সাইফুল তার দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে চান। তিনি বলছেন, "এটা জাতীয় মর্যাদার ব্যাপার। যেহেতু আমাদের দেশে অনেক গার্মেন্টস কারখানা আছে, তাই আমাদের পরিচয় এখন আর দরিদ্র নয়, কিন্তু এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে এ দেশ পৃথিবীর সর্বকালের সূক্ষ্মতম কাপড়েরও দেশ।" কে জানে, হয়তো একটি নতুন প্রজন্মকে শীগগিরই পরতে দেখা যাবে একটি প্রাচীন বস্ত্র - এবং তার অতি স্বচ্ছতার জন্য হয়তো একটু বিব্রতও হতে হবে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: সিলেট জেলার সব থানায় বসছে মেশিনগান পাহারা করোনাভাইরাস: দক্ষিণ আফ্রিকার ভয়াবহ ধরন নিয়ন্ত্রণ হবে কিভাবে দূতাবাস থেকে বের করে দেওয়ার পর লন্ডনের রাস্তায় রাত কাটালেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত নতুন উপসর্গ নিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্ট | বিলুপ্ত হওয়া ঢাকাই মসলিনকে আবার কীভাবে বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | কিন্তু অ্যাডামের পিতা আইএস জিহাদি আবু মুহাজিরের হাতেই বন্দী ছিল তার মা ইয়াজিদি নারী জোভান। তাদের ঘরে জন্ম হয় অ্যাডামের। যুদ্ধে আবু মুজাহির মারা গেলে জোভান তার নবজাতককে নিয়ে ফিরতে চাইলেন নিজের সংসারে। কিন্তু পারলেন না। পরিবার ও সমাজের চাপে অ্যাডামকে হারালেন জোভান। হারালেন তার আগের সংসারও। আগের জীবন জোভান তার স্বামী খেদরের সাথে একটি গ্রামে বসবাস করতেন। এই গ্রামেই তিনি বড় হয়েছেন। তার স্বামী ও সংসার নিয়ে তিনি খুব সুখেই ছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করেই তার জীবন আমূল বদলে যায়। সময়টা ছিল ২০১৪ সালের অগাস্ট মাস। কালো পতাকা উড়িয়ে দুটো গাড়ি সেদিন তাদের গ্রামে এসে পৌঁছালো। জোভান ও খেদর বুঝতে পারছিলো না গ্রামে কী হচ্ছে কিন্তু ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিল যে তাদের সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে। গাড়িতে করে যে লোকগুলো এসেছিল তারা ইসলামিক স্টেটের জিহাদি। এই গ্রুপের কোন কোন মুখ তাদের পরিচিত ছিল। তাদের কেউ কেউ পাশের গ্রামের ছেলে যাদেরকে তার স্বামী খেদর চিনতেন। তারা তখন তাদের জোর করে একটি গাড়িতে তুলে সিঞ্জার উপত্যকায় নিয়ে যায়। তাদের সাথে ছিল আরো ২০টির মতো পরিবার। পরে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কাছের একটি শহরে। এর পাঁচ মাস পর আই এস জঙ্গিরা তাদেরকে নিয়ে যায় জোভান ও খেদরের গ্রামের কাছে মসুল শহরে। সেসময় ওই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তখন আই এসের ওই গ্রুপের নেতা খেদরকে বলেন তাদেরকে বুঝিয়ে গ্রামে ফিরিয়ে আনতে। "আমরা সবাইকে বলেছিলাম যে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু কেউ একথা বিশ্বাস করেনি," বলেন খেদর। গ্রামবাসীরা জানতো আই এস যোদ্ধারা যেসব পুরুষকে তুলে নিয়ে যেত তারা যদি কোন কাজের না হয় তাহলে তাদের মেরে ফেলা হয়। গ্রামবাসীরা পাহাড়ে পালিয়ে যায়। আরো পড়তে পারেন: বিশ্বের কোথায় কোথায় এখনও তৎপর ইসলামিক স্টেট বিশ্লেষণ: আইএস যেভাবে টার্গেট করছে ইরানকে 'আটজনের কাছে বিক্রি করা হয়, ধর্ষণ করতো তিনজন' খেদর ও তার স্ত্রী জোভানের মতো ইয়াজিদিদের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না। যারা মাউন্ট সিঞ্জারে পালিয়ে গিয়েছিল তারা সেখানে আটকা পড়ে গেল। তাদের ছিল না খাবার পানি। ছিল প্রচণ্ড গরম। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শত শত মানুষ মারাও গিয়েছিল। অপহরণ কিন্তু যারা পাহাড়ে যায় নি তাদেরকে ধরে নিয়ে গেল আই এস। সেসব পরিবারের সদস্যরা ছিটকে পড়লো এদিকে সেদিকে। ছেলেদের পাঠিয়ে দেওয়া হলো জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। আর নারীদের নিয়ে যাওয়া হলো যৌন-দাসী হিসেবে। আর যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হলো না তাদের হত্যা করা হলো। আই এস ঠিক কতজন ইয়াজিদিকে অপহরণ করেছে তার কোন হিসেব নেই কারো কাছে। তবে জাতিসংঘের এক হিসেবে বলা হচ্ছে, সেসময় সিঞ্জারে চার লাখ ইয়াজিদি বসবাস করতো। তাদের মধ্যে কয়েক হাজারকে হত্যা করা হয় এবং সাড়ে ছয় হাজারের মতো ইয়াজিদিকে দাস বানিয়ে তাদের ধর্ষণ করা হয়, নির্যাতন চালানো হয় এবং তাদের অনেককে বিক্রি করে দেওয়া হায়। জোভানের সাথে ছিল তার তিনটি সন্তান। তাদের একটি লরির পেছনে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আইএস খেলাফতের তথাকথিত রাজধানী সিরিয়ার রাকা শহরে। পরের চার বছর জোভানের সাথে তার স্বামী খেদরের আর দেখা হয়নি। জোভান ও তার সন্তানদের রাখা হয় একটি তিনতলা বাড়িতে। সেখানে ছিল আরো দেড় হাজারের মতো নারী ও শিশু। তাদের অনেকেই জোভানের পরিচিত ছিল। নতুন জীবন এক পর্যায়ে জোভানকে বলা হলো কোন আই এস যোদ্ধার কাছে তাকে তুলে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তাকে দেওয়া হলো আবু মুহাজির আল তিউনিসি নামের এক যোদ্ধাকে যে তিউনিসিয়ার নাগরিক ছিল। সে ছিল শীর্ষস্থানীয় একজন কমান্ডার। জোভানকে তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাকে বিয়ে করতে বলা হয়। এরপর জোভান সারা দিন ধরে শুধু কাঁদতো। তিন তিনবার পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে সে ব্যর্থ হয়। প্রত্যেকবারই সে আবু মুহাজিরের হাতে ধরা পড়ে। "একসময় আমার আত্মহত্যা করার কথাও মনে হয়েছিল। কিন্তু সন্তানদের কথা ভেবে সেটা করতে পারিনি।" জোভান বুঝতে পারলেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ছাড়া তার আর উপায় নেই। আই এসের যে জঙ্গির হাতে জোভান বন্দী ছিলেন তার সম্পর্কে তিনি খুব বেশি বলতে পারেন নি। তবে তিনি বলেছেন যে আই এসের সেই যোদ্ধা তাদের সবাইকে দেখভাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অথচ বেশিরভাগ পরিবারেই বাচ্চাদেরকে তাদের মায়েদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছিল। ছেলেদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আর মেয়েদেরকে ব্যবহার করা হতো যৌন কাজে ও বাড়ির কাজের লোক হিসেবে। সিরিয়াতে একজন আইএস যোদ্ধা। আরো পড়তে পারেন: 'মধ্যপ্রাচ্যে কোণঠাসা আইএস হামলা চালাতে পারে ইউরোপে' পুলিশ কেন 'আইএস' হামলার লক্ষ্যবস্তু? কোথায় লুকিয়ে আছেন আইএস নেতা আল-বাগদাদী? আবু মুহাজির তখন জোভান ও তার সন্তানদের নিয়ে রাকার একটি বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। ওই বাড়িটি ফাঁকা পড়েছিল। জোভান জানান, আবু মুহাজির যখন রণক্ষেত্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতেন তখন তিনি তার বাচ্চাদের দেখাশোনা করতেন। কখনো কখনো তাদেরকে কাছে একটি পার্কে নিয়ে যেতেন খেলতে। অ্যাডামের জন্ম এর মধ্যেই গর্ভবতী হয়ে পড়লেন জোভান। "কোন ওষুধ ছিল না। আমি জানতাম না যে আমি কী করবো," বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক বাহিনী সেখানে প্রতিদিন বোমা ফেলতো। ইরাকি ও কুর্দি যোদ্ধারা যুদ্ধ করতো সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন এলাকায়। ঠিক তখনই আবু মুহাজির জোভানকে অন্য কোন আইএস যোদ্ধার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যখন দেখলো যে জোভানের পেটে তার সন্তান বড় হচ্ছে তখন সে তার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে। গর্ভধারণের সাত মাসের মাথায় জোভান খবর পেলেন যে আবু মুহাজির এক যুদ্ধে মারা গেছে। অ্যাডামের যখন জন্ম হয় তখন রাকায় প্রতিদিন বোমা পড়তো। জোভানের বড় দুই সন্তান হাওয়া ও হাইথাম তার নতুন সন্তানের জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। "বাচ্চারা অ্যাডামকে খুব ভালবাসতো। তারা তার যত্ন নিতো। বিশেষ করে হাওয়া। সে শুধু আমার কন্যাই ছিল না, ছিল বন্ধুও। অ্যাডামকে সে-ই খাওয়াতো, ঘুম পাড়াতো।" ঘন ঘন বোমা পড়ার কারণে জোভান তার সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে বেড়াত এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে। সবসময় বিদ্যুতও থাকতো না। খাবার জোগাড় করাও ছিল খুব কঠিন। বাচ্চাদের যাতে খাবারের অভাব না হয় সেজন্যে খুব কম খেতেন জোভান। "অ্যাডাম ছিল চুম্বকের মতো। আমি জানতাম সে আমার আসল স্বামীর সন্তান ছিল না। ওর বাবা ছিল একজন খুনি। কিন্তু অ্যাডাম তো আমার শরীরেরই অংশ। তার দেহে বইছে আমারই রক্ত।" সিঞ্জার উপত্যকা। পলায়ন ইরাকে খেদর তার পরিবার ও বাচ্চাদের সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। জানতেন না নতুন এই বাচ্চাটির কথাও। এর মধ্যে ১৪ মাস পার হয়ে গেছে। এবং খেদর প্রতিদিনই তাদের হন্যে হয়ে খুঁজেছেন। এক পর্যায়ে তিনি তার পরিবারের খোঁজ পেলেন। আই এসের কাছ থেকে পাচারকারী যে দলটি ইয়াজিদি নারী ও পুরুষদের কিনে নিচ্ছিল তাদের কাছ থেকেই জোভানের খোঁজ পেলেন তিনি। কিন্তু একেকটি বাচ্চার জন্যে তাকে ছ'হাজার ডলার করে পরিশোধ করতে হতো। হাইতাম, হাওয়া এবং আজাদ তাদের পিতার সাথে একত্রিত হলেন। কিন্তু জোভানকে আরো দু'বছর রাকায় থেকে যেতে হয়। তার নতুন সন্তান অ্যাডামকে খেদর গ্রহণ করবেন কিনা সেবিষয়ে তিনি খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না। খেদরও কয়েক মাস ধরে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। কারণ এসব বিষয়ে ইয়াজিদি সম্প্রদায় খুবই কঠোর নিয়ম অনুসরণ করে থাকে। এসব নিয়মের একটি হলো কেউ যদি একবার ধর্ম ত্যাগ করে সে আর ফিরতে পারে না। কিন্তু আই এসের হাতে অপহৃত নারীদের ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ইয়াজিদি স্পিরিচুয়াল কাউন্সিল এসব নিয়ম-নীতি কিছুটা শিথিল করে। তবে আই এস জঙ্গিদের কারণে ইয়াজিদি কোন নারী, সন্তানের জন্ম দিলে তার কী হবে সেটা পরিষ্কার ছিল না। ইয়াজিদি ধর্মে শুধু জন্ম গ্রহণের মাধ্যমেই এই ধর্মের অনুসারী হওয়া যায়। কেউ এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে না। ফলে, কোন সন্তানের পিতা ও মাতা- দুজনেই যদি ইয়াজিদি হন, তবেই শুধু তাকে ইয়াজিদি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। জোভান তখন এমন ইয়াজিদি নারীদের সাথে বসবাস করতেন যাদের আইএস যোদ্ধারা একসময় বন্দী করে রেখেছিল এবং ওই জিহাদিরা যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেছে। তাদের সবাই সামাজিক কারণে সিঞ্জার গ্রামে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। কারণ তাদের কারো কারো গর্ভের দু'তিনজন শিশুরও জন্ম হয়েছিল। খেদর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন যে বাচ্চাদের তাদের মাকে প্রয়োজন। তখনই তিনি জোভান ও অ্যাডামকে নিতে রাজি হয়ে গেলেন। গ্রামে ফেরা চার বছর পর জোভান সিঞ্জার গ্রামে ফিরে গেলেন। সাথে ছিল গ্রামের নতুন অতিথি অ্যাডামও। কিন্তু কয়েকদিন পরেই পরিবারের চেহারা বদলে গেল। তারা বলতে লাগলো অ্যাডামকে ফেলে দিতে। "তারা আমাকে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে শুরু করলো। তারা বলতে লাগলো আই এস যোদ্ধার ঘরে জন্ম নেওয়া মুসলিম কোন বাচ্চাকে সমাজ কখনোই গ্রহণ করবে না," বলেন জোভান। খেদর তখন জোভানকে নিয়ে গেলেন মসুলের একটি এতিমখানার ম্যানেজার সাকিনে মোহাম্মদ আলী ইউনুসের কাছে। তিনি ভেবেছিলেন ওই ম্যানেজার হয়তো তার স্ত্রীকে রাজি করাতে পারবেন বাচ্চাটিকে এতিমখানায় রেখে আসার ব্যাপারে। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালানোর পরেও রাজি হচ্ছিলেন না জোভান। খেদর তখন কাঁদতে শুরু করেন। আরো পড়তে পারেন: পাঁচ বছর পর আইএস নেতা আল-বাগদাদির ভিডিও কেন? ফিরে আসছে আইএস? বিন লাদেন: মৃত্যুর আট বছর পর আল-কায়েদা এখন কোথায়? "একজন মায়ের কাছ থেকে তার বাচ্চাকে সরিয়ে নেওয়ার মতো কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। এটা হচ্ছে আমার হৃদপিণ্ডের একটা অংশ কেটে নেওয়ার মতো। কিন্তু একজন মানুষের এই অনুভূতির চেয়েও বড় ইয়াজিদি সমাজের চাওয়া।" ম্যানেজার তখন মিথ্যে কথা বলেন। তিনি বলেন বাচ্চাটি অসুস্থ। তাকে ভাল মতো দেখাশোনা করা দরকার। কয়েক সপ্তাহ পরেই তাকে আবার জোভানের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এই আশ্বাস নিয়েই গ্রামে ফিরে গেলেন জোভান। কয়েকদিন পরেই তিনি সবকিছু মেনে নিতে শুরু করলেন। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার বাকি তিন সন্তানের লালন পালনে। কিন্তু এক পর্যায়ে অ্যাডামকে ভুলে থাকা তার জন্যে খুব কঠিন হয়ে পড়লো। "প্রত্যেক রাতে আমি তাকে স্বপ্নে দেখতে লাগলাম। কীভাবে তাকে ভুলে যাব আমি? সে আমার শিশু। আমি তাকে দুধ খাইয়েছি!'' এর কয়েক সপ্তাহ পর তিনি তার বাচ্চাদের বললেন, থেরাপি চিকিৎসা নিতে তিনি ডহুক শহরে যাচ্ছেন। কিন্তু আসলে তিনি যাচ্ছিলেন অ্যাডামকে তিনি যে এতিমখানায় রেখে এসেছিলেন সেখানে। অ্যাডামের জন্যে কষ্ট "আমার মনে হয়েছিল যে আমি অ্যাডামের সাথে প্রতারণা করছি। আমার অন্য বাচ্চাদের তো পিতা আছে কিন্তু অ্যাডামের তো কেউ নেই।" জোভান যখন এতিমখানায় গিয়ে পৌঁছালেন তাকে বলা হলো অ্যাডাম অসুস্থ এবং তার সাথে তিনি দেখা করতে পারবেন না। কিন্তু দুতিনদিনের চাপাচাপির পর ম্যানেজার স্বীকার করলেন যে কিছু বাচ্চাকে স্থানীয় একজন বিচারকের মাধ্যমে দত্তক দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অ্যাডামও ছিল। কান্নায় ভেঙে পড়লেন জোভান। তিনি আর বাড়িতে ফিরে যান নি। বরং আশ্রয় নিলেন উত্তর ইরাকে নারীদের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। এর কয়েক মাস পর খেদর তাকে তালাক দিলেন এবং বললেন বাকি বাচ্চাদের দেখতে জোভান যেন আর কখনো গ্রামে ফিরে না যায়। "এখানে তো অ্যাডামের কোন দোষ ছিল না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তার জন্ম হয়েছে। তাকে দোষী মনে করলে তো আমি তাকে সিরিয়াতেই রেখে আসতাম। আমি খারাপ মানুষ হলে তাকে মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। কিন্তু যে আই এস, গ্রামে এসে পুরো পরিবারকে হত্যা করে, স্ত্রী লোকজনকে ধরে নিয়ে যায় আর এরকম একজনের সাথেই কারো বাচ্চা হয় সেটা তো আর মেনে নেওয়া যায় না," বলেন খেদর। এবিষয়ে বাচ্চাদের কথাও একেক রকমের। বড় ছেলে হাইথাম তার মায়ের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি। ছোট ছেলে আজাদ প্রথম কয়েক মাস মায়ের ব্যাপারে জানতে চাইতো। কিন্তু এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু মেয়ে হাওয়া এখনও কষ্ট পাচ্ছে। "মা যখন বাড়িতে ছিল সবকিছু সুন্দর মতো চলছিল। আমি চাই মা ফিরে আসুক। আবার অ্যাডামের কাছে থাকারও অধিকার আছে," হাওয়ার কথা। একই চিত্র জোভানের মতো আরো অনেক ইয়াজিদি নারীকেই এধরনের পরিণতি মেনে নিতে হয়েছে। এরকম আরো প্রায় ২০ জন নারীর সাথে কথা বলেছে বিবিসি, যাদের গর্ভেও আইএস যোদ্ধার সন্তানের জন্ম হয়েছে। তাদের কেউ-ই ওই সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারেন নি। অনেককে ইরাকে ফিরে আসার আগে ওই সন্তান সিরিয়াতে ফেলে আসতে হয়েছে। ইয়াজিদি সমাজের অনেকেই মনে করেন এসব বাচ্চা আসলে "শয়তানের বাচ্চা।" জোভান এখন মনে করেন, আইএসের অধীনেই তার জীবন ভাল ছিল। "আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম। জীবন কঠিন ছিল। কিন্তু বাচ্চারা তো আমার সাথে ছিল।" "চার বছরের যুদ্ধে আমি আহত হই নি। কিন্তু যখন ইরাকে ফিরে এলাম মনে হলো আমি আহত হয়েছি। কারণ আমার পরিবার, আমার সমাজ, এবং সমাজের আইন আমার সন্তানকে মেনে নিতে পারেনি।" জোভান তার ইয়াজিদি সমাজ ও স্বামীর ওপর এতোটাই ক্রুদ্ধ হলেন যে তিনি মুসলিম হিসেবেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এতিমখানার ম্যানেজার সাকিনে বলছেন, জোভান তার বাচ্চাকে দত্তক থেকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন যদি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি দেখাতে পারেন যে তিনিই অ্যাডামের মা। তবে এই প্রক্রিয়া এতোটা সহজ নাও হতে পারে। কারণ জোভান একজন ইয়াজিদি নারী, অ্যাডাম একজন মুসলিম। এরকম পরিস্থিতিতে জোভান নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন যে অ্যাডাম এখন যেখানে আছে সেখানে সে ভালই আছে। "আমি প্রতিদিনই তাকে ভাবি। আশা করি হয়তো একদিন, যদি সৃষ্টিকর্তা সেটা চান, আমরা আবার একত্রিত হতে পারবো।" কিছু কিছু নাম বদলে দেওয়া হয়েছে তাদের পরিচয় গোপন রাখার জন্যে। আরো পড়তে পারেন: ডেঙ্গুর আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছেন ডাক্তার-নার্সরা তিন লেখকের টার্গেটে গুপ্তচর 'মাসুদ রানা' ওসামা বিন লাদেনের ছেলে 'মারা গেছেন' | আইএস জিহাদির শিশু নিয়ে ইয়াজিদি এক নারীর নিজের সংসারে টানাপোড়েন |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | মোহসেন ফখরিযাদে ছিলেন ইরানের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান ইরানের সবচেয়ে সিনিয়র পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদে শুক্রবার তেহরানের কাছে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্দ এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলেও, তিনি মারা যান। হাসান রুহানি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে ইরানের শত্রুদের গভীর "ঘৃণা ও হতাশা" স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে মি.রুহানি "ইহুদিবাদী শাসকচক্রের রক্তরঞ্জিত অশুভ হাতের" উপমা দেন - যা সাধারণত: ইসরায়েলকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ইসরায়েল এ ব্যাপারে এখনো কোন মন্তব্য করেনি। এর আগে ইরান দেশটির সবচেয়ে সিনিয়র পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদেকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকারের ঘোষণা দেয়। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেঘান বলেছেন, এই হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর বজ্রের মত 'আঘাত হানা' হবে। ইসরায়েল ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা যে ফখরিযাদে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির পেছনে ছিলেন। তেহরানের কাছে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্দ এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন মি..ফখরিযাদে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু, ফখরিযাদের নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন। ইরান সবসময়ই বলে আসছে, এই পারমাণবিক কর্মসূচি তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি একটি টুইট বার্তায় বলেছেন, "সন্ত্রাসীরা আজ এক বিশিষ্ট ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।" মি. জারিফও এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করে বলেন, "ইসরায়েলের এতে জড়িত থাকার গুরুতর ইঙ্গিত" রয়েছে। জাতিসংঘের ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি বলেছেন যে, এই হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা এই অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য করা হয়েছে। ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এই হত্যার খবর এলো। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সামরিক পরমাণু অস্ত্র তৈরি দুটি কাজের জন্যই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ২০১৫ সালে ছয়টি বিশ্বশক্তির সাথে এক চুক্তিতে ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের উৎপাদন সীমাবদ্ধ করার কথা বলেছিল। তেহরানের অদূরে দামাভান্দে হামলার দৃশ্য তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তির শর্তগুলোর বরখেলাপ করে আসছিল। ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বিরোধিতা সত্ত্বেও জো বাইডেন জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইরানের সাথে পুনরায় যুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক প্রধান জন ব্রেনান বলেছেন, ওই বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ড ছিল একইসঙ্গে "অপরাধমূলক" এবং "অত্যন্ত বেপরোয়া" , যা ওই অঞ্চলে সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করেছে। একাধিক টুইটে তিনি বলেছেন, ফখরিযাদের মৃত্যু "নতুন করে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব উস্কে দেয়ার পাশাপাশি প্রাণঘাতী লড়াইয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। মি. ব্রেনান আরও বলেন, "তিনি জানেন না কোনও বিদেশি সরকার ফখরিযাদেকে হত্যার অনুমতি দিয়েছিল কি না।"। মোহসেন ফখরিযাদের সাথে কী হয়েছিল? শুক্রবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে: "সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফখরিযাদেকে বহনকারী গাড়িকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। ফখরিযাদে মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান ছিলেন। "সন্ত্রাসীদের সাথে তার দেহরক্ষীদের সংঘর্ষ হয়। পরে মি. ফখরিযাদেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালালেও দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যর্থ হন তারা।" ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে হামলাকারীরা ওই বিজ্ঞানীর গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। ফার্স নিউজ এজেন্সি এর আগে খবর পেয়েছিল যে আবসার্দ শহরে একটি গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে যে "তিন থেকে চারজন ব্যক্তি, যাদেরকে সেখানে সন্ত্রাসী বলা হয়েছে", তারা মারা যায়"। ইরান জানিয়েছে, ফকরিযাদেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে তিনি মারা যান। কেন তাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছিল? পল অ্যাডামস, কূটনৈতিক সংবাদদাতা, বিবিসি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে ফখরিযাদেহ স্পষ্টতই একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। দু'বছর আগে বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছিলেন, "তার নাম মনে রাখবেন"। ইরান যখন থেকে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করা শুরু করে, তখন দেখে দেশটি দ্রুত এগিয়ে যায়। স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ করার পাশাপাশি দেশটি চুক্তির আওতায় অনুমোদিত স্তরের উপরে বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। ইরানি কর্মকর্তারা সবসময় বলেছেন যে এ জাতীয় পদক্ষেপগুলি বিপরীতমুখী, তবে এসব না হলে গবেষণার উন্নয়ন এবং সার্বিক উন্নয়ন কঠিন হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আলী আসগর সোলতানি সম্প্রতি বলেছেন যে, "আমরা পিছনে যেতে পারি না।" ইসরায়েলের অভিযোগ অনুযায়ী যদি মোহসেন ফখরিযাদে মূল হোতা হয়ে থাকেন, তবে তার মৃত্যু ইরানের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এবং এই বাধা তৈরি করতে কারা প্রচেষ্টা চালিয়েছে সেটাও সামনে আসতে পারে। সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন ইরানের সাথে ওয়াশিংটন আবারও চুক্তিতে ফিরে যাবে। তবে এই হত্যাকাণ্ড দেশটির সাথে ভবিষ্যতের যে কোনও আলোচনাকে জটিল করে তোলার উদ্দেশ্যেও হতে পারে। মোহসেন ফখরিযাদে কে ছিলেন? ফখরিযাদে ছিলেন সর্বাধিক খ্যাতিমান ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অভিজাত ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের সিনিয়র অফিসার। তার ব্যাপারে পশ্চিমা সুরক্ষা সূত্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, ফখরিযাদে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সহায়ক একজন ব্যক্তি। ২০১৮ সালে ইসরায়েলের থেকে পাওয়া গোপন নথি অনুসারে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একটি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি ফখরিযাদেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী বলে মনে করেন এবং তার "এই নামটি মনে রাখার" আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৫ সালে, নিউইয়র্ক টাইমস তাকে তুলনা করেছিলেন জে রবার্ট ওপেনহেইমারের সাথে, এই পদার্থবিজ্ঞানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ম্যানহাটন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তৈরি করেছিলেন প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র। পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফখরিযাদে 'আমাদ' প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এটি ছিল ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন কর্মসূচি যেখানে পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা হতো। আরও পড়তে পারেন: ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ‘রহস্যময়’ হামলার পেছনে কারা? কত দ্রুত ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে? ইসরায়েল আর ইরানের মধ্যে কি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে? কেন ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের শত্রু? কোন দেশের কত পরমাণু অস্ত্র আছে, কোথায় আছে? ইরানের ইসফাহানে নাটানজ পারমাণবিক ফ্যাসিলিটির স্যাটেলাইট চিত্র। আইএইএর মতে এটি ২০০৩ সালে বন্ধ করা হয়, যদিও মি. নেতানিয়াহু বলেছেন যে ২০১৮ সালে প্রাপ্ত নথিগুলোতে দেখা গেছে যে ফখরিযাদে গোপনে 'আমাদ' প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে। আইএইএ দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তদন্তের অংশ হিসাবে ফখরিযাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। ইরান এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে সন্দেহ করা হয়। যার কারণে ২০১০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির সাথে ইরান ২০১৫ সালে চুক্তি করে যে তারা তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসায় সেটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। এ মাসের শুরুর দিকে আইএইএ জানিয়েছিল যে চুক্তির আওতায় ইরানকে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমোদন দিয়েছিল তারা সেটার চাইতে ১২ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। এদিকে, জানুয়ারিতে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কুদস বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি মার্কিন হামলায় নিহত হন। এরপর থেকে আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। | পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করলো ইরান, প্রতিশোধ নেবার অঙ্গীকার |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | দাবিকৃত বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডউইথ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি পরে সাতই জুলাই গ্রামীণ ফোনও তাদের গ্রাহকদের একটি বার্তা পাঠায়। ভাষাগত ভিন্নতা থাকলেও একই তথ্যই মূলত তারা গ্রাহকদের জানায়। তাদের বার্তায় বলা হয়, "গ্রামীণফোনের ব্যান্ডউইথ কমাতে সরবরাহকারীদের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি। এতে ইন্টারনেট সেবা কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে। এ সমস্যার জন্য আমরা দু:খিত। সিদ্ধান্তটি বিবেচনা করতে বিটিআরসি-কে অনুরোধ করেছি"। আবার বিটিআরসির দিক থেকে বলা হচ্ছে, "বর্তমান টেলিযোগাযোগ আইনে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। সেবা ব্যবহারকারী গ্রাহকদের অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দু:খিত। কমিশন আশা করছে, শীঘ্রই এ পাওনা পরিশোধ করে অপারেটর দুটি স্বাভাবিক গতিতে গ্রাহকদের সেবা প্রদানে সচেষ্ট হবে"। অর্থাৎ গ্রামীনফোন, রবি এবং বিটিআরসি তিন পক্ষই গ্রাহকদের অসুবিধার বিষয়টি স্বীকার করে দু:খ প্রকাশ করছে। কারণ ব্যান্ডউইথ কমানোর ফলে দুটি কোম্পানির গ্রাহকরাই ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে। তাহলে গ্রাহকদের ক্ষতি বন্ধ করতে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করছেনা কেনো বিটিআরসি? জবাবে সংস্থার সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "কোনো গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি যদি আমাদের জানান (১০০ নাম্বারে কলে অভিযোগ করা যায়) তাহলে আমরা অবশ্যই দেখবো যে এটি কি ব্যান্ডউইথের কারণে নাকি অপারেটরের অন্য কোনো কারণে এটা হচ্ছে। আমাদের গ্রাহক স্বার্থও নিশ্চিত করতে হবে পাশাপাশি দেখতে হবে অপারেটররাও সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে"। আবার বিটিআরসির সাথে কোম্পানির দ্বন্দ্বের জের ধরে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ( এক্সটার্নাল কমিউনিক্যাশন্স) মুহাম্মদ হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা মনে করি বিটিআরসির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কমানোর স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত অনুচিত এবং বেআইনি, তা যে মাত্রাই কমানো হোক না কেন। একটি অসম্পর্কিত ও বিতর্কিত দাবীর ভিত্তিতে গ্রাহকদের ক্ষতি করার বিটিআরসির এই কার্যক্রমকে যেকোনো যুক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিই প্রশ্ন করবে। গ্রামীণফোন একটি গঠনমূলক সালিশ প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করেছে। বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করবো আমাদের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিতে"। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: গ্রামীণ-রবির ব্যান্ডউইথ কমানোর নির্দেশ গ্রামীণফোনের ওপর বিজ্ঞাপন নিয়ে নিষেধাজ্ঞা কেন? বিটিআরসি কেন মোবাইলের কলরেট বাড়াতে চায়? বিটিআরসির চিঠি তাহলে কি বিটিআরসি তাদের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে? এমন প্রশ্নের কোনো জবাব মেলেনি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে। অন্যদিকে টেলিকম কোম্পানি রবি বলছে তারা মনে করে ব্যান্ডউইথের ঘাটতি হলে টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে তারা ইন্টারনেটের স্পীড বা গতির দায়িত্ব তাদের নয় বলেই বিবিসি বাংলাকে বলছেন তারা। রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, "আমাদের সাথে যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো বিষয়ে বিরোধ থাকে সে জন্য গ্রাহক সেবা বিঘ্নিত হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের ব্যান্ডউইথ কমানোর সিদ্ধান্তটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে, সুতরাং নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারবেন। আমরা সীমিত ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে গ্রাহককে সর্বোচ্চ মানের সেবা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আর গ্রাহক আমাদের কাছে যে পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা কিনছেন ঠিক সে পরিমাণই ব্যবহার করছেন; আমরা গ্রাহকদের কাছে গতি বিক্রি করি না"। বিটিআরসির হিসেব অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে গ্রামীণের ৭ কোটি ৪৮ লাখ আর রবির ৪ কোটি ৭৭ লাখ গ্রাহক আছে। কেন ব্যান্ডউইথ কমানোর নির্দেশ দিলো বিটিআরসি গ্রামীণফোনের ৩০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ আর রবির ১৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথ কমানোর জন্য আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিটিআরসির তরফ থেকে। গত ৪ঠা জুলাই রবির ও ৭ই জুলাই গ্রামীণফোনের ব্যান্ডউইথ সীমিত করতে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর আগে বকেয়া হিসাবে গ্রামীণফোনকে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আর রবিকে ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি। তবে এ পাওনার বিষয়ে শুরু থেকেই দ্বিমত পোষণ করে আসছে গ্রামীণ ও রবি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বলেছেন কোম্পানি দুটিকে অবিলম্বে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, "মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে গ্রামীণফোন ও রবির অডিট হয়েছে। অন্যদেরও অডিট হবে। পাওনা আদায় করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে"। সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন যে পদ্ধতিতে কোম্পানি দুটি সরকারকে এতদিন যে রাজস্ব দিয়েছে তার বাইরে কিছু ক্ষেত্রে কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। তবে এর আগে রোববারই সংবাদ সম্মেলন করে বিটিআরসির সিদ্ধান্তকে বেআইনি আখ্যায়িত করে এবং এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানায় তারা। নির্দেশনাটি তুলে নিয়ে সালিশ আইন ২০০১ এর আওতায় অমীমাংসিত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয় তারা। যদিও সংসদে মন্ত্রী বলেছেন বিদ্যমান সালিশ আইন অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি সম্ভব হবেনা। রবির বিষয়ে দেয়া চিঠি গ্রামীণ ও রবির আপত্তি কোথায়? বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা। তবে জানা গেছে গ্রামীণফোন এবং রবি অডিট শুরু থেকে এর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে। তবে তারা যেটি বলার চেষ্টা করেছেন তা হলো টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী প্রতি বছর অডিট করার কথা থাকলেও বিটিআরসি সেটি করেনি। ২০১১ সালে জিপি অডিট করে ৩০৩৪ কোটি টাকা দাবি করে বিটিআরসি। পরে জিপি পাওনা অস্বীকার করে এবং অডিট প্রত্যাখান করে আদালতে যায়। পরবর্তীতে আদালত তুনভাবে অডিট করার নির্দেশনা দেয়। ২০১৭ সালে নতুন ভাবে অডিট শুরু করে গ্রামীণফোনের কাছে ১২৫৭৯ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে। এর মধ্যে প্রায় ৬১৯৪ কোটি মুল টাকার উপর সুদ ধরা হয়েছে। বাকি পাওনার মধ্যে ৪০৮৬ কোটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা যেটাও জুড়ে দেয়া হয়েছে। বিটিআরসি এবং গ্রামীণ ও রবির মধ্যকার বিরোধে শাস্তি পাচ্ছে কে? তিন পক্ষই স্বীকার করছে যে আসলে গ্রাহকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকার বেসরকারি চাকুরজীবি নুসরাত জাহান রবির সিম ব্যবহার করেন। তার অভিযোগ , " সহজে ওয়েবপেজে ঢোকা যায়না। আবার কিছুক্ষণ চেষ্টা করলে দেখা যায় পেজ ওপেন হয়না কিন্তু ডেটা চলে যাচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারেনা। আবার রিনি উেয়েবল ডেটা প্যাকেজ নেই। ফলে মেয়াদ শেষে অব্যবহৃত ডেটা থাকছেনা"। আর ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া রওশান গ্রামীণফোনের গ্রাহক। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, "ব্যান্ডউইথ কমানোর পর প্রায়ই নেট স্লো পান তিনি, আর কলড্রপ সমস্যা তো আছেই "। যদিও বিটিআরসি বলছে গ্রাহকরা যে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়ার কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি-না সেটি অভিযোগ পেলে তারা অনুসন্ধান করবে। আর গ্রামীণ ও রবি বলছে ব্যান্ডউইথ কমানোর কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি তিনটি যাই বলুন বকেয়া পাওনা আদায়ে বিটিআরসিও এমন পদক্ষেপ নিয়েছে ফলে ইন্টারনেট সেবা ঠিকমতো পাচ্ছেনা গ্রাহকরা। আবার বিটিআরসির সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলেও গ্রাহকদেরই ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনছে গ্রামীণ ও রবি। অর্থাৎ তারাও বিটিআরসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গ্রাহককেই ব্যবহার করছে। ফলে তিন দিক থেকেই আসলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে শুধুমাত্র- গ্রাহক। কিন্তু গ্রাহকের অপরাধ কি—তার সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব মেলেনি তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটির কাছ থেকেই। বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বলছেন, "গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দু:খ প্রকাশ করছি"। দায় কার? কী বলছেন বিশ্লেষক? টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন টিআইএম নূরুল কবীর। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব তিনি। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, "এটি অন্যায্য। অগ্রহনযোগ্য"। তিনি বলেন আঠার বছর ধরে অডিট কেনো করেনি বিটিআরসি। এখন পুরনো অডিটের জন্য কোম্পানিগুলোর সাথে বিরোধের জের ধরে তারা এমন কিছু করবে কেনো যাতে ইন্টারনেট সেবায় সমস্যায় পড়ে গ্রাহক। | বকেয়া পাওনা নিয়ে বিটিআরসি, গ্রামীণ ও রবির বিরোধ: গ্রাহক কেন শাস্তিতে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | তিন বছর ধরে ঢাকার রাস্তায় এভাবেই চলছে এই সিএনজি অটোরিকশা। গাড়িতে পুরোপুরি ঠাসা রাস্তায় জ্যামের ভেতরে কদাচিৎ চোখে পড়বে তিন চাকার এই গাড়িটি যা ঢাকার মানুষের কাছে সিএনজি নামেই পরিচিত। এই গাড়িটি দেখতে চমকে ওঠার মতো, সবুজ দেহের চারপাশে খাঁচার মতো লোহার গ্রিল লাগানো, কিন্তু এর ছাঁদের ওপরে আছে একগাদা সবুজ গাছ, সামান্য বাতাসেও যার লতাপাতা দুলে উঠছে। শহরের বাড়ি ঘর ও কংক্রিকেটর তৈরি উঁচু উঁচু ভবনের ছাদে গাছপালা লাগানো গত কয়েক বছর ধরে শহুরে মানুষদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও গাড়ির ছাদে এরকম গাছ লাগানো- খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু এরকমই এক সিএনজির মাথায়, পরিবেশ রক্ষায় যে গাড়িটিকে বেবি ট্যাক্সির পরিবর্তে একসময় রাস্তায় নামানো হয়েছিল, এক ঝাঁকা সবুজ গাছ নিয়ে সেই অটোরিকশাটি ছুটে বেড়াচ্ছে শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায়। ঢাকায় বায়ু দূষণও বাড়ছে। ছাদে গাছ নিয়ে তিন বছর ধরে ছুটছে এই গাড়িটি। চালক সাদেক আলী গাজী। যশোরের ঝিকরগাছার নবীনপুরের গ্রামের মানুষ তিনি। শহরে ছুটে আসার পর থেকে ঢাকার রাস্তায় সিএনজি চালাচ্ছেন ১৪ বছর হলো। তিনি জানান, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে একবার খুব গরম পড়েছিল। "তখন থেকেই ভাবছিলাম যে এতো গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে কী করা যায়। সারাদিন গাড়িতে থাকি আমার তো কষ্ট হয়ই, গাড়িতে যেসব মা, বোন, মুরুব্বীসহ যেসব যাত্রী ওঠেন তাদেরও খুব কষ্ট হয়। তখন আমি ভাবলাম যদি একটু পরিবর্তন করা যেতে তাহলে ভালো হতো।" এটা ভাবতে ভাবতেই তার মাথায় এলো- সিএনজির ছাদের ওপরে কিছু সবুজ গাছপালা লাগালে হয়তো তার যাত্রীদের গায়ে গরমের হলকা একটু কম লাগতে পারে। গাড়ির ভেতরে একটি ফ্যান লাগানোর কথাও ভাবলেন তিনি। "ভেতরের গরম বাতাসটা একজস্ট ফ্যানের মাধ্যমে আউট করা হবে। তারপর উপরের গাছ থেকে যদি তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি মায়নাস করা সম্ভব হয়, তাহলে ফ্যানের মাধ্যমে আরো তিন ডিগ্রি মায়নাস করা সম্ভব। তখন সব মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রা মায়নাস হয়ে যাবে।" সোমবার জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞানীরাও বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তাতে মানব সভ্যতা বড় রকমের বিপদের মুখে পড়তে পারে। আগে এই তাপমাত্রা ই ডিগ্রির বেশি বাড়তে না দেওয়ার কথা বলেছিলেন তারা। কিন্তু এখন এই সীমা দেড় ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার কথা বলছেন তারা। যেভাবে শুরু সাদেক আলী গাজী জানান, প্রথম দিকে তার এই পরিকল্পনা খুব ভালোভাবে এগোয়নি কারণ সিএনজি মালিকের আপত্তি ছিল। কিন্তু পরের বছর থেকেই, ২০১৫ সাল থেকে ছাদের ওপরে গাছপালা নিয়ে তিনি রাস্তায় নেমে গেলেন। তিনি বলেন, তার এই উদ্যোগকে এখন তার সিএনজির মালিক, যাত্রী, ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী- সকলেই প্রশংসা করছেন। "সাধারণ একটা জ্ঞানেই বোঝা যায়, বেশি ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান থাকার দরকার নাই। যেমন ধরুন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি সামনে একটা বৃক্ষ বা বটগাছ পেলাম। ওখানে গিয়ে বসলে পর কি তাপ একটু কম লাগে না আমাদের? গাছের নিচে বসে হয়তো একটু বেশি অক্সিজেন পেলাম। কিম্বা খুব ঘেমে গিয়েছিলাম তখন শীতল ছায়ায় বসলে ঘামটা একটু কমে গেল। এরকম তো হয়, তাই না?" সিএনজিকে সাথে নিয়ে চালক সাদেক আলী গাজী সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রাও মারাত্মক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এবছরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বড় বড় শহরের বায়ু দূষণের ওপর যে জরিপ চালিয়েছে তাতে ঢাকা শহরের অবস্থান সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকার তিন নম্বরে। সাদেক আলী গাজী জানান, ঢাকার পরিবেশের কথা ভেবেই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার ধারণা তার এই "সামান্য চেষ্টা" হয়তো ঢাকার বাতাসকে কিছুটা হলেও বিশুদ্ধ করতে পারবে। কী গাছ আছে ছাদে মি. গাজী জানান, শুরুতে তার গাড়ির ছাদে তিনি লাগিয়েছিলেন কিছু পাতাবাহার গাছ। রাস্তায় চলতে গিয়ে আশেপাশের নার্সারি থেকে মানিপ্ল্যান্টের কিছু চারা কিনে লাগিয়েছেন তিনি। আরো পরে লাগিয়েছেন মিষ্টি আলুর লতা, কাল কিসিন্দা নামে লতা জাতীয় আরো একটি ঔষধি গাছ, আছে পাথরচুনা পাতা, কিছু ঘাসসহ নাম জানা না জানা আরো কিছু গাছপালা। আজকাল বাড়িঘরের ছাদে নানা ধরনের গাছপালা লাগানো ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাঁচামরিচ কিম্বা পুইশাকের মতো ছোট ছোট গাছ নয়, আম, পেয়ারারও চাষ হচ্ছে। কিন্তু মি. গাজী জানিয়েছেন তার কখনো শাক সবজি লাগানোর কথা মনে হয়নি। তবে তাকে অনেকেই সেরকম পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি জানান, শুরুর দিকে মালিকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটেন নি। তার একাগ্রতা দেখে পরে মালিকও তাকে উৎসাহ দিতে শুরু করেন। "মালিক প্রথমে এলাও করতে চাননি। তবে আমার অন্যান্য ভালো গুণের কারণে, যেমন সারাদিন কাজ করলেও তিনি জমা পুরা পান, আধা-বেলা কাজ করলেও জমা পুরা পান। তখন মহাজন হিসাব নিকাশ করে আর বাধার সৃষ্টি করেন নি।" গাছের পরিচর্যা সাদেক আলী গাজী ২০১৩ সাল থেকে ঢাকার মিরপুর থেকে ভাড়া নেওয়া এই একই সিএনজিটি চালিয়ে আসছেন। দুই কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সেখানেই থাকেন। নিজে 'এক কলম' লেখাপড়া না করলেও বড় মেয়ে এখন অনার্সে পড়ছে, আর ছোট মেয়ে কলেজে। সিএনজি চালিয়েই চলে সংসার। শহরের বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ তিনি জানান, শুরুর দিকে তার দুই মেয়ে গাছের পরিচর্যা করার ব্যাপারে সাহায্য করতেন। কিন্তু তারা এখন পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেকারণে তিনি নিজেই পানি দেন, মরে যাওয়া পেতে ছাঁটেন, ছাঁদের ওপরে নতুন মাটি দেওয়ার মতো কাজগুলো করেন। "এই যে এখন আপনার সাথে বলছি আর গাছের পরিচর্যা করছি। যখন একটু চায়ের দোকানে গেলাম তখন পানি দিলাম। নিজে যখন পানি খাই তখন গাছগুলোকেও একটু পানি খাওয়ালাম। গাড়িটা নিয়ে যখন সকাল সকাল বের হই, তখন পানি দেই, কাজ শেষে রাতে গাড়িটা জমা দেওয়ার সময়েও একটু পানি দেই," বলেন তিনি। মি. গাজী বলেন, "আমি তো লেখাপড়া শিখিনি কিন্তু আমার গাড়ির পেছনে ছন্দ মিলিয়ে একটা বয়ান লিখে দিয়েছি- গাছ লাগান, দেশ বাঁচান, দেশ ও জাতির সেবা করুন। একটি সন্তান জন্মের পূর্বে একটি গাছ কমপক্ষে হলেও লাগানোর চেষ্টা করুন। নিজের জায়গায় না হলেও সরকারি জায়গায় লাগান।" 'পার্কে বসে যাচ্ছি' তিনি বলেন, গাড়ির পেছন থেকে লোকজন যখন এই লেখাটা পড়েন তখন তাদের মনটা হয়তো একটু হলেও ভালো লাগে। তিনি জানান, তার যাত্রীদের বেশিরভাগই তার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তাদের মধ্যে দু'একজন অবশ্য তার গাড়িতে উঠতে চায় না বলেও তিনি জানান। "বেশিরভাগ প্যাসেঞ্জার খুশি হন। বলেন, আরে আমি তো দেখছি গার্ডেনে বসে যাচ্ছি, পার্কে বসে বসে যাচ্ছি। সবুজ ছায়ার নিচে বসে রোড পারি দেওয়া হয়ে গেল।" তিনি আরো জানান, অনেকেই খুশি হয়ে তাকে বকশিসও দেন। "৫০টা টাকা বেশি দিয়ে তারা বলেন, ভাই, এই নেন, আপনি আরেকটা গাছ লাগিয়ে নিয়েন," বলেন তিনি। ঢাকার রাস্তায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি ছাদের ওপরে গাছপালার কারণে গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয় কিনা বা ভারসাম্য রক্ষা করতে কোন সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওগুলো ব্যবস্থাপনা করেই তিনি 'রোডে' নেমেছেন। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশও তাকে খুব একটা ঝামেলা করে না। তবে মাঝে মধ্যে দু'একজন তার সাথে এনিয়ে মজা ঠাট্টা করেছেন। "গাড়ির ছাদে গাছ লাগানো হয়তো আইনে নাই। আইন মেনে চলতে হবে সেটাও ঠিক। কিন্তু বিষয়টা হলো হয়তো আইনে নাই, কিন্তু যেখানে সমাজ আছে, পরিবেশ আছে, জনগণ আছে, সেখানে এরকম একটা কাজ আইন আটকাবে বলে মনে হয় না।" সাদেক আলী গাজী জানান, তার গাড়ি দেখে আরো কয়েকজন চালক তাদের সিএনজির ওপরেও গাছপালা লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, এই শহরে বসবাস করা অনেক যন্ত্রণার। এখানে তো খালি জায়গা নেই। যেখানেই একটু জায়গা পাওয়া যাবে, সেখানে দুএকটা গাছ লাগালে "গাছের ভালো অক্সিজেনটা আমরা নিলাম আর দূষিত অক্সিজেনটা গাছে গ্রহণ করলো। তাতে পরিবেশের যদি একটুখানিও উন্নতি হয় তাহলে অসুবিধা কী!" | বাংলাদেশের ঢাকায় বায়ু দূষণ: সিএনজির ছাদে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় এক চালকের উদ্যোগ |
এই সংবাদ নিবন্ধটির জন্য একটি উপযুক্ত শিরোনাম প্রস্তাব করুন। | করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হলে একটি অ্যাপে নিজেদের তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে। করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হলে এই অ্যাপে নিজেদের তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতার সম্পর্কে যেমন সব তথ্য পাবেন, তেমনি যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. হাবিবুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অ্যাপটা সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। যারা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।'' কীভাবে নিবন্ধন হবে? স্মার্ট মোবাইল ফোনে ডাউনলোডের পর ফোন নম্বর ও এনআইডি নম্বর দিয়ে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে নিজেরা নিবন্ধন করবেন। অ্যাপে নিবন্ধন করার সময় নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, পেশা ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। তবে কারা আগে টিকা পাবেন, সেই অগ্রাধিকারের তালিকাটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও সংগ্রহ করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দুটি করে ডোজ পাবেন। তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের বিস্তারিতও অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। প্রতিবেশী ভারতেও টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে এরকম একটি অ্যাপের ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও পড়তে পারেন: ভ্যাকসিনেই কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে? করোনাভাইরাস টিকাদানের খসড়া পরিকল্পনায় যা আছে ভারতে ভ্যাকসিন মিলবে হাজার রুপিতে, বাংলাদেশে কত দাম হবে? বাংলাদেশে কবে আসছে ভ্যাকসিন? ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহ কতটা? করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যারা সামনের সাড়িতে কাজ করেন, তারা আগে টিকা পাবেন। কারা আগে টিকা পাবেন ডা. হাবিবুর রহমান বলছেন, "প্রথমে আমরা যে তিন কোটি টিকা পাবো, তাতে দেড় কোটি মানুষকে দুটি করে টিকার ডোজ দেয়া যাবে। প্রতি মাসে আমরা ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেবো।" করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যারা সামনের সারিতে কাজ করেন, তারা আগে টিকা পাবেন। যেমন স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ষাট বছরের বয়স যাদের বেশি, নানারকম জটিলতা যাদের রয়েছে, তারা আগে টিকা পাবেন। প্রতি মাসে সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে যে, কোন মাসে কাদের বা কোন শ্রেণী পেশার মানুষ টিকা পাবেন। সেই অনুযায়ী তারা মোবাইল অ্যাপে নিজেদের নিবন্ধন করবেন। তখন সরকার একটি তালিকা পাবে। সেই তালিকা অনুযায়ী কবে কখন কাকে টিকা দেয়া হবে, কোথায় কোন সময় তারা টিকা পাবেন, সেটা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী নির্ধারিত কেন্দ্রে হাজির হয়ে তারা টিকা নেবেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাদের প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে, তাদের সহায়তা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও জনপ্রতিনিধিদেরও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হতে পারে। কোথায় পাওয়া যাবে অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল -উভয় স্টোরেই এই অ্যাপটি পাওয়া যাবে। স্মার্ট ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এই অ্যাপটি তৈরির কাজ শেষ করে এনেছে। এখন চলছে, শেষ মুহূর্তের মডিফিকেশন বা রূপান্তরের কাজ। কীভাবে টিকা দেয়া হবে? বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে টিকাদানের খসড়া পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন বণ্টন করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখ সারিতে থাকা কর্মী এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেসব রোগী তারা। দ্বিতীয় ধাপে থাকবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী, জনপরিবহনের কর্মীরা। তিন পর্যায়ে মোট পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে তিন শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে সাত শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি ধাপে ১১-২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন। তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১-৪০ শতাংশ বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১-৮০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরুর অন্তত দু'সপ্তাহ আগে অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তারা। দু'জন টিকাদানকর্মী ও চার জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মোট ছয় জন করে একেকটি দল তৈরি করা হবে যারা এই টিকাদান কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে পরিচালনা করবেন। প্রতিটি দল প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে বলে ধরা হয়েছে। ছয় জনের দলগুলোতে এক জন নারী ও একজন পুরুষ টিকাদানকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কমপক্ষে এক জন নারী থাকবেন। বাংলাদেশে জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে টিকা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে কোন ধাপে কারা টিকা পাবেন? প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে যে তিন শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসবেন তারা হচ্ছেন সব ধরণের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা এবং সমাজকর্মী যারা কোভিড মোকাবেলায় সরাসরি জড়িত। এদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স এবং মিডওয়াইফারি পেশায় নিয়োজিত কর্মী, মেডিকেল ও প্যাথলজি ল্যাব কর্মীরা, পেশাদার স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা, সাইকোথেরাপির সাথে সংশ্লিষ্টরা, মেডিসিন পারসনেল, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক মিলে তিন লাখ ৩২,০০০ জন। সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্মী যারা স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন ধাপে কাজ করে কিন্তু সরাসরি কোভিড-১৯ মোকাবেলার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় যেমন স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা কর্মী, ক্ল্যারিক, বাণিজ্য কর্মী, লন্ড্রি কর্মী, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য গাড়ির চালক-এমন এক লাখ ২০,০০০ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এছাড়া দুই লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, পাঁচ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি ফ্রন্ট লাইনে কাজ করা আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যেমন পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য, তিন লাখ ৬০ হাজার অন্যান্য বাহিনী যেমন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ডের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ৫০ হাজার কর্মকর্তা, ফ্রন্ট লাইনে কাজ করা সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী ৫০.০০০ জনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। এই ধাপে আরো যারা ভ্যাকসিন পাবেন তারা হচ্ছেন, জনপ্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর্মী, ধর্মীয় নেতা, দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত কর্মী, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, স্থল, সমুদ্র ও বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী শ্রমিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মী, ব্যাংক কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে এমন রোগী, রোহিঙ্গা এবং বাফার, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মী। প্রথম ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে ৬০ বছর বা তার অধিক বয়স্ক নাগরিকদের। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিক, বয়স্ক এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা মানুষ, শিক্ষক এবং সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মী, প্রথম পর্যায়ে বাদ পড়া মিডিয়া কর্মী, দুর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষ, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য, গণপরিবহন কর্মী, হোটেল, রেঁস্তোরা ও ওষুধের দোকানের কর্মী, গার্মেন্টস শ্রমিক, যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। এখন পৃথিবীবাসীর আগ্রহের মূলে রয়েছে ভ্যাকসিন তৃতীয় পর্যায়ের দুটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপে যাদের টিকা দেয়ায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে তাদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী যারা আগের ধাপে টিকা পাননি, গর্ভবতী নারী, অন্যান্য সরকারি কর্মচারী, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী কর্মী, অন্যান্য স্বায়ত্বশাসিত ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী, রপ্তানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর কর্মী, কয়েদি ও জেলকর্মী, শহরের বস্তিবাসী বা ভাসমান জনগোষ্ঠী, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মী, ডরমেটরির বাসিন্দা, গৃহহীন জনগোষ্ঠী, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী, বাদ পড়া গণপরিবহন কর্মী, বাদ পড়া ৫০-৫৪ বছর বয়সী নাগরিক, জরুরী ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা। তৃতীয় পর্যায়ের শেষ ধাপে যারা টিকা পাবেন তারা হচ্ছেন অন্য ধাপে বাদ পড়া যুব জনগোষ্ঠী, শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী, এবং এর আগের সব ধাপে বাদ পড়া জনগোষ্ঠী। সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশ জনগনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে ১৯২ দিন সময় লাগবে বলে পরিকল্পনায় বলা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচী চলবে। সরকারি ছুটির দিনে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় নির্ধারিত কিছু টিকাদান কেন্দ্রে সন্ধ্যায় টিকা দেয়া হবে। ভ্যাকসিনগুলোকে জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রেফ্রিজারেটর ট্রাকে করে পরিবহন করবে ইপিআই। জাতীয় পর্যায় এবং অগ্রাধিকার পরিকল্পনার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের টিকার আওতায় আনতে আলাদা পরিকল্পনা প্রনয়নেরও কথা বলা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে কম ঝুঁকিতে রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া হবে। বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: ৫০ যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ ইন্দোনেশিয়ার বিমান যে কারণে নজিরবিহীন পরিমানে কালো টাকা সাদা হয়েছে গত ছয় মাসে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিল টুইটার বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাবেন না ট্রাম্প | করোনা ভ্যাকসিন: যেভাবে কাজ করবে বাংলাদেশের টিকার অ্যাপ |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে ২০১৬ সালে প্রায় কুড়ি হাজার শিশু ধর্ষিত হয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও প্রায় ১২,০০০ শিশু। ফাইল ফটো আর শিরোনামে না আসা শিশু ধর্ষণের সংখ্যাটা আরও বহুগুণ বেশি। ২০১৬ সালে - একবছরেই ভারতে ধর্ষিত হয়েছে প্রায় কুড়ি হাজার শিশু বা কিশোরী। ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যানে তেমনটাই উঠে এসেছে। তবে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার শিকার যে সেখানে শুধু কন্যা শিশুরাই হচ্ছে তা নয়। প্রায় ১০ বছর আগে প্রকাশিত একমাত্র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মোট যত শিশুর ওপরে যৌন হেনস্থা হয়, তার অর্ধেকেরও বেশি ছেলেশিশু বা কিশোর। কিন্তু সমাজকর্মীরা বলছেন, ভারতে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানটি মোট ঘটনার কিছু অংশমাত্র। শিশুদের অধিকার নিয়ে সারা দেশ জুড়েই কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'ক্রাই'। তারই পূর্বাঞ্চলীয় ডিরেক্টর অতীন্দ্রনাথ দাস ব্যাখ্যা করছিলেন, "শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে গত প্রায় এক দশক ধরে। কিন্তু গত তিনবছরে সংখ্যাটা লাফিয়ে বেড়েছে। তার অর্থ এই নয় যে এরকম ঘটনা আগে হত না। কিন্তু হঠাৎ করে সংখ্যাটা বেড়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।" সাম্প্রতিক সময়ে এমন বেশ কিছু শিশু ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে, যা রীতিমতো শিহরন জাগানো। ২০১৫ সালে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কর্ণাটকে আট বছরের একটি কন্যা শিশুকে অপহরণ করার ছবি ধরা পড়ে সিসিটিভি-র ফুটেজে। পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়, তার মুখে প্লাস্টিক গুঁজে দিয়ে চুপ করিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ধর্ষণ ছাড়াও প্রায় ১২ হাজার কন্যা-শিশুর ওপরে যৌন নির্যাতন চলেছে, আর যৌন হেনস্থা ঘটেছে নয়শোরও বেশী কন্যা-শিশুর সঙ্গে। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'দীক্ষা'র প্রধান পারমিতা ব্যানার্জী বলছিলেন, "যৌন নির্যাতনটা আগেও চলত, এখনও চলে। কোনও না কোনোভাবে যৌন হেনস্থা হয় নি, এমনভাবে বোধহয় ভারতের কোনও মেয়েই বড় হয় না - সেটা ভিড় বাসে শরীরে হাত দেওয়া থেকে শুরু করে আরও গুরুতর কিছু - যাই হোক না কেন। আগে আমরা মেয়েরা মুখ খুলতাম না - ভয়ে, লজ্জায়, কিন্তু এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে একটু একটু করে।" নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষও বলছিলেন, "অ্যাবসলিউট নাম্বারে যৌন নির্যাতন বেড়েছে তো বটেই, কিন্তু এখন বিষয়গুলো সামনে আসছে আগের থেকে অনেক বেশী। শিশু সুরক্ষা সম্বন্ধে অভিভাবক থেকে শুরু করে পুলিশ - সকলেরই সচেতনতা বেড়েছে। এখন কোনও শিশুর ওপরে যৌন নির্যাতন হলে প্রথমেই রিঅ্যাক্ট করে এই বলে যে 'একটা বাচ্চার সঙ্গে এরকম করে পার পেয়ে যাবে!' এই ধারণাটা বদল হয়েছে বলেই যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে অনেকে সাহস পাচ্ছেন এখন।" আরও পড়তে পারেন: যুদ্ধবিমান ভূপতিত করার জবাবে সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা সৌদি নারীদের বোরকা পরতে হবে না জেলখানায় কষ্টে আছেন খালেদা জিয়াঃ মওদুদ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আট মাসের একটি শিশুকে ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। (ফাইল ছবি) যৌন নির্যাতনের শিকার অর্ধেকই ছেলেশিশু সমাজকর্মীরা বলছেন একটা বিরাট সংখ্যক পুত্র-শিশু বা কিশোররাও নিয়মিত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে ভারতে - যার একমাত্র সরকারী পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছিল ২০০৭ সালে। কথা বলেছিলাম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রাজকের প্রধান দীপ পুরকায়স্থর সঙ্গে। "ছেলেদের ওপরে যৌন নির্যাতনের পরিসংখ্যান খুব একটা পাওয়া যায় না। একমাত্র ওই ২০০৭ সালের সংখ্যাটা ছাড়া। আমরা যারা এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করি, তাদের একটা ধারণা ছিলই যে কী সংখ্যায় ছেলেদের ওপরে যৌন নির্যাতন চলে। আর সরকারী তথ্যে দেখা যাচ্ছে মোট যত শিশুর ওপরে যৌন নির্যাতন হয়, তার প্রায় অর্ধেক পুত্র-শিশু বা কিশোর। তার পরে আর কোনও তথ্য আমাদের হাতে নেই," বলছিলেন মি. পুরকায়স্থ। শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার কারণ কী শিশুদের ধর্ষণ বা তাদের ওপরে যৌন নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার কারণ রয়েছে একাধিক। কেউ বলছেন ইন্টারনেটে পর্ণোগ্রাফি সহজলভ্য হয়ে যাওয়া। কারও মতে বিকৃত যৌন চাহিদা মেটানোর সব থেকে সহজ টার্গেট হয়ে উঠছে শিশুরা, কারণ তারা অরক্ষিত আর তাদের ওপরে কী ঘটছে, সেটা তারা বুঝতে অক্ষম। এইসব নানা কারণেই শিশু ধর্ষন বা শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। কলকাতায় যৌন হেনস্থার ব্যাপারে শিশুদের সচেতন করে তোলার কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দীক্ষা। তার প্রধান পারমিতা ব্যানার্জীর কথায়, "অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে পিডোফিলিয়া নিশ্চিতভাবেই মানসিক বিকৃতি। কিন্তু বাসে-ট্রামে মেয়েদের শরীর ছোঁয়ার মতো যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলো কিন্তু ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। এর বাইরে একটা কারণ হল ছোটবেলায় যেসব পুরুষ হেনস্থার শিকার হয়েছেন কোনও না কোনও ভাবে, তাদের একটা অংশও কিন্তু পরবর্তীতে নিজেরা হেনস্থা করছেন মেয়েদের।" ক্রমবর্ধমান হারে শিশুদের যৌন লালসার শিকার বানানোর পিছনে রয়েছে কুসংস্কারও। অন্তত দেড়শো বছর আগের ছাপা বটতলার বই নামে পরিচিত তথাকথিত অশ্লীল সাহিত্যেও এই কুসংস্কারের উল্লেখ আছে যেখানে বলা হয়, কন্যা-শিশু অথবা কুমারী নারীদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে নানা যৌন রোগ নিরাময় হয়। নিউ লাইট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান উর্মী বসু বলেন,"আমরা যৌন কর্মী এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের সঙ্গে যারা আছেন, তাঁদের অনেকেরই বয়স ৬০/ ৬৫ এমনকি ৭০। তাঁদের কাছ থেকেই জেনেছি, বহু মানুষ এটা মনে করেন যে কুমারী নারী বা শিশুদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে তাদের নিজেদের শরীরে বাসা বেঁধে থাকা যৌনরোগ নিরাময় হয়। ভারতের বহু প্রদেশে এই ধারণা প্রচলিত রয়েছে। " সমাজকর্মী পারমিতা ব্যানার্জীও এইডস আক্রান্তদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। শিশুদের ওপরে ক্ষমতা প্রদর্শন সহজ, তেমনই যৌন লালসা মেটানোর পরে ভয় দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে রাখা আরও সহজ। সমাজকর্মীরা বলছেন ভারতে বিরাট সংখ্যক পুত্র-শিশু বা কিশোরও নিয়মিত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে স্কুল ও পরিবার থেকে শিক্ষা অনেক স্কুলেই আজকাল ছোট-বয়স থেকেই মেয়েশিশুদের শেখানো হচ্ছে কোন স্পর্শ বা আদর করাটা ভাল, কোনটা খারাপ। কোনটা গুড টাচ, কোনটা ব্যাড। আর কেউ খারাপভাবে ছুঁলে যে সেটা মাকে বলতেই হবে, সেটাও বোঝানো হচ্ছে শিশুদের। পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলছিলেন, "ভালো স্পর্শ আর খারাপ স্পর্শ নিয়ে পাঠ দেওয়াটা এখনও মূলত অভিজাত স্কুলগুলিতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সরকারী স্কুলেও যাতে এগুলো শেখানো হয়, তার জন্য আমরা স্কুল সিলেবাস কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিষয়টা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে কথা দিয়েছেন।" "শুধু মেয়েদের শেখালে তো চলবে না, ছোট ছেলে বা সদ্য-কিশোরদেরও এই পাঠটা দেওয়া দরকার যে একটা মেয়ে মানেই শুধু শরীর নয় - সে সব অর্থেই ছেলেদের সমান। অথচ উল্টোটাই মনে করে বহু ছোট ছোট ছেলেরাও। বদলাতে হবে এই মানসিকতা," বলছিলেন শাশ্বতী ঘোষ। হাজার হাজার মামলা, বিচার সময় মতো শেষ হয় না শিশুদের ধর্ষণ বা তাদের ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনা কিছুটা বেড়ে চলার একটা কারণ হল- নির্যাতনকারীরা অনেক সময়েই অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। যেটা দেখে ওইরকম ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হয় আরও অনেকে। পরিসংখ্যানও বলছে, শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিচার সময় মতো শেষ হয় না। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫৭ হাজারেরও বেশী শিশু ধর্ষণের মামলা ভারতের নানা আদালতে চলছে। অভিযুক্তদের শাস্তি পাওয়ার হারও মাত্র ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতন বা হেনস্থার ঘটনা ধরা হয় নি। আরও যা পড়তে পারেন: সাগর-রুনি হত্যা: তদন্তে গাফিলতি না ধামাচাপার চেষ্টা হজে গিয়েও যৌন হয়রানি: টুইটারে নারীদের প্রতিবাদ সুখী হওয়ার পাঁচটি উপায়: অধ্যাপকের পরামর্শ পরিসংখ্যান বলছে, শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিচার সময় মতো শেষ হয় না। কেন শিশু ধর্ষণের হাজার হাজার মামলা জমে আছে? কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এইধরনের মামলা তো শুধু নয়, ভারতের আদালতে লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে আছে। একটা সাধারণ ব্যাখ্যা হল বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল।"। মিসেস মুৎসুদ্দি আরও বলছিলেন, " শিশুদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে যে 'পকসো' আইন হয়েছে, সেখানে কিন্তু যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন এই মামলার বিচার পৃথক আদালতে এক বছরের মধ্যেই শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু কোনও জায়গাতেই আলাদা কোর্ট হয় নি, একবছরে মামলা শেষ করাও হয় না। পৃথক পুলিশ টীম তৈরি করার কথা বলা হয়েছে আইনে, সেটাও মানা হয় না। তাই অন্য মামলার সঙ্গেই শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতনের মামলা একই আদালতে চলতে থাকে আর বছরের পর বছর ঝুলে থাকে।" আবার এই বিতর্কও রয়েছে যে শিশুদের ধর্ষক বা নির্যাতনকারীদের কতটা শাস্তি দেওয়া হবে, তা নিয়ে। কেউ মনে করেন তাদের মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া উচিত। কিন্তু এই প্রশ্নও রয়েছে যে দিল্লির বাসে গণ-ধর্ষিতা ও খুন হওয়া নির্ভয়ার ধর্ষকদেরও তো চরম শাস্তি দিয়েছে আদালত - তারপরেও কি ধর্ষণ কমেছে? নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলছিলেন, "আমি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী নই। যদি ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়, তাহলে ফাঁসি হওয়াই উচিত। তবে তখন ধর্ষক ভাববে, মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রাখলে তাকে তো ফাঁসিতে ঝুলতেই হবে।" মিজ. ঘোষ যে আশঙ্কার কথা বলছিলেন, ভারতে অনেক কন্যা-শিশুর সঙ্গে বাস্তবিকই সেটাই ঘটছে - ধর্ষণের পরে তাকে হত্যা করা হচ্ছে - যাতে কোনও প্রমাণ না থাকে। | ভারতে একবছরে ২০ হাজার কন্যাশিশুকে ধর্ষণ |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | গত কয়েক বছরে মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা পেয়েছে কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ জানাতে আসেনা, যে কারণে এসব ঘটনা থেকে যায় আইনি ব্যবস্থার বাইরে। যদিও মোবাইল ব্যাংকিং করতে গিয়ে কিংবা বিকাশে অর্থ লেনদেন করতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, চারপাশে প্রায়ই এমন কথা শোনা যায়। কিভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ? শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক দুপুরে তার কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। নিজেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস রকেটের একজন নির্বাহী পরিচয় দিয়ে কথা বলেন এক ব্যক্তি। মোবাইল ব্যাংকিং করে এমন প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষকে ঠকায় প্রতারকেরা আদতে ঐ ব্যক্তি ছিলেন একজন প্রতারক, যিনি ফাঁদে ফেলে মিঃ ইসলামের পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। "আমাকে বললো যে ঐদিনের মধ্যে আপনার অ্যাকাউন্ট নতুন করে রেজিস্টার করতে হবে, আপনি ব্রাঞ্চে গিয়েও করতে পারেন, আবার আমাদের এখানে ফোনেও করতে পারেন। আমার হাতে সময় ছিল না, তাই তাদের নির্দেশনা মত স্টেপ ফলো করি।" "প্রসেস যখন শেষ হলো, আমার কাছে মেসেজ আসলো যে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে গেছে।" ডাচ বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি পরে জেনেছেন, ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোন যোগাযোগ করা হয়নি। এর পরে তিনি পুলিশের কাছেও যাননি, কারণ তার মনে হয়েছে তার নিজের বোকামির জন্যই এমনটি হয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ঢাকার একটি স্কুলের শিক্ষক নুসরাত জাহানের গল্পটি প্রায় একই রকম। লটারীর লোভ দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মূহুর্তে পরিবারের হস্তক্ষেপে তিনি বেঁচে যান। "আমাকে বলা হয়েছিল, আপনার মোবাইল নম্বরটি বেশ পুরনো, এমন পুরনো নম্বরের মালিকদের আমরা পুরস্কৃত করছি। তার অংশ হিসেবে লটারী, যাতে আপনি টিভি, ফ্রিজ, ওভেন অনেক কিছু জিতে নিতে পারেন। "আমাকে কেবল দুই হাজার টাকা বিকাশ করতে হবে ঐ নম্বরে।" "আমি কনভিন্সড হয়ে যাচ্ছিলাম বিকাশ করতে। কিন্তু বাসার সবাইকে বলাতে আর আমাকে যেতে দেয়নি। পরে আমার স্কুলে অনেকের কাছে শুনেছি কেউ কেউ এমন ফোনে ইতিমধ্যেই প্রতারিত হয়েছেন।" কী ধরণের অভিযোগ সাইবার অপরাধের মধ্যে যেসব আর্থিক অপরাধের কথা শোনা যায়, তার মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং নিয়েই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শোনা যায়। মোবাইল ব্যাংক এ্যকাউন্ট হ্যাক করা, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এমন নানা অভিযোগ রয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার মোঃ আলীমুজ্জামান ভুক্তভোগীরা অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার পান না বলেও অভিযোগ করেন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নিয়ে যত অপরাধ হয়, তার খুব সামান্য একটি অংশই তাদের কাছে অভিযোগ করে থাকেন। আবার যারা অভিযোগ করেন, তাদের সবাই মামলা করতে চাননা। ২০১৭ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আসা অভিযোগের সংখ্যা মাত্র ৪২টি, এর মধ্যে মামলা হয়েছিল ১৮টি। কিন্তু ২০১৮ সালে অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১৭টি, আর এর মধ্যে মামলা হয়েছে মাত্র ১০টি। কীভাবে সংঘটিত হয় এসব অপরাধ? পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার মোঃ আলীমুজ্জামান জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ পেতে এসব অপরাধ হয়ে থাকে। "আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি যে কয়েকটি ভাগে এদের লোকজন কাজ করে। এরা নিকটস্থ বিকাশের দোকান থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে, এরপর ফোন করে ফাঁদ পাতে। বিকাশের কর্পোরেট কম্যুনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম আবার ফেসবুক ভিত্তিক প্রতারক দলও আছে, তারা বন্ধুত্ব করে, হয়তো কাউকে বলে যে আপনার নামে বিদেশ থেকে গিফট পাঠানো হয়েছে, ট্যাক্স ও ভ্যাট দিয়ে ডিএইচএল থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে।" পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নিয়ে যত অপরাধ হয়, তার খুব সামান্য একটি অংশই তাদের কাছে অভিযোগ করে থাকেন। মিঃ আলীমুজ্জামান বলছেন, টাকা লেনদেনের সহজ মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনি এ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা, চাঁদাবাজী এবং মুক্তিপণ আদায়েরও অনেক অভিযোগ তারা পান। কী ব্যবস্থা নেয় প্রতিষ্ঠান? মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম বিকাশ দাবী করেছে, অনেক সমই তারা দেখেছেন যে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট তৈরি করা হয় ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে, ফলে অপরাধী চিহ্নিত করা জটিল হয়ে পড়ে। আইএফআইসি ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান ফেরদৌসী বেগম তবে, বিকাশের কর্পোরেট কম্যুনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলছেন,অভিযোগ নিস্পত্তিতে কিচুটা সময় লাগলেও, প্রতিটি অভিযোগের ব্যপারে তারা ব্যবস্থা নেন। "প্রথমে অভিযোগকারীকে একটি জিডি করতে হয়, এরপরেই অভিযুক্ত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার ব্যবস্থা নেই আমরা। এরপর দুই পক্ষকে ডেকে উভয় পক্ষের বক্তব্য মিলিয়ে দেখি আমরা। এ সময় চেষ্টা থাকে যাতে অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিস্পত্তি করতে কিছুটা সময় তো লাগেই।" কিন্তু মিঃ হায়দার বলছেন, যেহেতু বিকাশ এজেন্ট নিয়োগ দেয় না,অনেক সময় এজেন্টদের কর্মকান্ড তারা নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হন। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী একজন এজেন্ট দোকান থেকে কোন নম্বরে অর্থ প্রেরণ করতে পারবেন না। কিন্তু সেটা কোথাও মানা হয় না, আর সেটি বিকাশ মনিটরও করে না। ঢাকার ফকিরাপুলে একজন বিকাশ এজেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়, আইনে নিষেধ থাকার পরও যিনি দৈনিক ৭০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রেরণ করেন। তার সঙ্গে প্রতিবেদকের কথোপকথন নিম্নরূপ: : ভাই, বিকাশ করা যায়? : কত টাকা? : কত পর্যন্ত করা যায়? : এক অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করা যায় : ভাই আমি বিবিসিতে কাজ করি, একটা রিপোর্ট বানাচ্ছি। আপনি দিনে কত টাকা বিকাশ করেন? : এই ধরেন, সত্তর আশি, কয়েক লাখ টাকা পাঠাই। মাঝেমধ্যে দেড় লাখ হয়। সব দিন এক রকম না। : ভাই, সরকারের তো নিয়ম আছে, আপনি খালি ক্যাশ-ইন বা ক্যাশ-আউট করতে পারবেন, টাকা পাঠাইতে পারবেন না। সেটা কি জানেন? : কেন? আমি টাকা পাঠাইতে পারবো তো! এই পর্যায়ে তিনি আর কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই ব্যক্তির মত বাংলাদেশে প্রায় নয় লক্ষ মোবাইল ব্যাংক এজেন্ট রয়েছেন। কবে চালু? বাংলাদেশে মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয় ২০১০ সালে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই মূহুর্তে ১৬টি ব্যাংকের এই সেবা রয়েছে। কাজী মিনহার মহসিন এ বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৭২ লক্ষ মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে প্রায় ১১ শত কোটি টাকা লেনদেন হয়। যেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটির মত। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি এবং অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি এবং অনলাইনে কেনাকাটার সময় ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেবার মত অপরাধও ঘটে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কাজী মিনহার মহসিন বলছেন, এটিএম মেশিনে এক ধরণের বিশেষ মেশিন বসিয়ে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করা যায়, যাকে কার্ড স্কিমিংও বলা হয়। সেটা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তবে, মিঃ মহসিন বলছেন এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে অনলাইনে কেনাকাটার সময় ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য। "এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো অনলাইনে কেনাকাটার সময় ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি। এখানে কোনকিছু কিনতে আপনি যখন আপনার তথ্য দিচ্ছেন, সেটা থেকে যাচ্ছে। এই সাইটগুলো খুব সহজে হ্যাক করা যায়, এবং হ্যাক হলে আপনার তথ্য তো সেখানে রয়ে যাচ্ছে।" "ফলে অনেক সময় আপনি হয়তো দেখবেন, কোন একটা থেকে আপনি কোন পন্য কেনার পর, কিছুদিন পর হয়তো আপনার নামে বড় কোন অর্থের বিল এসে হাজির, যা আপনি কেনন নাই।" অর্থনীতিতে কী ক্ষতি? অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, যেহেতু ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিং এ অ্যাকাউন্ট খোলা ও অর্থ লেনদেন সহজ, সেকারণে বহু মানুষ এ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। আবার এখন অনলাইনেও মানুষ প্রচুর কেনাকাটা করে থাকে, যে কারণে প্রযুক্তি নির্ভর সার্ভিস ব্যবহারে অপরাধের হার বাড়ছে, বলছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। "সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেও লেনদেন অনেক আধুনিক হয়েছে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইনে কেনাকাটা কিছুই বন্ধ করা যাবে না। বরং এখানে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে,এবং সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে এসব আধুনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে মানুষ প্রতারিত হবে।" তিনি বলছেন, এসব সাইবার অপরাধের কারণে আর্থিক ক্ষতি যতটা হয় তার চেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হয়। ফলে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক কী করছে তবে, পুলিশ বলছে গত দুই বছরে এটিএম বুথ থেকে ম্যাগনেটিক চিপের তথ্য হাতিয়ে কার্ড ক্লোন করে যেসব জালিয়াতি হত, সেসব অনেকটাই কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো বলছে, কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ যখন ক্রমে বাড়ছিল, সেসময় অনেকটা বাধ্য হয়েই সতর্ক হতে হয় তাদের। কারণ গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবার ঝুঁকি বাড়ছিল। বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান ফেরদৌসী বেগম বলছিলেন, গ্রাহকের সুরক্ষায় কী ধরণের ব্যবস্থা তারা নিয়েছৈন। "আমরা কয়েক স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডটিতে এমন ব্যবস্থা করা যা ক্লোন করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া অনলাইনে যেকোন কেনাকাটায় কয়েক ধাপে নিরাপত্তা বেস্টনী পার হতে হবে। আর ডিজিটাল কর্মকান্ড মনিটর করার জন্য সার্বক্ষনিক একটি টিম রয়েছে আমাদের, ফলে প্রতারকদের জন্য কাজটি কঠিন এখন।" বাংলাদেশ ব্যাংক কী বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবী করেছে, এসব আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সতর্কতা দেয়া ও অর্থদণ্ডের মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিস বিষয়ক নির্দেশনায় অনিয়মের জন্য লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, "আমরা বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করে থাকি, এজন্য আমাদের মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস আইন আছে, তার আওতায় শাস্তির ব্যবস্থার রয়েছে।" পুলিশ বলছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতার অভাবে সাইবার অপরাধের হার বাড়ছে। তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিং এ হওয়া অপরাধ নিয়ন্ত্রন করা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া। ব্যাংকের জন্যেও জটিল একটি কাজ, যেকারণে অনেক ব্যাংক নিজেদের এই সংক্রান্ত সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে আইএফআইসি এবং এক্সিম ব্যাংক নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। অনলাইনে আর্থিক লেনদেন করতে নিরাপদ থাকতে কী করবেন? * পিন নম্বর গোপন রাখুন * ভুয়া "কাস্টমার কেয়ার" থেকে সাবধান, নকল মেসেজ ও ভুয়া কলের ব্যাপারে সাবধান * যেকোন লেনদেনের পূর্বে নিজের অ্যাকাউন্ট চেক করুন * সঠিকভাবে নিবন্ধিত সিম থেকে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলুন * আপনার ফোন থেকে যদি মোবাইল ব্যাংকিং করে থাকেন, তবে আপনার ফোন যেন অবশ্যই সবসময় 'লকড' থাকে * কোনো নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে নিশ্চিত হোন * কারো সাথে ব্যাংকের তথ্য শেয়ার না করা * থার্ড পার্টি অ্যাপ 'আলাউ' নিষ্ক্রিয় রাখুন * অপরিচিত নম্বর থেকে আসা এমএমএস, ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই ফাইল গ্রহণ ও খোলা থেকে বিরত থাকুন * মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইনে কল করে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন | আর্থিক খাতে সাইবার ক্রাইম ঠেকানো যাচ্ছেনা কেন? |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | মোঃ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম বিভিন্ন স্থানে সুবিধাজনক পরিচয় দিতেন সাহেদ করিম। কখনো তিনি নিজেকে আমলা, সামরিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তোলা ছবি ব্যবহার করে তিনি নিজেকেও প্রভাবশালী বলে তুলে ধরতেন। র্যাবের গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন, "তার প্রতারণার ধরণ একটি অনন্য ধরণ। তাকে বলা যায় প্রতারক জগতের 'আইডল'। র্যাব কর্মকর্তা মি: কাশেম বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো: শাহেদ বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। "প্রতারণাই ছিল তার প্রধান ব্যবসা," বলেন ঐ র্যাব কর্মকর্তা। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা শুরুতে ভুয়া টেস্টের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এখন দিন যতই যাচ্ছে দেখছি অসংখ্য জঘন্য অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল সাহেদ। যাদের সঙ্গে তার ব্যবসা ছিল, তাদের সঙ্গেই প্রতারণা করেছে। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চমহলের কর্তাদের সাথে দহরম-মহরমের অনেক ছবি রয়েছে মো. সাহেদের। আরো পড়ুন: 'বোরকা পরে নৌকায় পালানোর চেষ্টা' রিজেন্ট চেয়ারম্যানের, ঢাকায় এনে উত্তরায় অভিযান রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেল কীভাবে? রিজেন্ট হাসপাতালের মালিককে নিয়ে কতটা বিব্রত আওয়ামী লীগ প্রভাবশালীদের সাথে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের ছবি নিয়ে যা বললো র্যাব একাধিক ব্যবসা শুরু করেছিলেন সাহেদ করিম। তবে সবচেয়ে রমরমা ছিল তার হাসপাতাল ব্যবসা। ২০০৭ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদন নেন মোঃ সাহেদ। তবে তখন সেটি হাসপাতাল নয়, এটি ক্লিনিক ছিল। পরবর্তীতে হাসপাতাল হিসাবে কার্যক্রম শুরুর পর উত্তরার পাশাপাশি মিরপুরেও শাখা খোলা হয়। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসাবে রিজেন্ট হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর এই হাসপাতালটি বিশেষ পরিচিতি পায়। পরবর্তীকালে র্যাবের অভিযানে জানা যায় যে, ২০১৪ সালের পর থেকে হাসপাতালের অনুমোদন নেই। করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা ও ভুয়া প্রতিবেদন দেয়ার মতো অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসে। এই হাসপাতালের চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার নাম করে তিনি অনেক মন্ত্রী-প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে খাতির জমিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন, হাসপাতালের কথা জানার পর তিনিও সাহেদকে বলেছিলেন যে রোগী পাঠাবেন। বেশ কয়েকজনকে পাঠিয়েছিলেনও। আটকের পর মোঃ সাহেদ কর্মজীবনের শুরু থেকেই প্রতারণা দু'হাজার নয় সালের দিকে মোঃ সাহেদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মালামাল সরবরাহের ঠিকাদারি করতেও শুরু করেন। রাইজিং শিপিং এন্ড ট্রেডিং কোম্পানি ও রাইজিং রিয়েল এস্টেট নামে সেই সময় তিনি দুইটা প্রতিষ্ঠান চালাতেন। এসি সরবরাহে প্রতারণার মামলায় ২০০৯ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মোঃ সাহেদ। খুলনার একটি টেক্সটাইল মিলে এসি সরবরাহের করে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে তিনি চেক দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়। সেই মামলায় তাকে কয়েকমাস কারাগারে থাকতে হয়। মোঃ সাহেদ ২০০৯ সালে তিনি ডিবিএস নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিস চালু করেন। সেখানে চাকরি করা সাতক্ষীরার কাজী সালাহউদ্দিন বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাকে বলেছেন, তাকে ওই প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এক টাকাও বেতন না দেয়ায় দুই বছর পরে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তার কাছ থেকে ২৯ লাখ টাকার আসবাবপত্র নিয়ে এক টাকাও পরিশোধ করেননি। এই কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি দেয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় প্রধান আসামি এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব। দু'হাজার দশ সালে সাহেদ ধানমণ্ডি এলাকায় বিডিএস কিক ওয়ান ও কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দুটি বহু ধাপের বিপণন কোম্পানি শুরু করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকাপয়সা আত্মসাৎ করে তিনি ভারতে পালিয়ে যান বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সেই সময় তিনি নিজেকে পরিচয় দিতে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন। সেই সময় তারা সপরিবারে ভারতের বারাসাতে কিছুদিন ছিলেন। র্যাবের কর্মকর্তাদের মতে, এই ব্যবসা থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়েই তিনি রিজেন্ট গ্রুপ চালু করেন। সেসব মামলায় জামিন হওয়ার পর তিনি দেশে এসে আবার ব্যবসা শুরু করেন। তার আয়ের আরেকটি উৎস ছিল প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ থেকে ছয় কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার বিষয়ে দুইটি মামলা আদালতে চলছে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত ৩২টি মামলা আছে বলে র্যাব জানতে পেরেছে। তিনি মালামাল নিয়ে চেক দিলেও সেসব হিসাবে কোন টাকা থাকতো না। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: ইরানের চাবাহার বন্দরে রেল প্রকল্প ভারতের হাতছাড়া হওয়ার পেছনেও কি চীনের ভূমিকা? নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে পাঠাও প্রতিষ্ঠাতার খণ্ড-বিখণ্ড লাশ দক্ষিণ চীন সাগর: চীনের নতুন মাথাব্যথা? চাকরির বাজারে তরুণদের নতুন যেসব দক্ষতা কাজে লাগতে পারে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে ছবি রিজেন্ট গ্রুপ চালু করার পর তিনি হাসপাতাল, আবাসন, হোটেল, কলেজসহ একাধিক ব্যবসা চালু করেন। সেই সঙ্গে ঠিকাদারি ব্যবসাও শুরু করেন। কিন্তু ঠিকাদারির জন্য মালামাল নিয়ে টাকা পরিশোধ না করা বা চেক দিলেও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেসব ঘটনায় ঢাকার অনেকগুলো থানায় মামলা ও জিডির খবর পাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের কর্মকর্তারা। তার ফেসবুক একাউন্টে নিজের পরিচয় দিয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য, ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, রিজেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট,রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, কর্মমুখী কর্মসংস্থান লিমিটেড, রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। সেন্টার ফর পলিটিকাল রিসার্চ নামের একটি প্রতিষ্ঠানেরও তিনি চেয়ারম্যান। এই পরিচয়ে তিনি একাধিক টেলিভিশন টকশোতে এসেছেন। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে। র্যাবের পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেছেন, দুষ্ট লোকেরা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলেন। সাতক্ষীরায় সাহেদকে আটক করার পরের মুহূর্ত তিনি বলেন, "বাংলাদেশের হর্তা-কর্তা ব্যক্তিদের সাথে সে ছবি তুলেছে। এটা আসলে তার একটা মানসিক অসুস্থতা। এই ছবি তোলাকে কেন্দ্র করেই সে প্রতারণা করতো।" মো: শাহেদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে র্যাবের পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, "প্রতারকদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তারা যখন যার নাম পারে তখন সেটা বেচে নিজের জীবনকে অগ্রগামী করার চেষ্টা করে। " একটি পত্রিকার ডিক্লারেশনও নিয়েছিলেন তিনি, যার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে তার নাম রয়েছে। রিজেন্ট গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মোঃ. সাহেদ আত্রাই নদ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ করেছেন। কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ ও কক্সবাজারের সাইক্লোন শেল্টার, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনেও কাজ করেছেন। নিজের পরিচিতি বাড়াতে টাকার বিনিময়ে টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে যেতে শুরু করেন মোঃ সাহেদ। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সেসব ছবি সামাজিক মাধ্যম, নিজের অফিস ও বাসায় টাঙিয়ে রাখতেন। একসময় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সাহেদের ছবি দেখা গেলেও, আওয়ামী লীগের একটি উপ-কমিটিরও সদস্য হয়েছিলেন মোঃ সাহেদ। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের আগেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাহেদ করিমের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে ২০১৬ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হন। তবে গত ডিসেম্বরে ২১ তম সম্মেলনের পর নতুন উপ-কমিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পড়াশোনা সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন মোঃ সাহেদ। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তার একজন সহপাঠী জানিয়েছেন, সাহেদ কারো সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না। তার মা তাকে নিয়ে আসতেন আবার নিয়ে যেতেন। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলছেন, ঢাকার পিলখানার রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করেছিলেন কিনা, সেটা কারো জানা নেই। পারিবারিক জীবন মোঃ সাহেদের বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায়। তার দাদা একরামুল করিম ভারত বিভাগের পর ভারতের বসিরহাট মহকুমা থেকে সাতক্ষীরায় এসে বাড়ি করেন। মোঃ সাহেদের দাদার একসময় সাতক্ষীরায় অনেক জমি-জায়গা ছিল। কামালনগরে তাদের পৈতৃক বাড়ি ছিল। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তার বাবা-চাচারা সেসব জমি ও জায়গা বিক্রি করে দেন। নিজেদের বিলের জায়গায় ঘের তৈরি করে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিলেন তার পিতা। কিন্তু বেশিদিন সেই কাজ করেননি। একসময় সাতক্ষীরা শহরে সাহেদদের নিজেদের বাড়ি থাকলেও সেটিও বিক্রি করে তারা ভাড়া থাকতে শুরু করেন। সাতক্ষীরার আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেছেন, ''নিজেদের সব জমি প্লট আকারে তারা বিক্রি করে দেন। আমিও তাদের কাছ থেকেই কিনেছি। ২০০৭ সাল থেকে তারা আমার বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন।'' পরবর্তীতে এই বাড়িতেই তিনি ফ্ল্যাট কেনেন। সাহেদের মা ২০১০ সালে মারা যান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে সাহেদ কখনো সাতক্ষীরার রাজনীতিতে জড়াননি। সাহেদের বাবা-চাচারা চার ভাই। জমি-জায়গা বিক্রির পর দুই ভাই ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ি কেনেন। সেখানেই তার পিতা থাকতেন। তবে আবু বকর বলছেন, তার পিতার এই বাড়িতে ফ্ল্যাট থাকলেও সাহেদ কখনো সেখানে আসেননি। তবে তিনি ২০০৫ সালে সাতক্ষীরায় একটি বিয়ে করেছিলেন বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। কিন্তু তার আচরণে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন অসন্তুষ্ট হওয়ায় একমাসের মধ্যেই বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে মোঃ সাহেদ ঢাকায় একটি বিয়ে করেছেন বলে জানা যায়। | প্রতারণায় অভিযুক্ত সাহেদ, যেভাবে ঘটে তার নাটকীয় উত্থান |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | রাজনীতির মাঠে পা ফেলার আগে তিনি ছিলেন বিশাল এক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মালিক। তখনও তিনি তার নানা কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের জন্য আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও তাকে ঘিরে নতুন নতুন আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম হয়েছে। অতীত ইতিহাস ও অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের কারণে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো। কিন্তু অভিনব প্রচারণা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত টেড ক্রুজ ও মারকো রুবিওকে পেছনে ফেলে ইন্ডিয়ানা প্রাইমারির পর তিনি রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মনোনীত হন। পরে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী পেশাদার রাজনীতিবিদ হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আগাম সব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, জরিপ ও পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে ছাড়েন ৭০ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিজয়কে ঘিরে অনেক সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ উঠেছিল। ওই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের অভিনব নির্বাচনী ব্যবস্থা ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সফল রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভাজন সৃষ্টিকারী নীতি ও বক্তব্যের কারণে পরের চার বছরেও তার প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাকে ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ারও কথা উঠেছিল। এমনকি অনেক বিশ্লেষক বলেছিলেন যে তিনি এক বছরের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। কিন্তু সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চার বছরের পুরো মেয়াদ পার করে ২০২০ সালের নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দল থেকে আবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। শুরুর জীবন নিউ ইয়র্কে বিত্তশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অর্ধেক স্কটিশ। কারণ তার মা মেরি ম্যাকলয়েডের জন্ম স্কটল্যান্ডে। ১৯৩০ সালে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে মেরি ম্যাকলয়েড চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে প্রথমে পরিচয় ও পরে পরিণয় হয় একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিল্ডার ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পের সঙ্গে। অত্যন্ত পরিশ্রমী এই দম্পতির ঘরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম নিউ ইয়র্ক শহরে, ১৯৪৬ সালে। পরিবারের অঢেল সম্পত্তি সত্ত্বেও তার পিতা চেয়েছিলেন তার সন্তানরাও তাদেরই কোম্পানিতে অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে কাজ করবেন। স্কুলে দুষ্টুমি করতে শুরু করলে ১৩ বছর বয়সে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সামরিক একাডেমিতে। পেনসালভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেছেন মি. ট্রাম্প। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে বড় ভাই ফ্রেড জুনিয়র পাইলট হতে চাওয়ায় বাবার ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। পরে ফ্রেড ট্রাম্প ৪৩ বছর বয়সে অ্যালকোহল আসক্তির কারণে মারা যান। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার ভাই-এর মৃত্যুর কারণে সারা জীবন তিনি অ্যালকোহল ও সিগারেট থেকে দূরে ছিলেন। মি. ট্রাম্প বলেছেন, পিতার কাছ থেকে দশ লাখ ডলার ঋণ নিয়ে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি তার বাবার কোম্পানিতে যোগ দিয়ে ব্যবসার বিপুল সম্প্রসারণ ঘটান। ডোনাল্ড ট্রাম্প- যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজনীতিতে যার অভিজ্ঞতা ছিল না। ১৯৭১ সালে এই কোম্পানির নাম বদল করে তিনি নতুন নামকরণ করেন - ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। তার বাবা ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, "আমার পিতাই ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা।" ব্যবসা সম্রাট দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের পারিবারিক ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন। ব্রুকলিন ও কুইন্সে আবাসিক বাড়িঘর নির্মাণ থেকে তিনি সরে আসেন নিউ ইয়র্কের কেন্দ্রে ম্যানহাটনের মতো পশ এলাকায় রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায়। ভগ্নপ্রায় কমোডোর হোটেলকে তিনি পরিণত করেন বিলাসবহুল গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে এবং ফিফথ এভিনিউতে নির্মাণ করেন ট্রাম্প প্রপার্টির বিখ্যাত ভবন ৬৮ তলার ঝকঝকে উজ্জ্বল ট্রাম্প টাওয়ার। তার কোম্পানির নির্মিত অন্যান্য সুপরিচিত ভবনের মধ্যে রয়েছে ট্রাম্প প্যালেস, ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড টাওয়ার, ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলসহ আরো কিছু ভবন। মুম্বাই, ইস্তাম্বুল ও ফিলিপিনেও আছে ট্রাম্প টাওয়ার। ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু হোটেল ও ক্যাসিনোও তৈরি করেছেন। তার ওই ব্যবসা অবশ্য পরে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। বিনোদন জগতের ব্যবসাতেও তিনি এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউ এস এ এবং মিস টিন ইউ এস এ সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে তিনি এনবিসি টেলিভিশনে দ্য অ্যাপ্রেনটিস নামের একটি রিয়েলিটি শো চালু করেন। ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন। এই শো দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই শো এর বেশ কিছু অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শো ম্যান থেকে শোবিজেও সফল হয়েছেন তিনি। পরে তিনি ঘোষণা করেন যে এই অনুষ্ঠান করে তিনি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ (২১৩ মিলিয়ন ডলার) পেয়েছিলেন। রেসলিং ম্যাচও উপস্থাপনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরো পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠি কোন রাজ্যগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: কে এগিয়ে- ট্রাম্প না বাইডেন? টিভি শো করেও তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। অর্থ-বিত্তের পাশাপাশি এসব অনুষ্ঠান থেকে তিনি প্রচুর নামযশও অর্জন করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকটি বই লিখেছেন। এমন কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও মালিক হয়েছেন যারা নেকটাই থেকে শুরু করে বোতল-জাত পানি বিক্রি করে। কী নেই তার নামে- ট্রাম্প মর্টগেজ, ট্রাম্প শাটল, অনলাইন ট্রাভেল ওয়েবসাইট- গো ট্রাম্প, ট্রাম্প রেস্তোরা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ডলস ইত্যাদি ইত্যাদি! ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থ বিত্তের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলার। যদিও মি. ট্রাম্পের হিসেবে এর পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার। তবে এর মধ্যে নিজেকে তিনি কয়েকবার অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। একবার ১৯৮০-এর দশকের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, "আমি ফিফথ এভিনিউ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। টিফানির (কন্যা) সামনে ছিল এক ব্যক্তি। তার হাতে ছিল একটি ক্যান। আমি তখন তাকে বললাম তুমি কি জানো যে এই লোকটি আমার চেয়েও বিত্তশালী। আমার দিকে তাকিয়ে সে বললো তুমি কী বলছো? আমি বললাম রাস্তার ওপাশে যে লোকটি তার এখন আমার চেয়েও ৯০০ মিলিয়ন ডলার বেশি অর্থ আছে।" তবে তার এই সম্পদের পরিমাণ তার মেজাজ-মর্জির মতোই উঠা-নামা করেছে। স্বামী ও পিতা ট্রাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনবার বিয়ে করেছেন। স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী - ইভানা জেলনিকোভা। তিনি ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের একজন অ্যাথলিট, ফ্যাশন ডিজাইনার ও মডেল। এই দম্পতির তিন সন্তান- ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা এবং এরিক। পরে ১৯৯০ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যে যুদ্ধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তাদের এই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে তখনকার ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোতে প্রচুর মুখরোচক গল্প প্রকাশিত হয়। এসব খবরে বলা হয় যে মি. ট্রাম্প তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালাতেন। যদিও তার সাবেক স্ত্রী ইভানা পরে এসব ঘটনাকে তুচ্ছ করে দেখিয়েছেন। প্রথম স্ত্রী ইভানার সঙ্গে মি. ট্রাম্প। পরে ১৯৯৩ সালে তিনি অভিনেত্রী মারলা মেপেলসকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা- টিফানি। এর ছ'বছর পর ১৯৯৯ সালে তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। এর পরে ২০০৫ সালে তিনি তার বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ক্নাউসকে বিয়ে করেন। তিনিও একজন মডেল। এই দম্পতির ঘরে এক ছেলে- ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প। তার প্রথম ঘরের সন্তানেরা এখন ট্রাম্প অর্গানাইজেশন পরিচালনা করেন। অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেজাজ-মর্জির কথা উল্লেখ করে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনী লিখেছেন এরকম একজন টিম ও ব্রায়ান বলেছেন, মি. ট্রাম্প আট দশজনের মতোই একজন সাধারণ মানুষ। "তিনি জাঙ্ক ফুড খেতে পছন্দ করেন, শুক্রবার রাতে টিভির সামনে বসে স্পোর্টস দেখেন। অনেক দিক থেকেই তার আচার আচরণ একজন কিশোরের মতো। কিশোর বয়সে তো অনেকেই অনেক সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।" বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ও সন্তানদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রাজনীতিতে অভিষেক ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৮৭ সালে একবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে লড়াই করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশও নিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে কিনা - এই প্রশ্নে ২০০৮ সালে যখন আন্দোলন শুরু হয় তখন তিনি তার অত্যন্ত সরব একজন সদস্য ছিলেন। এই প্রশ্ন ও বিতর্ক ছিল অবান্তর। কেননা মি. ওবামার জন্ম হাওয়াই রাজ্যে। এই বিতর্কে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প পরে কোন ধরনের ক্ষমা না চাইলেও বলেছিলেন বারাক ওবামার জন্ম নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হয়েছিল সেসবের কোন ভিত্তি নেই। ২০১৫ সালে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে তিনি হোয়াইট হাউজে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতে চান। "এই দেশটিকে আবার মহান করে তুলতে পারেন আমাদের এমন এক ব্যক্তির প্রয়োজন। আমরা সেটা করতে পারি," নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় এই মন্তব্য করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। 'মেক আমেরিকা গ্রেট' এগেইন অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে আবার একটি শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে - এই স্লোগান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েন মি. ট্রাম্প। বারাক ওবামার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিতর্কিত এই নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলা, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মি. ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরেও প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। সেসময় এমন কিছু অডিও ফাঁস হয়েছে যেখানে মি. ট্রাম্পকে নারীদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করতে শোনা গেছে। এসময় তার দলেরও অনেকে মন্তব্য করেছেন যে মি. ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। শুধু তাই নয়, জনমত জরিপেও তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু মি. ট্রাম্প সবসময় তার সমর্থকদের বলেছেন, এসব জরিপ যে ঠিক নয় সেটা তিনি প্রমাণ করে দেখাবেন। এবং শেষে তা-ই হয়েছে। নির্বাচনের পরে ২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজনীতিতে যার কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এই লড়াই ছিল রাজনীতির মাঠ থেকে আদালত পর্যন্ত। নানা বক্তব্যের জন্যেও তিনি সমালোচিত হয়েছেন। যেমন মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের কথা বলতে গিয়ে একবার তিনি বলেছিলেন মেক্সিকো থেকে ধর্ষণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসছে। বেশ কয়েকজন নারী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। অনেকে তাকে একজন ভাঁড়, কমেডিয়ান হিসেবেও উল্লেখ করেন, কেউ কেউ তাকে বলেন মিথ্যাবাদী। আবার যেভাবে তিনি সহজ সরল ভঙ্গিতে সোজা সাপ্টা উচ্চারণ করেন সেটা অনেককে আকৃষ্টও করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি নিয়েও কথাবার্তা হয়। এমনকি কথা হয় তার চুলের রঙ ও স্টাইল নিয়েও। অনেকেই এই চুল আসল নাকি নকল এনিয়েও প্রশ্ন করেন। রিয়েল এস্টেট, ব্যবসা, রিয়েলিটি টিভি শো, উপস্থাপনা এবং রাজনীতি - সবকিছুতেই সফল ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সমর্থকরা তাকে ডাকেন- 'দ্য ডোনাল্ড।' এতো কিছুতে সফল হওয়ার পরেও তিনি কেন প্রেসিডেন্ট হতে চান? তার নামের পরিধি আরো বাড়ানোর জন্য? প্রথমবার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, "আমাদের দেশের একজন বড় নেতার প্রয়োজন। আর সেজন্যই আমি প্রার্থী হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি।" এই ডোনাল্ড ট্রাম্পই অ্যাপ্রেন্টিস রাজনীতিবিদ থেকে হয়ে উঠেছেন একজন শীর্ষ রাজনীতিবিদ, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি- আমেরিকার প্রেসিডেন্ট! এখন হোয়াইট হাউজের টপ জবের জন্য ভোটাররা তাকে আরো চার বছরের মেয়াদে আবার হায়ার করবেন, নাকি গত চার বছরের পারফরমেন্স দেখে এবারই তাকে ফায়ার করে দেবেন- সেটা জানা যাবে তেসরা নভেম্বর। | আমেরিকা নির্বাচন ২০২০: ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে টিভি তারকা থেকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে 'আম্পান' নামে প্রবল এক ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু এমন সময়ে এরকম একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে করোনাভাইরাস মহামারি সামাল দিতে জেরবার হতে হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পুরো সক্ষমতাই বলতে গেলে লড়ছে মহামারি সামলাতে। এরকম পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা কীভাবে হবে? আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্বের সংকট: ঘুর্ণিঝড়ের হাত থেকে প্রাণহানি ঠেকানোর একটি প্রধান উপায় হলো ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ বলছেন, এই সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। "নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা একটু কষ্টকর হবে। নারীদের জন্য এটা আরো কষ্টকর হবে। কারণ গাদাগাদি হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। আর কোন সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় পাওয়া যাবে সেটিও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।" মানুষ এবং গবাদিপশুর মৃত্যুহার কমাতে গেলে সাইক্লোন শেল্টারের কোন বিকল্প নেই। তাই পর্যাপ্ত সেন্টার খুঁজে পাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন তিনি। "যদি শেল্টারে আসার কারণে করোনাভাইরাস কোন ভাবে সংক্রমিত হয় বা ছড়ায় তাহলে ওই এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। এটাও একটা ঝুঁকি।" ত্রাণ ও পুনর্বাসন: মি. ওয়াজেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় মানুষের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছানো, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সেটাও নতুন চ্যালেঞ্জ আনবে। কারণ, ঘূর্ণিঝড়টি এমন একটা সময় আসছে যখন একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি চলছে, আর অন্যদিকে চলতি বছরের বাজেটেরও শেষ মুহূর্ত চলছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, সরকারের যে মজুদ বা গচ্ছিত অর্থ আছে তা অল্প কিছু মানুষের মধ্যে দেয়া যাবে। "আর সেটি না হলে, নতুন বাজেটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে," তিনি বলেন। 'আম্পান' কী ক্ষতি করতে পারে? আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান যখন আঘাত হানবে তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়। ঘরবাড়ি, গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে। তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার উপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন মি. আহমেদ। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মি. ওয়াজেদ বলছেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি হয়তো দেশের উত্তর-পশ্চিম দিক অর্থাৎ সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানবে। তিনি বলেন, আঘাত হানার সময় যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকে তার মানে হচ্ছে এটা বড় ধরণের একটা ঘূর্ণিঝড়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরণের ক্ষতি হয়। একটা হচ্ছে প্রাণহানি। আরেকটা হচ্ছে ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতি। অতীতের বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রাণহানির সংখ্যা কমে গেছে। ১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় একই ধরণের আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ছিল ২০০৭ সালে সিডর। সেখানে মানুষের মৃত্যু হার তুলনামূলক কম ছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ৩ হাজার ৪০৬ জন মারা গিয়েছিল। এরপরে বাংলাদেশে আরো বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫শে মে আইলার আঘাতে মারা যায় ১৯০জন। ২০১৩ সালে মহাসেনে মারা যায় ১৮ জন। "এরপরে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কখনোই দুই সংখ্যার বেশি হয়নি এবং সেটি ২৫ এর উপরে যায়নি," বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। অন্যদিকে আম্পানে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকলে বাড়ি-ঘর এবং গাছপালা পড়ে যাবে এবং এতেও ক্ষতি হতে পারে। উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ ঘর-বাড়ি কাঁচা হওয়ার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অধিকাংশই ভেঙ্গে পড়ে। আম্পানের বর্তমান অবস্থা: রবিবার বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সবগুলো সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমান বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। আবহাওয়াবিদ মি. আহমেদ বলছেন, উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০-৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকতে পারে। কী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে? ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রস্তুতি হিসেবে এরইমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ স্কাউটস এবং সিপিসি এর মধ্যে এর আগেই বৈঠক হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রথম যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় সেটি হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা। তবে এবার যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কোভিড-১৯ এর কারণে, সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হবে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কে কোন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যবহার করা হবে এবং বাড়ির কাছে থাকা স্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এরইমধ্যে যেহেতু চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে তাই, মাঠ পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীরা প্রচারের কাজ করছে যাতে মানুষ সচেতন হয়। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন যারা দুর্যোগের সময়ে কাজ করেন। পরবর্তীতে বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হলে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হবে। সেখানে খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, পানীয় জলের ব্যবস্থা এগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান সিনিয়র সচিব। "এখন প্রিপারেশন স্টেজে আছি, পরে এক্সিকিউশনে যাবো, পরবর্তী সিগনালের অপেক্ষায় আছি," বলেন মি. কামাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইক্লোন শেল্টারে যারাই আসুক তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করার মতো ব্যবস্থা করতে হবে। | করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান' আঘাত হানলে কী করে সামাল দেবে বাংলাদেশ? |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | ২০২১ সালে সীমিত আকারে স্কুল খোলার চিন্তা করছে সরকার সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুলগুলোকে এজন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে এখন দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শুরুতে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। আর স্কুল খুলে দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক বা দুদিন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেশজুড়ে অসংখ্য স্কুল কলেজে স্বাস্থ্যবিধি আদৌ নিশ্চিত করা যাবে কি-না। নেত্রকোনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা খান বলছেন সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী স্কুলকে প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিই তারা নিচ্ছেন। "পুরো বিদ্যালয়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছি। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ থেকে শুরু করে বাগান, টয়লেটসহ সব কিছু ক্লিন করা হচ্ছে। প্রতি শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে দুটি করে মাস্ক দেয়া হবে। আর ইনফ্রারেড থার্মোমিটার সেট করবো। আর প্রতিদিন একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসবে। তাদের বিভিন্ন রুমে বসিয়ে আমরা ক্লাস নেবো"। সরকারিভাবে স্কুলগুলোতে যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের সময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাইকে সবসময় মাস্ক পরতে হবে। শিক্ষার্থীদের তিন ফুট শারীরিক দূরত্বে রাখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার কথা আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইউনিসেফের সহযোগিতা প্রায় ৩৯ পাতার একটি গাইডলাইন তৈরি করে ইতোমধ্যেই স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সরকার সর্বত্র মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করলেও রাজধানী ঢাকাতেই তা কার্যকর করা যায়নি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: দশ মাসে কী শিখলো শিক্ষার্থীরা? কবে খুলবে স্কুল? অনলাইন ক্লাসের সুফল শহরে, পিছিয়ে পড়ছে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা নিরাপদে স্কুল খুলতে যেসব নির্দেশনা মানার প্রস্তাব করা হয়েছে অনলাইন ক্লাসের সুফল শহরে, পিছিয়ে পড়ছে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা ফাইজা শামস সামান্থা তার সামনে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ক্লাস করছে এমনকি ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়েও মানুষের মাস্ক পরা নিশ্চিত করা সম্ভব যেখানে হয়নি, সেখানে স্কুলের শিশুদের সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিয়ে নির্ধারিত দূরত্বে রাখা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের অনেকেই। ঢাকার একজন অভিভাবক রুমানা সোবহান পরাগ বলছেন শিশুদের ক্লাস মে নিয়ে এগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন তিনি। "এটা পুরোপুরি অসম্ভব। এতটুকু বাচ্চাকে বলবো যে তুমি দূরে দূরে থাকবা। ও তো গিয়েই অন্য বাচ্চাদের গলা ধরে দাঁড়াবে, খেলাধুলা করবে, হুড়মুড় করে একজন আরেকজনের গায়ে পড়বে। এটা কি সম্ভব যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো করবে? এটা হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। প্রয়োজন হলে জুলাইয়ের পর পরিস্থিতি দেখে স্কুল খুলতে পারে। আমি অন্তত আমার বাচ্চাকে ছাড়বো না এখন"। তবে স্কুলগুলো বলছে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। প্রধান শিক্ষক তাহমিনা খানও জানিয়েছেন যে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব স্কুলেই একই ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্কুল কবে খুলবে ২০২১: গুগলে বাংলাদেশ থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে অনেকেই এখন সার্চ করছেন, "স্কুল কবে খুলবে ২০২১" - এই শব্দবন্ধ দিয়ে। এই সার্চ ট্রেন্ডই বলে দেয় বাংলাদেশে মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া নিয়ে কতটা চিন্তিত। কারো চিন্তার বিষয়, খোলে না কেন? কারো চিন্তা, কেন খুলছে? বাংলাদেশে কার্যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছুই বন্ধ নেই। ফলে স্কুল কলেজ খুলে দেয়ার দাবিও উঠছিলো বিভিন্ন মহল থেকে। অনেকেই মনে করেন প্রায় এক বছর ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের, তা থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া দরকার। যদিও সরকারের তরফ থেকে বারবারই বলা হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরণের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষপাতী তারা নন। তবে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পর সরকারের উচ্চ মহলের অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারিতেই স্কুল খুলে দেয়া হতে পারে। ২০২০ সালের শুরুতে শিশুরা নতুন বই পেলেও এ বছর বেশি দিন স্কুলে যাবার সুযোগ হয়নি ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিনথিয়া রহমান বলছেন এখন আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যুক্তি নেই। তিনি বলছেন স্কুল খুললে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি তারাও শিক্ষক হিসেবে বেশি সতর্ক থাকবেন। "বাচ্চারা তো প্রায় এক বছর পড়ালেখা থেকে দূরে। যদিও অনলাইনে পড়ালেখা করানো হয়েছে কিন্তু সেটি স্কুলের মতো করে হয়নি। বাসায় পড়ে পড়ালেখা ওরকম হয়না। যেহেতু আসতেই হবে স্কুলে, আমরা শিক্ষকরাও চেষ্টা করবো বাচ্চাদের বোঝানোর। একটি ক্লাসে ৫০জন যদি শিক্ষার্থী থাকে তারা একদিনে না এসে ২৫ করে আসলে বা শিফটিং করা যায় কিনা সেটিই ভাবা হচ্ছে। শিক্ষক হিসেবেও ক্লাসে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব আমরা ভাগ করে নিবো"। বাংলাদেশে গত বছরের মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর জুলাই থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষাদানের উদ্যোগ নেয়। সরকারিভাবেও টেলিভিশন এবং ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষাদান করলেও তা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্যাপ্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস না থাকাসহ নানা কারণে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অটো প্রমোশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করেই আনন্দঘন পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে এবং প্রথম দু মাস কোন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা হবে না। বড় চ্যালেঞ্জ দেশের নানা জায়গায় স্বল্প পরিসরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রতিটি ক্লাসে গড়ে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিতি থাকতো স্বাভাবিক সময়ে। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ আছে। অনলাইন ক্লাসের সুযোগের বাইরে রয়েছে যাচ্ছে শহরের বাইরের বহু শিক্ষার্থী শিক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলছেন পুরো বিষয়টিই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি। "এখন যে স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হচ্ছে সেখানে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দু ভাগ করা যেতে পারে। এর বেশি ভাগ করলে শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়বে। এর বেশি ম্যানেজ করা যাবে না। কারণ যিনি বাংলা পড়াবেন তাকে দুবার ক্লাস নিতে হবে। এখন যদি শিফট ৩/৪টি হয় তাহলে তাকে একই ক্লাস চারবার নিতে হবে যা অত্যন্ত কঠিন। কারণ তার আরও ক্লাস আছে। আবার নতুন শিক্ষক নেয়াও কঠিন। তাই এখন যা করা যাবে তাহলো দু ভাগ করে ক্লাসে দূরত্ব বজায় রেখে বসা। এতটা পর্যন্ত সহনীয় হবে"। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর অবশ্য বলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কার্যক্রমে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ হয় সেটি নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এজন্য স্কুল খোলার আগেই শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের শিক্ষকরা যোগাযোগ করবেন। পাশাপাশি শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত অনুযায়ী কোন শ্রেণি দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে, কোন শিক্ষক কোন বিষয় নেবেন, কত শিফট হবে কিংবা কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে তা নিয়ে পরিকল্পনার কাজ চলছে। অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ শাহেদুল খবির চৌধুরী অবশ্য বলছেন সামনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনাই তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। "স্কুল পর্যায়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা আমাদের প্রথম টার্গেট। এক বছর ধরে তারা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন। তেমনি কলেজ পর্যায়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এদের বিবেচনায় নিয়ে যদি দেখা যায় কার্যক্রম সফল হচ্ছে তখন পর্যায়ক্রমে অন্য শ্রেণির কার্যক্রম শুরু হবে। একসাথে সব শ্রেণির কার্যক্রম সম্ভব নয় এটি আমরা বুঝি আবার মাঠ পর্যায় থেকে কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকরাও একই মত দিয়েছেন"। তবে এভাবে স্বল্প পরিসরে পড়ানোর জন্য সিলেবাসেও পরিবর্তন আনতে হবে, অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে একজন শিক্ষার্থী তার ক্লাসে যেটুকু পড়ে থাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার পুরোটা না পড়িয়ে জরুরি বিষয়গুলোই তাকে পড়ানো হবে। ইতোমধ্যেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার কাজে হাত দিয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলছেন সিলেবাস নিয়েও একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে থেকে স্কুলগুলোয় কোন ক্লাস-পরীক্ষা চলছে না "সিলেবাস সংক্ষেপ করা কতটা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধরুন গতবার যে ক্লাস সিক্সে ছিলো তাকে অটোপ্রমোশন দেয়া হলো। এখন সেভেনে শিক্ষক আজকের নির্ধারিত পাঠ দেয়ার আগে দেখতে হবে এ পাঠের জন্য তার যে পূর্বদক্ষতা দরকার সেটি আছে কি না। না থাকলে সেটি দিয়ে নতুন পাঠ দিতে হবে। এতে শিক্ষকের ওপর চাপ পড়বে ও বেশি সময় লাগবে। আবার এটি না হলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে, মুখস্থ করবে কিংবা পরীক্ষায় ফেল করবে"। অভিভাবক রুমানা সোবহান পরাগ অবশ্য বলছেন সিলেবাস শেষ করার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিশুদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং শিশুরা যেন ভাইরাসের ক্যারিয়ার না হয়ে ওঠে সেটি নিশ্চিত করা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা অবশ্য বলছেন সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণ নিয়ে কাজ চলছে এসব দিক মাথায় রেখেই। তবে এখন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। "এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০টি শ্রেণি দিবসকে টার্গেট করে এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪টি শ্রেণীদিবসকে টার্গেট করে সিলেবাস কাস্টমাইজড করার নির্দেশনা আছে। আমরা এখন সেটি নিয়ে কাজ করছি।আশা করি ফেব্রুয়ারির চার তারিখের মধ্যেই আমরা বোর্ডকে সেটি সরবরাহ করতে পারবো"। তিনি বলেন পরবর্তীতে অন্য শ্রেণির জন্য সিলেবাস নিয়ে কাজ করবেন তারা। বিশেষ করে গত বছরের ঘাটতি কিভাবে আগামী দিনগুলোতে কাটাতে হবে সে নির্দেশনাও শিক্ষকদের দেয়া হবে। "শিখন ঘাটতি তো আর এক বছরে পূরণ হয়ে যাবে না। প্রথম থেকে নবম পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পূরণে একটা গাইডলাইন দেয়া হবে যাতে পূর্ববর্তী ক্লাসের ঘাটতি যাতে ধীরে ধীরে মেটানো যায়"। যদিও শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনেকেই মনে করেন স্কুল প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার মতোই এক বছরের শিখন ঘাটতি পূরণ করাও খুব একটা সহজ হবে না। তবে এর মধ্যে স্কুল কলেজের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চিন্তা শুরু হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই জানিয়েছে মার্চে পরীক্ষার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তারা। ফলে শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা আশা করছেন যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। | স্কুল কবে খুলবে: যে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে - তাতে স্বাস্থ্যবিধি কতটা রক্ষা হবে, অভিভাবকেরা কতটা আশ্বস্ত |
এই সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম লিখুন। | ২০১৫ থেকে ২০১৬ একটা রূপকথার মতো শুরু করেন মুস্তাফিজ। সময়-সুযোগ মিললেই যিনি অবধারিতভাবে সাতক্ষীরায় চলে যান, সেই মুস্তাফিজুর রহমানের প্রায় ৭০ দিন কেটে গেল ক্রিকেট মাঠ আর হোটেলের রুমে রুমে। যেহেতু কোয়ারেন্টিনে, তাই সামনা-সামনি দেখা হওয়ার জো নেই। ভরসা টেলিফোন - আর তাতেই তিনি বিবিসি বাংলাকে বললেন, বাড়ি ফিরতে না পারার কষ্টটাই এখন তার ভাবনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কিন্তু ফিরেছেন তো মাঝ পথে থেমে যাওয়া আইপিএল থেকে, খেলা নিয়ে আলাপই ছিল তাই মুখ্য। এবারের আইপিএলে জস বাটলারের সাথে মুস্তাফিজের কথপোকথন ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু। টেলিভিশন স্ক্রিনে দুজনের কথা বলা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন - খুব বেশি ইংরেজি না জানা মুস্তাফিজ কী এমন বলছেন ইংলিশম্যান বাটলারকে! কী কথা ছিল তাহার সনে - এমন প্রশ্ন রাখতেই মুস্তাফিজ খানিকটা ভেবে বলেন, ক্রিকেটের টার্ম তো সবখানেই এক। আসলে অমন আহামরি গোপন কোন কথা হয়নি। কোথায় ফিল্ডার রাখলে সুবিধা, কোন লাইনে বল করলে ভালো - মূলত এগুলোই ছিল দুজনের মধ্যে কথাবার্তা। অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন ও বোলিং পার্টনার সাকারিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছে স্বভাবে খানিকটা খানিকটা 'অন্তর্মুখী' এবারে রাজস্থান রয়্যালসে খেলা মুস্তাফিজের। অনেকেই একে উন্নতির সিঁড়িতে একটা ধাপ হিসেবে দেখছেন, কারণ বৈশ্বিক ক্রিকেটের আবহে মুস্তাফিজুর রহমান যতটা খোলামেলা হবেন, ততই শিখবেন, জানবেন, এবং সেটা তার খেলায় ছাপও ফেলবে। এর আগে তো মুম্বাই ইন্ডিয়ানস দলে তার সঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবালকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, শুধুমাত্র যোগাযোগের সমস্যা মেটাতে। তবে দলে এবার মাঠে না নামা এক তারকাও আছেন - কুমার সাঙ্গাকারা। মুস্তাফিজ মনে করিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও সাঙ্গার সাথে খেলা হয়েছে তার, এটা নতুন কিছু না। আইপিএলে খেলাটা মুস্তাফিজকে অনুপ্রাণিত করে। ডাক পেলে মনে হয় যে তিনি এখনও আছেন "আলোচনায়"। কিন্তু মুস্তাফিজ কি কখনও আলোচনা থেকে সরে গিয়েছিলেন? এই মুস্তাফিজ, সেই মুস্তাফিজ ২০১৫ সালে রূপকথার মতো শুরু মুস্তাফিজের। এরপর নিজেকে আরও শানিত করেন ২০১৬ সালে। বিভিন্ন ফরম্যাটে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটের তালিকা দেখলেও তার দেয়া চমকের একটা ধারণা পাওয়া যায়। টি-টোয়েন্টিতে শহীদ আফ্রিদি, টেস্টে হাশিম আমলা, ওয়ানডেতে রোহিত শর্মা আর আইপিএলে গিয়েই এবি ডি ভিলিয়ার্স। আর সেবারে আইপিএলেও মুস্তাফিজ ছিলেন নায়ক, ডেভিড ওয়ার্নার তো ভূয়সী প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাতক্ষীরার 'কাটার মাস্টার'কে। আইপিএল ইতিহাসে একমাত্র অভারতীয় ক্রিকেটার মুস্তাফিজ, যিনি 'ইর্মাজিং ক্রিকেটার অফ দ্য সিজন' পুরষ্কার পান। কিন্তু তারপরই ছন্দপতন - সমালোচক থেকে বিশ্লেষক সবাই লিখতে আর বলতে থাকলেন মুস্তাফিজ হারিয়ে গেছেন। মুস্তাফিজের ভাষায় অবশ্য পুরো বিষয়টাই ছিল 'ভাগ্যের দোষ'। মাত্রই আলো ছড়াতে শুরু করেছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের সেই একেবারে গোড়ার দিকে মুস্তাফিজুর রহমান চোট পান বোলারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কাঁধে। অনেকেই এই রায় ঘোষণা করেছিলেন - মুস্তাফিজ আর কখনও ফিরে আসবেন না। বিবিসি বাংলায় আরও যা পড়তে পারেন: আইপিএল নিলাম: কলকাতা সাকিবকে আর রাজস্থান কিনলো মুস্তাফিজকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে লিটন দাসের তারতম্য কতটা? ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের মঞ্চ মাতাতে পারবেন মুস্তাফিজ? মুস্তাফিজের নিজের অবশ্য কখনও তা মনে হয়নি। "একেবারে খারাপ কিন্তু করিনি," বলেন মুস্তাফিজ। তবে যেটুকু খারাপ করেছেন তাতে ইনজুরির ভূমিকাই বেশি ছিল বলে মনে করেন তিনি। "দেখুন, আমি যে বলটা করি সেটা বা-হাতের স্পিন বলা যায়, অফ স্ট্যাম্পের বাইরের দিকে যায়। এমন বল ১২৫ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে করতে গেলে কাঁধে বাড়তি জোর লাগে, যা করাটা সার্জারির পর খানিকটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।" কনুইয়ে ব্যথা অনুভব করতেন বলে জানালেন মুস্তাফিজ। তাই তার প্রিয় ডেলিভারি, যেটাকে 'স্টক বল' বলেন তিনি, সেই কাটার থ্রো করতে সমস্যাই হচ্ছিল এক রকম। সার্জারির আগে-পরে মুস্তাফিজের পরিসংখ্যান দেখলেও তার কথার পক্ষে যুক্তি মেলে। জাতীয় দলে তার শুরুর বছরটিতে, ২০১৫ সালে, মুস্তাফিজ ৭৫ ওভারের মতো বল করে পেয়েছিলেন ২৬টি উইকেট। আর ২০১৭ সালে ৮৩ ওভারে পেয়েছেন ১৪টি উইকেট। তবে মুস্তাফিজ চোট থেকে ভালোভাবে ফিরেছেন বেশ কয়েকবারই। ২০১৯ সালে তাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও ২০১৮ সাল তিনি কাটিয়েছেন একজন পেস বোলারের স্বপ্নের বছরের মতো। সেবার নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল জমিয়ে তুলেছিলেন মুস্তাফিজ এক ওভারে। "কাটারের পর কাটার, এমন কাটার জীবনেও দেখিনি," কিশোরগঞ্জে এক জনসভায় এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কণ্ঠে। ভারতের সাথে দুটো ম্যাচে - নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ও এশিয়া কাপের ফাইনাল - বাংলাদেশের বেশ হৃদয়বিদারক পরাজয় ঘটেছিল সেবার, তবে বাংলাদেশকে যদি কেউ জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে থাকেন, তিনি সেই মুস্তাফিজই। ২০১৮ সালে মুস্তাফিজুর রহমান প্রায় ১৫০ ওভার বল করে ২৯টি উইকেট নেন। গড় ছিল ২১, ইকোনমি রেট ৪.২০। সেবার গোটা বিশ্বজুড়েই ম্যাচ খেলেছেন তিনি - বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আমেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, দুবাই। সবখানেই নিজের মেধা আর দক্ষতার ছাপ রাখেন। কিন্তু পরের বছর সেটা আর চালিয়ে নিতে পারেননি তিনি। তার ক্ষেত্রে ২০১৫ সালটা অস্বাভাবিক রকমের ভালো। প্রতি বছর সেই পারফরমেন্সের পুনরাবৃত্তি করা গেলে মুস্তাফিজ হতেন সময়ের সেরা পেস বোলার। মুস্তাফিজকে নিয়ে গবেষণা কিন্তু চোটের সাথে আরও একটা জিনিস ছিল মুস্তাফিজের অন্তরায়। তাহলো, মুস্তাফিজ যে ডেলিভারিতে রোহিত শর্মা, ধোনি, রায়নার মতো খেলোয়াড়কে সাজঘরে ফেরাতেন, সেটা তখন সবার কম্পিউটারে গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাটসম্যানরা ধরে ফেলেন, অপেক্ষা করে দেরিতে মারলেই যে হয়! মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট দেখলেও এটা বোঝা যায় যে তার রহস্য খানিকটা হলেও উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে মুস্তাফিজের আইপিএল ইকোনমি রেট ছিল সাতের নিচে, এখন সেটা সাড়ে আট ছুঁই ছুঁই। 'বাহাতি মুরালিধরন' - মুস্তাফিজুর রহমান এই উপাধি স্থগিত হওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পেয়েছেন। জোরের ওপর করা বল যখন লেগ স্ট্যাম্পে পড়ে গতি বদলে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের লাইনে যায়, তখন ব্যাটসম্যানরা অনেক সময়ই ব্যাটের গতি সামলাতে পারেন না, বল উঠে যায় মিড অন কিংবা ৩০ গজের বৃত্তের ভেতর কোন ফিল্ডারের হাতে। সহজ ক্যাচ হয়ে ব্যাটসম্যান ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং ক্যারিয়ারে এই ধরনের উইকেট খুবই পরিচিত, ট্রেডমার্ক বলা যায় যাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন নতুন ক্রিকেটার খোঁজা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল, তখন মুস্তাফিজুর রহমান এসেছিলেন 'আশার আলো' হয়ে। নির্বাচক, অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট-সহ পুরো ইউনিট হাফ ছেড়ে বাঁচে তাকে পেয়ে। তাদের কাছে, মুস্তাফিজ মানেই খানিকটা নির্ভার হওয়া। ৭ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। যার মধ্যে ম্যাচ জেতানো ২০ রানে তিন উইকেটও ছিল তার পুরোনো দল সান রাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে। কিন্তু দ্রুতই আধুনিক ক্রিকেটের আতসী কাঁচের নিচে পড়ে যাওয়া মুস্তাফিজকে নতুন পথ বাতলে দেননি কেউ - অনেকটা হতাশার সুরে বলছিলেন মুস্তাফিজই। 'কোচদের ভূমিকা কমই ছিল' বাংলাদেশের যখন একটা সমীহ করার মতো পেস বোলিং ইউনিট তৈরি হয়েছিল, তখন বোলারদের নিয়ে কাজ করতেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক। মাশরাফী, তাসকিন, রুবেল ... সাথে যোগ হয়েছিলেন মুস্তাফিজ। এরপর বোলিং গুরুর জায়গা নিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী কোর্টনি ওয়ালশ। কিন্তু মুস্তাফিজকে নিয়ে শুরুতে বাড়তি কাজ করার প্রয়োজন হয়নি। প্রয়োজন যখন হয়েছে, তখন আর তাকে নিয়ে আলাদা কাজ করাই হয়নি। মুস্তাফিজের বোলিং তাই অনেকটা পানশে হয়ে যায় একটা সময়। মুস্তাফিজ বলেন যে কোন কোচ তাকে অ্যাকশনে পরিবর্তন বা এ ধরণের কোন পরামর্শ দেয়নি। "নিজে নিজেই কাজ করেছি। দলের সিনিয়রদের সাথে কথা বলেছি।" বিশেষ বোলারদের ক্ষেত্রে যেটা প্রয়োজন, প্রকৃতিপ্রদত্ত গুণের সাথে বাড়তি অস্ত্রের দিকেও নজর দেন কোচরা। কিন্তু মুস্তাফিজের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত এবারের আইপিএলে মুস্তাফিজের জন্য ছিল বিশেষ কিছু। খুব একটা ফর্মে ছিলেন না, তবু ডাক পেয়েছেন। কোটি টাকা মূল্যও পেয়েছেন। উসুলও করেছেন তা। জফরা আর্চার ও বেন স্টোকসের চোট মুস্তাফিজের নিয়মিত একাদশে থাকা নিশ্চিত করেছিল, তবে পারফর্ম করে এর যৌক্তিকতাও প্রমাণ করেছেন। সাত ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। যার মধ্যে ম্যাচ জেতানো ২০ রানে তিন উইকেটও ছিল তার পুরোনো দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে তার বলে ওঠা ক্যাচগুলো ধরলে উইকেট সংখ্যা হয়তো ১০ ছাড়িয়ে যেত। কোন কিছুতে অবাক হয়েছেন মুস্তাফিজ, এমন খুব একটা দেখা যায় না - সবকিছুতে নির্লিপ্ত একটা ভাব। এবারের আইপিএল-এ ভালো কীভাবে করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমনিতেই হয়ে গেছে। তবে দলের বাকিদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি তিনি। বলেছেন, সবাই সাহায্য করেছে। রাজস্থানে মুস্তাফিজ আসেন বাড়তি পেসার হিসেবে, প্রথম একাদশে টিকবেন কি-না সেটাই ছিল আলোচনার বস্তু। কিন্তু আর্চারের চোট সুযোগ এনে দেয় তাকে। দুই ম্যাচে পিটুনি খেয়েছেন ঠিকই, তবে ম্যাচ জেতানো বোলিংও করেছেন। "ততটা খারাপ করিনি, যতটা মানুষ বলে।" তার কথায়: "খেলা আজকে ভালো হবে, কাল খারাপ হবে, এটাই নিয়ম। সব দিন তো আর এক যায় না।" উন্নতির কথাই যেহেতু হচ্ছিল, আরেকটা উন্নতির কথা না বললেই নয় - মুস্তাফিজ এখন গোটা কয়েক শব্দ ব্যয় করে সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্নের জবাব দেন। বছর চারেক আগে এই ক'টি শব্দও তার মুখ থেকে শোনা ছিল বিরল ঘটনা। যেসব জায়গায় মুস্তাফিজ বিশেষ তিন ম্যাচের কোন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে সিরিজে মুস্তাফিজের নেয়া উইকেটের সমান সংখ্যক উইকেট কেউ পায়নি কখনও। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে তিনি পেয়েছিলেন ১৩ উইকেট। মুস্তাফিজ ওয়ানডে ও টেস্ট ফরম্যাটে অভিষেকেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার পেয়েছেন। ওয়ানডে ভারতের বিপক্ষে, টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট পাওয়া বোলারদের তালিকায় আছেন মুস্তাফিজুর রহমান। টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়াদের তালিকায় সাকলাইন মুশতাক, ওয়াকার ইউনিসের সাথে আছে মুস্তাফিজের নাম। একবার নয়, দুইবার। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে, আর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে। বোলারদের স্ট্রাইক রেটের তালিকায় মুস্তাফিজ বিশ্বে ছয় নম্বরে আছেন। প্রতি ২৬.৬ বলে একটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। | মুস্তাফিজুর রহমান: বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকার উত্থান-পতন আর ফিরে আসার গল্প |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের জন্য একটি সৃজনশীল শিরোনাম তৈরি করুন। | ওসাকায় জি-২০ জোটের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনের শি জিন পিং, ২০১৯ কোনো সন্দেহ নেই যে ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে তাদের দু'জনের যিনিই জিতুন না কেন, আমেরিকা এবং চীনের সম্পর্কে যে ভাঙন শুরু হয়েছে - তা থামবে না। বাকি বিশ্বের জন্য যন্ত্রণাদায়ক এই বিচ্ছেদের প্রভাব কী হবে - তা বোঝার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির রিপোর্টার ঝাও ইন ফেং: নিউইয়র্কের চায়না টাউন নিউইয়র্কের ফ্লাশিং এলাকায় চায়না টাউন দেখলে হঠাৎ মনে হতে পারে আপনি হয়ত বেইজিংয়ে চলে এসেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চায়না টাউনগুলোর অন্যতম এটি। কিন্তু চীন ও আমেরিকার সম্পর্ক এখন আদৌ ভালো নয়, এবং দিনকে দিন সেই সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আমি অনেকদিন এদেশে রয়েছি, এবং সবসময়ই মনে হয়েছে আমি এখানে কাঙ্ক্ষিত, কিন্তু হাওয়া বদলে যাচ্ছে। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতার ধাক্কা বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বের প্রতিটি কোণায় পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তা উদম করে দিয়েছে। নিউইয়র্কের ফ্লাসিংয়ে এই চায়না টাউনেও এই বৈরিতার ঢেউ এসে লাগতে শুরু করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা মেসেজিং এবং ফোন অ্যাপ উইচ্যাট নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা এখানকার চীনা-আমেরিকান বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ তাদের অনেকেই এই অ্যাপ দিয়ে চীনে তাদের বন্ধু-স্বজনদের সাথে নিয়মিত কথা বলেন। নিউ ইয়র্কের চায়না টাউন নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার যুক্তিতে হুয়াওয়ে বা টিকটকের মত চীনের প্রধান প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা শুরু করেছে আমেরিকা। সেই তালিকায় এখন যোগ হয়েছে উই-চ্যাট। নিউইয়র্কের চীনা-আমেরিকান আইনজীবী শেনইয়াং উ যুক্তরাষ্ট্রে উই-চ্যাট নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটা বৈষম্যমুলক একটি সিদ্ধান্ত কারণ আমেরিকার চীনা বংশোদ্ভূতরা প্রচুর সংখ্যায় নিয়মিত উই-চ্যাট ব্যবহার করে। ফলে এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার চীনা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য।“ মার্কিন সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের ওপর নজরদারির জন্য উই-চ্যাটকে কাজে লাগাচ্ছে চীন। কিন্তু আইনজীবী শেনইয়াং বলছেন, এটি খোঁড়া যুক্তি। তার কথা - চীনা অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যে স্বাদ বা অভিজ্ঞতা পাচ্ছে সেটা উই-চ্যাটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে এবং চীনে তাদের পরিচিত বা স্বজনদের সাথে শেয়ার করছে। তিনি বলছেন, উই-চ্যাট বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে চীনে এবং বিশ্বের অন্যত্র আমেরিকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রসারিত করার প্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করা হলো। প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং হালে কোভিড-১৯ নিয়ে চীন ও আমেরিকা যত বেশি মুখোমুখি হচ্ছে, তত বেশি চাপে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: কে এগিয়ে- ট্রাম্প না বাইডেন? জো বাইডেন: এবারের দৌড় হোয়াইট হাউসের জন্য দুই রানিং মেট: কমালা হ্যারিস ও মাইক পেন্স যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যেভাবে অন্য দেশের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠি কোন রাজ্যগুলোতে কীভাবে শুরু এই শত্রুতার তবে দুই পরাশক্তির মধ্যে এই শত্রুতা একদিনে তৈরি হয়নি। কয়েক দশক ধরে এটি ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিচ্ছে। এবং সন্দেহ নেই যে এই রেষারেষির পরিণতি থেকে খুব কমই দেশই রেহাই পাবে। একটু পেছনের দিকে তাকানো যাক। কয়েক দশক ধরে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীন সফরে যান। তবে ঐ সফরের পরেও সম্পর্ক ছিল কম-বেশি ঠাণ্ডা এবং তাতে নিয়মিত ওঠাপড়া চলেছে। এরপর ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনানমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থী ছাত্রদের ওপর গুলির পর চীন-মার্কিন সম্পর্ক দারুণভাবে পোড় খায়। তার দশ বছর পর ১৯৯৯ সালে বেলগ্রেডে চীনা দূতাবাসে মার্কিন বোমা বর্ষণের ঘটনায় তিক্ততা চরমে পৌঁছে। আমেরিকায় চীনা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ছে কিন্তু ২০০১ সালের দিকে পরিস্থিতি ইতিবাচক মোড় নেয়। চীন সে বছর আমেরিকার সমর্থনেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়, এবং তখন থেকে শুরু হয় চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অব্যাহত ধারা। দুই পরাশক্তি বিশ্ব বাণিজ্যে সহযোগী হিসাবে আবির্ভূত হয়। তবে তখন থেকেই আমেরিকার মধ্যে অসন্তোষ ছিল যে চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্বার্থপরের মত আচরণ করছে, প্রতিদান দিতে কার্পণ্য করছে। “চীনের বাজার কখনই শতভাগ মুক্ত ছিলনা,“ বিবিসিকে বলেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক স্কট কেনেডি। তিনি বলেন, “চীনা অর্থনীতির যত উন্নতি হয়েছে ততই বাণিজ্যে নতুন নতুন বিধিনিষেধ চাপানো হয়েছে। বিশেষ করে শি জিন পিংয়ের ক্ষমতা নেওয়ার পরে এই প্রবণতা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, কম্পিউটিং এবং নানা ধরণের মার্কিন প্রযুক্তির ওপর বিধিনিষেধ, শর্ত আরোপ অব্যাহত রয়েছে।“ তবে গত এক দশক ধরে চীন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে রেষারেষি বাড়তে থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাদের মধ্যে সহযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। ভূরাজনৈতিক রেষারেষি বাড়লেও সেইসাথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগও বেড়েছে। অনেকটা যেন স্বামী-স্ত্রীর লড়াইয়ের মত। বেশিদিন হয়নি যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে শি জিন পিংয়ের প্রশংসা করে বলেন, “আমি তাকে পছন্দ করি। তিনি আমার বন্ধু।“ অবশ্য কালে কালে বিশেষ করে কোভিড সংক্রমণ নিয়ে যত বেশি নাকাল হয়েছেন মি. ট্রাম্প চীনের ওপর ক্রোধ উগরে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি এমন কথাও বলেছেন যে তিনি পুনরায় ক্ষমতায় না আসলে ‘চীনই একসময় আমেরিকা শাসন করবে।‘ সন্দেহ নেই যে চীন এবং আমেরিকার সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, এবং আমেরিকা এখন চীনের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হতে চাইছে। একসময়কার গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুরোপুরি ছেদ করার এই প্রক্রিয়া গত কয়েকবছর ধরে চলছে। স্কট কেনেডি বলছেন, এই বৈরিতা থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। করোনাভাইরাসকে 'চীনা ভাইরাস' বলে আখ্যায়িত করে চীনকে ক্ষিপ্ত করেছেন ট্রাম্প “আপনাকে হয়ত কোনো একটি পক্ষ নিতে বাধ্য করা হতে পারে। বিষয়টি এমন দাঁড়াতে পারে আপনাকে হয়ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে কার সাথে আপনি ব্যবসা করবেন - আমেরিকার সাথে নাকি চীনের সাথে। ফলে দেশ, কোম্পানি, ছাত্র, চাকুরীজীবী সবাইকে হয়ত একটি কঠিন দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হতে হবে।“ অনিশ্চয়তায় চীনা ছাত্র-ছাত্রীরা বহুদিন ধরে চীনা ছাত্র-ছাত্রীদের ধ্যান-জ্ঞান ছিল আমেরিকায় গিয়ে উচ্চশিক্ষা। এ মুহূর্তে প্রায় চার লাখ চীনা ছাত্রছাত্রী আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এরা এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আমেরিকার সরকার বলছে, চীন থেকে যারা পড়াশোনা করতে আসছে এদের অনেকেই আসলে গুপ্তচর, তাদের প্রধান কাজ প্রযুক্তি চুরি। চীনা ছাত্র চেন উ বলছেন, এ ধরনের সন্দেহ অন্যায়। বিবিসিকে তিনি বলেন, “চীনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব সন্দেহ খুবই অন্যায়। ভালো কেরিয়ারের জন্য, সুযোগের জন্য চীনারা আমেরিকাতে পড়তে আসে। তারা উন্নত শিক্ষা চায়। অন্য দেশে নতুন বন্ধু তৈরি করতে চায়“ আমেরিকার বিমানবন্দরগুলোতে এখন চীন থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সন্দেহভাজন প্রযুক্তি পাচারকারী হিসাবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশে ফেরার সময় তাদের ওপর শ্যেন দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। হংকং-ভিত্তিক দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে আমেরিকার বিমানবন্দরগুলোতে ১,১০০রও বেশি চীনা নাগরিকের ইলেকট্রনিক ডিভাইস (ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, ঘড়ি) নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৬৬ শতাংশ বেশি। মাস দুয়েক আগে চীনা সরকারি বৃত্তি নিয়ে গবেষণা করতে আসা ১৫ জন শিক্ষার্থীর সাথে চুক্তি গত সপ্তাহে মাঝপথে বাতিল করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যে ঘটনা নজিরবিহীন। চেন উ‘র অনেক বন্ধু দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি নিজে আর কতদিন আমেরিকাতে থাকতে পারবেন তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন। “আমি মনে করিনা আমি এখন আর এখানে কাঙ্ক্ষিত। সম্পর্কে রেষারেষি যত বাড়ছে আমি এবং আামার অনেক বন্ধু চীনে বা এশিয়ার অন্য কোথাও চাকরির সুযোগ খুঁজছি।“ চীন ও আমেরিকা দুই দেশেই উগ্র ধরণের জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে,। ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন যিনিই জিতুন না কেন এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং চীন ও আমেরিকার মধ্যে দূরত্ব-শত্রুতা বাড়বে যেটি ২১ শতকের ভূ-রাজনীতির প্রধান নিয়ামক হবে। আরো পড়তে পারেন: তাইওয়ানে চীন অভিযান চালালে কী করবে যুক্তরাষ্ট্র? চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব কি পরিণতি ডেকে আনতে পারে? চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভূমিকা রেখেছিলেন যে গোপন দূত | আমেরিকার নির্বাচন ২০২০: কীভাবে আমেরিকা-চীন বিচ্ছেদের পরিণতি পুরো বিশ্বকে ভোগ করতে হবে |
প্রদত্ত সংবাদ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একটি শিরোনাম দিন। | বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলন বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে এই আদেশ সন্তুষ্ট করতে পারেনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা মৌ বলছিলেন, " একটি অংশের সংস্কার হয়েছে সেজন্য আমরা কিছুটা খুশি কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্ট না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নাতি-নাতনিদের যে সুযোগ দেয়া হচ্ছে সে অংশটা যদি বাদ দেয়া হতো তাহলে আমরা খুশি হতাম।" আবার আন্দোলনকারীদের দুয়েকজন বলছেন, বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে কোন চাকরির জন্য তা পরিষ্কার হয়নি তাদের কাছে। তবে যে পাঁচটি দাবি করে এ আন্দোলন চলছিল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে আন্দোলন চলবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্তিকা চৌধুরী সরকারি এই সিদ্ধান্তকে যথেষ্ট বলে মনে করছেন না। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এটা কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। কারণ বিভিন্ন ধরনের যেসব কোটা রয়েছে তাতে মোট চাকরির ৫৬ শতাংশই চলে যাচ্ছে কোটার মধ্যে। এর ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। আমরা চাই সেটিকে ১০% এ নামিয়ে আনতে হবে"। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোন কোন শিক্ষার্থীর আশঙ্কা সরকারি এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলনটি বানচাল করে দেয়া হবে কি-না। তবে আন্দোলন চলবে বলেও জানাচ্ছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষুব্ধরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন যিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক তিনি বলেন, "একটি মাত্র দাবি পূরণ হয়েছে। এটাকে আমরা ওয়েলকাম করছি। কিন্তু বাকিগুলো হয়নি। ফলে অন্য দাবিগুলো আদায় করতে আমাদের আন্দোলন কিন্তু চলবে"। 'কোটা পদ্ধতির সংস্কারের পরিকল্পনা নেই সরকারের' এদিকে কোটা পদ্ধতির পুরোপুরি সংস্কারের পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন কর্তৃপক্ষ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বৃহস্পতিবার মন্ত্রনালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের কোনও পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরাদের আন্দোলন। মি: খান বলেন, বর্তমানে বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন ধরনের কোটার জন্য ৫৭ ভাগ পদ সংরক্ষিত আছে। এই কোটা কমিয়ে আনার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে প্রজ্ঞাপনে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে এমনিতেই কোটা ১০ শতাংশ কমে আসবে। গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরাসরি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে। সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা কত সে প্রসঙ্গে সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিদিনই তাদের মধ্য থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই সরকারি পদ শূন্য হচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্টভাবে শূন্য পদের সংখ্যা বলা সম্ভব হবে না। কোটা সংস্কারের দাবিগুলো কী? 'বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ'এর ব্যানারে যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে সেগুলো হল - •কোটা-ব্যবস্থা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা (আন্দোলনকারীরা বলছেন ৫৬% কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। সেটিকে ১০% এ নামিয়ে অঅনতে হবে) •কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া •সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়স-সীমা- ( মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে চাকরীর বয়স-সীমা ৩২ কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০। সেখানে অভিন্ন বয়স-সীমার দাবি আন্দোলনরতদের।) •কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা নেয়া, যাবে না ( কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাকরি আবেদনই করতে পারেন না কেবল কোটায় অন্তর্ভুক্তরা পারে) •চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশে প্রচলিত কোটা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা শুধু শিক্ষার্থী বা চাকরি-প্রার্থীদের মাঝেই রয়েছে তেমনটি নয়, বিশেষজ্ঞদেরও মতামত রয়েছে কোটা সংস্কারের পক্ষে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আকবর আলি খান সম্প্রতি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সন্তানদের সুবিধা দেবার জন্য প্রথমে এ কোটা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতী-নাতনীদের জন্য এ কোটা প্রযোজ্য হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশের সরকারী চাকরিতে এখন ২৫৮ ধরনের কোটা আছে। এ কোটা ব্যবস্থার কারণে অনেক মেধাবী প্রার্থীরা চাকরির পরীক্ষা দিতে রাজী হয় না। আরো পড়ুন: 'একবারই কমেন্ট করেছিলাম একটি বাংলা পত্রিকার নিউজে. তারপরে গালাগালির বন্যা!' বিশ্বযুদ্ধের গোপন খবর বয়ে বেড়াচ্ছেন যে নারী গুপ্তচর 'মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি অংশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকাতে চায়' | সরকারি চাকরির কোটা শিথিলের প্রজ্ঞাপনে কতটা সন্তুষ্ট আন্দোলনকারীরা? |
প্রদত্ত নিবন্ধের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট শিরোনাম লিখুন। | দেওলি'র ব্যারাক, যেখানে চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকদের রাখা হয়েছিল সেদিন দুপুরে শিলংয়ের ডন বস্কো স্কুলে হঠাৎই হাজির হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল। স্কুলের সব চীনা বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ফরম দেওয়া শুরু করেছিল তারা। ১৬-বছরের ইঙ শেং ওয়াঙ-ও ওই ছাত্রদের মধ্যে ছিল। পরের দিন বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ সেনাসদস্যদের একটা দল ইঙ শেং'য়ের বাড়ির দরজায় কড়া নেড়েছিল। বলেছিল গোটা পরিবারকেই তাদের সঙ্গে যেতে। তার বাবাকে তারা বলেছিল যে তিনি কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আর কিছু টাকা সঙ্গে নিতে পারেন। বাবা-মা, চার ভাই আর যমজ বোনকে সেদিনই হেফাজতে নিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিলংয়ের জেলে। ইতিহাসের ওই ঘটনার ওপরে ভিত্তি করেই দিলীপ ডি'সুজা একটি বই লিখেছেন, 'দ্যা দেওলি ওয়ালাজ' নামে। মিস্টার ডি'সুজা জানাচ্ছেন যে ১৯৬২ সালের চীন আর ভারতের যুদ্ধের সময়ে ভারতে যত চীনা বংশোদ্ভূত মানুষ থাকতেন, তাদের সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছিল। "যদিও এইসব মানুষেরা কয়েক পুরুষ ধরে কিন্তু ভারতেই বসবাস করতেন, ভারতীয় ভাষাতেই কথা বলতেন।" আরো পড়তে পারেন: চীন আর ভারত হঠাৎ করে শান্তি ফিরিয়ে আনলো কীভাবে? চীন-ভারত সংঘাত: কার শক্তি কতটা, কোন্ দেশ কার পক্ষ নেবে আটান্ন বছরের পুরনো খবরের কাগজের পাতা যে কারণে ভাইরাল ভারত কেন '৬২-র যুদ্ধে চীনের কাছে হেরে গিয়েছিল? দিলীপ ডি'সুজা "তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া আইনে স্বাক্ষর করার পর থেকেই শত্রু দেশের মূল নিবাসী হওয়ার সন্দেহে কাউকে আটক করা যেতে পারত," বলছিলেন মিস্টার ডি'সুজা। এর আগে ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্র পার্ল হারবারে হামলার পরে সেদেশে বসবাসকারী প্রায় এক লক্ষ জাপানি বংশোদ্ভূত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছিল। শিলং থেকে শুরু হল যাত্রা ওয়াঙ পরিবারকে শিলং জেলে দিন চারেক রাখা হয়েছিল, তারপরে গুয়াহাটির জেলে আরও পাঁচ দিন। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রেলস্টেশনে। মাকুম স্টেশন থেকে এসে গুয়াহাটিতে একটা ট্রেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। ওই ট্রেনে শত শত চীনা বংশোদ্ভূত মানুষকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে 'দ্যা দেওলি ওয়ালাজ' বইটির সহ-লেখিকা জয় মা-এর মা এফা মা-ও ছিলেন। এফা মা বলেন, "ওই রেল যাত্রার সময়ে প্রত্যেক যাত্রীকে দিন প্রতি আড়াই টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। বাচ্চারা সোয়া এক টাকা পেতো। গুয়াহাটি থেকে দুপুরের দিকে ট্রেন রওনা হয়েছিল, আর তিন দিন চলার পরে রাজস্থানের কোটা জেলায় দেওলি গ্রামে পৌঁছেছিল ট্রেনটি।" "আমাদের সঙ্গে শিলিগুড়ি স্টেশন থেকে আট জন পুলিশ চেপেছিল ট্রেনে। তারা বলে দিয়েছিল কোনও স্টেশনে ট্রেন থামলে আমরা যেন প্ল্যাটফর্মে না নামি, এমনকি কামরার দরজার কাছেও যেন না যাই। কিছুক্ষণ পরেই আমরা এই সাবধানবাণীর কারণ বুঝতে পেরেছিলাম। স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালেই আমাদের ওপরে গোবর ছোঁড়া হত," বলছিলেন এফা মা। জয় মা ও দিলীপ ডি'সুজা'র বই ''দ্য ডেওলি ওয়ালাজ'-এর প্রচ্ছদ ট্রেনের গায়ে লেখা ছিল 'শত্রু ট্রেন' ইঙ শেং ওয়াঙ জানান, "একটা স্টেশনে একশো-দেড়শো লোক জড়ো হয়েছিল। তাদের হাতে চপ্পল ছিল, আর 'চীনারা ফেরত যাও' বলে স্লোগান দিচ্ছিল। চপ্পলের সঙ্গেই পাথরও ছুঁড়তে শুরু করেছিল ওরা।" "আমরা দৌড়ে গিয়ে কামরার জানলাগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলাম। গোড়ায় আমরা বুঝতেই পারছিলাম না যে স্থানীয় লোকজন কী করে জানতে পারছে ওই ট্রেনে আমরা চীনারা ছিলাম। তারপরে জানা গেল যে ট্রেনের বাইরে বড় বড় করে লেখা ছিল 'এনিমি ট্রেন' বা শত্রু ট্রেন," জানাচ্ছিলেন মি. ওয়াঙ। ওই ঘটনার পরে অবশ্য ট্রেনটা স্টেশনের একটু আগেই থামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল যাতে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। চীনা বংশোদ্ভূতদের আটক করা নিয়ে আরেকটি বই 'ডুইং টাইম উইথ নেহেরু'র লেখিকা ইন মার্শ তার বইতে লিখেছেন, "আমার বাবার মতে, প্রতিটা স্টেশনে ট্রেনটাকে থামানোর কারণটা ছিল ভারত সরকার নিজের নাগরিকদের দেখাতে চাইছিল যে কীভাবে ভারতের ওপরে চীনের হামলার জন্য চীনাদের সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে।" তিনি আরও লিখেছেন, "প্রথম সন্ধ্যায় বাবা ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টের কাছ থেকে কয়েকটা পরোটা নিয়ে এলো। আমি আরও কয়েকটা পরোটা খেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রত্যেকের জন্য একটা করেই পরোটা বরাদ্দ ছিল। তারপর চা দেওয়া হয়েছিল। তার স্বাদ এত জঘন্য ছিল যে ফেলে দিতে হয়েছিল।" দেওলি ক্যাম্পে কি পাও চেন এবং তার মা আন্তেরি'র আইডেন্টিটি কার্ড তিন দিন চলার পরে ট্রেন পৌঁছেছিল দেওলি সরকার থেকে একটা শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটার বাইরে একটা চেয়ার টেবিল পেতে কর্মকর্তারা প্রত্যেকের বিবরণ লিখে রাখছিলেন। প্রত্যেকের কাছে কত সোনা বা নগদ অর্থ আছে, সেটাও লেখা হচ্ছিল। প্রত্যেক কয়েদীকে একেকটা নম্বর আর পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে চা আর পাউরুটি দেওয়া হলো। কিন্তু পাউরুটি এতটাই শক্ত ছিল যে চায়ে ডুবিয়ে ছাড়া খাওয়া সম্ভব ছিল না। দিলীপ ডি'সুজা কথায়, "ওখানে সেনাবাহিনী তাঁবু খাটিয়ে দিয়েছিল। নভেম্বর মাস ছিল সেটা। কয়েদীরা ঠাণ্ডায় থরথর করে কাঁপছিলেন। তাদের কাছে কোনও গরম পোশাক ছিল না।" "বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসার সময়ে বলা হয়েছিল যে একজোড়া পোশাক নিয়ে চলুন। একদিকে পথশ্রমের ক্লান্তি, অন্যদিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তা সত্ত্বেও ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছিল সবার। হঠাৎই মাঝরাত নাগাদ 'সাপ সাপ' করে চিৎকার করে উঠেছিল কেউ। সবাই জেগে উঠেছিল," পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন মিস্টার ডি'সুজা। দেওলি'র ব্যারাক, ২০১০ সালে তোলা ছবি আধাসিদ্ধ ভাত আর পুড়ে যাওয়া তরকারি দেওয়া হত রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাইরের এক ঠিকাদারকে, যার এত মানুষের খাবার তৈরি করার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না। গোড়ার দিকে আধাসেদ্ধ ভাত আর পুড়ে যাওয়া তরকারি খেতে দেওয়া হত। কিন্তু কয়েদীরা নিয়মিত অসন্তোষ জানানোয় মাস দু'য়েক পর থেকে শিবিরের কমান্ডেন্ট প্রতিটা পরিবারের জন্য রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। রান্না নিজেদেরই করে নিতে হবে। সাপ্তাহিক রেশন বরাদ্দে কখনও ডিম, মাছ বা মাংস দেওয়া হত। 'দ্যা দেওলি ওয়ালাজ' বইয়ের সহ লেখিকা জয় মা বলছেন, "প্রত্যেককে মাসে পাঁচ টাকা করে দেওয়া হত সাবান, টুথপেস্ট বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু কেনার জন্য। বেশিরভাগ পরিবারই ওই টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে রাখত, কারণ কেউই জানত না কতদিন বন্দী থাকতে হবে ওখানে বা তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে।" ইঙ শেং ওয়াঙ বলছেন, "দিনের বেলাটা কোনমতে কেটে যেত, কিন্তু রাত যেন আর কাটতেই চাইত না। আমি অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম, কিন্তু ঘুম আসার নাম নেই। শুধু ভাবতাম যে কবে এখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরব।" চীন সরকার দেওলি'র ব্যারাকে থাকা নাগরিকদের যেসব পণ্য পাঠিয়েছিল সেগুলোর মধ্যে এই কাপগুলোও ছিল রাজস্থানের মরু অঞ্চলে যেমন শীত, তেমনই গরম গরমের হাত থেকে বাঁচতে ইঙ শিং আর তার বন্ধুরা চটের বস্তা ভিজিয়ে জানালা-দরজায় টাঙ্গিয়ে দিতেন। কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেত। মরুভূমি এলাকা হলেও একটা জিনিসের অভাব ছিল না - সেটা হল পানি। শৌচালয়গুলোতে কোনও ছাদ ছিল না। তাই বৃষ্টি হলে ভিজে ভিজেই শৌচালয় ব্যবহার করতে হত বন্দীদের। শিবিরের বন্দীদের মনোরঞ্জনের জন্য একটাই ব্যবস্থা ছিল - হিন্দি সিনেমা দেখানো হত। খোলা জায়গায় পর্দা টাঙ্গিয়ে সিনেমা দেখানো হত, আর বন্দীরা ঘর থেকে চৌকি-বিছানা টেনে এনে তাতে বসেই সিনেমা দেখতেন। জয় মা বলছেন, "রিক্রিয়েশন রুমে খবরের কাগজ আসতো, কিন্তু তার নানা জায়গায় কাটা থাকত। চীনের সম্বন্ধে বা কোনও রাজনৈতিক খবর থাকলেই তা কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া হতো। আমরা পোস্টকার্ডে ইংরেজিতে চিঠি লিখতাম। খামে চিঠি লিখলে সেগুলো পৌঁছতে অনেক দেরী হত - কারণ সেগুলো সেন্সর করার জন্য দিল্লিতে পাঠানো হত প্রথমে।" মনোরঞ্জনের জন্য আরও একটা ব্যবস্থা ছিল - ফুটবল। সকালের জলখাবারের পরে সকলেই ফুটবল খেলতে চাইতেন, কিন্তু গোটা ক্যাম্পে একটা মাত্রই বল ছিল। দার্জিলিংয়ে তোলা ছবিতে কি পাও চেন তার মা আন্তেরি এবং বোনদের সাথে বুড়ো উটের মাংস দেওলি শিবিরের আরেক কয়েদী স্টিভেন বেন জানান, কর্মকর্তারা বন্দীদের জন্য কোনও থালা-বাসন-চামচ কিছুই দেয়নি। বিস্কুটের টিন অথবা গাছের পাতায় খাবার খেতে হত। "রান্নাঘরে দেখতাম চাল না ধুয়েই বস্তা থেকে সরাসরি পাতিলে ঢালা হচ্ছে ভাত রান্নার জন্য। একসঙ্গে অনেকের জন্য রান্না হতো বলে প্রায় সবসময়েই আধা সেদ্ধ হত, বা পুড়ে যেত ভাত।" ইন মার্শের অভিজ্ঞতাটাও অনেকটা একই রকম। "একসঙ্গে সবাই লাইনে দাঁড়াত খাবার নেওয়ার জন্য। তাই তাড়াতাড়ি করে ভাত সেদ্ধ হওয়ার আগেই চুলা থেকে নামিয়ে দিত ওরা। অনেকবার হয়েছে ওই আধা সেদ্ধ ভাত নিয়ে আমরা তারপরে আবারও সেদ্ধ করে খেয়েছি।" "একবার রেশনে আমাদের মাংস দিল। কিন্তু ওই মাংস এতই শক্ত ছিল, মনে হচ্ছিল যেন পুরনো চামড়া খাচ্ছি। পরে জানা গেল যে ওটা বুড়ো উটের মাংস ছিল। খুব খারাপ লেগেছিল সেটা জেনে। আমরা সবাই প্রতিবাদ করায় তারপর থেকে অবশ্য আর উটের মাংস দেওয়া হয়নি," লিখেছেন মিজ মার্শ। দেওলি ক্যাম্পের আরেক বন্দী মাইকেল চ্যাং বলেন, "শিবিরের খাবারের স্বাদ আমি সারা জীবনেও ভুলব না। রান্নায় সর্ষের তেল ব্যবহার করা হত। এতবছর পরেও যদি কারও বাড়িতে নিমন্ত্রণে যাই আর তারা সর্ষের তেল দিয়ে রান্না করে, আমার দেওলি ক্যাম্পের কথা মনে পড়ে যায়।" "যখন থেকে আমাদের নিজেদের রান্না করার ব্যবস্থা করা হলো, তখন আমরা দূরে দূরে গিয়ে কাঠ নিয়ে আসতাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কাঠ আর পাওয়া যেত না। ঝোপঝাড় যা পেতাম তাই নিয়ে আসতাম জ্বালানীর জন্য। গুলতি দিয়ে পাখিও মারতাম খাওয়ার জন্য," বলছেন মিস্টার চ্যাং। দেওলি ক্যাম্পে থাকা অনেককেই ক্যাম্পের পাশে থাকা গোরস্থানে কবর দেয়া হয়েছিল বাসন মাজতে গিয়ে হাতের চামড়া খসে যাচ্ছিল ইন মার্শ লিখেছেন, "আমার পরিবারের খাবার বাসনগুলো মাজার দায়িত্ব আমার ওপরে পড়েছে। বাসন মাজার সাবান ছিল না।" "হিন্দি সিনেমায় দেখেছিলাম যে ছাই দিয়ে বাসন মাজা হচ্ছে, সেটাই নকল করে চকচকে করে তুলতাম বাসন মেজে। কিন্তু ক্যাম্প থেকে যখন আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল শেষমেশ, আমার হাতের চামড়া এমনভাবে খুলে আসত, যেন পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানো হচ্ছে। কয়েক বছর চিকিৎসা করার পর ঠিক হয় হাতের অবস্থা।" বন্দীদের বেশিরভাগই প্রায় চার বছর দেওলি শিবিরে ছিলেন। সেখানে যেমন বেশ কয়েকজন বন্দীর মৃত্যু হয়েছিল, তেমনই জয় মায়ের মতো বেশ কিছু শিশু জন্মও নিয়েছিল ওই শিবিরেই। জয় মা জানান, তার মা এফা মা তাকে বলেছিলেন যে ১৯৬৩ সালে একবার ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী গিয়েছিলেন দেওলি ক্যাম্পে। যখন বন্দীদের সঙ্গে তার সাক্ষাত করানো হল, তিনি বলেছিলেন কারা ভারতে থাকতে চান আর কারা চীনে চলে যেতে চান। দুই দলকে আলাদা লাইনে দাঁড়াতে বলেছিলেন তিনি। "আমার বাবা-মা ভারতে যারা থাকতে চায়, তাদের দিকে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে আর কিছুই হল না। কয়েক মাস পরে আমার মা কমান্ডেন্ট আরএইচ রাওকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বলেছিলেন ভারতে যারা থাকতে চায় তাদের বাড়ি ফিরে যেতে দেওয়া হবে! জবাবে মিস্টার রাও বলেছিলেন, আপনি তো চেয়েছেন ভারতে থাকতে। তো ভারতেই তো আছেন আপনি," বলছেন জয় মা। ''দ্য দেওলি ওয়ালাজ' বইয়ের লেখক জয় মা যুদ্ধবন্দীদেরও আনা হয়েছিল ওই শিবিরে চীন সরকার যেমন এদের জন্য কিছু করেনি, তেমনই ভারত সরকারও যেন এই বন্দীদের কথা একসময় ভুলেই গেল। রফিক ইলিয়াস এই নিয়ে একটা তথ্যচিত্র বানিয়েছেন, যার নাম 'বিয়ন্ড বার্বড ওয়ায়ার্স: আ ডিস্ট্যান্ট ডন'। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ সালে এই দেওলি শিবির ব্যবহার করত রাজনৈতিক বন্দীদের রাখার জন্য। চল্লিশের দশকে জয়প্রকাশ নারায়ণ, জওহরলাল নেহেরু, কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা শ্রীপদ অমৃত ডাঙ্গে এবং বিটি রণদিভের মতো মানুষকে এই শিবিরে বন্দী রাখা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানি, জাপান আর ইতালির যুদ্ধবন্দীদেরও রাখা হত এখানেই। ভারত ভাগের পর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা প্রায় দশ হাজার সিন্ধি সম্প্রদায়ের মানুষকেও কিছুদিনের জন্য এই শিবিরে রাখা হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে দেওলি ক্যাম্পটি রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স বা আরপিএফ'কে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের একটা ব্যাটালিয়ন থাকত। ১৯৮০ সাল থেকে এটা সিআইএসএফ বা কেন্দ্রীয় শিল্পোদ্যোগ সুরক্ষা বাহিনীর অধীনে। তারা সেখানে বাহিনীতে ভর্তি এবং প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালায়। কিছু বন্দী বাধ্য হয়ে চীনে চলে যান চীন যখন জানতে পারল যে দেওলিতে চীনা বংশোদ্ভূতদের বন্দী করে রাখা হয়েছে, তখন তারা প্রস্তাব দিল যে এদেরকে তারা চীনে নিয়ে যেতে চায়। অনেক বন্দী এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে চীনে চলে গেলেন। আরও অনেক মানুষ চীনে যেতে চাননি, কারণ একটা গুজব ছড়িয়েছিল যে চীনে খরা চলছে - খাদ্যের অভাব। আবার অনেকে চীনে যেতে চাননি এই কারণে যে তারা আগে চীনের কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধিতা করে তাইওয়ানকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু ভারতে যে তাদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, সেটা মেনে নিয়ে তাদের অনেকেই ভারাক্রান্ত মনে চীনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এদের অনেকেই কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতের বাসিন্দা এবং তারা হিন্দি, বাংলা কিংবা নেপালি ভাষাতেই কথা বলেন। তাদের কাছে চীন বিদেশ। ঘর বেহাত হয়ে গেছে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তারা যখন নিজের নিজের বাড়ি ফিরলেন, দেখলেন অন্য লোকে বাড়ি দখল করে নিয়েছে। তাই অনেকে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও দেশে চলে গেলেন। দেওলি ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাওয়া অনেকে এখন কানাডার টরোন্টো শহরে থাকেন। তারা 'অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া দেওলি ক্যাম্প ইন্টার্নিজ ১৯৬২' নামে একটি সংগঠন বানিয়েছেন। ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে তারা কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে একটা বিক্ষোভ দেখিয়ে দাবি করেছিলেন যে তাদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, তার জন্য ভারত সরকার ক্ষমা চাক। 'দ্যা দেওলি ওয়ালাজ' বইয়ের লেখক দিলীপ ডি'সুজা বলছেন, "তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে একটা চিঠি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কেউ সেই চিঠি গ্রহণ করেনি।" "তারা ওই চিঠিটা হাইকমিশনের দরজায় লাগিয়ে চলে যান। তারা সবাই একই রকম টি-শার্ট পড়েছিলেন, যার ভেতরে দেওলি ক্যাম্পের একটা ছবির আদল ছিল।" দার্জিলিংয়ে নেয়া ছবি, পিতামহের সাথে কি পাও চেন মেঘালয়ের শিলং থেকে কানাডা বাসে চেপে ওই সমাবেশ থেকে যখন সবাই ফিরছিলেন, তখন ইঙ শেং ওয়াঙ-কে সবাই চেপে ধরেন একটা গান শোনানোর জন্য। সবাই হয়তো ভেবেছিলেন যে সেদিনের সেই ১৬ বছরের যুবক, আজকের ৭০ পেরোনো ইঙ শেং ওয়াঙ হয়তো কোনও চীনা গান শোনাবেন। কিন্তু তিনি সেদিন গেয়েছিলেন একসময়ের হিট হিন্দি ছবি 'দিল আপনা অউর প্রীত পরাই'য়ের গান ... 'আজীব দাস্তাঁ হ্যায় ইয়ে, কহাঁ শুরু কহাঁ খতম ..." যার মানে হলো, অদ্ভুত জীবন -- কোথায় শুরু, কোথায় তার শেষ! গানটা শুনে বাসে সবার চোখেই জল এসে গিয়েছিল। যে শিবিরে ইঙ শেং ওয়াঙ ১৬ বছর বয়সে পরিবারের সবার সঙ্গে বন্দী হয়েছিলেন, সেই বন্দীশিবিরেই তার বাবার মৃত্যু হয়। দাফন করা হয়েছিল সেখানেই, কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পরে মিস্টার ওয়াঙ তার বাবার অস্থি নিয়ে ফিরে গিয়েছিলে শিলংয়ে। তার নিজের শহর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে কানাডা। কিন্তু মন খারাপের সময়ে, বন্দিজীবনের কথা মনে পড়লে, তার মনে পড়ে হিন্দি সিনেমার গানই। দিলীপ ডি'সুজা বলছেন, এর দুটো কারণ থাকতে পারে বলে তার মনে হয়েছে। "এরা তো ভারতীয় চীনা। কয়েক দশক ধরে তারা ভারতেই থাকতেন। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে পড়ে মনের দুঃখে তাদেরকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তাই অটোয়া থেকে টরোন্টোর চলতি বাসে তাদের তো স্বাভাবিকভাবেই হিন্দি গানের কথাই মনে পড়বে!" তার মন্তব্য, "ওই গানটা সেদিন উনি কেন গেয়েছিলেন, সেটা ভাবতে গিয়ে আমি একটা ব্যাপার অনুভব করি, চীনাদের মতো চেহারা আর গায়ের রঙয়ের ব্যাপারে আমার নিজের যা ধারণা ছিল, সেটা কমবেশি ওই ধারণাটাই - যার বশবর্তী হয়ে ওয়াঙয়ের মতো আরও কয়েক হাজার মানুষকে দেওলি ক্যাম্পে বন্দী করা হয়েছিল।" "তাদের একটাই দোষ ছিল, তারা চীনাদের মতো দেখতে ছিলেন।" | ভারত-চীন যুদ্ধ: শুধুমাত্র চীনা বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণেই ভারত ১৯৬২ সালে যে হাজার তিনেক নাগরিককে বন্দী করেছিল |